বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু (The national game of Bangladesh; Ha Doo Doo)

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা  হা-ডু-ডু  (The national game of Bangladesh; Ha Doo Doo)



বাংলাদেশের জাতীয় খেলার নাম যে হা-ডু-ডু এ তথ্য আমাদের প্রায় সবারই জানা। তবে এ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো খেলাটি কখনো দেখেই নি। বিশেষ করে যাদের জন্ম শহরে এবং সেখানেই বেড়ে উঠেছে, গ্রামের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ একেবারেই নেই, তাদের ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর দেখে থাকলেও সেটি হয়েছে টেলিভিশনের কল্যাণে। টিভিতে খেলার খবরে এক ঝলক দেখেছো হয়তো। অবশ্য সেটি তোমাদের দোষ নয়, এটি আমাদের ব্যর্থতা।

হা-ডু-ডু জাতীয় খেলা হলেও সেটিকে আমরা জনপ্রিয় করতে পারিনি। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি’র মতো ভিনদেশি খেলার দাপটে বেচারা হা-ডু-ডু বড়ই কোনঠাসা।এক সময় গ্রামীণ জনপদে হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্ধা, মোরগের লড়াই, গোল্লারছুট এর মতো খেলাগুলো ছিল বিনোদন ও আনন্দ-উৎসবের অন্যতম বড় উপাদান। পড়াশোনা ও কাজের বাইরে এসব খেলায় মেতে থেকে শিশু-কিশোর-যুবারা সময় কাটাতো পরম আনন্দে। এখন গ্রামেও বিনোদন ও সময় কাটানোর প্রধান সম্বল হয়ে উঠেছে টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। আয়েশ ভর করছে তাদের মধ্যেও। শারীরিক শ্রমের খেলা তাদের আর টানে না। অন্যদিকে শহরের পরিবেশই হা-ডু-ডু’কে পরদেশি করে রেখেছে।

হা-ডু-ডু আর কাবাডি কী একই খেলা?

বইপুস্তক পড়ে অনেকেই আমাদের জাতীয় খেলা কোনটি তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। কোনো বইয়ে লেখা হা-ডু-ডু। আবার কোনো বইয়ে লেখা কাবাডি। মজার বিষয় হচ্ছে দুটো তথ্যই ঠিক। একটিও ভুল নয়। কারণ দুটোই যে একই খেলার ভিন্নতর নাম। যেমন গাছের আরেক নাম বৃক্ষ; বাঘের অপর নাম শার্দুল।তবে হা-ডু-ডু এবং কাবাডির মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্যও আছে। কাবাডি হচ্ছে হা-ডু-ডু’র একটু পরিমার্জিত রূপ। কাবাডি খেলার কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে, যা সারা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু হা-ডু-ডু একেক অঞ্চলে একেক নিয়মে খেলা হয়।

হা-ডু-ডু’র ইতিহাস

হা-ডু-ডু খেলা এই অঞ্চলে কবে থেকে শুরু হয়েছে, তার কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। তবে হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এই ধরনের খেলা চলে আসছে এই বাংলায় এবং ভারতীয় উপ-মহাদেশে।

হা-ডু-ডু থেকে কাবাডি

জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ১৯৭২ সালে হা-ডু-ডু খেলাকে কাবাডি নামকরণ করা হয়। একই সময়ে এ খেলাকে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। কাবাডির জন্য চুড়ান্ত করা হয় কিছু নিয়মকানুন।

হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলার ধরন

সাধারণত হা-ডু-ডু খেলার মাঠের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপ থাকে। খেলায় অংশগ্রহণকারীরা যে জায়গায় খেলা হবে তার আকার বিবেচনায় নিয়ে নিজেরা আলোচনা করে চারদিকে দাগ দিয়ে খেলার মাঠের সীমানা ঠিক করে নেয়। তবে পরিমাণের দিক থেকে মাঠ যত বড়-ছোটোই হোক না কেনো, এর আকৃতি হয় আয়তাকার। মাঝখানে দাগ দিয়ে মাঠকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিভাগে একেকটি দল অবস্থান নেয়। অন্যদিকে কাবাডি মাঠের আকার হয় দৈর্ঘ্যে ১২.৫০ মিটার, প্রস্থে ১০ মিটার।নিয়ম অনুসারে, এক পক্ষের একজন খেলোয়াড় অপর পক্ষের কোর্টে হানা দেয়। এ সময় সে শ্রুতিগোচরভাবে হা-ডু-ডু, হা-ডু-ডু বা কাবাডি কাবাডি কাবাডি শব্দ করতে করতে অন্য ওই পক্ষের যে কোনো একজন খেলোয়ারকে ছুঁয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করে। ওই পক্ষের চেষ্টা থাকে সবাই মিলে তাকে জাপটে ধরে আটকে রাখা। যদি ওই খেলোয়াড় দম ধরে রেখে নিজ কোর্টে ফিরে আসতে পারে, তাহলে তার দল পয়েন্ট পায়। আর যদি আটকে থাকা সময়ের মধ্যে খেলোয়াড়টির দম ফুরিয়ে যায়, তাহলে বিপক্ষ দল পয়েন্ট পায়।


কেনো হা-ডু-ডু, কাবাডির প্রচলন

কেনো বা কীভাবে খেলা হিসেবে হা-ডু-ডু বা কাবাডির প্রচলন হয়েছিল, তার কোনো ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায় না। নৃবিজ্ঞানীরাও এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মতামত দেননি। তবে ধারণা করা হয়, প্রাগৈতিহাসিক যুগে এক গোত্রের মানুষ অন্য গোত্রের আস্তানায় হানা দিয়ে ধনসম্পদ, গবাদিপশু, এমনকি নারী ও শিশুকে লুট করে আনতো। শত্রুর আস্তানায় হানা দিয়ে নিরাপদে ফিরে আসার কৌশলের চর্চা ও নিজেদেরকে ফিট রাখার তাগিদ থেকে এমন খেলার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল ওই যুগের মানুষ।ব্যক্তি ও দলগতভাবে শত্রুপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেওয়া এবং সাথে সাথেই পাল্টা আক্রমণের কৌশল চর্চা করতে গিয়েই সম্ভবত এ খেলার উদ্ভব। এ খেলায় সফলতার শর্ত হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক ক্ষিপ্রতা, পেশীর ক্ষিপ্রতা, ফুসফুসের শক্তি ও সহনশীলতা, দ্রুত চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও তা প্রয়োগের সামর্থ। সেইসঙ্গে প্রতিপক্ষের কৌশল ও মনোভাব অনুধাবনের যোগ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ।

হা-ডু-ডু (কাবাডি) কেনো জাতীয় খেলা

হা-ডু-ডু বা কাবাডিকে কেনো জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, সরকারি কোনো দলিলে এর ব্যাখ্যা নেই। এমনকি এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া’তেও এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে এ খেলাকে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।গ্রামনির্ভর এই দেশে এক সময় ব্যাপকভাবে হা-ডু-ডু খেলার প্রচলন ছিল। গ্রামাঞ্চলে এটিই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় দলগত খেলা। শুধু স্বীকৃত খেলার মাঠ নয়, গ্রামের পাশের পতিত জমি, বালুচরসহ যে কোনো সুবিধাজনক জায়গায় দাগ দিয়ে কোর্ট বানিয়ে তরুণরা এই খেলা শুরু করে দিত। তরুণরা তখন খেলার পাশাপাশি এটিকে এক ধরনের শরীর চর্চা ও শক্তিমত্তার পরীক্ষা হিসেবে নিত। অন্যদিকে গ্রামবাসী দলবেঁধে এই খেলা উপভোগ করতো। দেশজুড়ে খেলাটির এই জনপ্রিয়তার কারণে এটিকে জাতীয় খেলার ময়াদা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।

অন্যদিকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতের সঙ্গেও এর মিল রয়েছে। পাকিস্তানীরা আমাদেরকে আক্রমণ করে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু বাঙালি জাতি পাল্টা আক্রমণ করে তাদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলার স্পিরিটের সঙ্গে এর একটি দারুণ সামঞ্জস্য আছে। এটিও খেলাটিকে জাতীয় খেলার মর্যাদায় অভিষিক্ত করার বিষয়ে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।

আধুনিকতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের পাতা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলা। ঘরে ঘরে ভিডিও গেমের প্রচলন এ গ্রাম-বাংলার ঐহিত্যবাহী খেলাধুলাগুলো আজ বিলুপ্তির পথে।শৈশবে যেসব খেলাধুলায় দিন কাটিয়েছেন আজকের বয়োবৃদ্ধরা,তারাও এখন ভুলতে বসেছেন সেসব খেলার নাম।এ দেশের জনপ্রিয় খেলাধুলার মধ্যে ছিল কানামাছি, দাড়িয়াবান্ধা, তাস, লুডু, ফুটবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি বা হাডুডু, লাটিম ইত্যাদি।এই খেলাগুলোর মধ্যে বর্তমানে ফুটবল খেলার কিছু প্রচলন থাকলেও প্রায় সবগুলো খেলা হারিয়ে গেছে।

সাধারণত হা-ডু-ডু খেলার মাঠের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপ থাকে। খেলায় অংশগ্রহণকারীরা যে জায়গায় খেলা হবে তার আকার বিবেচনায় নিয়ে নিজেরা আলোচনা করে চারদিকে দাগ দিয়ে খেলার মাঠের সীমানা ঠিক করে নেয়। তবে পরিমাণের দিক থেকে মাঠ যত বড়-ছোটোই হোক না কেনো, এর আকৃতি হয় আয়তাকার। মাঝখানে দাগ দিয়ে মাঠকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিভাগে একেকটি দল অবস্থান নেয়। অন্যদিকে কাবাডি মাঠের আকার হয় দৈর্ঘ্যে ১২.৫০ মিটার, প্রস্থে ১০ মিটার।নিয়ম অনুসারে, এক পক্ষের একজন খেলোয়াড় অপর পক্ষের কোর্টে হানা দেয়। এ সময় সে শ্রুতিগোচরভাবে হা-ডু-ডু, হা-ডু-ডু বা কাবাডি কাবাডি কাবাডি শব্দ করতে করতে অন্য ওই পক্ষের যে কোনো একজন খেলোয়ারকে ছুঁয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করে। ওই পক্ষের চেষ্টা থাকে সবাই মিলে তাকে জাপটে ধরে আটকে রাখা। যদি ওই খেলোয়াড় দম ধরে রেখে নিজ কোর্টে ফিরে আসতে পারে, তাহলে তার দল পয়েন্ট পায়। আর যদি আটকে থাকা সময়ের মধ্যে খেলোয়াড়টির দম ফুরিয়ে যায়, তাহলে বিপক্ষ দল পয়েন্ট পায়।

হাডুডু বা কাবাডি শুধু বাংলাদেশেরই জাতীয় খেলা নয়, প্রতিবেশী ভারতের ছয়টি রাজ্যের জাতীয় খেলা এটি। রাজ্যগুলো হলো: তামিলনাডু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার ও পাঞ্জাব। অবশ্য বিভিন্ন প্রদেশে খেলাটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। তামিলনাডুতে এ খেলাটি কাবাডি, সাডুগুডি, গুডুগুডু, পালিঞ্জাডুগুডু ও সাডুগুডাত্থি নামে পরিচিত।ব্যক্তি ও দলগতভাবে শত্রুপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেওয়া এবং সাথে সাথেই পাল্টা আক্রমণের কৌশল চর্চা করতে গিয়েই সম্ভবত এ খেলার উদ্ভব। এ খেলায় সফলতার শর্ত হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক ক্ষিপ্রতা, পেশীর ক্ষিপ্রতা, ফুসফুসের শক্তি ও সহনশীলতা, দ্রুত চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও তা প্রয়োগের সামর্থ। সেইসঙ্গে প্রতিপক্ষের কৌশল ও মনোভাব অনুধাবনের যোগ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ।

হাডুডু বা কাবাডি কেনো আমাদের জাতীয় খেলা?

হা-ডু-ডু বা কাবাডিকে কেনো জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, সরকারি কোনো দলিলে এর ব্যাখ্যা নেই। এমনকি এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া’তেও এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে এ খেলাকে জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।গ্রামনির্ভর এই দেশে এক সময় ব্যাপকভাবে হা-ডু-ডু খেলার প্রচলন ছিল। গ্রামাঞ্চলে এটিই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় দলগত খেলা। শুধু স্বীকৃত খেলার মাঠ নয়, গ্রামের পাশের পতিত জমি, বালুচরসহ যে কোনো সুবিধাজনক জায়গায় দাগ দিয়ে কোর্ট বানিয়ে তরুণরা এই খেলা শুরু করে দিত। তরুণরা তখন খেলার পাশাপাশি এটিকে এক ধরনের শরীর চর্চা ও শক্তিমত্তার পরীক্ষা হিসেবে নিত। অন্যদিকে গ্রামবাসী দলবেঁধে এই খেলা উপভোগ করতো। দেশজুড়ে খেলাটির এই জনপ্রিয়তার কারণে এটিকে জাতীয় খেলার ময়াদা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।

জাতীয় খেলা এমন একটি খেলা যা কোনো জাতির সংস্কৃতির একটি স্বকীয় অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু বা কাবাডি। হা-ডু-ডু বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। আন্তর্জাতিকভাবেও কাবাডি খেলার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে বিশেষ উৎসব, পালা-পার্বনে বেশ আড়ম্বরপূর্ণভাবে হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হয়। খেলোয়াড় এবং দর্শক উভয়ের জন্যই এ খেলা বেশ আনন্দদায়ক। আবহমানকাল থেকে এই খেলা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং সংস্কৃতির একটি স্বকীয় স্থান দখল করে আছে বলে হা-ডু-ডু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

হা-ডু-ডু খেলার উৎপত্তি ও পরিচয়:

হা-ডু-ডু খেলার উৎপত্তিস্থল কোনো জায়গায় তা সঠিকভাবে না জানা না গেলেও বাংলাদেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে এ খেলাটির প্রচলন নেই। তবে এই খেলাটির উৎপত্তিস্থল ফরিদপুর বলে ধরা হয়। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে এর নামের ভিন্নতা পাওয়া যায়। যেমন- কাবাডি, কাপাটি, হা-ডু-ডু, ছি-খেলা, ডু-ডু খেলা ইত্যাদি। প্রায় সব ঋতুতে হা-ডু-ডু খেলা যায়, তবে বর্ষায় এর জনপ্রিয়তা বেশি। কাদামাটিতে খেলোয়াড়দের যে রূপ ফুটে ওঠে তা সত্যিই উপভোগের মতো।

হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলার নিয়মাবলী:

মাঠঃ হা-ডু-ডু খেলায় বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার এবং চওড়ায় ১০ মিটার হয়। বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার ও চওড়ায় ৮ মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা ‘চড়াই লাইন’ বলা হয়। এই মধ্যরেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুইটি লাইন টানা হয় যাকে ‘কোল লাইন’ বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে ‘লবি লাইন’ বলা হয়।

সদস্যঃ সময়:

প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় এক সাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক ৩ জন খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যায়।৫ মিনিট বিরতিসহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হবে। খেলা শেষে যেই দল বেশি পয়েন্ট পাবে সেই দলই জয়ী হবে। দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে দুই অর্ধে আরো ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এর পরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।যদি কোনো খেলোয়াড় মাঠের বাহিরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা (অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলে কোনো খেলোয়াড়কে (একাধিক হতে পারে) স্পর্শ করে এক নিঃশ্বাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদেরকে সে স্পর্শ করবে তারাই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

সতর্কতা:

এক নিঃশ্বাসে স্পষ্টভাবে পুনঃ পুনঃ কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে ‘দম নেয়া’ বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে। আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে আটকাতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হা-ডু-ডু:

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের দুইজন কর্মকর্তা পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে ভারতীয় জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা দেখতে যান। দেশে ফিরে তারা ‘কাবাডি ফেডারেশন’ গঠন করেন। ১৯৭৪ সালে ‘এশিয়ান অ্যামেচার কাবাডি ফেডারেশন’ গঠিত হয়। ১৯৫০ সালে ভারতীয় জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে কাবাডি খেলার আইন কানুন প্রণিত হয়। ১৯৬০ এবং ১৯৬৬ সালে কাবাডি খেলার আইন সংশোধিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মরিশাস, মায়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকায় হা-ডু-ডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জাপান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানে এই খেলা শেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব হা-ডু-ডু বা কাবাডিতে বাংলাদেশের অবস্থান:

১৯৭৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কাবাডি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ১৯৯০ (বেইজিং) সিলভার, ১৯৯৪ সালে হিরোশিমা গেমসে সিলভার ও ১৯৯৮ সালে ব্যাংককে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। ‘দক্ষিণ এশীয় গেমস’-এ ১৯৮৫ সালে ২য় স্থান, ১৯৯৩ সালে ৩য় স্থান এবং ২০১০ সালে ৩য় স্থান অধিকার করে। এশিয়ান গেমসে মেয়েদের কাবাডি আন্তর্ভুক্ত হয় ২০১০ সালে (বেইজিং)। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের ছেলেদের অর্জন ৩ টি রূপা ও ৩ টি ব্রোঞ্জ। ২০১০ সালে ‘সাফ’ (বাংলাদেশ) কাবাডিতে বাংলাদেশ ছেলে এবং মেয়ে দুই বিভাগেই সোনা জেতে।

হা-ডু-ডু খেলার উপকারিতা ও অপকারিতা:

খেলাধুলা মানুষের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হা-ডু-ডুও একটি নির্মল আনন্দদায়ক খেলা। হা-ডু-ডু খেলার নিয়মকানুন সহজ হওয়াতে যে কেউ এই খেলায় অংশ নিতে পারে। মনের সতেজতা ও প্রাণময়তা বৃদ্ধিতে এই খেলা ভূমিকা পালন করে। শরীরের কাঠিন্য বৃদ্ধি করে, দেহ ও মনকে করে সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ। এ খেলার মধ্য দিয়ে পেশিশক্তির উন্নতি ঘটে। শরীরকে রোগমুক্ত রাখে এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। হা-ডু-ডু জীবনের অবসাদ দূরীভূত করে কর্মে আত্মনির্ভরশীলতা ও অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রত্যেক খেলারই সামান্যতম অপকারিতা থাকে, হা-ডু-ডুও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে খেলতে গিয়ে হাত-পা ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।


হা-ডু-ডু কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে

হা-ডু-ডু বা কাবাডির উৎপত্তি ভারতে বলে ধারণা করা হয়। কেননা ১৯৫০ সালে ভারতীয় জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে কাবাডি খেলার আইন-কানুন প্রণীত হয়। ১৯৬০ এবং ১৯৬৬ সালে কাবাডি খেলার আইন সংশোধন করা হয়।তবে হা-ডু-ডু বা কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের দু’জন কর্মকর্তা পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে ভারতীয় জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা দেখতে যান। দেশে ফিরে তারা ‘কাবাডি ফেডারেশন’ গঠন করেন। ১৯৭৪ সালে ‘এশিয়ান অ্যামেচার কাবাডি ফেডারেশন’ গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বার্মার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ‘এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন’ গঠিত হয়

১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আস্তে আস্তে হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মরিশাস, মায়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকায় হা-ডু-ডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জাপান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানে এই খেলা শেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়।স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কাবাডি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে সিলভার, ১৯৯৪ সালে হিরোশিমা গেমসে সিলভার ও ১৯৯৮ সালে ব্যাংককে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। দক্ষিণ এশীয় গেমসে ১৯৮৫ সালে ২য় স্থান, ১৯৯৩ সালে ৩য় স্থান এবং ২০১০ সালে ৩য় স্থান অধিকার করে। এশিয়ান গেমসে মেয়েদের কাবাডি অন্তর্ভুক্ত হয় ২০১০ সালে। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের ছেলেদের অর্জন ৩টি রুপা ও ৩টি ব্রোঞ্জ। ২০১০ সালে ‘সাফ’ কাবাডিতে বাংলাদেশ ছেলে এবং মেয়ে দুই বিভাগেই সোনা জেতে।

হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলায় বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার, চওড়ায় ১০ মিটার হয়। বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার, চওড়ায় ৮ মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে; যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্যরেখার দু’দিকে দু’অর্ধে দু’টি লাইন টানা হয়, যাকে কোল লাইন বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।

প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যায়। হা-ডু-ডু খেলা ৫ মিনিট বিরতিসহ দু’অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে অনুষ্ঠিত হয়। খেলা শেষে যে দল বেশি পয়েন্ট পাবে সে দলই জয়ী হবে। দু’দলের পয়েন্ট সমান হলে দু’অর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।

যদি কোনো খেলোয়াড় মাঠের বাইরে চলে যায়, তাহলে সে আউট হয়। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা (অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পায়। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড়কে (একাধিক হতে পারে) স্পর্শ করে এক নিশ্বাসে নিরাপদে নিজেদের কোটে ফিরে আসতে পারলে, যাদেরকে স্পর্শ করবে সে বা তারা আউট হয়। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যায়।এক নিশ্বাসে স্পষ্টভাবে বারবার হা-ডু-ডু বা কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে ‘দম’ বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হয়। বিপক্ষ কোটে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোনো আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোটে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হয়।

সর্বত্র একই নিয়ম প্রযোজ্য না হলেও খেলা অনুষ্ঠিত হতো। স্থানীয়ভাবেও তৈরি হতো কিছু নিয়ম। তবুও এক সময় গ্রামাঞ্চলে হা-ডু-ডু খেলার খুব বেশি প্রচলন ছিলো। সময়ের আবর্তনে মানুষের ব্যস্ততা, আধুনিকায়নের ফলে খেলাটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কষ্টসাধ্য শারীরিক এ খেলাটি যুবসম্প্রদায়কে আর টানে না। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠতেই পারে- হা-ডু-ডু খেলাটি কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে?

বাংলাদেশে কবে কাবাডি লিগ টুর্নামেন্ট হবে!

ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে কাবাডিকে জনপ্রিয় করে তুলতে এ সম্পর্কিত সব ধরণের খবর নিয়ে পারিম্যাচ নিউজ তো রয়েছেই।শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, কাবাডি পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়েই জনপ্রিয় খেলা। প্রতিবেশী দেশ ভারতসাম্প্রতিক সময়ে কাবাডির মত আঞ্চলিকভাবে জনপ্রিয় খেলাগুলোকে বিশ্ব পর্যায়ে তুলে ধরতে বিভিন্নউদ্যোগ নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে পেশাদার কাবাডি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা। ২০১৪ সালে ভারত প্রথমবারের মতো ‘প্রো কাবাডি লিগ’ আয়োজন করে। আইপিএল, বিপিএল এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের মতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করে প্রো কাবাডি লিগ। করোনা মহামারির কারণে একবছর বাদ দিয়ে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই আয়োজিত হয়েছে এই তুমুল জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট।


এ বছরের ০৭ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে প্রো কাবাডি লিগের দশম আসর, যার টাইটেল স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ভিভো। এছাড়া, অ্যাসোসিয়েট স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ড্রিম১১ ও এ২৩ রামি। আয়োজনটির গর্বিতঅংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে পারিম্যাচ নিউজ, আলট্রাটেক সিমেন্ট ও জিন্দাল প্যানথার।প্রো কাবাডি লিগের মত টুর্নামেন্ট আয়োজনের বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতে একদিকেআবার জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে কাবাডি, অন্যদিকে এর মাধ্যমে দক্ষ কাবাডি খেলোয়াড়রা বের হয়ে আসছেন।প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেদের কৌশল ও নৈপুণ্য দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন অনেক তরুণ খেলোয়াড়। এর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় পর্যায়েও এখন গড়ে উঠছে কাবাডি দল ও ক্লাব। জাতীয় খেলা কাবাডিরজনপ্রিয়তা বাড়াতে প্রতিবেশী দেশের মতো বাংলাদেশেও এধরণের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আয়োজন করাযেতে পারে।দেশে এ ধরণের টুর্নামেন্ট আয়োজন করার ক্ষেত্রে স্পন্সর না পাওয়াকে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তবে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি ত্রিদেশীয় প্রো-বক্সিং টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়, যার স্পন্সর হিসেবে সহযোগীতা করে এক্সসেল। বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনও যদি এরকম স্পন্সরদের আকৃষ্ট করতে পারে, তাহলে প্রতিবছর ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আয়োজন করাও কঠিন হবে না।দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হলে জেলা-উপজেলা পর্যায় থেকে খেলোয়াড়রা বের হয়ে আসারসুযোগ পাবে। প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সেরাদের বাছাই করার সুযোগ পাবে ফেডারেশন। এতে করে আন্তর্জাতিকপর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার মতো জাতীয় দল গঠন করা আরও সহজ হবে। একদিকে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, অন্যদিকে জাতীয় খেলাকেও আমরা দিতে পারব যথাযোগ্য মর্যাদা।

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলা হা-ডু-ডু

এক সময় গ্রামাঞ্চলে পাড়া পাড়ায় অনুষ্ঠিত হতো হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলা। জাতীয় খেলা হিসাবে পরিচিত হা-ডু-ডু খেলা ছোট থেকে বৃদ্ধ বয়সের সকলেই অংশগ্রহণ করতো।এক পাড়া সাথে অন্য পাড়ার, গ্রাম বনাম গ্রাম, উপজেলা বনাম উপজেলা এমনকি জাতীয় পর্যায়েও হা-ডু-ডু খেলার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হতো। এ খেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়তো চারদিকে। এক সময় গ্রামাঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্যের জনপ্রিয় খেলা ছিল হা-ডু-ডু। কালের বিবর্তনে আধুনিক খেলার ভিড়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেই হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলা।

এব্যাপারে এক সময়ের হা-ডু-ডু খেলোয়াড় ষাটোর্ধ্ব মোসলেম উদ্দিন বলেন, আগের দিনে আমরা মৌসুমে প্রায় দিনই এ খেলা খেলতাম। আমি ভাড়ায়ও দূর দূরান্ত গ্রামে খেলতে যেতাম। যেসব এলাকায় এ খেলার অনুষ্ঠান হতো সেইসব এলাকায় ঈদের মতো আমেজ বইতো। এখন আর আগের মতো হা-ডু-ডু খেলা দেখা যায় না। তাই তো হারিয়ে যাওয়া খেলাটির অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ৮ নং রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাটিলেইট গ্রামের এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিলুপ্তি প্রায় হা-ডু-ডু খেলা।

Taken from Bangla News24

খেলা শেষ হয়ে গেলেও মাসব্যাপী সেই খেলা নিয়ে চলতো আলোচনা। আগ্রহ থাকায় প্রতিবছরই গ্রামে গ্রামে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরি হতো। কিশোর-যুবক এমনকি বৃদ্ধরাও হা-ডু-ডু খেলার আগ্রহ প্রকাশ করতেন। কিন্তু এখন আর গ্রামে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। ক্রিকেট-ফুটবলসহ আধুনিক বিভিন্ন খেলা, মোবাইল গেইম, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটে আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব সমাজ তাই হা-ডু-ডু খেলা অনেকেই ভুলে গেছেন। তবে এখনও মাঝেমধ্যে দুই/এক জায়গায় খেলাটির আয়োজন হতে যায়।এমনি প্রীতি খেলার আয়োজন দেখা গেছে ইলিশা ইউনিয়নের বাঁধের ওপর। জেলেদের দুইটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে এ খেলায় মেতে উঠেন। সেখানে দেখা গেছে শতাধিক দর্শকদের উচ্ছ্বাস।


বিলুপ্তপ্রায় সেই হা-ডু-ডু খেলাটি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে একজন সোলাইমান ও আব্বাস উদ্দিন বলেন, হা-ডু-ডু খেলাটি গ্রামের অনেক জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু এখন আর তেমন দেখা যায় না। গ্রামে এ খেলার আয়োজন হতেও দেখা যায়। হঠাৎ করেই বাঁধের ওপর হা-ডু-ডু খেলা দেখতে পেয়ে ছুটে এলাম। বহু বছর পর খেলা দেখে খুব ভালোই লাগছে।

আরেক দর্শক বিপ্লব কর্মকার ও লক্ষণ বলেন, বিকেলে ঘুরতে বের হয়েছি, বাঁধের ওপর হা-ডু-ডু খেলা চলছিল। দেখেই ছুটে এলাম। মনে হচ্ছিল সেই পুরনো দিনে ফিরে এসেছে। শত শত নারী-পুরুষ এ খেলা উপভোগ করেন। নানা কারণে এ খেলাটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।স্থানীয় কয়েকজন বৃদ্ধ জানালেন, গ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে হা-ডু-ডু খেলাটি। জনপ্রিয় খেলাটি আবার ফিরিয়ে আনার দরকার। তাহলে গ্রাম বাংলার এ খেলাটি প্রাণ ফিরে পাবে।

এ ব্যাপারে ভোলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ারুল আলম লিটন বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্যের হা-ডু-ডু খেলাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গ্রামে এখনও প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছেন। এ খেলাটি ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। তবে আমরা প্রতিবছরই কাবাডির আয়োজন করছি। জেলায় এখন পর্যন্ত ২০০ জন কাবাডির খেলোয়াড় রয়েছেন। গ্রামের ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিলে ভালো ভালো খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে।


তথসুত্র:

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলা হা-ডু-ডু, Banglanews24.

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেই হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলা, Bhorerkagoj.

বাংলাদেশে কবে কাবাডি লিগ টুর্নামেন্ট হবে!, Ekusheyangbd.

হা-ডু-ডু কি বিলুপ্ত হয়ে যাবে, Jagonews24.

হা-ডু-ডু খেলার উৎপত্তি ও পরিচয়ঃ, Totthadi.

হা-ডু-ডু আর কাবাডি কী একই খেলা?, Friendsdairy.

হাডুডু কেন আমাদের জাতীয় খেলা?, Rangpurdaily.

Subscribe for Daily Newsletter