বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতগুলোর পরিচিতি (Beaches of Bangladesh)
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত(cox’sbazar sea beach) বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যার দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার | এই সমুদ্র সৈকতটি কাদার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না | পুরো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময় | এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত যা দেশী-বিদেশি পর্যটকদের উত্তাল ঢেউ নীল জলরাশির মায়া জালে আবদ্ধ করে |
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবালদ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে।
কবে প্রথম এই দ্বীপটিকে মানুষ শনাক্ত করেছিল তা জানা যায় না। প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। উল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো। কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো।১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবি। যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়।
আগে থেকেই এই দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউগাছ ছিল। সম্ভবত বাঙালি জেলেরা জলকষ্ঠ এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসাবে প্রচুর পরিমাণ নারকেল গাছ এই দ্বীপে রোপণ করেছিল। কালক্রমে পুরো দ্বীপটি একসময় 'নারকেল গাছ প্রধান' দ্বীপে পরিণত হয়। এই সূত্রে স্থানীয় অধিবাসীরা এই দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করা শুরু করে। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরীপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করে। জরীপে এরা স্থানীয় নামের পরিবর্তে খ্রিষ্টান সাধু মার্টিনের নামানুসারে সেন্ট মার্টিন নাম প্রদান করে। এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে।দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে আসা যাওয়া করে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া কর্ণফুলী নদী, রাঙামাটি এবং চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতের কাছে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। নগরবাসী তাদের একঘেয়ে জীবনে থেকে মুক্তি নিয়ে এখানে বঙ্গোপসাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ সৈকতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে সমুদ্র সৈকতজুড়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে কংক্রিটের দেয়াল এবং বড় বড় পাথরের খণ্ড রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সৈকতে ওয়াকওয়ে, সুন্দর ও সুপরিসর আসন, খেলার মাঠ, সাগরে সাঁতারের পর গোসলের ব্যবস্থা, আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা, কার পার্কিং এবং জাহাজে নিরাপদে ওঠানামার জন্য জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি বিএনএস ঈসা খান এবং চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক জেটি পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত। পতেঙ্গাতে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিও অবস্থিত। শাহ আমানত বিমানবন্দরগামী রাস্তার মুখে একটি প্রজাপতি পার্ক রয়েছে। পার্কটিতে ৭০ প্রজাতির প্রায় ১০০০ এর বেশি প্রজাপতি রয়েছে। প্রজাপতি দেখতে চাইলে সকাল সকাল যাওয়াই ভাল হবে। কেননা বিকেলের পর থেকে এরা ঝোপের আড়ালে চলে যাবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসলে একইসাথে এসব স্পট ঘুরে দেখা সম্ভব
ইনানী সমুদ্র সৈকত
দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে সৈকত সংলগ্ন আরও অনেক দর্শনীয় এলাকা রয়েছে যা পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণের বিষয়। সৈকত সংলগ্ন আকর্ষণীয় এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছ, ইনানী সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার থেকে ৩৫ কি.মি দক্ষিণে অবস্থিত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে রাস্তায় মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। পরিষ্কার পানির জন্য জায়গাটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্রস্নানের জন্য উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত।
পারকি সমুদ্রসৈকত
পারকি সমুদ্রসৈকতের নাম হয়তো অনেকেরই অজানা। পারকি সমুদ্রসৈকত বা পারকি সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত।চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকি চর পড়ে। একসময় সমুদ্রসৈকত বলতে শুধু কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বোঝানো হলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এই পারকি সমুদ্রসৈকতও।চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ দূরত্বে এই সুন্দর সমুদ্রসৈকতটি অবস্থিত। একদিকে সারি সারি ঝাউবনের সবুজের সমারোহ, আরেকদিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি আপনাকে স্বাগত জানাবে।
গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত
গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত বর্তমানে ভ্রমণের জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা। যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড় করে। অথচ ২০১৪ সালের আগে এই জায়গার সঙ্গে কেউ পরিচিত ছিল না। সৈকতটি সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় আগে এখানে মানুষের সমাগম কম হতো।সালটা ২০১৪, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কিছু ছাত্র ঘুরাঘুরি করে সেখানকার কিছু ছবি ফেসবুক ও ইউটিউবে আপলোড করেন। এরপরই সৈকতটির ব্যাপারে সবাই জানতে পারেন। বর্তমানে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয় গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে এই সৈকত মুরাদপুর বিচ নামে পরিচিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকতের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকতকে সাজাতে প্রকৃতি কোনো কার্পণ্য করেনি।
একদিকে দিগন্তজোড়া সাগর জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন এই সমুদ্রসৈকতকে করেছে অনন্য। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল লক্ষ করা যায়, এই বন সমুদ্রের অনেকটা ভেতর পর্যন্ত চলে গেছে। এখানে পাওয়া যাবে সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো পরিবেশ।গুলিয়াখালি সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিতভাবেই আপনার চোখ জুড়াবে। বিচের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিকভাবেই জেগে উঠেছে আঁকাবাঁকা নালা। এসব নালায় জোয়ারের সময় পানি ভরে উঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানি পূর্ণ এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পুরো সৈকতজুড়ে সবুজ গালিচার বিস্তীর্ণ ঘাস। দেখতে দারুণ লাগবে আপনার। আর এই সবুজের মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে গেছে সরু নালা। ব্যাপারটা অনেকটা ছোট ছোট দ্বীপ এর মতো।
অল্প পরিচিত এই সৈকতে মানুষজনের আনাগোনা কম বলে আপনি পাবেন নিরিবিলি পরিবেশ। সাগরের এত ঢেউ বা গর্জন না থাকলেও এই নিরবিলি পরিবেশের গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকত আপনার কাছে ধরা দিবে ভিন্ন ভাবেই। চাইলে জেলেদের বোটে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। এক্ষেত্রে বোট ঠিক করতে দরদাম করে করে নিতে হবে।অনেক সুন্দর মাঠ আছে, ফুটবল নিলে টার্ফ এর অনুভূতি পাবেন। জেলেদের বোটে করে সমুদ্রেও ঘুরতে পারবেন, দুই হাজার টাকাতেই ঘুরে আসা যাবে সমুদ্রে।
মিনি কক্সবাজার
চাঁদপুর জেলা শহরের প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে পদ্মা ও মেঘনা নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। চারদিক জলবেষ্টিত হওয়ায় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে চরটি। চরটি মোহনার চর বা চাঁদপুরের সৈকত বা মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখতে প্রতিদিনই আসছে দর্শনার্থীরা।জানা গেছে, চরের পাশেই শহর। যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ। ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও নাগালের মধ্যে। চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে আটোরিকশা বা রিকশায় চড়ে লঞ্চঘাট যেতে হবে। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে যাওয়া যাবে মিনি কক্সবাজার খ্যাত ওই চরে।
নিঝুম দ্বীপ
নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৪০ সালের দিকে জেগে ওঠে। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তাঁর মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন তাঁর নামেই এই চরের নাম হয় ওসমান চর।এই দ্বীপে প্রচুর বালুর ঢিবি বা টিলা ছিল বলে স্থানীয় লোকজন এই দ্বীপকে বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চরও বলে ডাকত। আবার এ চরে প্রচুর ইচা মাছ (চিংড়ির স্থানীয় নাম) পাওয়া যেত বলে একে ইছামতীর চরও বলা হতো।১৯৭০-এর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পরে তৎকালীন হাতিয়ার জননন্দিত নেতা আমিরুল ইসলাম কালাম দ্বীপটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সেখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই। তাই তিনি আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, হায় নিঝুম! সেখান থেকে দ্বীপটির নতুন নাম নিঝুম দ্বীপ হয়েছে বলেও প্রচলিত আছে।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
অনিন্দ্য সুন্দর বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত; তবে তা জোয়ারের সময়। সকালের দিকে গেলে নিরানন্দ লাগবে, যেতে হবে দুপুরে তখন জোয়ারের টান থাকে। বাঁশবাড়িয়ায় সমুদ্র সৈকতে একটি লোহার জেটি ঘাট রয়েছে। অনেকের মুখে আবার ব্রিজ নামেও চলছে এটা।জোয়ারের সময় ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন মিহি অনুভূতি দিয়ে পায়ের পাতা ছুঁয়ে যাবে সমুদ্রজল।বাঁশবাড়িয়া সৈকতের সামনে উন্মুক্ত সবুজ চত্বর, অদূরে ঝাউবনকিছুটা সময় সমুদ্রের ধারে কাটাতে পারেন। বোট কর্তৃপক্ষ বিচের ধারে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এটার জন্য কোনো টাকা পয়সা লাগবে না। তবে ব্রিজে ওঠার জন্য ও স্পিডবোটে চেপে এক কিলোমিটার ঘুরিয়ে আনতে জনপ্রতি ১০০ টাকা নেবে।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের
বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলা। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে টেকনাফের দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার। টেকনাফ শহর ছাড়িয়ে দক্ষিণে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এখানকার সমুদ্র সৈকত(Teknaf Samodra Soikot)।টেকনাফ সমুদ্র সৈকত (Teknaf Beach) দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সৈকত গুলোর একটি। পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ (৮০ কিলোমিটার) বালুময় সৈকত হল টেকনাফ উপত্যকা। দীর্ঘ এ সৈকতে বেড়াতে ভালো লাগবে সবার। জেলেদের আনাগোনা এ সৈকতে বেশি। বিশেষ করে খুব সকাল কিংবা সন্ধ্যায় জেলেদের বেশি মাছ ধরতে দেখা যায় এ সৈকতে। এছাড়া দেশের অন্যান্য সৈকতগুলো থেকে একেবারেই আলাদা এ সৈকত। এত রঙিন বাহারি জেলে নৌকা বাংলাদেশের আর কোন সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় না। যারা নির্জনে সমুদ্র উপভোগ করতে চান তাদের জন্য টেকনাফ আদর্শ জায়গা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তুলনায় টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের পানি অধিক পরিষ্কার।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে জেলেদের মাছ ধরার বর্ণিল সব ইঞ্জিন চালিত নৌকা। লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে জেলেরা তাদের নৌকা গুলোকে সাজিয়ে রাখেন। নৌকাগুলোর গায়েও থাকে রংতুলির শৈল্পিক আঁচড়।ইন্দো-হিমালয় এবং ইন্দো-মালায়ান পরিবেশে জন্মানো উদ্ভিদের বেড়ে উঠার জন্য টেকনাফ হল আদর্শ স্থান। এখানে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর পাশাপাশি দেখা মিলবে ম্যানগ্রোভ, লেগুন, মাডফ্ল্যাটসহ নানা পদের উদ্ভিদের। টেকনাফে প্রাকৃতিকভাবেই ম্যানগ্রুভ বন রয়েছে। এই ম্যানগ্রুভ বন প্রায় ১৬১ প্রজাতির মাছের জীবন ধারনে সাহায্য করে আসছে।এছাড়া এ সৈকতের পাশে একটু দূরেই আছে ঘন ঝাউবন।এখানে আছে সৈকত লাগোয়া জেলেদের বেশ কিছু বসতি। পূর্ণিমার জোয়ারের ঢেউ টেকনাফ সৈকত বিশাল আকার ধারণ করে। এসময় সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এসে একেবারে তীরে আছড়ে পড়ে।
এখান থেকে উত্তর দিকে সৈকতের পাশ দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে তৈঙ্গা পাহাড়। সাগর আর পাহাড়ের নিবিড় বন্ধুত্ব দেখা যাবে এখানে। তাছাড়া এত সুন্দর, এত সাজানো বেলাভূমি দেশের অন্য কোন সৈকতে কমই দেখা যায়।টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের মূল প্রবেশ পথ থেকে হাতের বাঁ দিকে চলে গেলে যাওয়া যায় শাহ পরীর দ্বীপের কাছাকাছি। আর হাতের ডান দিকে চলে গেলে যাওয়া যাবে হাজামপাড়া, শিলখালী কিংবা শামলাপুর সৈকতের দিকে।টেকনাফ সৈকতের আরেক আকর্ষণ সকাল-বিকাল জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করা। চিংড়ির পোনা শিকারীরা এ সৈকতে নিজস্ব কৌশলে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন পোনা ধরতে। আর দূর সমুদ্র থেকে নৌকা বোঝাই মাছ নিয়ে শত শত জেলে এখানেই আসেন সকাল-বিকাল
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রামের বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত দেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার নাম। উপজেলার ছনুয়া, গণ্ডামারা, কাথরিয়া, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদের উপকূলজুড়ে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পূর্ব পাশে সারি সারি ঝাউ গাছ। উপকূলজুড়ে ঘন ঝাউ বাগান। জোয়ার-ভাটার ঢেউয়ে পর্যটকদের মন কাড়া শব্দ। সাগরের উপকূল জুড়ে বেড়ে ওঠা কেওড়া ও ঝাউবন ঘেরা সবুজ এক দৃষ্টিনন্দন সৈকত ঘিরে চলে জোয়ার-ভাটার খেলা।সমুদ্র লাগোয়া অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এই সমুদ্র সৈকতে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে বাঁশখালীসহ সংশ্লিষ্ট মহল পর্যটন বিভাগ ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়া পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পর্যটনপ্রেমীরা।
আঁকিল পুর সমুদ্র সৈকত
ছোট কুমিরা হতে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার ভিতরে নীম তলা গ্রামের পাশে এই আঁকিল পুর সমুদ্র সৈকত, দিন দিন আঁকিল পুর সমুদ্র সৈকত মানুষের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে , দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আঁকিল পুর সমুদ্র সৈকতে প্রকৃতির এক অপরুপ দৃশ্য দেখতে ছুটে আসছে, এক সময় ছিল আঁকিল পুর গ্রাম অবহেলিত ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসও প্রবন এলাকা, অল্প ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসও হলেই মানুষের প্রাণ হানির সম্ভবনা ছিল, এই ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে সরকার নির্মান করেন বাধ এবং এই বাধ যাতে নষ্ট না হয় তাই বাধের পাশে বসানো হয় ব্লক, বাধের চার পাশে সারি সারি গাছ লাগানো হয় যা মানুষকে প্রকৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং মানুষ প্রকৃতির অপররূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে, পর্যটকদের যাতে কষ্ট না হয় এবং তারা যাতে কোন সমস্যা ছাড়া ভ্রমন করতে পারে, তাই তাদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা দোকান পাট ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, আর এই সব কিছুর জন্য দিন দিন আঁকিল পুর সমুদ্র সৈকতে পর্যটক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাগরকন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপ
এটি মূলত একটি দ্বীপ, যা কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এর আয়তন ৮৩.৩২ বর্গমাইল। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। দ্বীপটির উত্তর,পশ্চিম ও দক্ষিন তিন দিকেই বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত এবং পূর্বদিকে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মহেশখালী উপজেলা,পেকুয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার বাশখালী জেলা অবস্থিত।
এ দ্বীপটি সমুদ্র বক্ষ থেকে জেগে উঠে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে।পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই দ্বীপে মানুষের পদচারণা পাওয়া যায় বলে ধারনা করা হয়।হযরত কুতুবউদ্দীব নামে এক কামেল ব্যক্তি তার কিছু সঙ্গী নিয়ে মগ পর্তুগীজ বিতাড়িত করে এই দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করে।অন্যদিকে আরাকান থেকে পলায়নরত মুসলমানেরা চট্টগ্রামের আশেপাশের অঞ্চল থেকে ভাগ্যন্বষনে উক্ত দ্বীপে আসতে শুরু করে।নির্যাতিত মুসলমানের কুতুবউদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধান্তরে কুতুবউদ্দিনের নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরন করে কুতুবউদ্দিনের দিয়া,যা পরবর্তীতে কুতুবদিয়া নামে স্বীকৃতি লাভ করে।দ্বীপকে স্থানীয়ভাবে দিয়া বা ডিয়া বলা।বর্তমানে এই দ্বীপের বয়স ৬০০ পেরিয়ে গেছে।এই দ্বীপের আয়তন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে এবং এখনও সাগরের ঢেউয়ের প্রভাবে ভেঙে সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপটি।
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের এক নয়নাভিরাম বেলাভূমি। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর তীরের এক পাশে সুন্দরবন এবং অন্য পাশে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের অপূর্ব প্রকৃতি যেন নেশা ধরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষের কাছে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অজানা একটি স্থান। সাতক্ষীরা জেলার বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর নৌঘাট থেকে এই সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা থেকে নীলডুমুর গাড়ীতে এসে বাকি পথ ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পিড বোটে করে যেতে হয়। সুন্দরবনের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদীগুলিই হচ্ছে ৭৫ কিলোমিটার যাত্রা পথের একমাত্র উৎস। তাই প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মান্দারবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত শুধুমাত্র বিশেষ ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত যারা কষ্ট স্বীকার করে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন শুনতে রাজি আছেন।
নীলডুমুর ঘাট থেকে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদের মোহনা দিয়ে অতিক্রম করে মান্দারবাড়িয়ায় যেতে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ নদী বেয়ে যেতে হয়। যাত্রাপথে নদীর উভয়পাশে চিরসবুজ সুন্দরবনক মোহিত করবে। সাথে দেখা মিলবে হরিণ,বন্য শুকর,বানর এমন কি বাঘের দেখা ও পেতে পারেন। এছাড়া নানা প্রজাতির প্রাণীর চলাচল এবং পানকৌড়ি, বালিহাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উড়ে যাওয়ার দৃশ্য। এছাড়া নির্জন এই মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের বুকে হরিণ কিংবা বাঘের পায়ের ছাপ নিঃসন্দেহে ভ্রমণের উত্তেজনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।

কটকা সমুদ্র সৈকত
সুন্দরবনের দক্ষিণ পূর্ব কোণে খুলনা ও বাগেরহাটে অবস্থিত কটকা সমুদ্র সৈকত। এটি মংলাবন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র।সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু বনে বাঘের দেখা মেলা যেমন ভার, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তবে বাঘের দেখা পাওয়া ও নিরাপদে থাকা দুই-ই সম্ভব সুন্দরবনের চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র কটকা অভয়ারণ্য থেকে। এখানে প্রায়ই দেখা মেলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। এছাড়া মনোরম চিত্রা হরিণের দল, বিভিন্ন জাতের পাখি, শান্ত প্রকৃতি এবং বিভিন্ন বন্য প্রাণীর উপস্থিতি এসবই এ স্থানটিকে অসাধারণ সৌন্দর্য দিয়ে ভরে দিয়েছে।
বন কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমুখী কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর পাশের খালটির ভাটার সময় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল দেখা যায়। এছাড়া একটু শান্ত থাকলে বা নিরিবিলি যেতে পারলে এখানে দেখা মিলতে পারে চিত্রা হরিণেরও। ট্রেইলের শেষ মাথায় হাতের ডানে সোজা দক্ষিণে মিনিট হাঁটলে পাবেন টাইগার টিলা। এ টিলায় প্রায়ই বাঘের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বলেই টিলাটির এমনতর নামকরণ। টাইগার টিলা থেকে সামান্য পশ্চিমে বয়ার খাল। দুইপাশে কেওড়া, গোলপাতা আর নানান পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে জায়গাটি।
এছাড়া কটকার জেটির উত্তরে খালের চরজুড়ে থাকা কেওড়ার বনেও দেখা মেলে দলবদ্ধ চিত্রা হরিণ, বানর আর শূকরের। আবার শীতের সময় দেখা মিলে যেতে পারে রোদ পোহানো লোনা জলের কুমির। কটকা বন কার্যালয়ের ঠিক ওপারে একটি ছোট খাড়ি চলে গেছে সোজা পূর্ব দিকে। এই পথে কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের ডানে ছোট্ট জেটি এবং ওপরে ওয়াচ টাওয়ার। কটকার ওয়াচ টাওয়ারটি চারতলা বিশিষ্ট। ৪০ ফুট উচ্চ টাওয়ার থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
সাগরকন্যা কুয়াকাটা
বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে সাগরকন্যা খ্যাত অপরূপ এক জায়গা কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে অবস্থিত এ জায়গায় আছে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।কুয়াকাটার সৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে দীর্ঘ নারিকেল গাছের সারি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এ বনেও। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সুন্দর এই নারিকেল বাগান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।
তারুয়া দ্বীপ
প্রকৃতিতে লেগেছে তার নান্দনিক ছোঁয়া। পাখির কলতানে মুখরিত ভোলার দক্ষিণ আইচা থানার তারুয়া দ্বীপ। ভোলা ব-দ্বীপের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ঢালচর, কুকরি-মুকরি ও পর্যটন কেন্দ্র তারুয়া বিচে পাখিদের হাট বসেছে। বিচিত্র পাখ-পাখালির মধুময় কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে এখানকার জনপদ।বছরজুড়ে তারুয়ায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে হরেকরকম পাখির কলোকাকলীতে সরব থাকলেও শীতে যেন নতুন প্রাণ পায় এ অঞ্চলের পাখিরা। আবার এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে সাইব্রেরিয়াসহ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দল। ইতিমধ্যে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমীককে আকৃষ্ট করেছে তারুয়া দ্বীপের বিচিত্র বর্ণিল পাখিরা। কুকরি মুকরি, কালির টেক, বালুরধুম কালির চর, চর সিরাজ দ্বীপসমূহে শীতের পাখির সমারোহ। হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটককে আকৃষ্ট করছে তারুয়া বিচ।চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ আইচা থানার ঢালচর ইউনিয়ন। বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে ঢালচর থেকে পূর্ব দিকে চর শাহজালাল ও চর আশরাফের মাঝামাঝি বিছিন্ন তারুয়া দ্বীপ। জনমানবহীন গহীন অরণ্যাবৃত তারুয়ার দ্বীপ পাখিদের সবুজ ‘অভয়ারণ্য’।
পর্যটন পিপাষু বিভিন্ন মিডিয়ায় তারুয়া বিচ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি তারুয়া দ্বীপে গত কয়েক বছর থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। দক্ষিণ আইচার চর কচ্ছপিয়া থেকে বিভিন্ন ধরনের নৌকা বা ট্রলার বা স্পিডবোটে যাওয়া যায় তারুয়া দ্বীপে। চারদিকে দেখা যায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের অপরূপ দৃশ্য।
লালদিয়া সমুদ্র সৈকত
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র লালদিয়া সমুদ্র সৈকত। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে অবস্থিত বলেশ্বর নদী ও বিষখালী নদীর মোহনায় এবং লালদিয়া বনের পাশে অবস্থিত।এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। এক পাশে সমুদ্র অন্য পাশে বন, মাঝে সৈকত, এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রকৃতিতে বিরল। লালদিয়া সমুদ্রসৈকত পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ঝাউবন। হরিণবাড়িয়া বনে নির্মিত ৯৫০ মিটার দীর্ঘ ফুটট্রেল (পায়ে হাঁটার কাঠের ব্রিজ) সম্প্রসারিত করে লালদিয়া সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।এ বনের পূর্বে বিষখালী নদী এবং পশ্চিমে বলেশ্বর নদী। দুই নদী ও সাগরের মোহনা এ বনকে ঘিরে রেখেছে। বন সংলগ্ন পূর্ব প্রান্তে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতটি বেশ ছোট। তবে ছোট হলেও সৌন্দর্য কোন অংশে কমতি নেই।
এখানে বিভিন্ন রকমের পাখির কলকাকলি এবং সমুদ্রের গর্জন শুনে পর্যটকরা হবেন বিমোহিত এবং যেতে চাইবেন বারে বারে। এখানে সাগরের নোনা জল এসে আছড়ে পরছে বালুকাবেলায়। উড়ে যায় গাংচিল আর হাজার হাজার লাল কাকড়ার দল ছুড়ে বেড়ায় বেলাভূমিতে। সে এক নান্দনিক দৃশ্য। মনকাড়া অনুভুতি যা আপনাকে আবারও কাছে টানবে বার বার।লালদিয়া সৈকতের পাশেই রয়েছে একটি শুটকি পল্লী। সৈকত ঘেরা লালদিয়ার চরে বছরে কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে শুঁটকি চাষ। এখানে যে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয় তার ৯০ ভাগই হয় হাঁস-মুরগির খাদ্যের জন্য, বাকি ১০ ভাগ আমরা খাই। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শুঁটকির কারবার চলে আসছে।সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে আসছেন এখানে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসিক হোটেল ও খাবারের সুব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন পর্যটকরা।
সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি। দীর্ঘ সৈকত। হাওয়ায় দোল খায় সবুজ ঝাউ বন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত এখনও খুব একটা পরিচিত নয়, বরগুনার তালতলী উপজেলার ফাতরার বনের ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এক পর্যটনকেন্দ্র। যে কারণে এখানে এতদিন মানুষের আনাগোনা ছিল কম।
তবে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ বেলাভূমির সাথে বনভূমির নৈসর্গিক শোভা দেখতে এখন দূর দূরান্ত থেকেও মানুষ ছুটে যাচ্ছেন নতুন এই পর্যটন কেন্দ্রে।পর্যটকরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসিক হোটেলসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এসব দিকে কর্তৃপক্ষ নজর দিলে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত
তথ্যসুত্র
শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত।, Channel24.
লালদিয়া সমুদ্র সৈকত, Khola Barta.
তারুয়া দ্বীপ।, Daily Bhorerdak.
অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত, Bd News24.
কটকা সমুদ্র সৈকত, Bangladesh Times.
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, Abc News24.
সাগরকন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপটি।, Dhaka Tribune.
বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত , Jaijaidin.
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের , Tour Today.
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে। , Kaler Kantha.
নিঝুম দ্বীপ, Kaler Kantha.
মিনি কক্সবাজার , Barta 24.
পারকি সমুদ্রসৈকত, Jago News24.
এই সমুদ্র সৈকতটি , Buisness24.
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।, Chitagong.gov.bd.
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের, Porjoton.gov.BD.
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, Pathaprantora.