মাদকাশক্তির কুফল (Negative Effects of Drug Addiction)

সর্বনাশা মাদকাসক্তি
মাদকাসক্তি কি
মাদকাসক্তি মানুষের স্নায়ুকে দুর্বল ও অকার্যকর করে দেয়। এর ফলে মানুষের কোন অবস্থাতেই নিজেকে সন্তুষ্ট ভাবতে পারেনা। এক অস্বাভাবিক অতৃপ্তি থাকে চোখেমুখে, মাদক সেবন বন্ধ করলে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। নেশার টাকার জন্য যেকোনো কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। এ অবস্থাকেই মাদকাসক্তি বলে।
শারীরিক ও মানসিক শক্তি লােপ পেতে থাকে। মাদকাসক্তি মানুষকে অন্ধকার পথে নিয়ে যায়। মাদকাসক্ত লােকেরা মাদকদ্রব্য সংগ্রহের জন্য চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই প্রভৃতি অপকর্মে লিপ্ত হয়।
মাদকদ্রব্যের ব্যবসা ও ব্যবহার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশে প্রায় ৭০ লাখ লোক মাদকাসক্ত। তাদের বেশির ভাগ ইয়াবাসেবী। অন্যান্য ধরনের মাদকের ব্যবহারও রয়েছে।
একথা আজ কোন ভাবেই অসিকার করা যায় না, আমাদের সম্ভাবনাময় যুবসমাজ আজ মাদকাসক্তির কবলে পড়ে ধংসের মুখে উপ্নীত হয়েছে।উদ্ভিন্ন তারুন্য আজ নেশাগ্রস্ত, মুখ থুবড়ে পড়েছে সামগ্রিক সম্ভাবনা।শিক্ষিত তরুন সমাজ পরীক্ষায় ব্যরথতা,বেকারত্তের জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যত,রাজনেতিক লেজুড় ব্রিত্তি,সন্ত্রাসি কারযক্রম প্রত্যক্ষ করে যে নরাশ্য নিপতিত হচ্ছে তা-ই তাদের ঠেলে দিচ্ছে মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ নেশার দিকে।বইচিত্রময় মাদক আজ তাদের নিত্যসংগি।
ব্যাক্তি ও সমাজ জিবনে এর পরিনাম ভয়াবহ দেখা যাচ্ছে।নেশাক্ত্রা ক্রমান্যয়ে সাস্থ্যহিন হয়ে বুদ্ধিব্রিত্তির অবসান ঘটাচ্ছে।নেশার অথ সংগ্রহর জন্য তারা নানা রকম কুকরমের আস্রয় নিচ্ছে।লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে নিজেকে আন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।সন্ত্রাসি,চাদাবাজিতে অভ্যস্ত হয়ে তরুন সমাজ আজ অপরাধের অন্ধকার জগতের নিশাচর।পারিবারিক জীবনে নেমে আসছে বিপরজয়।অভিভাবকেরা পড়েছে বিপরযস্ততাই।জাতি প্র্যতক্ষ করেছে এক অন্ধকার ভবিষ্যত আর অনিশ্চিত উত্তরাধিকার।
মাদক বা ড্রাগস হলো বিষধর সাপের বিষাক্ত ছোবলের মতো যা প্রতিনিয়ত একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে তার দংশনে নিঃশেষ করে দেয়।যার প্রভাব আমরা আমাদের যুব সমাজে বেশি দেখিতে পাই।কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কি?যুব সমাজের এই পরিণতির জন্য অনেকাংশে দায়ি শুধুমাত্র মাদক দ্রব্য এবং মাদকাসক্তি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকা।
ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) বলেছে, মাদক গ্রহণের ফলে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও এই ক্ষণস্থায়ী স্বস্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর ফাঁদ।ফাঁদে একবার জড়ালে স্বাস্থ্যহানি ঘটে,সৃজনীশক্তি শেষ হয়ে যায়।‘স্বাস্থ্যহানি’বলতে কেবল দৈহিক স্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে না।দেহের পাশাপাশি বিশৃঙ্খল ও বিধ্বস্ত হয়ে যায় মনের স্বাস্থ্য,পুড়ে যায় আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধ,সামাজিক চিত্রে নেমে আসে দুর্যোগ।
মাদকদ্রব্যের প্রকারভেদ
বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য রয়েছে।সেগুলাের মধ্যে ভাং,গাজা,মদ ও আফিম প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসা নেশার সামগ্রী। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মাদকদ্রব্যেরও পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিক মাদকদ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে— হেরােইন,মারিজুয়ানা,এলএসডি,প্যাথেড্রিন,কোকেন,পপি,হাসিস ও মফিন।মাদকদ্রব্যগুলাে আবার বিিভন্ন দিক থেকে ভাগ করা হয়।

যেমন- ধূমপান জাতীয়
গাঁজা বা ক্যানাবিস,মারিজুয়ানা,হাশিশ বা চরস,ভাং,আফিম ও হেরােইন।তরল জাতীয় :ফেনসিডিল,বাংলা মদ তাড়ি,হুইস্কি,ব্রান্ডি, ভদকা ইত্যাদি।
ইনজেকশন জাতীয়
পেথিডিন,মরফিন,কোডিন,টিউজেসিক,মনােজেসিক,বুনােজেসিক,টনােজেসিক,কোকেন ও হেরােইন।
ট্যাবলেট জাতীয়
ইয়াবা বা স্পিড,ডব্লিউ ওয়াই,ক্যানবিনল,কোডিন,ডন,এমফিটামিন।
বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ট্যাবলেট
যেমন- ডায়াজিপাম,ভ্যালিয়াম,রিলাক্সেন,সেডিল,লােরাজিপাম, অ্যাটিভান,ক্লোরাজায়াজিপােক্সাইড বা লিব্রিয়াম ইত্যাদি।
মাদকদ্রব্যের উৎস
সারাবিশ্বে বেশ কয়েকটি মাদক উৎপাদনকারী বলয় রয়েছে।তন্মধ্যে গােল্ডেন ক্রিসেন্ট,গােল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এবং গােল্ডেন ওয়েজ অন্যতম।পাকিস্তান,আফগানিস্তান,ইরান,তুরস্ক এবং এর আশপাশের অঞ্চলগুলাে নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘গােল্ডেন ক্রিসেন্ট’।গােল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ গড়ে উঠেছে লাওস,থাইল্যান্ড এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলাে।আর এ দুয়ের মধ্যবর্তী এলাকাগুলাে নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘গােল্ডেন ওয়েজ’ নামক অঞ্চলটি।এসব এলাকায় প্রচুর আফিম,গাঁজা,পপি ও কোকেন উৎপন্ন হয়।
তাছাড়াভারত,যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন,কলম্বিয়া,ব্রাজিল,বলিভিয়া,মেক্সিকো,পেরু, প্যারাগুয়ে,নিকারাগুয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে মাদক উৎপাদন এবং মাদক ব্যবসার বিশাল নেটওয়ার্ক।
মাদকাসক্তির কারণ

মস্তিষ্কে এক বিশেষ ধরনের প্রটিনের পরিমাণ কম থাকা এবং মলিকিউলার মেকানিজমের ফলে মাদকাসক্তি দেখা যায় বলে একটা সমীক্ষায় জানা গেছে।
মাদকাসক্তদের মস্তিষ্কে GAT-3 প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকায় তারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এছাড়াও মাদকাসক্তির বড় কারণ হল মাদকের সহজলভ্যতা,মাদকের প্রতি তরুণ প্রজন্মের কৌতূহল ও নিছক মজা করার প্রবণতা,মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রকৃত ধারণার অভাব,মাদক বিষয়ে ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি।
মাদকাসক্তির আরেকটি বড় কারণ হল পরিবার।বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি।
এছাড়াও রয়েছে বন্ধুদের চাপ,পারিপার্শ্বিক কারণ,ব্যার্থতা।এমনকি মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতাও অনেককে ঠেলে দেয় মাদকের জগতে।
মাদকের সহজলভ্যতা
তরুণ প্রজন্মের মাঝে মাদকের মতো ভয়ানক বিষ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো এর সহজলভ্যতা। আমাদের দেশে প্রায় সকল প্রকার মাদক খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। সিগারেট, গাঁজা, হেরোইন, মদ, ফেন্সিডিলের মতো মাদকগুলো আমাদের চারপাশেই পাওয়া যায় এবং এগুলোর মূল্যও অনেকটা হাতের নাগালে। যার কারণে উপার্জন সক্ষম মানুষের পাশাপাশি বেকার, শিক্ষার্থীরাও এগুলোর প্রতি সহজেই আসক্ত হয়ে পড়ছে।

সঙ্গদোষ
অনেক সময় মাদকাসক্ত বন্ধুদের কু-প্রভাবেও ভালো ব্যক্তি মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে এই কারণ বিশাল আকারে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে। ভালো ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা অসৎ সঙ্গে পড়ে মাদক সেবনের প্রতি উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে।
সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা
সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশের কারণে বেশিরভাগ মানুষ মাদক সেবনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। পারিবারিক নিয়মের অভাবে এমনটা ঘটে। এর একটি বড় উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশের বস্তিগুলো। সেখানকার ৯০ শতাংশের অধিক কিশোর-কিশোরী, তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা মাদকাসক্ত। মাদকের প্রভাব কমাতে প্রতিটি পরিবারের লোককে নিজ দায়িত্বে সচেতন হতে হবে এবং তাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
হতাশা ও দুশ্চিন্তা
তরুণদের মধ্যে এই কারণটা সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। অনেকে কোনো কাজে ব্যর্থ হয়ে, প্রিয়জনের সাথে বিচ্ছেদ, পারিবারিক অশান্তি ও কোলাহলের কারণে মাদক সেবন করে। তাদের ধারণা হতাশা ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু তারা আসলে শেয়ালের ভয়ে বাঘের খাঁচায় আশ্রয় নেয়।
নিছক আনন্দ ও কৌতুহল
আমাদের দেশ সহ অনেক দেশের কিশোর কিশোরী ও অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের মাঝে এই কারণটা বেশি পরিমানে দেখা যায়। তারা অনেক সময় কৌতুহলবসত মাদক গ্রহণ করে। নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে ভেদে অল্প অল্প করে মাদক নেয়। এভাবে আস্তে আস্তে তারা একপর্যায়ে বড় রকমের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। যেটা পরে আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। আর হলেও তাতে অনেক বেগ পেতে হয়। আবার অনেকে নিজের স্মার্টনেশ দেখাতে মাদককে ব্যবহার করে। যা নিতান্তই বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
মাদক সমস্যার সমাধান
মাদক সমস্যার সমাধানে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক—সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া দরকার।জনসচেতনতার বিকল্প নেই।জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করতে পারে।এ বিষয়ে ভিন্নধর্মী একটি উদ্যোগ নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। চলতি মাসেই এক দিন এক মিনিটের কর্মসূচি পালন করা হবে—ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে ‘মাদককে না’ বলবে মানুষ।অবশ্যই এটি সমর্থনযোগ্য কর্মসূচি। সাংস্কৃতিক প্রচারণা চালানোও জরুরি।
মাদকের চাহিদা, সরবরাহ, চিকিৎসা—অনেক দিক বিবেচনা করে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। একক কোনো উপায়ে এ সমস্যার মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশে সরকারি অভিযানে টার্গেট করা হচ্ছে মূলত খুচরা মাদক বিক্রেতাদের। গডফাদাররা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গাঢাকা দেওয়ার ফুরসত পায়। তাই আইনি সমস্যায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে, তাদের পেছনে লাগলেও প্রমাণ পাওয়া যায় না। গডফাদারদের কথা সরকার জানে। তাদের হয় শাস্তি দিতে হবে অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর এ কাজটি করতে হলে রাজনৈতিক কপটাচার বন্ধ করতে হবে।
মাদক প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে।পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা শিক্ষা,পরিমিত জীবন যাপন,বন্ধু নির্বাচন,দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি মাদকাসক্তি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের পথ।সন্তান তার পরিবারের পরিবেশ দ্বারা অনেক প্রভাবিত হয়।তাই পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপান মুক্ত।সন্তানদের কার্যকলাপ ও সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। সন্তানরা যেসব জায়গায় যাওয়া আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।সন্তানদের সাথে খোলামেলা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।যাতে তারাই নিজ থেকে তাদের বন্ধুবান্ধব ও কার্যাবলী সম্পরকে আলোচনা করে।ধৈর্য ধরে তাদের সব কথা শুনতে হবে।পরিবারের সকল সদ্যসদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।সন্তানদের মাঝে নিরাপত্তা বোধ তৈরি করতে হবে।পিতামাতার গুড প্যারেন্টিং বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
মাদকাসক্ত হয়ে গেলে পরিবাররে প্রতিটি সদ্যসকে মাদকাসক্ত ব্যাক্তিকে সেই অবস্থা থেকে বের করে আনার সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে।প্রয়োজনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।সন্তান মাদকাসক্ত থেকে সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসলে পুনরায় যেন মাদকে জড়িয়ে না পড়ে পিতামাতাকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে।সন্তানদের জন্য নির্মল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।চিকিৎসকদের সকল পরামর্শ অনুযায়ী সন্তানকে লালন পালন করতে হবে।
মাদকাসক্তের চিকিৎসা

বৈজ্ঞানিক গবেষনার মাধ্যমে প্রাপ্ত বেশ কিছু পদ্ধতি মাদক মুক্ত জীবন যাপনে সাহায্য করতে পারে।তবে অন্যান্য জীবানু ঘটিত রোগের মত মাদকের কারণে সৃষ্ট ডিসওর্ডার নিরাময় করা যায় না।একটু অসতর্ক হলেই আবার রোগী মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারে।সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে না চললে আবার মাদকাসক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।মাদকের চিকিৎসা মূলত ২ ধাপে হয়।
১।প্রথমবার মাদক ছাড়ার পর রোগীর শারীরিক মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে। রোগী প্রায় সময় ডিপ্রেশনে চলে যায়,ঘুমাতে না পারা,উচ্চ রক্ত চাপ,দুঃশ্চিন্তা করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।চিকিৎসক প্রথমে এসব উপসর্গের চিকিৎসা করেন।রোগী বারবার মাদক গ্রহনে বাধ্য হলে সাইকোথেরাপি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
২।বার বার মাদকের কাছে ফিরে যাওয়া রোগীদের জন্য বিশেষ থেরাপির ব্যবস্থা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ঔষধের সাহায্য নেওয়া হয়।আফিমজাতীয় মাদক বা অফিওয়েড থেকে মুক্তির জন্য মেথাডোন,বিউপ্রেনরপাইন,নাল্ট্রেক্সোন, লোফেক্সিডিন,তামাক জাতীয় মাদক বা নিকোটিনের প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য বিউপ্রপিওন,ভারেনিক্লিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
মাদকের ব্যবহার এখনই না কমালে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়বে।বর্তমানে বাংলাদেশে ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ নিয়মিত মাদক সেবনের সাথে জড়িত। মাদকের ঝুকির মধ্যে আছে এর দ্বিগুনের চেয়েও বেশি মানুষ।মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেওয়া এক তথ্যমতে ২০১৯ সালে প্রতিদিন ১১৪ জন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছিল।যে সংখ্যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ৬৯।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং মায়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালান বাড়ার কারণে এ সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছ।বাজারে ইয়াবার একটি পিল ৩৫০ টাকার বেশি হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে পাওয়া যায় ৫০ টাকায়।পুরো ২০১৮ সালে মাত্র ৯১ জন মহিলা সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।এই সংখ্যা ২০১৯ এর নভেম্বর পর্যন্ত হয় ৩৬০, যা প্রায় ৪ গুণ।
বাংলাদেশ মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪ই মে ২০১৮ সালে যুদ্ধ ঘোষনা করে।এর আগে ফিলিপাইনও এমন যুদ্ধ ঘোষনা করেছিল।তবে সুইজারল্যান্ড আর পর্তুগালের মত দেশ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে,মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মাদকের ব্যবহার কমাতে খুব একটা কার্যকরী নয়।
মাদকের ব্যবহার এখন জাতীয় সমস্যারূপেই বিবেচিত হচ্ছে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, ক্ষমতালোভী, রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিবাজ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এরা প্রত্যেকেই এই ভয়াবহ অবস্থার জন দায়ী। সবাই মিলে সংগঠিতভাবে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নইলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বজার রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমরা সেইদিন মাদকবিরোধী আন্দোলনে সফল হবো যেদিন সকলে মিলে সুস্থ জীবনবোধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে গেয়ে উঠতে পারব জোড়ালো মাদকবিরোধী সংগীত-
"প্যাথিড্রিন, হেরোইন, নেশার আস্তানা,
দুমড়ে মুচড়ে দিতে ধরো হাতখানা
চলো প্রতিরোধ গড়ে তুলি প্রতিবিশ্বের প্রান্তর জুড়ে
মরণ আসে যদি তবু পিছু ফেরোনা।"
তথসুত্র
Hossain Patoari, Md. (2021). Socio-cultural, psychological and family aspects of drug addiction of adolescents and its impact: An analysis from Bangladesh perspective. Journal of Advanced Research in Social Sciences and Humanities. 6. 10.26500/JARSSH-06-2021-0101.
মাদকাশক্তির কুফল, Blog.
মাদক সমস্যার সমাধান, Kaler Kantho.
বাংলা রচনা : মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার, Bangla Note Book.
মাদকাসক্তির কারণ কী?, Bd Journal.
মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার, Niramoy Hospital.