বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু (Bangladesh's First Metro Journey)

পৃথিবীর প্রথম মেট্রোরেল চালনা করা হয় লন্ডনে ১৮৬৩ সালে। পেডিংটন স্টেশন থেকে কিং ক্রস হয়ে ফারিংডন স্টেশনে মাত্র চার মাইল এলাকায় এটি চলাচল শুরু করে। পৃথিবীর প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেলও লন্ডনে চালনা করা হয় ১৮৯০ সালে। বর্তমানে লন্ডনে ৪০২ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন যা ২৭টি স্টেশন দ্বারা যুক্ত। এর ৪৫ ভাগ নেটওয়ার্ক মাটির নিচে। বর্তমানে চালকবিহীন চলাচল করে ট্রেনটি। দিনের ব্যস্ত সময়ে ৫৪০টি ট্রেন চলে যাতে ৫০ লাখ মানুষ যাতায়াত করতে পারে।
পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম মেট্রো বুদাপেস্ট চালু হয় ১৮৯৬ সালে। ইউনেসকো ২০০২ সালে এটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।পৃথিবীর দীর্ঘতম মেট্রো লাইন চীনের সাংহাইয়ে, যা ৪৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। মোট ১১টি রুট দ্বারা সংযুক্ত এ নেটওয়ার্কে ২৭৭টি স্টেশন আছে। এটির নির্মাণ কাজ ১৯৯৫ সালে শুরু হয়েছিল। সাংহাই মেট্রোরেল সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৩১১ কিলোমিটার গতিতে চলে।পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত মেট্রো স্টেশন টোকিওতে। ২০১৩ সালের এক হিসেবে দেখা গেছে, এ মেট্রোরেলের বার্ষিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন। এটি জাপানের সবচেয়ে পুরাতন মেট্রো লাইন যা ১৯২৭ সালে চালু হয়। সর্বমোট ৩১০ কিলোমিটার এ মেট্রো নেটওয়ার্ক ১৩টি লাইন ও ২৯০টি স্টেশন দ্বারা সংযুক্ত।
ঢাকায় মেট্রোরেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
মআরটি-৬ লাইনের প্রথম পর্যায়ের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ জনসাধারণের চলাচলের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এবং তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম যাত্রাটি করেন। এটিই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মেট্রোরেল, যা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়।
মেট্রোরেলের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় এই মেগা প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল লাইন (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণকাজ ২৬ জুন ২০১৬ সালে শুরু হয়। মেট্রোরেলের প্রথম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে। রাজধানীর জন্য তৈরি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) বলা হয়েছিল মেট্রোরেলের কথা। এরপর মাস গেছে, বছর গেছে, যুগ গেছে, মানুষের অপেক্ষা শুধু বেড়েছে। ২০১৬ সালে দেখা গেল, বেগম রোকেয়া সরণিতে সড়কের মাঝখানে কংক্রিটের ব্লকের বেড়া দিয়ে শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের কাজ। ছয় বছর পর মেট্রোরেল এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
মেট্রোরেলের এই আনুষ্ঠানিক চলাচল বাংলাদেশে অনেক ‘প্রথমে’র জন্ম দেবে—এটি বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুৎ–চালিত ট্রেন, চলবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে; প্রথম যাত্রায় ট্রেনটি চালাবেন একজন নারী চালক, নাম মরিয়ম আফিজা এবং প্রথমবারের মতো যাত্রীরা ভাড়া পরিশোধ করবেন কার্ড দিয়ে। উড়ালপথের প্রথম ট্রেনও মেট্রোরেল।রাজধানীর লক্কড়ঝক্কড় ও জীর্ণ বাসের বিপরীতে জাপানে তৈরি মেট্রোরেলের কোচগুলো অত্যাধুনিক। তিনতলা মেট্রোরেল স্টেশনে ওঠা–নামার জন্য সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি (এসকেলেটর) ও লিফট রয়েছে। ট্রেন ও স্টেশন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি)।
মেট্রোরেলের জন্য দিয়াবাড়ি ও মতিঝিল সাবস্টেশনে জাতীয় গ্রিড থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ–সংযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। আছে বিকল্প সংযোগও। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় হলে ট্রেন পরের স্টেশনে যাবে ব্যাটারির সাহায্যে। এই ট্রেন দুই দিকে চলতে পারে, ঘোরানোর প্রয়োজন হয় না।উন্নত দেশগুলোতে বহু আগেই মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানেও আছে মেট্রোরেল। সেগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশেও মেট্রোরেল হবে সবচেয়ে জনপ্রিয় গণপরিবহন।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি পথে মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে, যা লাইন-৬ নামে পরিচিত। এর মধ্যে আজ চালু হতে যাওয়া উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব পৌনে ১২ কিলোমিটার।
মেট্রোরেল চালুর আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁও স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হবে। কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে সময় লাগবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। পুরোটা চালু হলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দৈনিক ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এই পথ যেতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট।২৮ ডিসেম্বর ২০২২বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়েছে বুধবার দুপুরে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠারে পর স্টেশন থেকে সবুজ পতাকা উড়িয়ে প্রথম ট্রেনটির যাত্রার সূচনা করেন।
প্রথম ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর তিনি সবুজ পতাকাটিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর দ্বিতীয় ট্রেনটিতে করে প্রধানমন্ত্রী ও অন্য অতিথিদের দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁওয়ে নিয়ে যায়।
তবে এক দশক আগে নেয়া এই প্রকল্পটির আংশিক এবং সীমিত আকারে চালু হলো। মতিঝিল পর্যন্ত এর বাকী অংশ আগামী বছরে শেষ করার আশা করলেও কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশ মিলিয়ে প্রকল্পটি পুরোপুরি শেষ করতে ২০২৫ সাল হতে পারে।অন্যদিকে এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি মেট্রো লাইন তৈরি প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশের সরকার, যা পুরোপুরি কার্যকর হলে ঢাকার ভয়াবহ যানজটের সমাধান হবে বলে তারা আশা করছে।
মেট্রোরেল-৬ এর আংশিক উদ্বোধন উপলক্ষে দিয়াবাড়ীতে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।এ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে ডাক বিভাগ আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করেছে পঞ্চাশ টাকার স্মারক নোট।সুধী সমাবেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে এবং মেট্রোরেলের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রার মুকুটে নতুন পালক সংযুক্তি হলো যা কমলাপুর পর্যন্ত সংযোজিত হবে।
তিনি বলেন ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক পুরোপুরি নির্মাণ সম্পন্ন হলে যানজটের নিরসন হবে এবং সবাই নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।প্রসঙ্গত, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুটের নির্মাণ কাজ ওই সময়ে শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে পাতাল রেলের পরিকল্পনাও আছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন মেট্রোরেলের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দিক থেকে বাংলাদেশ চারটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে ।
“একটি হলো মেট্রোরেল নিজেই। আর এই প্রথম বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করেছে এবং এটি দূর নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত। এছাড়া এর মাধ্যমে দ্রুত গতি সম্পন্ন ট্রেনের যুগে পদার্পণ করলো। এর গতি প্রতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার”।
তিনি বলেন মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বিদেশীদের উপর নির্ভর করতে হবে না।
“আমরা নিজেরাই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করবো এবং এর শব্দ ও কম্পন দূষণ মানদণ্ডের নিচে থাকবে”।
জনসাধারণের জন্য স্বপ্নের এই বাহনের দ্বার খুলবে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। আপাতত সীমিত যাত্রী নিয়ে চলবে। যাতে যাত্রীরা ১০ মিনিটেই এই পৌনে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবেন।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, জনগণের স্টেশনে পরিচিতি ও ট্রেন ব্যবহারে অভ্যস্ততা গড়ে তুলতে চলাচল সীমিত করা হয়েছে। আগামী বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশনেই থামবে ট্রেন। চলাচলকারী ছয় কোচ যুক্ত ১০টি ট্রেনই তার পূর্ণ সক্ষমতার ২৩০৮ জন যাত্রী নিয়ে চলবে।
যাত্রা শুরু করলো মেট্রোরেল, প্রথম যাত্রী প্রধানমন্ত্রী
টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করলো দেশের প্রথম মেট্রোরেল। রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী মেট্রোরেল যাত্রা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার বোন এবং জাতির জনকের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। তিনিও টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ওঠেন। বিরতিহীন যাত্রা করে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডের মধ্যে আগারগাঁও স্টেশনে এসে থামে ট্রেন।
উত্তরা উত্তর স্টেশনে দুটি ট্রেন ছিল। এরমধ্যে প্রথম ট্রেনটি বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরেরটায় যাত্রী হন তিনি।সুধী সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী উত্তরা উত্তর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যান। সেখানে সবুজ রঙের পতাকা উড়িয়ে ও ফিতা কেটে মেট্রোরেলের চলাচল উদ্বোধন করেন তিনি। বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে ওঠেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার জন্য সংরক্ষিত আসনে বসেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে আরও ছিলেন–যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা শিক্ষক, ইমাম, অন্যান্য ধর্মযাজক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, দোকানি/বাদাম বিক্রেতা/সবজি বিক্রেতা, মেট্রোরেলের শ্রমিক, প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমকর্মী, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী, একজন দৃষ্টি/বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মেট্রোরেল ভ্রমণ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার মানুষরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রীদের তালিকায় রয়েছেন।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অনন্য মেট্রোরেল
অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের (ওসিসি) মাধ্যমে পুরো সিস্টেম পরিচালিত হবে। প্রোগ্রাম রুট কন্ট্রোলার সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনের রুটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় বেগ পোহাতে হবে না। ঢাকা মেট্রোর অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, মুভিং ব্লক কমিউনিকেশন বেজড টেলি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটিও) থাকবে। মেট্রোরেলে যাত্রী নিরাপত্তায় থাকছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। মেট্রোরেলে চোখধাঁধানো প্রযুক্তির সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
অটোমেটিক স্টপ কন্ট্রোল
ট্রেন অটোমেটিক স্টপ কন্ট্রোলের মাধ্যমে কোথায়, কখন থামাতে হবে সেটি নির্ধারিত হবে এবং এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে চালকের বেশি কিছু করার থাকবে না। প্রোগ্রাম রুট কন্ট্রোলার সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনের রুটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে মেট্রোরেল পরিচালনা খুবই সহজতর হয়েছে।
ডিজিটাল টিকিট
মেট্রোরেলের টিকিট পুরোপুরিই কম্পিউটারাইজড। স্টেশনের মূল প্লাটফরমে ঢোকা ও বের হওয়ার মুখের দরজা খুলতে ব্যবহার করতে হবে চিপযুক্ত টিকিট। স্টেশনে যাত্রীদের তাৎক্ষণিক টিকিট কাটার ব্যবস্থার পাশাপাশি সাপ্তাহিক ও মাসিক টিকিটও মিলবে বিশেষ মেশিনে। এ প্রযুক্তি তৈরি করছে সনি কোম্পানি। নির্দিষ্ট একটি কার্ড কিনে সেই কার্ডের মাধ্যমে পাঞ্চ করে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে মেট্রোরেলে চলার জন্য। সেই কার্ড আবার পাঞ্চ করেই রেল থেকে বের হতে পারবেন যাত্রীরা।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়েও বন্ধ হবে না
এ ট্রেন চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য উত্তরার ডিপোয় সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। মতিঝিলে আরেকটি স্থাপনের কাজ চলছে।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি সাবস্টেশনে দুটি ট্রান্সফরমার থাকবে। একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং অন্যটি জরুরি প্রয়োজনে চালু হবে। অর্থাৎ কোথাও বিদ্যুৎবিভ্রাট হলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হবে না। জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় হলেও ব্যাটারির মাধ্যমে চলমান ট্রেনগুলো নিকটবর্তী স্টেশনে পৌঁছাতে পারবে।
সার্বক্ষণিক মনিটরিং
প্রতিটি স্টেশনে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রীদের জন্য থাকবে দিকনির্দেশনা। স্টেশনে ও ট্রেনের ভেতরে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে চলবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং।
স্টেশনে তাক লাগানো প্রযুক্তি
মেট্রোরেলে যাত্রী নিরাপত্তায় থাকছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। স্টেশনে ঢোকার পর থেকে প্রতিটি ধাপে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সহায়তায় সহজতর হবে যাত্রাপথ। ঢাকায় মেট্রোর প্রতিটি স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি। এর পর প্লাটফরমের নির্দিষ্ট পয়েন্টে আছে স্বয়ংক্রিয় দরজা। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে খুলে যাবে এ দরজা। এটি নিয়ন্ত্রণের সফটওয়্যার তৈরি করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিপ্পন। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কমিউনিকেশন বেজড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম (সিবিটিসি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। থাকছে অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটিও), অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন (এটিপি), অটোমেটিক ট্রেন সুপারভিশন (এটিএস) ও মুভিং ব্লক সিস্টেম (এমবিএস)।এ ছাড়া আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মেট্রোরেল স্টেশন থেকে বের হতে জরুরি বহির্গমন পথ রয়েছে। স্টেশন ও ট্রেনে রাখা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। মেট্রোরেলের পুরো লাইনজুড়ে আছে ‘নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়াল।’ এটি টেন চলাচলের সময় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
মেট্রোরেলে প্রযুক্তির চমক
জাপানের প্রযুক্তিতে তৈরি দেশের প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেলের নান্দনিক স্টেশনগুলোতে থাকছে যাত্রীদের অত্যাধুনিক সেবার সব সুবিধা। ট্রেন অটোমেটিক স্টপ কন্ট্রোলের মাধ্যমে কখন কোথায় থামাতে হবে- সেটি নির্ধারিত হবে এবং নানা প্রযুক্তি সুবিধা যুক্ত হওয়ায় চালকের বেশি কিছু করার নেই। ট্রেন চলবে সফটওয়্যারে। অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের (ওসিসি) মাধ্যমে পুরো সিস্টেম পরিচালিত হবে। প্রোগ্রাম রুট কন্ট্রোলার সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনের রুটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় বেগ পোহাতে হবে না। ঢাকা মেট্রোর অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, মুভিং ব্লক কমিউনিকেশন বেজড টেলি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটিও) থাকবে। মেট্রোরেলে যাত্রী নিরাপত্তায় থাকছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। মেট্রোরেলে চোখধাঁধানো প্রযুক্তির সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
অটোমেশন সিস্টেম
বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কমিউনিকেশন বেজড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম (সিবিটিসি) যুক্ত করা হয়েছে। থাকছে অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন (এটিও), অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন (এটিপি), অটোমেটিক ট্রেন সুপারভিশন (এটিএস) ও মুভিং ব্লক সিস্টেম (এমবিএস)। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে স্ট্ক্রিন ডোর সিস্টেম।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. মিজানুর রহমান জানান, এমআরটি একটি রেল বেজড প্রকল্প হওয়ায় এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করবে। এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মুভিং ব্লক কমিউনেকশন বেজড টেলি কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে, অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন বা এটিও থাকবে। এসবের ফলে চালকের কিছু করার থাকবে না। ট্রেনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সেন্ট্রাল কন্ট্রোল যেখানে থাকবে সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে
নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়াল
চলার সময় মেট্রোরেলের শব্দ ও কম্পন কমাতে লাইনজুড়ে রাখা হয়েছে বিশ্বের বিরল ও ব্যয়বহুল আধুনিক প্রযুক্তি 'নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়াল'। এই ব্যারিয়ারের ফলে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বায়তুল মোকাররমের মতো এলাকাগুলোতে শব্দদূষণের মাত্রাও কমে আসবে। নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়ালের টেকনোলজি শব্দ কমাতে সহায়তা করবে বলে মেট্রোরেলের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মানুষের কাছে এটি বিরক্তির কারণ হবে না।
রেডিও অ্যান্টেনা
মেট্রো রেললাইনের প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ মিটার পরপর রেডিও অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে আছে চারটি করে অ্যান্টেনা। প্রতিটি অ্যান্টেনা ট্রেন ও কন্ট্রোল সেন্টারের (নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। তাহলে ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজা বরাবর হবে না। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ডিপোয় একটি অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। ট্রেন কোথায় কোথায় থামবে, কত সময় থামবে, কত গতিতে চলবে- এর সবই সেখান থেকে আগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ ও বের হতে চিপযুক্ত কার্ড
মেট্রোরেলের টিকিট পুরোপুরিই কম্পিউটারাইজড। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের চিপযুক্ত কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। এরপর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে যাত্রী বেরও হতে পারবেন না। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। এটাকে সিঙ্গেল জার্নি টিকিটও বলা হয়। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে।
টিকিট ও ভাড়ার জন্য কার্ড রিচার্জের ব্যবস্থা
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। স্টেশনে যাত্রীদের তাৎক্ষণিক টিকিট কাটার ব্যবস্থার পাশাপাশি সাপ্তাহিক ও মাসিক টিকিটও মিলবে বিশেষ মেশিনে। যাকে বলা হচ্ছে র্যাপিড পাস। এই পাস প্রবেশের মুখে স্পর্শ করালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দরজা খুলে যাবে। এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে সনি কোম্পানি। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রে কার্ডে টাকা রিচার্জ করা যাবে।
ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং
স্টেশনে ও ট্রেনের ভেতরে আধুনিক প্রযুক্তির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে চলবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং। শুধু কোচের ভেতর নয়, প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশনের ওপরও নজর রাখবে। কোনো অঘটন ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা
মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য থাকছে অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশনের ব্যবস্থা। আপৎকালীন ট্রেন থেকে বের হওয়ার জন্য জরুরি দরজা রাখা হয়েছে। মেট্রো স্টেশন, রুট অ্যালাইনমেন্ট এবং ট্রেনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয় স্প্রিঙ্কলার ও ওয়াটার হাইড্র্যান্ট সংযোজনের ব্যবস্থাও থাকছে। স্টেশন ও ট্রেনে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ফলে নিশ্চিন্তে ও স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করা যাবে।
মেট্রোরেলের যুগে বাংলাদেশ, যেভাবে এলো দেশে
ঢাকায় প্রতিনিয়ত যানবাহন বৃদ্ধির কারণে যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর। স্বল্প দূরত্বের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে। যানজটের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। ২০১৮ সালে পরিচালিত বুয়েটের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ঢাকা শহরের যানজটের জন্য বার্ষিক ৪.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়, যা জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশ এর বেশি।যানজটের কারণে ঢাকা মহানগরীতে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে কর্মজীবীদের, যার আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে যানবাহনের গতি মানুষের হাঁটার গতির মতো ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটারে চলে এসেছে। ১২ বছর আগেও ঢাকায় যানবাহনের এ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।
ঢাকাবাসীর যাতায়াতের একটি সুবিধাজনক মাধ্যম চালু হলো মেট্রোরেল। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয় ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে। ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) গঠন করা হয়। এই কোম্পানির মাধ্যমে প্রথম প্রকল্প হিসাবে নেওয়া হয় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৬। যা এমআরটি-৬ নামে পরিচিত। প্রকল্পটি উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।
সরকার ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করে। বাস্তবে কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এ প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে রয়েছে-জাপান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জাইকা)। শুরুতে প্রকল্পের আকার ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটের কারণে আরও প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের লাইন-৬ এর খরচ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা দিচ্ছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আর সরকার এই প্রকল্পে খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
মেট্রোরেলে প্রচুর যাত্রী বহন ক্ষমতাসহ একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহণ সুবিধা প্রদান করবে, এটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে এবং প্রতি ৪ মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন যাতায়াত করবে।ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত একটি বাসে যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা এবং ভিড়ের সময়ে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। মেট্রোরেলে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট।
মেট্রোরেল আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি নতুন যুগে আবদ্ধ করেছে। উন্নত দেশগুলোয় মেট্রোরেল এবং অন্যান্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন মাধ্যমগুলোকে একত্রিত করে একটি উন্নত রুট সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে যাতে মানুষ শুধু একটি পেমেন্ট কার্ডের মাধ্যমে তাদের গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে মেট্রোরেলে ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। মেট্রোরেলের যুগে এখন বাংলাদেশ। জাপানের হাত ধরে বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হয়।
বিভিন্ন দেশের বড় শহরগুলোর নাগরিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানের নজর থাকে মূলত মেট্রোরেল ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর। এক্ষেত্রে প্রধানতম অনুঘটক ধরা হয় টোকিও মেট্রোর ইতিবাচক সাফল্যের অভিজ্ঞতাকে। ওই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বিশ্বের অনেক বড় শহরে মেট্রোরেল নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে জাপান। সারা বিশ্বে মেট্রোরেল পরিচালনায় ব্যবহার করা হয় জাপানী প্রযুক্তি। কারণ মেট্রোরেলে থাকে মুভিং ব্লক কমিউনেকশন বেজড টেলি-কন্ট্রোল এবং অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন সিস্টেম। বিশেষ ধরনের ইনভার্টার সিস্টেমে চালিত এসব ট্রেন অনেক কম শব্দ তৈরি করবে, যা শব্দদূষণের পর্যায়ে পড়ে না। জাপানের রাজধানী টোকিওতে মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হয় ১৯২৭ সালে। জনবহুল শহর টোকিওর বাসিন্দাদের যাতায়াতে প্রচুর সময় বাঁচাচ্ছে মেট্রোরেল। একই সঙ্গে বাড়িয়েছে শহরটির অর্থনৈতিক উপযোগিতাও।বাংলাদেশে মেট্রোরেল নতুন হলেও বিশ্বে দ্রুতগতির বিদ্যুৎচালিত এ পরিবহন ব্যবস্থা নতুন নয়। এর বয়স প্রায় ১৪০ বছর। উইকিপিডিয়ার হিসেবে, বর্তমানে পৃথিবীর ৬১টি দেশের ২০৫টি শহরে চালু আছে এ দ্রুতগতির পরিষেবা। আরো অর্ধ শতাধিক শহরে এ ব্যবস্থা নির্মাণে কাজ চলছে।
মেট্রোরেল এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের আগ্রহ, কৌতূহলের শেষ নেই। বুধবার সকাল হতেই আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ নম্বর পর্যন্ত উৎসুক মানুষের ভিড়। উদ্বোধনের পর বাড়ে জটলা। প্রথম দিন ওঠা যাবে না জেনেও রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে মানুষ, সঙ্গী হয়েছে স্বপ্ন-যাত্রার।মাথার ওপর দিয়ে এত্ত বড় ট্রেন কীভাবে যায়? ট্রেনের মধ্যে কি মানুষ থাকে! ট্রেন কি অনেক জোরে চলে যায়? চলতে চলতে আবার কি নিচে নামে!
৯ বছরের স্বপ্নিলের মনে এ রকম হাজারো প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই সন্তানকে নিয়ে আগারগাঁওয়ে আসেন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম।উদ্বোধনের পর আগারগাঁও স্টেশনের ঠিক নিচে দাঁড়িয়ে স্বপ্নিল। পুরোটা সময়জুড়েই ওপরের দিকে তার কৌতূহলী চোখ। শফিকুল ইসলাম বলেন, 'মেট্রোরেল নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ওর জিজ্ঞাসা ছিল। শুধু প্রশ্ন করে, তাই নিজ চোখে দেখাতে নিয়ে এসেছি।'হ্যাঁ, মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের আগ্রহ, কৌতূহলের শেষ নেই। বুধবার সকাল হতেই আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ নম্বর পর্যন্ত উৎসুক মানুষের ভিড়। উদ্বোধনের পর বাড়ে জটলা। প্রথম দিন ওঠা যাবে না জেনেও রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে মানুষ, সঙ্গী হয়েছে স্বপ্ন-যাত্রার।
সকাল থেকেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের চোখ ছিল মেট্রোরেলে। স্টিল ছবি, ভিডিও, ফেসবুক-ইউটিউবে লাইভ, আলাদা কনটেন্ট তৈরি, সেলফি- আরও কত-কী! সময়কে ধরে রাখতে ছিল নানা চেষ্টা। শুরুর দিনের স্মৃতি ধরে রাখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। তাদের কথা, এই দিনটি বারবার আসবে না। তাই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে চায় সবাই।মিরপুরের মাজার রোড থেকে আসা তাসনুভা বলেন, ‘আধুনিক এমন সুবিধা উন্নত দেশে দেখা যায়। বাংলাদেশে এমন সেবা শুরু সত্যি বিস্ময়।’
শ্যামলী থেকে আসা রবিউল বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সেতু এলাকায় ছিলাম। আজও আগারগাঁও প্রান্তে আছি। দুটি ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী আমি। এ এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি।’শেওড়াপাড়ায় মেট্রোরেলের পিলারের নিচে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিলেন দুইজন। একজন বিপ্লব, অন্যজন নিঝুম। স্মৃতিটুকু ধরে রাখতেই আসা।বিপ্লব বলেন, ‘আজ থেকে ২০-৩০ বছর পর এমন দৃশ্য দেখলে আবেগতাড়িত হব। নিশ্চয়ই তখন চোখে জল চলে আসবে।’
পঞ্চাশোর্ধ্ব আবু মুসা দূর থেকে দেখছেন ট্রেন কীভাবে যায়। বলেন, ‘চড়তে পারব কি না, জানি না। তবে দেখে বুকটা ভরে গেল।’নানান ভঙ্গিমায় মেট্রোরেলের পোস্টার ধরে ছবি তুলছেন কলেজপড়ুয়া স্মৃতি। বলেন, ‘আগামীকালই ট্রেনে চেপে বসতে পারি। উত্তরায় গিয়ে আবার ফিরে আসব।মেট্রোরেল চালু হবার পর তা নিজ চোখে দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম। জীবনের শেষ সময়ে এসে এই চাওয়া মনের অজান্তেই উঁকি দিত দিনভর।শেওড়াপাড়ায় বসবাসরত এই বৃদ্ধ দুপুরে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শুধু দেখছি কাজ হচ্ছে। কিন্তু কবে শেষ হবে, আদৌ দেখে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধায় ছিলাম। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।’
নতুন আশায় ব্যবসায়ীরা
আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের কারণে বছরের পর বছর মিরপুরের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিগত সাত বছরের অধিকাংশ সময় নির্মাণকাজের কারণে রাস্তা এক পাশ বন্ধ করে আরেক পাশে যাওয়া-আসা দুটোই করতে হয়েছে। ফলে যানজট ছিল এ এলাকার নিত্যসঙ্গী। অনেকে যানজটের কারণে এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলেও গেছেন।
ব্যবসায়ীরাও কঠিন সময় পার করেছেন। সাত বছর আগে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় থেকেই ব্যবসায় ক্ষতি গুনেছেন তারা। তাদের সেই দুর্দশা করোনা মহামারিতে বাড়ে আরও।সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর-১০ গোলচত্বর পর্যন্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই পথে রাস্তার দুপাশে সারি সারি আসবাবপত্র, পর্দা, বিছানা চাদর, জুতা, রেস্টুরেন্ট ছাড়াও ছিল মুদি ও মনিহারি দোকানও। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনেই ছিল রাস্তা বন্ধ। ঘুরে দোকানে ঢুকতে হতো। ফলে দোকানে বেচাকেনা ছিল না বললেই চলে।
দোকানরা জানান, নির্মাণকাজের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ক্রেতা হারিয়ে তারা লাখ লাখ টাকার দেনায় পড়েছেন। বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকান টিকিয়ে রাখতে অনেককে নিজের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। কেউ আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হয়ে গেছেন খেলাপি।শেওড়াপাড়া মুসলিম সুইটস এর চারটি দোকান ছিল। মেট্রোর কাজের কারণে বন্ধ হয়ে যায় দুটি। তবে নতুনভাবে দোকান দিচ্ছেন মুসলিমের মালিক।
দোকানি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে দুটি চালু আছে আর একটি নতুনভাবে শুরু করেছি। স্টেশনের নিচের দোকানে আগে বেকারি সামগ্রী বিক্রি করা হতো। সেখানে এখন থেকে বিভিন্ন ধরনের বাদাম, খেজুর, মধু, কালোজিরা, সরিষার তেলসহ অর্গানিক পণ্য বিক্রি করা হবে মেট্রোরেল চালু হয়ে গেছে। আর ২/৩ মাসের মধ্যে শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হবে। তখন দোকানের বিক্রি আরও বাড়বে।’শেওড়াপাড়ার পূর্বপ্রান্তে মুদি দোকানি স্বপন খান। তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে এখানে দোকান করি। প্রথমে দোকান রাস্তার পাশে ছিল। মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু হওয়ার পর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওইখানের দোকান উঠিয়ে দেয়া হয়। ভেতরে এসে আবার দোকান করি।
‘প্রথমে খুব আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলাম। অনেক কাস্টমার মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভবে চলাফেলা করতে পারেনি। দৈনিক ৪০ হাজার, ৫০ হাজার, এমনি ৮০ হাজার টাকাও বিক্রি হতো। মেট্রোর নির্মাণ শুরুর পর আর কাস্টমার আসতে পারেনি। বেচাকেনা কমতে কমতে প্রায় জিরোতে চলে যায়। কিন্তু এখন আবার ব্যবসা ফিরতে শুরু করেছে।’
বইখাতাসহ স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রি করেন হামিদ আলী। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর কষ্টে গেছে। ব্যবসা নেমেছে অর্ধেকে। কষ্টের সময় শেষ। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে ভালো আছি। এখানে অনেক অনেক নাম করা স্কুল-কলেজ আছে। এই এলাকা আগের চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রায় সরগরম হয়ে উঠবে।’পর্দা, বিছানা চাদরসহ গৃহস্থালী সামগ্রী বিক্রেতা শফিকুল আলম বলেন, ‘মেট্রোরেল চালুর কারণে মিরপুর এলাকায় ব্যবসা আরও বাড়বে। কারণ মিরপুরে সব শ্রেণি–পেশার মানুষ বসবাস করেন। মানুষের সমাগম বাড়লে বাড়বে ব্যবসাও।’
ঢাকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লির দ্বিগুণ, কলকাতার তিন গুণ, লাহোরের আড়াই গুণ
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানালেন, মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০০ টাকা চূড়ান্ত করেছে সরকার।এই ভাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লি ও কলকাতার চেয়ে যথাক্রমে প্রায় দ্বিগুণ ও তিন গুণ বেশি এবং পাকিস্তানের লাহোরের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি।উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের জন্য মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মেট্রোতে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে খরচ ৪০ রুপি, ছুটির দিনে যা নেমে আসে ৩০ রুপিতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৫০ টাকারও কম, ছুটির দিনে প্রায় ৩৫ টাকা।
দিল্লিতে ৩২ কিলোমিটারের বেশি পথ মেট্রোরেলে যাওয়া যায় ৬০ রুপিতে।দিল্লিতে মেট্রোর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি, কলকাতায় ৫ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ রুপি ১২ টাকার সমান এবং ৫ রুপিতে প্রায় ৬ টাকা। চেন্নাই মেট্রোরেলেও সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ রুপি।অথচ, ঢাকায় মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা।অর্থাৎ দিল্লি ও চেন্নাইয়ের প্রায় দ্বিগুণ এবং কলকাতার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি ভাড়া ধরা হয়েছে চালু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ঢাকার মেট্রোরেলে।পাকিস্তানের লাহোর মেট্রোরেলেও সর্বনিম্ন ভাড়া সম্প্রতি বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ রুপি। পাকিস্তানি ২০ রুপি প্রায় সাড়ে ৮ টাকার সমান।
কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ও সর্বনিম্ন ভাড়ায় গোঁজামিল
গতকাল মঙ্গলবার সকালে উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী জানান, প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা। কিন্তু মেট্রোরেলে উঠলেই সর্বনিম্ন ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা।উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন আছে ১৬টি। অনেকগুলো স্টেশনের দূরত্ব ১ কিলোমিটারেরও কম। মিরপুর-১২ থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১১ থেকে মিরপুর-১০, কাজিপাড়া ও শেওড়াপাড়া—এসব স্টেশনে একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ১ কিলোমিটারের কম।কিন্তু একটি থেকে আরেকটিতে যেতে হলে সর্বনিম্ন ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা। অথচ, প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ধরা হয়েছে ৫ টাকা।
কম দূরত্বে চলাচলে নিরুৎসাহ
মেট্রোরেলের ভাড়ার তালিকা দেখলে যে কেউ ধারণা করতে পারেন, মেট্রোরেলে অল্প দূরত্বে চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কোনো যাত্রী যদি মিরপুর-১০ থেকে কাজিপাড়া যেতে চান, তাহলে তাকে ভাড়া দিতে হবে ২০ টাকা। অথচ, বাসে এর অর্ধেক ভাড়ায় এই দূরত্ব তিনি অতিক্রম করতে পারবেন।রাস্তার যানজট কমাতেই মেট্রোরেল করা হয়েছে বলা হলেও, এভাবেই অল্প দূরত্বের যাতায়াত নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।অল্প দূরত্বের যাত্রী বেশি হলে মেট্রোরেল চলাচলে বাড়তি সময় লাগবে—বিষয়টি এমনও নয়। প্রতিটি স্টেশনেই নির্দিষ্ট সময় থামবে মেট্রোরেল।
প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল অফিসে যাতায়াত করলে, মেট্রোরেলে দৈনিক ভাড়া গুণতে হবে ২০০ টাকা। মাসে সম্ভাব্য খরচ অন্তত ৬ হাজার টাকা।উত্তরা থেকে একটি পরিবারের ৫ জনের মতিঝিলে যেতে হলে খরচ পড়বে ৫০০ টাকা।বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে না।
মেট্রোরেলে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার সুবিধা থাকছে না
নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী মেট্রোরেল উচ্চবিত্তের যানবাহনে পরিণত হলো কি না গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যে অবস্থা ঢাকা শহরের, উত্তরা থেকে কমলাপুরের ভাড়া ১০০ টাকা। ৩৮ মিনিটে আসবেন। তাহলে কোথায় লস হলো? প্রত্যেকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। ভাড়া একটা বিষয়, এটা কোনোদিনই জেনারেলি একসেপ্টেবল হয় না, কোথাও না। কিন্তু বাস্তবে সবাই একসেপ্ট করে। মিনিমাম রিকশা ভাড়া এখন ২০ টাকা।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদ্যুৎ বিল আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এটা একটা বৈদ্যুতিক ট্রেন। যে দেশের সঙ্গে তুলনা করবেন, দেখতে হবে সে দেশে বিদ্যুৎ রেন্ট কত। যে ভাড়াটা নির্ধারণ করা হয়েছে তা একদম সর্বনিম্ন ভাড়া। এই ভাড়া দিয়ে মেট্রোরেল লাভজনকভাবে পরিচালনা করা যাবে না। সে জন্য আমরা স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করছি। সেখান থেকে ননফেয়ার ভাড়া দিয়ে বাকিটা যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম ভাড়া নির্ধারণ করা হলো সেটা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। অত্যাধুনিক মেট্রোরেল যেখানে হয়েছে, সবখানে এটা অনুসরণ করা হয়েছে।
সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ
মেট্রোরেল অন্যান্য গণপরিবহনের চেয়ে আলাদা। আর আমাদের জন্যও বেশ নতুন অভিজ্ঞতা। এটাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এই সব বিধিনিষেধ মেট্রো স্টেশন ও বগি—দুই জায়গার জন্যই প্রযোজ্য। এসব নিয়ম না মানলে জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে।
স্টেশনের ভেতরে
স্টেশনের প্রবেশপথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে, এমআরটি পাস (দীর্ঘমেয়াদি টিকিট) থাকলেও লাইন অমান্য করা যাবে না। দোতলায় ঢোকা ও বের হওয়ার গেট টপকানোর চেষ্টা করা যাবে না। মেট্রোরেল স্টেশনের লিফটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। চলন্ত সিঁড়িতে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়াতে হবে। দৃষ্টিহীনদের যাতায়াতের জন্য হলুদ রঙের পথ ছেড়ে দাঁড়াতে হবে। স্টেশন এলাকায় ধূমপান করা যাবে না। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরের (প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো যাত্রীদের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে বিশেষ দরজা) ওপর দিয়ে মাথা বাড়িয়ে মেট্রোরেল দেখার চেষ্টা করা যাবে না। কোনো প্রকার অস্ত্র বা ধারালো কিছু বহন করা যাবে না। এক স্টেশনের টিকিট কেটে অন্য স্টেশনে নামতে পারবেন না। তা করলে বা ভাড়া এড়ানোর জন্য অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে নির্ধারিত ভাড়ার ১০ গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্ল্যাটফর্মে হলুদ দাগের বাইরে দাঁড়াতে হবে।
ট্রেনে চড়ার সময়
ওঠানামার সময় হুড়োহুড়ি বা ধাক্কাধাক্কি করা যাবে না। আগে নামতে দিন, পরে উঠুন। মেট্রোরেলের দরজায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান ছেড়ে দিতে হবে। কোচের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। একাধিক সিট দখল করে বসা যাবে না। ড্রাইভিং ক্যাবের দরজা খোলা যাবে না। দুই কোচের মাঝখানের চলাচলের পথে দাঁড়ানো যাবে না।নির্ধারিত স্থান ব্যতীত থুতু বা পানের পিক ফেলা যাবে না। কোনো ধরনের পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না। মেট্রোরেল এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন ইত্যাদি নিষিদ্ধ। ট্রেনের ভেতরটা দেখার জন্য প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরে ঝোঁকা নিষেধ।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মেট্রো রেল মূলত একটি দ্রুত পরিবহণব্যবস্থা যা বিশ্বের অনেক বড় শহরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গণপরিবহণের জন্য ‘ঢাকা মেট্রো রেল’ হলো ‘জাইকা’-এর অর্থায়নে একটি সরকারি প্রকল্প। প্রকল্পটি রাষ্ট্রায়ত্ত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) পরিচালনা করছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গড় গতি ছিল প্রায় ২১ (২১.২ কিমি/ঘণ্টা), কিন্তু ২০১৫ সালে তা ৬ (৬.৮ কিমি/ঘণ্টা) এ নেমে আসে। ফলস্বরূপ, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাসে যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার বেশি। মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। এটি প্রত্যাশিত যে এ ধরনের পরিবহণ মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন করে এবং তাদের উৎপাদনশীল সময় বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মেট্রো রেল বিশ্বের অনেক বড় শহরে গণপরিবহণের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল, যা এখন ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড’-এর একটি অংশ। ১৮৬৮ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এনওয়াইতে তার প্রথম দ্রুত ট্রানজিট রেলব্যবস্থা চালু করে এবং ১৯০৪ সালে, নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রথমবারের জন্য খোলা হয়েছিল। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে, জাপান হলো প্রথম দেশ যেটি ১৯২৭ সালে একটি পাতাল রেলব্যবস্থা তৈরি করে। ভারত ১৯৭২ সালে কলকাতায় তার মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ শুরু করে। এর পরে, ভারত অন্যান্য শহরেও মেট্রো রেলব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে, বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেলব্যবস্থা চালু রয়েছে।
বাংলাদেশে মেট্রোরেল চালু করার জন্য সরকার ‘ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্পের ধারণা নিয়ে কাজ করছিল। অবশেষে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে, ‘ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বা ‘মেট্রো রেল’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দ্বারা অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের জন্য মোট ৫টি রুট লাইন প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এমআরটি লাইন ১, ২, ৪, ৫, এবং ৬। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর অর্থায়নে ‘দ্য ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট সার্ভে (ডিএইচইউটিএস ১)’ মূল্যায়ন করা হয় এবং ‘এমআরটি লাইন-৬’ নামে মেট্রো রেলের জন্য প্রথম এমআরটি রুট নির্বাচন করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় আনুমানিক ২.৮২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে জাইকা ০.০১ শতাংশ সুদের হারে প্রায় ৭৫ শতাংশ বা ২.১৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করছে। বাকি ২৫ শতাংশ তহবিল দেবে বাংলাদেশ সরকার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুন ২০১৬ সালে নির্মাণ কাজের সূচনা করেন। প্রাথমিকভাবে, ‘এমআরটি লাইন ৬’-এর দৈর্ঘ্য ২০.১ কিলোমিটার হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছিল, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত, যা পরে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়, যার ফলে রুটটির দৈর্ঘ্য আরও ১.১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি পায়। এটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২১.২৬ কিমি.। রুটে মোট ১৭টি স্টেশন থাকবে এবং রুটে ২৪টি ট্রেন সেট চলবে। ২৯ আগস্ট ২০২১-এ, প্রথম ট্রায়াল রান দিয়া বাড়ি থেকে উত্তরা পর্যন্ত পরিচালিত হয়। মেট্রোরেল উত্তরা-আগারগাঁও রুটে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে, সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা মেট্রো রেলে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০,০০০ যাত্রী বা প্রতিদিন ৯৬০,০০০ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমআরটি লাইন ১ মেট্রো রেল প্রকল্পের অধীনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। এমআরটি লাইন ১, দুটি ভিন্ন রুটে নির্মিত হবে। ‘এয়ারপোর্ট রেল লিংক’ নামে পরিচিত প্রথমটি কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা পরে গাজীপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়। এ রুটটি হবে প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেলব্যবস্থা যেখানে ভূগর্ভস্থ স্টেশনও থাকবে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ লাইনটি প্রতিদিন প্রায় ৮০০,০০০ যাত্রী বহন করবে। এমআরটি লাইন ১-এর দ্বিতীয় রুটটি বারিধারা থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে, যা পূর্বাচল রুট নামে পরিচিত হবে। এ রুটটি হবে একটি এলিভেটেড রেল রুট। এমআরটি লাইন ১-এর দুটি রুটই ২০২৬ সালে নির্মাণ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।এ ছাড়া, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এমআরটি লাইন ৪ নির্মাণ করা হবে, যা ২০৩০ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমআরটি লাইন ২ ‘গাবতলী’ থেকে ‘চিটাগং রোড’ রুটে পরিচালিত হবে, যা ২০৩০ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় দুধরনের পরিবহণব্যবস্থা রয়েছে। একটি হলো পাবলিক বাস, লেগুনা এবং রিকশাসহ যাতায়াতের সাশ্রয়ী মাধ্যম। তবে অত্যধিক যানজট এবং অতিরিক্ত ভিড়সহ বিভিন্ন কারণের জন্য এ ধরনের পরিবহন ব্যবহার করার জন্য লড়াই করতে হয়। অন্যদিকে, সিএনজি এবং ট্যাক্সি ক্যাব পরিষেবাগুলোও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসাবে উপলব্ধ, তবে সেগুলো তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। যদিও অনেক মানুষ পরিবহনের জন্য ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করে, তথাপি এটি সবার জন্য প্রনিধানযোগ্য বিকল্প নয়। মেট্রোরেল তাদের জন্য একটি সুবিধাজনক পরিবহণ পরিষেবা প্রদান করবে যারা ব্যয়বহুল গণপরিবহণ ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে কুলিয়ে উঠতে পারে না এবং সাশ্রয়ী পরিবহণের অভাবে ক্রমাগত ভোগান্তিতে পড়ে।
সরকারের প্রতিটি মেগাপ্রজেক্টেরই মুনাফা অর্জনের বাণিজ্যিক দিক রয়েছে। তবে অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রকল্পের মতো কেবল মুনাফা অর্জনই সরকার-প্রবর্তিত প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, সরকার ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং সাধারণত একটি বিশাল ভর্তুকি প্রদান করে যাতে জনগণ সাশ্রয়ী মূল্যের পরিষেবা থেকে উপকৃত হতে পারে। এ উদ্যোগের ফলে আর্থিক ক্ষতি হলেও দেশের অর্থনীতি অন্যান্য ক্ষেত্রে উপকৃত হয়।

মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে
মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে কিনা তা নির্ধারণ করতে, আমাদের প্রথমে এর ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। তবে মেট্রো রেলের চূড়ান্ত ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এমআরটি লাইন ৬-এর ভাড়া নির্ধারণের জন্য সেপ্টেম্বর ২০২০-এ একটি ‘ভাড়া নির্ধারণ কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, কমিটি ভাড়া নির্ধারণের জন্য প্রথম বৈঠক করেছিল। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বিনিয়োগ, পরিচালন ব্যয় এবং জনগণের সক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঢাকা ট্রিবিউন অনুসারে, কমিটি প্রতি কিলোমিটারে ২.৪ টাকা প্রস্তাব করেছে এবং ২১.২৬ কিলোমিটার রুটের মোট ভাড়া হবে ৫১ টাকা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিআরটিএর সর্বশেষ ভাড়ার হার অনুসারে, বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২.২ টাকা, যা মেট্রো রেলের ভাড়ার চেয়ে কম। তবে, বাসগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই সরকারি ভাড়া অনুসরণ করে। কার্যত এর চেয়েও বেশি টাকা নেয় তারা।
কাজেই বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদেশিক ঋণ এবং সরকারি বিনিয়োগের রিটার্নসহ এমআরটি-এর সব খরচ মেটানোর জন্য ভাড়ার টাকা যথেষ্ট হবে না। সে জন্য ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) নন-ফেয়ার উৎস থেকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ রাজস্ব তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। প্রতিটি স্টেশনে ট্রানজিট-ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি), স্টেশন প্লাজা এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধা সংযুক্ত করা হবে। উত্তরা নর্থ স্টেশন, আগারগাঁও ও মতিঝিল স্টেশন সংলগ্ন স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ফার্মগেট স্টেশনেও একটি স্টেশন প্লাজা দেখা যেতে পারে।
ইউএনবির মতে, কর্তৃপক্ষ স্টেশনগুলোর কাছাকাছি কয়েকটি টিওডি হাব নির্মাণের পরিকল্পনা করছে যার মধ্যে একটি বিশ্বমানের বিনোদন পার্ক, হোটেল, দৈনন্দিন পণ্যের বাজার এবং শপিং মল অন্তর্ভুক্ত থাকবে। উত্তরায় প্রথম টিওডি হাব নির্মাণ করা হবে। তাই টিওডি হাব ও স্টেশন প্লাজা তৈরির জন্য রাজউক থেকে উত্তরায় ২৮.৬১৭ একর জমি কেনা হয়েছে।
দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে গতিশীল করবে
যানজটের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। ২০১৮ সালে পরিচালিত বুয়েটের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ঢাকা শহরের যানজটের জন্য বার্ষিক ৪.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়, যা জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশ এর বেশি। ২০১৭ সালের বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩.৮ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট কর্মঘণ্টার মূল্য বিবেচনায় নিলে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক আকার ধারণ করে যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের মতে, ঢাকার যানজট ৬০ শতাংশ কমাতে পারলে বাংলাদেশ ২.৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে। এ ছাড়া ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুসারে, মেট্রো রেল প্রকল্পটি প্রতি বছর ২.৪ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করবে যা জাতীয় জিডিপির ১.৫ শতাংশ এর সমান। তা ছাড়া মেট্রো রেল ঢাকার ১৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য যাতায়াত সহজ করবে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে গতিশীল করবে, যা অর্থনীতিতে একটি বড় ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে।
কর্মসংস্থান আর্থিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করবে
মেট্রো রেল পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর লোকবলের প্রযয়োজন হবে, যা বাংলাদেশে অনেক কাজের সুযোগ তৈরি করবে। ইউএনবির মতে, প্রতিটি মেট্রো রেলস্টেশনে একটি অপারেটিং রুম, টিকিট কাউন্টার, লাউঞ্জ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট, প্রার্থনার স্থান, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, এসকেলেটর, লিফট এবং আরও অনেক কিছু থাকবে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে নতুন কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তা ছাড়া, স্টেশনগুলোর আশপাশের বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য একদল কর্মীর প্রয়োজন হবে। এসব কর্মসংস্থান আর্থিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করবে এবং শেষ পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
মেট্রো রেলের কারণে, ট্রানজিট ব্যবস্থা বাড়বে, এবং স্টেশনগুলোর আশপাশে অসংখ্য ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত ব্যবসা গড়ে উঠবে। তদ্ব্যতীত, উন্নত পরিবহণ পরিকাঠামোর কারণে, নতুন সংস্থাগুলো বিকাশের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বর্তমান ব্যবসাগুলো উপকৃত হবে। সামগ্রিকভাবে, স্টেশন এবং রুটের কাছাকাছি স্থাপন করা এ ব্যবসাগুলো দেশের জিডিপিতে যথেষ্ট অবদান রাখবে।
পিক আওয়ারে বাস না পাওয়া, অতিরিক্ত ভিড়, অল্প ব্যবধান, বাস কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ঢাকা শহরের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। ট্যাক্সি এবং সিএনজি ছিল বাসের বিকল্প। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া, ‘মিটার ভাড়া’ ব্যবহার না করার প্রবণতা, যাতায়াতের অনুরোধ কমে যাওয়া, সিএনজিতে ছিনতাই ও মলম পার্টির উৎপাত এবং চালকদের দুর্ব্যবহার জনগণের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।
ঢাকাবাসীর যাতায়াতের একটি সুবিধাজনক মাধ্যম হবে মেট্রোরেল। কারণ এটি প্রচুর যাত্রী বহন ক্ষমতাসহ একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহণ সুবিধা প্রদান করবে, এটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে এবং প্রতি ৪ মিনিটে প্রতিটি স্টেশনে একটি ট্রেন যাতায়াত করবে। তা ছাড়া, বিদ্যমান গণপরিবহণ ব্যবহারে নারীরা প্রায়ই হয়রানির সম্মুখীন হন। এর মধ্যে রয়েছে পিক টাইমে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়, শারীরিক বা মৌখিক হয়রানি, আসনের স্বল্পতা, নিরাপদে বাসে উঠা বা নামা এবং উপযুক্ত পরিবহন খোঁজা। এসব কারণে নারীরা বিদ্যমান পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছে। সুতরাং, তারা মেট্রো রেলে ভ্রমণে আরও আগ্রহী হবে। ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।
নগদবিহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
মেট্রো রেল আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি নতুন যুগে আবদ্ধ করবে। উন্নত দেশগুলোয় মেট্রো রেল এবং অন্যান্য পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন মাধ্যমগুলোকে একত্রিত করে একটি উন্নত রুট সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে যাতে মানুষ শুধু একটি পেমেন্ট কার্ডের মাধ্যমে তাদের গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে মেট্রোরেলে ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। সিস্টেমটি ধীরে ধীরে সব ধরনের পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রসারিত করা যেতে পারে। এটি দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশন আনার পাশাপাশি ধীরে ধীরে নগদবিহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
শহর থেকে জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানো যাবে
মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকা শহর থেকে জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানো যাবে। মানুষ বাসা ভাড়া অনেক কম খরচ করে শহরের বাইরে থাকতে পারে এবং অফিস ও অন্যান্য কাজে সহজে ঢাকায় আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বসবাসকারী লোকেরা সমস্ত রুট সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মূল শহরে যেতে পারে। প্রতিটি মেট্রোরেল রুটে ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং, পুরো ট্রানজিট সিস্টেমটি কাছাকাছি শহরে প্রসারিত করা যেতে পারে। বর্তমানে এসব এলাকায় বসবাসকারী লোকজনও সেখানে বসবাস না করে মূল শহরের কর্মী বাহিনীতে যোগ দিতে পারেন।
তা ছাড়া, অনেক বাণিজ্যিক উন্নয়ন ঘটবে এবং রুটের চারপাশে সুবিধাগুলোর ভাড়া এবং মূল্য বাড়বে। দ্বিতীয়ত, আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য পুনঃনির্মাণ করা হবে। ফলস্বরূপ, ওইসব এলাকায় বসবাসকারী লোকজন কম ভাড়ার জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হবে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ কেন্দ্রীয় শহর থেকে বিকেন্দ্রীভূত হবে।
রাজধানীর পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে
ঢাকার রাস্তায় চলমান সব যানবাহন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে, যা পরিবেশ দূষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এ ছাড়া ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের উদ্যোগ চলছে। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে রয়েছে। মেট্রো রেল রাজধানীর পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঢাকার বায়ুদূষণ অন্যান্য মেগাসিটির তুলনায় অনেক বেশি তীব্র। যেহেতু মেট্রোরেল ‘বিদ্যুৎ চালিত’ এবং প্রতি ঘণ্টায় বেশি যাত্রী বহন করতে পারে, তাই ঢাকায় বাস ও অন্যান্য পরিবহনের মাধ্যমে যাতায়াতের প্রবণতা কমে যাবে। এতে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমবে, যা পরিবেশের জন্য উপকারী হবে। এ ছাড়া শব্দ, শক এবং কম্পন কমাতে মেট্রো রেলে ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম [এমএসএস] প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। শব্দদূষণ রোধে কংক্রিটের পাশের দেওয়ালও করা হবে। এ প্রযুক্তি পরিবেশের ওপর মেট্রোরেলের প্রভাব কমাবে।
কাজেই, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে, মেট্রোরেল সেই স্বপ্নের প্রকল্প যে প্রকল্প ঢাকা শহরকে বর্তমান অবস্থা থেকে আধুনিক কসমোপলিটনে রূপান্তর করবে। বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, ভবিষ্যতে উন্নত বিশ্বে পদার্পণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যহত থাকলে সে সময় বেশি দূরেও নয়। সেই সোনালি ভবিষ্যতের উন্নত মহানগর ঢাকার অপরিহার্য অনুষঙ্গ মেট্রোরেল আজ বাস্তব।
মেট্রোরেলের টিকিট / কার্ড কিভাবে নেওয়া যাবে
প্রথম দিকে স্থায়ী ও সিঙ্গেল জার্নি এর জন্য কার্ড মেট্রোরেল স্টেশন থেকেই কিনতে হবে। পরবর্তিতে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও অনলাইনে রিচার্জ / কেনা যাবে। মেট্রোরেলের টিকিট / কার্ড দুইরকম , স্থায়ী কার্ডঃ ১০ বছর মেয়াদি স্থায়ী কার্ড কিনতে হবে ২০০ টাকা দিয়ে। যাতায়াতের জন্য টাকা রিচার্জ করে নিতে হবে প্রয়োজন মত। স্থায়ী কার্ড পেতে নিবন্ধন করতে হবে।
মেট্রোরেলের পাস হারিয়ে গেলে কি করতে হবে
MRT Pass হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে রেজিস্টার্ড কার্ডের বাহককে জামানত পরিশোধ করে নতুন MRT Pass গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অব্যবহৃত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন MRT Pass এ স্থানান্তরিত হবে। MRT Pass হারিয়ে গেলে নিকটস্থ স্টেশনের TOM অপারেটরকে অবহিত করে রেজিস্টার্ড কার্ডের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে।
মেট্রোরেলের সময়সূচি
উদ্বোধনের পর থেকে প্রথম কিছুদিন সকাল ৮.৩০টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত চলাচল করেছে মেট্রোরেল। তবে ৩১ মে ২০২৩ হতে সময়সীমাবৃদ্ধি করে দুপুর ১২টা এর পরিবর্তে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ৩১ মে থেকে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিট পর পর মেট্রোরেল ছাড়বে ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫ মিনিট পর পর মেট্রোরেল ছাড়বে। ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত প্রতি ১০ মিনিট পর পর মেট্রোরেল ছাড়বে। ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ১৫ মিনিট পর পর মেট্রোরেল ছাড়বে। উদ্বোধনের পর উত্তরা ও আগারগাঁও ষ্টেশনে থামছে। ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ থেকে থামছে পল্লবী স্টেশনে। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ থেকে থামছে উত্তরা সেন্টার বা দুই নম্বর স্টেশনে। ১ মার্চ ২০২৩ থেকে থামছে মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনে। ১৫ মার্চ ২০২৩ থেকে থামছে কাজীপাড়া ও মিরপুর-১১ স্টেশনে। ৩১ মার্চ ২০২৩ থেকে থামছে উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশনে। ঈদ-উল-আযহা ২০২৩ এর দিন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে Communication Based Train Control System (CBTC) Automatic Train Operation (ATO), Automatic Train Protection (ATP), Automatic Train Supervision (ATS) ও Moving Block System (MBS) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার নিমিত্ত Synchronized Platform Screen Door (PSD) and Train Door এবং সিসি ক্যামেরা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জরুরী মুহুর্তে বের হতে ইমার্জেন্সি এক্সিট রয়েছে। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয় Sprinkler ও Water Hydrant সংযোজনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেট্রোরেলে যাতায়াতকারী যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র বিশেষায়িত MRT Police Force গঠনের কার্যক্রম চলমান আছে। তার আগ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরাপত্তা প্রদান করবে।
দেশের প্রথম নারী মেট্রোরেল চালক
দেশের প্রথম নারী মেট্রোরেল চালক লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের মরিয়ম আফিজা। তিনি স্নাতকোত্তর পাস করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে।
মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্র
ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়িতে রয়েছে একটি মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্র। এর সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য নিচে দেয়া হলো
প্রদর্শনী সময়ঃ সোমবার থেকে শনিবার সকাল ১০.৩০ মিনিট, দুপুর ১২.০০ টা এবং বিকাল ৩.০০ টা ,সাপ্তাহিক বন্ধঃ রবিবারপ্রদর্শনীর বিষয়াদিঃ ভিডিও, এ্যানিমেটেড কার্টুন, স্বয়ংক্রিয় টিকেট মেশিন ব্যবহার পদ্ধতি, ম্যানুয়াল টিকিট সংগ্রহ পদ্ধতি, মেট্রো ট্রেনের ডিজাইন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচলে সক্ষম মিনি মেট্রো ট্রেন, স্বয়ংক্রিয় প্রবেশ এবং বহির্গমন গেইট, সচিত্র ডিসপ্লে বোর্ড, হলি আর্টিজান ঘটনায় নিহত ০৭ জন জাপানী নাগরিকের স্মরণে নির্মিত Memorial Monument ইত্যাদি ,, প্রবেশ মূল্যঃ জন প্রতি ১০(দশ) টাকা। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশেষ শারীরিক চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি ও ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হবে না।
মেট্রোরেলের ক্ষতিসাধনে শাস্তি
১. মেট্রোরেল নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিঃ এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। ২. মেট্রোরেলের সংরক্ষিত স্থানে অনুমোদন ছাড়া প্রবেশঃ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। ৩. মেট্রোরেল বা যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনও কাজঃ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। ৪. মেট্রোরেলের টিকিট বা পাস জালঃ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। ৫. পরিদর্শককে দায়িত্ব পালনে বাধা, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদানঃ দুই বছরের কারাদণ্ড অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। ৬. টিকিট বা পাস ছাড়া মেট্রোরেলে ভ্রমণঃ যাতায়াত ভাড়ার ১০ গুণ অর্থদণ্ড। অর্থদণ্ড অনাদায় ৬ মাসের কারাদণ্ড। ৭. মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ আইনের ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৭, ৩৮ ও ৪০ এর অপরাধ হলে (২৯ সালের ৫৯ নং আইনের) তফসিল ভুক্ত করে বিচার করা যাবে।
সব মিলিয়ে যাত্রীরা মেট্রোরেলে পাবেন আরামদায়ক ও দ্রুতগতির যাত্রার সুযোগ। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা, যেটা ঢাকায় অন্য কোনো পরিবহন দিতে পারবে না। বর্ষায় জলজটে বাস-অটোরিকশা আটকে থাকলেও মেট্রোরেল চলবে। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় অন্য সব যানবাহন থেমে থাকলেও মেট্রোরেল থামবে না। বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগমে ঢাকায় স্থবিরতা নেমে এলেও মানুষের সহজ যাতায়াতের মাধ্যম হবে মেট্রোরেল।
তথ্যসুত্র
মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ, Jugantor.
মেট্রোরেলের যুগে বাংলাদেশ, Dahaka Times.
মেট্রোরেলে প্রযুক্তির চমক, Samakal.
মাথার ওপর দিয়ে ট্রেন চলে, News Bangla24.
যানজটের শহরে শুরু হচ্ছে মেট্রোরেলের যাত্রা, Prothom Alo.
যাত্রা শুরু করলো মেট্রোরেল, Bangla Tribune.
মেট্রোরেল ষ্টেশন, নতুন সময়সূচী, ভাড়া তালিকা, Eduportalbd.
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, Jugantor.
মেট্রোরেলে এমন আচরণ করছেন না তো, Prothom Alo.
মেট্রোরেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, The Daily Star.