বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বৃদ্ধি (Global Warming)

বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বৃদ্ধি (Global Warming)

শুধু শীতপ্রধান ইউরোপই নয়, বৈশ্বিক উষ্ণতায় পুড়ছে পুরো পৃথিবী। বহু বছর ধরেই জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মেরু অঞ্চলে বরফ গলা ও সাগরের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলেও বা পরিবেশবাদীদের ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও দিন দিন বেড়ে চলছে দূষণ।বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে একদিকে যেমন শীতের সময়কাল কমে আসছে অন্যদিকে দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীষ্ম ও তীব্র হচ্ছে গরম।

কয়লার ব্যবহার বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী

পৃথিবীতে বর্তমান সময়ে পরিবহনে, বিদ্যুত্ উত্পাদনে, শিল্প-কারখানায় ও গৃহস্থালির কাজে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রিন হাউজ গ্যাস উত্পাদন হচ্ছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণ ও দীর্ঘকালীন ইরাকে যুদ্ধ, ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিন ও হিজবুল্লাহর যুদ্ধ এবং ঐসব যুদ্ধে ব্যবহূত বিস্ফোরক ও জীবাশ্ম জ্বালানি বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্রাজিলের আমাজান বনে আগুন, আফ্রিকায় বনভূমি উজাড়করণ, অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলে আগুন, এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে মালেশিয়ায় ও ইন্দোনেশিয়ায় পাহাড়ি বনে আগুন, বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা ও ব্যাপক মাত্রায় বন উজাড়; বিদ্যুত্ উত্পাদন, ইটের ভাটা ও অন্যান্য কাজে কাঠ ও কয়লার ব্যবহার বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

পানির সংরক্ষণ বা ধরে রাখার জায়গা নষ্ট হলে পরিবেশের উষ্ণতার ওপর এর প্রভাব পড়বে

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নিচুভূমি ও জলাভূমিকে উন্নয়ন করে নগরায়ণের পরিকল্পনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এর ফলে প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন পদ্ধতি ও ওয়াটার টেবিল ধ্বংস হচ্ছে, যা পানির ঘাটতি তৈরি করে থাকে। পানির সংরক্ষণ বা ধরে রাখার জায়গা নষ্ট হলে পরিবেশের উষ্ণতার ওপর এর প্রভাব পড়বে। কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠান কোন ধরনের গ্রিন হাউজ গ্যাস উত্পাদন করছে, সে বিষয়ে বিশ্বব্যাপী মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। সেজন্য শিল্পের ওপর মনিটরিং ও তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশবান্ধবভাবে চলছে না, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। এছাড়া অপরিকল্পিত ব্যারেজ, বাঁধ, ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি করার কারণে অনেক নদী-খাল ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো আর পানি ধরে রাখতে পারে না। ঐগুলো ড্রেজিং করে নাব্য ও গভীরতা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। অপরিকল্পিত ব্যারেজ, বাঁধ, ব্রিজ ও কালভাট নির্মাণ বন্ধ করতে হবে এবং সমন্বিতভাবে বিভিন্ন দেশকে একত্রে কাজ করতে হবে।

পৃথিবীব্যাপী বৃক্ষনিধন বন্ধ করে ব্যাপক মাত্রায় বনায়ন করতে হবে

পৃথিবীব্যাপী বৃক্ষনিধন বন্ধ করে ব্যাপক মাত্রায় বনায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে বনায়ন, সামাজিক বনায়ন, পারিবারিক বনায়ন, ছাদকৃষি, আঙিনাকৃষি ও সব পর্যায়ে ব্যাপকভাবে বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যার ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ বৃদ্ধি পাবে ও তাপমাত্রা কমে আসবে।

গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্রুত বেড়েছে

বিশ্বব্যাপী বিপুল পরিমাণ কয়লার ব্যবহারই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার দ্রুত কমাতে গত কয়েক দশক ধরে অনেক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও উন্নত দেশগুলোতে ক্লিন ফুয়েলের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি। যেহেতু উন্নত দেশগুলো থেকে অতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্রুত বেড়েছে, তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল উন্নত দেশগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের অংশহিসেবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের হার দ্রুত কমাবে। কিন্তু ধনী দেশগুলো এ বিষয়ে কতটা তৎপর তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও এ শতাব্দীর শুরুর দিকে কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা বাড়তে থাকে। এরপর এক সময় এর বৈশ্বিক চাহিদায় নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কিন্তু এই নিম্নমুখী প্রবণতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পুনরায় বাড়তে শুরু করে এর ব্যবহার। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছর পর কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা বর্তমান চাহিদার তুলনায় কয়েকশ’ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।

সবচেয়ে বেশিদিন প্রচণ্ড গরম থাকে যশোরে

এই সময় বাংলাদেশের উপর দিয়ে দক্ষিণ দিক থেকে যে সামান্য জলীয়বাষ্প আসে তা তাপমাত্রা কমিয়ে রাখে। কিন্তু এবার সেই দখিনা বাতাস খুবই কম এসেছে। ফলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক কম। তাই তাপমাত্রা বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন তাপপ্রবাহ থাকতে পারে এই অঞ্চলে। বৃষ্টি হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ১০০ বছরে দেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ২০২১ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৯টি জেলার তাপমাত্রা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশিদিন প্রচণ্ড গরম থাকে যশোরে।

বাংলাদেশে মহানগরের অপরিকল্পিত নগরায়ণ জেলা ও উপজেলা শহর এবং গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ভূমির ব্যবহার করতে হবে, যেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলাভূমি, বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা থাকবে।উল্লেখ্য, যশোরে বেশিদিন প্রচণ্ড গরম থাকার কারণ হিসেবে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নদীর মৃতপ্রায় দশা ও সুন্দরবনের বিস্তৃতি কমে যাওয়াকে দায়ী করা হয়। সুন্দরবন একসময় যশোরের একটি অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে

বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর উপায় খুঁজতে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ব। গবেষকদের বিশ্লেষণ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ২০৩৭ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা এখনকার তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। আর ২০৫১ সাল নাগাদ তা আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাইবেরিয়ায় তাপপ্রবাহ

পৃথিবীর অন্যতম শীতল অঞ্চল রাশিয়ার সাইবেরিয়াও তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। পরিবেশবিষয়ক সাময়িকী 'নেচার'র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবেরিয়ায় বর্তমানের গরম গত ৭ হাজার বছরেও দেখা যায়নি।২০২০ সালের তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময় সাইবেরিয়ার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।একই সময়ের তথ্য দিয়ে সিএনএন জানায়, বিজ্ঞানীদের ভাষ্য—সাইবেরিয়ায় এমন তাপপ্রবাহের পেছনে জলবায়ু সংকট দায়ী থাকার সম্ভাবনা আছে। কেননা, মানুষের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন না হলে আর্টিক অঞ্চলে এমন পরিবর্তন দেখা যেতে পারে প্রতি ৮০ হাজার বছর পর পর।

উত্তর গোলার্ধে খরা

গত গ্রীষ্মে উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপ হয়ে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত উত্তর গোলার্ধ খরায় কেটেছে। এর ফলে ফসলহানি, পানির সংকট ও দাবানল দেখা গেছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় খরা দেখা দিয়েছে। গরমের কারণে চীন ও ইউরোপে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

পূর্ব আফ্রিকায় খরা

বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল 'আফ্রিকার শিং' হিসেবে খ্যাত পূর্ব আফ্রিকায় গত টানা ৩ বছর ধরে খরা চলছে। ফলে, সেই অঞ্চলে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও কেনিয়ার বিস্তৃত এলাকায় ফসলহানির পাশাপাশি পানির তীব্র সংকট চলছে। গবাদিপশুগুলো খাবারের অভাবে শুকিয়ে মরছে।এই খরাকে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করে সিএনএন জানায়, এর প্রভাব মানুষের ওপর চরমভাবে পড়ছে। সেখানে মারা গেছেন অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। এ ছাড়া, ২ কোটি মানুষ পড়েছেন তীব্র খাদ্য সংকটে।

দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ

দক্ষিণ এশিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ, বিশেষ করে বাংলাদেশে গরমের কথা পাঠকদের কাছে বিশেষভাবে তুলে ধরা বাহুল্যই বটে।বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে সিএনএনর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে 'হয়ত মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা অন্তত ৩০ গুণ বেড়ে এমনটি হয়েছে'।কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্যমতে, জীবাশ্ম জ্বালানির বহুল ব্যবহার শুরুর আগের দীর্ঘ সময়ের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির তুলনায় গত বছর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ৪৮ ডিগ্রি।বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই মাস থেকে প্রায় প্রতিদিন বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছে। একই সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ ছিল।বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির এই রেকর্ড বলছে, আন্তর্জাতিকভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, বিশ্ব সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে।

শুধু যে ২০২৩ সাল উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তা নয়, একই সঙ্গে গত বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অতীতের যত রেকর্ড ভেঙেছে তাতে অবাক হয়েছি

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ডেসলার। তিনি বলছেন, ‘শুধু যে ২০২৩ সাল উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তা নয়, একই সঙ্গে গত বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অতীতের যত রেকর্ড ভেঙেছে তাতে অবাক হয়েছি।’ অ্যান্ড্রু ডেসলার বলেন, অতীতের রেকর্ডগুলোর সঙ্গে গত বছর হওয়া রেকর্ডগুলোর ব্যবধানগুলো সত্যিই বিস্মিত হওয়ার মতো।বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক পেত্তেরি তালাস বলেন, ‘এগুলো শুধু উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান নয়। এই চরম আবহাওয়া প্রতিনিয়ত বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস করে দিচ্ছে।’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা গেলে তা মানবজাতিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে সাহায্য করবে। বিশ্ব নেতারা ২০১৫ সালে ব্যাপক নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিশ্বকে উষ্ণতা বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সর্বশেষ পূর্বাভাস বলছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। প্রতিবেদনে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও পরিবেশের উপর এর বিপর্যয়কর প্রভাব নিয়ে বিপদ ঘণ্টা শোনা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞানীরা এটাকে পৃথিবীর জন্য একটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যেখান ফেরার আর কোনো পথ থাকবে না

গবেষকরা দেখেছেন যে, পৃথিবী ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার মাত্রাও ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে এবং চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদই সেটা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা এটাকে পৃথিবীর জন্য একটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যেখান ফেরার আর কোনো পথ থাকবে না। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ও গবেষণাটির সহ-লেখক নোয়া ডিফেনবাঘ বলেছেন, এক ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের ওপর ইতোমধ্যে যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে তার স্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’

বৈশ্বিক জলবায়ু বিশ্লেষণ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতিকে প্রশিক্ষণ দেন বিজ্ঞানীরা

এ গবেষক আরও বলেন, নতুন একটি পদ্ধতি (এআই) ব্যবহার করে করা নতুন এই গবেষণার ফলে সেসব প্রমাণ আরও শক্তিশালী হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আমরা অবশ্যই জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হব এবং আমরা যে প্রভাব ইতোমধ্যে অনুভব করছি তা আরও তীব্র হবে।গবেষণায় এক ধরনের কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু বিশ্লেষণ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতিকে প্রশিক্ষণ দেন বিজ্ঞানীরা। এরপর সেটাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন শিল্পবিপ্লব যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করতে বলা হয়।

১৯৮০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ২০২২ সাল পর্যন্ত রেকর্ড করা ১.১ ডিগ্রি উষ্ণতার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে

ফলাফলে দেখা যায় যে, ২০৪৪ ও ২০৬৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন চিহ্ণিত দুই ডিগ্রির মাত্রা অতিক্রম করার প্রায় ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন দ্রুত হ্রাস পেলেও।গবেষণার মডেলটি কতটা সঠিক তা বোঝার জন্য ঐতিহাসিক পরিমাপগুলোও গবেষণা পদ্ধতিতে যুক্ত করা হয়। ১৯৮০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ২০২২ সাল পর্যন্ত রেকর্ড করা ১.১ ডিগ্রি উষ্ণতার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। অর্থাৎ, কল-কারখানার ধোঁয়া, বনাঞ্চল উজাড়সহ মানবসৃষ্ট দূষণ না হলে এমনটি হতো না।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে সব দেশ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ তার অন্যতম। অথচ বাংলাদেশ থেকে অতি নগণ্য অংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয়। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মূলত উন্নত দেশগুলো দায়ী, তাই অতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোকেই বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে আরও যত্নবান হবে এটাই সবার প্রত্যাশা।পৃথিবীর উষ্ণতার আগের সব রেকর্ড ভাঙল। ২০২৩ ছিল এই গ্রহের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। শুধু তাই নয়, বলা হচ্ছে, সম্ভবত গত এক লাখ বছরের মধ্য পৃথিবী সবচেয়ে উষ্ণতার রেকর্ড গড়েছে গত বছর। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন উষ্ণ হয়ে উঠেছে পৃথিবী। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।


তথ্যসুত্র

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও পরিবেশের উপর , Somoynews.

যে সামান্য জলীয়বাষ্প , Dhakapost.

বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি,, Prothomalo.

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির অন্যতম , Jugantor.

বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে, Ittefaq.

মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন, The Daily Star.

Subscribe for Daily Newsletter