ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা (Establishment of Dhaka University)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বছরের সময়কার বা তার অব্যবহিত কিছু আগের কোনো মানুষই এখন আর বেঁচে নেই। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তাঁর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বিভিন্নজন ভিন্ন ভিন্ন কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। পশ্চিম বাংলা ও বিহার অঞ্চলের কিছু মুসলমানও বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল ভিন্নতর। তাঁদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁদের বা তাঁদের সন্তানসন্ততিদের কোনো কাজে আসবে না। যদি কোনো উপকার হয়, সেটা হবে পূর্ব বাংলার মানুষেরই। যে মুসলিম জনগোষ্ঠী এ রকম চিন্তা করত, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মাওলানা আকরম খাঁ, ব্যারিস্টার আবদুর রসুল, মৌলভি আবুল কাশেম, মৌলভি লিয়াকত হোসেন প্রমুখ। তদানীন্তন পূর্ব বাংলারও বেশ কিছু মুসলমানের মধ্যে এমন ধারণা ছিল যে পূর্ব বাংলায় যথেষ্ট পরিমাণ ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাস ছাত্র নেই, যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে ওই টাকা দিয়ে পূর্ব বাংলায় আরও কিছু স্কুল ও কলেজ স্থাপন করলে এই অঞ্চলের মুসলিম ছেলেমেয়েদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়ার সুযোগের পরিধিটা বাড়বে। তাঁরা আরও ভাবতেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণে মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য যে বাজেট সরকার থেকে আসে, তা অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে নিঃসন্দেহে কলকাতার হিন্দু সমাজের কিছু লোক ছাড়া প্রায় সবাই ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।
সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন।এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।
দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। পূর্ববঙ্গে প্রাইমারি এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়ানা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারি বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারি বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চাননি।তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক বাঙ্গালির অনেক বেশি আবেগ
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক বাঙ্গালির অনেক বেশি আবেগ। তিনি দোষেগুনে মানুষ, কিন্তু তাঁকে অতিমানবীয় করে তোলায় আমার আপত্তি। তিনি পূর্ববাংলার জমিদারি দিয়েই জমিদার। পূর্ববাংলার চাষাভুষাদের ঘামে তাঁর অর্থবিত্ত। অথচ সেই পূর্ব বাংলার মানুষদের তিনি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন।তাঁর দায়িত্ব ছিল এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের জন্য কাজ করা। অথচ তিনি করেছেন উল্টোটা। তিনি শান্তি নিকেতন করেছেন পশ্চিম বাংলার বোলপুরে। যেটা করা উচিত ছিল কুষ্টিয়ায় বা শাজাদপুরে।
গানটি লিখেছেন বঙ্গভঙ্গ রোধ করার জন্য আমাদের জাতীয় সঙ্গীত
তিনি বঙ্গ ভঙ্গের বিরোধিতা করেছেন। অথচ এই বঙ্গভঙ্গই পূর্ব বঙ্গের মানুষের ভাগ্য ফেরানর মহিসোপান ছিল। তিনি – আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি লিখেছেন বঙ্গভঙ্গ রোধ করার জন্য। দুর্ভাগ্য সেটাই এখন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত।বলতে পারেন বঙ্গবন্ধুই তো এটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে চিনহিত করেছেন। হাঁ আমি বলব বঙ্গবন্ধুর ভুলের মধ্যে এটি একটি ভুল। তিনি হয়তো তখন আমাদের স্বাধীনতা উত্তর সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এই ভুলটি করতে বাধ্য হয়েছেন। রবীন্দ্রপ্রেমী বুদ্ধিজীবীদের চাপও হয়তো ছিল।
রবীন্দ্র সাহিত্য শতবর্ষী পুরনো সাহিত্য শতবর্ষী গাছের নিচে নতুন গাছ জন্মায় না
রবীন্দ্র সাহিত্য অনেকের কাছে অমর। আবার আমার মত অনেকের কাছে অমর কিছুই নয়। বরং শতবর্ষী পুরনো সাহিত্য। শতবর্ষী গাছের নিচে নতুন গাছ জন্মায় না। রবীন্দ্রনাথ হলো শতবর্ষী গাছ। তিনি থাকলে নতুন গাছ জন্মাবে না। তাই রবীন্দ্রনাথের মত শতবর্ষী গাছকে উপড়ে ফেলা উচিত। তাতে সাহিত্যের নতুন দিগন্ত উম্মচিত হবে। এর মধ্যে বাংলা সাহিত্য অনেকদূর এগিয়েছে এবং সেটা আমাদের স্বাধীনতার কারণে।আমরা পাকিস্তানের ইসলামি উম্মায় আটকে থাকলে স্বাধীনতা পেতাম না। বস্তুত পুরাতন ধ্যান ধারনাকে ঝেড়ে ফেলতে না পারলে সামনের দিকে এগুনো যায় না। এই সূত্রে আমি এবং আমার মত অনেকে রবীন্দ্র জড়তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।
তখনকার কলকাতার বুদ্ধিজীবী সমাজসহ একটি বড় জনগোষ্ঠী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে
কলকাতার যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি নিজেও বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে বেশ সক্রিয় ছিলেন। সে কারণে অনেকেই মনে করতেন, রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও বিরোধী ছিলেন। জানা যায়, তখনকার কলকাতার বুদ্ধিজীবী সমাজসহ একটি বড় জনগোষ্ঠী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে ১০-১২টি প্রতিবাদ সভাও করেছিল। এর একটি ছিল কলকাতার গড়ের মাঠের প্রতিবাদ সভা। ওই সভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সভাপতিত্ব করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে। ইতিহাসের স্বার্থেই এ কথার সত্যতা যাচাই হওয়া দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
১৯১২ সালে সেই গড়ের মাঠের প্রতিবাদ সভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের কেউই আজ আর বেঁচে নেই। ফলে ওই সভায় রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন কি না বা সভাপতিত্ব করেছিলেন কি না, এ তথ্য জানতে হলে ইতিহাসের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন সে সময়ে। ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন? শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তিতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্যার নীলরতন সরকার।
ধনবাড়ীর জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান
১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে দেয়া ভাষণে ধনবাড়ীর জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। এরপর ২০ মার্চ আবারও সরকারের কাছে ঢাবি বিল পাশ করার প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯১৬ সালের ৩০-৩১ ডিসেম্বর লাখনৌতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে ভাষণদানকালে নওয়াব আলী চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচটি বছর কেটে গেল। যুদ্ধ ও আর্থিক সংকটের অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি আজও প্রতিষ্ঠিত হলো না। অথচ এই সংকটের মধ্যেও পাটনায় হাইকোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলো।’ ১৯১৬ সালের ৩ এপ্রিল বঙ্গীয় আইনসভায় এ কে ফজলুল হক (পরবর্তীতে শেরে বাংলা) বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ হয় এবং আমাদেরকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু প্রকল্প আর বাস্তবায়ন হয় না। এজন্য বছরের পর বছর তো লাগার কথা নয়। বাস্তবায়নের ইচ্ছা থাকলেই হয়।’
১৯২১ সালের ১ জুলাই নওয়াব সলিমুল্লাহ্র দান করা কয়েক শত বিঘা জমির ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়
এরমধ্যে ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি নওয়াব সলিমুল্লাহ্ ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি কয়েক শত বিঘা জমি ঢাবি প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন। অবশেষে ১৯২১ সালের ১ জুলাই নওয়াব সলিমুল্লাহ্র দান করা কয়েক শত বিঘা জমির ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিন ব্যক্তির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁরা হলেন, নওয়াব সলিমুল্লাহ, জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।
সত্যিকার অর্থেই কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন?
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকারই তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এবং ১২ ডিসেম্বর ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। বঙ্গভঙ্গ রদ পূর্ব বাংলার মুসলমানরা ভালোভাবে নিতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে তাদের অনেকটা খুশি করার জন্যই ২১ জানুয়ারি ১৯১২ সালে তদানীন্তন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ একটি মুসলিম প্রতিনিধি দলের কাছে অচিরেই ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। তখন পূর্ব বাংলায় হাতে গোনা কিছু কলেজ ও স্কুল ছিল। কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। সারা পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলা মিলিয়েই তখন মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। সেটি হলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। মুসলমানদের দেওয়া লর্ড হার্ডিঞ্জের প্রতিশ্রুতি কলকাতার একটি প্রভাবশালী মহল ভালো চোখে দেখেনি। এই প্রভাবশালী মহলটি ছিল হিন্দু আধিক্য। তারা আনুষ্ঠানিকভাবেই ঢাকাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করার জন্য ভাইসরয়ের কাছে আবেদন করেন। এমনকি কলকাতায় এ নিয়ে কিছু সভা সমাবেশও হয়। কারও কারও মধ্যে একটি ধারণা আছে যে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও কলকাতার ওই প্রভাবশালী মহলের একজন ছিলেন, যিনি ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং বইয়ে যা পাওয়া যায় তা থেকেই আমাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।
পশ্চিম বাংলা এবং বিহার অঞ্চলের কিছু মুসলমানও এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন
১৯২১ সাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বছর। সে সময়কার বা তার অব্যাবহিত কিছু পূর্বের কোনো মানুষই হয়তো এখন আর বেঁঁচে নেই। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক কুলোদা রায় তার প্রবন্ধ 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং রবীন্দ্রনাথ' এ উল্লেখ করেছেন যে, বিভিন্নজন ভিন্ন ভিন্ন কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। পশ্চিম বাংলা এবং বিহার অঞ্চলের কিছু মুসলমানও এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল ভিন্নতর। তাদের মতে এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বা তাদের সন্তান-সন্ততিদের কোনো কাজে আসবে না। যদি কোনো উপকার হয় সেটা পূর্ব বাংলার মানুষেরই হবে। যে মুসলিম বিশিষ্ট ব্যক্তি এ রকম চিন্তা করতেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মাওলানা আকরম খাঁ, ব্যারিস্টার আব্দুর রসুল, মৌলভী আবুল কাশেম, মৌলভী লিয়াকত হোসেন প্রমুখ।
তদানীন্তন পূর্ব বাংলারও বেশ কিছু মুসলমানের মধ্যে এরকম একটি ধারণা ছিল যে, পূর্ব বাংলায় যথেষ্ট সংখ্যক ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাস ছাত্র নেই, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে। তাদের যুক্তি ছিল- বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না করে ওই টাকা দিয়ে পূর্ব বাংলায় আরও কিছু স্কুল ও কলেজ স্থাপন করলে এই অঞ্চলের মুসলিম ছেলেমেয়েদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়ার সুযোগের পরিধিটা বাড়বে। তারা আরও ভাবতেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণে মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য যে বাজেট সরকার থেকে আসে তা অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে নিঃসন্দেহে কলকাতার হিন্দু সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া, প্রায় সবাই ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল। এটা সত্য যে, এদের অনগ্রসর অংশটির অনেকেই সংকীর্ণ মানসিকতার কারণে চাইত না যে, পূর্ব বাংলার মুসলমানরা শিক্ষায়-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর হোক, সমৃদ্ধ হোক। কিন্তু প্রধান কারণ তা ছিল না। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার প্রধান কারণ ছিল ভিন্নতর।
তথ্যসুত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, Samakal.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় , Dailyinqilab.
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার, BD News24.
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, Prothomalo.
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার, Jugantor.
স্বাধীনতা পেতাম না, Hellobangladesh.