স্তন ক্যনসার (Breast Cancer)

স্তন ক্যনসার  (Breast Cancer)


মেয়েদের ক্যান্সারের মধ্যে শতকরা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। আর এ সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ রোগের ৬০ শতাংশ রোগীরই বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এমনকি শতকরা পাঁচ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। অনেক ক্যান্সারের সাথে স্তন ক্যান্সারের একটা বড় পার্থক্য হলোÑ সঠিক সময়ে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে এ রোগ থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ।স্তন ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা চিকিৎসকের আগে রোগী নিজেই এই রোগ নির্ণয় ও ডায়াগনোসিস করতে পারে। একজন সচেতন নারী খুব সহজে ও দ্রুত এটি ধরে ফেলতে পারেন।

গোলাপি ফিতা।

গোলাপি ফিতা। এটা স্তন ক্যান্সার বোঝানোর প্রতীক। এই প্রতীক প্রথম ব্যবহার করেছিলেন অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান ইভলিন ল্যান্ডার। আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে।এই ফিতের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। নিজেও ছিলেন ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) স্তন ক্যান্সার নিয়ে যথেষ্ট ওকাকিবহাল। সারাবিশ্বের নানা ছোট-বড় শহরে স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি জুড়ে নানা প্রচারসভার আয়োজন করছে তারা।

আজকাল এই রোগে আক্রান্তের বয়সসীমা বলে কিছু হয় না। ২০-৩০ বছর বয়সী যুবতীরাও এই রোগের  শিকার হন। তবে ৩০-৫০ বছর বয়সীরা এই রোগের শিকার হন সবচেয়ে বেশি। প্রথম থেকেই এই অসুখ নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্রেস্টের সব লাম্প বা টিউমারে কিন্তু ক্যান্সারের প্রবণতা থাকে না।বরং ১০-১৫ শতাংশ টিউমারেই এই ভয় থাকে, কিন্তু শরীরে তেমন কোনও লাম্প বাসা বেঁধেছে কি-না তা জানতে বছরে একবার অন্তত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেকআপ করানো উচিত।

স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস

১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস। দেশে ১১তম বারের মতো দিবসটি পালিত হচ্ছে। স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে ২০১৩ সাল থেকে বেসরকারিভাবে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-স্থূলতা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ১২ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় প্রায় সাত হাজার জনের।

স্তন ক্যান্সার কী

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হারও।চিকিৎসকেরা বলছেন, স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়।সেটি রক্তনালীর লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার।

স্তন ক্যান্সার লক্ষণ

বাংলাদেশে নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার শীর্ষে রয়েছে।সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে বাংলাদেশের নারীরা যেখানে প্রকাশ্যে স্তন শব্দটি উচ্চারণ পর্যন্ত করতে চান না, সেখানে শরীরে প্রাথমিক কোন লক্ষণ দেখা গেলেও তারা গোপন রাখেন সেসব, যে কারণে বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন একেবারে শেষ পর্যায়ে।

ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. নাজনীন নাহার বলেন, স্তন ক্যান্সারে শুধু নারীরা নন, পুরুষেরাও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে।তিনি বলেছেন, "যেহেতু বাংলাদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে, দেখা যায় যারা চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদের বেশির ভাগই আসেন প্রায় শেষ পর্যায়ে।অধিকাংশ সময় তারা স্তনে একটি চাকা নিয়ে আসেন। অনেকে স্তনের বোঁটায় ঘা বা ক্ষত বা বোঁটার চারপাশে কালো অংশে চুলকানির লক্ষণ নিয়ে আসেন।""কারো স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধের মত সাদা রস নিঃসৃত হতে থাকে। ব্যথা বা স্তন লাল রং হয়ে গেছে এমন লক্ষণ নিয়ে খুব কমই আসেন।"

স্তন ক্যান্সারের ৫ লক্ষণ


স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনেকের ধারণা, স্তন ক্যান্সার শুধু নারীর ক্ষেত্রেই হয়। আসলে এতে নারী-পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এই রোগে পুরুষের তুলনায় নারীর আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নারীর ক্ষেত্রে বয়স চল্লিশ পার হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। আবার দৈনন্দিন জীবন-যাপনের পদ্ধতিও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুহার কমছে না তেমন। এর একমাত্র কারণ হলো দেরিতে রোগ চিহ্নিতকরণ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্তন ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য হওয়ার পরেও যে অসংখ্য নারী এই অসুখের বলি হন, তার একমাত্র কারণ, স্তনের অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব বুঝতে না-পারা অথবা বুঝেও উদাসীন থাকা। ইন্ডিয়ান টাইমস প্রকাশ করেছে স্তন ক্যান্সারের কয়েকটি লক্ষণের কথা-

কমবেশি সব নারীর স্তনেই লাম্প থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসারাস ও কয়েকটি নন-ক্যানসারাস। এই ব্রেস্ট লাম্পগুলো অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলাতেও দেখা যায়। এছাড়া স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে যেগুলো টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। এমন কিছু দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ব্যথাহীন লাম্পই বেশি মারাত্মক। এই রোগের ক্ষেত্রে বংশও প্রাধান্য পায়। এর আগে পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে পরবর্তী জেনারেশনদেক ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেশি।ব্রেস্ট লাম্পগুলো অনেক সময় আন্ডার আর্ম বা কলার বোনের তলায় দেখা যায়। স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে, যেগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না।

ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছেন না, অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প জলীয় পদার্থ ক্ষরিত হচ্ছে দেখলে সচেতন হোন। কোনো রকম র্যাশ নেই স্তনে, তবু ইচিং বা চুলকানির মতো অনুভূতি হচ্ছে, এমন কিছু কিন্তু ক্যান্সারের লক্ষণ। অনেক সময় এর সঙ্গে নিপ্ল থেকে হালকা হালকা রস নিঃসৃত হয়, স্তনের ত্বকেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। তাই চুলকানির মতো কিছু হলে নিজে থেকে কোনো ক্রিম বা লোশন লাগাবেন না। আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবেন।

স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের শেপ অসমান হয়ে যাওয়া ক্যান্সারের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি ব্রেস্টফিডিং না চলা অবস্থায়ও এই বিষয়গুলো চোখে পড়ে। সামান্য সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।স্তনে বিকৃতি বা ফোলা ভাব, স্তন লালচে হয়ে যাওয়া, স্তনে হাত দিলে ব্যথা লাগা এই রোগের লক্ষণ। পিরিয়ডের আগে অনেকের স্তন ভারী হয় ও ব্যথা হয়। এতে ভয়ের কিছু নেই। তবে, স্তনের উপরের ত্বক যদি খসখসে হয়ে গেলে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। রাতে শোয়ার সময় স্তনে ব্যথা বা অন্তর্বাস পরে থাকার সময় ঘর্ষণ বা ছড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন দ্রুত।

যেসব লক্ষণে বুঝবেন ব্রেস্ট ক্যান্সার,

breast এ চাকা দেখা দেয়া। breast-এর চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া। (কমলালেবুর খোসার মতো) Nipple বা স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া। Nipple দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া।ডায়াগনোসিস বা শনাক্তকরণ পরীক্ষা

প্রথমেই বিশেষজ্ঞরা রোগীর রোগের history নিয়ে থাকেন। শারীরিক পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়। রোগীর বয়সের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখেই বিশেষজ্ঞরা তা দিয়ে থাকেন। যেমন- * ম্যামোগ্রাফি * আলট্রাসনোগ্রাফি * এমআরআই * FNAC -চাকা থেকে * বায়োপসি/মাংস পরীক্ষা

স্তন ক্যানসার কেন হয়?

এর জন্য দায়ী আমাদের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন। যেমন আজকাল আমরা প্রচুর fast food খাই, সবুজ শাকসবজি খুবই কম খাই, কম শারীরিক পরিশ্রম করি- যার ফলে আমরা অতিরিক্ত স্থূলতায় ভুগছি। অতিরিক্ত স্থূলতা breast Cancer এক অন্যতম প্রধান কারণ।

দেরিতে বাচ্চা নেওয়া । বাচ্চাকে বুকের দুধ দিতে অনীহা বা অপারগতা (যেমন চাকরিজীবী মহিলারা এ সমস্যায় ভোগেন বেশি) ।বেশি বয়স, গড় আয়ু বেড়ে যাওয়াতে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। Early screening অর্থাৎ মানুষ সচেতন বলে আগেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছে রোগ আছে কিনা জানার জন্য। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ছে। বগলে চাকা দেখা দেয়া ।যদি Cancer ছড়িয়ে পড়ে তাহলে যেখানে ছড়িয়ে পড়েছে তার উপসর্গ দেখা দেয়া যেমন-  Liver বা যকৃতে ছড়ালে পেটে ব্যথা বা জন্ডিস দেখা দেয়। ফুসফুসে ছড়ালে কাশি হওয়া এমনকি কাশির সঙ্গে রক্তও যেতে পারে।

অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলছেন, বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তবে সেই সঙ্গে কিছুটা সচেতনতা বাড়ার কারণে এখন মানুষ চিকিৎসকের কাছেও আগের তুলনায় বেশি যায় এবং সেজন্য আমরা জানতেও পারি বেশি আগের চেয়ে।তিনি বলছে, নানা কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে।"আমাদের জীবনাচরণে এবং খাদ্যাভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে, সেটি একটি কারণ। এছাড়া কারো পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে হতে পারে। কারো যদি বারো বছরের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরিতে মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হয়, তারাও ঝুঁকিতে থাকে। সেই সঙ্গে তেজস্ক্রিয় স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।"

অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলেন, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, আবার যাদের সন্তান নেই, বা সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে, এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন বা হরমোনের ইনজেকশন নিচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।একই সঙ্গে বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। তখন আর করার কিছু থাকে না।তিনি বলছেন, প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত হলে স্তন ক্যান্সার ১০০ ভাগ নিরাময়যোগ্য।

পরীক্ষা করার নিয়ম

১. মাসিক শেষ হওয়ার পরে স্তন পরীক্ষা করতে হয়। কারণ এ সময় স্তন নরম থাকে। তাই প্রতি মাসের মাসিকের শেষ দিনটিতে স্তন পরীক্ষা করা উচিত। ২. পর্যাপ্ত আলোযুক্ত স্থানে আয়নার সামনে জামাকাপড় খুলে স্তনের আকার, রঙ, বোঁটার রঙ ও অবস্থান, চামড়ার অবস্থা ইত্যাদিতে কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে কি না দেখতে হবে। হাত দুটো কয়েকবার মাথার ওপরে উঠিয়ে ও নামিয়ে পরীক্ষা করে নিন স্তন দুটো ত্বকের নিচে সহজে নড়াচড়া বা ওঠানামা করে কি না।৪. এবার বিছানায় শুয়ে প্রথমে ডান হাত মাথার নিচে বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙুল দিয়ে ডান স্তনটি ভালো করে চেপে দেখুনÑ কোনো চাকা বা গোটা হাতে পাওয়া যায় কি না। এ পরীক্ষা করার সময় স্তান ও এর আশপাশের সম্পূর্ণ জায়গা, বগলের নিচের অংশসহ পরীক্ষা করতে হয়। এবার বাম হাত মাথার নিচে দিয়ে ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও এর আশপাশে পরীক্ষা করুন।৫. আরেকবার দাঁড়িয়ে এভাবে ওপরের স্তন চেপে পরীক্ষা করুন। গোসল করার সময় সাবান লাগিয়ে পরীক্ষা করলে যেকোনো চাকা আরো ভালোভাবে হাতে ধরা পড়ে।

স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ জানা থাকা ভালো

স্তনের আকৃতি পরিবর্তন

নানান রূপে দেখা দিতে পারা এই রোগের উপসর্গ। অনেক সময় স্তনের ত্বকেও চোখে পড়ে। দুই স্তনের আকার আকৃতির সামঞ্জস্য না থাকাও স্তন ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে। স্তনের বৃন্ত থেকে কোনো কারণ ছাড়াই কোনো প্রকার তরল বেরিয়ে আসলে সেটাও চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত আলাপ করার মতো বিষয়।

অন্যান্য উপসর্গ

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি জানিয়েছে আরও কিছু উপসর্গ যা স্তন ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়। ভেতরে দানা বা পিণ্ড ধরনের কিছু অনুভব না করলেও স্তন ফুলে ওঠা। স্তনের ত্বকের কোনো অংশ কুঁচকে যাওয়া। স্তন কিংবা বৃন্তে ব্যথা। বৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে থাকা।  স্তন কিংবা বৃন্তের ত্বক লালচে, শুষ্ক ও মোটা হয়ে যাওয়া। বাহুর নিচের অংশে কিংবা ‘কলারবোন’য়ের অংশের কোনো ‘লিম্ফ নোড’ বা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। এই উপসর্গ থেকে বোঝা যায় যে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এসময়ও মূল ‘টিউমার’ বাইরে থেকে অনুভব করা নাও যেতে পারে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

জন্মনিরোধক বড়ি অল্পবয়স হতে ও বহুদিন (১০ বছরের বেশি সময়) ধরে না খাওয়া সন্তানকে বুকের দুধ পান করান । টাটকা শাক-সবজি ও ফল খান ।সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন ।ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন। মনে রাখবেন, ব্যথাবিহীন স্তনের চাকা/দলা/গোটা দেখা দিলে বা স্তন বা নিপলে আকার ও আকৃতির যে কোনো ধরনের পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার সারা বিশ্বে জুড়েই একটি ভয়াল আকার ধারণ করেছে। প্রতি ৮ জনে ১ জন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে। কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে যা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, যেমন- জেনেটিক কারণ। কিন্তু আপনার ডায়েট ও লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে এই বিধ্বংসী রোগটির ঝুঁকি কমানো যায়। স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায় এমন কিছু পন্থার কথাই আজ আমরা জেনে নিই চলুন।

ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবার খান

অনেক বেশি আঁশযুক্ত খাবার ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে পারে। এর ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% পর্যন্ত কমে। মটরশুঁটি, তাজা ফল, আস্ত শস্য এবং ফ্ল্যাভনয়েড, ক্রুসিফেরাস ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট(ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি) ও ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ সবজি খান। পেঁয়াজ, রসুন, পেঁয়াজ পাতা ইত্যাদি সবজিগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিকেলকে নিরপেক্ষ করে এবং ক্যান্সার কোষের বিভক্ত হওয়া প্রতিরোধ করে। এইধরনের সবজি কাঁচা খেলেই সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। সয়াবিন ও অন্য সয়া পণ্য যেমন- টফু ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু মিষ্টি স্বাদের ও রিফাইন্ড সয়া পণ্য যেমন- সয়া দুধ ও সয়া তেল এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন চিনি ক্যান্সারের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। চিনি ক্যান্সার জিনকে সক্রিয় করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে।

শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন

যেসব নারীরা দৈনিক ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করেন তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি যারা ব্যায়াম করেন না তাদের চেয়ে ২০-৪০% কমে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সাধারণ ব্যায়াম যেমন- দ্রুত হাঁটার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

ওজন ঠিক রাখুন

গবেষণায় দেখা গেছে যে অধিক ওজন ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। ক্যান্সার ও ওজনের এই সম্পৃক্ততার জন্যই সবার উচিৎ দেহের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা।

নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট

অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করা যায়। পর্যাপ্ত মাত্রার ভিটামিন এ, ডি ও ই ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রিনটি পান করুন

গ্রিনটিতে ইজিসিজি (এপিগ্যালোক্যাটেচিন-৩-গ্যালেট) নামক উপাদান থাকে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন গ্রিনটি পান করুন।

ভালো ফ্যাট গ্রহণ করুন

বিভিন্ন ধরণের চর্বি ব্রেস্ট ক্যান্সারের উপর প্রভাব বিস্তার করে। তাই খারাপ ফ্যাট বর্জন করে ভালো ফ্যাট গ্রহণ করা উচিৎ। ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাছের তেল খান এবং ওমেগা৬ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ভুট্টা, সূর্যমুখীর তেল ইত্যাদি কম গ্রহণ করুন।

ধূমপান বর্জন করুন

যেসব নারীরা ধূমপান করেন বা ক্রমাগত পরোক্ষভাবে ধোঁয়ায় আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৪০% এর ও বেশি। যাদের অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস আছে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যদি এই অভ্যাসগুলো আপনার থেকে থাকে তাহলে পরিত্যাগ করার চেষ্টা করুন।

টিপস

রাসায়নিক সমৃদ্ধ পরিষ্কারক, কীটনাশক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। প্লাস্টিকের সামগ্রিতে খাদ্য ও পানি সংরক্ষণ বাদ দিন ।থ্যালেট ও প্যারাবেন সমৃদ্ধ বিউটিকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার বন্ধ করুন । ২০-৩৯ বছরের নারীদের প্রতি ৩ বছর পর পর স্তনের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো উচিৎ ।৪০ ও তার অধিক বয়সের নারীদের প্রতিবছর স্তনের ডাক্তারি পরীক্ষা ও মেমোগ্রাম করানো উচিৎ ।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় যেসব খাবার

আপনার যেকোনো রোগ হওয়ার আগেই সেই রোগের প্রতিরোধক গড়ে তুলতে হবে সঠিক সময়ে। প্রকৃতিতেই এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আপনার ক্যান্সারসহ নানা রোগের মহৌষধ। জেনে নিন সেই খাবারগুলো সম্পর্কে। আর বেঁচে থাকুন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে।

ডালিম

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে ডালিম বিশেষ সহায়ক। ডালিমে রয়েছে পলিফেনল নামক এলাজিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এটি ক্যান্সারের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য এই ফলটি প্রতিদিন খাবার তালিকায় যোগ করুন।

তিসি

এটি স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তিসিতে থাকা ওমেগা-থ্রি, লিগনান্স এবং আঁশ এই কোষের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে। তিসির বীজ, আস্ত তিসি বা তিসির তেল খাবারে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

নাটস

ব্রাজিল নাটস-এ রয়েছে উচ্চমাত্রায় সেলেনিয়াম, আঁশ এবং ফাইটোকেমিক্যাল। এই বাদাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, প্রদাহ এবং টিউমারের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। রোজ একমুঠো ‘ব্রাজিল নাট’ খেলে বড় ধরনের উপকার পাবেন।

রসুন

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উপাদান ‘অ্যালিয়াম’। এটি রসুনে উচ্চ মাত্রায় থাকে। রসুন ছাড়াও এই ধরনের অন্যান্য মসলা যেমন- পেঁয়াজ, পেঁয়াজজাতীয় গাছেও এই উপাদান থাকে।এগুলো টিউমারের বৃদ্ধি রোধ ও কোলোরেক্টাল ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন সকালে একটি রসুন খেলে সারাজীবনের জন্য ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

সবুজ সবজি

গাড় সবুজ পাতার সবজি যেমন, পাতাকপি, পালংশাক ইত্যাদি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের ‘ওয়ান স্টপ শপ’ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া দেহের জন্য প্রয়োজনীয় আঁশ, ভিটামিন বি, ফাইটোকেমিকল, ক্লোরোফিল ইত্যাদি মিলবে এ সবজিতে।

স্যামন মাছ

স্যামন মাছে রয়েছে ওমেগা-থ্রি এবং ভিটামিন বি-টুয়েল্ভ, ভিটামিন ডি। এটি শরীরের পুষ্টি সরবারহ করে এবং কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

ব্রোকলির কচিপাতা

ব্রোকলিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় সালফোরোফেন এবং ইন্ডোলেস উপাদান যা স্তন, মূত্রাশয়, লিম্ফোমা, প্রোস্টেট এবং ফুসফুস ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়।

মরিচ

যে কোন মরিচেই আছে ফাইটোকেমিকেল যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। কাঁচামরিচ ক্লোরোফিলের ভালো উৎস যা অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আর লালমরিচে থাকে ক্যাপসাইসিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যারোটেনোয়েডস।

হলুদ

হলুদে থাকে কারকিউমিন যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহায়ক। এটি স্তন, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল, ফুসফুস এবং ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এক চিমটি হলুদ অনেক কঠিন ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধেও কাজ করে।

আপনি কি চান না আপনার স্তন সুস্থ রাখতে

যে কেনো সন্দেহে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।শরীর চর্চা করুন।অধিক বয়সে সন্তান নিবেন না।অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত পুষ্টিকর খাবার খান।ফুলকপি,চীনা বাদাম ও জাম্বুরা ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়ক।মদ্যপান থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন।যে সকল নারী সন্তানদের দুধ পান করান তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম থাকে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?

স্তনে চাকা বা পিণ্ড দেখা দিলে । স্তনের বোঁটার কোন ধরনের পরিবর্তন, যেমন ভেতরে ঢুকে গেলে, অসমান বা বাঁকা হয়ে গেলে ।স্তনের বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস বের হলে ।স্তনের চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন হলে ।বাহুমূলে পিণ্ড বা চাকা দেখা গেলে। তবে অধ্যাপক নাজনীন নাহার বলছেন, বয়স ৩০ বা ৩৫ হবার পর সব নারীর উচিত নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা। এজন্য মূলত তিনটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স রে, যার সাহায্যে স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে। সুনির্দিষ্ট নিয়মে চাকা বা পিণ্ড আছে কিনা, চিকিৎসকের মাধ্যমে সে পরীক্ষা করানো। নিজে নিজে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী স্তন পরীক্ষা করা।

বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগী সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। এ ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রধানত কয়েকভাগে বিভক্ত-* সার্জারি * কেমোথেরাপি * রেডিওথেরাপি ।* হরমোন থেরাপি * টার্গেটেড থেরাপি।

সার্জারি

স্তন ক্যান্সরের যে কোনো পর্যায়েই রোগীর সার্জারি করা প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারি করা যাবে কিনা বা কী ধরনের সার্জারি হবে তাই প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয়। সিদ্ধান্ত নেবেন সার্জন এবং ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দু’জনে মিলে। অনেক সময় শুধু টিউমার কেটে ফেলা হয়। অনেক সময় পুরো বেস্টই ফেলে দেয়া হয়।

কেমোথেরাপি

প্রায় সব রোগীকেই কেমোথেরাপি নিতে হয়। সার্জারির আগে বা পরে এমনকি রোগ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়লেও কেমোথেরাপি কাজ করে। যদিও কেমোথেরাপিতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তবুও রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য কেমোথেরাপির বিকল্প নেই। রোগীর শারীরিক অবস্থা, কেমোথেরাপির কার্যকারিতা, রোগীর আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা উপযুক্ত পরামর্শ দেন। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে কম হয় তারও ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা।

রেডিওথেরাপি

বিশেষ ধরনের মেশিনের মাধ্যমে রোগীদের রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া হয়।এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সাধারণ কেমোথেরাপির পরই রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। শুধু breast এ নয়, যদি Cancer হাড়েও ছড়িয়ে পড়ে তাহলেও সেখানে রেডিও থেরাপি দিয়ে হাড়ের ভাঙন বা ফ্র্যাকচার রোধ করা যায়।

হরমোন থেরাপি

সব ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীর জন্য হরমোনের দরকার নেই। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই হরমোনের চিকিৎসা কাদের লাগবে তা শনাক্ত করেন।

টার্গেটেড থেরাপি

এ থেরাপি রোগীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যেমন Transtyuumab, Lapatinib, Bevacizumab ইত্যাদি।ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য Breast Cancer Screening জরুরি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সবারই জানা উচিত এবং এই program-এর আওতায় আসা উচিত। তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়বে এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হবে। আমাদের সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন হলে (যা ক্যান্সার রোগের কারণ) এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশেই কমে আসবে এবং আমাদের সমাজে সুস্থ-সুন্দর জীবনের অধিকারী মানুষের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।


বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল আছে চারটি

বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল আছে চারটি।বাংলাদেশ ক্যান্সার ইন্সটিটিউটসহ সরকারি বেসরকারি অনেক হাসপাতালে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে।তবে, কয়েকটি বেসরকারি ও কিছু বড় সরকারি হাসপাতালে একটি করে ক্যান্সার ইউনিট থাকলেও বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা দেড়শ'র কম।অন্যদিকে, বাংলাদেশে ক্যান্সারের যেসব চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, তা একদিকে অপ্রতুল এবং অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে বেশ ব্যয়বহুল। পরিবারে কারো ক্যান্সার হলে, সেটি ঐ পরিবারের ওপর এক ধরণের দুর্যোগ ডেকে আনে।এ সময় পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবসহ আশেপাশের মানুষের মানসিক সহায়তা একজন রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে, যা পাওযার সুযোগ নারীদের কম।সরকারিভাবে স্তনের ক্যান্সার নির্ণয় ও নিরাময়ে রোগীর পরিস্থিতি ভেদে খরচ পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে দেড় লক্ষ টাকা।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার চিহ্নিত করার সহজ উপায়।

নারীরা ২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করতে হবে। যেভাবে করবেন । আয়নার সামনে কাধ সোজা করে দাঁড়ান, কোমরে হাত রাখুন ও আপনার স্তনের আকার, আকৃতি ও রং লক্ষ্য করুন স্তনের কোথাও ক্ষত অথবা লাল স্থান অথবা ফোলা লাগছে কিনা এটাও দেখুন । আপনার ডান হাত দিয়ে বাম স্তনে চাপ দিন। এক্ষেত্রে আপনার হাতের আঙুলগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করুন (হাতের তালু নয়)। ধীরে ধীরে চাকতির মতো করে হাত ঘুরান ও অনুভব করুন। একই ভাবে বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন।

কারা স্তন ক্যান্সারের ঝুকিতে আছে

* বয়স্ক মহিলা * যাদের স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস আছে * যেসব মহিলারা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাননি * BRCA-1, BRCA-2 নামক জিনের মিউটেশনের কারণে * অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া * দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া * মদ্যপান করলে * ব্রেস্টের কিছু অসুখ যেমন atypical ductal বা lobular hyperplasia থাকলে * অন্য কোনো ক্যান্সার যেমন- কোলন, ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হলে।

সুরক্ষিত থাকার উপায়

ডা. মেন্ডেজ বলেন, “৪০ বছর বয়স থেকেই প্রতি বছর ‘ম্যামোগ্রাম’ করানোর পরামর্শ দেই আমরা। যাদের পরিবারে এই রোগের ইতিহাস আছে কিংবা কোনো কারণে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদের আরও আগ থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় থাকতে হবে।বংশে স্তন ক্যান্সার থাকলে সবচাইতে কাছের আত্মীয়ের যে বয়সে এই রোগ শনাক্ত হয়েছিল সেই বয়সের ১০ বছর আগে থেকেই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। আর বয়স যত বাড়বে ততই এই পরীক্ষাগুলোর গুরুত্ব বাড়বে।তিনি আরও বলেন, “স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্থূলতা স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায় অনেকটা।”

আরেকটি কারণ হলো ‘ইস্ট্রোজেন’। এই হরমোন ‘এডিপোজ টিস্যু’ বা চর্বির কোষে জমা হয়। অর্থাৎ ‘এডিপোজ টিস্যু’ শরীরে যত বেশি, আদর্শ শারীরিক গড়ন থেকে আমরা ততই দূরে এবং ‘ইস্ট্রোজেন’ যত বেশি, স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কাও বেশি।খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে কোনো ‘ডায়েট’ই নির্ভেজাল নয়। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে, পরিমাণ মতো খাওয়াই হবে প্রধান লক্ষ্য।অন্যান্য সকল রোগের মতোই স্তন ক্যান্সার থেকেও সুরক্ষা দেবে নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস।মদ্যপান বর্জন করতে হবে। অলস জীবনযাত্রা ত্যাগ করতে হবে।ধূমপানের সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক আছে ফুসফুস ক্যান্সারের সঙ্গে। তবে ধূপমান অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, তাই তা বর্জন করাই উচিত।

স্তনের সব চাকাই কি ক্যানসার?

স্তনের চাকা বা লাম্প সম্ভবত উল্লেখিত সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও ২০-৫০ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ স্তনের চাকাই ক্যানসার নয়, তবু যেকোনো চাকা বা লাম্প অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে আরও পরীক্ষা করানো উচিত।প্রাথমিক পর্যায়ে স্তনের সমস্যাগুলো নির্ণয় করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো অনেকটা নির্ভর করে আপনার বয়সের ওপর।

যাঁদের বয়স ৩০ বছরের নিচে

আপনার বয়স যদি ৩০–এর কম হয় এবং আপনি যদি মাসিকের আগে স্তনে চাকা অনুভব করেন, তাহলে আপনাকে হয়তো মাসিক শেষ হওয়ার পর তা মিশে যায় কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হবে। এই বয়সে সাধারণত চাকাগুলো শরীরে হরমোনের মাত্রা বদলের কারণে হয়, যা মাসিকের পরে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে।যদি মাসিকের পরও স্তনের চাকা মিলিয়ে না যায়, তাহলে আপনার সম্ভবত আলট্রাসাউন্ড বা বায়োপসির প্রয়োজন হবে, যার মাধ্যমে লাম্পের ভেতরের পদার্থ তরল, নাকি ঘন, তা জানা যাবে। ম্যামোগ্রাম সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সী নারীদের প্রয়োজন হয় না; তবে যদি আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে যথেষ্ট তথ্য পাওয়া না যায়, তাহলে ম্যামোগ্রাম প্রয়োজন হতে পারে।

যাঁদের বয়স ৩০ বছরের বেশি

৩০ বছরের ওপরের নারীদের স্তনে যদি কোনো নতুন চাকা হয়, তাহলে সাধারণত একটি ম্যামোগ্রাম করা হয় এবং বিশেষ প্রয়োজনে আলট্রাসাউন্ড। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপর স্তনেরও ম্যামোগ্রাম করা হয়, যাতে করে পার্থক্যটা ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়। যদি ম্যামোগ্রাম বা আলট্রাসাইন্ডে চাকাটা অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে সাধারণত বায়োপসির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন ধাপ

স্তন ক্যানসারের মূলত চারটি স্টেজ বা ধাপ রয়েছে।
স্টেজ ১ এবং ২: এই দুই স্টেজের ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসার ধরা যেতে পারে। স্টেজ ১: এই ক্যানসারে টিউমার সাধারণত ২ সেন্টিমিটারের কম হয়, যা আশপাশের লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়েনি। স্টেজ ২: এই ক্যানসারে টিউমার সাধারণত ২ থেকে ৫ সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে, তবে তা বগলের লসিকাগ্রন্থি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। স্টেজ ৩: এ ক্ষেত্রে ধরা হয়, ক্যানসার কিছুটা অগ্রসর হয়েছে, তবে তা সীমাবদ্ধভাবে। টিউমারগুলো সাধারণত ৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় এবং আশপাশের লসিকাগ্রন্থিতে বিস্তার করে থাকে।যদি কোনো টিউমার স্তনের নিচের মাংসপেশি অথবা ওপরের ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রেও আমরা তাকে স্টেজ ৩ বলতে পারি।
কিছু স্তন ক্যানসার খুব দ্রুত অগ্রসর হয় এবং স্তনকে লালচে ও অস্বাভাবিকভাবে ফুলিয়ে তোলে। সে ক্ষেত্রে টিউমার ছোট এবং এখনো লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে না পড়লেও তাকে স্টেজ ৩ হিসেবেই গণ্য করা হয়। স্টেজ ৪: যখন ক্যানসার স্তনের বাইরে গিয়ে দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে; যেমন হাড়, ফুসফুস, লিভার অথবা অন্য কোনো অঙ্গে, তখন তাকে স্টেজ ৪ বলা হয়।
ক্যানসারের স্টেজ ছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার আপনার চিকিৎসাব্যবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করবে; যেমন ‘হরমোন রিসেপ্টর’-এর উপস্থিতি। এ ব্যাপারে আপনার চিকিৎসক আপনার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

এই ক্যান্সার এত ছড়াচ্ছে কেন?

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরার মতে, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের হানার অন্যতম কারণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ভারতে প্রান্তিক অঞ্চল তো বটেই, এমনকি শহুরে এলাকাতেও অনেক সময় মেয়েদের নানা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হয়। যৌনাঙ্গের পরিচর্যা করার উপায় বা সুযোগও খুব কম থাকে। এ ছাড়াও ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে আজকাল ধূমপান ও মদ্যপানের প্রবণতা বেড়েছে। এতেও এই ধরনের মেয়েলি অসুখগুলো বেশি করে চেপে ধরছে। পিরিয়ডের সময় অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকা, দীর্ঘক্ষণ অন্তর্বাস বদলানোর উপায় না পাওয়া-এগুলোও রোগ হওয়ার ছোট-বড় নানা অনুষঙ্গ হিসেবে উঠে আসছে।

এ ছাড়া সচেতনতার অভাবও এর জন্য দায়ী। তাই বছর বছর নানা প্রচার অভিযান সত্ত্বেও এই রোগ কমছে না। তবে শুধু রোগীকে দায়ী করেও লাভ নেই। ভারতীয় গ্রামগুলোয় বা ছোটখাটো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই অসুখ পরীক্ষা করার মতো পরিকাঠামো ও চিকিৎসকও থাকেন না।ক্যানসার মানেই প্রচুর খরচ, অনেক হয়রানি-এই ধারণা গেঁথে রয়েছে মনে। তাই অনেক পরিবারই এই অসুখ ধরা পড়লে বিকল্প চিকিৎসা বা অল্টারনেটিভ মেডিসিনে ভরসা করতে শুরু করেন। অনেক সময় এটি থেকেও রোগ বড় আকার ধারণ করে।

ঘরের কাজ করে নিজের দিকে তাকান না খুব একটা। যেটুকু যত্ন তাঁদের দরকার, সেটুকুতেও থেকে যায় ঘাটতি। ব্যায়াম, ডায়েট, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ, ধূমপান-মদ্যপান এগুলোও ফ্যাক্টর।বয়স একটা বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। ইদানীং মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারেরও ঝুঁকিও বাড়ে। আর এই কারণেই ইদানীং স্তন ক্যান্সারও বাড়ছে।

দেরিতে বিয়ে বা বিয়ে না করা কিংবা সন্তান না হওয়া স্তন ক্যান্সার ডেকে আনতে পারে। অল্প বয়সে মেনার্কি অর্থাৎ পিরিয়ড শুরু হওয়া এবং বেশি বয়সে মেনোপজ হলে দীর্ঘদিন ইস্ট্রোজেনের সঙ্গে সহবাস করতে হয়। ইস্ট্রোজেন ক্যান্সারের রিস্ক বাড়ায়। সন্তানকে ব্রেস্ট ফিডিং না করালেও ক্যান্সারের  ঝুঁকি থাকে।বংশে এর আগে কোনও নারীর ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেশি। বিএআরসিএ ১, ও বিএআরসি ২, জিন থাকলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি।

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের ঘরোয়া পদ্ধতি

প্রতিমাসে ঋতুবতী নারীদের মাসিক শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এ পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ, সে সময়ে স্তন্ কিছুটা হালকা হয়ে থাকে এবং ব্যথা কম হয়। যাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে অথবা জরায়ু অপারেশন হয়েছে তারা মাসের যেকোনো একটি দিন বেছে নিতে পারেন। মনে রাখার সুবিধার্থে যে কোন একটি উল্লেখযোগ্য তারিখ ঠিক করে নিতে পারেন।

পরীক্ষা স্থানের সীমানা

স্তন্য টিস্যুর উপরের দিকের কণ্ঠহাড থেকে নিচে ব্রা লাইন এবং বুকের মধ্যভাগ হতে বগলের নিচ পর্যন্ত পরীক্ষা করে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। প্রতি মাসে নিজে পরীক্ষা করার সময় এই পুরো এলাকাই ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে।

প্রথমত

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পর্যাপ্ত আলোর মাঝে দু’বাহু দেহের দু’পাশে ঝুলিয়ে দাঁড়াতে হবে। দু’বাহু মাথার উপরে বা পেছনে উচিয়ে ধরতে হবে। দু’হাত কোমরে চেপে দাঁড়াতে হবে ।হালকা করে স্তনের বৃন্ত চেপে দেখতে হবে, কোন রস বের হয় কি-না;

লক্ষ্য করার বিষয়

স্তনের আকার, আকৃতি ও রং এর পরিবর্তন হচ্ছে কি-না। স্তনের ত্বকের কোনো পরিবর্তন (পুরু বা পাকা কমলার খোসার মত) আছে কিনা। স্তনের বোঁটা ভিতরের দিকে ডেবে গেছে কিনা। স্তনের বোঁটা দিয়ে নিঃসৃত রসের রং কি এবং রক্ত বের হয় কি-না। এমনটি হলে বুঝতে হবে স্তন ক্যান্সার হয়েছে।

দ্বিতীয়ত

স্পর্শ করে অনুভব করুন

দুই অবস্থানে (বিছানায় শুয়ে এবং গোসলের সময়) এ পরীক্ষাটি দুইবার করতে হবে। বিছানায় শুয়ে ডান স্তন্য পরীক্ষা করার সময় ডান কাঁধের নিচে ছোট বালিশ বা তোয়ালে ভাঁজ করে দিতে হবে যাতে বুক ও স্তন্ মোটামুটি একই সমান্তরালে থাকে। তেমনিভাবে বাম স্তন্ পরীক্ষার সময়ও কাঁধের নিচে বালিশ বা তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। আবার গোসলের সময় হাতে সাবান মেখে পরীক্ষা করতে হবে। ডান স্তন্ পরীক্ষা করার সময়ে ডান হাত মাথার উপর রেখে বাম হাত ব্যবহার করতে হবে এবং বাম স্তনের জন্য বাম হাত মাথার উপরে রেখে ডান হাত দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।

কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা আঙ্গুলের স্পর্শে সহজেই অনুভূত হয়। প্রথমে একটু হালকা চাপ, পরবর্তীতে আরও একটু ভারী চাপ এবং তৃতীয় পর্যায়ে বেশ জোরে চাপ দিয়ে স্তন্য টিস্যু সম্বলিত পুরো এলাকা পরীক্ষা করতে হবে। স্তন্য টিস্যুতে চাপ রাখা আঙ্গুলের প্যাড (ঘুরন্ত লাটিমের মত) একটি অক্ষের উপর কয়েকবার করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অনুভব করুন।সব ক্যান্সারই টিউমার, সব টিউমার ক্যান্সার নয়. স্তনে পিন্ড বা চাকা হলে যেমন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি সব চাকাই যে ক্যান্সার, তাও কিন্তু নয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা  গেছে যে, স্তনের চাকার ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ শেষ পর্যন্ত ক্যান্সার হিসাবে চিহ্নিত হয়, বাকি ৯০ ভাগই বিনাইন টিউমার বা অন্য কোন সাধারণ রোগ যা সহজেই নিরাময় করা সম্ভব। সুতরাং সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের ধরণ জানা অত্যন্ত জরুরী।

অসচেতনতায় প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারে মারা যায় ১২ হাজার নারী

অসচেতনতায় প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারে প্রায় ১২ হাজার নারী মারা যায়। এই দুই ক্যান্সার প্রাথমিকে ধরা পড়লে, প্রতিরোধ করা সম্ভব। নারীদের এই ক্যান্সারের স্ক্রিনিং সরকার বিনামূলে দিয়ে থাকে। এরপরেও শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে প্রতিবছর নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনেও আমাদের এই অসংক্রমক রোগে মৃত্যু কমিয়ে আনতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

জীবন বাঁচাতে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে জানা উচিত সকল নারীর

১৫ জন নারী মারা যান। আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে (ক্যান্সার রেজিস্ট্রি) স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা রেকর্ড করা না হলেও, পার্শ্ববর্তী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। উন্নত বিশ্বে অধিকাংশ নারী যেখানে ৫০ বছরের কাছাকাছি বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, আমাদের দেশে সেখানে ৪০ শতাংশেরও বেশি নারী ৫০ বছর বয়সে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।অন্যদিকে, উন্নত দেশে নারীরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে (স্ক্রিনিং’য়ের মাধ্যমে) ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এবং চিকিৎসা নিয়ে থাকেন যা তাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। তবে আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে শেষ পর্যায়ে (চতুর্থ পর্যায়) ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন, যখন রোগীকে আর কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব হয়না।

আমাদের দেশে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে আরও বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার মূল কারণ হল গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে নারীদের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর যা আজ বেড়ে ৭৫ বছর হয়েছে আর সিংভাগ ক্ষেত্রেই সেটি সম্ভব হয়েছে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, মানে উল্লেখযোগ্যভাবে শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার কমানোর মাধ্যমে। তাই মাতৃস্বাস্থ্যের এই উন্নয়ন আমাদেরকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, স্তন ক্যান্সার ও মৃত্যু আমাদের জন্য মর্মপীড়া ও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের দেশের নারীরা আজ প্রজনন স্বাস্থ্যের অমানিশা কাটিয়ে উঠলেও, অ-প্রজনন স্বাস্থ্যের, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর এই ঝুঁকি থেকে মুক্তির প্রধান উপায় হল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা। তাই, স্তন ক্যান্সার কী কারণে হয়ে থাকে বা এর লক্ষণগুলো কী কী তা জানা জরুরি।


তথ্যসুত্র

স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস, jugantor.

ব্রেস্ট ক্যানসার নির্ণয় ও নিরাময়, Prothom Alo.

স্তন ক্যান্সারে মারা যায় ১২ হাজার নারী, Ittefaq.

মেয়েদের স্তন ক্যান্সার, Daily Naya Diganta.

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়, Bangla News24.

জীবন বাঁচাতে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে  জানা উচিত, Shomoyer Alo.

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের ঘরোয়া পদ্ধতি, Ekushey-Tv.

স্তন ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিকার, Kaler Kantho.

স্তন ক্যান্সারের ৫ লক্ষণ, Jago News24.

স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ জানা থাকা ভালো, Bd News24.

যেসব লক্ষণে বুঝবেন ব্রেস্ট ক্যান্সার, Jugantor.

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার, BBC.

Subscribe for Daily Newsletter