তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা (Data Security)

তথ্য নিরাপত্তা বলতে বুঝায়- তথ্য ও তথ্য সিস্টেমগুলোকে অননুমোদিত অ্যাকসেস, ব্যবহার, প্রকাশ, ব্যহতকরণ, পরিবর্তন, মনোযোগ সহকারে পাঠ, পরীক্ষণ, রেকর্ড বা ধ্বংস করার হাত থেকে রক্ষা করা। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্যের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকায় তথ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর সেজন্যই নিজস্ব তথ্যের উপর থাকা চাই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।

তথ্যের সংরক্ষক হলেন তথ্যের স্বত্বাধিকারী কর্তৃক নিয়োজিত এমন একজন ব্যক্তি যিনি স্বত্বাধিকারী কর্তৃক প্রবর্তিত রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসরণ করে তথ্য সুরক্ষা করবেন। তিনি অন্যদেরকে তথ্য প্রদান করবার প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে স্বত্বাধিকারী কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। সংরক্ষক তথ্যের স্বত্বাধিকারী কর্তৃক নির্ধারিত উপায়ে নিয়মিত ব্যাকআপ ও উপাত্তের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই কার্যক্রম সম্পন্ন এবং ব্যাকআপ হতে বিভিন্ন উপায়ে উপাত্ত নতুনভাবে সংরক্ষণ করবেন ও তথ্যে প্রবেশাধিকারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবারও দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি তথ্যসম্পদ একজন সংরক্ষকের দায়িত্বে থাকবে। সংরক্ষককে তথ্য সম্পদের নিরাপত্তার জন্য চূড়ান্তভাবে দায়িত্বশীল থাকতে হয়। সেই জন্য তাকে নিশ্চিত হতে হয় যে, সব দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখবেন যেভাবে

 ইন্টারনেটের মাধ্যমে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন তা আগে থেকে জানতে হবে। সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে জানা না থাকার কারণে অনেকে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা বেশি বিপদে পড়েন। যদি কোনো ধরনের সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখতে পান তবে সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নিতে হবে। 

অনলাইনে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য জানানোর বিষয়ে সতর্ক হোন। অজ্ঞতার কারণে অনেকে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত করে ফেলেন যা তার জন্য বড় বিপদের কারণ হতে পারে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহার আরও সচেতন হোন।অনেকেই নতুন কোনো বন্ধু তৈরি করতে গিয়ে বিপদে পড়েন। বন্ধুর রূপ ধরে আসে ক্ষতিকর কেউ। কিন্তু তারা তা আগেভাগে বুঝতে পারেন না। তাই অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। ভালোভাবে না জেনে কাউকে বন্ধু করতে যাবেন না।

অনেকেই ফিশিং-এর পাল্লায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এক্ষেত্রে ফিশিং থেকে রক্ষা পেতে চাইলে ইমেইল কিংবা মেসেজে পাওয়া কোনো লিংকে ক্লিক করবেন না। কোনো ধরনের প্রলোভনেও পড়বেন না। নয়তো পরবর্তীতে আপনিই বিপদে পড়বেন।আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড শক্তিশালী ও আনকমন যেন হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে একাউন্ট নিরাপদ রাখা সহজ হবে। টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সিস্টেম চালু করে রাখুন। এতে অন্য কেউ চাইলেও আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না।ইন্টারনেট ব্যবহার করে কেনাকাটা করার অভ্যাস আছে অনেকেরই। এক্ষেত্রে শুধু নিরাপদ এবং স্বীকৃত মাধ্যম থেকে কেনাকাটা করতে হবে।

তথ্য নিরাপত্তা ও সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে

তথ্য সম্পদ সঠিকভাবে চিহ্নিত এবং সঠিকভাবে শ্রেণিকৃত ও তাদের পরিধি নির্ধারিত হলে পরবর্তী পদেক্ষপ হবে কার কোনো তথ্যে প্রবেশাধিকার থাকবে তা নির্ধারণ করা। অনেক ধরনের তথ্য রয়েছে যেমন : উপাত্ত ভাণ্ডার ও ডাটা ফাইল চুক্তিপত্র, প্রসেসসহ সিস্টেম ডকুমেন্টেশন, গবেষণা তথ্য, ব্যবহার-বিধি, প্রশিক্ষণ-উপকরণ, পরিচালনা বা সহায়ক পদ্ধতি, কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা পরিকল্পনা, অসুবিধার সম্মুখীন হলে বিশেষ ব্যবস্থা চালুকরণ, অডিট বিবরণী এবং চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত তথ্য; অ্যাপ্লিকেশন সফট্ওয়্যার, সিস্টেম সফট্ওয়্যার, সিস্টেম উন্নয়ন যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনীয় সুবিদাধি; কম্পিউটার সরঞ্জাম, কমিউনিকেশন সরঞ্জাম, স্থানান্তরযোগ্য প্রচার সরঞ্জাম ও অন্যান্য সরঞ্জাম; হিসাব ও যোগাযোগ সেবা; জনবল, তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং বস্তুগত নয় এমন সম্পদ।

তথ্যের গোপনীয়তা, শুদ্ধতা ও সহজলভ্যতা ভঙ্গ হলে প্রতিষ্ঠান কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মাধ্যমে বুঝা যায় ওই প্রতিষ্ঠানে তথ্য সম্পদের কতখানি মূল্য রাখে। প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য ক্ষতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আর্থিক ক্ষতি, রাজস্ব ঘাটতি, সেবা প্রদানবিষয়ক বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থতা বা সুনামহানি। নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতার পরোক্ষ ফলাফলও বিবেচনা করতে হবে। তথ্য সম্পদের মূল্য নিরূপণের ভিত্তি হলো : তথ্য সম্পদের গোপনীয়তা; তথ্য সম্পদের শুদ্ধতা; তথ্য সম্পদের প্রামাণ্যতা; অনস্বীকৃতি এবং তথ্য সম্পদের সহজলভ্যতা।

ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায় ৫ সতর্কতা

১. বিনা মূল্যের ওয়াই-ফাই ব্যবহার

সর্বসাধারণের জন্য বিনা মূল্যে ব্যবহারের ওয়াই-ফাই সাধারণত নিরাপদ হয় না। হ্যাকার চাইলে এই নেটওয়ার্কে ডেটা আদান-প্রদানের সময় আপনার তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। মনে করুন, কোনো পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে ব্রাউজ করা কোনো ওয়েবসাইটে দেওয়া ই-মেইল, পাসওয়ার্ড কিংবা অন্য কোনো তথ্যে প্রবেশ করলেন। একই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে এমন তৃতীয় কোনো ব্যবহারকারীর কাছে ডেটা চলে যেতে পারে। এ জন্য খুব প্রয়োজন না হলে উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন নেটওয়ার্কটি নিরাপদ কি না।

২. ই-মেইলে অতি ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা

যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মধ্যে এখনো ই-মেইল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ই-মেইল পাঠানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন ঠিকানা ঠিক আছে কি না। ব্যক্তিগত তথ্য পাঠানো কিংবা সংযুক্তি যোগ করার আগে তাই সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।

৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অবাধ ব্যবহার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপনি আপনার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ভাগাভাগি করে থাকেন। আপনার গোপনীয়তা রক্ষার সেটিংস এবং নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা জোরদার হওয়ার পরও আপনার শেয়ার করা ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কারও হাতে যেতে পারে। ফলে সাইবার অপরাধীরা আপনার অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দিতে পারে, যা আপনার ভার্চ্যুয়াল পরিচিতি কিংবা ব্যক্তিগত জীবন বিপদের মুখে ফেলে দেবে।

৪. না বুঝে অনলাইন ফরম পূরণ করা

আজকাল অনেক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হলে কিছু ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ করতে হয়। বেশির ভাগ তথ্য ওয়েবসাইটে ব্যবহারের প্রয়োজনে হলেও তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করাই ভালো। ওয়েবসাইটে তথ্য প্রদান করার আগে তাদের গোপনীয়তার নীতি পড়ে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার দেওয়া তথ্যগুলো কী কী কাজে ব্যবহার করা হবে!

৫. দুর্বল ও সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা

জটিল পাসওয়ার্ড মনে রাখা কিছুটা কঠিন বলে অনেকেই সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। এতে আপনার তথ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তাই বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্নের সমন্বয়ে তৈরি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্য ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে কিছুদিন পরপর পুরোনো পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।

প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

একটি সাইবার সিকিউরিটি আইনের লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল সিস্টেমস, নেটওয়ার্ক ও তথ্যের নিরাপত্তা প্রদান এবং অনলাইন হুমকি থেকে দেশ, প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে রক্ষা করা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন সর্বপ্রথম প্রণীত হয়।প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ বাংলাদেশের জনগণকে অনলাইন নিরাপত্তা প্রদানে একটি অন্যতম প্রধান আইন হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। আইনটির আন্তর্জাতিক মান সম্পন্নতা যাচাইয়ে অন্যান্য দেশের আইনের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রয়োজন

তথ্য-প্রযুক্তির পরিধি বর্তমানে অত্যন্ত ব্যাপক। এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি ও তার প্রতিরোধের বিভিন্ন দিকগুলো ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী একটি দেশে একের অধিক আইনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। উদ্দেশ্য অনুযায়ী এদের মূলত ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো:

১. ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা

২. কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও কম্পিউটার সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ নিষিদ্ধকরণ

৩. বিভিন্ন সংস্থার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও তার নিরাপত্তাজনিত নীতিমালা প্রণয়ন ও তদারকি

তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা হলো ‘CIA Triad’| Confidentiality, Integrity, Availability

তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা হলো ‘CIA Triad’| Confidentiality, Integrity, Availability  : এই তিনের সমন্বয়ে তৈরি কোনো একটি সংস্থার তথ্য সুরক্ষার জন্য নির্দেশনাকে বলা হচ্ছে ‘সিআইএ’ ত্রয়ী। গোপনীয়তা নিশ্চিত করার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীর আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, ডেটা এনক্রিপশন (Data encryption), টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (Two factors authentication) এবং সংবেদনশীল তথ্যের ব্যবহার বা প্রকাশ যথাসম্ভব হ্রাস করা। অখণ্ডতা হচ্ছে তথ্যের বিশুদ্ধতা। দুর্ঘটনাজনিত ডেটা পরিবর্তন রোধ করতে ভার্সন কন্ট্রোল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো ডেটা যদি অনাকাক্সিক্ষতভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়, তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য ডেটার ব্যাকআপ অবশ্যই থাকতে হবে।

ডেটা একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরের সময় এর অখ-তা বা বিশুদ্ধতা যাচাই করার জন্য চেকসাম হ্যাশিং (Checksum hashing) নামের পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাপ্যতা হচ্ছে প্রয়োজনের সময় অনুমোদিত ব্যবহারকারীরা যাতে নেটওয়ার্ক এবং ডেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন তা নিশ্চিত করা। ডেটার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। যেমন যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি ঠিকঠাক রাখা, প্রয়োজনে হার্ডওয়্যার মেরামত সম্পাদন করা, অপারেটিং সিস্টেম এবং সফটওয়্যার আপ-টু-ডেট রাখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যাকআপ তৈরি করা। মানবসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সম্পূর্ণ সিস্টেমটিকে পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি পূর্ব থেকেই যথাসম্ভব নিয়ে রাখা উচিত।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে জানুন-নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

দীর্ঘ আলোচনা সমালোচনার পর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস হয়েছে। বিভিন্ন মহলের প্রস্তাব, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, সমালোচনা, দাবি-দাওয়া সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সরকার অবশেষে এই আইনটি পাস করেছে।অনেকে এই আইনটিকে কালো আইন হিসেবে গণ্য করছেন। কালো আইন বা সাদা আইন যে নামেই আইনটিকে নামকরণ করা হোক না কেন, আইনটি যেহেতু জাতীয় সংসদে পাস হয়ে গিয়েছে সেহেতু আমরা সবাই এখন এই আইনের অধীন। আইনের বিধি বিধান মানতে আমরা বাধ্য।

এই আইনে এমন কিছু বিধান আছে যা না জানলে আপনার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ইতোপূর্বে যেসকল বিষয় আপনি নির্বিঘ্নে লিখতে পারতেন বা শেয়ার করতে পারতেন বা পোস্ট করতে পারতেন তা এখন আর করতে পারবেন না। এছাড়া এখানে আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও আইনটিতে কিছু বিধি বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তাই আইনটি সম্পর্কে জেনে আপনার নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করুন।

ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনীতি

১৯৮১ সালে ইউরোপের বৃহৎ সংগঠন 'কাউন্সিল অব ইউরোপ'-এ কনভেনশন ১০৮ স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে বিশ্বে প্রথম ডেটা প্রাইভেসি ডে বা তথ্য সুরক্ষা দিবস উদযাপন শুরু হয়। বাংলাদেশেও ২৮ জানুয়ারি এই দিবস বহুদিন ধরে পালন হয়ে আসছে। ইউরোপে নাগরিকদের তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে জেনারেল ডেটা প্রটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর) করা হয়েছে। এটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহারে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা কমিয়ে আনার চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই নীতিমালার অধীনে আইন মেনেই ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারিবারিক তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তার ব্যক্তিগত সহকারী মেডেলিন ওয়েস্টারহাউটকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা'র বিরুদ্ধে ফেসবুকের প্রায় আট কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ‘চুরি’র অভিযোগ ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন সেটির তদন্তের পর ফেসবুককে ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা করে। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার ‘চুরি করা’ এই তথ্য ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে এবং ব্রিটেনের ব্রেক্সিট গণভোটে প্রভাব বিস্তারের কাজে ব্যবহার করা হয়।

জাতীয় স্বার্থে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার গুরুত্ব

উদাহরণটা ফোনালাপ দিয়ে দিলে সুবিধা হবে। প্রায়ই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার সংবাদ আসে গণমাধ্যমে। প্রশ্ন ওঠে এগুলো কীভাবে ফাঁস হয়? নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে মানুষ নিজেদের দূরালাপনের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ব্যবসায়িক নীতির দিক থেকে গ্রাহকের ব্যক্তিগত আলাপের সুরক্ষা ওই কোম্পানি নিশ্চিত করাই স্বাভাবিক। এর ব্যতিক্রম হলে গ্রাহকের কাছে তারা দায়বদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে সেটির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে ইন্টারনেট সুবিধায় হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারসহ বিভিন্ন বিদেশি অ্যাপ ব্যবহার করছে।

সব ধরনের প্রযুক্তিরই নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে এবং সাইবার দুর্বৃত্তরা তা কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বিদেশি অ্যাপসগুলোর নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতেই। যেসব অ্যাপস আমরা বিনামূল্যে ব্যবহার করছি সেগুলো প্রকৃতপক্ষে কতটা ‘বিনামূল্যে’? যেকোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করার সময় আমরা কিছু শর্তে সম্মতি দিতেই হয়। সেখানে আপনার আলাপনের তথ্য (অডিও, ভিডিও, লেখা) রেকর্ড করে রাখার অনুমতি এবং কীভাবে কোন ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করতে পারে সব বিষয় উল্লেখ থাকে।

বায়োমেট্রিক তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

জরিপে অংশ নেয়া ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি সাইবার হামলাকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং কিংবা সাইবার হামলার ঘটনা বাড়ছে বলে জানিয়েছে ক্যাসপারস্কি।প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সাইবার হামলায় আক্রান্ত বায়োমেট্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫ দশমিক ৪ শতাংশের কম্পিউটার সিস্টেম ও নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় ট্রোজান ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ফিশিং ম্যালওয়ার দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। র্যানসমওয়্যার হামলার শিকার হয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

যত দিন যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী বায়োমেট্রিক তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ততই বাড়ছে। মস্কোভিত্তিক অ্যান্টিভাইরাস সরবরাহকারী ও সাইবার সিকিউরিটি-বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হ্যাকারদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে কার্যক্রম চালাচ্ছে, এমন প্রতি তিনটি বায়োমেট্রিক ফার্মের মধ্যে একটি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোয় বায়োমেট্রিক তথ্যের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। খবর এনডিটিভি ও গ্যাজেটস নাউ।

জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না করে ভিভিআইপিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিজিআরকে নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

ঢাকা, ৪ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নয় বরং জনসম্পৃক্ততা অব্যাহত রেখে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিভিআইপি) সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিজিআরকে নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনবিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির বর্তমান যুগে ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পিজিআরকেও তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত উৎকর্ষ অর্জন করার উপদেশ দেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, পিজিআর এর প্রতিটি সদস্যকে হতে হবে আরও চৌকস ও দক্ষ, যাতে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে পারেন।দায়িত্বের গুরুত্ব ও পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে পিজিআরের সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে, রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আগামীতেও দায়িত্বের ব্যাপকতা বিবেচনা করে এই রেজিমেন্টকে আরও সুসংহত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’রাষ্ট্র প্রধান আশা করেন যে, পিজিআর সদস্যরা ‘চেইন অব কমান্ড’ এর প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল থেকে তাদের উপর অর্পিত নিজ নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন।প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের মান ও স্বকীয়তা বজায় রেখে রেজিমেন্টের অর্জিত গৌরব সমুন্নত রাখতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।


তথ্যসুত্র

 ডিজিটাল দুনিয়ায় এসে খেই হারিয়ে ফেলেন, Dhakapost.

 নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, Bssnews.

বায়োমেট্রিক তথ্যের নিরাপত্তা , bonikbarta.

তথ্যই প্রযুক্তির জ্বালানি, Dhakatimes24.

 নিরাপত্তা আইন, legalvoicebd.

তথ্য নিরাপত্তা , Bissoy.

ডিজিটাল তথ্যের ব্যবহার, Deshrupantor.

তথ্য-প্রযুক্তির পরিধি , bangla.Thedailystar.

ব্যক্তিগত তথ্য পাঠানো, Prothomalo.

তথ্য একটি সংস্থার সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ, Dailynayadiganta.