জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশ ভাবনা(Climate Change)

জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশ ভাবনা(Climate Change)

এই বিশ্ব পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টিতে অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছে বিশ্বের অন্যতম রাষ্ট্র সুইডেন। প্রকৃতি ও পরিবেশগত দূষণ, অবক্ষয় ও বিপর্যয় সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৯৬৮ সালের মে মাসের ২০ তারিখে জাতিসংঘের অর্থনীতির ও সামাজিক পরিষদকে চিঠি পাঠায় তৎকালীন সুইডেন সরকার। এই চিঠির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

পরিবেশগত আন্তর্জাতিক সম্মেলন স্বীকৃত

পরবর্তী বছরে জাতিসংঘের সদস্য বাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে সমাধান খুঁজতে যেয়ে বিস্তৃত আলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পরিবেশগত আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে স্বীকৃত।এরপর জাতিসংঘ ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিনটিকে অর্থাৎ ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সাল থেকে বিষয়টি সারা বিশ্বে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টিতে দিবসটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায়। এই সরকারের পরিবেশগত ভাবনা কার্যক্রম ও পরিকল্পনার কিছু বিষয় উল্লেখ করার মতো। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সম্প্রতি ২০১৮ সালের ১৪ মে বাংলাদেশ সরকার তার মন্ত্রিসভায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে। নতুন নামকরণ করা হয়, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ ((Ministry of Environment, Forest and Climate Change). বাংলাদেশ সরকারের স্বতন্ত্র এই মন্ত্রণালয়টি আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার কারণে এই মন্ত্রণালয়ের আর্থিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সুবিধা অনেক বেশি

সাইক্লোনের মতো পরিবেশবিধ্বংসী আবহাওয়ার তাণ্ডব

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সুবিশাল অংশ একসময় বন-বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল। আস্তে আস্তে বনাঞ্চলের পরিধি ছোট হয়ে আসছে। মানুষ ব্যাপকভাবে গাছ নিধন করে নির্বিচারে বন-জঙ্গল উজাড় করছে। সেসব জায়গায় গড়ে উঠছে বিভিন্ন কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট আর বসতবাড়ি। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। আর কার্বনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। পরিণামে দেশে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সিডর, সাইক্লোনের মতো পরিবেশবিধ্বংসী আবহাওয়ার তাণ্ডব। অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর অপরূপ সৃষ্টিজগতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, পশুপাখি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও সমুদ্রের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী কোনো কিছইু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এ দুটি অযথা সৃষ্টি করিনি, কিন্তু এদের অধিকাংশই এটা জানে না।’ (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৩৮-৩৯)

জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনে পুরো বিশ্ব পরিবেশের চরম বিপর্যয়

জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনে পুরো বিশ্ব পরিবেশের চরম বিপর্যয় এরমধ্যে ঘটেছে। এখন বিশ্বে ভয়াবহ এক আতঙ্ক জলবায়ু পরিবর্তন। এর পিছনে প্রাকৃতিক কারণের তুলনায় মানবসৃষ্ট কারণই মুখ্য। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মানুষসহ সকল প্রাণী জগতের জীবনচক্রে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিক তাপমাত্রায় মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। বিজ্ঞানীদের ধারণা ২০৫০ সালের মধ্যে উপকূলে ১৮% ভূমি সমুদ্র গর্ভে চলে যাবে। জি-৮ ভুক্ত দেশগুলো উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সঙ্গে তারা গ্রীন হাউস গ্যাস সৃষ্টির কারণ হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর বিকল্প নেই

অধিক জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি, বাংলাদেশ। এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণ হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিবেশ দূষণ দায়ী। তাই পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে কঠোর হতে হবে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, বনাঞ্চল সৃষ্টি, পরিবেশ সংরক্ষণ, নদী-খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সুস্থ পরিবেশ উপহার দিতে হলে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর বিকল্প নেই।

জলবায়ুর ঝুঁকি বিবেচনায় হোক উন্নয়ন ভাবনা

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলো ছয়টি ভাগে বিভক্ত—উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ এলাকা, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা এবং নগর অঞ্চলগুলো।

একেকটি অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব একেক রকম। যেমন উপকূলীয় অঞ্চলের একটি অন্যতম সমস্যা হলো মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের বিরূপ আচরণের প্রভাবে এই লবণাক্ততা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাচ্ছে এবং ফলে সেখানে সুপেয় পানির অভাব, খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি, মানুষের বাস্তুচ্যুতি, কাজের অভাব ইত্যাদি আরও প্রকট হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘন ঘন সাইক্লোন ও বন্যার জন্য আমাদের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, যা পরবর্তী সময় সামাল দেওয়া সহজ হবে না।

এ ছাড়া বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছে, তা অর্জন করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন নিরসনে প্রশমন ও অভিযোজন—এ দুই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে একসঙ্গে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে এবং গোটা বিশ্বের কাছে নিজেদের প্রয়োজন ও অর্জন তুলে ধরতে হবে।

জলবায়ুর পরিবর্তন ও উপকূলীয় জীবনযাত্রায় এর প্রভাব

বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক গঠনই এমন যে কোথাও কোথাও যথেষ্ট ঢালু। খুলনার সুন্দরবনের অবস্থান এমন একটা জায়গায় যা ত্রিভূজাকৃতি বঙ্গোপসাগরের শীর্ষবিন্দুতে গাঙ্গেয় মোহনায় অবস্থিত। এই গাঙ্গেয় মোহনার মহীঢাল খুব মসৃণভাবে সমুদ্রে নেমে গেছে। আন্দামান সাগরে উৎপন্ন জল-ঘূর্ণিঝড় গুলো উত্তরমুখী যাত্রায় মহীঢালের অগভীরতার কারনে জলোচ্ছ্বাস অত্যন্ত উঁচু হয়ে আসে। তাই সাগরের লোনাপানি ঢুকে পড়ে উপকূলভাগে এবং লবণাক্ত করে তোলে ভূ-অভ্যন্তরের পানি।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে সুন্দরবনের সুন্দরী গাছে ব্যাপক মাত্রায় আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়া লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার কৃষি উৎপাদন কমে গেছে। মাছসহ অন্যান্য জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হিসাবে দেখা দিয়েছে লবণাক্ততা বৃদ্ধি। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে দেশে লবণাক্ত ভূমির পরিমাণ ছিল ৮,৩০,০০০ হেক্টর আর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এসে তা হয়েছে ১০,৫৬,০০০ হেক্টর। ইউনেস্কোর “জলবায়ুর পরিবর্তন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের পাঠ” শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সুন্দরবনের ৭৫% ধ্বংস হয়ে যেতে পারে অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য।

পৃথিবীর বাসযোগ্য পরিস্থিতি ভীতিকর হয়ে ওঠে

গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ীগ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন এবং নাইট্রোজেন ও সালফার অক্সাইডসমূহ। Intergovernmental Panel of a Climate Change (IPCC) চতুর্থ প্রতিবেদন এ বর্ণিত  হয়েছে যে গত শতাব্দীতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ২৫%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ ১৯% এবং মিথেনের পরিমাণ ১০০% বেড়েছে। এই লক্ষণগুলো সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে পৃথিবীর বাসযোগ্য পরিস্থিতি ভীতিকর হয়ে ওঠে। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন গ্যাস সূর্য রশ্মির তাপ আটকে রেখে পৃথিবীতে উষ্ণ রাখে। এ ধরনের গ্যাসসমূহকেই গ্রিন হাউজ গ্যাস বলে। পাশ্চাত্যের শিল্পায়িত সমাজে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়তে থাকার কারণে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ থেকে উষ্ণতর  হয়েছে। 

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

বাংলাদেশের সৌন্দর্যের কাছে পৃথিবীর অন্যদেশগুলোর সৌন্দর্য হার মেনে যায়। প্রতিনিয়ত হাজারো পর্যটকের ভিড় জমা হয় পর্যটনকেন্দ্র কিংবা স্থানগুলোতে, প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যগুলোকে উপলব্ধি করা জন্য। বিশেষ করে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, তেঁতুলিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি জায়গাগুলোতে। স্বভাবতই যেখানে মানুষের কোলাহল সেখানেই নানারকম ব্যবসারও জমজমাটপূর্ণ অবস্থা।

ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ তাদের মূল ব্যবসায়িক বিষয়গুলোর মধ্যে প্লাস্টিককে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বসে এসব জায়গাগুলোতে। ব্যবসায় তারা লাভবান হয় ঠিক, কিন্তু প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবেশ দূষণ মানেই জলবায়ুতে নেতিবাচক প্রভাব। এ ছাড়া পশুপাখি কিংবা প্রাণীগুলোও তাদের প্রাণ হারিয়ে ফেলছে, তাদের চলাচলের পথেও নানা রকম বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই প্লাস্টিককে না বলুন পরিবেশকে রক্ষা করুন এবং জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমিয়ে আনতে সাহায্য করুন। আমি, আপনি, আমরা, আপনারা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।

জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে খাদ্য সংকটকে প্রভাবিত করে

খাদ্য একটি অতি প্রয়োজনীয় সম্পদ হলেও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এর স্বল্পতা আছে। বিশ্বব্যাপী সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ এর  ফলে সৃষ্ট সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই লেখায় বর্তমান সময়ের খাদ্য সংকটের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তলিয়ে দেখা হয়েছে।

চরম বৈরী আবহাওয়া বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা বাড়ায়।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে আরও বেশি দাবদাহ, খরা, বন্যা, সাইক্লোন ও দাবানল। এসব পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য খাদ্য উৎপাদন এবং ক্ষুধার্তদের জন্য সেটি পাওয়ার কাজটি আরও কঠিন করে তুলছে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে মনুষ্য-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব বৈরী আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন দেখা যেতে পারে বা আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।“জলবায়ু সংকট মূলত বন্যা, ঝড় ও দাবদাহের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত সংকট,” গত আগস্টে বলেছেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি লিন্ডা থমাস-গ্রীনফিল্ড। “কিন্তু একইসঙ্গে এটি সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তাজনিত সংকটের দিকেও নিয়ে যায়। এটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কাজটি আরও কঠিন করে তোলে।“

বৈরী আবহাওয়াজনিত ঘটনা এবং সংঘাত হলো বৈশ্বিকভাবে বলপূর্বক বাস্তুচ্যূতির প্রধান দুটি কারণ। হোয়াইট হাউজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই দুই কারণে বছরে প্রায় ৩ কোটি মানুষ (পিডিএফ, ৬১১ কেবি) তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।

বিশ্ব এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে

যদিও জলবায়ু পরিবর্তন তথা পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোই বেশি দায়ী, তবুও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য উন্নত রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রায় ১শ’ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি জানা গেলেও অন্তত চার দশক ধরে সচেতন বিশ্ব এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, প্রতি এক লাখ বছর অন্তর অন্তর পৃথিবীতে একই ধরনের জলবায়ু ফিরে আসে।

সর্বশেষ বরফগলা শেষ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার বছর আগে। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রা কমার কথা। অথচ সপ্তদশ শতকের শুরু থেকে যে শিল্পবিপ্লব শুরু হয়, মূলত এতেই পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এক সময় মানুষের চিন্তার পরিধিতেই ছিল না। প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত এর জলবায়ু বরাবরই বদলেছে। এই বদলের অন্যতম কারণ হলো প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ বড় বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত, সূর্যের আলো ও তাপ নির্গমনের তারতম্য এবং সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর অবস্থান পরিবর্তন। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিশ্বের বিরাট অঞ্চল ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের কৃষি, পরিবেশ, অর্থনীতি, জলবায়ু, জনস্বাস্থ্য, জনজীবনসহ সামগ্রিক বিপর্যয় ঘটেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে শিশুদের ওপর যে প্রভাব পড়ছে

জলবায়ু পরিবর্তন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থেকেও শিশুদের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে। কেননা শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দুর্বল এবং খাপ মিলিয়ে চলতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘর-বাড়ি ধ্বংস হওয়া, খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি এবং পারিবারিক জীবিকা হারানোর মাধ্যমে একটি পরিবারে থাকা শিশুর উপর গভীরভাবে প্রভাব পড়ছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বিশ্বে আবহাওয়াগত মারাত্মক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাভাবিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বন্যা, টর্নেডো ঝড়ের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। এ বিপর্যয়ের ফলে মানুষের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। বিশেষ করে শিশুদের জীবন সংকার মুখে।

জলবায়ু পরিবর্তন: যেভাবে অনুসন্ধান করবেন এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি স্টোরি

জলবায়ু পরিবর্তন কি আদৌ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিষয়? এমন প্রশ্ন আপনার মনে দেখা দিতেই পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি আমাদের অনেকের কাছেই খটোমটো বিজ্ঞান মনে হয়। এ কারণে বন্যা, খরা, ঝড়, নদী-ভাঙ্গন, মহামারী আর বিপন্ন জীববৈচিত্র্যের সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক খুঁজতে আমরা বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হই।

সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদেরকেই সবচে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু লাভবান হয় সম্পদশালী ভোক্তাশ্রেণী, জ্বালানি কোম্পানি, ভারী শিল্প, পরিবহন এবং কাঠের ব্যবসার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ এরাই সবচে বেশি গ্রীনহাউজ গ্যাস ছড়ায়। পরিবেশ দূষণের জন্য আমাদের আর সবার চেয়ে তারাই বেশি দায়ী।


তথ্যসুত্র

মহামারী আর বিপন্ন জীববৈচিত্র্যের সাথে তাপমাত্রা বেড়ে, Giji.Org.

আবহাওয়ার তাপমাত্রাও বৃদ্ধি, Dailybartoman.

বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, Share.america.

মানবজাতির কর্মকাণ্ডের জন্যই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, Protidinersangbad.

পৃথিবীর পরিবেশকে বিষাক্ত করেছে, Deltatimes24.

পৃথিবীর বাতাস ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে, Linkedin.

সাইক্লোনের মাত্রা ও তীব্রতা বৃদ্ধি, Prothomalo.

পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, Dailyjanakantho.

বায়ুমণ্ডলের ক্ষতিকারক গ্যাস, Prothomalo.

এই সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি, Jagonews.

Subscribe for Daily Newsletter