গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব (Importance of Democratic Values)

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব (Importance of Democratic Values)

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কি

ব্যক্তিগত জীবনে আমরা প্রত্যেকেই মূল্যবোধ কথাটির সাথে সম্পর্কিত। এটি আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূল্যবোধ বলতে বোঝায় মানুষের এমন কতগুলো মানবিক গুণাবলী যেখানে ভালো ভালো কিছু গুণের প্রকাশ ঘটে থাকে এবং এই গুনাবলী গুলোর মাধ্যমে মানুষ উক্ত ব্যক্তির উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং এই মূল্যবোধ গুলো প্রতিটি মানুষ চর্চা করে থাকেন তখনই সেটি হচ্ছে মূল্যবোধ। অর্থাৎ এর মাধ্যমে ব্যক্তির ভালো ভালো আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হচ্ছে একটি সমাজে বসবাসকৃত প্রতিটি মানুষের মতামত গ্রহণ করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সেটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ।।

প্রকৃত অর্থে তিনি দীর্ঘকাল সেনা-স্বৈরশাসিত কদর্য অন্তরায় সমূহকে নস্যাৎ করে দেশকে নবতর পর্যায়ে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির আচ্ছাদনে সরকার পরিচালনা করে যাচ্ছেন। দল-মত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে উপকৃত হয় ও সকল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের উর্ধে দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালনে দেশরত্ন শেখ হাসিনার আহ্বান সত্যিকার গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের অনবদ্য পরিচায়ক।

দলভিত্তিক প্রতিযোগিতায় জনগণ কর্তৃক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর দেশ পরিচালনায় কোন দলীয় পরিচয় থাকা অনাকাক্সিক্ষত-অনভিপ্রেত। পবিত্র সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়-অঙ্গ সংস্থাসমূহ সমগ্র জনগণেরই মঙ্গল সাধনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা বিশেষ দলের স্বার্থ রক্ষা নয়, সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপই হবে পুরো জাতির নন্দিত প্রেক্ষাপট। মোদ্দাকথা দল-মত যার যার প্রধানমন্ত্রী-সরকার সবার। উল্লেখ্য, আত্মবিশ্বাসটুকু অত্যুজ্জ্বল করার মাধ্যমে যে কোন কিছুর বিনিময়ে গণতন্ত্র অপরাজিত থাকুক- বিনয়ের সঙ্গে এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকাশে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকা

ব্যক্তির আত্মানুসন্ধান, উপলব্ধি, তার স্বাধীনতা, অধিকার, নৈতিকতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সভ্যতার ইতিহাস ইত্যাদি জানার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি সরকার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, প্রাপ্যতা, অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে যেমন সচেতন হয়ে থাকেন তেমনভাবে জনসাধারণের বিশাল অংশের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকাশের অন্যতম একটি উৎস গণগ্রন্থাগার। ব্যক্তি তার নিজের বা অন্যকোনো দেশ বা জাতির ইতিহাস-শিক্ষা-সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি-মতাদর্শ ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা, পর্যাপ্ত জ্ঞানচর্চা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের সুযোগ পান। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যখন থেকে গণগ্রন্থাগারের সূচনা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তখন থেকেই মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রগুলো উৎকর্ষতার অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে।

অনেক জায়গায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আরো ঋজু এবং দৃঢ় হওয়ার সুযোগ লাভ হয়েছে। মানুষ নিজ জীবনযাপনের মানোন্নয়নে সচেষ্ট থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে আইনের শাসন এবং অন্যায়-অনাচার-শোষণ-অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার শক্তি পেয়েছে। বিশ্বের রাজনৈতিক কাঠামো ও সরকার ব্যবস্থাপনা, বাজার ও অর্থব্যবস্থা, সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোর পরিসর আরো উন্নত ও আধুনিক করার চেষ্টা করেছে। মূলত সবই হলো নিজেকে জানার ফলাফল এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার অদম্য আগ্রহে। গণগ্রন্থাগারের সমৃদ্ধ সংগ্রহ এবং তার সুষ্ঠু ব্যবহার মানুষের জীবনকে ইতিবাচক পরিবর্তন ধারায় সংশ্লিষ্ট করে। চিন্তা-বুদ্ধি-কৌশল বিভিন্ন প্রেক্ষিত থেকে বিশ্লেষণ নানান যুক্তিতর্কের অবতারনা এবং সে-সবের ক্রমঅগ্রসর গতি জাতিকে সঠিক পথনির্দেশ বা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে গণগ্রন্থাগার। 

জনগণের ওপর গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে। বস্তুত জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা ও ভাবধারা যতই বিস্তার লাভ করবে গণতন্ত্র ততই সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে। অর্থাৎ এককথায় বলা যায়, গণতন্ত্রের সফলতা নির্ভর করে গণতান্ত্রিক চেতনা বা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর। গণতান্ত্রিক মল্যবোধ গণতন্ত্রকে সফলতা দান করে এবং নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায় ও নাগরিকদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখায়। পাশাপাশি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি যে সমস্যার মুখোমুখি হবে তার সমাধানের পথও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দেখিয়ে দেয়। ব্যক্তির সহনশীল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাসের জন্য যে সুষ্ঠু ও সামাজিক পরিবেশের প্রয়োজন তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার মধ্য দিয়ে অর্জিত হতে পারে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নেই, আছে দলীয় চর্চা

লেখক–গবেষক হাসনাত আবদুল হাই বলেন, ‘একাডেমিক অ্যাকটিভিজম’ শব্দটি অপরিচিত ছিল। অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ এটি প্রয়োগ করেছিলেন তাঁদের সমাজ, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবোধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক সক্রিয়তার বিষয়টি বর্ণনা করার জন্য। তিনি বলেন, শুধু শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকতা নয়, তিনি পত্রিকা প্রকাশসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬৭ সালে রেডিওতে রবীন্দ্রসংগীত প্রচারে নিষেধাজ্ঞা এলে এর বিরুদ্ধে তিনি শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলন পরস্পরকে প্রভাবিত করে একধারায় অগ্রসর হয়েছে।

সাবেক সচিব মুহাম্মদ আসাফ্‌উদ্দৌলাহ্‌ বলেন, খান সারওয়ার মুরশিদ ছিলেন পশ্চিমা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, সুরুচিসম্পন্ন অত্যন্ত পরিশীলিত আচরণের মানুষ। তিনি সমাজের যে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, বর্তমানে তার কিছুই অবশিষ্ট নেই।

নির্বাচনের বছরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার গুরুত্ব অত্যধিক

একটা বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু বলেই আজকের আলোচনার ইতি টানতে চাই। গণতন্ত্রের মূল কথা নিজের চিন্তাধারার বিপরীত চিন্তাধারার প্রতি আস্থা পোষণ করা। মানুষ সাধারণত নিজেদের ভুল নিজেরা দেখতে ও বুঝতে পারে না। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকলে এবং বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের মতামত প্রকাশের অবাধ ব্যবস্থা চালু থাকলে শাসকদের পক্ষে নিজেদের ভুল বুঝবার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে যারা সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে তাদের দ্বারা সরকার নিজেদের ভুল সম্পর্কে অবহিত হওয়া ও তার সংশোধনের সুযোগ পেয়ে উপকৃতই হয়। সেক্ষেত্রে সরকারের সমালোচকরাও এক হিসাবে সরকারের সহায়ক ভূমিকাই পালন করে। সে নিরিখে নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে বিরোধী দলের লোকদেরকে শত্রু মনে না করে তাদের সমালোচনা থেকে নিজেদের ভুল বুঝতে চেষ্টা করার এবং দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের কাজ করার সুযোগ গ্রহণই সবার জন্য অধিক কল্যাণকর।

দেশে গণতন্ত্র সচল থাকলে আমাদের উন্নতি অবশ্যসম্ভাবী। পক্ষান্তরে ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে আমরা যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও জোরদার করার পরিবর্তে দুর্বল করে ফেলি, তবে আমরা স্বাধীনতাকেও নিজেদের অজান্তে দুর্বল করে ফেলবো এবং তা হবে এক ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। দেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে স্বাধীন দেশকে শক্তিশালী করার চিন্তা অবাস্তব। এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া যায়।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

তিন দশক আগে সবাই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে উচ্চাশা পোষণ করেছিল,আজ তা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অপসৃত হয়েছে।নিয়মিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বেসামরিক রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় আসবেন এবং তারাই দেশ চালাবেন গণতন্ত্রের এই একটি মাত্র দিকের ওপর মাত্রা- তিরিক্ত জোর দিতে গিয়ে আমরা আইনের শাসন, ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা,বিচার বিভাগের স্বাধীনতা-নিরপেক্ষতা, বহুমতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সুশীল সমাজ,মুক্ত গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রভৃতির মতো গণতন্ত্রের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ অপর বিষয়গুলোকে যে অবহেলা করে এসেছি, তা এখন আমরা টের পাচ্ছি। এদিকে মনোযোগ কম দেওয়ার সুযোগে অনেক দায়সারা গোছের গণতন্ত্রের নেতাদের পক্ষে স্বৈরতন্ত্রীকরণে ঢোকা সহজ হয়েছে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কি ভূমিকা পালন করে

যদি পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং অপর পক্ষের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতায় সম্মতথাকে, তাহলে একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।মূল্যবোধের চর্চা সাধারণ জনগণের মধ্যে শাসনকারী কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে আস্থার জন্ম দেয়, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি।গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ না থাকলে আইনের কোন মূল্যায়ন থাকে না।সেক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসসম্পন্ন ব্যক্তি সাধারণত ন্যায়পরায়ণ হয়। সমাজে এমন নাগরিকের সংখ্যা বেশি হলেসুশাসন প্রতিষ্ঠায় সচেতন নাগরিক একান্ত কাম্য। মানবিক গুনাবলী ও মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিরাইসচেতন হয়ে থাকে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত হয়।  গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি কেবলমাত্র অধিকার ভোগ করে না বরং রাষ্ট্রের প্রতি তার যে দায়িত্ব সেগুলোও ভালোভাবে পালন করে। 

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বাড়াতে সংসদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রীতি ও মূল্যবোধ জোরালো করার ক্ষেত্রে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই সংসদ সদস্যগণকে এ লক্ষ্যে জনগণের মাঝে কাজ করে যেতে হবে।’‘সংসদ সদস্যগণের মাঝে জ্ঞানভিত্তিক সংসদীয় চর্চা জোরালো করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সংসদ সদস্যগণ জনগণের জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় পর্যায়ে এবং একইসঙ্গে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পার্লামেন্টারিয়ান্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএপিপিডি) সংসদ সদস্যগণের মাঝে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক সচেতনতা জোরাল করতে কাজ করছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও বাজেট সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ও প্রতিবেদন সরবরাহ করার জন্য পাবলিক ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম, বাজেট এনালাইসিস ও মনিটরিং ইউনিট এবং জাতীয় সংসদের লাইব্রেরী ও গবেষণা শাখা কাজ করছে।’

গণতন্ত্র-মানবিক মূল্যবোধের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ও মানবিক মূল্যবোধের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। অথচ স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল লক্ষ্যই ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। নানা কারণে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি দেশ।বিশিষ্টজনদের মতে, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি হলেও দেশের যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে সারা বিশ্বে আমরা প্রশংসিত। এজন্য আমরা গর্বিত। কিন্তু গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়নে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে অথচ একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রের অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ।

মঙ্গলবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তারা আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি বিষয়ে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব। রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া। জনগণের পছন্দ-অপছন্দকে তারা আমলেই নিচ্ছে না। নির্বাচন নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।এর পাশাপাশি আমাদের দেশে দীর্ঘদিন অনির্বাচিত সেনা শাসকরা নানা উপায়ে দেশ পরিচালনা করছে। তাদের কাছে গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশ আশা করা যায় না।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ক্ষয়

ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের মৌলিক বিষয় হওয়া সত্তে¡ও এর প্রতিফলন কতটুকু প্রায়োগিক প্রাসঙ্গিকতায় গ্রহণযোগ্য, তা বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। বিংশ শতাব্দীর সংঘটিত নানা ঘটনা প্রবাহের পর্যালোচনায় দেখা যায় মুক্তসমাজ প্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক শিখরের গভীরে প্রোথিত ছিল মানবজাতির আইনের শাসন, সীমিত সরকার ও ক্ষমতার ভারসাম্যের চিন্তা-চেতনা-ধারণার সমন্বিত প্রয়াস। এরই ভিত্তিতে বিভিন্ন স্বৈরতন্ত্রের ঘৃণ্য নীতিমালাকে পর্যুদস্ত করে গণমানুষের ইচ্ছাশক্তি, ঋজুতা ও সৃষ্টিশীলতার অবারিত ক্ষেত্র মানবতাবাদের বিজয়কে নিশ্চিত করেছে। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মানবিক মর্যাদা-পরমতসহিষ্ণুতা, পরশ্রীকাতরতা-প্রতিহিংসাপরায়ণতা সংহার করে পর্যাপ্ত আলোচনা-আপোস-সমঝোতার ভিত্তিতে নাগরিক স্বাধীনতা ভোগের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও কার্যক্রম সচল থাকে।

জনগণের স্বাভাবিক জীবন নির্বাহের অধিকার নিশ্চিতকল্পে পবিত্র সংবিধান হয়ে থাকে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার উৎসসূত্র। ‘বন্দুকের নল নয়, জনগণই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ প্রতিপাদ্যকে পরিপূর্ণ ধারণ করেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উৎকর্ষতা সভ্যসমাজের প্রাণিধানযোগ্য অনুষঙ্গ। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের অধিকার প্রয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করে সমাজের স্বয়ম্ভরতা অর্জনে মানুষ তার স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক বিবেককে জাগ্রত করা অপরিহার্য মনে করেছে। 

সর্বশেষ কথা হলো, বৃহৎ পরিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা সৃষ্টির জন্য শুধু নাগরিকদের আন্দোলনই যথেষ্ট নয়। সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও সমাজের বাইরে ছিটকে পড়া মানুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অনস্বীকার্য মৌলিক ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারকাজ এসব অসংগঠিত ও বিক্ষিপ্ত আন্দোলন দিয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বিগত বহু দশক জুড়ে বহু গণতান্ত্রিক দেশে ধনী উদারপন্থিরা সরকারি খাতে মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহের ব্যবস্থা করেননি। বহু গণতান্ত্রিক দেশে আমরা কতটা বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য সমাজব্যবস্থার মধ্যে বাস করি, তা এই করোনা মহামারি খোলাসা করে দিয়েছে। এর ফলে এই ব্যবস্থাগুলোর আমূল সংস্কার দরকার। যখন দেশে দেশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিরোধ স্ফুলিঙ্গ সুসংহত হয়ে একটি টেকসই সংগঠন ও নেতৃত্ব তৈরি করতে পারবে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি নিয়ে তা এগিয়ে যেতে পারবে, কেবল তখনই সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা বিনির্মাণের পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।


তথ্যসুত্র

জাতিরাষ্ট্রই গণতন্ত্রকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, Dailyjanakantha.

মানবিক মূল্যবোধের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি, Jugantor.

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের , Sarabangla.

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এর নিবিড় সম্পর্ক , Qualitycando.

নাগরিক স্বাধীনতা অপরিহার্য, Dailyjanakantha.

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে উচ্চাশা , Deltatimes24.

 বাংলাদেশে অদ্যাবধি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা , Dailyinqilab.

একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মূল্যবোধ, Trendinganswer.

যে গণতান্ত্রিক সমাজ আমাদের প্রত্যাশিত, Prothomalo.

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কেন গুরুত্বপূর্ণ , Sahajpora.

উন্নত ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, Ajkalerkhobor.

Subscribe for Daily Newsletter