কাঠাল: বাংলাদেশের জাতীয় ফল (Jackfruit)

কাঠাল: বাংলাদেশের জাতীয় ফল  (Jackfruit)
Taken From Ekushey Tv

কাঁঠাল এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus (ইংরেজি নাম: Jackfruit) মোরাসিয়া পরিবারের আর্টোকার্পাস গোত্রের ফল। এক প্রকারের হলুদ রঙের সুমিষ্ট গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসাবে সরকারীভাবে নির্ধারিত।

ّّকাঁঠাল কেন জাতীয় ফল?

যেকোনো দেশের জাতীয় পশু, পাখি, ফল, ফুল ইত্যাদি বাছাই করার আগে সাধারণত দুটি বিষয় খুব ভালো করে দেখা হয়। প্রথমটি হলো—যে দেশের জাতীয় ফুল, ফল ইত্যাদি নির্বাচন হচ্ছে, সে দেশে সেই জিনিসটি অনেক বেশি পরিমাণে আছে কি না। অনেক বেশি থাকার অর্থ হলো সেই জিনিসটির সঙ্গে সবাই পরিচিত। যেমন—শাপলা ফুলের কথা বলা যায়।আমাদের দেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে খালে-বিলে সাদা শাপলা ফুল ফোটে। ছেলে-বুড়ো সবাই খুব ভালোভাবে ফুলটিকে চেনে ও জানে। এরপর আসে আশপাশের অন্য কোনো দেশ সেটিকে আগে থেকেই তাদের জাতীয় কোনো কিছুর মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে কি না। যেমন—আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল।

আমাদের পাশের দেশ ভারত যদি দোয়েলকে আগেভাগেই নিজেদের জাতীয় পাখি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ফেলত, তাহলে সেটি বাংলাদেশের জাতীয় পাখি হতে পারত না। এবার আসা যাক কাঁঠালের কথায়। কাঁঠালকে আমাদের দেশে চেনে না এ রকম একজনকেও পাওয়া দুষ্কর। আবার কাঁঠালগাছের প্রতিটি অংশই ব্যবহারযোগ্য।আমাদের দেশের পতাকার রঙ সবুজ আর লাল। অর্থাৎ, সবুজ মাঠের প্রকৃতির ভেতরে প্রভাতের লাল সূর্যের বৃত্ত। এর মিল পাওয়া যায় তরমুজের সাথে। যার বাহিরের দিকে সবুজ আর ভেতরে লাল। কিন্তু, এতো মিল থাকতেও, তরমুজ বাংলাদেশের জাতীয় ফল না হয়ে, কাঁঠাল হলো কেন?

Taken from saomoynews.Tv

কাঁঠাল একটি গুচ্ছ ফল। যা' বহুর (বাংগালীর) মাঝে একতা প্রকাশ করে। কোষগুলো রসাল ও মিষ্টি। যা' বাঙালির রসবোধের আবেগ ও মিষ্টি ব্যবহার প্রকাশ করে। বোঁটার নিচ থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত দন্ডটি বেশ শক্ত। যা' আমাদের মেরুদণ্ডের দৃঢ়তা তথা সাবাস টাইগার চরিত্রের আস্থা প্রকাশ করে। বহিরাবরনে যে কাঁটা গুলো আছে; তা' দেশের সুরক্ষার নিদর্শন। বাহিরের আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষার কৌশল। বোঁটাটি কাঁঠালকে শক্ত করে গাছে আঁকড়ে রাখে। যা' আমাদের প্রশাসনকে বুঝায়। কাঁঠাল একটি বড়ো বৃক্ষে ঝুলতে থাকে; যার মর্মার্থ হলো, বিশ্বে বাঙালি জাতি তার শক্তি ও স্বকীয়তায় টিকে থাকবে।তাই,তরমুজ বা অন্য কোন ফল নয়; কাঁঠালই আমাদের জাতীয় ফল।

এদেশে কাঁঠাল চেনে না এমন মানুষ পাওয়া অসম্ভব । দেশের সর্বোত্র এই গাছের দেখা পাওয়া যায় । তাছাড়া কোন দেশে একাধিক ফল থাকলেও এমন একটি ফলকে ওই দেশে জাতীয় ফল নির্বাচন করা হয় যার সাথে ওই দেশের সাংস্কৃতির মিল রয়েছে । একটি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে কোন ফলের যোগ সূত্র থাকলেও সেই ফলকে জাতীয় ফল হিসেবে নির্বাচন করার জন্য বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় । আর এক্ষেত্রে অনেকেরই মত কাঁঠালের জন্ম বাংলাদেশ কিংবা এ দেশের আশেপাশের দেশের ।

এছাড়া কাঁঠালকে জাতীয় ফলের স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ফলের উপকারিতা এবং গুণগত মান কেও মাথায় রাখা হয়েছিল । শুধু মানুষই নয় এই গাছের ফল এবং পাতাও গবাদী পশুর জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় ,এছাড়াও কাঁঠাল গাছের কাঠ বেশ উন্নত মানের , এই গাছের কাঠ দিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর ফার্নিচার তৈরি করা যায় টেকসই হয় অনেকদিন ।

আবার জাতীয় ফল হিসেবে আসতে পারতো আমের কথাও , কারণ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আম একটি জনপ্রিয় ফল । কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এর জাতীয় ফল আম , তাই আমাদের দেশের জাতীয় ফল হিসেবে আমকে নির্বাচন করা হয়নি ।আমকে জাতীয় ফল হিসেবে নির্বাচন করা না হলেও আম গাছকে জাতীয় গাছ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে । এ সকল বিষয় বিবেচনা করে কাঁঠাল কে বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে । একটা ফলকে যেমনি অনেক দিক বিবেচনা করে নির্বাচন করা হয় তেমনি একটি পাখিকে জাতীয় পাখি হিসেবে নির্বাচন করার জন্য অনেক দিক বিবেচনা করা হয়।

কাঁঠাল কত প্রকার

কাঁঠালের বেশ কিছু জাত রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে চাষকৃত জাতসমূহ মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। গালা ও খাজা - এ দুটি জাত ছাড়াও কাঁঠালের আরো জাত আছে।

কাঁঠালের বেশ কিছু জাত রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে চাষকৃত জাতসমূহ মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। গালা ও খাজা - এ দুটি জাত ছাড়াও কাঁঠালের আরো জাত আছে। গালা ও খাজা কাঁঠালের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবে রয়েছে ‘রসখাজা’। এছাড়া আছে রুদ্রাক্ষি, সিঙ্গাপুর, সিলোন, বারোমাসী, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারী প্রভৃতি। তন্মধ্যে শুধুমাত্র হাজারী কাঁঠাল বাংলাদেশে আছে।

পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাঁঠাল

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। ইহা সাধারণত অযতেœ চাষ হয়ে থাকে অর্থাৎ কোন রকম পরিচর্যা ছাড়াই ফল দিয়ে থাকে। তাই কাঁঠাল জৈব উপায়ে উৎপাদিত ফল বা অরগানিক ফুড। দেশে কাঁঠালের প্রতিটি গাছই আলাদা। অন্যান্য ফলের মতো এর সম্প্রসারিত কোন জনপ্রিয় জাত বা কালটিভার নেই। তাই চাহিদামতো কাক্সিক্ষত অধিক পরিমাণ কাঁঠাল পাওয়া যায় না। বাগান আকারে কাঁঠালের চাষ বেশি না হলেও বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চত্বরে, রেললাইন ও  রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে তথা অব্যবহৃত স্থানে বাংলাদেশের সর্বত্রই কাঁঠালের চাষ হয়ে থাকে। ফলের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় কাঁঠাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি মূল বিষয় হলো-এর প্রাচুর্য, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে  থাকা এবং পুষ্টির সরবরাহ বজায় থাকা। তাই এককভাবে কাঁঠাল খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে অর্থাৎ মৌসুমে এর প্রাচুর্য থাকে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে এবং পুষ্টির চাহিদা মেটাতে উল্লেখযোগ্য হারে ভিটামিন, খনিজ এবং শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এর উচ্চ মাত্রার ক্যারোটিন যা পরবর্তীতে শরীরে ভিটামিন এ তে পরিবর্তিত হয়ে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।

সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ ফলটি মানুষ মন ভরে এবং পেট পুরে খেতে পারে। কাঁঠালের মোট ওজনের প্রায় শতকরা ৫০-৬০ ভাগ মানুষের খাদ্য। দেখা যায় যে, পাঁচ কেজি ওজনের একটা কাঁঠালে সাধারণত আধাকেজি বীজ এবং  আড়াই কেজি ওজনের পাল্প হয়ে থাকে। এতে গড়ে ১০০টি কোষ বা কোয়া পাওয়া যায়। একটা কোষের গড় ওজন প্রায় ২৫ গ্রাম। একজন মানুষ চার-পাঁচটা কোষ খেয়ে সহজেই দৈনিক ফলের চাহিদা মিটাতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় ১০০ গ্রাম কাঁঠালের পাল্প থেকে ৭.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৮.১% চিনি, ৭.০৭% প্রোটিন এবং ৫৭০ আন্তর্জাতিক একক মাত্রার ক্যারোটিন এবং ৯৪ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। ছোট ও মাঝারি কাঁঠাল শহরে, মাঝারি ও বড় কাঁঠাল গ্রামাঞ্চলে বেশি প্রিয়। বড় কাঁঠাল শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

কাঁঠালের কোন অংশ ফেলে দেবার নয়

পাকা কাঁঠালের কোষ মানুষ সরাসরি খেয়ে থাকে অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে চিপস, ক্যান্ডি, জ্যাম, জেলি, আচার ইত্যাদি তৈরি করে খেয়ে থাকে।  কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। ইহা ভেজিটেবল মিট হিসেবে পরিচিত। এর বীজ উৎকৃষ্ট মানের তরকারি। একে ভেজেও খাওয়া যায়। কাঁঠালের বীজ অনেক দিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। এজন্য মাটির পাত্রে বালুর মধ্যে বীজ রাখা হয়। বীজের উপরের ছাল ছাড়িয়ে কাপড়ে ঘষা দিয়ে ঈষদোষ্ণ গরম পানিতে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে ডিপ ফ্রিজে কয়েক মাস সংরক্ষণ করা যায় এবং তরকারিতে ব্যবহার করা যায়। কাঁঠালের  উপরিভাগ তথা চামড়া এবং অন্যান্য অংশ পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা ছাগলের খাদ্য হিসেবে সমাদৃত। কাঁঠালের কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। কাঁঠাল  গাছ বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ অর্থাৎ বছরের পর বছর তা থেকে ফল পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ফল পাওয়ার ক্ষেত্রে কাঁঠাল গাছের সাথে অন্য কোন গাছের তুলনা হয় না। শত বছরের গাছও ভালো ফলন দিয়ে থাকে। গাছের প্রধান কা- এবং প্রাথমিক শাখায় বেশির ভাগ কাঁঠাল ধরে বিধায় ঝড়ে বা বাতাসে পড়ে না। এর প্রতিটি ফলের আলাদা আলাদা যত্ন নেয়া সম্ভব। কাঁঠাল গাছ খড়া সহিষ্ণু। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কাঁঠাল থেকে প্রাপ্ত অর্থ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ে ব্যবহৃত হতে পারে।

পাকা কাঁঠালের কোষের ধরনের উপরভিত্তি করে ইহাকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:

এগুলোর মধ্যে অতি নরম বা নরম পাল্প সম্পন্ন কাঁঠালকে গিলা বা গালা বা রসা কাঁঠাল বলা হয়ে থাকে। এর পাল্প সহজেই গলে যায়, রসালো প্রকৃতির এবং বেশ মিষ্টি। নরম ও শক্ত এর মাঝামাঝি পাল্প সমৃদ্ধ কাঁঠালকে আদরসা বা দো-রসা কাঁঠাল বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের কাঁঠালও মিষ্টি হয়ে থাকে। যে কাঁঠালের পাল্প শক্ত তাদেরকে খাজা বা চাওলা কাঁঠাল বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের কাঁঠাল মাঝারি মিষ্টি হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ কাঁঠাল মৌসুমের শেষের দিকে শক্ত পাল্প সম্পন্ন হয়ে থাকে। কাঁঠালের টিএসএস সাধারণত         ১৪-৩০% হয়ে থাকে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম কাঁঠাল পাওয়া যায়। তার নামকরণ এলাকাভিত্তিক ভিন্ন হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় লাল রঙের কোষসমৃদ্ধ কাঁঠাল  পাওয়া যায় যাকে বিন্নী কাঁঠাল বলে। গাজীপুরে এক রকম আগাম কাঁঠাল পাওয়া যায় যার একটি ভিন্ন গন্ধ থাকে তাকে কুবাইরা কাঁঠাল বলে। রসালো সুস্বাদু কাঁঠালকে মধু কাঁঠাল বলা হয়। আবার এ অঞ্চলের মানুষ ৪০-৫০ কেজি ওজনের বড় কাঁঠালকে পাহাড়িয়া কাঁঠাল নামে অভিহিত করে থাকে।

কাঁঠালের প্রাপ্যতার সময়ের উপর ভিত্তি করে কয়েক প্রকার হয়ে থাকে যথাঃ

মৌসুমি কাঁঠাল (জুন-জুলাই মাসে পাকে), অমৌসুমি কাঁঠাল (অক্টোবরের পরে এবং মে মাসের আগে যেকোন সময় পাকে), নাবী কাঁঠাল যা মৌসুমের পরে পাকে অর্থাৎ আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু কাঁঠাল বছরে দুইবার ফল দেয়, যা দোফলা নামে পরিচিত, একবার মৌসুমে এবং আরেকবার অমৌসুমে; যে সকল কাঁঠাল গাছে বছরে কমপক্ষে ৮-৯ মাস ফল দেয় তাকে বারোমাসি কাঁঠাল বলে অভিহিত করা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২ ও বারি কাঁঠাল-৩ নামে কাঁঠালের তিনটি উন্নত জাত কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্য মুক্তায়িত করেছে। বারি কাঁঠাল-১ একটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চফলনশীল মৌসুমি জাত। মে মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই জাতের ফল আহরণ করা যায়। ফলের শাঁস হালকা হলুদ ও মধ্যম নরম,  রসালো এবং খুব মিষ্টি; বারি কাঁঠাল-২ একটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চফলনশীল অমৌসুমি জাত। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। ফলের শাঁস হলুদ বর্ণের, সুগন্ধযুক্ত ও মধ্যম রসালো এবং খুব মিষ্টি; বারি কাঁঠাল-৩ একটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চফলনশীল বারোমাসি জাত (সেপ্টেম্বর-জুন)। ফল দেখতে আকর্ষণীয় সবুজাভ হলুদ, ফলের শাঁস  হলুদ বর্ণের, সুগন্ধযুক্ত, মধ্যম রসালো, খুব মিষ্টি এবং এক কোষ থেকে আরেক কোষ সহজে আলাদা করা যায় ও এতে আঠা লাগে না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে আরো উন্নত জাতের কাঁঠাল কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য জাত উদ্ভাবনের উপর গবেষণা চলছে। এভাবে জাত উদ্ভাবন করে তা অঙ্গজ উপায়ে বংশবিস্তার করে সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সমমান ও সমগুণসম্পন্ন অধিক পরিমাণে কাঁঠাল পাওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ফল বিভাগ কাঁঠালের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি উপযুক্ত অঙ্গজ বংশবিস্তার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে এবং এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে কৃষকের মাঝে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ‘বারি উদ্ভাবিত বারোমাসি কাঁঠালের জাত বিস্তার’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে গাজীপুর, খাগড়াছড়ি, নরসিংদী ও ময়মনসিংহ জেলার চারটি উপজেলায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ জন কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনায় প্রতিটি জাতের ৫টি করে গ্রাফটিং এর চারা দিয়ে ১২০টি মাতৃবাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল গবেষণা মাঠে স্থাপিত বাগানে সাড়ে তিন বছরের তিনটি জাতের গাছেই ফল ধরেছে। দেশী কাঁঠালের এ রকম বাগানে কয়েকটি গাছে এই প্রথম একই রকম ফল ধরেছে। গাজীপুরের কৃষকের বাগানেও ফল ধরেছে। এই বাগানগুলো এখন মাতৃবাগান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আশা করা যায় এসব বাগান থেকে দেশে কাঁঠালের উন্নয়ন শুরু হবে।

কাঁঠালের সংগ্রহকাল সীমিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কাঁঠালের সংগ্রহকালীন সময় কিছুটা ভিন্ন হতে দেখা যায়। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার কাঁঠাল সাধারণত আগে পাকে। দেখা যায় যে ফল ধরার পর থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর তা পরিপক্ব অবস্থায় পৌঁছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে কাঁঠাল পাকতে শুরু করে। তখন সঠিক আকার প্রাপ্ত হলে তা সংগ্রহ করা যেতে পারে। পরিপুষ্ট অবস্থায় কাঁঠাল সঠিক আকার ধারণ করে যা গাছ বা জার্মপ্লাজম ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এ সময় কাঁঠালের উপরিভাগের কাটাগুলো সুচালো অবস্থা থেকে  ছড়ানো অবস্থায় আসে ও কাঁঠালের উপরিভাগের রং পরিবর্তন হয়ে সবুজ থেকে সবুজাভ হলুদ হয়ে থাকে। হাত দিয়ে আঘাত করলে তা ড্যাব ড্যাব শব্দ তৈরি করে। এ সময় কাঁঠালের বোটার আঠার ঘনত্ব  বৃদ্ধি হ্রাস পায়। অপরিপক্ব কাঁঠাল টনটনে ধাতব শব্দ তৈরি করে থাকে। কাঁঠাল পাকতে শুরু করলে অদ্রবণীয় প্রোটোপেকটিন ভেঙে দ্রবণীয় পেকটিন তৈরি হয় যার কারণে তা নরম হয়ে থাকে।

অনেকে অপরিপক্ব কাঁঠাল আগাম সংগ্রহ করে বিক্রি করে বেশি লাভবান হতে চায়, এতে ক্রেতাগণ প্রতারিত হয়ে থাকে।  সঠিক সময় এবং পরিপক্ব অবস্থায় তা সংগ্রহ করে কাঁঠালের অপচয় রোধ করা যায়। পরিপক্ব কাঁঠালকে তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য গোঁজ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে কাঠির মাথা সরু করে তা দিয়ে বোটার কিনার ঘেঁষে উপর থেকে তিন চার ইঞ্চি নিচের দিকে প্রবেশ করিয়ে গোঁজ দিলে কাঁঠাল তাড়াতাড়ি পাকে। বাণিজ্যিক কারণে অনেক কাঁঠালকে এক সাথে পাকাতে এ পন্থা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পরিপক্ব অবস্থায় সংগৃহীত কাঁঠালের গুণগত মানের কোন পরিবর্তন হয় না। অনেকে তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য গোঁজ এর মধ্যে লবণ ও দুধ দিয়ে থাকে। কাঁঠালকে  কয়েক ঘণ্টা রোদে দেয়ার পর বদ্ধ পরিবেশে রেখে দিলে তাড়াতাড়ি পাকে।

Taken From Prothom Kolkata

জাতীয় ফল খাওয়া যাদের মানা

গ্রীষ্মকালকে বলা হয় মধুমাস। আর এ সময় নানারকম রসালো ফলের মধ্যে প্রথম তালিকায় জাতীয় ফল কাঁঠালের নাম থাকে ওপরে। কাঁঠালে রয়েছে হাই কার্ব। এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফাইবার আছে কাঁঠালে।তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য দুঃসংবাদ। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকার ফলে দেহে চটজলদি সুগার লেভেল বেড়ে যায়। তাই কাঁঠালের প্রতি লোভ না দেখানোই ভালো ডায়াবেটিস রোগীদের।

এ বিষয়ে পুষ্টিবিদরা বলেন, একজন ডায়াবেটিস রোগী যদি দিনে পাকা কাঁঠালের তিন থেকে চারটি কোষ খান তাহলে ওই দিন অন্য কোনো মিষ্টি ফল খেতে পারবেন না। কেননা,  কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা পাচন প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয় ফলে আচমকা রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা কমে।পাশাপাশি যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভালো। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কাঁঠালের প্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।এ ছাড়াও কিডনি রোগীদের জন্য কাঁঠাল খাওয়া বারণ। কারণ, কাঁঠাল রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

কাঁঠাল পাতার উপকারিতা

কাঁঠাল আমাদের দেশের জাতীয় ফল হওয়ার সুবাধে আমাদের দেশে গ্রীষ্ণকালে কাঁঠালের সর্বত্র দেখা মিলে। কাঁঠাল শুধুমাত্র ফল হিসেবে উপকারি তা কিন্তু নয়। এই ছাড়াও আমাদের নানাবিধ সমস্যার সমাধান হল এই কাঁঠাল। চলুন তাহলে জেনে নেই কাঁঠাল পাতার উপকারিতা সম্পর্কে-

বরং কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণীর জন্য একটি উৎকৃষ্ট এবং উপাদেয় খাদ্য। কারণ কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে  মাংশ এবং দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।এছাড়াও কাঁঠাল পাতার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।কাঁঠাল পাতা ডায়বেটিক কমাতে ভূমিকা পালন করে। যারা ডায়বেটিক এর সমস্যায় আক্রান্ত তারা খেতে পারেন কাঁঠাল পাতার রস। মূলত ডায়বেটিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা এই পাতার রস খেলে ডায়বেটিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।যেকোনো ধরনের ব্যথা প্রশমনের ক্ষেত্রে ডায়বেটিক পাতা অনেক বেশি কার্যকরি। কোন জায়গায় ক্ষত হলে আপনি সেই ক্ষততে লাগিয়ে দিয়ে পারেন ডায়বেটিক পাতার রস। খুব দ্রুতই দেখবেন সেড়ে উঠবে সেই ক্ষত।চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণে বেশ ভূমিকা পালন করে কাঁঠাল পাতার রস।

Taken From Bangler Mukh

কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা

কাঁঠাল আমরা শুধুমাত্র ফল হিসেবে খেয়ে থাকলেও কাঁঠালের মধ্যে রয়েছে বেশ উপকারিতা। আপনি কি জানেন কাঁঠালের জানা-অজানা নানা ধরনের উপকারিতা সম্পর্কে? চলুন তাহলে জেনে নেই কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে-

মাংস পেশী গঠন:কাঁঠালের দানা আপনি শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রেখে দিয়ে তরকারি রান্না করতে পারেন। কারণ কাঠালের দানা মাংশপেশীর গঠন বৃদ্ধি করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।বার্ধক্য রেখা দূর করতে:বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে এক ধরণের বলিরেখা দেখা দিয়ে থাকে। এই রেখা আমাদের ত্বক এর স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দেয়। তাই আপনি যদি কাঁঠাল খেয়ে থাকেন কাঁঠাল আপনাদের ত্বকের বলিরেখা দূর করতে।হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:নিয়মিত কাঁঠাল খেলে আমাদের শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।ওজন কমাতে:কাঁঠালে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে কাঁঠাল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ওজন কমতে সাহায্য করে।দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখতে:কাঁঠালে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন সি। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে আমাদের দাঁতের মাড়ি শক্ত থাকে।টেনশন কমায়:নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে টেনশন কমাতে সাহায্য করে।কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে:নিয়মিত কাঁঠাল খেলে কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।খুদা নিবারণে ভূমিকা পালন:কাঁঠাল আমাদের খুদা নিবারণ করতে বেশ ভূমিকা করে।হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:নিয়মিত কাঠাল খেলে আমাদের শরীরে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টি পূরণে:নিয়মিত কাঁঠাল খেলে গর্ভবতি মহিলাদের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে।

কাঁঠালের উপকারিতা

কাঁঠাল আমাদের নানাবিধ উপকারিতা প্রদান করে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেই কাঁঠালের উপকারিতার কথা-হাঁপানি প্রতিরোধে:কাঁঠালের বাকল হাঁপানি প্রতিরোধে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কাঁঠাল চিনির পরিমাণ কমায়:কাঁঠালে এ বিদ্যমান রয়েছে ম্যাংগানিজ যা চিনির পরিমাণ কমাতে বেশ সাহায্য করে।চুল পড়া রোধ করে:কাঁঠাল  এ বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন ই। যা আমাদের চুল পড়া রোধ করে চুলের গোড়া শক্ত করে ভূমিকা পালন করে থাকে।চোখের সমস্যা সমাধানে:কাঁঠাল আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে চোখের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে থাকে।ত্বকের বলিরেখা দূর করতে:আমাদের ত্বকের নানা ধরনের বলিরেখা দূর করতে বেশ ভূমিকা পালন করে কাঁঠাল।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে:কাঁঠালে রয়েছে ভিটামিন সি, যা আমাদের শরীরে নানা ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।এজমা প্রতিরোধ করে:আমাদের শরীরে এজমা প্রতিরোধ করতে বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।সর্দি-কাশি দূর করে:কাঁঠালে বিদ্যমান রয়েছে এন্টিওক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে সর্দি কাশি প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে:কাঁঠাল আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।শর্করার অভাব পূরণে:কাঁঠাল আমাদের শরীরে শর্করার অভাব পূরণে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।কোলেস্টেরল অভাব পূরণ:কোলেস্টেরলের অভাব পূরণে বেশি কার্যকর হলো কাঁঠাল।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:কাঁঠাল আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।হাড় শক্ত রাখতে:আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে হাড় শক্ত রাখতে বেশ ভূমিকা পালন করে।পাইলস প্রতিরোধে:মানব দেহে পাইলসের সমস্যা প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।রক্তস্বল্পতা সমস্যা সমাধানে:আমাদের শরীরে রক্ত স্বল্পতা সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে কাঁঠাল।

Taken from Zeenews.india

কাঁঠালের অপকারিতা :

কাঁঠালের এত এত উপকারিতার মাঝেও তা খেতে কিছু জিনিশ মাথায় রাখতে হবে। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আমিষ থাকায় কাঁঠাল একটি গুরুপাক ফল। মানে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি হজম হতে সময় বেশি নেয়। অধিক পরিমাণে কাঠাল খেলে তা বদহজম হতে পারে। এছাড়া ডায়েবেটিক আক্রান্ত রোগীদের কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিৎ।

কাঁঠাল  এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব :

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। দেশের আনাচে-কানাচে কাঁঠালের সহজলভ্যতা বা প্রাপ্তিই এর প্রধান কারণ। গ্রামের শ্রমজীবী আপামর জনসাধারণের কাছে কাঁঠালের গুরুত্ব অপরিসীম। কাঁঠালের মতো এত বেশি পুষ্টি উপাদান আর কোনো ফলে পাওয়া যায় না। তাছাড়া কাঁঠালের দাম অন্যান্য ফলের তুলনায় কম হওয়াতে গরিব মানুষ এটা খেতে পারে। তাই কাঁঠালকে গরিবের ফল বলা হয়। তাই তো গ্রাম বাংলায় প্রচলিত আছে, ‘কাঁঠাল আর মুড়ি, হয় না এমন জুড়ি’। আবার ইচরে পাকা প্রবাদটি অপরিপক্ব কাঁঠাল পাকানো থেকেই এসেছে। গ্রাম বাংলায় পান্তা, দুধ, চিঁড়া বা খইয়ের সাথে পাকা কাঁঠাল কিংবা সিজা কাঁঠাল বা সিদ্ধ কাঁঠাল খাওয়ার প্রচলন আজও বিদ্যমান। ভারতের তামিলনাড়–– রাজ্যে উৎপাদিত ৩টি ফল আম ও কলার পাশাপাশি কাঁঠালও অন্যতম ফল হিসেবে বিবেচিত। উচ্চমাত্রায় শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় কাঁঠাল ধান বৃক্ষ (জরপব ঃৎবব) কিংবা গরিবের ফল নামে সুপরিচিত। নেপালে কিছু কিছু হিন্দু পরিবারের বিয়ে অনুষ্ঠানে মাংসের পরিবর্তে কাঁচা সবুজ কাঁঠালের সবজি পরিবেশন করা হয়ে থাকে।

উদ্ভিদতাত্তি¡ক বৈশিষ্ট্য, জাত ও চাষবাস:

আমাদের দেশে চাষকৃত কাঁঠালের প্রজাতি হচ্ছে অৎঃড়পধৎঢ়ঁং যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং। কাঁঠালের পাতার বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং নামকরণ করা হয়েছে। কাঁঠাল পৃথিবীর বৃহত্তম ফল। কখনও কখনও ৩০Ñ৩৫ কেজি, এমনকি ৪০ কেজি ওজনের কাঁঠাল দেখতে পাওয়া যায়। কাঁঠাল যৌগিক ফল (গঁষঃরঢ়ষব ভৎঁরঃ) অর্থাৎ অনেকগুলো ফুলের সমন্বয়ে এর সৃষ্টি। রোপণের ৭-৮ বছর পরেই ফল ধরা শুরু হয়, তবে ষোড়শী গাছেই সবচেয়ে বেশি ফল ধরে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ফুল আসে। সহবাসী উদ্ভিদ বিধায় একই গাছে পুরুষ ফুল (বোঁটা সরু ও দিঘল) ও স্ত্রী ফুল  (বোঁটা মোটা, খাটো ও গোড়ায় রিং আকৃতি) আলাদাভাবে ধরে। সাধারণত মূল কাÐ ও প্রধান শাখা কাÐে স্ত্রী ফুল এবং শাখা কাÐের শীর্ষে পুরুষ ফুল ধরে। পরাগায়নের পর গাছতলায় পুরুষ মুচি পড়ে থাকলে দেখে অনেকে আবার সব কাঁঠাল পড়ে যাচ্ছে বলে বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন।  একটি কাঁঠালের মধ্যে অসংখ্য কোষ বা কোয়া বা রোয়া থাকে, এগুলোই প্রকৃতপক্ষে একেকটি ফল। কোষের চারপাশে পাতলা ফিতার মতো চিটা বা চাকি থাকে। এই চিটা ও খোসাকে একত্রে ভুতি বা ভুতরো বা ছিবড়া বলে। খোসার ওপর ছোট বড় কাঁটা থাকে এবং কাঁটার সংখ্যা যত ফুলের সংখ্যাও তত হয়। স্থান ও জাতভেদে ফল পাকে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর জার্মপ্লাজম সেন্টারে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ পর্যন্ত ৯১টি জার্মপ্লাজম সংযোজিত হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্র এ পর্যন্ত বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২ ও বারি কাঁঠাল-৩ নামে তিনটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছে। সর্বশেষ জাতটিতে অমৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর-মে পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। হাজারী কাঁঠাল নামে অতি জনপ্রিয় একটি জাত রয়েছে, ছোট ছোট অনেক ফল ধরে থাকে। বাংলাদেশে চাষকৃত জাতগুলোকে তিন ভাগে ভাগ যায় যথা- ১। খাজা বা চাউলা (কোষ আকারে বড় হয়, ফ্যাকাশে হলুদ, পাকার পর কম রসালো, অপেক্ষাকৃত শক্ত বা কচ্কচে হয়, চিপলে সহজে রস বের হয় না, কাঁঠাল পাকার পরও সবুজাভ থাকে), ২। গিলা বা রসা বা রসখাজা (কোষ অত্যন্ত কোমল, মিষ্টি, রসালো, স্বাদ টক-মিষ্টি, অপেক্ষাকৃত ছোট কোয়া ও কাঁঠাল পাকার পর একটু লালচে-হলুদাভ হয়) এবং ৩। দোরসা (খাজা ও গিলা কাঁঠালের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্য)। ফল পরিপক্ব হতে ৪-৫ মাস সময় লাগে। কাঁচা ফলে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে ঠন ঠন শব্দ আর পাকা ফলে আঘাত করলে ড্যাব ড্যাব শব্দ হয়। বাংলাদেশে প্রতিটি গাছে গড়ে ২৫-২০০টি কাঁঠাল ধরে এবং প্রতিটি ফলের ওজন ৩-২৫ কেজি। কাঁঠালকে ১১-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৮৫-৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতাযুক্ত ঘরে একে ৩-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

Taken from daily news reel.

কাঁঠালের বহুবিদ ব্যবহার:

কাঁঠাল গাছকে বহুবিদ ব্যবহার উপযোগী গাছ (গঁষঃরঢ়ঁৎঢ়ড়ংব ঃৎবব) বলা হয়। এ থেকে পাওয়া যায় খাদ্য, কাঠ, জ¦ালানি, গো-খাদ্য, ওষুধ ও শিল্প উপকরণ। কাঁঠালের ফল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। বসন্তকাল থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কাঁচা কাঁঠাল কান্দা বা এচোর সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। পাকা ফল বেশ পুষ্টিকর, কিন্তু এর গন্ধ অনেকের কাছে ততটা আকর্ষণীয় নয়। তবু মৃদু অ¤øযুক্ত সুমিষ্ট স্বাদ ও স্বল্পমূল্যের জন্য অনেকে পছন্দ করেন। কাঁঠালের আঁটি বা বীজ তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া হয় অথবা পুড়িয়ে বাদামের মতো খাওয়া হয়। এর একটি সুবিধা হলো আঁটি অনেক দিন ঘরে রেখে দেয়া যায়। পাকা ফলের কোষ মানুষসহ পশুপাখি খেয়ে থাকে। এই কোষ নিংড়ে রস বের করে তা শুকিয়ে আমসত্বের মতো ‘কাঁঠালসত্ব’ ও তৈরি করা যায়। কোষ খাওয়ার পর যে খোসা ও ভুতি  থাকে তা গবাদি প্রাণির একটি উত্তম খাদ্য। পাকা ফলের বোঁটার সাথে আঁঠালো অংশটি কুমড়াজাতীয় সবজির মাচায় ঝুলিয়ে দিলে ফলের মাছি পোকা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। ভুতি বা ছোবড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকটিন থাকায় তা থেকে জেলি তৈরি করা যায়। এমন কি শাঁস বা পাল্প থেকে কাঁচা মধু আহরণ করার কথাও জানা গেছে। কাঁঠাল গাছের পাতা গবাদি প্রাণীর মজাদার খাদ্য। পাতা পিঠা তৈরিতে কাঁঠালের পাতার ব্যবহার বহুল প্রচলিত। সোনালি হলুদ গুঁড়ি থেকে তৈরি হয় মূল্যবান আসবাবপত্র, যা উঁই পোকা প্রতিরোধী এবং ছত্রাক-ব্যাকটেরিয়া রোগ পচনরোধী। সার কাঠের গুঁড়া বা টুকরো রঙ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। কাঁঠাল ফল ও গাছের আঁঠালো কষ কাঠ বা বিভিন্ন পাত্রের ছিদ্র বন্ধ করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

কাঁঠালের রকমারি খাবার :

কাঁঠালের প্রাথমিক অর্থনৈতিক গুরুত্ব হচ্ছে এর ফল যা কি না কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঁচা (সবুজ) অবস্থায় এটিকে মুরগির মাংসের বুনটের সাথে তুলনা করা হয়। ফলে নিরামিষ ভোজীদের কাছে কাঁচা  কাঁঠাল মাংসের উত্তম বিকল্প। সত্যি বলতে কি কাঁচা  কাঁঠাল বিশ^বাজারে সবজি মাংস বা ঠবমবঃধনষব সবধঃ হিসেবে পরিচিত। একদম ছোট অবস্থায় অর্থাৎ কোষ ও আঁটি গঠন হয়নি এমন ধরনের ফল দিয়ে আচার বা সবজি তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে পরাগায়নের পর পুরুষ মুচিও ব্যবহার করা যেতে পারে। ভালোভাবে মসলা দিয়ে রান্না করলে মুরগির মাংসের মতোই লাগে। কোষ ও আঁটি গঠন শুরু হলে বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করার জন্য খুবই উপযোগী। কোষ ও আঁটি পরিপূর্ণ হলে অর্থাৎ পরিপক্ব ফল চিপ্স করার উপযোগী বা অন্যান্য তরকারির সাথে রান্না করা যায়। পাকা ফলের কোষ সরাসরি খাওয়া হয়। আবার পাকা ফলের কোষ বা পাল্প থেকে ক্যান্ডি, ফ্লেক্স, চকলেট, পাপড়, বরফি, পিঠা, আইসক্রিম, জ্যাম-জেলি, হালুয়াসহ রকমারি খাবার তৈরি করা যায়। কাঁঠালে আঁটি অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ। আঁটি রোদে শুকিয়ে নিয়ে ভেজে বা পুড়িয়ে বাদাম বা কাজু বাদামের মতো খাওয়ার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। মিশ্র সবজি রান্নায় কাঁঠালের আঁটি দিয়ে উপাদেয় খাবার তৈরি করা হয়। সিদ্ধ করে কাঁঠাল আঁটির ভর্তা অত্যন্ত মুখরোচক খাবার। উচ্চ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং পানি ও তেল শোষণ করার ক্ষমতা থাকায় কাঁঠালের আঁটি থেকে তৈরি করা আটা গমের আটার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

Taken from Bvnews24

বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

বর্তমানে ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, চায়না, ব্রাজিলসহ বিশে^র অনেক দেশ কাঁচা কাঁঠাল ফ্রেস কাট সবজি (সরাসরি রান্নার উপযোগী), শুকনা কাঁঠাল, হিমায়িত কাঁঠাল কোষ বা ক্যানজাত করে স্থানীয় বাজার বা সুপার শপে সরবরাহসহ জাপান, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারিত করছে। ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠেছে। এর ফলে বছরব্যাপী কাঁঠাল হতে প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্য শুকনা আকারে বা ক্যানে পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশ থেকে পাকা কাঁঠাল সীমিত পরিসরে রপ্তানি হলেও ফ্রেস কাট সবজি হিসেবে বা ক্যানজাত করে স্থানীয় বাজার বা বিদেশে রপ্তানির কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে ফল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পরিস্থিতি খুবই দুর্বল। আমাদের উৎপাদিত কাঁঠালের সিংহভাগ সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার অভাবে নষ্ট হয়ে থাকে। যদিও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই তবে ধারণা করা হয় ভরা মৌসুমে প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়। বিপুল সম্ভাবনাময় এ খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তাগণ এগিয়ে এলে জাতীয় সমৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রাখতে পারবে। গ্রামীণ পর্যায়ে বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হবে।

আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে কাঁঠাল ওতোপ্রতভাবে জড়িত। সময় এসেছে কাঁঠাল রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমাদের দেশে কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে আয়বর্ধন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাদ্য উৎপাদনকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের যথেষ্ঠ সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষুদ্র বা মাঝারি বা ভারী শিল্প গড়ে তুলুন, আর্থিকভাবে লাভবান হউন এবং দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখুন।


তথ্যসুত্র:

কাঁঠালের উপকারিতা, Banglarchiti.

কাঁঠালের বহুবিদ ব্যবহার, ais.gov.bd.

কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল, Kaler Kantho.

কাঁঠালকে কেনো জাতীয় ফল বলা হয়।, Mama Vagana News.

কাঁঠালই আমাদের জাতীয় ফল, Some Where in Blog.

পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাঁঠাল, Ais.gov.bd.

কাঁঠালের পুষ্টিগুণ, Bangla Alo.







Subscribe for Daily Newsletter