বাংলাদেশের যানযট (Traffic Jam in Bangladesh)

বাংলাদেশের যানযট (Traffic Jam in Bangladesh)

বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে প্রতিদিন যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা হলো যানজট। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা যানজটের শহর হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে সকাল-দুপুর-বিকাল-রাত সব সময়ই যানজট থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে যানজট প্রত্যক্ষ করা যায়। রাস্তার মেরামত কাজ, বর্ষাকালে রাস্তায় খানাখন্দের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। এদেশের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদের সময় সারাদেশে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। অনুন্নত রাস্তাঘাট, দেশীয় অনুন্নত গাড়ী, রাস্তায় রেলক্রসিং এর কারণেও যানজট তৈরি হয়।

বায়ুদূষণ এবং রোগ বৃদ্ধি: দীর্ঘক্ষণ গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকার ফলে নগরীর বায়ু দূষিত হচ্ছে। ফলে অ্যাজমা, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ঢাকার মানুষ। দীর্ঘক্ষণ যানজটে পা গুটিয়ে গাড়ির মধ্যে বসে থাকার কারণে হাঁটু, কোমর ও মেরুদণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হচ্ছে মানুষের।

রাজধানীর ক্রমোন্নতি আংশিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করে, যা বছরে ৬ শতাংশেরও বেশি হারে বেড়েছে।তবে উন্নতি হলেও শহরের পরিবহনব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

যানজট কী

সাধারণভাবে যানজট হলো রাস্তার কোনো কাজ, দুর্ঘটনা, ভারী নির্মাণমূলক কাজে গাড়ির নিশ্চল অবস্থা অথবা খুব মন্থর গতিতে দীর্ঘক্ষণ ধরে এলোমেলোভাবে চলা। পৃথিবীর সকল দেশেই কমবেশি ট্রাফিক জ্যাম বা যানজট পরিলক্ষিত হয়। উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে যানজটের আধিক্য লক্ষণীয়। যানজট নাগরিক জীবনে এক তীব্র যন্ত্রণার নাম। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নগর জীবন যেন এই যন্ত্রণার প্রতিবিম্ব।

বাংলাদেশে যানজট

বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় সকল শহরেই কমবেশি যানজট সমস্যাটি দৃশ্যমান হয়। তবে রাজধানী ঢাকাতে যানজটে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত। রাজধানীর বাইরে অন্যান্য শহরগুলোতে যানজট তীব্র না হলেও বিশেষ সময়ে ও বিশেষ কারণে কখনো কখনো মাত্রাতিরিক্ত হয়ে ওঠে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে যানজট প্রত্যক্ষ করা যায়। রাস্তার মেরামত কাজ, বর্ষাকালে রাস্তায় খানাখন্দের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। এদেশের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদের সময় সারাদেশে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। অনুন্নত রাস্তাঘাট, দেশীয় অনুন্নত গাড়ী, রাস্তায় রেলক্রসিং এর কারণেও যানজট তৈরি হয়। তবে শহরগুলোতে যানজট সমস্যা থাকলেও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল এ সমস্যা থেকে মুক্ত।

ঢাকা শহরে যানজট ও কারণ

ঢাকা বিশ্বের একটি অন্যতম জনবহুল শহর। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। দেশের অন্যান্য শহরের চেয়ে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি হবার ফলে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ঢাকায় নিত্য বসতি স্থাপন করছে। বিশাল এ জনসংখ্যার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত ঢাকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন যানবাহন। কিন্তু যানবাহন ও লোকসংখ্যার তুলনায় রাস্তাঘাট বাড়ছে না। বিপরীতে অধিক জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে রাস্তাঘাট কমে যাচ্ছে। অত্যধিক জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ অপর্যাপ্ত রাস্তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে কোনো রকম নিয়মনীতি বা আইনের তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র দালান-কোঠা, কল-কারখানা গড়ে উঠছে।

রাজধানীতে যেখানে-সেখানে গাড়ি পাকিং এখন নিত্য ব্যাপার। যা যানজট বৃদ্ধিতে অন্যতম সহায়ক, ড্রাইভারদের আইন না মানার প্রবণতা, আগে যাবার প্রবণতা যানজট বৃদ্ধিতে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। পাশাপাশি বিভিন্ন রাস্তায় রয়েছে অসাধু ট্রাফিক পুলিশের দৌরাত্ম্য। ঢাকায় যানজটের অন্যতম প্রধান আরেকটি কারণ হলো অপর্যাপ্ত পাবলিক বাস। পক্ষান্তরে প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস এ সমস্যাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। পথচারীরাও আইন না মেনে ইচ্ছামতো রাস্তা পার হয় ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। একই রাস্তায় দ্রুতগতির গাড়ি ও নিম্নগতির রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা চলার কারণেও সৃষ্টি হয় যানজটের। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আন্দোলন, মিছিল-মিটিং এ সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলছে।

বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তায় চলছে টিএন্ডটি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিভাগের অসমন্বিত খোঁড়াখুঁড়ি।সংকীর্ণ রাস্তাঘাটের ওপর অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের ভিড় রাস্তার ওপর স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে থাকে।তার ওপর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পথের অনেকটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।ফলে সামান্য পথ পাড়ি দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।

বর্তমানে মালিবাগ ও মৌচাক মোড়, মগবাজার, বাংলা মোটর, মহাখালি, সায়েদাবাদ - বিশ্বরোড সংযোগস্থল, নীলক্ষেত মোড়,সাইন্স ল্যাবরেটরি, এলিফেন্ট রোড,বাটা মোড়, কাঁটাবন ক্রসিং, শাহবাগ মোড়, কাঁকরাইল মোড়, শেরাটন ক্রসিং, মিরপুর দশ নম্বর, গোল চক্কর, সংসদ ভবনের দক্ষিণ - পশ্চিম কোণের ক্রসিং, কলাবাগান ক্রসিং প্রভৃতি পয়েন্টে যানবাহনের পারাপারে ভয়ংকর সমস্যা হচ্ছে।রাস্তাপার বা মোড় নিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে।এর ফলে মহাসড়কের ওপর সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।সকালে অফিস সময় ও বিকেলে যানজটের তীব্রতা মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠে।ব্যস্ত এলাকায় অধিকাংশ ফুটপাথ দোকানি ও হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় পায়ে চলা মানুষদেরও শিকার হতে হয় সীমাহীন ভোগান্তির।ভিড় ঠেলে ও ঘর্মাক্ত অবস্থাতেও অনেক সময় পথ চলা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

মগবাজার যানজট। Taken from UNB

যানজটের পেছনে ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতিকে দায়ী করেছে অনেক বাস ও ট্রাক চালক।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগটি সর্বাংশে সত্য না হলেও সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন নয়।তিনি ট্রাফিক পুলিশের অপ্রতুল লোকবল,মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন ও চালকদের দায়িত্বহীনতা এবং অপ্রশস্ত রাস্তা যানজটের মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেন।তিনি বলেন,যে পরিমাণে লোকসংখ্যা ও যানবাহন বাড়ছে সেই পরিমাণে নতুন রাস্তাঘাট সৃষ্টি হচ্ছে না।অপরদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবার ফলে রাজধানীর ওপর যানবাহনের চাপ বাড়ছে।

এদিকে তথ্যাভিজ্ঞ সূত্র বলেছে, অর্থবছরের শেষে এসে প্রকল্পের টাকা খরচ করার তাগিদে বিভিন্ন সংস্থা একসাথে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। এর সাথে বড় ধরনের দুর্নীতিও জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বৃদ্ধি পেয়েছে।সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হন নি। ডিসি( ট্রাফিক )জানান, পৃথিবীর প্রায় সব মেগাসিটিতেই যানজট সমস্য প্রকট।তিনি বলেন, ঢাকা শহরের চাইতে ব্যাংককের যানজট অনেকগুণ বেশি অথচ সেখানে রাস্তাঘাট অনেক উন্নত।

রাজধানীতে যানজট এক নির্মম বাস্তবতা। এতে আটকা পড়ে প্রতিদিন রাস্তায় অপচয় হয় অসংখ্য কর্মঘণ্টা। ২০১৭ সালে ঢাকার যানজট নিয়ে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।তাতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীতে যানজটে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) "মিটিগেটিং ট্রাফিক কনজেশন ইন ঢাকা: অ্যাপ্রোপ্রিয়েট পলিটিক্যাল এজেন্ডা" (ঢাকার যানজট কমানো: কার্যকর রাজনৈতিক কর্মসূচি) শিরোনামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।তাতে বলা হয়, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

গবেষকদের মতে, যদি রাজধানীর যানজট ৬০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে। যানজটে সাধারণ মানুষের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। উন্নতির বদলে দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে,যানজট আমাদের জীবনমানের উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। বর্তমানে যানজটের কারণে আমাদের জ্বালানি খরচ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এ জ্বালানি দিয়ে দেশের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন করে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা সম্ভব।নগরবিদ, গবেষক, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর যানজট সমস্যাটা তলাবিহীন ঝুড়ির মতো।

যানজট নিরসনের উপায়

যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সরকারের আশু করণীয় হচ্ছে ছোট ছোট মিনিবাস তুলে দিয়ে ৫২ সিটের বাস ও দোতলা বাস চালু করা। মূল সড়ক থেকে রিকশা সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া। ট্রাক ও ঠেলাগাড়ি কেবল রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেওয়া। বর্ধিত ঢাকার সঙ্গে মূল ঢাকায় চলাচলের জন্য অধিক সংখ্যক বাইপাস সড়ক নির্মাণ।

রাস্তাগুলো দখলমুক্ত করা।ঢাকায় রাজপথ অপদখল পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।রাজধানীর রাজপথ দখলমুক্ত হলে যানজট সহনীয় মাত্রায় আসবে।ঢাকা আমাদের রাজধানী।যানজটে ৪০০ বছরের পুরনো আমাদের এই রাজধানী অচল হয়ে পড়–ক, তা কাম্য হতে পারে না।নিজেদের স্বার্থেই এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।সরকার,বিরোধীদল,নগর,পরিকল্পনাবিদ,পরিবেশবিদ সবাই একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

যানজট জাতীয় অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।উৎপাদনের জন্য যে সময় ব্যয় হওয়ার কথা,তা গিলে খাচ্ছে এই সমস্যা।গত এক দশকে যানজটে অপচয় হওয়া সময় ব্যবহত হলে বাংলাদেশ বহু আগেই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতো।ফলে এই সমস্যার সমাধানে আন্তরিক প্রয়াসই এখন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

এ সমস্যার সমাধানে যা-ই করা হোক না কেন, তা তলা দিয়ে পড়ে যায়, কোনো কাজে আসে না। এর প্রধান কারণ, সমস্যা সমাধানে সমন্বয়হীনতা। আসলে যে যার মতো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।ফলে তা কাজে না এসে উলটো আরও সংকট সৃষ্টি করছে।তাদের মতে,রাজধানীর রাস্তায় যানজট নিরসনে একই রাস্তায় একাধিক পরিবহণ চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। নগরীর প্রতিটি রাস্তায় লেন সিস্টেম করে এবং তা মেনে চললে যানজট অধিকাংশে কমে আসবে।

ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ভেতর আনতে হবে।ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আনার পাশাপাশি যানজটের কেন্দ্রবিন্দুগুলো চিহ্নিত করে নির্মাণ করা হচ্ছে বড় বড় ফ্লাইওভার।মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়ে গেছে।এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেই যে ঢাকা যানজটমুক্ত হবে এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে না পারলেও সমস্যা যে কমবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।অন্যদিকে ভিভিআইপিদের চলাচলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা ঢাকার মতো যানজটপূর্ণ ঘনবসতির শহরে বড়ই বেমানান।এটা বিবেচনায় নেওয়া সংশ্লিষ্টদের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

যানজট নিরসনে রাজধানীর রাস্তাগুলো,ব্যাপক হারে ফ্লাইওভার নির্মাণ,রাজপথ থেকে হকার উচ্ছেদ এবং অবৈধ পার্কিংয়ের অবসান ঘটাতে হবে।ট্রাফিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রেও আরোপ করতে হবে কঠোর শৃঙ্খলা।

যানজটের কারণে রাজধানীতে পরিবহন প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে।সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা।এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।এর মধ্যে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ বিভিন্ন ধরনের নতুন পরিবহন।

২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩০ কোটি।এ প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার সময় এখনই।রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে হলে যথাযথ সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি।যানবাহন এবং যানজট যে শহরের সচলতা শুধু কমিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও আঘাত হানছে।এখন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শহর সে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এ শহর অচল হয়ে পড়বে।

যানজটে এমনই অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে যে, আধাঘণ্টা দূরত্বের সড়ক অতিক্রম করতে গড়ে ৭-৮ গুণ পর্যন্ত সময় লাগছে।রাজধানীর যানজটের জন্য প্রাইভেট কারের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়।বলা হয়, রিকশার পাশাপাশি প্রাইভেট কারের আধিক্য অচলাবস্থার সৃষ্টি করছে।তবে অভিজ্ঞজনদের মন্তব্য, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা যানজটের জন্য প্রধানত দায়ী।

ঢাকার রাজপথের এক বড় অংশ অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।এ অবৈধ দখলদারিত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক টাউট, পাড়া-মহল্লার মস্তান এবং পুলিশের সম্পর্ক থাকায় রাজধানীর সড়কগুলো দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকানপাট উঠিয়ে দেয়া সম্ভব হলে যানজট এমনিতেই সহনীয় হয়ে উঠবে।এর পাশাপাশি কঠোরভাবে ট্রাফিক আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হলে যানজটের রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে।

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় তা হলো, ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে শুধু পুলিশ দায়িত্ব পালন করে থাকে। আর বাদবাকি রাস্তায় কী হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। যেমন রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে থাকে। রাস্তা দখল করে পার্কিং, মালামাল রাখা, ইচ্ছেমতো যাত্রী ওঠানো-নামানো, যাত্রীর জন্য বাসগুলোকে বসে থাকা, যেখানে সেখানে টেম্পো স্ট্যান্ডসহ নানা কারণে সড়কে যানজট লেগে থাকে।

আইন না মানার প্রবণতা রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। তাই রাস্তায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি আরও বেশি স্থাপন করতে হবে সিসি ক্যামেরাও। কেউ আইন ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে নিতে হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ট্রাফিক আইনভঙ্গের কারণে কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা, চালকের পয়েন্ট কাটা গেলেই মানুষ আইন মানতে বাধ্য। এভাবে সবার মধ্যে অল্পদিনের মধ্যেই সচেতনতা সৃষ্টি হবে। তবেই নগরীর যানজট পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক করা হয়ত সম্ভব।

পরিশেষে বলা যায়,একদিকে নগরকেন্দ্রিক যানজট নিরসনে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে পাল্লা দিয়ে মানুষ বাড়ছে রাজধানী ঢাকায়। এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। যারা গ্রাম বা মফস্বল ছেড়ে ঢাকায় আসছেন, তাদের বেশিরভাগের উদ্দেশ্য চাকরি। আরেকটি অংশ আসছে উন্নত পড়াশোনার তাগিদে। নদীভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে যে অংশটি রাজধানীতে এসে আশ্রয় নিচ্ছে সেই সংখ্যা নগণ্য।


তথ্যসুত্র

যানজট সমস্যার সমাধান কোন পথে, Jugantor.

যানজট কমাতে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ, Protidiner Sangbad.

রাজধানীর যানজট নিরসনের উপায়, Daily Inqilab.

যানজট রোধে বিকল্প উপায় নিয়ে ভাবনা জরুরি, News Bangla 24.

Subscribe for Daily Newsletter