বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস (Bangladesh Independence Day)

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি–প্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশানা উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে।
— শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা… প্রতিটি জাতির কাছেই শব্দটি এক আবেগের নাম, এক ভালোবাসার নাম। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, গানটি রুপক অর্থে লেখা হলেও, আক্ষরিক অর্থেই কোনো দেশের স্বাধীনতা আনতে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। মানুষ আসলে জন্মগতভাবে স্বাধীন হলেও প্রায়শই এই স্বাধীনতা হরণ করে নেয় কিছু হানাদার দস্যু।
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। অনাহারী একজন গৃহহীন পথের লােকও ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা কামনা করে। স্বাধীনতার অর্থ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে সার্বভৌম আত্মমর্যাদা নিয়ে দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রা। স্বাধীনতা প্রত্যেক জাতির অমূল্য সম্পদ। যে জাতি যেদিন স্বাধীনতা লাভ করে সেদিনটি জাতীয় জীবনে এক গৌরবান্বিত, আনন্দঘন ও তাৎপর্যময় দিন।
২৬শে মার্চ, ১৯৭১ এ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি দেশের নামের অন্তর্ভুক্তি ঘটে,বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এ দিনটিকে ঘিরে রচিত হয়েছে। এ দিনের নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তাই ২৬শে মার্চ আমাদের তথা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস।
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
– শামসুর রাহমান
আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পুরোপুরি বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। আর এই মহান স্বাধীনতার ঘোষণাটি আসে ২৬ মার্চে। এজন্যই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য খুবই বিশেষ এক দিন। এই দিনে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকি, আর আলোচনা সমালোচনার ফাঁকে নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে চোখ বুলাই।
মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। আবার এই মাসেই বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভাষা সংগ্রামেরও মূল সূচনা মার্চ মাসে। ১৯৪৮ থেকে ১১ মার্চ ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার পরে ফেব্রুয়ারি হয় আমাদের ভাষা সংগ্রামের মাস। অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চেই বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বর হত্যাকাণ্ডের শুরু এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটিও দিয়েছেন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ৭ তারিখে। অর্থাৎ সবদিক থেকেই মার্চ মাস বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি অতুলনীয় এবং অবিস্মরণীয় মাস। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন ১৯৭১ সালের এই মার্চ মাসেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গণহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষকে। একাত্তরের ২৫ মার্চের মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মানুষ। ওই দিন দিবাগত রাতেই (একাত্তরের ২৫ মার্চ) গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। তার আগেই বার্তা পাঠিয়ে দেন স্বাধীনতার ঘোষণার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এর ইতিহাস
শুরুটা হয় ১৯৫২-তে ভাষার ওপর আঘাত থেকে। এতেই থেমে থাকেনি তারা, রীতিমত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাতে থাকে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যখন বাংলার দামাল ছেলেরা রক্ত দিল রাজপথে, তখন থেকেই বলতে গেলে বাঙালিদের মানসপটে অঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল যে, স্বাধিকারই আসল মুক্তি। তাছাড়া এই নিপীড়ন চলতেই থাকবে। এরপর একসময় রবীন্দ্র সংস্কৃতি চর্চার ওপর খড়গহস্ত নেমে আসে। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালিদের হেনস্তা করতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। সরকারি, সামরিক, বেসামরিক সব খাতেই নজির বিহীন বৈষম্যের শিকার হয় বাঙালিরা। মাঝে একবার বাংলাকে উর্দু হরফে লেখার পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল তারা।
এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে
– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
এসব কিছুর কারণে বাঙালিরা ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। ‘৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬৬ এর ৬ দফা, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এরই ইঙ্গিত দেয়। বাঙালিরা দিনকে দিন বুঝতে থাকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কোনোক্রমেই হাসিল করতে দেবে না পাক সামরিক জান্তারা। তাই ‘৭০ এর নির্বাচনে জেতার পরও যখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে দেওয়া হলো না, উল্টো আলোচনার নামে টালবাহানা করা হচ্ছিল- বুদ্ধিমান সকলেই বুঝতে পেরেছিলেন সামনে কী আসতে চলেছে। বাঙালি জাতি এগিয়ে যেতে থাকে সেই করুণ ২৬ মার্চ এর ইতিহাস -এর দিকে।
আমরা স্বাধীন হয়েছি তাই আমরা স্বাধীন জীবন যাপন করবো এমনটা ভাবা ঠিক নয়। আমরা আজন্ম স্বাধীন।
– উইলিয়াম ফকনা
একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ও বঙ্গবন্ধুকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতারের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণা
বঙ্গবন্ধুকে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতেই তাঁর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের আগেই তিনি বেতার মারফত ঐতিহাসিক এই ঘোষণাটি দিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঘোষণাটি নিম্নরূপ,
ইংরেজিতে: This may be my last message, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.
বাংলায়: এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।
২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয় কখন ও কত সালে?
১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি একটি বিশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করে ২৬ মার্চকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়, এবং ২৬ মার্চ এর ইতিহাসকে স্মরণ করার জন্য দিনটিকে সরকারিভাবে ছুটির দিন বলে ঘোষণা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে, ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস-এ ওই ঘোষণার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। ঘোষণায় বলা হয়, ‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান-যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’
২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়
স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জন ও অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণমুখী, মানবিক, প্রগতিশীল স্বতন্ত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়সংগত অধিকার নিশ্চিত হবে এমন একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করাও এর উদ্দেশ্য, যেখানে জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা, শোষণ, বৈষম্য, অন্যায়ের অবসান ঘটিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে- এমন স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
মহান স্বাধীনতা দিবসে আমাদের একটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষতার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা যেন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়। আমাদের এ শান্তিময় দেশে ধর্মের নামে যেন কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখতেন তার বাস্তবায়ন আজ খুবই প্রয়োজন। ১৯৭২ সালে ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: ‘জনাব স্পীকার সাহেব, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়।
যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক, সেই মাঠে আজ বসে নেশার হাট
– রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করবও না। ২৫ বৎসর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেঈমানী, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যাবিচার- এই বাংলাদেশের মাটিতে এ সব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয় নি। সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি’। বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শ যদি আজ পূর্ণ রূপে বাস্তবায়িত করা হত তাহলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ দিনে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার মত সাহস দেখানোর মত হয়তো কাউকে পাওয়া যেত না।
স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য
'' কী দেখার কথা, কী দেখছি. . . তিরিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি. . .”
স্বাধীনতার স্বপ্ন আর বর্তমান বাস্তবতা পর্যালোচনা করলে গায়ক হায়দার হোসেনের এই গানটিই যেন করুণ সুরে বেজে ওঠে মনের কোণে। তিরিশ চল্লিশ নয়, পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে স্বাধীনতার। সুখী-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ হয়নি আমাদের। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্বের দুর্বিপাকে এখনও আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। মূল্যবোধের অবক্ষয়, হিংসাত্মক অপরাজনীতি, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি, সীমাহীন দুর্নীতি প্রভৃতি স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লাগাম টেনে ধরে আছে।
আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনারও। এই দিনটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক দুঃখ-কষ্ট-বেদনা, রয়েছে অনেক উচ্ছ্বাস, আবেগ, অনুভূতি আর আনন্দ-বেদনার মিশ্রণ। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগ, অনেক সংগ্রাম, অনেক বেদনার বিনিময়ে এসেছে এ স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য আমরা ওই দিন ভােরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ নানা অনুষ্ঠান আয়ােজনের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এই দিনের অনুষ্ঠানমালা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত ও উজ্জীবিত করে।
এ দিবসে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। কোস্ট গার্ডের জাহাজসমূহ এদিন দুপুর ২টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
স্বাধীনতা মানুষের মনের একটি খোলা জানালা, যেদিক দিয়ে মানুষের আত্মা ও মানব মর্যাদার আলো প্রবেশ।
– হার্বার্ট হুভার
পরিশেষে বলতে চাই, আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ অনুযায়ী রাষ্ট্র ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি, তার বিশ্বাস, আদর্শ ও কর্মকে লালন করি, তাহলে সেটাই হবে তার প্রতি সত্যিকারের সম্মান প্রদর্শন, দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ। মহান স্বাধীনতা দিবসে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদদের, স্মরণ করি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী তার সহকর্মী জাতীয় নেতাদের।
তথ্যসুত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, 10-Minute School.
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, Jago News 24.
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, Somoy News.
মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস, NTV BD.
আমাদের মুক্তির ইতিহাস-স্বাধীনতার ইতিহাস, Ittefaq.
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, Bangla Notebook.