তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology)

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology)


তথ্য কি ?

তথ্য যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ইনফরমেশন ( Information )। সাধারণ ভাবে বলা যায় যে কোনো তথ্য বহুল বার্তাকে তথ্য বলা হয়। তথ্য ঘঠন হয় অনেক গুলো ডেটার সমন্বয়ে। বিশেষ করে যখন ডেটা গুলোকে প্রক্রিয়া করণ করা হয় তখন সেটি তথ্যে পরিণত হয়।ডাটা ( DATA ) হচ্ছে তথ্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ। যেমন আপনি যদি কোন কাজের জন্য একটি ফর্ম পূরন করেন উদাহরণ স্বরূপ জন্ম নিবন্ধন এর জন্য যে ফর্মটি জমা দেয়া হয় সেটিতে কিন্তু একজনের সমস্ত তথ্য দিয়ে দিতে হবে।

প্রযুক্তি কি ?

বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক বিষয় বস্তুর সঠিকভাবে প্রয়োগ করার যে ব্যবহারিক জ্ঞান রয়েছে সেটি হচ্ছে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি বলতে বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি ফলাফল মাত্র।প্রযুক্তি বলতে মানুষ তার নিজস্ব কাজের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আহরণ এবং প্রয়োগ করে নতুন কিছুর উদ্ভাবন এবং দক্ষ ভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা।

তথ্য প্রযুক্তি কাকে বলে ?

যে প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে তথ্য খুব তাড়াতাড়ি আহরণ করা যায় এবং প্রয়োজনের জন্য সংরক্ষণ, আপডেট বা আধুনিকীকরন, ব্যবস্থাপনা ও বিতরন করা হয় তাকে তথ্য প্রযুক্তি বলে। এই তথ্য প্রযুক্তিকে ইংরেজি ভাষায় ইনফরমেশন টেকনোলোজি ( Information Technology ) বলা হয় যাকে ছোট করে আইটি ( IT ) বলা হয়ে থাকে।

যোগাযোগ প্রযুক্তি

তথ্যকে আদান প্রদান করার জন্য যে যান্ত্রিক মাধ্যম ব্যবহার করা হয় তাকে প্রযুক্তি বলে। কম্পিউটারের উপর নির্ভর করেই সারা বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেশী লক্ষ্য করা যায়। আর তথ্য প্রযুক্তির মূলে যেটি রয়েছে সেটি হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট শব্দটির পুরো নাম হচ্ছে ইন্টারকান্টেড নেটওয়ার্ক ( InterConnected Network ) অন্য কথা বলা হয় নেটওয়ার্ক এর নেটওয়ার্কই হচ্ছে ইন্টারনেট। এটা এখন পুরো পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে সংক্ষেপে আইসিটি ( ICT ) বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এমন মাধ্যম যেখানে মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এটি এমন এক মাধ্যমে যেখানে এক জন ব্যাক্তি খুব সহজেই কম্পিউটার, মোবাইল, টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরণের তথ্য সংরক্ষন করে রাখে এবং সেই তথ্য যেকোনো সময় চাইলে ডিলিট, বিশ্লেষণ সমস্ত কিছু করা সম্ভব হয়।এই তথ্য ও যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি ডেটাকে ট্রান্সফার করা অতি সহজ হয়ে গিয়েছে তাই চাইলে যেকোনো প্রান্ত থেকে একজন ব্যাক্তি অন্য জনের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে এবং চাইলেই যেকোনো কিছু পাঠিয়ে দিতে পারছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে ?

প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে যে কোনো তথ্যের আদান-প্রদান, সংরক্ষণ, একত্রি করণ, প্রক্রিয়া করণ, বিশ্লেষণ, পরিবর্তন করার মাধ্যমকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ইনফরমেশন কমিউনিকেশন এন্ড টেকনোলজি বলে। সংক্ষেপে যাকে বলা হয়ে থাকে আইসিটি ( ICT = Information Communication and Technology )।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন উন্নতির ফলে গোটা বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি দূরকে এনেছে চোখের সামনে, পরকে করেছে আপন, আর অসাধ্যকে সাধন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার।তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার। যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই।

কম সময়ে বেশি তথ্য স্থানান্তর সম্ভব হচ্ছে, ফলে খরচ কম হচ্ছে। সময় ও কাজের অপচয় কম হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের ফলে ব্যবহারকারী এবং দ্রব্য উৎপাদকের মধ্যে সমন্বয় ঘটছে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাসে অংশ গ্রহন করতে পারছে।বর্তমান সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দ্বারা একক তার বা একক লিঙ্ক সিস্টেমের মাধ্যমে টেলিফোন, অডিও-ভিজুয়াল ও কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমন্বয় প্রযুক্তিকে প্রকাশ করা হয়। পূর্বে এই কাজগুলো শুধুমাত্র কম্পিউটার ব্যবহার করে করা হলেও বর্তমানে মোবাইল ও বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে আইসিটির কাজ করা হয়।

বর্তমানে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয় ১০০ কোটি ডলার। ২০২১ সাল শেষে এ আয় ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশব্যাপী ২৮টি হাইটেক পার্ক করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবিলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে।তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব থেকেই আসছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্সের (উইটসা) মহাসচিব জেমস পয়জ্যান্টস বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ ভালো করছে এবং যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই উইটসা ঢাকাকে বেছে নিয়েছে বিশ্ব সম্মেলন করার জন্য। বাংলাদেশের ভিশন ২০২১ রয়েছে, যার মাধ্যমে আইসিটিতে এগিয়ে চলেছে


তথ্যপ্রযুক্তির ধরন ও বৈশিষ্ট্য

তথ্যপ্রযুক্তির বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যথেষ্ট শক্তিশালী প্রযুক্তি হওয়ায় এটাকে সাধারণ মানুষের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সহজেই দূরত্বকে জয় করতে পারছে। তাৎক্ষণিকভাবে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে শব্দ, ছবি ও লেখা আদানপ্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এটা এমন এক প্রযুক্তি, যা পৃথিবীর যেকোনাে দেশের মানুষ আয়ত্ত করতে পারে এবং এক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এর দ্বারা সৃষ্ট নতুন কর্মক্ষেত্রগুলাে অধিকাংশই গরিব দেশগুলাের জন্য বিশেষভাবে উপযােগী। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করার জন্য কাউকে শহরের দিকে ছুটতে হয় না; বরং যে যেখানে আছে, সেখান থেকেই নতুন ধরনের উপার্জনশীল কাজে শরিক হতে পারে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে কোনাে বাধা নেই।

এগিয়ে চলার হার স্পষ্ট

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। ২০১৪ সালে বিশ্বখ্যাত প্রথম সারির ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্ম এ টি কারনির গ্লোবাল সার্ভিস লোকেশন ইনডেক্স বা জিএসএলআইয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছিল। এ টি কারনির তালিকায় ৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩২।

অগ্রগতির চিত্র

দেশে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা এক দশক থেকেই দৃশ্যমান। ইতিমধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অন্য রকম উচ্চতায়। বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিশ্বে অর্জন করে নিয়েছে নিজেদের একটি সম্মানজনক স্থান। সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের নাম হচ্ছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে অগ্রযাত্রা শুরু। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কয়েকটি অনুষঙ্গের ওপর গুরুত্বারোপ করে কাজ করে চলেছে। সে অনুষঙ্গগুলো হলো: (ক) কানেকটিভিটি ও আইসিটি অবকাঠামো (খ) মানবসম্পদ উন্নয়ন (গ) আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন (ঘ) ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা এবং অন্যান্য। বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এই উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আখ্যায়িত করছেন ডিজিটাল নবজাগরণ হিসেবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ যেসব কাজ করছে: ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি পেশাজীবীর সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা, আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় এবং জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৫ শতাংশ নিশ্চিত করা।

জীবনমানে পরিবর্তন

দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার সঙ্গে মানুষের জীবনে এর বড় প্রভাবও দেখা গেছে। বড় পরিবর্তন এনেছে উবার-পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায়। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে, তেমনি অনেকের যাতায়াতে সুবিধাও হয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বাড়ায় নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম কৃত্রিম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১

গত বছরের ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিট (স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে) কেপকেনাভেরালের জন কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটের পিঠে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ । এরপর ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে স্থাপিত হয় দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) বঙ্গবন্ধু-১।

মেড ইন বাংলাদেশ

বিদেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের হাইটেক ও মাইক্রোটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পার্কে চালু হয় দেশের প্রথম কম্পিউটার উৎপাদন কারখানা।

ফোর-জি ও ফাইভ-জি পরীক্ষা

টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের অন্যতম অর্জনের মধ্যে একটি হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক (ফোর-জি) যুগে পা রাখা। নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে চার মোবাইল ফোন অপারেটরকে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবার লাইসেন্স হস্তান্তর করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)

অবকাঠামো উন্নয়ন

অবকাঠামো উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ সারা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কানেকটিভিটি স্থাপনের জন্য বাংলাগভর্নেট ও ইনফো সরকার-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ২২৭টি অধিদপ্তর, ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং জেলা ও উপজেলার ১৮ হাজার ৫০০টি সরকারি অফিস নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ৮০০টি সরকারি অফিসে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ২৫৪টি অ্যাগ্রিকালচার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (এআইসিসি) ও ২৫টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা যাতে অফিসের বাইরে থেকেও দাপ্তরিক কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন করতে পারেন, সে জন্য তাঁদের মাঝে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপকরণসমূহ

হার্ডওয়্যার। সফটওয়্যার। ডাটা। দক্ষ জনশক্তি। প্রক্রিয়া। নেটওয়ার্ক

বিশ্ব অর্থনীতিতে আইসিটি

বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী আইসিটি তে খরচের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ইউ.এস ডলার এবং প্রতি বছর তা ৫% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি ১৫ বছরে এই খরচের মূল্য দ্বিগুণ হচ্ছে।আইসিটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোট বাজেট ব্যবহারের শতাংশ নিম্নরূপঃ

১. ৩১% - ব্যক্তিগত খরচ (আভ্যন্তরিন)।

২. ২৯% - সফটওয়্যার খাতে খরচ (বাহ্যিক)।

৩. ২৬% - হার্ডওয়্যার খাতে খরচ (বাহ্যিক)।

৪. ১৪% - বাহ্যিক সেবা সরবরাহকারী।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে করণীয়

তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের দেশে অবিলম্বে টেলিফোনের আন্তর্জাতিক সংযােগ ব্যবস্থা (ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে)-কে উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে দেশের যেকোনাে ব্যবসায়ী এ ব্যবসাকে আইনসম্মতভাবে পরিচালনা করতে পারে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারলে আন্তর্জাতিক যােগাযােগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্যবসায় যথেষ্ট গতি সঞ্চার হবে এবং দেশের জন্য অসামান্য সুফল বয়ে আনবে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উন্নয়ন

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে জনসাধারণের জন্য বহু সুযােগ সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কাউকে স্কুল-কলেজ পাশ করার আবশ্যকতা নেই বলে তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রযুক্তিতে সকলকেই কাজে লাগানাে সম্ভব। যে অশিক্ষিত লােকটি জীবনে কোনােদিন তথ্যপ্রযুক্তির কথা শােনেনি, সেও নির্ভয়ে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সকলের কাছে পৌছে দিতে সক্ষম। এর জন্য প্রয়ােজন উদ্যোগ ও আন্তরিকতা।

সাবমেরিন ক্যাবল-এর অভাব, টেলিফোনের অপ্রতুলতা, ইন্টানেটের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যান্ডউইথ-এর অপর্যাপ্ততা অতিক্রম করতে পারলে মানুষের জীবনযাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় সকল ধরনের সেবা নিশ্চিত করা যাবে। রেলওয়ে ফাইবার অপটিক ব্যবহারের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা হয়েছিল, বর্তমান সরকার সেসব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদকে সকল মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির জন্য এটি একটি বিরাট সুযােগ।

তথ্য প্রযুক্তির অবদান

আধুনিক সভ্যতার বিকাশে তথ্য প্রযুক্তি অবদান অপরিসীম। কম্পিউটারের নির্ভুল কর্মসম্পাদন ও দ্রুত গতি, স্বয়ংক্রিয় কর্মসম্পাদন, নেট ওয়ার্ক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদান প্রদান, যোগাযোগ ইত্যাদি বৈশিষ্টের জন্য তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ আজ সুবিস্তৃত। তথ্য প্রযুক্তির অবদানগুলি হল –সময়সাশ্রয়ী হয়। অপচয় রোধ করে। তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব।  তথ্যের প্রাপ্যতা যোগাযোগ সম্ভব হয়। যেমন- ফোন, ইমেল, ইন্টারনেট, এস এম এস ইত্যাদি। সর্বক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ব্যবসা– ব্যণিজ্যের লাভজনক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে।  ই–কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা হয়। শিল্প প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মনুষ্যশক্তি অপচয় কমায়। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জিনিস অর্ডার দিতে পারি।মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটায়। শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রতিষ্ঠান শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। সিটিজেন চার্টারের মতো নাগরিক সুবিধাগুলি ঘরে বসেই পাওয়া যায়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কুফল

অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্টারনেটে এমন কিছু অশ্লীল সাইট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে মানুষের নৈতিক স্থলন ঘটতে পারে। এর ফলে প্রযুক্তিগত সুবিধা এখন এতটাই বেড়েছে যে এর অপব্যবহার করে ব্যক্তির গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ছে। বেকারত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। অতিরিক্ত এর ব্যবহারের ফলে নানা রকম শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ব্যবহারের ফলে সব ধরনের সমস্যার সমাধান সহজে পাওয়ার কারণে চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার হতে মানুষ দূরে থাকবে। ফলে আমাদের সমাজ ও জাতি মেধাবী প্রজন্ম হতে বঞ্চিত হবে। অনেক সময় মিথ্যা প্রচারণা করে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে ইত্যাদি।


প্রতি এক হাজার ইন্টারনেট সংযোগের ফলে নতুন ৮০টি কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে একজন কর্মী অনেক বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে। বিপজ্জনক অনেক কাজ শ্রমিকরা যন্ত্র দিয়ে করায় বিভিন্ন কারখানায় নানা রকম কাজের জন্য রোবট বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এসব যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ মানুষই করে থাকে। এতে সময় বাঁচে। কাজ নিখুঁত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এর কারণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সংযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদনশীলতায় এ বৃদ্ধিকে বাঙালি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. ইকবাল কাদির সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—সংযুক্তিই উৎপাদনশীলতা (Connectivity is productivity) অর্থাৎ প্রযুক্তিতে জনগণের সংযুক্তি বাড়লে তাদের উশুধু কর্মসৃজন নয়, কর্মপ্রত্যাশীদের কাজের সুযোগ প্রাপ্তিতেও ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির বড় ভূমিকা রয়েছে।

আগে যেকোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ড, বড় বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে সেঁটে দেওয়া হতো। আইসিটি ও ইন্টারনেটের বিকাশের ফলে বর্তমানে ইন্টারনেটে জবসাইট নামে নতুন এক ধরনের সেবা চালু হয়েছে। এসব জবসাইটে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সরাসরি তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে পারে। এ ছাড়া এরূপ কোনো কোনো সাইটে কর্মপ্রত্যাশীরা নিজেদের নিবন্ধিত করে রাখতে পারে।


তথ্যসুত্র

তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

তথ্যপ্রযুক্তির ধরন ও বৈশিষ্ট্য

তথ্য প্রযুক্তির অবদান

বিশ্ব অর্থনীতিতে আইসিটি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কুফল

তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশ

গবেষণায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির

Subscribe for Daily Newsletter