বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo)

বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা  (Bangladesh National Zoo)

চিড়িয়াখানা একটি মানুষের দ্বারা তৈরী জায়গা যেখানে মানুষের দেখার জন্য পশু ও পাখীদের রাখা হয়। দূর দুরান্তে থাকা বন জঙ্গলে গিয়ে প্রানীজগতের বিষয়ে তথ্য জোগাড় করা, জন্তু জানোয়ার দেখা এবং তাদের বিষয়ে শেখাটা সব মানুষের দ্বারা সম্ভব হয়ে ওঠে না তাই চিড়িয়াখানায় পশুপাখীদের রেখে মানুষদের দেখার সুযোগ দেওয়া হয়। শিশুরাও বিশেষ ভাবে জন্তু জানোয়ার দেখতে পছন্দ করে তাই তারা চিড়িয়াখানায় পশুপাখীদের দেখে, তাদের বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে নিজের জ্ঞান সমৃদ্ধ করে।

চিড়িয়াখানায় দেখতে যাওয়া মানুষদের উপর যাতে পশু পাখীরা হামলা না করে সেজন্য সেখানে সব পশুপাখীদের আলাদা আলাদা খাঁচায় ভরে রাখা হয়। কিছু কিছু প্রাণী যারা এই পৃথিবী থেকে শেষ হওয়ার পথে চলে যাচ্ছে, চিড়িয়াখানার ব্যবস্থা হওয়ায় তারা ও আরো কিছু কালের জন্য জীবিত থাকতে সক্ষম হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গবেষকরাও চিড়িয়াখানায় এসে বিভিন্ন ধরনের প্রানীজগত সম্পর্কিত বিষয়ের উপর গবেষনা করেন।

কিন্তু চিড়িয়াখানা মানুষের জন্য লাভদায়ক হলেও পশু পাখীদের জন্য সেটা হল একটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর তন্ত্র। বনের মুক্ত পশু পাখীদের এভাবে খাঁচায় বন্দী করা রাখা শুধু অন্যায় নয় বরং সেটা পশু পাখীদের উপর অত্যাচার করার একটা রাস্তা। বন্য পশুদের নিজের অভ্যস্ত পরিবেশ থেকে ছিড়ে এনে কৃত্রিম পরিবেশে রাখলে জীবনশৈলীর সাথে সাথে তাদের অভিযোজনের ক্ষমতাও হারিয়ে যায়। তাছাড়া এই পৃথিবীতে মানুষ এবং পশুপাখীদের সমান অধিকার রয়েছে, তাই মানুষের আনন্দের জন্য অন্য পশুদের কষ্ট দেওয়া একটা নিতান্ত অমানবিক কাজ। তাই আমাদের পশু পাখীদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিৎ।


মিরপুরবাসীর কাছে সবচেয়ে কাছের যে বিনোদন কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে তা হলো ঢাকা চিড়িয়াখানা। ঢাকাবাসীর কাছে এবং ঢাকা শহরে প্রথমে যারা আসেন তাদের প্রথম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে এই চিড়িয়াখানা। ১৯৭৪ সালে ঢাকার মিরপুরে এই চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা(Bangladesh Jatio Chiriakhana) কিংবা ঢাকা চিড়িয়াখানা যে নামেই ডাকা হোক না কেন এটি দেশের প্রাচীন এবং সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখান। রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র হতে প্রায় ১৬ কিঃমিঃ দূরে মিরপুরে আবস্থিত এই চিড়িয়াখানাটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি কালের বিবর্তনে এবং বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে আজকের এই রুপ লাভ করেছে।

সুনিবিড় ছাড়াঘেড়া এ ঢাকা চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর।যার মধ্যে  ১৩ হেক্টরের দুটি লেক আছে । চিড়িয়াখানা তথ্যকেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। জনসাধারণের বিনোদন, দূর্লভ, বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণি সংগ্রহ ও প্রজনন, প্রাণি বৈচিত্র সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা এবং এ বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য।

বেঙ্গল টাইগারই ঢাকা চিড়িয়াখানার প্রধান আকর্ষণ। চিড়িয়াখানায় নানা রকম দেশী বিদেশী জীব-জানোয়ার ছাড়াও রয়েছে কয়েকশ প্রজাতির পাখি। রয়েছে আধাপ্রাকৃতিক লেক, লেকের উপর বিশালকায় পেলিক্যান পাখি। তার পাশে দেখা যায় প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঙ্গল টাইগার ও সিংহ। হরেকরকম পাখির মধ্যে রয়েছে ফ্লেমিংগো, রঙিন ফিজ্যাণ্ট, বিলুপ্তপ্রায় কুড়া, কাল শকুন এবং শঙ্খ চিল।

প্রবেশ পথেই চোখে পড়ে বানরের খাঁচা। ছোট-বড় অসংখ্য বানরের বাঁদরামি দেখতে দেখতে কখন যে সময় পার হয়ে যায় তা টেরই পাওয়া যায়না। সামনে এগুলেই হাতের বামে পড়বে বিশালাকায় এভিয়ারি। লম্বা পা আর বাঁকানো ঠোঁটের ফ্লেমিংগোর দেখা মেলে এখানেই। আরো রয়েছে কানিবক, পানকৌড়ি ও মাছরাঙার মত পাখি। বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (রয়েল শব্দটি বৃটিষদের দেয়া) আগেই দেখা মিলবে ভারতীয় সিংহের সাথে। সিংহের খাঁচা পেরোলেই বাঘ ও ভালুকের খাঁচা। রয়েছে চিতার (Cheeta) মত দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রাণি। এ তো গেল চিড়িয়াখানার মধ্যাঞ্চলের কথা। উত্তরে রয়েছে উত্তর লেক, তার পাশেই প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখা সুন্দরবনের বাঘ, পাশে সিংহ। কৃত্রিম জলাশয়ে রয়েছে জলহস্তি।

চিড়িয়াখানার উত্তর-দক্ষিণে লম্বাটে এলাকাজুড়ে রয়েছে ঘোড়া আকৃতির ওয়াটার বাক্ , জেব্রা সহ আরো কিছু প্রাণি। রয়েছে এদেশ থেকে বিলুপ্ত নীলগাই। প্রাণি জাদুঘরে আছে ২৪০ প্রজাতির স্টাফিং করা জীব-জন্তু-পাখি। একেবারে দক্ষিণে আছে দক্ষিণ লেক, তার মাঝে বাবলা দ্বীপ। পাশেই কেনিয়ার এক শিংওয়ালা গন্ডার। সঙ্গী হারিয়ে এখন সে বড় নিঃসঙ্গ। বাবলা দ্বিপের উন্মাতাল হাওয়া তার মনে বিন্দুমাত্র দোলা দেয়না। শিম্পাঞ্জীর দেখা মিলবে এখানেই। নারী শিশু সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই শিম্পাঞ্জী। শক্ত গ্রীল ধরে লাফালাফি আর সঙ্গীর মাথার উকুন বেছেই কাটছে সময়।

চিড়িয়াখানায় আছে হাঁসজাতীয় নানা পাখি, লাভ বার্ড, মুনিয়া, উটপাখি, কেশোয়ারী ইত্যাদি। বের হওয়ার পথে দেখা যায় সুন্দরবনের প্রকৃতিক পরিবেশে চিত্রল হরিণ।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাটি ঢাকার মিরপুরের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। জনজাতীয় বিনোদন, বন্যজীবন সংরক্ষণ, প্রজনন, গবেষণা এবং বন্যজীবনের উপর জ্ঞান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মাত্র কয়েকটি সংখ্যক বন্য প্রাণী নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাটি যাত্রা শুরু করে। পরে ১৯৬০ সালে মিরপুরে চিড়িয়াখানা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ১৯৭৮ সালের ২৩ শে জুন বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে। তবে রবিবার সরকারী ছুটির দিন হলে সেই রবিবার চিড়িয়াখানা খোলা থাকে। গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-অক্টোবর) সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং শীতকালে (নভেম্বর-মার্চ) সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুই বছরের বেশি যে কারও জন্যে মেইন গেইট প্রবেশ করতে টিকেট মূল্য ৫০ টাকা। জো মিউজিয়ামে প্রবেশ করতে টিকেট মূল্য ১০ টাকা। এছাড়া স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট এর ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখালে প্রবেশ টিকেট মূল্য অর্ধেক।

বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি চিড়িয়াখানা। এটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি। পরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয় এটি।

বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি চিড়িয়াখানা। এটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি। পরবর্তীকালে এ চিড়িয়াখানা ১৯৭৪ সালে বর্তমান অবস্থান মিরপুরে স্থানান্তরিত হয়।বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা উদ্বোধন ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় জুন ২৩, ১৯৭৪ তারিখ।

বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ দর্শনার্থী ঢাকা চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে থাকেন। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নাম পরিবর্তন করে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়। ঢাকা চিড়িয়াখানার বার্ষিক বাজেট ৩৭.৫ মিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ২৫ মিলিয়ন টাকা পশুদের খাওয়ানোর জন্য ব্যয় করা হয়।বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেতরে একটি জাদুঘর রয়েছে ও একটি মসজিদ রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার ইতিহাস

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ঢাকা শহরের শাহবাগে তৎকালীন নবাবরা একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার গোড়াপত্তন করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে একটি চিড়িয়াখানার অভাব অনুভূত হয়। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে ঢাকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে বর্তমান ইদগাহ এলাকায় ৪-৫ একর জায়গা জুড়ে ছোট আকারের একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন করা হয়। চিড়িয়াখানাটিতে একটি বড়ো পুকুর এবং পাড়ের খানিকটা জায়গা জুড়ে একটি বলাকা প্রদর্শনী ছিল। সেখানে রাজহাঁস, পাতিহাঁস, শীতের পরিযায়ী হাঁস এবং অন্যান্য পাখি ছিল। হাড়গিলা, সারস এবং ময়ূরও প্রদর্শিত হত। বানর, হনুমান আর হরিণ ছিল। সরিসৃপের মধ্যে অজগর ও কুমির ছিল প্রধান।

ঢাকায় একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা স্থাপনের ব্যাপারে প্রথম সরকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে। তৎকালীন কৃষি, সহযোগিতা ও ত্রাণ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সে বছর ২৬ ডিসেম্বর প্রস্তাবনাটি চুড়ান্তভাবে ঘোষিত হয়। এরপর চিড়িয়াখানা স্থাপনের কোনপ্রকার উদ্যোগ ছাড়াই এক দশক পার হয়ে যায়। ১৯৬১ সালের ১১ মার্চ খাদ্য ও কৃষি বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের বরাতে এক উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ পরিষদের কাজ ছিল প্রস্তাবিত চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যান স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দান। তদানীন্তন পশুপালন সার্ভিসের পরিচালক এই পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

ঢাকা চিড়িয়াখানার আয়তন

ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর। চিড়িয়াখানার চত্বরে ১৩ হেক্টরের দুটি লেক আছে।


বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রাণী বৈচিত্র

ঢাকা শহরের মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা তথা ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। প্রধান কিছু প্রাণীরমীরপুর চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। তবে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৩৮ প্রজাতির ২ হাজার ৬২২টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে

মীরপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ, জলহস্তি, কুমির, সাদা ঘোড়া, সিংহ, হরিণ, জিরাফ, কমন এল্যান্ড, উইলডিবিস্ট, হাতি, জেব্রা, গাধা, ওয়াটার বাক, কালো ভল্লুক, উল্লুক, গণ্ডার, উট সহ আরও অনেক প্রাণী রয়েছে। এছাড়াও পাখিদের মধ্যে হাড়গিলা, কালো গলা বক, রাজধনেশ, ইমু, ময়ুর, সাদা ময়ুর ইত্যাদি মিরপুর চিরিয়াখানায় পাওয়া যায়।মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এশীয় সিংহ, লোনা পানির কুমির, ইমপালা, এমু, টাপির, এশীয় কালো ভাল্লুক ইত্যাদি।

ঢাকা চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এদের গড় ওজন ১৮০-২৪০ কেজি। এরা দক্ষ সাঁতারু বা সাঁতার কাটতে সক্ষম। প্রায় সব প্রাণী শিকার করে খায়, বিশেষ করে হরিণ, মহিষ, বন্য গরু, সজারু, মাছ, কাঁকড়া, কাছিম এদের পছন্দের খাবার। গড়ে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত এরা বেঁচে থাকে।

বনের রাজা সিংহ আফ্রিকা ও ভারতের গহিন জঙ্গলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা মাংসাশী ও হিংস্র। এরা দলবদ্ধ হয়ে শিকার করতে অব্যস্ত। এদের গড় আয়ু ১৫-২০ বছর।

শিম্পাঞ্জী- মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো নদীর আশপাশে এদের দেখা যায়। শিম্পাঞ্জী লেজবিহীন বানর জাতীয় প্রাণী। বন্যপ্রাণীর মধ্যে এদেরকেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান মনে করা হয়। এদের প্রধান খাদ্য কচিপাতা ও বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন ফল। এদের গড় আয়ু ২৫-৩০ বছর।

অজগর- বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোতে অজগর সাপ দেখা যায়। এরা সাধারণত ৭.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। দেহের মধ্যভাগ অপেক্ষাকৃত মোটা মাথা ও লেজের দিক সরু হয়ে থাকে। অজগর ধিরস্থির ও অলস প্রকৃতির। এদের গড় আয়ু প্রায় ২০ বছর।

কেশোয়ারী- যে সব পাখি উড়তে পারে না, তার অন্যতম হচ্ছে কেশোয়ারী পাখি। অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনিতে এদের দেখতে পাওয়া যায়। অসাধারণ সৌন্দর্যময় এই পাখিটি দেখার জন্য সবাই বারবার ছুটে যায়। এদের ওজন প্রায় ৪০-৪৫ কেজি। এদের গড় আয়ু ১৮-২০ বছর।

চিত্রা হরিণ- সুন্দরবনের এই মায়াবী হরিণ মিরপুর চিড়িয়াখানায় দেখতে পাওয়া যায়। সৌন্দর্যের কারণে এদেরকে নিয়ে অনেক কাব্য রচনা হয়েছে। দ্রুত গতিতে বাঘের হামলাকে এরা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গাছের কচিপাতা, ফলমূল ও ঘাস এদের প্রধান খাদ্য। সর্বোচ্চ ১৬ বছর এরা বেঁচে থাকে।

ম্যান্ড্রিল, ক্যামেরুন, কংগো পশ্চিম আফ্রিকার গহিন অরণ্যে এদের দেখতে পাওয়া যায়। বেবুন জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে ম্যান্ড্রিল সবচেয়ে বড় ও সুন্দর। এদের গড় আয়ু ২০-২৫ বছর।

ময়ূর- এক সময় বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া গেলেও এখন মিরপুর চিড়িয়াখানা ছাড়া এদের আর কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যায় না। পাখিদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে সুন্দর। পুরুষ ময়ূর নারী ময়ূরকে আকৃষ্ট করার জন্য তার পেখম মেলে ধরে, অর্থাৎ তার ছোট ছোট যে দুটি ডানা রয়েছে তা মেলে ধরে। এর ফলে নারী ময়ূর তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ময়ূর সাধারণত ৮-১৫ বছর বেঁচে থাকে। ঘড়িয়ালÑ বাংলাদেশের সব নদ-নদীতে এক সময় ঘড়িয়াল দেখা গেলেও এখন তা শুধুই ইতিহাস। সুন্দরবনে অল্প কিছু ঘড়িয়াল বেঁচে থাকলেও নিরাপদ আশ্রম মিরপুর চিড়িয়াখানা। এরা কুমির প্রজাতির। গড় আয়ু ৪০-৫০ বছর।

জলহস্তি- আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি জলহস্তি দেখা যায়। মিরপুর চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এই জলহস্তি। বিশাল আকৃতির জলহস্তিগুলো মিরপুর চিড়িয়াখানার ছোট পুকুরগুলোতে সারা দিন ডুবে থাকে। এরা দক্ষ সাঁতারু। খাবারের সময় শুধু ডাঙ্গায় উঠে আসে। এদের গড় আয়ু ৪০-৫০ বছর।

গন্ডার- নেপাল, ভারতের বিভিন্ন বনাঞ্চলে গন্ডার দেখতে পাওয়া যায়। এক সময় সুন্দরবনে এক শিংওয়ালা গন্ডার দেখতে পাওয়া যেত। এখন এই গন্ডার দেখতে হলে আপনাকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় আসতে হবে। এরা কাদাপানিতে গড়াগড়ি করতে ভালোবাসে। এদের গড় ওজন ২০০০-৩০০০ কেজি। গড় আয়ু ২৫-৩০ বছর।

ঢাকা চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ কুমির। এক সময় সারা দেশে কুমির দেখা গেলেও এখন তা বিলুপ্তির পথে। জলজ প্রাণীদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে হিংস্র। বাংলাদেশে দুই শ্রেণির কুমির দেখতে পাওয়া যায়। লোনা পানির কুমির ও মিঠা পানির কুমির। চিড়িয়াখানায় গেলে এই দুই শ্রেণির কুমির দেখতে পাবেন।

হাতি- পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু অঞ্চল ও কক্সবাজারের গহিন অঞ্চলে হাতি দেখতে পাওয়া যায়। চিড়িয়াখানার বিশেষ আকর্ষণ এই হাতি। এরা সর্বোচ্চ ১০০ বছর বেঁচে থাকে। গাছের পাতা, ফলমূল, কচি বাঁশ ও কলাগাছ এদের পছন্দের খাবার।

জেব্রা- সুদান, উগান্ডা, কেনিয়াসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরাও চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ। এরা ঘোড়া জাতীয় প্রাণী। সাদা শরীরের উপর কালো ডোরাকাটা দাগ জেব্রাকে অধিক সৌন্দর্য দেখায়। এদের গড় আয়ু ২০-২৫ বছর। ঘাস ও কচি পাতা এদের প্রধান খাদ্য।

উটপাখি- আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলের বাসিন্দা এই পাখি। এরা উড়তে পারে না। এদের গড় ওজন ১০-১৬০ কেজি। এরা ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। শাক-সবজি ও ফলমূল এদের প্রধান খাদ্য।

পেলিকান- আফ্রিকা থেকে এশিয়ার ফিলিপাইন পর্যন্ত এই সুন্দর পাখিটি দেখতে পাওয়া যায়। এদের ওজন প্রায় ৩-১৫ কেজি। এরা জলজ পাখি। এদের প্রধান খাদ্য মাছ। চিতা বাঘ, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। হিংস্রতায় বাঘ প্রজাতির মধ্যে এরাই প্রথম স্থান দখল করে আছে। এদের গড় আয়ু প্রায় ১৫-২০ বছর। মাংসই এদের প্রধান খাদ্য।

রাজ ধনেশ- মিরপুর চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য অনেকটি বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ ধনেশ। রাজ ধনেশ বাংলাদেশ থেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে।

হনুমান- বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের জঙ্গলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এদের গড় আয়ু ১৮-২৫ বছর। বিভিন্ন ফল এদের প্রধান খাদ্য। এছাড়া ঢাকা চিড়িয়াখানায় ওয়াইল্ড বিষ্ট দেখতে পাওয়া যাবে। কেনিয়া থেকে এদেরকে আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণির বানর, সাপ, পাখি, হায়েনা, মিরপুর চিড়িয়াখানায় গেলে দেখবেন।

ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা
Taken from Dreams Time

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার সময়সূচি

ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে। তবে রবিবার সরকারী ছুটির দিন হলে সেই রবিবার চিড়িয়াখানা খোলা থাকে। গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-অক্টোবর) সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে  । শীতকালে (নভেম্বর-মার্চ) সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশমূল্য

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করার জন্য জনসাধারণের জন্য টিকেট ক্রয় করা বাধ্যতামূলক। চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য প্রতি টিকিটের মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ টাকা মাত্র। দুই বছর বয়সের বেশি সকলের জন্যই ৫০ টাকা মূল্যের টিকেট প্রযোজ্য। চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত জাদুঘরে প্রবেশের জন্য চাইলে অতিরিক্ত ১০ টাকা দিয়ে টিকেট ক্রয় করয়ে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক পরিশোধ করেই চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে নিজেদের শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র (স্টুডেন্ট আইডি কার্ড) প্রদর্শন করতে হয়। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো ফি প্রদান করতে হবে না, তারা ফ্রিতেই বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে পারবেন।

পিকনিক স্পটঃ

উৎসব ও নিরিবিলি পিকনিক স্পট সারাদিন ব্যবহারের জন্য যথাক্রমে ২,০০০ টাকা ও ১,০০০ টাকা চার্জ দিতে হয়।

দর্শনার্থী করণীয়ঃ

প্রানীদের প্রতি দয়াশীল হতে হয়।চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের প্রতি সহযোগীতা মূলক আচরণ করতে হয়।সূর্যাস্তের পূর্বে চিড়িয়াখানা ত্যাগ করতে হয়।সঙ্গে আসা বাচ্চাদের নজরে রাখতে হয়।চিড়িয়াখানার প্রানীদের কাছ থেকে বাচ্চাদের নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হয়।প্রানীদের খাঁচায় বা ঘরে হাত বা কাপড় দিতে হয় না।চিড়িয়াখানার প্রানীদের খাবার দিতে হয় না।


ঢাকা চিড়িয়াখানায় কীভাবে যাওয়া যায়

ঢাকার সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, দোলাইর পার, মতিঝিল, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, গাবতলী হতে মিরপুর-চিড়িয়াখানাগামী যে-কোনো বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশা (সিএনজি) বা কার যোগে চিড়িয়াখানা যাওয়া যায়।

ঢাকা শহরের যেকোন জায়গা মিরপুর ১ নং সনি সিনেমা হল গোল চত্ত্বর থেকে যে রাস্তাটি উত্তর দিকে গিয়েছে সেটি সরাসরি চিড়িয়াখানার দিকে গিয়েছে। সনি সিনেমা হল থেকে রিক্সা বা বাস যোগে চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায়। ভাড়া ২০/২৫ টাকা।ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে বিভিন্ন পরিবহন আপনাকে সরাসরি মিরপুর চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দিবে। রবিবার বন্ধের দিন ব্যতীত সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিরপুর চিড়িয়াখানা খোলা থাকে।


তথ্যসুত্র


জাতীয় চিড়িয়াখানার ইতিহাস, Bishleshon.

জনজাতীয় বিনোদন, Vromonbuzz.

দেশের প্রাচীন এবং সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা, Tour Today.

প্রানীজগতের বিষয়ে তথ্য, Bengali Forum.

মিরপুর চিড়িয়াখানায়, Dhaka Times.

Subscribe for Daily Newsletter