কম্পিউটার (Computer)

কম্পিউটার কাকে বলে

কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক বর্তনী ও যান্ত্রিক সরঞ্জামের সমন্বয়ে সংগঠিত প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা ডেটা গ্রহণ করে, প্রক্রিয়াকরণ করে, ফলাফল সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনে ফলাফল প্রদান করে।

অর্থাৎ কম্পিউটার এমন এক ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাসমূহ কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট হার্ডওয়্যারসমূহের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে থাকে।

অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে, 'কম্পিউটার হলো হিসাব-নিকাশ করা অথবা অন্য কোনো যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং উৎপাদন করে।' (Electronic device for storing, analysing and producing information for making calculations, or controlling machines.)

আসলে কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিকস যন্ত্র, যা সংরক্ষিত প্রোগ্রামের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারে।

যেমন কম্পিউটার দিয়ে গাণিতিক হিসাব যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করা যায়; এমনকি যুক্তি এবং সিদ্ধান্তমূলক কাজও করা যায়। এছাড়া আমরা কম্পিউটারের সাহায্যে গান দেখতে ও শুনতে পারি এবং বিভিন্ন ধরনের গেমসও খেলতে পারি। গবেষণামূলক কাজ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, এমনকি ব্যক্তিগত কাজেও কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

কম্পিউটারের অর্থ

ল্যাটিন শব্দ কম্পিউটেয়ার (Computare) থেকে ইংরেজিতে কম্পিউটার (Computer) শব্দটির উৎপত্তি। Compute শব্দের অর্থ হলো গণনা করা। তাই কম্পিউটারের আভিধানিক অর্থ হলো গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র।

Computer এর পূর্ণরুপ হলো

  • C = Commonly
  • O = Operated
  • M = Machine
  • P = Particularly
  • U = Used for
  • T =Technical
  • E = Education
  • R = Research

অর্থাৎ, Commonly Operated Machine Particularly Used for Technical Education and Research.

কম্পিউটারের জনক কে?

হাওয়ার্ড অ্যাইকনকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। কারণ তিনি সর্বপ্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেছিলেন। পরে চার্লস ব্যাবেজ আধুনিক ভার্সন আবিষ্কার করেন বলে তাকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।

ইতিহাস

প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়াটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গণনা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গণনা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।

১৬১৭ সালে স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার গণনার কাজে ছাপা বা দাগ কাটাকাটি অথবা দন্ড ব্যবহার করেন। এসব দন্ড জন নেপিয়ার (John Napier) এর অস্থি নামে পরিচিত। ১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। ১৬৭১ সালের জার্মান গণিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ প্যাসকেলের যন্ত্রের ভিত্তিতে চাকা ও দন্ড ব্যবহার করে গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো উন্নত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। তিনি যন্ত্রটির নাম দেন রিকোনিং যন্ত্র (Rechoning Mechine)। পরে ১৮২০ সালে টমাস ডি কোমার রিকোনিং যন্ত্রের পরিমার্জন করে লিবনিজের যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন।

উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় (১৮৩৩ সালে) তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারণা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি।

কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার। কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) বা আইটি (IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর ।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এম কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। এর পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একই সময় আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট (Apple Computer Inc) তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ (Apple-Macintosh) কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে অ্যাপল তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।

কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি

বর্তমান বিশ্বে ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলিকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যথা

১.কাজের ধরন ও ব্যবহারের প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ।

২.গঠন ও কাজের প্রকৃতির অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ এবং

৩.আকার, আকৃতি, আয়তন ও কার্যকারিতা অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ।

কাজের ধরন ও ব্যবহারের প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ

কাজের ধরন ও ব্যবহারের প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে কম্পিউটারকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন-

১.সাবিশেষ ব্যবহারের কম্পিউটার (Special Purpose Computer)

২.ধারণ ব্যবহারের কম্পিউটার (General Purpose Computer) ও

গঠন ও কাজের প্রকৃতির অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ :-

গঠন ও কাজের প্রকৃতি অনুসারে কম্পিউটারকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

অ্যানালগ কম্পিউটার (Analog Computer)

ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer) ও

হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)

আকার, আয়তন ও কার্যকারিতা অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ

আধুনিক যুগে কম্পিউটার বলতে আমরা ডিজিটাল কম্পিউটারকে বুঝি। বর্তমানে প্রায় সর্ব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার হচ্ছে। আকার, আয়তন, কাজ করার ক্ষমতা, স্মৃতি ও কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে বা ডিজিটাল কম্পিউটারকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

১.সুপার কম্পিউটার (Supercomputer)

২.মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)

৩.মিনি কম্পিউটার (Minicomputer) ও

৪.মাইক্রোকম্পিউটার (Microcomputer)

মাইক্রোকম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ

প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে মাইক্রোকম্পিউটারের আকৃতিতে নানা রকম পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের ব্যবহারিক সুবিধার প্রতি লক্ষ রেখে বিভিন্ন আকৃতির মাইক্রোকম্পিউটার বাজারে এসেছে। যেমন

১.পামটপ কম্পিউটার (Palmtop Computer) বা পিডিএ (PDA)

২.ল্যাপটপ কম্পিউটার (Laptop Computer )

৩.নোটবুক কম্পিউটার (Notebook Computer)

৪.ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer); ইত্যাদি

কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য

সবকিছুর মতো কম্পিউটারেরও নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো –

১.হাই স্পিড

২.নির্ভুলতা

৩.বিশ্বাসযোগ্যতা

৪.স্মৃতিশক্তি

৫.বহুমুখিতা

৬.ক্লান্তিহীনতা

৭.অসীম জীবনীশক্তি ইত্যাদি ।

কম্পিউটার ভাইরাস কাকে বলে? কম্পিউটার ভাইরাস কী কী ক্ষতি করতে পারে?

প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রমণের মতো মানুষের প্রোগ্রামকৃত বিভিন্ন ভাইরাস কম্পিউটারের ক্ষতি করে থাকে। VIRUS (ভাইরাস) শব্দের পূর্ণরূপ হলো Vital Information Resources Under Siege যার অর্থ দাঁড়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ দখলে নেওয়া বা ক্ষতিসাধন করা। ১৯৮০ সালে এ নামকরণ করেছেন প্রখ্যাত গবেষক University of New Haven এর অধ্যাপক Fred Cohen (ফ্রেড কোহেন)।

ভাইরাস হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা তথ্য ও উপাত্ত কে আক্রমণ করে এবং যার নিজের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষমতা রয়েছে। ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করলে সাধারণত সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে গোটা কম্পিউটারকে অচল করে দেয়। যেমন বুট ভাইরাস ডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রমণ করে। অতি পরিচিত কিছু ভাইরাস হলো- Stone (স্টোন), Vienna (ভিয়েনা), CIH (সিআইএইচ), Folder (ফোল্ডার), Trojan Horse (ট্রোজান হর্স) ইত্যাদি।

এরপর থেকে এই প্রোগ্রাম নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলে। ১৯৮৩ সালে ফ্রেডরিক বি কোহেন এমন একটি প্রোগ্রাম আবিষ্কার করেন যেটি নিজের প্রতিরূপ নিজে তৈরি করতে সক্ষম। তিনি তার শিক্ষক লিউনার্দো অ্যাডেলম্যানের পরামর্শে এর নাম দেন কম্পিউটার ভাইরাস।

১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর কম্পিউটার ‘ভাইরাস’-এর জন্ম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র ফ্রেড কোহেন পেনসিলভানিয়ার লেহিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তাবিষয়ক এক সেমিনারে প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস দেখান। একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটারে তিনি তাঁর ছোট্ট সংকেত (কোড) প্রবেশ করিয়ে মাত্র ৫ মিনিটেই গোটা যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলেন। আরও চারটি প্রদর্শনীতে গড়ে মাত্র আধঘণ্টা সময়েই এই কোড ব্যবহার করে সব নিরাপত্তাব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে গোটা সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন তিনি।

কোহেনের উপদেষ্টা লেন অ্যাডলেম্যান কোহেনের এই নিজে থেকেই নিজের অনুলিপি (রেপ্লিকা/ কপি) সৃষ্টির প্রোগ্রামটিকে ভাইরাসের সঙ্গে তুলনা করেন এবং একে ‘ভাইরাস’ নামে অভিহিত করেন। সেই থেকে এমন ক্ষতিকর প্রোগ্রামের নাম হয়ে গেল কম্পিউটার ভাইরাস। কিন্তু কারও কারও মতে, এটাই প্রথম ভাইরাস নয়। ১৯৮২ সালে পেনসিলভানিয়ার ১৫ বছর বয়সী কিশোর রিচ স্ক্রেনটা এমন এক প্রোগ্রাম লেখে, যা ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে অ্যাপল টু কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রতি ৫০ বার পরপর কম্পিউটার রিবুটিংয়ের সময় এই প্রোগ্রামটি একটি ছোট্ট বার্তা দেখাত। কিন্তু এই পুরো ব্যাপারটাই ছিল মজা করার উদ্দেশ্যে, স্ক্রেনটা ও তার বন্ধুদের গণ্ডির বাইরে কেউ জানত না এবং একে ভাইরাস বলা হতো না। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন প্রথম ভাইরাসের নাম ‘ক্রিপার’ (১৯৭১)। কেমব্রিজভিত্তিক বিবিএনের কম্পিউটার প্রোগ্রামার রবার্ট (বব) থমাস ছোট একটা প্রোগ্রাম লেখেন, যা নিজে নিজেই অনুলিপি তৈরি করতে পারত। এটা ছিল পরীক্ষামূলক।

কম্পিউটার ভাইরাসের এমন নামকরণের কারণ হলো, এই প্রোগ্রামগুলো জীবদেহের ভাইরাসের মতোই আচরণ করে থাকে। ভাইরাস যেমন কোষের মতো নিজে থেকে নিজের অনুলিপি (রেপ্লিকা) তৈরি করতে পারে না, কম্পিউটার প্রোগ্রামটিও তেমনই, প্রোগ্রামটিতে ক্লিক না করলে চালু হয় না। ভাইরাস যেমন এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়ায়, কম্পিউটার ভাইরাসও তেমনই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়ায়। দুটোই ক্ষতিকর ও আকারে ছোট।

এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ক্ষতিকর ১০টি ভাইরাসের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে স্ট্রম ট্রোজান, মেলিসা, মাই ডুম, স্যাসার, অ্যানা কুর্নিকোভা, মরিস অ্যান্ড কনসেপ্ট, আই লাভ ইউ, স্ল্যামার,

কম্পিউটার ভাইরাস কী কী ক্ষতি করতে পারে?

কম্পিউটার ভাইরাস যা যা ক্ষতি করতে পারে তা হলো-

১। কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোনো ফাইল মুছে দিতে পারে।

২। ডেটা বিকৃত বা Corrupt করে দিতে পারে।

৩। কম্পিউটারে কাজ করার সময় আচমকা অবাঞ্ছিত বার্তা প্রদর্শন করতে পারে।

৪। কম্পিউটার মনিটরে ডিসপ্লেকে বিকৃত বা Corrupt করে দিতে পারে।

৫। সিস্টেমের কাজকে ধীর গতিসম্পন্ন করে দিতে পারে।

কম্পিউটারের ব্যবহার

১.লেখালিখির কাজে অফিস আদালতে ব্যবহৃত হয়।

২.আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণের কাজে।

৩.বিভিন্ন জিনিস যেমন – মোটরগাড়ি, বাড়ি, রাস্তা, ব্রিজ ইত্যাদি ডিজাইন করতে।

৪.মুদ্রণশিল্পে প্রকাশনামূলক যে কোন কাজে।

৫.শিক্ষাক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

৬.ভিডিও দেখা, টিভি দেখা, গান শোনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

৭.সংবাদ প্রেরণের ক্ষেত্রে।

৮.বর্তমানে অফিসের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার কাজে, ব্যাংকিং, শেয়ার বাজার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ ও তৈরি কর

কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে?

যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহারকারী কর্তৃক তৈরি নির্দেশ সেট বা প্রোগ্রাম কম্পিউটার মেমোরিতে সংরক্ষণ করে।Keyboard, মাউস ইত্যাদির সাহায্যে কম্পিউটার ডাটা গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনে তা সংরক্ষণ করেও রাখে।ডাটা প্রসেস করে কম্পিউটার তথ্য নির্বাহ করে।মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে যাতে এই ফলাফল পুনরায় ব্যবহার করা যায় সেজন্য সংরক্ষণ করে।তে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি।

কম্পিউটার আসক্তির কুফল

কম্পিউটারে আসক্ত হলে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠার জন্য মাঠে মাঠে ছোটাছুটি করতে হয়, খেলতে হয়। যে সময় খেলার মাঠে খেলার কথা সে সময় ঘরের কোনায় কম্পিউটারের সামনে মাথা গুঁজে বসে থাকাটা মোটেই ভালো কাজ নয়।

কম্পিউটারে আসক্ত হয়ে পড়লে কম্পিউটারের বাইরের কথা চিন্তাও করা যায় না। চলুন তাহলে কম্পিউটারল আসক্তির কুফল সম্পর্কে জেনে নেই –

১.প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় হয়।

২.অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার নিয়ে কাজ করার ফলে শরীরের দেহভঙ্গি ঠিক থাকে না এ কারণে মাংসপেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

৩.ঘাড়, কোমর ব্যথা হয়।

৪.ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়।

৫.কাঁধে ও হাতে ব্যথা হতে পারে।

৬.মাথা ব্যথ, চোখ ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখ, চোখে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে ইত্যাদি।

কম্পিউটার আসক্তির কুফল থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় কম্পিউটার ব্যবহার করাকে কম্পিউটার আসক্তি বলা হয়। বর্তমানে শিশু, ছেলেমেয়ে, বয়স্ক ব্যক্তিরা সহ কম্পিউটারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। একজন যখন তার মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে সময় না দিয়ে সেই সময়টাও কম্পিউটারের পেছনে ব্যয় করে তখন বুঝতে হবে তার কম্পিউটারে আসক্তি জন্মেছে। এ আসক্তি মারাত্মক ক্ষতি করে। বিশেষ করে কাজ কর্মে ক্ষতি, লেখাপড়ায় সমস্যা, মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত ইত্যাদি।

এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই আনন্দ পাওয়া শিখিয়ে দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে খেলাধুলা। সে কতক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া। মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। মজার মজার গল্পের বই কিনে দেওয়া এবং নিয়মিত তাকে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করলে কম্পিউটার আসক্তি থেকে রক্ষা পাবে।


তথ্যসুত্র

কম্পিউটার কাকে বলে

কম্পিউটারের প্রকারভেদ

কম্পিউটার ইতিহাস

কম্পিউটার ভাইরাস কাকে বলে?

কম্পিউটার ভাইরাস