মলাশয়ের ক্যান্সার (Colorectal Cancer)
কোলন ক্যানসার কি?
কোলনে (মলাশয়) বা বৃহদান্ত্রে কোষের অস্বাভাবিক বা অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হলে কোলন ক্যানসার হয়। বেশিরভাগ কোলন ক্যানসার হয় ননক্যান্সারাস বা বিনাইন টিউমার (এডিনোমেটাস পলিপ) থেকে, যা ম্যালিগন্যান্ট (অতি ক্ষতিকর) টিউমারে রূপ নেয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার থেকে ক্যানসারযুক্ত কোষ রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে পারে। ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি হয় এবং শরীরের সুস্থ টিস্যুকে আক্রমণ বা ধ্বংস করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেটাস্টেসেস। ফলাফল মারাত্মক হয়ে চিকিৎসার বাইরে চলে যায়।
মলাশয়ের ক্যান্সার (ইংরেজি: colorectal cancer) হচ্ছে এক ধরনের ক্যান্সার যা দেহের মলাশয়, মলনালী (বৃহদান্ত্রের অংশ) বা অ্যাপেন্ডিক্সে অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হয়। এটি কোলন ক্যান্সার (colon cancer), বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার বা অন্ত্রের ক্যান্সার (bowel cancer) নামেও পরিচিত।লার্জ ইন্টেসটাইন’, ‘লার্জ বাওয়েল’ দুটোই হলো বৃহদান্ত্রের আরেক নাম, যাকে আবার ‘কোলন’ নামেই চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে বৃহদান্ত্রের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পায়ুপথে গিয়ে শেষ হওয়া ‘চেম্বার’টি হল ‘রেকটাম’।
কোলন আর রেকটাম ক্যান্সারের উপসর্গগুলো একই রকম হওয়ার কারণে এদেরকে একত্রে ‘কলোরেক্টাল’ ক্যান্সার বলা হয়।রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন কিংবা রেকটাম’য়ের ভেতরের দেয়ালে মাংসের দলা তৈরি হয় যাকে বলা হয় ‘পলিপস’। সময়ের পরিক্রমায় এবং চিকিৎসার অভাবে এই ‘পলিপস’ পরিণত হয় ক্যান্সার কোষে।সাধারণত পুরুষ ও কৃষ্ণাঙ্গরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়স ৫০ পেরুলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অবশ্য ইদানিং অল্প বয়সে আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিপাক ক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোলন বা মলাশয়। এটি দেখতে অনেকটা টিউব আকৃতির মতো। এর একটি অংশ সিকাম যা উদর বা এবডমিনের ঠিক নিচের ডান পাশের এবং এটা ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষ প্রান্তে ইলিয়াম নামক অংশটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। সিকাম ছাড়া অন্য অংশটি চারভাগে বিভক্ত। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই চারটি অংশের নাম হলো এসেনডিং, ডিসেনডিং,ট্রান্সভারস এবং সিগময়েড কোলন। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের কোলন প্রায় চার থেকে ছয় ফুট লম্বা হয়। কোলনের গড় ডায়ামিটার বা ব্যাস প্রায় আড়াই ইঞ্চির মতো হয়ে থাকে।
নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কোলন ক্যানসার হয়ে থাকে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে কোলোরেকটাল এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে রেকটাল ক্যানসার বেশি হতে দেখা যায়। ৫০ বা তার বেশি বয়সের নারী পুরুষরা এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।বিশ্ব ক্যান্সার দিবস একটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিপালিত দিবস। প্রতি বৎসর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস বা বিশ্ব ক্যান্সার সচেতনা দিবস পালন করা হয়
কোলন ক্যানসারের কয়েকটি দিক
বৃহদান্ত্রের প্রাচীরে পলিপ (মাংসপিণ্ড) সৃষ্টির মাধ্যমে এটির শুরু হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। যদিও দেখা দেয় তা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যা (যেমন- পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া বা অল্প পায়খানা হওয়া, বমি হওয়া, মিউকাস ডায়রিয়া ইত্যাদি)। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ও সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, কম চর্বিযুক্ত খাদ্য কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ কর নিয়মিত স্ক্রিনিং করলে এ রোগের প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়তে পারে। ৫০ বছর বয়স বা তদুর্ধ্বে এ রোগের বিস্তার হচ্ছে কিনা জানতে নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত।
কোলন ক্যানসারের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
সাধারণত শারীরিক কোষ সুশৃঙ্খলভাবে বেড়ে ওঠে, বিভাজিত হয় এবং মারা যায়। কিন্তু ক্যানসার হলে কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায় ও কোষের মৃত্যু ঘটে না। কোলন ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনও অজ্ঞাত। তা স্বত্ত্বেও এই ক্যানসারের কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ হয়।
১. পলিপ
সচরাচর কোলন ক্যানসারের উদ্ভব হয় বৃহদান্ত্রের প্রাচীরে থাকা প্রিক্যান্সারাস পলিপ থেকে। পলিপকে প্রধানত দুভাগে বিভক্ত করা হয়। যেমন- এডিনোমাস : এসব পলিপকে মলাশয়ের আস্তরণের উপাদানের মতোই লাগে। কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলে পার্থক্য ধরা পড়ে। এসব পলিপ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। হাইপারপ্লাস্টিক : এসব পলিপ থেকে ক্যানসার খুব কমই হয়ে থাকে। সাধারণত এসব পলিপ ক্ষতিকর হয় না। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এডিনোমাস ও হাইপারপ্লাস্টিক পলিপ নির্মূল করা না হয় তাহলে তারা ধীরে ধীরে বিপজ্জনক কোলন ক্যানসারে রূপ নেবে।
২. জিন
জেনেটিক সমস্যা বা ক্ষতি থাকলে অনিয়ন্ত্রিত বা অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি হতে পারে। পারিবারিক সদস্যের কাছ থেকে এ সমস্যা চলে আসে। কিছু মানুষ জেনেটিক মিউটেশন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যা তাদের শরীরে ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক সমস্যা কিংবা জেনেটিক মিউটেশন নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও ক্যানসার উপযোগী পরিবেশের অভাবে ক্যানসার হতে পারে না।
৩. বৈশিষ্ট্য, অভ্যাস ও খাদ্য
কোলন ক্যানসারের জন্য বয়স একটি বিষয়। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ৯১% রোগীর রোগ ধরা পড়ে ৫০ বছর বয়সে কিংবা তদুর্ধ্বে। স্থূল মানুষের ও ধূমপান বা তামাক সেবনকারীর কোলন ক্যানসার হতে পারে।কোলন বা মলাশয় পরিপাকক্রিয়ার একটি অংশ। তাই খাদ্যের ওপর ভিত্তি করেও এ সমস্যা হতে পারে। কম আঁশযুক্ত খাদ্য, বেশি চর্বিযুক্ত ও ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং অ্যালকোহলের আধিক্যে কোলন ক্যানসার হতে পারে।
৪. শারীরিক সমস্যা ও চিকিৎসা
কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা ও চিকিৎসার কারণে কোলন ক্যানসার হতে পারে। যেমন- ডায়বেটিস ,হরমোন সমস্যার কারণে দেহের কোনো অংশের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা গ্রোথ হরমোন ডিসঅর্ডার , অন্ত্রে বা মলাশয়ে প্রদাহ কিংবা ক্রোন’স ডিজিজ ,অন্যান্য ক্যানসারের জন্য রেডিয়েশন চিকিৎসা।
কোলন ক্যান্সারের কারণ
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএস'এর তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায় না, তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেগুলো হল: কোলন ক্যান্সারে ভুগতে থাকা প্রতি ১০ জনের ৯ জনের বয়সই ৬০ বা তার চেয়ে বেশি অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। অতিরিক্ত ওজন যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা হলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। মদ্যপান ও ধূমপান - মদ্যপান ও ধূমপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।পরিবারের কোনো সদস্যের (বাবা, মা বা ভাই, বোন) যদি ৫০ এর কম বয়সে কোলন ক্যান্সার হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তিরও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।
এছাড়া মলত্যাগের জন্য হাই কমোড ব্যবহার করা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে উঠে আসে ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জার্নালে প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায়। গবেষণাটি ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তেহরানের ১০০ জন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
পরিবেশ ও জিনগত কারণে বৃহদন্ত্র ও মলাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পায়। খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত গরু বা ছাগলের মাংস খাওয়া, খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের অনুপস্থিতি, ধূমপান ও মদ্যপান এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।স্থুলকায় ব্যক্তিদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে ব্যায়াম ( বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে) এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস রোগটির সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষ করে মা, বাবা, ভাই কিংবা বোনের বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে।এছাড়া অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কোলন ক্যানসার কাদের এবং কেন হয়
কোলন ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনও অজ্ঞাত। তবে চিকিৎসকরা বলছেন যদি পরিবারে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে তবে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যাদের ব্রেসট, ইউটেরিন বা ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার পূর্ব রেকর্ড রয়েছে তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনও কোলন ক্যানসারের একটি বড়ো কারণ।
বাইরের খাবার কিংবা প্রসেস করা খাবার, ফাস্ট ফুড, ফ্রজেন খাবার, তেল চর্বি বা মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে। যাদের ওজন বেশি, ধূমপান বা মদপান, ব্যায়াম না করা, খাবারে ফাইবার যুক্ত খাবারের অভাব এই সব কারণকেও চিকিৎসকরা কোলন ক্যানসারের কারণ বলে চিহ্ণিত করেছেন। শরীরে পলিপের অস্তিত্বও কোলন ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
কোলন ক্যানসার সাধারণত ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের হয় এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ও মদ্যপান করলে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পূর্ববর্তী অন্ত্রের রোগ, যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস, দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের পলিপ কোলন ক্যানসারের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তা ছাড়া বংশগত কারণে যদি একটি নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তন হয়, তবে তা পরবর্তী সময়ে কোলন ক্যানসারকে ত্বরান্বিত করে। কারও রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়–পরিজন কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত থাকলেও কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ
এনএইচএস'এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ তিনটি। সেগুলো হল: মলের সাথে নিয়মিত রক্ত নির্গত হওয়া - মলের সাথে রক্ত নির্গত হয় সাধারণত পাকস্থলীর কার্যক্রমে পরিবর্তন হলে। পাকস্থলীর কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন - এরকম সময়ে রোগী সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি মলত্যাগ করে এবং মল অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে থাকে। তলপেটে ক্রমাগত ব্যাথা, পেট ফোলা বা অস্বস্তি বোধ করা - এই উপসর্গের সাথে সাধারণত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, খাওয়ার রুচি হারানো বা ওজন হারানোর সংশ্লিষ্টতা থাকে।এছাড়া ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগ করার পরও বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা হওয়া বা রক্তে আয়রনের স্বল্পতার মত উপসর্গও দেখা যায় কোলন ক্যান্সারে।
শরীরে কোলন ক্যানসার দানা বাঁধলে যেসব উপসর্গ রোগীর মধ্যে দেখা যায় তা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘনঘন মলত্যাগ, ডায়রিয়া, অল্প পরিমাণে পায়খানা হওয়া, পায়খানার রং পরিবর্তন, পায়খানা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে আসা, মলের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া, প্রায়ই পেটে ব্যথা অনুভব হওয়া, পেটে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়া, বমিভাব, ওজন কমে যাওয়া, শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার অভাব, দুর্বল ও ক্লান্তি অনুভব করা ইত্যাদি। তবে ক্যানসারের চূড়ান্ত পর্যায় না হওয়া পর্যন্ত অনেক সময় রোগীর মধ্যে কোনো উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে।
লক্ষণ
প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় অত্যন্ত কঠিন। কেননা প্রথমদিকে রোগটির তেমন কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না।কোলন বা মলাশয়ের কোন জায়গায় ক্যান্সার রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে উপসর্গের বিভিন্নতা দেখা যায়।পায়খানার সঙ্গে রক্ত কিংবা পেটে ব্যথা নিয়ে অধিকাংশ রোগী প্রথম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন (কখনও ডায়রিয়া, কখনও কষা), রক্তশূন্যতা (দূর্বলতা, শ্বাসকষ্ট) ইত্যাদি রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ। অবস্থা গুরুতর হলে- অতিরিক্ত ওজনশূন্যতা, পেটে চাকা, পেটে পানি, কাশির সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। দুর্ভাগ্যবশত আমরা রোগীদের রোগটির অতিমাত্রায় অগ্রসর অবস্থায় পাই যাদের অধিকাংশই পূর্বে অপ-চিকিৎসার শিকার। প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত রোগীর পেটব্যথা, ক্ষুধামন্দা, পেট ফাঁপা ফাঁপা লাগা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। মলত্যাগের পরও মনে হতে পারে ভালোভাবে মলত্যাগ হয়নি। এ ছাড়া রোগ ছড়িয়ে পড়লে আরও অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
প্রধান উপাদান কোলন্সকোপি ও বায়োপসি। বায়োপসি’র মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পর সিটি স্ক্যান, রক্তে এন্টিজেন (CEA) এর পরিমাণ ইত্যাদি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় (staging) করা হয়।চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ধাপ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক ধাপের (Stage I & II) ক্যান্সারগুলোর চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল সন্তোষজনক, পক্ষান্তরে অগ্রসর ধাপের (Stage III & IV) ক্যান্সারগুলোর চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল আশাপ্রদ নয়।ক্যান্সার কোলনের বাইরে ছড়িয়ে গেলে (লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদি) তাকে অগ্রসর ধাপ বলে বিবেচনা করা হয়।
তবে আশার কথা এই যে, অন্যান্য ক্যান্সারের চেয়ে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল অনেক ভালো। এমনকি অগ্রসর ধাপের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীও সঠিক চিকিৎসা পেলে বহুদিন সন্তোষজনক ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।কোলনস্কোপি হলো কোলন ক্যানসার নির্ণয়ের সর্বোত্তম পরীক্ষা। এখন সহজেই কোলনস্কপি পরীক্ষা করা যায়। কোলনের নিচের অংশে টিউমার হলে সিগময়ডোস্কোপি নামক আরেকটি সহজ পরীক্ষা করা যায়। কোলনস্কোপি বা সিগময়ডস্কোপির মাধ্যমে যেমন সরাসরি টিউমার দেখা যায়, তেমনি সেখান থেকে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে বলা যায় ক্যানসার কি না।
চিকিৎসা
চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক প্রথমে রোগী ও তার পরিবারের বিস্তারিত তথ্য নেন। এরপর টেস্টের ফলাফলের ওপর সিদ্ধান্ত নেন কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ও সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করার। এই সব চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে দেওয়া হয় একটি ডায়েট লিস্ট এবং মেডিটেশন।আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষ সাধারণত প্রথমে বেড়ে ওঠে। তারপর তা বিভাজিত হয় এবং শেষে মারা যায়। কিন্তু ক্যানসারে আক্রান্ত হলে আমাদের কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে শুধু বেড়েই যায়। কোষের এক্ষেত্রে মুত্যু ঘটে না। তাই ক্যানসারে যেন আমরা আক্রান্ত না হই সেজন্য সময় থাকতেই আমাদের জীবনযাপনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা উচিত।
কোলন ক্যানসারের একমাত্র চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। কোলনের ক্যানসার আক্রান্ত অংশ এবং তার আশপাশ অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ক্যানসারের অবস্থাভেদে যুক্ত করা হয় কেমোথেরাপি অথবা রেডিও থেরাপি। যেকোনো ক্যানসারের চিকিৎসায় মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ এখন সারা বিশ্বে বহুল সমাদৃত। এটি হলো সার্জন, প্যাথলজিস্ট, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্টসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা এক-কথায় অপারেশন। অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।অপারেশনের সময় রেডিওথেরাপির ব্যবহার এখনও গবেষণাধীন। যে কোনো ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি শব্দ বিশ্বে বহুল প্রচলিত, তা হল (multidisciplinary approach), অর্থাৎ সার্জন, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ক্যান্সার কেয়ার নার্সসহ সকলের মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের জন্য।
একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, ক্যান্সার কঠিন রোগ হলেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। রোগীদের সচেতনতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই একুশ শতকেও মানুষ বাংলাদেশে হাকিম, কবিরাজ, ঝার-ফুঁকের উপর বিশ্বাস করছে, যেখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।চিকিৎসা ব্যয় সরকারী হাসপাতালগুলোতে অত্যন্ত কম। রোগীদের প্রতি অনুরোধ যে কোনো রোগ সম্পর্কে পরিচিত জনের পরামর্শ না নিয়ে নূন্যতম এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।আপনার সচেতনতা রোগটিকে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ে সাহায্য করবে।আর প্রথম দিকে ধরতে পারলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগও সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। কাজেই সচেতনতার পরিচয় দিন, সুস্থ থাকুন
প্রতিরোধে করণীয়
কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে নিয়মিত আঁশযুক্ত, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এবং ভিটামিন ও খনিজযুক্ত খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, মদ্যপান ও ধূমপান পরিহার করাও এই ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো জরুরি।এই সময়ে কোলন ক্যানসারের খুব ভালো চিকিৎসা দেশেই রয়েছে। চিকিৎসায় শত শত রোগী বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জীবন যাপন করছে। সুতরাং প্রতিরোধ ও প্রতিকারযোগ্য এই ক্যানসারকে প্রতিহত করার জন্য দরকার একটুখানি সতর্কতা ও সচেতনতা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা।
তরুণদের মধ্যে কি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স কমছে।আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তত্বাবধান বিভাগের প্রধান এবং গবেষণা নিবন্ধটির একজন লেখক রেবেকা সিগেল সিএনএন'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "বিজ্ঞানীরা জানতেন যে তরুণদের মধ্যে কোলোরেকটাল ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার হার বাড়ছে। কিন্তু এত দ্রুতগতিতে এটি হচ্ছে, সেটা জানতে পেরে আমরা বিস্মিত হয়েছি।"
মিজ. সিগেল বলেন, "এই রিপোর্টটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যে শুধু বর্তমানের ক্যান্সার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তাই নয়, ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও আমাদের ধারণা দেয়।"তিনি মন্তব্য করেন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার হার বাড়তে থাকলে তাদের সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ও যৌন ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন।পাশাপাশি তরুণরা আক্রান্ত হলে দীর্ঘ মেয়াদে তাদের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়, যেই ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় ধরে চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোর বিষয়েও নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে চিকিৎসকদের।
বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের চিত্র কী?
বাংলাদেশে কী পরিমাণ মানুষের মধ্যে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, সেসম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১৯.২ ভাগ পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, "বাংলাদেশে ক্যান্সার পরিস্থিতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ বা কোন ধরণের ক্যান্সারে মানুষ বেশি ভুগে, এই বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্য না থাকলেও কমবয়সীদের মধ্যে আজকাল কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার কিছুটা বেশি বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি।।"
আর মলত্যাগে হাই কমোডের ব্যবহার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে মি. তালুকদার বলেন, "এই বিষয়ে এখনো সেভাবে কোনো গবেষণা না থাকলেও মলত্যাগের পদ্ধতির সাথে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।"মি. তালুকদার বলেন, "আমাদের ধারণা, হাই কমোডে বসে মলত্যাগ করলে মলাশয় পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। প্রয়োজনীয় চাপ না পড়ায় মলদ্বারে কিছুটা মল থেকে যায়। আর মলে অসংখ্য জীবাণু থাকে, আর সেই জীবাণু সেখানে থেকে যাওয়ায় কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।"
কোলন ক্যান্সার কি পুরোপুরি নিরাময় হয়?
কোলন ক্যান্সারের একটি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে কোলন কেটে ফেলা দেওয়া এবং রোগীকে বিকল্প পথে মলত্যাগের ব্যবস্থা করা। ল্যাপারস্কপি পদ্ধতিতে অপারেশন এক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে। এই পদ্ধতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট না কেটে ও মলদ্বার অপসারণ না করে ক্যান্সারটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবচ্ছেদ করে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়।এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের ল্যাপারোস্কপিক ও কলোরেক্টাল সার্জন অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।
মলাশয়ের ক্যান্সার সাধারণত পায়ুপথে রক্তক্ষরণ এবং মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। মলত্যাগের বেগ এলে রোগী তড়িঘড়ি করে টয়লেটে যায় ও শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রথম দিকে যেহেতু উপসর্গ তত মারাত্মক নয় রোগী নিজ থেকেই অনেক সময় চিন্তা করে যে হয়তো বা আমাশয় আক্রান্ত হয়েছে অথবা তার পাইলস হতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
আমাদের দেশে পাইলস অথবা পেট খারাপ বা আমাশয় আক্রান্ত হওয়া বেশ সাধারণ ব্যাপার। ভেজাল, নষ্ট হওয়া খাবার-দাবারে অথবা রেস্তোরাঁয় খেয়ে পেট খারাপ বা মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনকে সহজভাবে গ্রহণ করা আমাদের রোগীদের জন্য স্বাভাবিক। সে কারণে পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা পাতলা পায়খানা উপসর্গগুলো যে ক্যান্সারেরও উপসর্গ সেটা অনুধাবন করতে রোগীর অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে যদিও এর মাঝে ক্যান্সারটি বড় হয়ে মলাশয়/বৃহদন্ত্রের অকুস্থলের চারপাশে এবং পরবর্তী সময়ে ফুসফুস ও যকৃতে ছড়িয়ে যায়।
এ সময় পেটে ব্যথা হয়, মল আটকে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফুলে ওঠে। অপারেশান ছাড়া রোগ মুক্তির জন্য রোগী হাতুড়ে ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চিকিৎসার শরণাপন্ন হয়ে প্রকৃত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যাওয়ার সুযোগ হারান।ক্যান্সার মলাশয় এবং মলদ্বারের পাশের স্নায়ু ও মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পায়ুপথে প্রচণ্ড ব্যথার জন্ম দেয়।আগের দিনে সচরাচর পায়ুপথ বা মলদ্বার ফেলে দিয়ে পেটের ডান বা বাঁয়ের যে কোনো একপাশে কৃত্রিম মলদ্বার বানিয়ে সেখানে ব্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হতো। মল ওই ব্যাগে জমা হতো এবং রোগীকে সময়মতো মাঝে মাঝে ব্যাগ পরিষ্কার করে নিতে হতো।
এ স্থায়ী ব্যাগ লাগানো অনেক রোগীর কাছে অগ্রহণযোগ্য, সামাজিকভাবে অমর্যাদাপূর্ণ, অরুচিসম্মত হিসেবে গণ্য করে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে যেভাবেই হোক রোগী স্থায়ী ব্যাগ পরিহার করার চেষ্টা করে। মলাশয় অথবা মলদ্বারের সাধারণ অসুখ যেগুলো ক্যান্সারের মতো মারাত্মক নয় যেমন- ফিশার, পাইলস, ইত্যাদির উপসর্গ এবং ক্যান্সারের উপসর্গ একই রকম হতে পারে।রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং কোলনস্কপি ও বায়োপসি করে রোগ নির্ণয়ের পর সিটি এবং এমআরআই দ্বারা স্টেজিং করার পরই চিকিৎসা প্রণালি নির্ধারণ করে চিকিৎসা শুরু করা হয়।
আগে প্রচলিত অথবা অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচারেই মলাশয় এবং বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের চিকিৎসার মুখ্য পদ্ধতি। আধুনিক পদ্ধতিতে ল্যাপারস্কপি বা রোবটের মাধ্যমে অপারেশন করে আশপাশের গ্লান্ড যেখানে ক্যান্সার ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে সেই গ্লান্ডসহ ক্যান্সারটিকে সম্পূর্ণ অপসারণ করা। প্রায় নব্বই ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে পেট না কেটে ও মলদ্বার অপসারণ না করে ক্যান্সারটি সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়। অপারেশানের আগে অথবা পরে কেমোথেরাপি অথবা/এবং রেডিওথেরাপির প্রয়োজন আছে কিংবা নেই সেটা নির্ভর করে ক্যান্সার স্টেজিংয়ের ওপর।ল্যাপারস্কপির মাধ্যমে অস্ত্রেপচারের পর মলদ্বার অক্ষত থাকে, রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে, ক্যান্সার থেকে আরোগ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত স্বাভাবিক কাজকর্ম ফিরে যেতে পারে
কোলন ক্যান্সারের ব্যথা কেমন?
কোলন খাদ্য শোষণ এবং শরীর থেকে বর্জ্য পণ্য নির্মূল করতে সাহায্য করে। কোলন টিউমারটি যখন বিকাশ হয় তখন এটি প্রথমে কোন লক্ষণ দেখাতে পারে না। তবে, যখন পেটে ব্যথা হয়, তখন আপনাকে একটি মেডিকেল পেশাদারের সাথে পরামর্শ করতে হবে যিনি আপনাকে ক্যান্সার স্ক্রীনিং পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিতে পারেন। অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন, ভাল অভিজ্ঞ ভারতে গ্যাস্ট্রোন্টেরোলজিস্ট যারা হালকা থেকে তীব্র থেকে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধি একটি সম্পূর্ণ বর্ণালী সঙ্গে সুপরিচিত হয়।
কোলন ক্যান্সারের ঘটনা রোধ করা কি সম্ভব?
সেরা প্রতিরোধের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং নির্ণয়ের হয়। যারা কলকাতা ক্যান্সারের জন্য নিয়মিত স্ক্রীনিং পরীক্ষা চালায়, তাদের মধ্যে ফিকাল গুপ্ত রক্ত পরীক্ষা, সিগময়েডোসকপি, কলোনস্কপি এবং পলিপ অপসারণের সম্ভাবনা রয়েছে, যা কোলন ক্যান্সারের বিকাশের ঝুঁকি কমায়। প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এমন অন্যান্য জিনিস নিম্নরূপ:
আপনি খুব কম ধূমপান এমনকি যদি ধূমপান ছেড়ে। যারা ধূমপান করেন তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। ফোলিক অ্যাসিড প্রতিদিন কম, নিরাপদ ডোজ নিন। তবে, একবার খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। একটি সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করুন।হাঁটা, ব্যায়াম, অ্যারোবিক্স, নাচ, সাঁতার ইত্যাদির মতো নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে আবদ্ধ হোন।
কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করার পরে আপনি কতদিন বাঁচবেন?
আকার, অবস্থান এবং টিউমার বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে, বেঁচে থাকার হার নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে: যদি টিউমার স্থানীয় পর্যায়ে নির্ণয় করা হয় তবে পাঁচ বছরের বেঁচে থাকা হারটি 80-95%। যদি ক্যান্সার নিকটবর্তী লিম্ফ নোডগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে তবে পাঁচ বছরের বেঁচে থাকা হারটি 67%। কোলন ক্যান্সার যদি দূরবর্তী অংশে ছড়িয়ে পড়ে তবে তার বেঁচে থাকার হারটি 14% ছাড়িয়ে যায়। টিউমার যদি আপনার লিভারে পৌঁছে যায়, তবে বিশেষজ্ঞকে যকৃত অপসারণ সার্জারি পরিচালনা করতে হবে যা 20-40% পর্যন্ত বাড়তে পারে।অনেকগুলি চলমান ক্লিনিকাল ট্রায়াল রয়েছে যা আপনার কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। আপনি আপনার ক্লিনিকাল ট্রায়াল যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন কিনা তা আপনার মেডিকেল টিমের সাথে আলোচনা করতে হবে।
যে কারণে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে
বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের আক্রান্তের হার কেমন ও কোন বয়সের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেও কোন কারণে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে?এ বিষয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের ক্যান্সারে মানুষ বেশি ভুগছেন, তার সঠিক তথ্য না থাকলেও কমবয়সীদের মধ্যে এখন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার কিছুটা বেশি।তিনি আরও বলেন, মলত্যাগে হাইকমোডের ব্যবহার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ আমরা মনে করি হাইকমোডে বসে মলত্যাগ করলে মলাশয় পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। প্রয়োজনীয় চাপ না পড়ায় মলদ্বারে কিছুটা মল থেকে যায়। আর মলে অসংখ্য জীবাণু থাকে। ফলে সেই জীবাণু সেখানে থেকে যাওয়ায় কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোলন ক্যান্সার: যে ৫ লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা নয়
কোলন ক্যান্সার মূলত মধ্য বয়স বা তার থেকে বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে কম বয়সেও দেখা দিতে পারে এ রোগ। প্রাথমিকভাবে কোলনের ভেতর উপসর্গ হিসেবে কোলন ক্যান্সারের সূত্রপাত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই উপসর্গগুলো ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। মলদ্বারে প্রদাহ, মলত্যাগের সময় তীব্র যন্ত্রণা কিংবা রক্তপাতের মত সমস্যা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
১। দিনে কত বার মল ত্যাগের প্রয়োজন অনুভূত হয়, আচমকা তার তারতম্য ঘটা কোলন ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ ২। আচমকা বমি বমি ভাব, গা গুলিয়ে ওঠা, ওজন কমে যাওয়াও কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। ৩। কোলন ক্যান্সারের রোগীদের মল ত্যাগের সময় ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। মলত্যাগের পরেও মল রয়ে যাওয়ার অনুভূতি দেখা যায়। সরু ফিতের মতো মল নির্গত হওয়াও কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে। ৪। মলদ্বারে রক্তপাত কোলন ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। অর্শ্বের সমস্যাতেও মলদ্বারের রক্তপাত হয়। তবে এই রক্তপাতের মধ্যেও রয়েছে তারতম্য। অর্শ্ব রোগীদের ক্ষেত্রে যে রক্তপাত হয় তা সাধারণত লাল। অপর দিকে কোলন ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই রক্ত কালচে রঙের হয়। কালচে রং দেহের অভ্যন্তর থেকে নির্গত রক্তের সূচক। ৫। পেট ব্যথাও কোলন ক্যান্সারের অন্যতম মুখ্য একটি উপসর্গ। তবে মনে রাখা দরকার, সাধারণ মানুষের পক্ষে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ বুঝে ওঠা অত্যন্ত কঠিন। কাজেই এই ধরনের যে কোনো উপসর্গ দেখা গেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বিচক্ষণতার পরিচয়।
৫ লক্ষণ: চিনিয়ে দেবে কোলন ক্যানসার
কোলন ক্যানসার মূলত মধ্য বয়স বা তার থেকে বেশি বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে কম বয়সেও দেখা দিতে পারে এই রোগ। প্রাথমিক ভাবে কোলনের ভিতর উপবৃদ্ধি হিসেবে কোলন ক্যানসারের সুত্রপাত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই উপবৃদ্ধিগুলি ক্যানসারে রূপান্তরিত হতে পারে। মলদ্বারে প্রদাহ, মলত্যাগের সময় তীব্র যন্ত্রণা কিংবা রক্তপাতের মত সমস্যা কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
১। দিনে কত বার মল ত্যাগের প্রয়োজন অনুভূত হয়, আচমকা তার তারতম্য ঘটা কোলন ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ।, ২। আচমকা বমি বমি ভাব, গা গুলিয়ে ওঠা, ওজন কমে যাওয়াও কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। ৩। কোলন ক্যানসারের রোগীদের মল ত্যাগের সময় ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। মলত্যাগের পরেও মল রয়ে যাওয়ার অনুভূতি দেখা যায়। সরু ফিতের মতো মল নির্গত হওয়াও কোলন ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। ৪। মলদ্বারে রক্তপাত কোলন ক্যানসারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। অর্শ্বের সমস্যাতেও মলদ্বারের রক্তপাত হয়। তবে এই রক্তপাতের মধ্যেও রয়েছে তারতম্য। অর্শ্ব রোগীদের ক্ষেত্রে যে রক্তপাত হয় তা সাধারণত লাল। অপর দিকে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই রক্ত কালচে রঙের হয়। কালচে রং দেহের অভ্যন্তর থেকে নির্গত রক্তের সূচক। ৫। পেট ব্যথাও কোলন ক্যানসারের অন্যতম মুখ্য একটি উপসর্গ। ৬। কোলন ক্যানসারে যেহেতু অন্ত্র থেকে রক্তপাত হয় তাই, এটি রক্তাল্পতা তৈরি করে। রক্তাল্পতা ডেকে আনে ক্লান্তি। তবে মনে রাখা দরকার, সাধারণ মানুষের পক্ষে কোলন ক্যানসারের লক্ষণ বুঝে ওঠা অত্যন্ত কঠিন। কাজেই এই ধরনের যে কোনও উপসর্গ দেখা গেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বিচক্ষণতার পরিচয়।
কোলন ক্যান্সার দ্রুত নির্ণয়ের অভাবেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা
দেশে মোট জনসংখ্যার তিন দশমিক পাঁচ ভাগ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশে এই রোগে মৃত্যুর হার তিন দশমিক পাঁচ ভাগ। আগামী পাঁচ বছরে দেশে এই রোগে আক্রান্তের হার চার শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সার দ্রুত নির্ণয় করতে না পারার কারণে মৃত্যুহার বেশি। তারা এও বলছেন, নির্দিষ্ট বয়সের পরেই নিয়মিত স্ক্রিনিং করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই দেশে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে স্ক্রিনিং সেন্টার চালুর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসকরা।
বিশ্বে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে নারীরা দ্বিতীয় ও পুরুষরা তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, ৭ লাখ ৪৬ হাজার পুরুষ নতুন করে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, যা মোট ক্যান্সার রোগীর ১০ ভাগ। নারীদের মধ্যে ছয় লাখ ১৪ হাজার নতুন রোগী পাওয়া গেছে, যা ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর মধ্যে ৯ দশমিক দুই ভাগ। এর মধ্যে উন্নত দেশের ৫৫ ভাগ নাগরিক এই রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান ও ধরন নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে প্রায় একই।
প্রতি এক লাখ নাগরিকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ৪৪ দশমিক ৮ ভাগ পুরুষ এবং ৩২ দশমিক দুই ভাগ নারী এই রোগে আক্রান্ত। পশ্চিম আফ্রিকায় চার দশমিক পাঁচ ভাগ পুরুষ এবং তিন দশমিক আট ভাগ নারী কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত।২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর সারাবিশ্বে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৬ লাখ ৯৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় অনুন্নত দেশগুলোতে এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৫২ ভাগ রোগী মৃত্যুবরণ করে। উন্নত দেশে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার তুলনামূলক কম। ইউরোপে এই রোগে প্রতি এক লাখে ২০ দশমিক তিনজন পুরুষ এবং ১১ দশমিক সাতজন নারী মৃত্যুবরণ করছে। আফ্রিকায় তিন দশমিক পাঁচজন পুরুষ এবং তিন জন নারী মৃত্যুবরণ করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ডায়াগনোসিসটা দ্রুত হয় না। মানুষও সময়মতো চিকিৎসকের কাছে আসে না। সাধারণত এই ধরনের রোগীর তেমন কোনও লক্ষণ থাকে না। হয়তো পাতলা পায়খানা হয়, তলপেটে ব্যথা হয়, পায়খানা কষা থাকে। অনেক সময় রক্ত যেতে পারে। প্রথমদিকে ডায়রিয়া, বদহজম হয়। রুচি থাকে না। অনেক সময় রোগী নিজেও গুরুত্ব দেয় না। কারণ, পেটের পীড়া তো আমাদের দেশে অনেক লোকেরই থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণই দেখা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘রোগী যদি শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে আসতো, তাহলে মৃত্যুর হার কমানো যেতো। দেখা যায়, রোগী যখন আসে, তখন কোলন থেকে ক্যান্সারটা লিভারে ছড়িয়ে যায়। তখনই মৃত্যুর হারটা বেশি হয়। লেখক হুমায়ূন আহমেদ যে মারা গেলেন, শুরুতে তিনি পাত্তা দেননি। কিন্তু পরে যখন গুরুত্ব দিলেন ততদিনে এ ক্যান্সার লিভারে ছড়িয়ে যায়।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি মধ্যবয়সে। ৪০-৫০ বছর বয়স হলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কোলনোস্কপি করা যায়। এটা করলে দ্রুত ধরা পড়ে। কোনও ব্যক্তি যদি বোঝে যে তার পেটে সমস্যা আছে, তাহলে সে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট চিকিৎসককে দেখাতে পারে। বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা আছে। যদি শুরুর দিকে ধরা পড়ে, তাহলে কোলনের নির্দিষ্ট অংশ অপারেশন করে ফেলে দিলে রোগী সুস্থ হতে পারে। কিন্তু যদি লিভারে ছড়িয়ে যায়, তখন অনেকে অপারেশন করে। আবার কেমোথেরাপিও দিতে হয়। তখন রোগীকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।’জানতে চাইলে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘আমাদের এখানে সপ্তাহে একদিন ক্যান্সার বিষয়ে পরীক্ষা করা হয়। রোগীরা এখানে এসেও কোলন ক্যান্সারের বিষয়ে পরীক্ষা করতে পারে।’
হেলথ রাইটস মুভমেন্ট ন্যাশনাল কমিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘ইউরোপে যে কয় ধরনের ক্যান্সার আছে, তার মধ্যে কোলন অন্যতম। এর মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট, লাংস, প্রোস্টেট, কোলন ক্যান্সার। ইউরোপে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য স্ক্রিনিংয়ের একটা প্রোগ্রাম আছে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে কোলন ক্যান্সার হয়েছে কিনা, প্রতিবছর দেখাতে হয়। আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সারের ব্যাপারে এত উদ্যোগ নেই। তবে, সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশে কোলন ক্যান্সারের মাত্রাটা তুলনামূলক কম। এখন যে মাত্রাই বলি না কেন, তারাও ঠিক সময়মতো চিকিৎসকের কাছে আসে না। সুতরাং স্ক্রিনিংয়ের ব্যাপার আছে। আফটার ৫০ বা ৬০-এর পর প্রতিবছর স্ক্রিনিংয়ের আওতায় যুক্ত হলে ডায়াগনোসিসটা হবে। এখন কেউ আগে চিকিৎসকের কাছে আসে না। যখন আসে, তখন কিছু করার থাকে না। তবে, আমাদের দেশে এখনও কোলনের জন্য স্ক্রিনিংয়ের বন্দোবস্ত সেভাবে চালু হয়নি। চিকিৎসকরা রোগীকে পাঠালে পরীক্ষা করা হয়।
ডা. রশিদ-ই-মাহবুব ও ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ উভয়ে নির্দিষ্ট বয়সের পর চেকআপ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, বিদেশে যেটা দেখা যায়, ৫০ বছর পার হয়ে গেলে অন্তত বছরে একবার তারা কোলনের টেস্ট করায়। আমাদের দেশে এটা হয় না। যে কারণে আমাদের দেশে রোগীর মৃত্যুহার বেশি।দেশে বয়স্ক লোকদের কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য একটি স্ক্রিনিং সেন্টার থাকা উচিত বলে মনে করেন ডা. রশিদ-ই-মাহবুব।
কোলন ক্যান্সারে মৃত্যুর পাঁচ ব্যতিক্রমী কারণ
১. কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ অবজ্ঞা
বহু মানুষই কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখতে পেলেও তা অবজ্ঞা করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মলের সঙ্গে রক্ত নির্গত হওয়া, অস্বাভাবিক ব্যথা, ডায়রিয়া ও হজমের নানা সমস্যা। এছাড়া রয়েছে হঠাৎ করে ওজন কমা, দুর্বলতা, মলত্যাগের চাপ কিন্তু মলত্যাগ করার পরেও চাপ না কমা ইত্যাদিএসব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে তা পরীক্ষা করা জরুরি। আর এক্ষেত্রে দেরি করে ফেললে তা মৃত্যুর কারণ হয়।
২. চিকিৎসকের অমনোযোগীতা
অনেক চিকিৎসকই কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো দেখেও তা মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করেন না। এক্ষেত্রে চিকিৎসক একটু সতর্ক হয়ে যদি লক্ষণগুলো মিলিয়ে দেখেন তাহলে তা সময়মতো রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করবে।
৩. কিছু জনগোষ্ঠীর বাড়তি মৃত্যুহার
কোলন ক্যান্সার ধনীদের হলেও তা দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। কিন্তু গরীব ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষদের মাঝে এ রোগটি নির্ণয় ও সুচিকিৎসার ঘাটতি আছে। এতে তাদের মাঝে এ রোগে মৃত্যুহার বেশি হতে দেখা যায়।
৪. লাল মাংসের প্রভাব
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে পাওয়া লাল মাংস খাওয়ার অভ্যাস যাদের বেশি তাদের মাঝে এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। আর ২০০৫ সালে ইউরোপের এক গবেষণায় জানা যায় লাল মাংস খাওয়ার অভ্যাস যাদের রয়েছে তাদের এ ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে।এ ঝুঁকি এড়াতে স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর মাংস বর্জন করতে হবে।
৫. পেটের প্রদাহ ও টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের বাড়তি ঝুঁকি
যেসব রোগী আগে থেকেই পেটের প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগছেন কিংবা টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের কোলন ক্যান্সারের বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। তাই এ ধরনের রোগীদের বাড়তি সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা উচিত।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
প্রাণঘাতি এই ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। শাকসবজি, শষ্যজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ, ভোজ্য আঁশ এবং ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ থাকে এমন খাদ্যাভ্যাস বেছে নিতে হবে। এই উপাদানগুলো অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত জরুরি।ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। শারীরিক ওজন একটা স্বাস্থ্যকর মাত্রায় থাকতে হবে।বংশে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী থাকলে পরিবারের সকল সদস্যের উচিত বয়স ৪৫ পেরোলে কিংবা তার আগে থেকেই নিয়মিত ‘কোলন ক্যান্সার’য়ের পরীক্ষা করানো।
একটা সময় ছিল যখন ‘কলোরেক্টা’ ক্যান্সারকে ধরে নেওয়া হত পশ্চিমা বিশ্বের রোগ।তবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রাচুর্য, অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবনাযাত্রা ইত্যাদির কারণে এই রোগ আজ পুরো বিশ্বেই তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।এমনকি ৪০ বছরের কম বয়সিদের মাঝেও আজকাল এই রোগ দেখা দিচ্ছে এবং একবার অস্ত্রোপচার, ‘কেমোথেরাপি’ ও ‘রেডিয়েশন থেরাপি’য়ের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া পর আবার তা ফিরে আসছে।
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ত্বীন ফল
আমাদের মধ্যে অনেকেরই শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি ক্যান্সার। দিন দিন ক্যান্সার যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে এই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সচেতন রোগীর প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসায় ক্যান্সার পুরোপুরি সেরে যেতে পারে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়। এজন্য আপনি প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ত্বীন ফল খেতে পারেন। ত্বীন ফল ক্যান্সারের জন্য খুবই উপকারী।
ত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে মেডিক্যাল সাইন্সে প্রমানিত অনেক রিপোর্ট আছে। ত্বীন ফল দিয়ে জ্যাম, জ্যালি, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে কার্বোহাইড্রেটেড, সুগার, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনসহ নানাবিধ পুষ্টিগুণ। পুষ্টি গুণের পাশাপাশি এটির বহুবিধ ওষুধি গুণও রয়েছে। ভোক্তা চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে খাস ফুড আপনাদের জন্য সরবরাহ করছে সিরিয়া থেকে আমদানিকৃত সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ত্বীন ফল।
তথ্যসুত্র
কোলন ক্যানসার, Rising Bd.
৫ লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা নয়, Chhanel24 Bd.
৫ লক্ষণ: চিনিয়ে দেবে কোলন ক্যানসার, Ananda Bazar.
কোলন ক্যান্সার দ্রুত নির্ণয়ের অভাবেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, Bangla Tribune.
যে কারণে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, Odikar.
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ত্বীন ফল, Ab News 24.
কোলন ক্যান্সার বিষয়ে সাবধানতা, Bd News24.
কোলন ক্যানসারের কারণ, লক্ষণ, Somoy News .
কোলন ক্যানসার সম্পর্কে সতর্ক থাকুন, Prothom Alo.
কোলন ক্যান্সারে মৃত্যুর পাঁচ ব্যতিক্রমী কারণ, Kaler Kantho.
কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্কতা লক্ষণগুলি, Vaidam.
কোলন ক্যান্সার কি পুরোপুরি নিরাময় হয়, Juganto.
তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি, Bbc.
কোলন ক্যান্সার: লক্ষণ ও চিকিৎসা, Bd News24.