সংবাদপত্র পড়ার গুরুত্ব (Importance of Reading Newspapers)
সংবাদপত্র হল এক মাধ্যম যার দ্বারা বিভিন্ন রকমের খবর প্রচার করা হয়। বর্তমানে এই প্রচারের কাজ টেলিভিশন ও করে থাকে। এমন কি মানুষ মোবাইলেও ই-নিউজ শুনতে থাকে। এই কারনেই সংবাদপত্রের ব্যবহার কিছুটা হলেও প্রভাবিত হয়েছে। ২০০৭ সালে, দৈনিক খবরের কাগজের সংখ্যা ছিল ৬৫৮০। আর সেই সব সংবাদপত্র এর চাহিদা ছিল- প্রতিদিন ৩৯৫ মিলিয়নেরও বেশী।
তখনকার দিনে সব খবর রাজ কর্মচারীরা হাতে লিখতো
প্রাচীনকালে সরকারের কর্মচারীরা বিশেষ জরুরী তথ্য যা জনসাধারনের জানা উচিত, সেইসব তথ্য পাথরে খোদাই করতো। তারপরে সেই পাথর এক বিশেষ জনবহুল এলাকায় রাস্তার ওপরে টাঙ্গিয়ে দিত।ওইরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ভারতে খবরের কাগজের প্রচলন ছিল। তখনকার দিনে সব খবর রাজ কর্মচারীরা হাতে লিখতো। তারপর সেই লিখা বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দিত।
১৭৮০ সালে, প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকার সুচনা হয়
১৭৮০ সালে, প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকার সুচনা হয়। পত্রিকাটির নাম বেঙ্গল গেজেট। এটি মাত্র দুই পাতার একটি পত্রিকা।তারপর ১৮১৮ সালে, রাজা রাম মোহন রায়ের সাহায্যে গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশ করেন।ওই একই সালের এপ্রিল মাসে, মাসিক পত্রিকার জন্ম হয়। পত্রিকাটির নাম দিগদর্শন।১৮২৮ সালের মে মাসে, একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার জন্ম হয়। নাম- সমাচার দর্পণ।১৮৫৮ সালে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সোম প্রকাশ এর সুচনা করেন। এটি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।১৮৬১ সালে, ঢাকা প্রকাশ এর জন্ম হয়।১৮৬৮ সালে, সাপ্তাহিক পত্রিকা অমৃত বাজার এর জন্ম হয়।১৮৮১ সালে, যোগেন্দ্র নাথ বসু বঙ্গবাসী পত্রিকার সুচনা করেন।
সংবাদপত্র হলো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোর একটি পেশাদার সংকলন
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে অসংখ্য সংবাদ। কোনটি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটি গুরুত্ব দাবি করে না সেটা বুঝতেই চলে যায় অনেকটা সময়। স্বল্প সময়ে তাই ঘটমান বিশ্বের সামগ্রিক ধারণা পাওয়া বেশ কষ্টকর অন্তর্জালের দুনিয়ায়। কিন্তু সংবাদপত্র হলো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোর একটি পেশাদার সংকলন। তাই একটি সুসম্পাদিত সংবাদপত্র পাঠ করে তুমি অনায়াসে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবে।
সংবাদপত্র বা পত্রিকা জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডার
সংবাদপত্র বা পত্রিকা জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডার। কিন্তু কিছু সচেতন লোক সংবাদ পত্র/পত্রিকা পড়লেও আমরা তাকে গুরুত্ব দেইনা। যার কারণে আমরা প্রত্যক্ষভাবে না হয়ে ও পরোক্ষভাবে জ্ঞান অর্জনের এক বিশাল সুযোগ হারচ্ছি। অনেকে সময়ের অভাবে পড়তে পারেনা। কিন্তু দেখা যায় অনেক সময় ঠিক মতো অপচয় হয়। অনেকে মনে করে আমরা অনলাইনে সংবাদ শুনি পত্রিকা পড়বো কেন? অনেক ছাত্র মনে করে পড়ার কমতি নেই, আবার পত্রিকা পড়ার সময় কই? এই হচ্ছে আমাদের নানা অজুহাত। আসলে কথা হচ্ছে আমরা সংবাদপত্র/পত্রিকা পাঠের গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। যার কারণে আমরা এটি পাঠে গুরুত্ব দেইনা। প্রথমত আমাদের সংবাদপত্র পাঠের গুরুত্ব বুঝা দরকার। কেননা শুনা এবং নিজে পড়া এর মধ্যে অনেক পার্থক্য।
বর্তমানে সময়ে দেশ বিদেশ সম্পর্ক পত্রিকা পাঠের মাধ্যমে অনেক বেশি জানা সম্ভব
বর্তমানে আমরা বাঙালি জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক পিছিয়ে। কেননা আমরা শুধু একাডেমিক পড়াশোনার উপর নির্ভরশীল। যার কারণে আমর একাডেমিকভাবে অনেক শিক্ষিত হতে পারলে ও সত্যিকারের জ্ঞানশীল ব্যক্তি হতে পারিনা। নিজেদেরকে সত্যিকারের জ্ঞানশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়তে যেমনি প্রয়োজন, তেমনিভাবে প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান। আর নিজেদেরকে আরো জ্ঞান বিজ্ঞানে পারদর্শী করতে প্রয়োজন কুরআন হাদিস, সাহিত্য, বিভিন্ন জাতির ইতিহাস সম্পর্কে জানা ও নিয়মিত সংবাদপত্র/পত্রিকা পাঠ করা। আর বর্তমানে সময়ে দেশ বিদেশ সম্পর্ক পত্রিকা পাঠের মাধ্যমে অনেক বেশি জানা সম্ভব। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত পত্রিকা পাঠে আগ্রহী হওয়া । তাই আর দেরি নয়, শুরু করুন এখন থেকে।
চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারির জন্য দৈনিক পত্রিকা পড়লে বেশ কিছু বিষয়ে ভালো করা যায়
বিসিএস, ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারির জন্য দৈনিক পত্রিকা পড়লে বেশ কিছু বিষয়ে ভালো করা যায়। বিসিএসের সাধারণ জ্ঞান অংশ থেকে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে থাকে ৩০ নম্বর আর আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে থাকে ২০ নম্বর। ব্যাংকের প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেও সাধারণ জ্ঞান অংশে ২০ নম্বর থাকে। বিসিএস ও ব্যাংক দুটি পরীক্ষাতেই দেখা যায়, বাংলাদেশ, পৃথিবীর ইতিহাস, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের উন্নয়ন, বিভিন্ন পুরস্কার, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, খেলাধুলা, ভৌগোলিক অবস্থান, সভ্যতা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস, যুদ্ধ, পরিবেশগত ইস্যু, খেলাধুলা, বিভিন্ন সম্মেলন, জাতিসংঘ, অর্থনীতি, ব্যাংকিং সিস্টেম ইত্যাদি থেকে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ প্রশ্ন হয়ে থাকে। নিয়মিত পত্রিকা পড়া ছাড়া এসব অংশে ভালো করা কঠিন।
ইংরেজি পত্রিকা একজন পরীক্ষার্থীর ভোকাবুলারি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের সাম্প্রতিক অংশ থেকে প্রতি পরীক্ষায় ৫ থেকে ৭ নম্বরের প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। সাধারণ বিজ্ঞানের আধুনিক বিজ্ঞান অংশ এবং দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি অংশ থেকেও বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বেশ কিছু প্রশ্ন হয়ে থাকে। নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এসব প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই দেওয়া সম্ভব। ইংরেজি পত্রিকা একজন পরীক্ষার্থীর ভোকাবুলারি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিনোনেম, অ্যান্টোনেম, অ্যানালজি, স্পিলিং ইত্যাদি অংশ থেকে প্রতি পরীক্ষায় ৭-৮ নম্বর চলে আসে। ইংরেজি পত্রিকা পড়ুয়া একজন পরীক্ষার্থী এসব অংশে ভালো করবে, যা তাকে অন্যান্য পরীক্ষার্থী থেকে অনেক এগিয়ে রাখবে।
সংবাদপত্র হাতে নিয়ে তাতে চোখ বুলানো ছিল মধ্যবিত্তের দীর্ঘদিনের অভ্যাস
খুব বেশি দিন আগের কথা নয় যখন মুদ্রিত সংবাদপত্র ছিল শিক্ষিত মানুষের প্রতিদিনের জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হকারের দিয়ে যাওয়া সংবাদপত্র হাতে নিয়ে তাতে চোখ বুলানো ছিল মধ্যবিত্তের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। কিন্তু হঠাৎই প্রযুক্তির বিপুল প্রসারে টেলিভিশন চ্যানেলের প্রচার সময় এবং সংখ্যা বৃদ্ধি, ইন্টারনেটের আবির্ভাব আর দ্রুতই তা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের জন্য সহজলভ্য হয়ে যাওয়া প্রভৃতি ঘটনায় মানুষের প্রতিদিনের অভ্যাসেও এসে গেল বড় পরিবর্তন।
সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণও চলে এসেছে
চিঠির স্থান দখল করল ই-মেইল আর মেসেঞ্জারে পাঠানো বার্তা। সামনাসামনি দেখা করার পরিবর্তে কথা বলা শুরু হলো ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে। টাকা তোলার জন্যও চেক লেখার পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে থাকল এটিএম মেশিন। ছাপা বই কেনা বা সংগ্রহ করার পরিবর্তে খোঁজা শুরু হলো ই-বুক বা বইয়ের পিডিএফ ফাইল। সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণও চলে এসেছে। মোবাইল ফোনেই মানুষ এখন সংবাদপত্র পড়তে পারে যে কোনো সময়ই। বর্তমান সময়ে তথ্য সংগ্রহ এবং যোগাযোগ করার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ মানুষ তাই করছে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। নিউ মিডিয়া বিশেষজ্ঞ লেভ ম্যানোভিচ ঠিকই বলেছেন যে, বর্তমান সমাজ একটি স্ক্রিন নির্ভর সমাজ।
অনলাইন প্রযুক্তির কারণে মুদ্রিত সংবাদপত্র আদৌ টিকে থাকতে পারবে কি
অনলাইন প্রযুক্তির কারণে মুদ্রিত সংবাদপত্র আদৌ টিকে থাকতে পারবে কি না গত এক দশক ধরেই তা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। যারা পুরনো অভ্যাসের অনুরক্ত তারা জোর গলায় বলতেন মুদ্রিত সংবাদপত্র না পড়ে অনেক মানুষই তৃপ্তি পাবেন না। তারা সংবাদপত্র কিনবেন সব সময়ই। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো চলে আসা করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রতি অনেক মানুষের নিবিড় নির্ভরশীলতাও পরিবর্তিত হয়েছে। লকডাউনের কারণে অনেক এলাকায় হকাররা প্রবেশ করতে পারেনি। বিভিন্ন জেলায় সংবাদপত্র বিতরণ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়েছে। আর সংবাদপত্র হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে প্রতিটি পৃষ্ঠা মন দিয়ে পড়া যাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস, তাদের অনেকেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় বাড়িতে সংবাদপত্র রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ছাপা সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না এমন গবেষণা তথ্য প্রচারিত হওয়ার পরও অনেক মানুষই নিরাপদ থাকার চিন্তায় সংবাদপত্র কিনছেন না।
মানবতার পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে সংবাদপত্রকে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়
জনগণের নাগরিক অধিকার এবং মানবতার পক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে সংবাদপত্রকে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়। তবে, স্বৈর সরকার বিরোধিতা রাষ্ট্র বিরোধিতা না হলেও, স্বৈর শাসকরা কৌশলে রাষ্ট্রকে সংবাদপত্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়। তবে গায়ে পড়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারের বিরোধিতা না করে সরকারের গঠনমূলক কাজের প্রশংসা করা নিরপেক্ষ সংবাদপত্রে কর্তব্য। জাতীয় স্বার্থে সরকারের নীতি ও কাজের সমর্থন দেওয়া সংবাদপত্রের দায়িত্ব। সংবাদপত্রের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
মুঘল আমলে মুসলিম শাসনেও ভারতবর্ষে সংবাদপত্রের প্রচলন ছিল। অবশ্য তখন সংবাদপত্র মুদ্রিত হতো না। রাজনৈতিক সংবাদ হাতে লেখা হতো এবং তা দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজকর্মচারীর কাছে পাঠানো হতো। তবে এই উপমহাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত সত্যিকারের পত্রিকা ‘বেঙ্গল গেজেট’। এটা একটা ইংরেজি সাপ্তাহিক। জেমস আগস্টাস হিকি নামে এক ইংরেজ ভদ্রলোক ১৭৮০ সালের ২৯ জানুয়ারি এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। হিকির গেজেট প্রকাশের ৩৮ বছর পর, ১৮১৮ সালে বাংলা সংবাদপত্রের অভ্যুদয় ঘটে। ‘দিকদর্শন’ নামের আদি বাংলা সাময়িক পত্রটির প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন একজন ইংরেজ। তার নাম জন ক্লার্ক মার্শম্যান। তিনি বাংলা সংবাদপত্রের প্রথম সম্পাদক। বাংলা ভাষার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশিত হয় ১৮১৮ সালের ২৩ মে।
বাংলাদেশের আজকের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে প্রথম সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল রংপুর থেকে, ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’
বাংলাদেশের আজকের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে প্রথম সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল রংপুর থেকে, ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’। সেটা ১৮৪৭ সালের আগস্টে। ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ঠিক এক শ বছর আগে। কালের যাত্রায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ আমাদের সংবাদপত্র বৈশ্বিক মানে পৌঁছে গেছে। এখন বাংলাদেশে অসংখ্য পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মিডিয়াভুক্ত সব ধরনের পত্রিকার সংখ্যা ২৮১০টি। তবে দৈনিক পত্রিকা ৫২৮টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ২৪৫টি এবং মফস্বল থেকে ২৮৩টি। আর বিশ্বব্যাপী দৈনিক খবরের কাগজের সংখ্যা এখন প্রায় সাত হাজার (২০০৭ সালে ছিল ৬,৫৮০টি)। এখন একদিনে পত্রিকা বিক্রি হয় অন্তত ৪০০ মিলিয়ন কপি। ২০০৭ সালে বিক্রি ছিল ৩৯৫ মিলিয়নেরও বেশি।
সাংবাদিকের জন্য সংবাদপত্রই উৎকৃষ্ট স্থান
অনেকে মনে করেন বেতার, টেলিভিশন ও অনলাইন মিডিয়ার কারণে এখন প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব ও প্রাধান্য কমে যাচ্ছে। তবে এটা কেউ কেউ মানতে রাজি নন। কারণ, সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা ও নেপথ্য কারণ এবং সংবাদের পেছনের সংবাদ খুঁজতে সংবাদপত্রের বিকল্প নেই।তারা মনে করেন, সাংবাদিকের জন্য সংবাদপত্রই উৎকৃষ্ট স্থান। অবশ্য এটা সত্য, ইউরোপ-আমেরিকায় প্রিন্ট মিডিয়ার চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে, তবে এশিয়া-আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় প্রিন্ট মিডিয়ার প্রচার সংখ্যা এখনো বাড়ছে।
এশিয়ার মধ্যে কাগজে ছাপানো সংবাদপত্র সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়ায়
এশিয়ার মধ্যে কাগজে ছাপানো সংবাদপত্র সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এখানে ছাপানো দৈনিক পত্রিকার সার্কুলেশন বাড়ছে। মনে করা হচ্ছে, ছাপানো সংবাদপত্রের এই সার্কুলেশন বৃদ্ধি আরো কয়েক বছর চলবে। সুতরাং, দক্ষিণ এশিয়ায় সংবাদপত্রের এখনো ভয়ের কিছু নেই। বলা যায়, এটা প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে থাকার সুফল। দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো ইন্টারনেট সবার কাছে পৌঁছায়নি। সংবাদ পাওয়ার বড় ভরসা এখনো দৈনিক পত্রিকা। মানুষের আয় বাড়ছে।
শিক্ষিতের হার বাড়ছে। এতে পত্রিকার সার্কুলেশনও বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে সংবাদপত্রগুলো বিক্রি ও বিজ্ঞাপন মিলে প্রায় ১৭৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এককভাবে পুস্তক প্রকাশনা, সংগীত বা চলচ্চিত্র শিল্পের আয়ের চেয়ে বেশি। এ সময়ে সংবাদপত্র বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৯২ বিলিয়ন ডলার। আর ৮৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে বিজ্ঞাপন থেকে।
সংবাদপত্রের করপোরেট ট্যাক্স প্রস্তাবিত বাজেটে এসব দাবির ব্যাপারে কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি
সংবাদপত্রের করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, নিউজ প্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাদ দেওয়া, বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎস কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা, উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের বদলে অগ্রিম কর (এআইটি) শূন্য শতাংশ করা এবং কর্মীর আয়কর থেকে প্রতিষ্ঠানকে দায়মুক্ত করা ও তাঁর বাড়িভাড়ার পুরোটাই করমুক্ত করা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এসব দাবির ব্যাপারে কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি।
পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন শূন্যের কোঠায় নেমেছে
নোয়াব বলছে, বিশ্বায়ন ও ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে ছাপা সংবাদপত্র এমনিতেই রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। আর করোনাভাইরাসের মহামারি সংবাদপত্রশিল্পের জন্য আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন শূন্যের কোঠায় নেমেছে, পত্রিকার গ্রাহক ব্যাপকভাবে কমেছে। ফলে প্রচুর আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে। পত্রিকাগুলোর মাসিক বেতন ব্যয়, অফিস ভাড়া, ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পত্রিকা পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য সব ব্যয় অপরিবর্তিত রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি পত্রিকা প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সংবাদপত্রশিল্পের টিকে থাকা কঠিন।
সংবাদপত্রে মুদ্রিত অক্ষরেই মানুষের নির্ভরতা বেশি
করোনাকালে ‘ঘরবন্দি’ সারা দেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মানুষের মুখে ঘুরতে থাকা অসংখ্য ‘ভুল বার্তা’ সমাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে সরকারকে বিব্রত হতে হচ্ছে। তবে গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে সংবাদপত্র। সংবাদপত্রে মুদ্রিত অক্ষরেই মানুষের নির্ভরতা বেশি। বিশ্বাসযোগ্যতায় পাঠকের মনে স্থান করে নেওয়া সংবাদপত্রই সরকার ও জনগণকে গুজব থেকে মুক্ত করছে। এই করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদপত্রশিল্পে জড়িত কর্মীরা জরুরি সেবা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু সেই সংবাদপত্রের সামনেই অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা সবাই এ অবস্থার দ্রুত উত্তরণ চান।
সংস্কৃতি এবং শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের একটা ভূমিকা থাকে
সংস্কৃতি এবং শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে হয়তো একটা প্রশ্ন উঠতে পারে- একটি সংবাদপত্র কতখানি সক্রিয়তা দেখাতে পারে এর প্রসারে? সংস্কৃতি না হয় বোঝা গেল, কিন্তু শিক্ষা? এর উত্তরে বলা যায়, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের একটা ভূমিকা থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রসারে একটি সংবাদপত্রের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তবে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে যদি আমরা সংস্কৃতি ও শিক্ষার কিছু সূত্র তুলে ধরতে পারি।
শিক্ষা বিষয়টা পরিশ্রমের, চর্চার। শিক্ষাদানে পরিশ্রম আছে, শিক্ষা গ্রহণেও আছে- এই পরিশ্রমের কায়িক অংশটি গুরুতর নয়- ইটভাঙা অথবা লঞ্চঘাটে মাল টানা অনেক বেশি পরিশ্রমের। কিন্তু শিক্ষার শ্রম অংশটি আসে মেধা ও মননের অঞ্চল থেকে। অনেক পুরনো চিন্তা, মত, সংস্কার, অভ্যাস ও চর্চাকে বদলানোর মধ্যেই গুরুত্ব পায় শিক্ষার শ্রম। এই শ্রম দিতে যারা আগ্রহী, তারাই শিক্ষার সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পারেন। সংস্কৃতি কোনো জড় পদার্থ নয়; এটি একবারে অর্জন করা অপরিবর্তনশীল কোনো সামাজিক চর্চা নয়। সংস্কৃতি সতত পরিবর্তনশীল, যদিও এই পরিবর্তনটি খুব সহজে বা সর্বৈব দৃশ্যমান উপায়ে ঘটে না। সংস্কৃতির ভেতরের সময়টি খুব দীর্ঘ এবং সংস্কৃতির পরিবর্তনশীলতার পেছনে কার্যকর থাকে শিক্ষা। বিষয়টা একটু ঘুরিয়ে নিলে এ রকম বলা যায় : সংস্কৃতির গতিশীলতার পেছনে আছে শিক্ষা, যেমন শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ করে সংস্কৃতি। এ দুয়ের মধ্যে স¤পর্কটি খুবই ঘনিষ্ঠ।
তথ্যসুত্র
সংস্কৃতি সতত পরিবর্তনশীল, Jugantor.
সহায়তা বা ছাড় পেয়েছে, Kalerkantho.
সংবাদপত্র জগতের ঘটনাবহুল, Protidinersangbad.
মুদ্রিত সংবাদপত্র ছিল, Deshrupantor.
নিয়মিত পত্রিকা পড়লে, Prothomalo.
খবর প্রচার করা হয়, Bengalmotivation.
পত্রিকা পাঠের অনুপ্রেরণা , Dailysangram.
যে খবর বা তথ্যটি, Deshrupantor.