গাজা সংগ্রাম মানবতা ও আশার প্রতীক | The Gaza struggle is a symbol of humanity and hope

গাজা সংগ্রাম মানবতা ও আশার প্রতীক | The Gaza struggle is a symbol of humanity and hope

গাজা একটি ছোট উপকূলীয় অঞল যা ফিলিস্তিনির অংশ । এটি ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্তিত এবং প্রায় ৪০ কিলোমিটার চওড়া । প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বসবাস এই ঘনবসতীপূণ এলাকায়, যা বিশ্বের অন্যতম  জনবহুল অঞল হিসেবে পরিচিত । কিন্তু গাজার পরিচয় শুধু তার ভৌগোলিক অবস্তান  বা জনসংখ্যার ঘনত্বে সীমাবদ্ব নয় , এটি একটি প্রতীক - সংগ্রামের , মানবতার এবং আশার। দীঘদিন ধরে গাজা ইসরায়েলি অবরোধ , দমন -পীড়ন এবং সামরিক আগ্রাসানের শিকার । প্রতিটি হামলা গাজার মানুষের জীবনকে আরো দুবিসহ করে তোলে । স্কুল , হাসপাতাল ও বাসস্তানের উপর বোমাবষণ , গাজার শিশু , নরী ও বৃদ্বদের জন্য নিত্যনৈমিত্যিক দুঃস্বপ্ন । তবু এই মানুষগুলো হার মানে না। তাদের চোখে থাকে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের আশা। 

গাজার গল্প কেবল যুদ্ব ও বেদনার নয়, এটি প্রতিরোধ ও আশার গল্প

গাজার মানবিক পরিস্তিতি অত্যন্তে উদ্বেগজনক । পানি বিদুৎ ওষুদের সংকট প্রতিনিয়ত তাদের জীবন কঠিন করে তোলে । কিন্তু এইসব সীমাবদ্বতার মাঝে ও গাজার মানুষ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহসের মাধ্যমে তাদের পরিচয় টিকিয়ে রেখেছে । তারা প্রমাণ করেছে দমন করা গেলেও তাদের চেতনা ও স্বপ্নকে থামানো যায় না । গাজার গল্প কেবল যুদ্ব ও বেদনার নয়, এটি প্রতিরোধ ও আশার গল্প । আন্তজাতিক সম্প্রদায়ের উচিত গাজায় শান্তি ,ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাযকর ভূমিকা নেওয়া । কারণ গাজার শান্তি মানে শুধু একটি অঞলের শান্তি নয় - এ টি সমগ্র মানবতার ন্যায় ও মযাদার প্রতিফলন।  

২০২৫ সালের গাজা—আরও ভয়াবহ এক চিত্র

২০২৫ সালের গাজা—আরও ভয়াবহ এক চিত্র। হাসপাতালগুলো ভেঙে পড়ছে, শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওষুধের অভাবে মারা যাচ্ছে, গর্ভবতী মায়েরা নিরাপদ প্রসবের সুযোগ পাচ্ছেন না। পানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য সংকট এমন পর্যায়ে যে, একে গণহত্যার ছায়াযুদ্ধ বললেও কম বলা হবে।ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতিদিনের বোমাবর্ষণ, হাসপাতালের ওপর হামলা, সাংবাদিক হত্যার ধারাবাহিকতা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কণ্ঠরুদ্ধ নীরবতা আমাদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জাতিসংঘ, ওআইসি, মানবাধিকার সংগঠনগুলো মাঝে মাঝে বিবৃতি দিলেও, কার্যকর পদক্ষেপ আজও অনুপস্থিত।

ফিলিস্তিন শুধু একটি ভৌগোলিক ভূখণ্ড নয়

ফিলিস্তিন শুধু একটি ভৌগোলিক ভূখণ্ড নয়, এটি বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক। গাজার প্রতিটি শিশুর আর্তনাদ যেন বিশ্ব বিবেকের ব্যর্থতার দলিল। যখন চিকিৎসার সামগ্রী কেড়ে নেওয়া হয়, তখন তা শুধু একটি শিবির ধ্বংস নয়, বরং তা একটি জাতির আশা-ভরসার উপর সরাসরি আঘাত।গাজার মানুষের জন্য রসদের অভাবে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করে দিতে হতে পারে। তিনি এই পরিস্থিতিকে "পৃথিবীর দোযখ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে গাজার মানুষ বিদ্যুৎ, পানি ও খাবারের সংকটে রয়েছে।

এক রাতেই ৪০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান

গাজার এই মানবিক বিপর্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে গত কয়েক মাসের অবরোধ ও বিমান হামলা। ২ মার্চ থেকে ইসরাইল গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের চুক্তি ভেঙে দেয়। এরপর ১৮ মার্চ ইসরাইল গাজায় তীব্র বিমান হামলা চালায়, যার ফলে এক রাতেই ৪০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান। এর আগে, গাজার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে চলছিল, কিন্তু ইসরাইলের নতুন আক্রমণে তা আবারো খারাপ হয়ে যায়।

তিন হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন

রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, গত ছয় সপ্তাহে গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য পৌঁছায়নি। এখন, রসদের অভাবে হাসপাতালগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শর্তে গাজার মধ্যে কিছু সাময়িক শান্তি ছিল, কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলের বিমান হামলা আবার শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়েছে। এই হামলায় এক হাজার ৫২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং তিন হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

গাজার ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুহীন হয়ে পড়েছে

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরাইলের আক্রমণের কারণে গাজার ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুহীন হয়ে পড়েছে এবং সেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। তাছাড়া, গাজায় অবরোধের কারণে মানুষ কঠিন মানবিক সংকটে পড়েছে এবং তাদের মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন খাবার, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে, সেখানে জীবনধারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইতিমধ্যে ৬০ হাজার মানুষ  মেরে ফেলা হয়েছে

বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকা ও ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধের নিয়মবিরোধী। হামাসের সঙ্গে না পেরে অসহায় মানুষদের মারা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একপেশে সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশ করেছে। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার মানুষ  মেরে ফেলা হয়েছে, অথচ যুদ্ধ বন্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হচ্ছে না। গাজার নিরস্ত্র মানুষগুলো আজ অবরুদ্ধ। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছে। প্রতিনিয়ত বোমা ও গুলির শব্দে শহীদ হচ্ছে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। এ নির্মমতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করার জন্য আমাদের আরও উচ্চকণ্ঠ ও প্রতিবাদী হওয়া জরুরি।

মিসাইলের আঘাতে মানুষ ১০-১৫ তলারও বেশি উচ্চতায় উঠে আবার নিচে পড়ে যাচ্ছে

গাজা জ্বলছে, গাজা পুড়ছে, নিঃশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে। একের পর ইসরায়েলি মিসাইলের আঘাতে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন। সম্প্রতি বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে যেখানে দেখা যায়, মিসাইলের আঘাতে মানুষ ১০-১৫ তলারও বেশি উচ্চতায় উঠে আবার নিচে পড়ে যাচ্ছে। এ যেনো ছাড়িয়ে গেছে আধুনিক বিশ্বের সকল বর্বরতাকে। কোথায় আজ মানবাধিকারের কথা বলে গলা ফাটানো সংস্থাগুলো? কোথায় আজ মানবিকতা? কোথায় আজ বিবেক? ঠিক এই প্রশ্নগুলোই সামাজিক মাধ্যমজুড়ে ছেয়ে যাচ্ছে।

পশ্চিমা বিশ্ব যেনো এক হয়েছে ফিলিস্তিনকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিও চিত্র দেখে কাঁদছে প্রতিটি মুসলমানের অন্তর। দখলদার ইহুদি ইসরায়েল এর নৃশংসতার শেষ কোথায়? জানা নেই কারোরই। ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্র দেখে অনেকেই নিশ্চিত করেছে এই ক্ষেপনাস্ত্র গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া। পশ্চিমা বিশ্ব যেনো এক হয়েছে ফিলিস্তিনকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে। গাজা শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়; এটি যেন নির্যাতিত মানুষের প্রতীক! দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারছি না। ভালোবাসা, সংহতি ও শান্তির আশায় তাদের পাশে আছি।’

দীর্ঘ ইতিহাসে ফিলিস্তিন হয়ে উঠেছে বিশ্ব মানবতার শ্মশানভূমি

গাজাবাসীর ওপর শুরু হওয়া প্রলয় যেন কোনোভাবেই থামছে না। গাজাবাসীর সবাই যেন স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার হারিয়েছে, হারিয়েছে রাতের ঘুম। দীর্ঘ ইতিহাসে ফিলিস্তিন বহু আগেই হয়ে উঠেছে বিশ্ব মানবতার শ্মশানভূমি। যুদ্ধের অভিঘাত কতটা মারাত্মক হতে পারে; গাজায় প্রাণঘাতী ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। 

খাবার নেই, জ্বালানি নেই, রান্নার গ্যাস নেই

ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক বাড়ি ও অস্থায়ী তাঁবুতেও হামলা চালিয়েছে। কেবল খান ইউনিসেই নয়, গাজা শহরের জেইতুন পাড়াতেও হামলা চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও খারাপ হচ্ছে। পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য যে কোনো ধরনের খাবার খুঁজছে ফিলিস্তিনিরা। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, রান্নার গ্যাস নেই। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও চিকিৎসা সরবরাহ না থাকায় মানুষের চিকিৎসা করা খুবই কঠিন। এমনকি ওষুধও নেই, আশ্রয় বা তাঁবুও নেই। গাজার পরিস্থিতি শ্বাসরুদ্ধকর। সংঘাত-সংঘর্ষ পৃথিবীর মানচিত্রকে কীভাবে বদলে দিতে পারে এবং সর্বোপরি ‘সৃষ্টির সেরা জীব’ মানুষের জীবনের মূল্যকে কোন পর্যায়ে নেমে আনতে পারে, তা আমরা প্রত্যক্ষ করছি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। 

মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া এই ভূখণ্ড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ‘প্রতি বর্গমাইল ভূমি রক্ষার জন্য’ ঠিক কতসংখ্যক জীবন বলিদান করার প্রয়োজন পড়ে! গত মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা যে ‘নিরাপত্তা বাফার জোন’ তৈরি করছে, তার পেছনে আসলে লুকিয়ে আছে এক নির্মম কৌশল, মানুষহীন করে ফেলা, জমি দখল করা, বসবাস অযোগ্য করে তোলা। 


তথ্যসুত্র

বিশ্ব মানবতার শ্মশানভূমি, Manobkantha.

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়, Itvbd.

ইসরায়েলি মিসাইলের আঘাতে , Dailyinqilab.

 ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, Deshrupantor.

 আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা , Dailyinqilab.

ইসরায়েলি বাহিনী, Dailyjanakantha.

Subscribe for Daily Newsletter