সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন (Cyber Risks)

সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন (Cyber Risks)

সাইবার হুমকির মুখে কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন আইটি ও সাইবার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংস্থা ‘বিজিডি ই-গভ সার্ট' এর ‘র‌্যানসমওয়্যার ল্যান্ডস্কেপ বাংলাদেশ ২০২২' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তার সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে বাংলাদেশও।

সাইবার অপরাধীরা বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি নেটওয়ার্ক ও পরিকাঠামোগুলোর কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে ধ্বংসাত্মক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করছে। বাংলাদেশও এসব সাইবার যুদ্ধের প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। ২০২২ সালে সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য সার্ট বেশ কয়েকবার সতর্কতা জারি করেছিল। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময়ই চ্যালেঞ্জের বলেও উল্লেখ করা হয় সার্টের প্রতিবেদনে। ২০১৬ সাল থেকে দেশের সাইবার হামলা ও নিরাপত্তা ত্রুটিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার তথ্য রাখছে সার্ট। প্রতিবেদনটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশ করা হয়।

ব্যবসা-বাণিজ্যে সাইবার হামলায় ক্ষতির প্রভাব কতখানি?

একটি সফল সাইবার হামলা মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির জন্য। এর ধাক্কায় সরাসরি আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি কোন কোম্পানি হারাতে পারে তার ব্যবসায়িক সুনাম এবং গ্রাহকদের আস্থা। সাইবার হামলায় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যের পাশাপাশি চুরি যেতে পারে অর্থ কিংবা আর্থিক লেনদেনের তথ্য, এছাড়া প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি সমস্যা হতে পারে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও।

সাইবার হামলা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ হলো বিশ্বের খ্যাতনামা তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইয়াহু।  কয়েক বছর আগে এক মারাত্মক সাইবার হামলায় ইয়াহু ব্যবহারকারী ৫০ কোটি গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয়। এই তথ্য ফাঁসের ক্ষতি সামলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আস্থা হারিয়ে গ্রাহকরা চলে যান গুগলের জিমেইল কিংবা মেটার ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মত অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের হ্যাকিংয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতখানি?

সম্প্রতি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকের জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত  তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় সারা দেশে। পরবর্তীতে আইসিটি বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনের ওঠে আসে এ ঘটনার পেছনে প্রযুক্তিগত দুর্বলতার বিষয়টি। তার আগে গত মার্চ মাসে সাইবার অপরাধীদের আক্রমণের শিকার হয় বাংলাদেশ বিমানের ই-মেইল সার্ভার। 

সাইবার নিরাপত্তা ও আমাদের করণীয়

আপনি প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তার লক্ষ্যে ফায়ারওয়াল স্থাপন করলেন কিন্তু অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ই-মেইল কিংবা হোয়াটস অ্যাপসে অপ্রাসঙ্গিক লিংকে অবাধ প্রবেশ, ক্রেডেনশিয়াল ম্যানেজমেন্ট কিংবা ব্যবহৃত সফটওয়্যারের নিয়মিত আপডেট করণের অভাবেও সাইবার আক্রমণ হতে পারে।  সাইবার স্পেসকে নিরাপদ রাখতে হলে আমাদের মূলত চারটি পূর্বশর্ত নিশ্চিত করতে হবে- ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি •    প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া •    প্রযুক্তিগত সক্ষমতা •    আইনের কঠোর প্রয়োগ।  

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ মানবসম্পদের মাধ্যমে বিশেষায়িত সাইবার রেসপন্স টিম কিংবা সাইবার নিরাপত্তা টিম গঠন করে নিয়মিতভাবে সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে এবং নিয়মিত আইটি অডিটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশাপাশি সরকারের ইনফরমেশন সিকিউরিটি ম্যানুয়াল অনুযায়ী যদি সরকারি প্রতিষ্ঠান, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানগুলো চালানো সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই আমরা নিরাপত্তা সূচকে আরও অগ্রগামী হবো। মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র সরকার কিংবা প্রতিষ্ঠান এককভাবে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না। যতক্ষণ না আমরা সকলে এই বিষয়ে আরও বেশি সচেতন হবো।

সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় আরো সচেতনতা দরকার

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন বছরের শুরুতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন ‘সিটিও টেক সামিট ২০২০’। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের একমাত্র সংগঠন সিটিও ফোরামের আয়োজনে আগামীকাল রাজধানীর স্যামসন চৌধুরী কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রযুক্তি নির্বাহীদের এ সম্মেলনে প্রায় ৪০ জন বিদেশী বিশেষজ্ঞ যোগ দেবেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইসি কাউন্সিলের ওয়াশিংটন চ্যাপ্টার থেকে ১৫ জন, সাইবার সিকিউরিটি অব মালয়েশিয়া থেকে পাঁচজন, ভারতের ইনফোসেক ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় ১৫ জন, সিআইও ফোরাম অব নেপাল থেকে তিনজন এবং ভুটান থেকে দুজন সম্মেলনে যোগ দেয়ার বিষয় এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন। সাইবার সিকিউরিটি ও ডিজিটাল ইনোভেশন—এ দুই ভাগে সাজানো হয়েছে এবারের সম্মেলন। দুটি ভাগে চারটি করে মোট আটটি সেমিনার ও প্যানেল আলোচনার পাশাপাশি সম্মেলনস্থলে বেশকিছু স্টলও থাকবে, যেখান থেকে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ব্লক চেইন বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মতো নতুন প্রযুক্তির বিষয়গুলো সামনে আনা।

সিটিও ফোরাম চলতি বছর কোন বিষয়গুলোয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?

সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরত প্রযুক্তিবিদদের জন্য এ দেশে একমাত্র সংগঠন। আমাদের সংগঠনের লক্ষ্যই হলো দেশের প্রযুক্তিবিদদের একত্র করে নলেজ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দেশের ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দেশের প্রযুক্তিবিদ ও কর্মকর্তাদের কোলাবোরেশন তৈরি করা।

আধুনিক প্রযুক্তির নানা বিষয় যেমন ডিজিটাল রূপান্তর, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সাইবার চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি সিটিও ফোরাম সাইবার নিরাপত্তার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎসাহ ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।

সাইবার নিরাপত্তায় কী করবেন?

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপদ রাখুনকম্পিউটার ও স্মার্ট ডিভাইস ছাড়া অফিস এখন চিন্তারও বাইরে। কেবল কাজ নয়, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কম্পিউটারে ডিজিটাল ফাইল আকারে সংরক্ষিত থাকে। তাই অফিসের কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে সাধারণত যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়, তা নিরাপদ রাখা সবচেয়ে জরুরি। ব্যবস্থাপককে অফিসের নেটওয়ার্ক নিরাপদ কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন বিভাগসহ মানবসম্পদ বিভাগের তথ্য যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। অ্যাডমিন আইডিতে যেন বাইরের কেউ ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত রাখতে হবে।

হালনাগাদ ওএস এবং সফটওয়্যারঅনেক সময় খরচ বাঁচাতে ও ইন্টারনেটের গতি ঠিক ধরে রাখতে উইন্ডোজের স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদ বন্ধ রাখা হয়। এতে বিপদ হতে পারে। নিরাপদ থাকতে এবং কাজের নিরবচ্ছিন্নতা ধরে রাখার জন্যই অফিসের প্রতিটি কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ও নিত্যব্যবহৃত সব সফটওয়্যার নিয়মিত হালনাগাদ রাখতে হবে।

কর্মীদের সচেতন করাঅফিশিয়াল কম্পিউটার ও এতে সংরক্ষিত ডেটার নিরাপত্তায় শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, প্রয়োজন কর্মীদের সচেতনতাও। তাই বছরে অন্তত একবার সহকর্মীদের অংশগ্রহণে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। কম্পিউটারে রক্ষিত তথ্যের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্যের মূল্য ও গুরুত্ব কর্মীদের বোঝাতে হবে। এসব তথ্য বেহাত হলে ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে তাঁদের ধারণা দিতে হবে।তথ্য ব্যাকআপ রাখাগুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যাকআপ রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক, ক্লাউড বা অন্য কোনো মাধ্যমে রেখে দিতে পারেন। এতে কোনো দুর্যোগ বা বিপর্যয়ে ওই তথ্য কাজে লাগানো যাবে।

অননুমেয় পাসওয়ার্ডঅফিশিয়াল ডকুমেন্ট আদান-প্রদান থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ফাইলের ব্যাকআপ, চ্যাটিং, ব্যাংকিং—সবই এখন অনলাইননির্ভর। সহজ বা সহজে অনুমান করা যায়—এমন পাসওয়ার্ড দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কমপক্ষে আট অক্ষরের দীর্ঘ ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন ইত্যাদির সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। বছরে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।

নিরাপদ ইউএসবি ব্যবহারঅনেক যন্ত্রেই এখন ইউএসবি সুবিধা পাবেন। ইউএসবির মাধ্যমে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই ইউএসবি পোর্ট সুবিধায় নিজের ফোন অন্যের পিসিতে চার্জ দেওয়া কিংবা নিজের পিসিতে অন্য কারও ডিভাইস চার্জ হতে দেওয়া বা ডেটা ট্রান্সফার জরুরি না হলে ব্যবহার করবেন না।

ভুয়া মেইলের লিংকে ক্লিক করবেন নাঅনেকেই লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে ই-মেইলে আসা ভুয়া লিংকে ক্লিক করে বসেন। এ ধরনের ফিশিং মেইলে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।নিরাপদ অ্যান্টিভাইরাসসাইবার জগতে নিরাপদ থাকতে হালনাগাদ অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন। বিনা মূল্যের অ্যান্টিভাইরাস সব সময় নিরাপদ হয় না। অফিসের পিসিতে ভালো মানের লাইসেন্স করা অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।

সাইবার আক্রমণ ঠেকাতে নিরাপত্তা নির্দেশিকা জারি

সাইবার আক্রমণ ঠেকাতে সরকারি সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ও তথ্য সংরক্ষণে সাইবার নিরাপত্তা নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ‘ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট এবং তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নির্দেশিকা-২০২০’ নির্দেশিকাটি জারি করা হয়।  নির্দেশিকায় ডিজিটাল ডিভাইস সুরক্ষা, সফটওয়্যার নিরাপত্তা, সব ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সুরক্ষা, ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা, ই-মেইল ব্যবস্থাপনা, সার্ভার কক্ষ সুরক্ষা ও সার্ভার সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।   

নির্দেশিকায় বলা হয়, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের কলাকৌশল না জেনে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে সম্প্রতি সরকারি দফতরগুলোতে ব্যবহার করা অনলাইন সিস্টেম, ডিজিটাল ডিভাইস ও এতে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বিভিন্ন ধরনের সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এই লক্ষ্যে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল ডিভাইস ও তথ্য সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে ‘ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট এবং তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নির্দেশিকা-২০২০’ প্রণয়ন করা হলো।

এই নির্দেশিকা অনুসরণের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট ও তথ্য রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন বলে উল্লেখ করা হয়।নির্দেশিকায় ডিজিটাল তথ্য বলতে টেক্সট, ইমেজ, অডিও বা ভিডিও আকারে প্রস্তুত তথ্য, জ্ঞান, ঘটনা, ধারণা বা নির্দেশাবলি যা কম্পিউটার প্রিন্ট আউট, ম্যাগনেটিক বা অপটিক্যাল স্টোরেজ মিডিয়া, পাঞ্চ টেপসহ যেকোনও আকার বিন্যাসে কম্পিউটার সিস্টেম অথবা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে, হচ্ছে বা হবে অথবা অভ্যন্তরীণভাবে যা কোনও কম্পিউটার স্মৃতি সংরক্ষণকে বোঝানো হয়েছে।

সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধের উপায় জানাল সফোস

যদিও এমডিআর সমাধানের একটি মাত্র উপায়। তবু সিসাস মডেল থেকে পুরোদমে সুবিধা পেতে প্রতিষ্ঠানের একটি বিস্তারিত রেসপন্স পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ অ্যালাইনমেন্ট ও সুবিন্যস্ত সহযোগিতা পেতে সফোস পাঁচটি মূল পদক্ষেপের বিষয়ে জানিয়েছে।

১. সচেতন থাকা: ঘটনার রেসপন্স পরিকল্পনার কিছু উপাদানের জন্য একটি নমনীয় পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। এমনকি একটি শক্ত পরিকল্পনাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন হুমকির বিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। 

২. ক্রস টিম সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেয়া: একটি সংস্থার সবকিছুই সাইবার আক্রমণের ফলে প্রভাবিত হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া ও ঝুঁকি মূল্যায়নের সময় সব দল অর্থ, আইন, বিপণন, পিআর ও আইটিসহ অন্যদের যুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ভালো আইটিনির্ভর পরিবেশ বজায় রাখা: একটি শক্তিশালী ও পরিচ্ছন্ন আইটি পরিবেশ ঘটনা ঘটার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তাই ওপেন রিমোট ডেস্কটপ প্রটোকল (আরডিপি) পোর্টের মতো অস্বাভাবিক দুর্বলতার সমাধান এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত সেগুলো চেক করা গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ইনসিডেন্ট রেসপন্স পরিকল্পনার হার্ডকপি সংরক্ষণ করা: অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবেলার জন্য যেন প্রিন্ট করা কপি থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি হামলার শিকার হয়, তাহলে সেই কৌশলের ডিজিটাল কপিগুলো এনক্রিপ্ট করে রাখতে হবে।

৫. তাৎক্ষণিকভাবে এমডিআর বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া: খুবই অভিজ্ঞ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দলও এমআরডি অপারেশন দলের কাছ থেকে অসাধারণ সব ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে এবং সক্রিয় হামলাকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করার কাজটিও শিখতে পারে। এ পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা বিশেষ হুমকি মোকাবেলার জন্য বিশেষভাবে শিক্ষিত ও কীভাবে দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে রেসপন্স করা যায় সেটি তারা জানে।

ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার বনাম সাইবার অপরাধের ঝুঁকি

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশ চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি যার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি। এর মাধ্যমে সরকারি যেকোন বিশেষ ঘোষণা মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সরাসরি ঐ সকল ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের নিকট পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া, বর্তমানে দেশের নাগরিকরা অনলাইনে আবেদন করে দেশের ৬৪টি জেলায় স্থাপিত ই-সেবা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছে।

অন্যদিকে, সরকারি ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও দিক নির্দেশনা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। সরকারি এসব তথ্য ও সেবা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেশে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়টি সরকারি মোবাইল হেল্পডেস্ক। এই মোবাইল হেল্পডেস্কগুলোর নির্দিষ্ট নম্বরে কল করার মাধ্যমে মানুষ সহজেই সরকারি তথ্য ও সেবা পাচ্ছে।

তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তি, সহজ অ্যাক্সেস ও দিনকে দিন নতুন প্ল্যাটফর্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধও ও এর ঝুঁকি। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে অপরাধেরও নতুন ধরন পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৪টি ভিন্ন আইনের অধীনে প্রতি মাসে গড়ে ১৬৯টি সাইবার মামলা দায়ের হয়েছে। ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৪টি।

আসলে সাইবার অপরাধের ধরন দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অপরাধের সংখ্যাও। সহজেই ইন্টারনেটের অ্যাক্সেস ও নজরদারির অভাবের কারণেই এমনটা হচ্ছে। এসব অপরাধের বেশিরভাগই মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই-কমার্স ও এফ-কমার্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এমনকি এ ধরনের কার্যক্রমে বিদেশি নাগরিকদেরও সংশ্লিষ্টতাও দেখা গেছে। যেমন গত ২১ এপ্রিল পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ১১ জন নাইজেরীয় নাগরিককে জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশি সহযোগীদের পাশাপাশি বিদেশি এই নাগরিকরাও ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার পরে উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন।

বেশ কয়েক বছর আগে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এই অর্থ ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজাল ব্যাংকের শাখায় চারটি অ্যাকাউন্টে যায় এবং সেখান থেকে দ্রুত টাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ফেরত আসে।

এখনো ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধার হয়নি। এই ডলারগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট বা ভল্ট থেকে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশের রিজার্ভ ডলার থেকেই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি করে নিয়েছিল। এর আগে বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ ও এর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ বা ধারণা ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর থেকেই সরকার, দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্যাংকিং সেক্টরসহ অনেকেই নড়েচড়ে বসে এবং সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) এর সাম্প্রতিক এক তথ্য মতে, মাত্র কয়েক বছর আগেও তারা প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দেড় হাজার সাইবার অপরাধের অভিযোগ পেতেন। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে আড়াই হাজার। ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব অপরাধের ধরনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, 'টিকটকে তারকা' হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মূলত তরুণীদের প্রলুব্ধ করে। ভুক্তভোগীরা একবার সেই ফাঁদে পা দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ভয়ংকর নির্যাতন ও পরিশেষে মানসিক ট্রমা। এই ধরনের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও বিদেশে পাচার করার মতো ঘটনা ঘটে বলে জানা যাচ্ছে।


তথ্যসুত্র

সাইবার অপরাধও ও এর ঝুঁকি, Deltatimes24.

সাইবার আক্রমণগুলো প্রতিনিয়ত, Bonikbarta.

সাইবার আক্রমণ, Banglatribune.

সাইবার দুর্বৃত্তরা ওত পেতে আছে, Prothomalo.

বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে , Bonikbarta.

সাইবার হামলায় চরম ঝুঁকিতে, Banglanews24.

Subscribe for Daily Newsletter