বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস ( World Child Cancer Day)

১৫ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতি বছর বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শিশুদের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সচেতনতা তৈরিতে সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ (ডব্লিউসিএস বিডি) বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে।
শিশুদের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সচেতনতায় সংস্থাটির উদ্যোগে সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় শিশু ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা (মাস্ক বিতরণ, ব্লাড গ্রুপিং) দেওয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশের উদ্যোগে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও পিকআপ ভ্যানে করে রাজধানীতে শিশুদের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সচেতনতায় প্রচারণা চালিয়েছে সংস্থাটি।
ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি ও ক্যান্সার গবেষক সৈয়দ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বেশিরভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠে। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পায়।’ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরাও মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু অনকোলজি বিভাগে ২০১০ থেকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত ৪৫৫ শিশুকে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, সঠিক ডায়াগনস্টিক করা গেলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের মধ্যে কোলন ও লিভার ক্যান্সার বেশি হয়। এর অন্যতম কারণ তারা শাক-সবজি খুব কম খায়। ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় বেশি খায়। কোমল পানীয়র মধ্যে টক্সিন নামের একটি উপাদান লিভার ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ি। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
দিবসটি পালনের লক্ষ্য
শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে সর্বসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, মৃত্যুহার হ্রাস করা এবং ক্যান্সার সম্পর্কিত ব্যথা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিশুদের দুর্দশা হ্রাস করা।দেশের শীর্ষস্থানীয় শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আমিরুল মোরশেদ ডক্টর টিভি অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মূলতঃ জেনেটিক্যাল অর্থাৎ বংশানুক্রমে শিশুরা ক্যান্সার জীবাণু নিয়ে জন্মায়। তবে, আশার কথা হলো- শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসায় যথেষ্ট সাফল্য দেখাচ্ছেন বাংলাদেশি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। দেশে চিকিৎসার আওতায় আসা শিশু ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগই সুস্থ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপনে সক্ষম হন বলে জানান তিনি।
শিশুদের ক্যান্সার কেন হয়
শিশুদের বেশির ভাগ ক্যান্সার হয় অজ্ঞাত কারণে। তা ছাড়া পারিপার্শ্বিক প্রভাবেও এই রোগটি হতে পারে। খাবারে ক্যামিকেল, ভাইরাস, জেনেটিক, বংশ পরস্পরায়সহ নানা কারণে হয়ে থাকে। বাবা-মা ধুমপায়ী হলে শিশুর ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তা ছাড়া বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, গর্ভকালে মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাস, শিশুর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার, দু’ভাবে বিভক্ত
একটি হলো একিউ লিম্ব ব্লাস্টিক লিকিউমিয়া , আরেকটি মায়লো ব্লাস্টিক লিকিউমিয়া। বড়দের মতো শিশুদেরও টিউমার হতে পারে। যেমন- ব্রেন টিউমার, কিডনি টিউমার, নিউরো ব্লাস্টোমা ও লিভারের টিউমার ইত্যাদি। শিশুদের ব্লাড ক্যান্সারের আরেকটি ধরন আছে, সেটাকে লিম্ফোমা বলে। অর্থাৎ শিশুদের সব ধরনেরই ক্যান্সার হতে পারে স্থানে ভেদে নামটা ভিন্ন ভিন্ন হয়।
শিশুরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. জন্ম থেকে প্রথম পাঁচ বছর
নিউরোব্লাস্টোমা, কিডনির উইল্মস টিউমার, রেটিনেব্লাস্টোমা, লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা এবং অন্যান্য মস্তিষ্কের টিউমার।
২. পাঁচ থেকে দশ বছর
লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা, সারকোমা (হাড়, মাংসের), জনন কোষের ক্যানসার।
৩. দশ বছরের ঊর্ধ্বে
লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, হজকিন্স ডিজিজ, অষ্টিওসারকোমা, ইউইং সারকোমা, অন্যান্য টিসু সারকোমা, জনন কোষের ক্যানসার।আর চোখের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, স্নায়ু ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও ব্রেইন ক্যান্সার। এ ছাড়া ব্লাড ক্যান্সার ও হাড়ের ক্যান্সারও হতে পারে।
আর ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শিশু লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। লিউকেমিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রায়ই জ্বর, ক্লান্তি, ত্বকে র্যাস, ঘাড়ের গ্রন্থিগুলোর ফোলাভাব সহ ত্বকের ফুসকুড়ি ইত্যাদি। কারো কারো কোনও লক্ষণ নাও থাকতে পারে। পরে রক্ত পরীক্ষায় লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। লিউকেমিয়া সন্দেহ হলে তা দ্রুত পরীক্ষা করা দরকার। যা লিউকেমিয়া নির্ধারণের পাশাপাশি লিউকিমিয়ার ধরণের বিষয়টিও নিশ্চিত করবে। শিশুদের মধ্যে সাধারণত লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বেশী হয় তবে মাইলয়েড লিউকেমিয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এসব রোগ সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের জন্য বিস্তারিত বিবরণসহ বংশগত কোনো কারণ আছে কিনা, তা জানতে হবে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে ৮০ শতাংশ শিশুর রক্ত ক্যান্সার লিউকেমেয়িার নিরাময় সম্ভব।
শিশু বয়সে কোন ক্যান্সার গুলো বেশি হয়?
প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্যান্সার কিছুটা ভিন্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শিশুদের মধ্যে সাধারণত লিউকেমিয়া বা রক্তের ক্যান্সার বেশি হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত।এছাড়া আরো যে ধরণের ক্যান্সার হয় সেগুলো হচ্ছে, লিম্ফোমাস এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ু ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরণের টিউমার। কিছু ক্যান্সার রয়েছে যা শুধু শিশুদেরই হয়। যেমন নিউরোব্লাস্টোমা, নেফ্রোব্লাস্টোমা, মেডুলোব্লাস্টোমা, এবং রেটিনোব্লাস্টোমা।স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস, কোলন বা মলদ্বারের ক্যান্সার সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদেরই হয়ে থাকে। শিশুদের এ ধরণের ক্যান্সার হবার ঘটনা খুবই বিরল।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান বলেন, শিশুদের কিডনি ক্যান্সার, মস্তিষ্কের কিছু ক্যান্সার এবং রক্তের কিছু ক্যান্সার হতে পারে।
শিশুদের ক্যান্সার কি প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা যায়?
ডব্লিউএইচও এর তথ্য মতে, শিশুদের বেশিরভাগ ক্যান্সারেই তেমন কোন লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। যার কারণে দেরিতে সনাক্ত হয়।উন্নত বিশ্বে যেহেতু শিশুদের বাবা-মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকে এবং চিকিৎসার সুযোগও বেশি - তাই তাদের মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সনাক্ত করাটা সম্ভব হয়।নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা এবং পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় প্রাথমিক অবস্থাতে ধরা পড়ে না।
কী কী লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না?
ডা. ফারজানা রহমান বলেন, যেকোন বয়সের শিশুর মধ্যেই ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।তবে রক্তের ক্যান্সারটি সাধারণত এক বছরে বয়সের পর থেকে হয়। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের এটি বেশি হয়।"লিউকোমা নামেও একটা ক্যান্সার হয়, সেটা যেকোন বয়সের শিশুদেরই হতে পারে।"তিনি বলেন, শিশুরা সাধারণত নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকে না এবং বেশিরভাগ সময় তারা বুঝতেও পারে না যে, তার আসলে কেমন লাগছে।এ বিষয়ে বাবা-মা কেই উদ্যোগী হতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।শিশুদের মধ্যে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো থাকলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে এসব লক্ষণ থাকার মানে এই নয় যে তারা ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবে লক্ষণগুলো থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।
শিশুদের ক্যান্সার উপসর্গ
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, শিশুদের ক্যানসার আগে থেকেই কোনোভাবে বোঝা যায় না। বড়দের ক্যানসারের মতো না। ছোটবেলায় শিশুর চোখ বিড়ালের চোখের মতো জ্বললে, সেখান থেকে চোখের ক্যানসার হতে পারে। অবহেলা করলে সেই ক্যানসার ব্রেনে ছড়িয়ে যায়। তখনই যদি চোখের চিকিৎসকের কাছে যায়, চিকিৎসক বুঝে যাবে এটা চোখের ক্যানসার। তখন তাকে চোখের অপারেশন করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য। পেটের মধ্যে কোনো চাকা দেখা দিলে ও ব্যথা না থাকলেও বুঝতে হবে কিডনি বড় হয়ে গেছে। সেখান থেকে কিডনির ক্যানসার হতে পারে। অথবা শরীরের যেকোনো জায়গায় টিউমারের মতো দেখা গেলে, কোনো আঘাত পায়নি অথচ একটা জায়গায় ফুলে গেছে, এটাও একটা ক্যানসারের লক্ষণ। দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছে। অথবা গায়ের চামড়া মধ্যে মশার কামড়ের মতো লাল লাল দাগ উঠেছে, অথবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে, অথবা অনেক দিন জ্বর, কোনো ওষুধ খেয়েই জ্বর কমছে না, বাচ্চার ওজন কমে যাচ্ছে, বাচ্চার গায়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে, এই ধরনের উপসর্গ ক্যানসারের লক্ষণ। আবার ঘাড়ের দু’পাশের গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ। এরকম হলে অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে।
শরীরে ব্যথা
শরীরের কোথাও যদি অনেক দিন ধরে ব্যথা থাকে এবং সেটি না সেরে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান বলেন, যদি কোন শিশু অনেক দিন ধরেই তার শরীরে ব্যথা করছে বলে জানায় তাহলে সেটি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।"হয়তো সে বলতে পারবে না কিন্তু বোঝাবে যে তার শরীরটা ভাল নেই, গায়ে ধরতে দিচ্ছে না, শরীরে খুব বেশি ব্যথা"
ফোলা বা ফোলা ভাব
শরীরের কোন অংশ যদি হঠাৎ ফুলে ওঠে এবং দীর্ঘদিনেও ভাল না হয় - তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।এ বিষয়ে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, গলার ভেতরে কোন গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া বা শরীরের কোথায় কোন অংশ ফুলে যাওয়া, পেটের ভেতরে চাকার মতো অনুভূত হওয়া, শরীরের জয়েন্ট বা কোন সংযোগস্থলে ফুলে যাওয়া ভাল লক্ষণ নয়।এ ধরণের উপসর্গ দীর্ঘদিন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।
অনেক দিন ধরে জ্বর
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তেমন ভালভাবে কাজ করতে পারে না বলে অনেক সময় জ্বর আসলেও সেটি আর ভাল হয় না। ফলে অনেক দিন ধরে জ্বরে ভুগতে থাকে রোগী।এটি রক্তের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ বলে জানান ডা. ফারজানা রহমান।সেক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে সে আসলেই ক্যান্সারে আক্রান্ত, নাকি অন্য কোন সমস্যা রয়েছে।এছাড়া শরীর হঠাৎ করে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস হওয়ার পর অনেক দিন ধরে চলতে থাকে, ওষুধ খাওয়ার পরও জন্ডিস ভাল না হওয়া, শরীর হলুদ হয়ে যাওয়া- এসব লক্ষণ থাকলেও শিশুকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা - যা যায় না
শিশু যদি দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরানোর কথা জানায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া
শিশু যদি খাবারের প্রতি অরুচি দেখায়, কোন কিছুই খেতে চায় না এবং এই সমস্যা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, তার পর এক পর্যায়ে হঠাৎ করে দেহের ওজন কমে যায় - তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে পরীক্ষা করাতে হবে।তিনি বলেন, অনেক সময় লক্ষণ ছাড়াও কিছু লুক্কায়িত ক্যান্সার থাকে। সেক্ষেত্রে আলাদা কোন লক্ষণ থাকে না, শুধু শিশু খাওয়া দাওয়া করে না, ওজন কমে যাচ্ছে, কান্নাকাটি করছে, খেলাধুলা বা অন্য কোন কাজ করছে না - এরকম হলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে।
ক্লান্তি ও স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘাম
কোন কাজ না করেও যদি শিশু সারাক্ষণই ক্লান্তি বোধ করে, বিশ্রাম নেয়ার পরও ক্লান্তিভাব না যায় এবং স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে - তাহলে সেটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
হঠাৎ রক্তপাত
শরীরের কোন অংশ থেকে যদি হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে রক্তক্ষরণ শুর হয় তাহলে অবশ্যই দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।ডা. ফারজানা রহমান বলেন, কোন কারণ ছাড়াই বা কোন আঘাত ও ব্যথা পাওয়া ছাড়াই রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাহলে ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।রক্তরোগ এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বোন ম্যারো বা হাড়ের মজ্জা থেকে যে রক্ত তৈরি হয় সেটি যদি কোনভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, বা রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান তৈরি না হয় তাহলে শরীরের কোন একটি অংশ থেকে যেমন নাক, পায়খানার রাস্তা কিংবা প্রস্রাবের সাথে হঠাৎ করেই রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
নাক থেকে রক্ত পড়া
শিশুর নাকের সম্মুখভাগে সূক্ষ্ম রক্তনালি থেকে রক্তপাত হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি কমে যায়। কিন্তু যদি না কমে, বরং ঘন ঘন রক্তপাত হতে থাকে, তাহলে সচেতন হতে হবে।
ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
শিশুর শরীরের কোথাও কেটে গেলে খেয়াল রাখুন, ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে কি-না। সময় বেশি লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া
চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া। এটি চোখের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ।
শ্বাসকষ্ট
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া শিশুর ক্যানসারের ঝুঁকির অন্যতম উপসর্গ।
ঘন ঘন জ্বর
অকারণ ঘন ঘন জ্বর শিশুর লিউকেমিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
চাকা বা মাংসপিণ্ড
পেটের যেকোনো পাশে চাকা বা টিউমার অনুভূত হলে কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
মাথাব্যথা
শিশুর অস্বাভাবিক মাথাব্যথা মস্তিষ্কের ক্যানসারের লক্ষণ।
অচেতন হওয়া
তীব্র জ্বর বা যথাযথ কারণ ছাড়া শিশু যদি হুটহাট অচেতন হতে থাকে, তাহলে তা ব্রেন টিউমারের উপসর্গ হতে পারে।
হাড়ে ব্যথা
কোনো আঘাত ছাড়াই হাড়ে তীব্র ব্যথা, খুঁড়িয়ে হাঁটা প্রভৃতি লক্ষণগুলো হাড়ের ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
দুর্বলতা
অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা শিশুদের লিম্ফোমা নামক ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণ।
রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না বলে এই উপসর্গ দেখা দেয় বলে জানান তিনি।এছাড়া শরীরের চামড়ার ভেতরেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। তখন চামড়ায় কালো বা লাল লাল ছোপ দেখা যায় তখন শিশুরা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো যদি দেখা যায় যে এক মাস বা দু'মাস থাকে এবং কোনভাবেই ভাল হচ্ছে না - তখন সেটি পরীক্ষা করাতে হবে। তবে পরীক্ষার আগ পর্যন্ত কোনভাবেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, আসলে কী কারণে এমন হচ্ছে।
শিশুর ক্যান্সার লক্ষণ বুঝা যায় ধরনের উপর ভিত্তি করে। যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে-
শিশুর রক্তশূন্যতা দেখা দিবে। দাঁতের গোড়া, চোখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তের দাগ দেখা দিবে। জ্বর আসবে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ দেখা দিবে।এগুলো হলো ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। দুই থেকে দশ বছরের মধ্যে শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার বেশি হয়। অন্যান্য ক্যান্সারগুলোও সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে।
শিশুর ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়
অভিভাবকের সচেতনতাই শিশুকে বাঁচাতে পারে ক্যানসার থেকে। পারিবারিক জীবনধারার পাশাপাশি শিশুর জীবনধারায় সাধারণ কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।শিশুকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ান।তাজা ফল, সতেজ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।খেলাধুলা, ছোটখাটো কাজ প্রভৃতির মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলুন।সরাসরি সূর্যের আলোতে শিশুকে বেশিক্ষণ থাকতে দেবেন না।শিশুকে চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়ান, নিয়মিত ব্যায়াম করান, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।নিজে যেমন ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করবেন, তেমনি শিশুও যেন এই অভ্যাসে না জড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।আপনার শিশুকে ছোটবেলাতেই হেপাটাইটিস বি টিকা দিন।
শিশুদের ক্যান্সার নিরাময় যোগ্য। খাবার ও পরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে। খাবারের মধ্যে যে কোন প্রকার ক্যামিকেল-আর্সেনিক বা ভেজাল মিশানো বন্ধ করতে হবে। পরিবেশও শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ধূমপান, অতিরিক্ত হর্ণ বাজানো, বায়ু দূষণ এগুলো থেকে শিশুদেরকে দূরে রাখতে হবে। অনেক সময় শিশুর বাবা-মা ধূমপানে আসক্ত থাকেন, তাতেও শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। ধূমপান শুধু ধূমপায়ী ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন নয়, আশপাশের মানুষেরও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করেন।
শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসা
শিশুদের ক্যান্সারের জন্য যে ধরনের চিকিৎসা করা হয় তা ক্যান্সারের ধরন, ক্যান্সারের তীব্রতা এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। সঠিক চিকিৎসা পেলে শিশুদের ক্যান্সার সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি হলো—কেমোথেরাপি, সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন/স্টেম সেল প্রতিস্থাপন। শিশুদের ক্যান্সারের চিকিৎসা শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে দলবদ্ধভাবে করতে হবে। কারণ শিশুদের ক্যান্সারের ধরন ও চিকিৎসা পদ্ধতি বড়দের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই দলে থাকবে শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, শিশু ক্যান্সার সার্জারি বিশেষজ্ঞ, শিশু রেডিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট, শিশু প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ ও শিশু সেবিকা। শিশুদের ক্যান্সারের চিকিৎসা বাংলাদেশেই করা সম্ভব।বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গুণী ও দক্ষ শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা শিশুদের ক্যান্সারের চিকিৎসা করে থাকেন।
সরকারিভাবে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বেসরকারিভাবে কয়েকটি হাসপাতালে শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা শিশুদের ক্যান্সারের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাই কোনো শিশুর ক্যান্সার ধরা পড়লে এসব হাসপাতালে শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ শিশুদের ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য যদি সঠিক সময়ে, সঠিক নিয়মে, সঠিক চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
শিশুদের ক্যান্সারগুলোর চিকিৎসা বাংলাদেশে পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান রয়েছে। এই চিকিৎসার মান আন্তর্জাতিক মানের। এখানের যেসব প্রোটোকল বা নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তা করা হয়ে থাকে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের শিশুদের ক্যান্সারের সকল চিকিৎসা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বড় বড় মেডিকেলে এই চিকিৎসার বিভাগ এবং প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। শিশুদের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কোন দরকার নেই। শত করা ৭০-৯০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। বিএসএমএমইউর শিশু অনকোলজি বিভাগে শেখ রাসেল চাইল্ড হুড অ্যান্ড সার্ভে কেয়ার গ্যালারি রয়েছে। এই বিভাগের গ্যালারি দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে।১৯৯৩ সালে এদেশে শিশু ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু সুস্থ হয়ে কাজ বাসায় ফিরেছে এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে, কাজকর্ম ঠিকঠাক মতো করতে পারছে। ক্যান্সার জয়ী অনেক শিশু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়রও হয়েছে। কাজেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের প্রতি সবার আস্থা রাখতে হবে এবং লেগে থাকতে হবে।
শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয়
শিশু ক্যান্সারের ওষুধগুলো কিছুটা ব্যয়বহুল। তবে দুই থেকে তিন বছর চিকিৎসা নিতে হয়। এতে দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হতে পারে। এরমধ্যে অনেকগুলোর ওষুধ সরকার ভুর্তকি দিচ্ছে।
আক্রান্তের পরিসংখ্যান
শিশু ক্যান্সার আক্রান্তদের পরিসংখ্যানে কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে প্রতিষ্ঠানিক হিসাব মতে, প্রতি বছরে প্রায় ছয় থেকে আট হাজার শিশু নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। দেশের বেশির ভাগ শিশু চিকিৎসা না নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। যারা চিকিৎসা নেন তাদের মধ্যে ৭০-৮০ ভাগ রোগী ভালো হয়। বাকি যারা থাকে, তারা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে মারা যায়।
শহরের শিশুরা ক্যান্সার আক্রান্ত হয় বেশি
এটা নিয়ে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো গবেষণা বা পরিসংখ্যা করা হয়নি। তবে চিকিৎসকদের ধারণা, শহরের শিশুরা ক্যান্সারের আক্রান্ত বেশি। যেহেতু শহরে পলিউশন বেশি, কাজেই এই রোগ শহরে বেশি। শহরের ভালো দিক হলো ক্যান্সারের বিভিন্ন পরীক্ষা তাড়াতাড়ি করা যায়, রোগ নির্ণয় সহজ হয়।
চিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা
ক্যান্সারের চিকিৎসায় অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা বড় নয়, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে না পারা হলো অন্যতম সমস্যা। শিশু ক্যান্সারের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা এখনও আস্থা অর্জন করতে পারেনি। সচেতনতা ও প্রচার-প্রচারণার অনেক ঘাটতি রয়েছে। আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, দেশের চিকিৎসকরা আস্থা অর্জন করতে পারলে সে লক্ষে পোঁছা যাবে।তিনি আরও বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টক্সিনের উপস্থিতি, কেমিক্যালসলস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যান্সার হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিশুদের ক্যান্সার মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
সংস্থাটি জানায়, যেহেতু প্রতিবছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন- পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগির মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টি আলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদামের মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।
জানা যায়, শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০২ সালে চাইল্ড ক্যান্সার ইন্টারন্যাশনাল (সিসিআই) কর্তৃক এ দিবসটি পালন শুরু হয়। সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়াও এ দিবসটির অন্যতম লক্ষ্য হল মৃত্যুহার হ্রাস করা, এবং ক্যান্সার সম্পর্কিত ব্যথা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিশুদের দুর্দশা হ্রাস করা। এ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ক্যান্সার নির্ণয় করা শিশুদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ বেঁচে থাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরে শিশুদের জন্য আইসিসিডির থিম হলো `নো মোর পেইন` এবং `নো মোর লস`, তাদের এবং পরিবারের জন্য বেঁচে থাকা।
শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
১. সিসিআই অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি বছর, তিন লাখেরও বেশি শিশুর জন্মের ১৯ বছরের মধ্যে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই শিশুদের মধ্যে প্রায় ১০ জনের ৮ জনই অল্প এবং মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে যেখানে তাদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ২০ শতাংশ। ২. সারা বিশ্বে প্রতি ৩ মিনিটে একটি শিশু ক্যান্সারে মারা যায়, যদিও ৮০ শতাংশেরও বেশি শিশু ক্যান্সারের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে এবং মানসম্মত যত্নের সঙ্গে পূর্ণ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে। ৩. শিশু ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশির ভাগই হলো লিউকেমিয়া (শিশুদের মধ্যে সব ক্যান্সারের এক তৃতীয়াংশ লিকিমিয়া), কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার, নিউরোব্লাস্টোমা, নেফ্রাব্লাস্টোমা, মেডেলোব্লাস্টোমা এবং রটিনোব্লাস্টোমা ধরনের। ৪. শিশু ক্যান্সারের মাত্র কয়েকটি পরিচিত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে- গর্ভ, চিকিৎসা পরিস্থিতি, সংক্রমণের সঙ্গে সংক্রমণ, বিকিরণের সঙ্গে যোগাযোগ, পূর্ববর্তী ক্যান্সারের চিকিত্সা, ইত্যাদি।
ডাক্তাররা বিশ্বাস করে, দ্রুত এবং কার্যকর চিকিত্সার মাধ্যমে অধিকাংশ শিশু ক্যান্সার চিকিত্সাযোগ্য। প্রাপ্তবয়স্ক ক্যান্সারের তুলনায়, সাধারণভাবে, শিশুদের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আরও সফলভাবে চিকিত্সা করা শিশুদের বৃহত্তর অনুপাতের সঙ্গে চিকিত্সা করা হয়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই পার্থক্য শৈশবের ক্যান্সার থেরাপির জন্য বেশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং এটির কারণে, যখন প্রয়োজন হয় তখন একটি শিশু আরও তীব্র থেরাপি সহ্য করতে পারে।দেশে গত ১০ বছরে শিশু ক্যানসার রোগী বেড়েছে ৫ গুণ। প্রতি বছর নতুন করে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে ১০ হাজার শিশুর। কিন্তু সে অনুপাতে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা বাড়েনি। সরকারি পর্যায়ে সারা দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৪৭ জন। আবার যেটুকু চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে, তাও ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা নেই বললেই চলে।
চিকিৎসাব্যবস্থার এসব প্রতুলতার কারণে ও মানুষের সচেতনতার অভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিশুদের ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার হারও অনেক কম। উন্নত দেশে যেখানে ৯০ শতাংশের বেশি শিশু ব্লাড ক্যানসার রোগী ভালো হয়, সেখানে বাংলাদেশে এর পরিমাণ মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ ক্যানসার চিকিৎসা হয় এমন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে দেশের শিশু ক্যানসার রোগ ও চিকিৎসাব্যবস্থার এই চিত্র পাওয়া গেছে।
এমন অবস্থায় দেশে সরকারি পর্যায়ে শিশু ক্যানসার রোগের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু রক্তরোগ ও ক্যানসার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে শিশু ক্যানসার রোগের চিকিৎসা আছে। কিন্তু রোগীর তুলনায় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা কম। বিছানা কম, ডাক্তার কম। অথচ রোগী বাড়ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বড় বড় মেডিকেল কলেজগুলোতে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করতে হবে। ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
চিকিৎসা মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ক্যানসার রোগের বিভাগ আছে ও চিকিৎসা হচ্ছে। এসব হাসপাতালে শয্যা আছে ১৪৬টি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০টি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ১৫টি, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৩০টি ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৪০টি বেড রয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন বিভাগ খোলা হলেও এখনো কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন অধ্যাপক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন বিশেষজ্ঞ আছেন। কিন্তু তিনি মেডিকেল অফিসার হিসেবে আছেন। বাকি বিভাগীয় হাসপাতালগুলোর শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ আছে শুধু কাগজে-কলমে। এর মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন শিশু ক্যানসার চিকিৎসক আছেন। তবে তিনি শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগে নয়, অন্য বিভাগে কাজ করছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগে সংকটাপন্ন রোগী রাখা হয় না। রংপুর ও সিলেটে বিভাগীয় হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগে কোনো চিকিৎসকই নেই।
এ ব্যাপারে জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, এখানে বাচ্চাদের জন্য ৪০টি বিছানা আছে। সারা দেশের রোগী বিবেচনায় এটা খুবই কম। শিশুদের ক্যানসারের চিকিৎসায় মূলত কেমোথেরাপি নিতে হয়। সরকারি হাসপাতালে ৯০ শতাংশ ওষুধ সরবরাহ আছে। কেমোথেরাপির ব্যবস্থা আছে। তবে এই ওষুধ খুবই ব্যয়বহুল। তাই বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা কঠিন। সে জন্য আমাদের হাসপাতালে চাপ বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ক্যানসার কোনো সাধারণ রোগ নয়। সারা দেশে এখন সরকারি পর্যায়ে ৪৭ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আছেন। ১৯৯৩ সালে ছিল একজন। প্রতি বছর বিএসএমএমইউ থেকে চারজন করে বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছেন। শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা সরকারি পর্যায়ে খরচ কম। বর্তমানে সরকার অনেক ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছে। অনেক ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। মানুষের সচেতনতা ও মনের ইচ্ছা যাদের আছে, তারা ভালো হয়ে যাচ্ছে। বিএসএমএমইউতে শিশু ক্যানসারের ননপেয়িং বেড ৩১টি। এ ছাড়া তারা সাধারণ বেডেও ভর্তি হতে পারে। রোগীর যে চাপ ১০০ বেড হলে ভালো হয়।
রোগী বেড়েছে ৫ গুণ
অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, প্রতি বছর সারা দেশে ৮-১০ হাজার নতুন রোগী পাওয়া যায়। আমাদের হাসপাতালে গত বছরে ২০২২ সালে নতুন রোগী দেখেছি ৯শ’র কিছু বেশি। নতুন ও পুরাতন রোগী মিলিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি সাড়ে ১২ হাজার রোগী। নতুন রোগী কোনো বছরে গড়ে ১ হাজার, কোনো বছর ১১শ’, কোনো বছর ১২শ’এরকমই আসছে। সে হিসাবে বাংলাদেশে শিশু ক্যানসার রোগী বাড়ছে। ২০০৭ সালে দুই-তিন দিন পর একটা নতুন রোগী আসত। আর এখন প্রতিদিনই ৩-৪টি নতুন রোগী আসে। গড়ে ৫টা রোগী পাই। গত ১০ বছরে সে হিসাবে ৫ গুণ রোগী বেড়েছে। গত ৫ বছরে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর ৪ লাখ শিশু নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে এই সংখ্যা ৬-৮ হাজার। বিএসএমএমইউতে প্রতি মাসে প্রায় ১০০ নতুন রোগী ভর্তি হয়। এই হাসপাতালে ১৯৯৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে ১০ হাজার শিশু বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে।
কেন শিশুরা ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে
অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, শিশুদের ক্যানসারের বেশিরভাগ কারণই জেনেটিক বা বংশগত ত্রুটি। যখন মায়ের পেটে একটা ভ্রুণ তৈরি হয়, তখন ভ্রুণ তৈরি হওয়ার সময়ই কোনো একটা সমস্যা হয়। সেই সমস্যা থেকে যায় এবং সেখান থেকে ওই শিশুর ক্যানসার উৎপত্তি হয়। ৯৫ শতাংশ ক্যানসারই হয় জেনেটিক কারণ থেকে। এটা জানা যায় না। কিছু কারণ জিন পরীক্ষা করে বের করা হয়েছে। সেগুলো চিকিৎসার আওতায় থাকে।
অবশ্য শিশু ক্যানসার বাড়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের দূষণকে দায়ী করেছেন অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও শিশু ক্যানসার রোগী বাড়ছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইলেকট্রনিকসামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। এসব দূষণ কমানো না গেলে বাড়তেই থাকবে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে বাংলাদেশে ৭০-৮০ শতাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যারা দেরি করে আসে, তাদের রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
বেশির ভাগ শিশুর ক্যানসার নিরাময়যোগ্য।
যেহেতু শিশু ক্যানসারের চিকিৎসক নেই, তাই উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। তারাও এসব উপসর্গের প্রাথমিকভাবে ধরতে পারেন। তখন তারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেহের প্রধান ৫টি আঙ্গ ফুসফুস, স্তন, জরায়ু, খাদ্যনালি ও পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। পুরুষরা ফুসফুস, খাদ্যনালি, লিভার, বাকযন্ত্র ও মলদ্বার এবং নারীরা স্তন, জরায়ু, ফুসফুস, ডিম্বাশয় ও খাদ্যনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।আমাদের দেশে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এরমধ্যে শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ শিশু ক্যানসার রোগী রয়েছে। আর প্রতি বছর নতুন করে যোগ হচ্ছে ১৩ হাজার শিশু। এত শিশু আক্রান্ত হলেও তাদের জন্য দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল।
বিশেষজ্ঞদের দাবি করছেন, বেশির ভাগ শিশুর ক্যানসার নিরাময়যোগ্য। এসব রোগ শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠে। কিন্তু মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে থাকে।ৎসারা বিশ্বে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যানসার। প্রতিবছর ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সাধারণত থ্যালাসেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার বেশি হয়। এছাড়া লসিকাগ্রন্থি, কিডনি এবং চোখের ক্যানসারেও শিশুরা আক্রান্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের দাবি— বেশির ভাগ শিশুর ক্যানসার নিরাময়যোগ্য।
ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যানসারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই আক্রান্ত হয় শতকরা ৮০ ভাগ। এখানে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ৫ ভাগ। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোয় এই হার শতকরা ৮০ ভাগ।তাদের তথ্যমতে— বর্তমানে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লাখ শিশু ক্যানসার আক্রান্ত। ২০০৫ সালেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জীনগত কারণ, ভাইরাস, খাদ্যে ভেজাল, ক্যামিকেলস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যানসার হয়। তবে প্রাথমিকভাবে এই রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই অবস্থায় শিশুদের ক্যানসার মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদেরপ্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। তবে নসিকাগ্রন্থি, কিডনি এবং চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়। এ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ক্যান্সার নির্ণয় করা শিশুদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ বেঁচে থাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে।
প্রতি বছর নতুন করে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে ১০ হাজার শিশুর
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।দেশে গত ১০ বছরে শিশু ক্যানসার রোগী বেড়েছে ৫ গুণ। প্রতি বছর নতুন করে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে ১০ হাজার শিশুর। কিন্তু সে অনুপাতে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা বাড়েনি। সরকারি পর্যায়ে সারা দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৪৭ জন। আবার যেটুকু চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে, তাও ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা নেই বললেই চলে।চিকিৎসাব্যবস্থার এসব প্রতুলতার কারণে ও মানুষের সচেতনতার অভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিশুদের ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার হারও অনেক কম। উন্নত দেশে যেখানে ৯০ শতাংশের বেশি শিশু ব্লাড ক্যানসার রোগী ভালো হয়, সেখানে বাংলাদেশে এর পরিমাণ মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ।
চিকিৎসকের কার্যকরী সমাধান বের করাটা খুবই জরুরি।
ডাক্তাররা বিশ্বাস করে, দ্রুত এবং কার্যকর চিকিত্সার মাধ্যমে অধিকাংশ শিশু ক্যান্সার চিকিত্সাযোগ্য। প্রাপ্তবয়স্ক ক্যান্সারের তুলনায়, সাধারণভাবে, শিশুদের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আরও সফলভাবে চিকিত্সা করা শিশুদের বৃহত্তর অনুপাতের সঙ্গে চিকিত্সা করা হয়।সংস্থাটির তথ্য মতে, বর্তমানে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে প্রায় ১৫ লাখ শিশু রয়েছে যারা ক্যানসারে আক্রান্ত।ক্যানসারে আক্রান্ত হলে একটি শিশুকে কয়েক মাস ধরে ঘন ঘন হাসপাতালে আসতে হয় এবং অনেক সময় ধরে তাদের ভর্তি থাকতে হয়। কখনও কখনও শিশুর কেমোথেরাপি চিকিৎসা এবং ইনজেকশনের প্রয়োজন হয়।চিকিৎসার সময় ক্যানসারে আক্রান্ত একটি শিশুর জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। তাই যদি শিশুদের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় তবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটবে।ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসায় একজন চিকিৎসকের অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোমলমতি শিশুদের উপর ক্যানসারের প্রভাব কমাতে একজন চিকিৎসকের কার্যকরী সমাধান বের করাটা খুবই জরুরি।
ক্যান্সারে শিশু মৃত্যুর হার ৬০ ভাগ কমানোর ঘোষণা
সারা বিশ্বে শিশু মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ ক্যান্সার। শিশুরা কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেই চিকিৎসকদের। তবে প্রতিবছর এ রোগে কমপক্ষে ৩ লাখ শিশু নতুন করে আক্রান্ত হয়।যাদের বেশির ভাগেরই বসবাস নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। ক্যান্সারের হাত থেকে শিশুদের বাঁচাতে সম্প্রতি বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ২০৩০ সালের মধ্যে ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে কমপক্ষে ১০ লাখ শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছে সংস্থাটি।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বড়দের মতো শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্যান্সার অন্যতম কারণ। শূন্য থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতিবছর নতুন করে ৩ লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার চারগুণ বেশি। কারণ মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব করা হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। পাশাপাশি অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব তো রয়েছেই।এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যান্সারে শিশু মৃত্যুর হার ৬০ ভাগ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। শিশুদের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ-২০৩০ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। যেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৬০ ভাগ কমিয়ে আনতে হবে। সেটি নিশ্চিত করতে পারলে কমপক্ষে ১০ লাখ শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
সেবা না পাওয়ার কারণে এ রোগে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
সংস্থাটির তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ক্যান্সার। ২০১৮ সালে ৯৬ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফুসফুসে, প্রোস্টেট, কোলোরেকটাল, পেট ও লিভার ক্যান্সার পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে জরায়ুমুখ, স্তন, কোলোরেকটাল, ফুসফুস, থাইরয়েড ক্যান্সার মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে শিশুদের মধ্যে লিউকোমিয়া, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, লিম্ফোমা, নিউ টিউব্লাস্টোমা ও উইলমস টিউমারের মতো কঠিন টিউমারজনিত ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি।
উচ্চ আয়ের দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত ৮০ শতাংশের বেশি শিশুর ক্যান্সার নিরাময় করা হয়। মধ্য এবং স্বল্প আয়ের দেশে এই হার ২০ শতাংশের বেশি নয়। তবে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, সার্জারি ও রেডিওথেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে শিশু ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব। অন্যদিকে রোগ নির্ণয়ে ভুল বা বিলম্ব, মাঝপথে চিকিৎসা ছেড়ে দেয়া, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সেবা না পাওয়ার কারণে এ রোগে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শৈশব ক্যান্সার সম্পর্কে ধারণা প্রদান। পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ওষুধ ও প্রযুক্তির প্রাপ্যতা নিশ্চিতসহ ক্যান্সার নির্ণয়ের এবং চিকিৎসার বর্তমান ক্ষমতাগুলো মূল্যায়ন করে সরকারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।
প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
প্রয়োজনে এক্ষেত্রে জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন, স্বাস্থ্য বেনিফিট প্যাকেজ ও সামাজিক বীমা স্কিম মধ্যে শৈশবকালীন ক্যান্সার প্রতিহতে ব্যবস্থা নেয়া। এ প্রসঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস অ্যাডহোম গেহব্রিয়াসাস বলেন, ক্যান্সারের কারণে বিশ্বে অনেক শিশু পরিপূর্ণ জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ধনী দেশের তুলনায় দরিদ্র দেশে এ সমস্যা প্রকট। আশা করা যায়, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এক্ষেত্রে কার্যকর হবে।প্রসঙ্গত, ক্যান্সার একটি একক কোষের জেনেটিক পরিবর্তনের সঙ্গে শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার টিউমারে রূপ নেয়। যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটি সাধারণত বাড়তে থাকে, শরীরের অন্যান্য অংশে আক্রমণ করে এবং মানুষের মৃত্যু ঘটায়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ক্যান্সারের তুলনায় শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্তের বেশির ভাগেরই কারণ জানা যায় না।
অনেক গবেষণায় শিশু ক্যান্সারের কারণগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। তবে জানা গেছে, শিশুদের মধ্যে খুব কম ক্যান্সার পরিবেশগত বা জীবনধারা বিষয়ক কারণে ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ শিশু ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ এবং স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এর প্রকোপ বেশি। এইচআইভি, এপস্টাইন-বার ভাইরাস ও ম্যালেরিয়া ইত্যাদি শৈশবে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
শিশু ক্যান্সার ভালো হয়
শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০২ সালে পৃথিবীর ৯০টি দেশের ১৭৮টি জাতীয় সংগঠনের সম্মিলিত চাইল্ড ক্যান্সার ইন্টারন্যাশনাল (সিসিআই) কর্তৃক এ দিবসটি পালন শুরু হয়। সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়াও এ দিবসটির অন্যতম লক্ষ্য হল মৃত্যুহার হ্রাস করা এবং ক্যান্সার সম্পর্কিত ব্যথা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিশুদের দুর্দশা হ্রাস করা। এবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস পালিত হচ্ছে।
মূলত জেনেটিক কারণেই শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও শিশুদের ক্যানসার রোগের প্রকোপ বাড়ছে দিনে দিনে। শিশুদেরও ক্যানসার হতে পারে, এই ধারণাটাই অনেক অভিভাবকের জন্য নির্মম সত্য হিসেবে প্রকাশ পায়। মায়ের পেটে ভ্রুন অবস্থায় শিশুরা ক্যান্সার হবে এ ধরণের জিন নিয়ে তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, শিশুদের অনেক ক্যান্সারই নিরাময় হয় যদি সময়মতো, সঠিক উপায় অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়। আর প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। তবে নসিকাগ্রন্থি, কিডনি এবং চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। ২০০৫ সালেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে। ‘প্রতিবছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগীর মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টিআলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদাম মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। আর সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টক্সিনের উপস্থিতি, ক্যামিকেলস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যান্সার হয়।
তথ্যসুত্র
শিশু ক্যান্সার ভালো হয়, Daily Inqilab.
ক্যান্সারে শিশু মৃত্যুর হার, Jugantor.
শিশুদের ক্যান্সার ও চিকিৎসা, Kaler Kantho.
শিশুদের ক্যানসার, Prothom Alo.
শিশুদের ক্যান্সার: আগেভাগেই সনাক্ত, BBC.
শিশুদের ক্যান্সার কেন হয়, Medi Voice Bd.
আজ বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস, Abc News24.
বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস, Desh Rupantor.
শিশু ক্যানসার দিবস, Journal.
শিশু ক্যান্সার দিবস, Doctor.
শিশু ক্যান্সার, Ekushey.
শিশু ক্যান্সার দিবস পালিত, Bangla Tribune.
ক্যানসার দিবস আজ, Dhaka Mail.