ডায়াবেটিস (Diabetes)

ডায়াবেটিস (Diabetes)

ডায়াবেটিস হল শরীরের এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যখন আমাদের শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন দক্ষতার সঙ্গে (কার্যকরভাবে) ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। ইনসুলিন মানুষের শরীরের কোষগুলি তে শর্করা প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করে

ডায়াবেটিস কী?

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে।শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে।

ডায়াবেটিস কত ধরনের?

ডায়াবেটিস ৪ ধরনের হয়ে থাকে- টাইপ-১, টাইপ-২, জেস্টেশনাল ও অন্যান্য। টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শরীরের সব ইনসুলিন নষ্ট হয়ে যায়। তাদের যদি আলাদা করে ইনসুলিন দেওয়া না হয়, তাহলে তারা মারা যেতে পারেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ১০ শতাংশ এই টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত।অন্যদিকে যাদের শরীরে ইনসুলিন আছে, কিন্তু সেটা কাজ করতে পারছে না। তখন আমরা যে খাবারই খাই, সেটা গ্লুকোজ হিসেবে শরীরে জমে যায়। এটেই হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিস কেন হয়?

ব্যায়াম না করা: টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ হল শারীরিকভাবে নিস্ক্রিয় থাকা অর্থাৎ ব্যায়াম না করা।মানসিক চাপ: যে সকল কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস হয় তার মধ্যে একটি হল অত্যধিক মানসিক চাপ। পারিবারিক জটিলতা, অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় ,পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া: আমাদের দৈনন্দিন পরিশ্রমের পর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউণ্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঘুম কম হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।রাতে বেশি খাওয়া: গবেষণা বলছে, রাতে বেশি খাওয়া, খাবার পর পরই ঘুমাতে যাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।সকালের নাস্তা না খাওয়া: সকালের নাস্তা দিনের খাবারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ডায়াবেটিস রোগী সকালের নাস্তা এড়িয়ে যান তাদের রক্ত শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।চাইনিজ খাবার: চাইনিজ খাবারে রয়েছে অনেক বেশি ফ্যাট, ক্যালরি, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রেট। যা দেহের সুগারের মাত্রা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে অরেঞ্জ, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার ধরণের খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।

ডায়বেটিসের জন্য খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন পদ্ধতি কতটা দায়ী?

অত্যন্ত বেশি দায়ী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারী আকারে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে। অনেক লোকের একসাথে হলে তাকে মহামারী বলা হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। জীবনযাপন পদ্ধতির পরবির্তনের কারণে যাদের ৭০ বছরে হওয়ার কথা, তাদের ৩০ বছরেই হচ্ছে। মুটিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, শুধু বসে বসে কাজ করা, শরীরচর্চা-পরিশ্রম ও খেলাধুলা না করার কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপ মানুষের ডায়াবেটিস বাড়ায় কি না, সে বিষয়ে কোনো গবেষণা করা হয়নি। তবে আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ডায়াবেটিস হওয়ার একটা কারণ হতে পারে। ঘুমের সাথে কেউ কেউ ডায়াবেটিসের সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন। তা হলো কম ঘুমানো। মানুষের অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাবারে শাকসবজির গুরুত্ব অপরিসীম

ডায়াবেটিস রোগীর খাবারে শাকসবজির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। সারা বছরই এ দেশে নানা ধরনের শাকসবজি উৎপাদন হয়। প্রকৃতির এই নেয়ামতকে বিজ্ঞানসম্মত কাজে লাগিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রতিরোধ করা যায়। ডায়াবেটিস রোগীর সুবিধার জন্য শাকসবজিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

১। শর্করা সম্বলিত সবজি যেমন- আলু, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা কলা, বরবটি, থোড়, মোচা, বিট, শিম, মাটির নীচের কচু, গাজর, কাঁকরোল, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, শালগম, ইঁচড়, ঢেঁড়স, বেগুন, মটর শুঁটি, কচুরমুখী, পাকা টমেটো।

২। শর্করাবিহীন শাকসবজি যেমন- সব ধরনের শাক, যেমনÑ লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক, কচুশাক ইত্যাদি এবং সবজি যেমন  ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, কাঁচা টমেটো, কাঁচা পেপে, শসা, খিরা, উচ্ছে, করলা, ঝিঙা, চিচিঙা, পটোল, লাউ, চালকুমড়া, ডাঁটা, সজনা, ধন্দুল, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ, মাশরুম ইত্যাদি।

উপরোক্ত শাকসবজিগুলো প্রতিটি মৌসুমেই কোনটা না কোনটা উৎপাদিত হয়। ডায়াবেটিস রোগীর উচিত প্রতি দিন একই ধরনের শাকসবজি না খেয়ে পাঁচ মিশালী শাকসবজি খাওয়া। এতে করে সব ধরনের শাকসবজির ভিটামিন মিনারেলস শরীরের কাজে লাগবে, খাবারে বৈচিত্র্য আসবে, পেট ভরবে, মনে পরিতৃপ্তি আসবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। বীজ যেমন- পরিবেশ পেলে গজিয়ে উঠে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও তেমনই নানা ধরনের রোগ হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে হার্ট, কিডনি, লিভার, চোখ নষ্ট হয়ে যায়, নানা রকম ক্যান্সার হতে পারে, এমনকি শরীরের মাংসেও পচন ধরতে পারে। গর্ভকালীন সময়েও নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, গর্ভস্থ শিশু মৃত এবং প্রতিবন্ধী হতে পারে, অর্থাৎ ডায়াবেটিস, এহেনও কোনো রোগ বা জটিলতা নেই যেটা জন্মাতে সাহায্য করে না। আল্লাহ তায়ালা শাকসবজির ভেতর এতই নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন যে সারা বছর যেসব শাকসবজি পাওয়া যায় তা দিয়েই এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

প্রতি দিনের খাবারে আঁশযুক্ত শাকসবজি থাকতে হবে

প্রতি দিনের খাবারে আঁশযুক্ত শাকসবজি থাকতে হবে। বিভিন্ন প্রকার শাক, তরি-তরকারি যেমন শিম, বরবটি, মাশরুম, লাউ, কুমড়া, গাজর, কাঁচা কলা, ডাঁটা এগুলোর বাইরের আবরণ হচ্ছে সেলুলোজ, একে আঁশ ও বলা যায়। এগুলো হজম হয় না, রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে দেয় না, ওজনও বাড়ায় না। এগুলো খাদ্যনালীর আর্দ্রতা পরিশোষণ করে ক্ষুদ্রান্ত্র পার হয়ে মলের সাথে বৃহদন্ত্রে¿ উপস্থিত হয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং মলত্যাগে সাহায্য করে। সুতরাং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য এমন কি কোলন ক্যান্সারও দূর করে। রক্তস্বল্পতায় শাকসবজির গুরুত্ব অনেক। পালংশাক, লালশাক, পিয়াজ, গাজর, মুলা, বিট, মিষ্টি আলু, টমেটো, খোসাসহ আলু, কচুশাক, লেটুস পাতা, শিম, বরবটি ইত্যাদিতে লৌহ ও ফলিক এসিড রয়েছে। সবজির মধ্যে বীট রক্তশূন্যতা রোধে খুবই উপকারী। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সালফার, আয়োডিন, লৌহ, কপার, ভিটামিন বি-২, বি-৬, বি-১২ এবং ভিটামিন সি। উচ্চমানের লৌহের জন্য এটি রক্তের লোহিত কণিকা সক্রিয় করতে ও উৎপাদন করতে সাহায্য করে। দেহে ফ্রেশ অক্সিজেন সরবরাহও করে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যেটা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। নায়াসিন কোলস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটা পাওয়া যায় আঁশযুক্ত সবুজ শাক সবজি, খোসাসহ আলুতে। তাছাড়া কাঁচা রসুনও খাওয়া যেতে পারে।   

ইনসুলিনের ১০০ বছরঃ ডায়াবেটিস রুগীদের জন্য নতুনত্বের শতাব্দী

যখন ডায়াবেটিসের কথা বলা হয়, আজকাল বেশিরভাগ মানুষের মনে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে সেটি হলে মৌখিক চিকিৎসা । তবে আপনি কি জানেন  যে এই উপকারী ইনসুলিনটি ডায়াবেটিস রোগীদের জীবন  দীর্ঘায়িত করা প্রথম সফল ঔষধ? ডায়াবেটিস ঔষদের অত্যাধুনিক অগ্রগতিতে  ইনসুলিন তাদের সময় বিলাসিতায় উন্নতির জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য।ইনসুলিন হরমোনটি অগ্ন্যাশয় থেকে নিসৃত হয় ।এটি দেহের ব্যবহারের জন্য শর্করাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । বিভিন্ন ধরণের ইনসুলিনজনিত ব্যাধির কারনে বিভিন্ন ধরণের ডায়াবেটিসের সৃষ্টি হয়ঃ-

১.ডায়াবেটিস টাইপ ১,সাধারণত এটি শিশুদের মধ্য দেখা যায় এটি তখনই ঘটে যখন দেহ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না ।২. ডায়াবেটিস টাইপ ২,সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত ওজনের  প্রাপ্তবয়স্কের দের মধ্য দেখা যায়,এটি ঘটে যখন দেহ ঠিকমত ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না ।৩.গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভকালীন মহিলাদের মধ্য দেখা যায়, প্লাসেন্টাল হরমোনের কারণে ইনসুলিনের মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে শরীর তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না ।

১৯২২ সালের জানুয়ারিতে  এই বিজ্ঞানীদের চেষ্টার উদ্দীপনা ছিলো ১৪ বছর বয়সী লিওনার্ড থম্পসন,যার জীবনে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিলো, যিনি ডায়াবেটিসের কঠিন অবস্থায় ছিলেন এবং তার অবস্থাও গুরুতর ছিলো । পরিশোধিত ইনসুলিন প্রথম ডোজ পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্য তার রক্তে শর্করার মাত্রা আকাশ চুম্বি ৫২০মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এরপর তা মাত্র ১২০মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারে নেমে যায় ।চাক্ষুস তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিলো,তিনি ইনসুলিন গ্রহন চালিয়ে গিয়েছেন এবং বেঁচে ছিলেন ।  ইনসুলিনের জন্য লিওনার্ড থম্পসনের মৃত্যুর দ্বার থেকে বেঁচে আসাটা বিশ্বজুড়ে সমস্ত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠে ।

১৯৮২ সাল থেকে ইনসুলিনের উৎপাদনের জন্য আর প্রাণীর উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় নি । জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অগ্রগতির ফলে ব্যাক্টেরিয়া থেকে মানব ইনসুলিন উৎপাদন সম্ভব হয়েছে । ১৯৮৫ সালে ইনসুলিন পেন আবিষ্কার করা হয়েছিলো, কার্যকারিতার অপরিহার্য্য উন্নতি, সুবিধাসমূহ, এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনের চূড়ান্ত নিশ্চয়তা ।১৯৯৭ সালের দিকে  ইনসুলিনের পুরাতন আবিষ্কার গুলো মানব দেহের উপযোগী অনুয়ায়ী পরিবর্তিত হয়ে আসে । এটি ডায়াবেটিস রোগীদের এবং তাদের পরিবারের জন্য তাদের নিজস্ব দৈনিক সময়সূচী এবং ক্রিয়াকলাপ অনুসারে ইনসুলিন গ্রহণের উপযোগী করে তাদের জীবনমানকে আরও উন্নত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ইনসুলিন ১০০ বছরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমান অবস্থায় আসেছে ।

ডায়াবেটিস চোখের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং দৃষ্টি সমস্যা হতে পারে

ডায়াবেটিক রেটিনা ক্ষয় ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগীদের মধ্যে একটি রেটিনা ব্যাধি দেখা যায়। এটি রেটিনার মধ্যে ছোট রক্তনালীগুলিকে প্রভাবিত করে যার ফলে রেটিনার মধ্যে রক্তপাত এবং ফুলে যায়। উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রার মতো সংশ্লিষ্ট অবস্থা আরও খারাপ করে রেটিনা রোগ. ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে অন্ধত্ব হতে পারে।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে তা তীব্রতায় অগ্রসর হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। রোগের শেষ পর্যায়ে, রোগীর দৃষ্টি ঝাপসা, পিঠের দাগ ইত্যাদি অনুভব করতে পারে। তাই প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিত্সার জন্য চোখের পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।আসুন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ব্যবস্থাপনা বুঝতে পারি যা একক মূল নির্ধারক। ডায়াবেটিসের চমৎকার নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসর প্রথম ধাপ। 3 মাসের গড় চিনির মাত্রা অর্থাৎ HbA1c মাত্রা <7 হল ভাল নিয়ন্ত্রণের একটি অপরিহার্য নির্ধারক। ডায়াবেটিস ছাড়াও, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং নেফ্রোপ্যাথির মতো অন্যান্য রোগগুলিকে আরও অগ্রগতি রোধ করতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ডায়াবেটিক রোগী অসুস্থ হলে কী করবেন

জ্বর, বমি, ডায়রিয়া বা যেকোনো অসুস্থতায় অন্যদের তুলনায় একজন ডায়াবেটিক রোগীর পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিগুলো হলো, রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে বা কমে যাওয়া এবং পানিশূন্যতা। অসুস্থ হলে প্রথমেই ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কেমন আছে, সেটা আগে দেখে নিতে হবে।রক্তে শর্করা যদি বেশি হয় (১১ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি) তাহলে সতর্ক থাকতে হবে, যেন পানিশূন্যতা না হয়। প্রচুর পানি পান করাতে হবে, প্রয়োজন হলে হাসপাতালে গিয়ে নরমাল স্যালাইন দিতে হবে। স্যালাইনের গতি কেমন হবে, তা রোগীর রক্তচাপ, ইসিজি বা ক্রিয়েটিনিন না জেনে বাসায় কখনো দেওয়া উচিত নয়।

আর যদি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৪ মিলিমোল/লিটারের কম হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন সাময়িকভাবে বন্ধ বা কমিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে রোগীকে গ্লুকোজ বা চিনি গুলিয়ে শরবত খাওয়াতে হবে। রোগী যদি মুখে খেতে না পারেন বা যদি অচেতন হয়ে যান, তাহলে মুখে কিছু জোর করে খাওয়াতে যাবেন না। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিন। শিরায় গ্লুকোজ স্যালাইন দিয়ে আবার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। প্রয়োজন হলে দুই-তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হবে।

বাড়িতে যাঁরা আছেন, তাঁরা লক্ষ করুন, দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করে এমন কোনো ওষুধ তিনি নিচ্ছেন কি না। গ্লিক্লাজাইড, গ্লিবেনক্লামাইড, গ্লিমেপিরাইড এ ধরনের ওষুধ বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। বমি ডায়রিয়া হলে মেটফরমিন ওষুধটিও এ সময় বন্ধ করতে হবে। পানিশূন্যতা হতে পারে বলে অসুস্থতার সময় এম্পাগ্লিফ্লোজিন জাতীয় ওষুধও বন্ধ করতে হবে। অসুস্থ অবস্থায় স্বল্পমেয়াদি ইনসুলিন সবচেয়ে ভালো।

ডায়াবেটিস এর খাবারের তালিকা

আসুন জেনে রাখি ডায়াবেটিস এর খাবারের তালিকায় আপনি কি কম খাবেন কি খাবার ইচ্ছা খুশী মতো খেতে পারবেন।

১. শক্তি প্রদানকারী খাদ্য (ক্যালরি হিসেবে) : প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২৫-৩০ কিলোক্যালরি/প্রতিদিন। যাদের দৈহিক স্থূলতা আছে (বিএমআই ২৫-এর বেশি) তাদের জন্য ৩৫ কিলোক্যালরির কম।

২. শর্করা জাতীয় খাদ্য: মোট শক্তির ৫৫%-৬০% শর্করা থেকে আসতে হবে। এর প্রধান উৎস হতে পারে ভাত, রুটি, ডাল, মাছ-মাংস ও শিম ইত্যাদি। পরিশোধিত শর্করা যেমন- চিনি, মধু, ময়দা, গুড়, মিছরি, বেকারির তৈরি বিভিন্ন রকম খাদ্যদ্রব্য-পাউরুটি, কেক, বিস্কিট ইত্যাদি ও তেলে ভাজা খাবার-যতটা সম্ভব ত্যাগ করতে হবে।

৩. আমিষ জাতীয় খাদ্য: প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৮ গ্রাম করে আমিষ প্রতিদিন খেতে হবে। গর্ভধারণ ও বাচ্চাকে স্তন্যদানের সময় এর পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে হবে (১২ গ্রাম/কেজি/দিন)। মাছ সবচেয়ে ভাল। তারপর মাংশ (বিশেষত মুরগির। দই ও দুধ খাবেন নিয়মিত। লাল মাংশ (গরু, খাসির মাংশ) বর্জন করাই উত্তম।

৪. চর্বি জাতীয় খাদ্য: প্রতিদিনের মোট প্রয়োজনীয় ক্যালরির ২০%-২৫% চর্বি থেকে আসলে ভাল। এর উৎস হতে পারে রান্নার তেল, ঘি, ডিম ইত্যাদি। তবে অসমসত্ব চর্বি (আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট) খাবার দিকে বেশি আগ্রহ থাকতে হবে। রান্নার তেল ও মাখন মিলিয়ে একজন ডায়াবেটিস রোগী মাসে ৭৫০ গ্রাম তেল খাবেন। বাদাম তেল, শর্ষের তেল ও সয়াবিন তেল-সব ধরনের তেলই মিলিয়ে মিশিয়ে খেতে হবে। সপ্তাহে ৩-৪ চামচ ঘি খাওয়া যেতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগী দ্রুত হাঁটলে যে উপকার পাবেন

স্বাভাবিক সময়ে আমরা যে গতিতে হাঁটি তারচেয়ে বেশি গতিতে বা হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে তোলে এমন গতিতে হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছে নতুন এই গবেষণা। আপনি দ্রুত গতিতে হাঁটছেন কি না, তা নির্ধারণ করার একটি ভালো উপায় হলো প্রতি মিনিটে ১০০ কদম গণনা করা এবং হাঁটার সময় কথা বলতে পারলেও গান গাইতে পারবেন না—বিষয়টি পরীক্ষা করা


তথ্যসুত্র

কি কারণে ডায়াবেটিস হয়, Rtv Online.

কার্যকর একটি ব্যায়াম হচ্ছে , হাঁটা, Bangla.The Daily Star.Net.

ডায়াবেটিস কে বহুমূত্র রোগ বলা হয়, Detective.Police.

সতর্ক থাকতে হবে, Prothomalo.

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি যদি চিকিত্সা, Dragarwal.

ইনসুলিনের উৎপাদন, Bumrungrad.

ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি বিপাকে ত্রুটিজনিত রোগ, Ais.Gov.BD.

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে , Dhakaeyecarehospital.

ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, Jago News24.

Subscribe for Daily Newsletter