উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ (Flora & Fauna)

উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ (Flora & Fauna)

উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বলতে কি বুঝায়?

উদ্ভিদ, প্রাণী ও অনুজীব এই তিন ধরনের প্রাণ নিয়ে জীবজগত গঠিত। মানুষ প্রাণীজগতের একটিঅংশ। জীবজগতের প্রাণের এই ধরনসমূহ পরস্পর থেকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে আলাদা। যেমন, উদ্ভিদখাদ্য উৎপাদনের কাজে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অজৈব যৌগ ব্যবহার করে থাকে। অপরদিকে,প্রাণী খাদ্যের জন্য জৈব পদার্থের উপর নির্ভর করে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সংগঠনেপারগ। তবে, উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েই বেঁচে থাকা, বেড়ে উঠা এবং প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয়শক্তি শ্বাস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেয়ে থাকে; যেখানে অক্সিজেন গ্রহণ করে, জৈব যৌগ বিশ্লেষিত হয়এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে।

উদ্ভিদ ও প্রাণী কীভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল

উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি, বৃদ্ধি, পরাগায়ন ও বীজের বিস্তরণের জন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল।প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। উদ্ভিদ সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি ব্যবহার করে খাদ্য উত্পাদন করে প্রাণীকে সাহায্য করে।পৃথিবীর সকল প্রাণী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:

প্রাণী শ্বাসকার্যে উদ্ভিদের ত্যাগ করা অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য প্রাণীর ত্যাগ করা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে।উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি, বৃদ্ধি, পরাগায়ন ও বীজের বিস্তরণের জন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল।উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন:  ফলমূল, কাণ্ড ও শাখা প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।প্রাণীর মৃতদেহ এবং মলমূত্র মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে যা উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন।উদ্ভিদ অনেক প্রাণীর আবাসস্থল এবং অনেক প্রাণী উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করে। এর ফলে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়।উদ্ভিদ ও প্রাণী বিভিন্নভাবে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এদের একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

 উদ্ভিদ ও প্রাণী পারস্পরিক নির্ভরশীলতা

উদ্ভিদের ত্যাগ করা অক্সিজেন প্রাণী শ্বাস গ্রহণের সময় ব্যবহার করে। উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন—কাণ্ড, শাখা ও ফলমূল প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।খাদ্য তৈরি, বৃদ্ধি, পরাগায়ণ ও বীজের বিস্তরণের জন্য উদ্ভিদ প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল।উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য প্রাণীর ত্যাগ করা কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে।

পরিবেশে বৃক্ষ ও প্রাণী অচ্ছেদ্য

ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়ার প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের। কোনো একটি স্থানের বায়ু, পানি, তাপ, মাটির ধরন ও গুণাগুণের ভিত্তিতে সে স্থানে উদ্ভিদ জন্মে। এটিই প্রাকৃতিক নিয়ম। একইভাবে উদ্ভিদের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সেখানে প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। আলো, বায়ু, আবহাওয়া, পানি ও মাটির সমন্বয়ে সে স্থানে অজৈব পরিবেশ গড়ে ওঠে, তার ওপর নির্ভর করে যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবির্ভাব হয় তাকে বলা হয় জৈব পরিবেশ। অজৈব ও জৈব পরিবেশ মুক্তভাবে সে স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলে। পরিবেশ বিদ্যায় পরিবেশগত পরামর্শ বলে একটি কথা আছে।

সংক্ষেপে বলা যায়, উদ্ভিদহীন একটি স্থানে যখন কোনো উদ্ভিদ জন্মায়, তখন সেখানেও পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ ওই গাছের কারণে পরিবেশ ভিন্ন রূপ নেয়। যেখানে আগের গাছ টিকতে পারে না এবং ভিন্ন এক গাছ জন্মায়। একইভাবে ভিন্ন প্রাণীর উদ্ভব হয়। এ ধরনের পরিবর্তন কয়েকবার ঘটার পর শেষ পর্যায়ে যে উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখা যায় তাকে বলা হয় ‘ক্লাইমেটিক ক্লাইমেক্স’ বা চূড়ান্ত পর্যায়। অজৈব পরিবেশগত কোনো বিপর্যয় দেখা না দিলে একটি স্থানের জৈব পরিবেশ সঠিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে সে স্থানে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃত্রিম উপায়ে অজৈব পরিবেশগত কোনো বিপর্যয় দেখা না দিলে একটি স্থানের জৈব পরিবেশ সঠিকভাবে পরিবর্তন না ঘটিয়ে সেখানে কৃত্রিমভাবে যদি অজৈব পরিবেশের পরিবর্তন করে ফেলা হয়, তবে সব ওলটপালট এবং বিলীন হয়ে যায়।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য কী?

উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য: ১) উদ্ভিদে রেচনতন্ত্র থাকে না । প্রাণীতে রেছন্তন্ত্র থাকে । ২) উদ্ভিদ রেচন পদার্থসমূহকে উপজাত পদার্থরূপে কোষে সঞ্চিত রাখে । প্রাণী রেচন পদার্থসমূহকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহের বাইরে নির্গত করে । ৩) উদ্ভিদের স্নায়ুতন্ত্র নেই । প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্র (ব্যাতিক্রম- এককোষী প্রাণী) আছে 

প্রাণীদের সাথে উদ্ভিদের সম্পর্ক কি?

উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্পর্কটা খাবারের সাথে খেয়াল করলে বিষয়টা আরো ভালোভাবে বোঝা যায়। উদ্ভিদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ক্লোরোফিল যা ফোটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন।‌ এটি সূর্যের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে, আবার এই অক্সিজেন প্রাণি গ্রহণ করে জীবন ধারন করে।

মাটি, পানি ও বায়ু সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনকে প্রভাবিত করে

উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য যেসব কারণে মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা নিম্নরূপ: মাটি, পানি ও বায়ু সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনকে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদ মাটিতে জন্মে এবং মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি উপাদান শোষণ করে বেঁচে থাকে। উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পানি ও বায়ুর কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে।উদ্ভিদ ও প্রাণী শ্বসন কাজে বায়ুর অক্সিজেন ব্যবহার করে।বায়ু ও পানি ছাড়া কোন উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না।

বাংলাদেশে বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর হুমকি শনাক্তকরণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন।


বাংলাদেশে বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে গবেষণাটি করেছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানির পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। চলতি মাসে গবেষণা প্রতিবেদনটি বিজ্ঞান সাময়িকী গ্লোবাল ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশন–এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ৪৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৬ প্রজাতির মাছ, ৫ প্রজাতির কীটপতঙ্গ, ১ প্রজাতির শামুক ও ১ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর তালিকা তৈরি করেছে। তাতে ওই ৬৯ প্রজাতির সব কটির নাম রয়েছে। এ বিষয়ে গবেষণা দলের সদস্য অস্ট্রেলিয়ার সানসাইন কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো শরীফ-এ–মুকুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আগ্রাসী প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলোর ওপরে আলাদাভাবে নানা ধরনের গবেষণা হয়েছে

গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৬৯টি আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ৫১ শতাংশই মারাত্মক আগ্রাসী। ৩৬ শতাংশ আগ্রাসী ও ৯ শতাংশ আগ্রাসী হওয়ার আশঙ্কা আছে এমন প্রজাতির। এসব প্রজাতির মধ্যে ২৮ প্রজাতির বৃক্ষ উত্তর আমেরিকা থেকে, ১৭ প্রজাতির এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে, ৯ প্রজাতির আফ্রিকা থেকে ও ৭ প্রজাতির অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩৮ প্রজাতির গাছ এসেছে স্বাধীনতার আগে।

উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশ কি একইরকম না আলাদা

উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের বেশ কিছু কাজ আলাদা তাই কোষের কয়েকটি অঙ্গাণুও আলাদা।উদ্ভিদরা চলাফেরা করতে পারে না, তারা নিজেদের খাবার নিজেরাই তৈরি করে থাকে, ইত্যাদি। অপরদিকে প্রাণীরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিজেরা যেতে পারে, তারা অন্য প্রাণী কিংবা উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল খ্যাদের জন্য, ইত্যাদি। অতএব, তাদের কোষ আলাদা রকমের। 

কোষপ্রাচীর উদ্ভিদ কোষকে অতরিক্ত শক্তি এবং সুরক্ষা দেয় কারন উদ্ভিদ চলাফেরা করতে পারে না। এটির জন্য গাছের গুঁড়িখুব শক্ত হয়।গহ্বর উভয় কোষেই পাওয়া যায় কিন্তু উদ্ভিদ কোষে অনেকটা বড় হয় কিন্তু প্রাণী কোষে খুবই ছোট বা মাঝে মাঝে থাকেও না। গহ্বরে জল, বায়ু, খাদ্য জমা থাকে।প্লাস্টিড উদ্ভিদ কোষে খাদ্য সংশ্লেষ করে ও ফুল - ফলে রঙ দেয়। প্রাণীরা নিজেরা খাবার তৈরি করে না তাই তাদের এই অঙ্গাণু থাকে না।সেন্ট্রোজোম প্রাণী কোষের বিভাজনে অংশগ্রহন করে

উদ্ভিদ ও প্রাণীর সৃষ্টি কি আলাদাভাবে হয়েছিলো

একই উদবংশিও এককোষী জীবেদের থেকেই বিবর্তনের দ্বারা উদ্ভিদ এর বিকাশ আগে হয়েছিলো আর তার উপর নির্ভরশীল প্রাণীদের উৎপত্তি তার পর পর হয়েছে কারণ উদ্ভিদেরাই কেবল খাদ্য সংশ্লেষ করতে পারে আর প্রাণীরা তাদের উপর নির্ভর করে বাঁচে।


তথ্যসুত্র

উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের বেশ কিছু কাজ, Brainly.

আগ্রাসী প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী, Prothomalo.

উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না, Ittefaq.

উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্পর্ক, Eshikhi.

উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে, Banglaproshno.

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী, Daily In Qilab.

পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী, Kalerkantho.

উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন, Ittefaq.

Subscribe for Daily Newsletter