২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যা (Flood of August 2024)
দেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ আগস্ট (সোমবার) থেকে দেশের পূর্বাঞ্চলে টানা তিন দিন অতি ভারি বৃষ্টি হয়েছে, গত ৫৩ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের আটটি জেলা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের জন্য ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। অনেকের মতে, হঠাৎ অতি ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢল, জলাশয় ভরাট এবং পানি সরে যাওয়ার জলপথ সংকীর্ণ হওয়ার জন্য খুব দ্রুত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি।
২০ আগস্ট থেকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে৬৫ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে
ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা।গত ২০ আগস্ট থেকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার ৬৫ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।
ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের আটটি জেলা
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের আটটি জেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে থাকায় একের পর এক জনপদ প্লাবিত হচ্ছে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে ফেনীর বাসিন্দারা।
মূলত বাঁধের নিচের দিকে পানির প্রবাহের কারণেই বাংলাদেশে এই বন্যা হয়েছে
জানা গেছে, ফেনীর সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।তবে বন্যা নিয়ে ‘না জানিয়ে বাঁধ খুলে দেওয়া’ নিয়ে বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ তোলার বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত সরকার। ভারত সরকারের বিবৃতিতে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে গত কয়েক দিন ধরেই ভারী বৃষ্টি হয়েছে। মূলত বাঁধের নিচের দিকে পানির প্রবাহের কারণেই বাংলাদেশে এই বন্যা হয়েছে।
৭০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হোসেন মাহমুদ শামীম ফরহাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভবনগুলোর নিচতলায় পানি ঢুকে মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকবে।’
বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে
গত বুধবার থেকে আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও চার জেলাসহ মোট ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছেন সেনাসদস্যরা।
বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে
বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি। ওই সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এতে কার্যত ওই সব এলাকার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।দেশের বন্যাকবলিত জেলা ১০টি। আর প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত।আকস্মিক বন্যায় বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ফেনীতে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার পর ফেনী পৌর শহরও গতকাল পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান পানি।
বাংলাদেশে চলমান বন্যার জন্য মূলত চারটি প্রাথমিক কারণ উল্লেখ করেন
বাংলাদেশে চলমান বন্যার জন্য মূলত চারটি প্রাথমিক কারণ উল্লেখ করেন।প্রথমত কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি লঘুচাপটি স্থায়ী হয়ে আছে।দ্বিতীয়ত, বর্তমানে খুবই শক্তিশালীভাবে ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন (এমজেও) বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।তৃতীয়ত, 'জেট স্ট্রিম' এখন মধ্য এশিয়ার উপরিভাগে অবস্থান করছে। যে কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে বাংলাদেশে।চতুর্থত, ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়াটা বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়ার পেছনে অন্যতম কারণ। ভারতীয় অংশেও ভারি এবং উজানের এই দেশটিও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বিপৎসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় বন্যার কবলে পড়েছে। বন্যার আক্রান্ত হলেই প্রতি বছর বাঁধ খুলে দেয় ভারত। এ বছরও কোথাও কোথাও তারা বাঁধ খুলে দিয়েছে এবং অতিরিক্ত পানির কারণে কিছু জায়গায় বাঁধের গেটগুলো ভেঙে গেছে।
কেবলমাত্র ভারী বৃষ্টি বন্যার একমাত্র কারণ না
তবে বিশেষজ্ঞদের মত, কেবলমাত্র ভারী বৃষ্টি বন্যার একমাত্র কারণ না। ভারত ব্যারেজ খুলে দেওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পানি বাংলাদেশের অন্তত আটটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।'নিশ্চিতভাবেই অতিবৃষ্টি এখানে বন্যার একটি বড় কারণ। বাংলাদেশে এখন বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টি হয় এবং এই অঞ্চল থেকে মেঘালয় পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। আমাদের দেশে যত বন্যা হয়, সেটি মূলত উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যা হয়। উজানের পানি ভাটিতে নামবে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার একটি অঞ্চলে রাতারাতি যে পানির স্রোত, এটা স্বাভাবিক না।
কোথাও না কোথাও পানিটা ধরে রেখে তারপর হঠাৎ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে
'এটা দেখলেই বোঝা যায়, কোথাও না কোথাও পানিটা ধরে রেখে তারপর হঠাৎ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি, গোমতী নদীর ঠিক উপরেই একটি ছোট্ট হাইড্রো প্রোজেক্ট আছে তিন মেগাওয়াটের। সেই গেটগুলো কিন্তু খোলা। আরও কিছু ছোট ছোট ব্যারেজ আছে,' বলেন তিনি। আজাজ বলেন, 'প্রশ্ন উঠতে পারে দায় কার? আমাদের আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো দেখাশোনা করার জন্য একটি জয়েন্ট রিভার কমিশন আছে। এই কমিশনের কাজ হলো, শুষ্ক মৌসুমে আমরা আমাদের অধিকার অনুযায়ী পানি পাচ্ছি কি না দেখা এবং বাংলাদেশের পক্ষে নেগোশিয়েট করা। সেটা গত ১৫ বছরে সিস্টেমেটিক্যালি অকেজো করে দেওয়া হয়েছে, যেন কথা না বলতে পারে।
সেনাবাহিনীর পাঁচটি চিকিৎসা দল সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গতকাল চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এ ছাড়া ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাঁচটি চিকিৎসা দল সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে
সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছে।বন্যার পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটজন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কক্সবাজারে দুজন, ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন। পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া কক্সবাজারের দুজন নিখোঁজ আছেন।কক্সবাজারের রামুতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২৩ হাজার মানুষ। বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। স্রোতে ভেসে গেছেন চারজন। বিকেল পাঁচটার দিকে এক শিশুসহ দুজনের মরদেহ ভেসে উঠলেও অপর দুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
প্লাবিত জেলায় পানিবন্দি পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৪০টি পরিবার
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে একজন মারা গেছেন। তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। আর গত বুধবার দুপুরে বন্যার পানিতে ডুবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বীরচন্দ্রপুর গ্রামে সুবর্ণা আক্তার (১৯) নামের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী মারা যান।আকস্মিক বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের ১০ জেলার ৬৫টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় পানিবন্দি পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৪০টি পরিবার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৫২ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চলমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে এসব তথ্য জানানো হয়।
পানিবন্দি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুই হাজার ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে
এসব এলাকায় তিন কোটি ৩২ লাখ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য ১৯ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ১৫ হাজার বস্তা শুকনা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।পানিবন্দি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুই হাজার ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬৯৪ জন আশ্রয় নিয়েছে।সাত হাজার ৭৫৫টি গবাদি পশুকেও আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১০ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় ৪৯২টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
বন্যাকবলিত বিভিন্ন জেলার আট লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুত্হীন অবস্থায় রয়েছে
বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় বন্যাকবলিত বিভিন্ন জেলার আট লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুত্হীন অবস্থায় রয়েছে। এসব জেলায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।বিতরণকারী সংস্থা দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুরের বেশ কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফেনী
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বন্যায় ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় তিন লাখ লোক। বন্যার পানিতে ডুবে জেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৭৮টি। মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে ৭৬টি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন ২০ হাজার জন।জেলায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ও ৪০টি উদ্ধারকারী যান জেলায় পাঠানো হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ সদস্য ও আটটি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে। এ ছাড়া একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে জেলায়।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের ৯ উপজেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৯১৬। ক্ষতিগ্রস্ত দুই লাখ চার হাজার ৮৫০ জন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৮৪টি। ১১১টি মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রামে কখনো ভারি আবার কখনো অতিভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নগরের বিভিন্ন সড়ক, উপসড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ফেনীর পাশের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।
ফটিকছড়ি
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়ি হেয়াকো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হালদা ও ধুরুং খালের অন্তত ১৬টি পয়েন্টে ভেঙে বিভিন্ন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। হালদা নদীর গড়দুয়ারা এলাকায় স্লুইস গেট ভেঙে গেছে।পাহাড়ধস ঝুঁকি, জলাবদ্ধতা ও বন্যাঝুঁকিজনিত দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও সদর হাসপাতাল মিলে মোট ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় রাউজানের বেশির ভাগ এলাকা ডুবে গেছে।
নোয়াখালী
জেলার আট উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবার এক লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৯ লাখ ৮০ হাজার জন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৮৮টি, আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৩৬ হাজার ১১৫ জন। আশ্রিত গবাদি পশু চার হাজার ৭১৪টি। জেলায় মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে ৮৮টি। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘৩৮৮ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ হাজার বন্যা আক্রান্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। আমরা শুকনা খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
কুমিল্লা
কুমিল্লা জেলার ১২ উপজেলার ১২৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত জনসংখ্যা এক লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৫৮৭টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন চার হাজার ৩০২ জন।উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গোমতী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যায় এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের তথ্য মতে, গত বুধবার ভিন্ন সময়ে ওই তিনজন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। একজন বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে, একজনের মাথায় গাছ পড়ে এবং একজন পানিতে তলিয়ে মারা গেছে।
কক্সবাজার
জেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। রামুর গর্জনিয়ায় দুই যুবক মারা গেছেন। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে গতকাল সকালে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্বজুমছড়ি এলাকায় দুজন ভেসে যায়। পরে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন পূর্বজুমছড়ি গ্রামের আমজাদ হোসেন (২২) ও রবিউল আলম (৩৫)।
সিলেট
সিলেট জেলার তিন উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫ হাজার মানুষ। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬৫১টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১৮ জন।
খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রামগড়
খাগড়াছড়ি জেলার আট উপজেলায় পানিবন্দি পরিবার ৩৩ হাজার ৫২২টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার ৭১৮ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৯৯টি। কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৯ হাজার ১৩ জন। আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা এক হাজার ৮৩৪। মেডিক্যাল টিম চালু করা হয়েছে ১৮টি।জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ির ১৮টি এবং দীঘিনালার ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছে। সবার জন্য শুকনা খাবার ও খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেল সেতু ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলাচলকারী ছয়টি ট্রেনই বন্ধ রয়েছে।
মৌলভীবাজার ও কমলগঞ্জ
মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৭১১টি। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা এক লাখ ৫২ হাজার ৪২৫ জন।কমলগঞ্জের ৯টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত। শতাধিক পুকুরে মাছ ভেসে গেছে। ছয় হাজার হেক্টর জমির আমন ও দুই হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ডুবেছে।
রাঙামাটি
রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২০টি স্থানে ছোট-বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে এখনো কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। গতকাল সকালে ঘাগড়ার কলাবাগানসহ বেশ কিছু এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে যান চলাচল সচল করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার দুই উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা এক হাজার ১৯০। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা চার হাজার ৯৯১ জন। মৃত্যু হয়েছে একজনের। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১১টি।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচ উপজেলার ৫৮ ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবার এক লাখ ২০ হাজার ৯০০টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ছয় লাখ চার হাজার ৫০০ জন। জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮৫টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে চার হাজার ৯০৫ জন।
মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে গত দুই দিনে দুই ফুটের বেশি পানি বেড়েছে। গতকালও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গতকাল এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী গ্রামের বাসিন্দা মো. হাবিব বলেন, ‘আমাদের এলাকায় পানি দ্রুত বাড়ছে। দুই দিন আগে আমাদের যে এলাকা শুকনা ছিল, এখন সেখানে হাঁটু পানি।’
চাঁদপুর
মাত্র তিন দিনের ভারি বর্ষণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প। এতে ভেসে গেছে শত শত খামারের মাছ, ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। এতে দুর্ভোগে পড়েছে প্রকল্পের ভেতরের ছয়টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে নদীতীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে গ্রামীণ সড়ক ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ গ্রামের বাসিন্দারা।
নদীগুলোর পানি কমতে পারে এবং চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে আজ গতকাল দুপুরের পর থেকে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে বৃষ্টি কমায় আজ শুক্রবার দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে। পাউবো গতকাল বিকেল ৩টায় জানিয়েছে, ১৮ ঘণ্টা পরবর্তী সময়ে (আজ সকাল ৯টার পর) নদীগুলোর পানি কমতে পারে এবং চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
বছরে তিনবার বন্যা হয়। এর বড় কারণ হলো, উজানে প্রতিটি নদীর ওপর ড্যাম প্রোজেক্ট আছে
এই নদী বিশেষজ্ঞ বলেন, 'আজকে গোমতী ও ফেনী নদীতে যেটা ঘটলো, একই ঘটনা বারবার তিস্তায় হয়। তিস্তায় এখন বছরে তিনবার বন্যা হয়! সিলেটেও হয়। এর বড় কারণ হলো, উজানে প্রতিটি নদীর ওপর ড্যাম প্রোজেক্ট আছে। ছোট ছোট অনেক হাইড্রো ড্যাম আছে। এই ড্যামগুলোর যদি আমরা ভারতের ইকোনোমিক ভ্যালু দেখি, গোমতী নদীর ওপর যে ড্যামটি আছে মাত্র তিন মেগাওয়াট। এই বিদ্যুতে একটি ছোট গ্রামও আলোকিত করা যায় না কিন্তু তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র যে পরিমাণ পানি ধরতে পারে, সেটি পাশের যে কোনো ধরনের এলাকাকে ক্ষতিগ্রস্ত (নুইসেন্স) করতে পারে। এটি অস্ত্র—বিদ্যুৎ প্রকল্প না।'তিনি বলেন, 'গত ৫৩ বছরে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীতে ৩০ থেকে ৪০ হাইড্রো ড্যাম কমিশন হয়েছে। আন্তঃসীমান্ত নদীতে কোনো ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়া ভারত করতেই পারে না। গত ৫০ বছরে কোনো সরকারের আমলে আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখিনি। যে কারণে ড্যাম তারা করে ফেলেছে। এখন তারা এটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
একই দশা দেশের আট জেলার ৩৫৭টি ইউনিয়নে
নোয়াখালী ও ফেনীর মতো একই দশা দেশের আট জেলার ৩৫৭টি ইউনিয়নে। কোথাও বুকপানি, কোথাও গলা অবধি। কেউ কেউ কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ বুকপানিতে সাঁতরে উঁচু জায়গা খুঁজছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় গতকাল কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন আটজন। কুমিল্লায় চারজন, কক্সবাজারের রামুতে দু’জন, ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন করে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বানভাসি মানুষের বাঁচার আকুতি প্রবল হয়ে উঠেছে
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বন্যাদুর্গত আট জেলা হলো– ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। ১ হাজার ৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি দল। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এবং পানির প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বানভাসি মানুষের বাঁচার আকুতি প্রবল হয়ে উঠেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক তথ্য বিবরণীতে জানায়, বন্যায় আটটি জেলার প্রায় ২৯ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী সময়ে উন্নতি হতে পারে।
তথ্যসুত্র
দুর্গত এলাকা, Samakal.
ভারী বৃষ্টি বন্যার , The Daily Star.
গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন , Banglatribune.
অতি ভারি বৃষ্টি , Kalbela.
বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি, Kalerkantho.
দিনের প্রবল বর্ষণে , Prothomalo.