মায়ের বুকের দুধ শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো, গুঁড়ো দুধ নয় (Breastfeeding)

বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়
সুস্থ শিশুই সুস্থ-সবল জাতি গঠনের প্রাথমিক ধাপ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়। বুকের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে জানাতেই এই উদ্যোগ। মায়ের দুধের পুষ্টি বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে দেশে বহু শিশু মায়ের দুধ পান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।মায়ের দুধ এবং গরুর দুধের পুষ্টিগুণের তুলনা: একটি ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুসারে ১০০ মিলিলিটার মায়ের দুধে জলীয় অংশ থাকে ৮৯ দশমিক ৯৭ গ্রাম, খাদ্যশক্তি থাকে ৭০ কিলোক্যালরি, ৭ দশমিক ৪ গ্রাম শর্করা, ৪ দশমিক ২ গ্রাম চর্বি ও ১ দশমিক ৩ গ্রাম আমিষ।
শিশু জন্মের পর এই মায়ের প্রথম বা শাল দুধ অনেকটা টিকার মতো কাজ করে
অপর দিকে মায়ের প্রথম বা শাল দুধে রয়েছে ৫৮ কিলোক্যালরি ৫ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ২ দশমিক ৯ গ্রাম চর্বি ও ৩ দশমিক ৭ গ্রাম আমিষ। এই হলুদ রঙের দুধে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই ও জিংক। ফলে শিশু জন্মের পর এই দুধ অনেকটা টিকার মতো কাজ করে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।মায়ের দুধে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ চর্বি থাকলেও গরুর দুধে রয়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। অপর দিকে গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ অনেক বেশি। মায়ের দুধে যেখানে আমিষ রয়েছে ১ শতাংশ, সেখানে গরুর দুধে রয়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ আমিষ।
গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ বেশি কিন্তু মানবশিশু এই আমিষ হজম করতে পারে না
বাছুর মানবশিশুর চেয়ে দ্রুত বড় হয় বলে গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ বেশি। কিন্তু মানবশিশু এই আমিষ হজম করতে পারে না। অপর দিকে ফর্মুলা বা গুঁড়ো দুধ পান করালে শিশু সব সময়ই রোগ–জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। দুধ, নিপল ও বোতলের সঙ্গে অথবা বিকল্প দুধ তৈরিতে ব্যবহৃত পানির সঙ্গে রোগ–জীবাণু থাকার আশঙ্কা রয়ে যায়। তাই শিশুর ঘন ঘন অসুখ হয়। কৃত্রিম গুঁড়ো দুধ পান করানো শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে। শিশু ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। পরিণামে তারা অপুষ্টি ও মৃত্যুর শিকার হয়।
স্তন্যদানকারী মা প্রসব–পরবর্তী বিষণ্নতায় কম ভোগেন
শিশুকে দুধ পান করানো মায়ের জন্যও উপকারী: অন্তত নয় হাজারটি গবেষণাপত্রের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্তন্যদানকারী মা প্রসব–পরবর্তী বিষণ্নতায় কম ভোগেন। স্তন্য দানকালে অক্সিটোসিন নামক একটি হরমোনের মাত্রা শরীরে বেড়ে যায়, যেটি মানসিক প্রশান্তি আনে। স্তন্যদানকারী মায়ের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা ৫০ শতাংশ, যেখানে অন্য মায়েদের মধ্যে এর মাত্রা থাকে মাত্র ৮ শতাংশ। অন্যদিকে স্তন্যদানকারী মায়ের স্তন ও জরায়ুর ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও কম। সন্তান গ্রহণের ফলে শরীরে যে বাড়তি মেদ জমা হয়, স্তন্যদান করলে তা আবার কমে যায়। স্তন্যদান করানোর মাধ্যমে গর্ভধারণের পরে আবার শরীরের স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসা সহজ হয়।
শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করায় দেশের শিশুর অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি ও শিশুর মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ
অজ্ঞতার কারণে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করায় দেশের শিশুর অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি ও শিশুর মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। একটি শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই।৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা যায়, যদি মায়েরা জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের শিশুকে বুকের দুধ পান করান। শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অন্তত ছয় মাস ধরে মায়ের দুধ পান করানোর কোনো বিকল্প নেই।
বাচ্চার জন্য কী দুধ বাছবেন তা বুঝে ওঠা বেশ চ্যালেঞ্জিং। মা এবং বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উদ্বেগগুলির মধ্যে একটি হল দুধের বিষয়টি। ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয় মাত্রা না পেলে বচ্চাদের বৃদ্ধির বছরগুলিতে তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বাচ্চাদের বিকাশের বছরগুলিতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রয়োজন যা হাড় ও দাঁত শক্তিশালী করে।
শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে
শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ শুধু সর্বোত্তম খাবারই নয়, শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে। শিশুর মানসিক বিকাশেও সাহায্য করে। শিশুর দুধ পান কেবল শিশুই নয়, মায়ের জন্যও উপকারী। সন্তানকে দুধ পান করানোর কারণে অতিরিক্ত ওজন, অ্যালার্জি, ওভারিয়ান ক্যানসার ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। সন্তান জন্মের পর অনেক মায়েরই বুকের দুধ পর্যাপ্ত হয় না। এতে শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। তাই মায়ের দুধের বিকল্প কিছু না খুঁজে, বরং মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। নিয়মিত খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু উপকরণে পানীয় তৈরি করে খেলেও মায়ের বুকের দুধ বাড়ানো সম্ভব।
ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়, কমে মৃত্যুঝুঁকি
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী জন্মরে প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ার হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়। অথচ নগর স্বাস্থ্য জরপি বলছে, ২০২১ সালে শহর এলাকায় এ হার ৫২ শতাংশের কম।নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের তথ্য ও জরিপ বলছে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানো গেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়, কমে মৃত্যুঝুঁকি। কিন্তু দেশে জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়ছে না। বরং শহর এলাকায় এ হার কমছে। বুকের দুধ খাওয়াতে চান এমন মায়েরা পাচ্ছেন না সঠিক দিকনির্দেশনা। ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ আসে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে।
কর্মজীবী মায়েরা বাধ্য হয়ে শিশুকে দেন ফরর্মুলা দুধ
নিজস্ব অনুসন্ধান এবং জরিপেও ফর্মুলা দুধ ব্যবহারের একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, কর্মজীবী মায়েরা বাধ্য হয়ে শিশুকে দেন ফরর্মুলা দুধ। ‘বাচ্চা শুকনা’ বলে আত্মীয়স্বজনের চাপেও দিতে হয়। কোনো কোনো মা অবশ্য ফর্মুলা দুধকে পুষ্টিকর ভেবে দেন। অনলাইন প্রচারেও বাড়ছে ফর্মুলা দুধের ব্যবহার।
সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে)-এর তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে দেশে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৫ শতাংশ। জরিপটি চালায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)। নিপোর্টের ২০১১ সালের একই জরিপে এ হার ছিল ৬৪ শতাংশ। দেশের ১১টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিপোর্টের ২০২১ সালের নগর স্বাস্থ্য জরিপে দেখা যায়, এ হার আরও কমে ৫২ শতাংশ হয়েছে।
লোকবলের অভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান (ফিল্ড) মাহবুব আরেফীন রেজানুর বলেন, ‘ফর্মুলা দুধের আধিপত্য কমাতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিদ্যমান আইনটি সম্পর্কে অংশীদারদের সচেতনতার কাজ জোরেশোরে চলছে। লোকবলের অভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না। তবে কোনো চিকিৎসক ফর্মুলা দুধ দিচ্ছেন, প্রমাণ পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ এখন পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধে কেউ শাস্তি পেয়েছেন বলে এই কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও একদল চিকিৎসকের বিদেশ সফর বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস কে রায় বলেন, গুঁড়া দুধ কোম্পানি অবাধে প্রচার করছে, মায়েরা প্রভাবিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি আইন লঙ্ঘনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সাদা গুড়া কেমিক্যাল মিশ্রণকে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ‘ফর্মুলা’ বলা হয়
উনিশ শতকের পর থেকে সারা পৃথিবীতে বাচ্চাদের এক ভয়ঙ্কর সমস্যায় পড়তে হয়েছে: তাদের মায়েরা আর তাদেরকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ায় না। মানবজাতির একদম শুরু থেকে লক্ষ বছর ধরে বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ تعالى কু’রআনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন পুরো দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু আজকের ‘আধুনিক সমাজের’ বাচ্চারা আর মায়ের বুকের দুধ না খেয়ে, ‘টিনের দুধ’ নামের কেমিক্যালের মিশ্রণে তৈরি একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ খেয়ে বড় হচ্ছে। এই সাদা গুড়া কেমিক্যাল মিশ্রণকে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ‘ফর্মুলা’ বলা হয়, ‘দুধ’ বলা হয় না, কারণ এটি মায়ের দুধের ধারে কাছেও কিছু নয় এবং এতে কয়েকটি ক্ষতিকর ক্যামিকেল রয়েছে। কিন্তু অল্প শিক্ষিত দেশগুলোতে মার্কেটিং-এর জোরে একে মায়ের দুধের কাছাকাছি দুধ বলে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হয়।
মায়ের দেহে দুধ যেভাবে তৈরি হয়, তার ধারে কাছে প্রযুক্তি এখনো মানুষ অবিস্কার করেনি। অথচ সেই ১৮৬৫ সালে প্রথম ফর্মুলা আবিষ্কারের পর থেকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে মানুষকে বোঝানো হয়েছে যে, টিনের গুড়া দুধ হচ্ছে মায়ের বুকের দুধের কাছাকাছি দুধ।[৩৭২] পানি মেশানোর পর সেটা দেখতে দুধের মতো হয় দেখে সরল মানুষরা বুঝতে পারে না যে, এটা গরুর দুধের প্রোটিন মেশানো একধরনের সাদা গুড়া ওষুধ ছাড়া আর কিছু নয়। উনিশ শতকে এই ফর্মুলা দুধের ব্যাপক প্রচলনের পর থেকে শুরু হয়েছে বিপুল পরিমাণে বাচ্চার মৃত্যু এবং অসুস্থ বাচ্চার সংখ্যা বৃদ্ধি।
গরুর দুধ বা সয়াবিন থেকে তৈরি কৃত্রিম দুধের সাথে নানা রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে তৈরি করা হয় ফর্মুলা
ফর্মুলা এবং মায়ের বুকের দুধের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল। বিজ্ঞাপনে যতই বড় বড় কথা বলা হোক না কেন যে, ফর্মুলাতে আয়রন, ভিটামিন, প্রোটিন আছে, এরপরও মায়ের বুকের দুধের প্রায় একশটি উপকরণ ফর্মুলাতে নেই।মায়ের বুকের দুধে জীবন্ত কোষ, হরমোন, সক্রিয় এনজাইম এবং ইমিউনোগ্লোবিন আছে, যা ফর্মুলাতে কোনোভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়।ফর্মুলা তৈরিতে মানুষের দুধ ব্যবহার করা হয় না। এটি গরুর দুধ বা সয়াবিন থেকে তৈরি কৃত্রিম দুধের সাথে নানা রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এতে যে প্রোটিন থাকে, তা হচ্ছে গরুর প্রোটিন, যা গরুর বাচ্চার জন্য দরকারি। মানুষের বাচ্চা এই প্রোটিন অনেকখানিই হজম করতে পারে না। এছাড়া ফর্মুলা বানানোর সময় যে পানি ব্যবহার করা হয়, তাতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ক্লোরিন, লেড, ব্যাকটেরিয়া, ফ্লুরাইড এবং নানা ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল। গবেষণায় দেখা গেছে ফর্মুলা খাওয়ানো বাচ্চার দেহে উচ্চ পরিমাণের ক্লোরিন, লেড এবং ফ্লুরাইড থাকে।
আল্লাহর تعالى ডিজাইনের থেকে ভালো কিছু আর হতে পারে না। মানুষ কোনোদিন পারবে না বুকের দুধের কাছাকাছি কিছু তৈরী করতে। একটি বাচ্চার জন্য যা কিছুই দরকার, তার সবকিছুই তিনি تعالى মায়ের বুকের দুধে দিয়ে দিয়েছেন। তাহলে তাঁর تعالى দেওয়া এই অসাধারণ নিয়ামত থেকে আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে কেন বঞ্চিত করবো? মানুষের তৈরী কেমিক্যাল মেশানো খাবারের ঝুকি কেন নেবো, যখন আল্লাহই تعالى বাচ্চার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ খাবার মায়ের দেহের মধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন? আমরা কি চাই বাচ্চা মোটাসোটা হোক, নাকি সুস্থ হোক? আমরা কি চাই বাচ্চা বড় আকৃতির হোক, নাকি বুদ্ধিমান, সবল হোক? আসুন, মানুষের কথায় কান না দিয়ে, যথাযথ গবেষণাগুলো পড়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহর تعالى সৃষ্টির উপর শ্রদ্ধা এবং আস্থা রেখে বাচ্চাকে পুরো দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াই।
বোতল, চুষনি ও বোঁটায় ‘বিসফেনল এ’ (Bisphenol A) থাকে যা শিশুর ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়
বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) থেকে জানা গেছে, গুঁড়ো দুধ ও প্রক্রিয়াজাত শিশুখাদ্য সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত নয়, কারণ এতে ‘এন্টারোব্যাকটর সাকাজ্যাকি’ (Enterobacter sakazakii) এবং ‘সাল-মোনেলা’ নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব খাওয়ালে ভবিষ্যতে শিশুদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্থূলতা হওয়ার আশঙ্কা এবং শৈশবকালীন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া বোতল, চুষনি ও বোঁটায় ‘বিসফেনল এ’ (Bisphenol A) থাকে যা শিশুর ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। গুঁড়ো দুধ বা প্রক্রিয়াজাত যেকোনও খাদ্যের ‘ডিএইচএ’ (DHA) শিশুর বুদ্ধি বিকাশে কাজ করে না।
গুঁড়ো দুধের বিজ্ঞাপন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত
বিবিএফ থেকে জানা গেছে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক সুপারিশে বলা হয়েছে- যদি ৫ বছরের কম বয়েসের শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করলে বছরে দুই লাখ ২০ হাজার শিশু মৃত্যুঝুঁকি থেকে রক্ষা পায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুঁড়ো দুধ বা প্রক্রিয়াজাত যেকোনও শিশুখাদ্য শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন- মায়েরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে সন্তানকে গুঁড়ো দুধ খাওয়াচ্ছেন, আর এতে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে নবজাতকরা। বর্তমান সময়ে এই প্রবণতা অনেক বেশি। তাই এসব গুঁড়ো দুধের বিজ্ঞাপন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
মায়ের দুধ শিশুর সম্পূর্ণ ও সুষম খাদ্য
'মায়ের দুধ শিশুর সম্পূর্ণ ও সুষম খাদ্য। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে নবজাতকের মৃত্যঝুঁকি হ্রাস পায়। মায়ের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সাশ্রয়ী। এ ছাড়া, শিশু মায়ের দুধ পান করলে ওই শিশুর মায়ের ব্রেস্ট ও যৌন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকবে। এ কারণে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। গুঁড়ো দুধ পরিহার করে নবজাতক শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। একইসঙ্গে গুঁড়ো দুধের প্রচার-প্রচারণা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।'তবে শিশুর জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে একান্তভাবে অপরিহার্য বিবেচিত হলে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ৬১ নং আইনের অধীনে নিবন্ধিত ও রেজিস্ট্রারভুক্ত কোনো মেডিকেল চিকিৎসক উপযুক্ত প্রমাণাদির ভিত্তিতে কেবল মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্যের কোনো ব্যবস্থাপত্র প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন
'আইন অনুযায়ী মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত, এজন্য সরঞ্জামাদির আমদানি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় বা বিতরণের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন মুদ্রণ, প্রদর্শন, প্রচার বা প্রকাশ বা এ জাতীয় কাজে কেউ নিজেকে নিয়োজিত না করার কথা বলা হয়েছে। তারপরও অবাধে প্রদর্শিত হচ্ছে বেশিরভাগ ফার্মেসি, মুদি দোকান ও অভিজাত চেইনশপগুলোতে। তবে এসব ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা নেই। তাই সব স্তরের মানুষের মাঝে এসব তথ্য ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তথ্যসুত্র
গুঁড়ো দুধ থেকে দূরে রাখতে হবে , Bangla. The Daily Star.
গুঁড়ো দুধ শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর, Banglatribune,
বাচ্চারা আর মায়ের বুকের দুধ , Quranerkotha.
কোম্পানির ফর্মুলা দুধের বিক্রি, Dainikbangla.
বেশি বয়সে অনেকেরই প্রদাহ, Ittefaq.
আমিষ হজম করতে পারে না, Prothomalo.
মায়ের বুকের দুধ বাড়ানো সম্ভব, Prothomalo.