সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ (Communal Harmony in Bangladesh)
আমরা অনেকে ধর্ম আর জাতিকে গুলিয়ে ফেলি। যেমন আমি ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমান, কিন্তু জাতি পরিচয়ে বাঙালি। ধর্মনিরপেক্ষতাকে অনেকে ধর্মহীনতা বলেন। কিন্তু ধর্মনিরেপক্ষতা হলো রাষ্ট্রে সব ধর্মের সমান অধিকার। একাত্তরে এই চেতনাতেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি অসাধারণ স্লোগান ছিল, যা অল্প কথায় আমাদের মূল চেতনাকে ধারণ করে-‘বাংলার হিন্দু, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান; আমরা সবাই বাঙালি’। এটাই আমাদের চেতনা। ধর্মের সঙ্গে জাতীয়তার কোনো বিরোধ নেই। ধর্মের সঙ্গে উৎসবের কোনো বিরোধ নেই।
মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানেও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঠাঁই হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি। কিন্তু সামরিক শাসকরা বারবার নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ধর্মকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছে। তবে এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ সব সময়ই এর প্রতিবাদ করেছে। কার কী ধর্ম, সেটা ভুলে আনন্দ-বেদনায় একে অন্যের পাশে থেকেছে। উৎসব-পার্বণ একসঙ্গে উদ্যাপন করেছে। একটি জনপ্রিয় স্লোগান আছে-‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। এই স্লোগানটিই আমাদের মৌলিক চেতনাকে ধারণ করে। ছেলেবেলা থেকেই আমরা দেখে আসছি, ঈদের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাটুকু মুসলমানদের, উৎসবটা সবার। পূজার ধর্মীয় আচারটুকু হিন্দুদের, উৎসবটুকু সবার। ঈদের সেমাই, পূজার নাড়ু সবার ঘরেই পৌঁছে যায়।
বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ’
‘এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সবাই মিলেমিশে একাকার। আমরা সবাই ভাই ভাই, আমরা সবাই একসঙ্গে চলি, একসঙ্গে খাই, একসঙ্গে উৎসব পালন করি। এই সম্প্রীতির উদাহরণ দেশময় ও বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ুক এটাই প্রত্যাশা করি।’
হিন্দু-মুসলিমের মিলিত সংস্কৃতিই বাঙালি সংস্কৃতি
ধর্ম ও বিশ্বাসের ভিন্নতা সত্তে¡ও বাঙালি হিন্দু-মুসলিমের সংস্কৃতি অনেকাংশে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমাদের সামাজিক বন্ধনও হৃদ্যতাপূর্ণ। হিন্দু-মুসলিমের মিলিত সংস্কৃতিই বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এখানে যেমন আজানের ধ্বনিতে মানুষের ঘুম ভাঙে তেমনি সূর্যাস্তের সময় সঙ্খধ্বনিও বেজে ওঠে। এ দেশের বোরকা পরিহিত মুসলিম আর সিঁদুর পরা হিন্দু নারীদের একসাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করার অভ্যাস আছে। আবার ধূতি-তিলক পরা হিন্দু পুরোহিতদের সাথে পাজামা-পাঞ্জাবি-টুপি-দাড়িওয়ালা মৌলবিদের দারুণ আড্ডা জমে। তাছাড়া আসর বসিয়ে হিন্দু-মুসলিম একসাথে বাউল-কীর্তন, মুশির্দী-মারফতি গান শোনে। তারা অযথা বিতর্ক-বিরোধে জড়িয়ে পড়েন না ধর্মীয় বিশ্বাসে ভিন্নতার কারণে। ধর্মীয় কিছু বিধি-নিষেধ ছাড়া মৌলিক কোন পার্থক্য নাই বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের খাদ্যাভ্যাসে। এমনিভাবে বাঙালি সংস্কৃতি হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে।
বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব-সম্প্রীতি স্থাপিত হয়েছে
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। হিন্দু-মুসলিম বার ভূইয়াগণ সম্মিলিতভাবেই মোগল সৈন্যদের প্রতিরোধ করে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রেখেছেন। মুসলিম শাসনামলে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়োগ দেয়ার অসংখ্য নজির আছে। বাংলা সাহিত্যও সমৃদ্ধ হয়েছে হিন্দু-মুসলিমের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সংস্কৃতিতে। মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশের হিন্দু সাহিত্যিকগণ দেব-দেবীর স্তুতিমূলক সাহিত্য রচনা করেছেন। মুসলিম শাসনামলে তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীকৃষ্ণ বিজয়, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি হিন্দু ধর্মগ্রন্থাদি বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এভাবে বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব-সম্প্রীতি স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছেদ ঘটে।
সংখ্যালঘুরা সামান্য বিষয়কে উপজীব্য করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে
দেশের গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, সংখ্যালঘুরা সামান্য বিষয়কে উপজীব্য করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয় বিনষ্ট করে ফেলে দুষ্কৃতকারীরা। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুরা একটি শ্রেণির নিকট নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। ওই গ্রুপটি বিশেষ বিশেষ সময়ে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের খড়গ নিয়ে নামে সাধারণত যে সময়টাতে বাকি বিশ্বের নজর থাকে বাংলাদেশের ওপর। এমন মোক্ষম সময়কে কাজে লাগিয়ে তারা দেখাতে চায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত এবং প্রকারান্তরে তারা বাংলাদেশের ক্ষতিসাধন করে থাকে।
সেমিনারে ড. মিজানুর রহমান বলেন, এখন আর এখানে সংখ্যালঘুদের কোনো নির্যাতন বা হয়রানি করা হয় না। দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে অনেক কঠোর ও সোচ্চার। দেশের মানুষও অনেক সহনশীল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের মানুষ সমমর্যাদার সঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে আমাদের ধর্ম, কৃষ্টি-কালচারের ভিন্নতা রয়েছে, কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধের কোনো ভিন্নতা নেই। এখন সমাজের সব ক্ষেত্রে সব ধর্মের মানুষের যথাযথ অংশগ্রহণ রয়েছে। প্রকৃত অর্থে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির যে বাঁধন বাঙালিরা স্থাপন করেছে, তা সত্যিকার অর্থেই অন্য সম্প্রদায় ও রাষ্ট্রের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। বিদেশী বন্ধুরা বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তব্য প্রদান করেছেন। নির্ভয়ে, নিঃসঙ্কোচে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা এদেশে তাদের ধর্মীয় অনুশাসন পালন করছে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার-এ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়েছে দেশব্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছে। সাধারণ মানুষের মানবাধিকারও নিশ্চিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন মানুষের জমিসহ বাড়ি নিশ্চিত করেছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ
দেশে বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। ’সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সরস্বতী পূজা বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ধর্মীয় উৎসব। ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে এই উৎসবে সবার অংশগ্রহণ এ দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং ঐতিহ্যে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ’
জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই মানবসভ্যতা ক্রমান্বয়ে বিকশিত হচ্ছে। জ্ঞানার্জনে দেবী সরস্বতীর কৃপা অর্জনের লক্ষ্যেই ভক্তরা এ পূজা করে থাকেন। জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ সাম্প্রদায়িকতা, অজ্ঞানতা, কূপমণ্ডুকতা থেকে মুক্ত হয়ে একটি কল্যাণকর ও উন্নত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসবে- এটাই সবার প্রত্যাশা। ’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের ঐতিহ্য
শ্রী কৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এদেশে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের ঐতিহ্য। আবহমান কাল থেকে এ দেশের সব ধর্মের অনুসারীরা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে। এই ঐতিহ্য আমাদের অক্ষুণ্ন রাখতে হবে
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না’
বাংলাদেশে বিরাজমান হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না।হাজার বছর ধরে এই ভূখন্ডে জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের মানুষের সুমহান ঐতিহ্য। বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি ধর্মপরায়ণ বলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সর্বদাই সহনশীল। বাংলাদেশের মূল শক্তিই হলো বাঙালি জাতিসত্তা। জাতি হিসেবে আমরা বাঙালি। সবার ভাষাই বাংলা। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ স্ব-স্ব ধর্ম পালন করলেও উৎসবের আনন্দ সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে উদযাপন করে।
সম্প্রীতির বন্ধনই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মূলভিত্তি
এখনো বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর সংহতি ও জাতীয় ঐক্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হিন্দু- মুসলমান ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ সব ধর্ম এবং বর্ণের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করেছিল- যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সে জন্যই ১৯৭২ সালের সংবিধানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। সেই থেকে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে পথ চলতে শুরু করে। তারই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ ভূমিতে পরিণত হতে চলছে।সম্প্রীতি বাংলাদেশের সঙ্গে গ্রোগাম করতে গিয়ে দেখেছি, বাগেরহাটের পিসি কলেজে মসজিদ মন্দির পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে। তবে অবাক করার বিষয় হলো- মন্দির তৈরিতে অনেক মুসলিম ছাত্র-শিক্ষক অবদান রেখেছেন। তাদের নাম খোদাই করা আছে। এটাই সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিরন্তর
অস্বীকার করা যাবে না, ৬০, ৭০, এমন কি ৮০-এর দশকেও বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনাটি যতটা শক্তিশালী ছিল, এখন চেতনার সেই জোরও নেই, চেতনার সমর্থকদের সংখ্যাও কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। তবে জোর দিয়ে বলতে চাই যে, ভারত ও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের মনোজগতে ধর্মীয় গোঁড়ামি জারি থাকলেও, রাষ্ট্রীয় নীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা, এবং শিক্ষা, ও সংস্কৃতির চর্চায় মানবিক বোধ, ও বিজ্ঞান-মনস্কতার কোনও বিকল্প নেই। ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে ঠিক রেখে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও মানবিক বোধে পূর্ণ সংস্কৃতির চর্চাকে শক্তিশালী করা গেলে জঙ্গিবাদ দুর্বল হবে বা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদ শক্তিশালী হলে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল চেতনা– ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিরন্তর ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকবে।
এদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মভীরু হলেও উগ্রপন্থি নয়
এদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মভীরু হলেও উগ্রপন্থি নয়। বিছিন্নভাবে যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে তা অনেক সময় রাজনৈতিক আবার কখনও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না বরং একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে এ রকম উদাহরণ অনেক আছে। অতি সাম্প্রতিককালে ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাদ্রাসার মসজিদের পাশেই শ্রীশ্রী সীতা কালীমন্দিরে কয়েকজন
মুসলিম হিন্দুর মিলিত সংস্কৃতিই বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
দুষ্কৃতকারী ইট-পাটকেল ছুড়ে মারছিল তখন মাদ্রাসার ছাত্ররাই তাদেরকে রুখে দিয়ে মন্দিরের চারদিকে মানবপ্রাচীর করে দাঁড়িয়ে ছিল। সুপ্রাচীনকাল থেকে মুসলিম হিন্দুর মিলিত সংস্কৃতিই বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এখানে যেমন আজানের ধ্বনিতে ভোরে মানুষের ঘুম ভাঙে, তেমনি সূর্যাস্তের সময় উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি শোনা যায়।
সম্প্রীতি বাংলাদেশ সংগঠনটি দেশব্যাপী সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা, পেশাজীবীরা, সরকারি কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা ও তাদের বক্তব্য শোনার সুযোগ হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিনিধিদের বক্তব্যগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে যারা ধর্ম সম্পর্কে বেশি জানে তারা তত বেশি অসাম্প্রদায়িক। প্রত্যেক ধর্মের মূল কথাই হলো শান্তি। পরস্পরকে শ্রদ্ধা করা। ধর্মীয় প্রতিনিধিরা অত্যন্ত সুন্দরভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা করছেন।
বিশ্ব যখন আজ সাম্প্রদায়িকতার বিষফোড়ায় আক্রান্ত, এমন একটি সময় আশার আলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। বিগত নির্বাচনের পূর্বে 'পথ হারাবে না বাংলাদেশ' স্স্নোগানকে ধারণ করে সারাদেশে সমাবেশ করে একটি বার্তা দিয়েছিল, 'আমার ভোট আমি দেব, অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে দিব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের মর্যদায় নিয়ে যাচ্ছেন। সে জন্য দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রয়োজন। সম্প্রীতি বাংলাদেশ সেই বার্তাটি নিয়েই সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। যদি সম্প্রীতির বন্ধনটা দৃঢ় হয় তাহলেই অসাম্প্রদায়িক মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে
তথ্যসুত্র
জাতি ধর্ম বর্ণের মানুষ, Shomoyeralo.
হিন্দু-মুসলিমের সাম্প্রদায়িক, Banglatribune.
ধর্মীয় উৎসব পালন, Jugantor.
ধর্মনিরপেক্ষতার বিকল্প নেই,, Jaijaidinbd.
হিন্দু সম্প্রদায় নয়, Ittefaq.
অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, Jugantor.
একটি অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন রাষ্ট্র,, Deshrupantor.
এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, Bangla News24.
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত, Dailyjanakantha.
একক পরিচয়ে বাংলাদেশী, Dailynayadiganta.