পাট (Jute) সোনালি আঁশ (Golden Scales)

পাট (Jute) সোনালি আঁশ (Golden Scales)


পাট কী

পাট প্রাকৃতিক আঁশ, যা সোনালি আঁশ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। বিশ্বে বাণিজ্যের তন্তুর মধ্যে এবং টেক্সটাইল ফাইবার উৎপাদনে তুলার পরেই পাটের স্থান। পাটের আঁশ পট, কোষ্ট, নলিতা নামেও পরিচিত। বিশ্বব্যাপী ব্যবহার, উৎপাদন এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে এটি তুলার পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিজ্জ ফাইবার। পাটের আঁশের উপাদান হলো আলফা এবং হেমি সেলুলোজ-৮৫%, লিগনিন-১১.৫%, অ্যাশ-১.৬%, নাইট্রোজেনাস যৌগ-১% এবং অন্যান্য-০.৯%। পাট সেলুলোজ, লিগনিন, হেমি-সেলুলোজ, মোম, পেকটিন, প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত একটি লিগনোসেলুলোজিক মাল্টি-সেলুলার ফাইবার। এটি সব প্রাকৃতিক ফাইবারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সস্তা, শক্তিশালী এবং ভবিষ্যতের ফাইবার হিসেবে বিবেচিত।

এ উদ্ভিদ ফাইবার গৃহস্থালীর আসবাবপত্র যেমন কার্পেট, চেয়ারের আচ্ছাদন, পর্দা, কাপড়, বস্তা এবং আরও অনেক কিছু তৈরি করতেও ব্যবহৃত হয়। ভারত, বাংলাদেশ, চীন ও থাইল্যান্ড পাট উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয়। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং ব্রাজিলেও উৎপাদিত হয়। একসময় এটি দেশের একমাত্র বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ছিল। গত কয়েক দশক ধরে সিনথেটিক্স এবং সংযুক্ত ফাইবার থেকে তৈরি পণ্যগুলো ব্যবহারের ফলে এ পাটপণ্যটির ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এ সিনথেটিক্স এবং সংযুক্ত ফাইবার থেকে তৈরি পণ্যগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই বর্তমানে বিস্তৃত টেক্সটাইল ক্ষেত্রে আবারও পাটজাত পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে

সোনালি আঁশ

পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এজন্য বাংলাদেশে পাটকে ‘সোনালী আঁশ’ বলা হয়।
পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট একটি বর্ষাকালীন ফসল। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত। বাংলাদেশে পাটকে ‘সোনালি আঁশ’ বলা হয়ে থাকে। দুই ধরনের পাট বাংলাদেশে দেখা যায়: সাদা পাট (Corchorus capsularis) ও তোষা পাট (Corchorus olitorius)। পাটের জিনোম–এর আবিষ্কারক ড. মাকসুদুল আলম। বাংলাদেশে বর্তমানে পৃথিবীর মাত্র ২৪ শতাংশ পাট জন্মে। এত উৎকৃষ্ট পাট পৃথিবীর অন্য কোথাও উৎপন্ন হয় না। পাটের উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। বর্তমানে পাট উৎপাদনে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল প্রথম, ফরিদপুর অঞ্চল দ্বিতীয়, যশোর অঞ্চল তৃতীয় এবং কুষ্টিয়া অঞ্চল চতুর্থ। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭.৫-৮.০ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয় যা থেকে প্রায় ৮০ লাখ বেল পাট আঁশ উৎপন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বছরে উৎপাদিত পাট আঁশের শতকরা প্রায় ৫১ ভাগ পাট কলগুলোতে ব্যবহৃত হয়, প্রায় ৪৪ ভাগ কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানি হয় ও মাত্র ৫ ভাগ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে কাজে লাগে। ২০১৯–২০ সালে বাংলাদেশ হতে প্রায় ১৩ কোটি মার্কিন ডলার মূলে৵র কাঁচা পাট এবং ৭৫ কোিট ২০ লাখ মাির্কন ডলার মূলে৵র পাটজাত পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তািন হয়েছে।

জাতীয় পাট দিবস

জাতীয় পাট দিবস আজ সোমবার (৬ মার্চ)। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পাট শিল্পের অবদান স্মার্ট-বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।দিবসটি উপলক্ষে পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।সোমবার (৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠান এবং মতিঝিলস্থ করিম চেম্বারে বহুমুখী পাটপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হবে।শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উক্ত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেনপাটের সঙ্গে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি বিবেচনায় ২০১৬ সালে প্রতি বছর ৬ মার্চ জাতীয়ভাবে পাট দিবস আয়োজনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরের বছর থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

পাটের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

১. পাটের ফাইবার ১০০% বায়ো-ডিগ্রেডেবল এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এগুলো সম্ভবত লিগনোসেলুলোজিক বাস্ট ফাইবারের বৃহত্তম উৎস, যা রেটিং নামে পরিচিত একটি প্রাকৃতিক জীবাণু প্রক্রিয়া দ্বারা উদ্ভিদ থেকে বের করা হয়। এটি পৃথিবীর মাটি এবং পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক ছিদ্রকে প্লাগ করে না এবং মানবদেহ ও সামগ্রিকভাবে মাতৃ-প্রকৃতির ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না। তাই এটি পরিবেশ বান্ধব। পাটের ইগনিশন তাপমাত্রা ১৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এটি পোড়ালে জ্বলন্ত কাঠের মতো একই ধোঁয়া নির্গত করে, যা বিপজ্জনক নয়। এভাবে এটি কাছাকাছি ইগনিশন পয়েন্ট পর্যন্ত খুব স্থিতিশীল থাকে। এমনকি ফুটন্ত তাপমাত্রায়, এর অক্ষত শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো এটিকে সম্ভাব্য বিকৃতি থেকে রক্ষা করে।

২. পাট সোনালি এবং সিল্কি চকচকে একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। তাই পাটকে গোল্ডেন ফাইবার বলা হয়।৩. পাট হলো সবচেয়ে সস্তা উদ্ভিজ্জ ফাইবার, যা উদ্ভিদের কাণ্ডের বাস্ট বা চামড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়।৪. পাটের উচ্চ প্রসার্য শক্তি, কম প্রসারণযোগ্যতা রয়েছে। তাই কৃষিপণ্য বাল্ক প্যাকেজিংয়ে পাট খুবই উপযোগী।৫. পাট সর্বোত্তম মানের শিল্প, যা সুতা, ফেব্রিক, নেট এবং বস্তা তৈরি করতে সহায়তা করে। এটি সবচেয়ে বহুমুখী প্রাকৃতিক তন্তুগুলোর মধ্যে একটি, যা প্যাকেজিং, টেক্সটাইল, নন-টেক্সটাইল, নির্মাণ এবং কৃষি খাতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাল্কিং সুতার ফলে ত্রিমুখী মিশ্রণ হিসেবে মিশ্রিত করার সময় ব্রেকিং টেনাসিটি হ্রাস পায় এবং ব্রেকিং এক্সটেনসিবিলিটি বৃদ্ধি পায়।

৬. পাটের সুবিধার মধ্যে আছে উত্তম নিরোধক এবং অ্যান্টিস্ট্যাটিক বৈশিষ্ট্য, সেইসঙ্গে কম তাপ পরিবাহিতা এবং মাঝারি আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করা। পাটের অন্য সুবিধার মধ্যে আছে শব্দ নিরোধক বৈশিষ্ট্য।৭. পাটের অন্য তন্তুর (কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক) সঙ্গে মিশ্রিত হওয়ার ক্ষমতা আছে। প্রাকৃতিক আরামদায়ক তন্তুর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাট এবং অন্য প্রাকৃতিক তন্তু যা তুলার সঙ্গে মিশ্রিত করা যায়, তার চাহিদা বাড়বে। ফলস্বরূপ পাট বা তুলার সুতা ভেজা প্রক্রিয়াকরণে কম খরচে কাপড় তৈরি করবে। এ ছাড়া পাটকে উলের সঙ্গেও ব্লেন্ড করা যায়।৮. পাটের কিছু লক্ষ্যণীয় অসুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুর্বল ড্র্যাপেবিলিটি এবং ক্রিজ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ভঙ্গুরতা, ফাইবার শেডিং এবং সূর্যের আলোয় হলুদ হওয়া। পাটকে এনজাইম দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা যেতে পারে, যার ফলে পাটের ভঙ্গুরতা এবং শক্ততা কিছুটা কম হয়। ভেজা অবস্থায় পাটের শক্তি কমে যায় এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় জীবাণুর আক্রমণের শিকার হয়

পাট পাতার ব্যবহার

শুষ্কপাটের পাতা চায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ফিলিপাইনে সাধারণত বাঁশের অঙ্কুর ও অলিটোরিয়াসের জাতের পাটের পাতা এক সঙ্গে মিশিয়ে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। উত্তর আফ্রিকায় ও মধ্যপ্রাচ্যে মালুখিয়া নামে পরিচিত কচি পাটপাতা সবুজ শাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফারাওদের সময় থেকে পাট পাতা একটি প্রধান মিসরীয় খাবার। জাপানে পাটের শুকনো পাতা কফি এবং চায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপে স্যুপ তৈরিতে পাটের পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পাটের পাতার পুষ্টিমান

পাটের পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয় বরং পাটের পাতায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ যেমন- প্রচুর পরিমাণ আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ই, কে,সি, বি-৬ ও নিয়াসিন। প্রতি ১০০ গ্রাম পাটপাতায় ক্যালরির পরিমাণ ৭৩ কিলোজুল, আমিষ ৩.৬ গ্রাম, লোহা ১১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯৮ মিলিগ্রাম ও ক্যারোটিন ৬৪০০ (আইইউ) আরো রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খাদ্যআঁশ।

পাট পাতার ব্যবহার ও ঔষধিগুণ

পাট গাছের প্রতিটি অংশই ওষুধ হিসেবে কার্যকর। পাটপাতা শারীরিক অসুস্থতা যেমন- রেচক বা কোষ্টকাঠিন্য, মাথাব্যথা, চিকেনপক্স বা গুটিবসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং গুঁড়াকৃমি চিকিৎসায় পাটগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়।

অন্ত্রের রোগ নিরাময়

পাটশাক, খাওয়ার রুচি বাড়িয়ে মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে ও মেদ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়। এর তেতো স্বাদ মুখের লালাক্ষরণ বৃদ্ধি করে কার্বোহাইড্রেডকে ভাঙতে সাহায্য করে হজমে সহায়তা করে।পাটপাতাতে ঔষধি গুণাগুণ থাকার কারণে এটি তিক্ত টনিক হিসেবে পাকস্থলী প্রশমক, কোষ্টকাঠিন্য দূরীকারক, পাকস্থলীয় বায়ুনাশক বা রক্তনালির সংকোচক রোধক এবং অন্ত্রের অ্যান্টিসেপটিক ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে শরীর রক্ষায়

গবেষকরা লাইকোপিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাট শাকে পেয়েছেন, যা খেলে শরীরে সৃষ্ট প্রদাহ কমে এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে বা শারীরিক প্রদাহ কমায়। পাটশাক মানবদেহে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ করে।

হাড়ের ক্ষয় রক্ষায়

পাটশাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম ও অন্যান্য উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে গবেষণায় পাওয়া গেছে এবং এই ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় সুগঠিত করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে, আয়রন ও সোডিয়াম হাড় গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

বেশি করে গাছের পাতা ও ফল খেলে বিশেষত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এলাকায় ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। জাপানের গবেষকেরা পাটের পাতা থেকে দুটি অ্যান্টিটিউমার বর্ধিতকরণ যৌগ শনাক্ত করেছেন, যা হলো ফাইটোল এবং মনো-গ্যালাক্টোসিলডিয়াসিলগ্লিসারল।গবেষণালব্ধ প্রমাণ থেকে পাওয়া যায়, গরম পানিতে সিদ্ধ পাট পাতার জুস অ্যান্টিটিউমার বর্ধিতকারী উপাদানের সক্রিয়তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং গরম পানিতে সিদ্ধ পাট পাতার জুস টিউমার বর্ধিতকারী রাসায়নিকের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কার্যকর।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ পাটশাকে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম লবণ থাকায় রক্তসঞ্চালন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। এর জন্য উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা দূর হয়। পাটশাক রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে থাকে এবং নিয়মিত পাটশাক খেলে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

প্রদাহ কমায়

বেশিরভাগ ক্রনিক রোগের পেছনে দায়ী প্রদাহ। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে ইনফ্লামেশন কমানোর চেষ্টা করতে হবে। এ কাজে সাহায্য করতে পারে পাট পাতা। এই পাতায় রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভাণ্ডার যা কিনা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করার কাজে সিদ্ধহস্ত। আর এই কারণেই কমে প্রদাহের বাড়বাড়ন্ত। তাই সুস্থ সবল জীবনযাপন করার ইচ্ছে থাকলে ডায়েটে পাট পাতা রাখতেই হবে।

হাড় শক্ত করে

হাড় যদি মজবুত করতে চান তবে খাবার পাতে রাখুন পাট শাক। টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এই দুই উপাদানই কিন্তু হাড়ের ক্ষতি রোধে সাহায্য করে। অস্টিওপোরোসিসের মতো জটিল অসুখে ভুক্তভোগীদের ডায়েটে নিশ্চিন্তে পাট পাতা রাখতে পারেন।

ইমিউনিটি বাড়ায়

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে থাকতে চাইলে ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তপোক্ত হওয়া চাই। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে পাট পাতা। এই পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি এবং অত্যন্ত উপকারী কিছু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চাঙ্গা রাখে।

পেটের সমস্যা কমায়

গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো পেটের সমস্যা কমাতে চাইলে খেতে হবে পাট পাতা। এই পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানোর কাজে সাহায্য করে। আর অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়লে পেটের অসুখ কমানো সম্ভব হয়। তাই গ্যাস, অ্যাসিডিটিতে ভুক্তভোগীরা অবশ্যই নিয়ম করে পাট পাতার তরকারি বা পাট পাতার চা খান। তবে মিলবে উপকার।

ওজন কমায়

ওজন কমানোর মিশনে থাকলে খাদ্যতালিকায় রাখুন পাট শাক। এতে আছে পর্যাপ্ত ফাইবার আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

Taken From News Bangla24.

পাট ফিরে পাবে ঐতিহ্য

পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয়। এক সময় পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। এখন সেই রমরমা অবস্থা না থাকলেও পাট আবার অর্থকরী পণ্য হয়ে উঠছে। মাঝে বিভিন্ন সমস্যা এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।তবে সেসব সমস্যা কাটিয়ে পাট বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত পণ্যের মর্যাদা ফিরে পাচ্ছে। পাটগাছের পাতা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাক। বর্তমানে জার্মান প্রযুক্তিতে দীর্ঘ গবেষণার পর এই পাতার মাধ্যমে উপকারী এমন চা-জাতীয় পানীয় তৈরি হচ্ছে, যা অকল্পনীয়।সম্প্রতি ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বেশ কয়েকটি স্টলে এ চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। জানা যায়, এই পানীয় ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ মারাত্মক সব রোগ থেকে মুক্তি দেবে।

পাটজাত পণ্য সব সময়ই পরিবেশবান্ধব। ইদানীং চট, বস্তা, পলিথিন ছাড়াও চোখ ধাঁধানো শোপিস, চেয়ার, দরজা, ফুলদানি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, স্যুট-প্যান্ট, চাদর, এমনকি ডেনিমও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য যেমন সৌন্দর্যবর্ধক তেমনি শতভাগ পরিবেশবান্ধব এবং দামও সাধ্যের মধ্যে। ফলস্বরূপ, এসবের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের। ফলে নিঃসন্দেহে এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।২০১১ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীর হাতে যে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পাটের ব্যাগ তুলে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকেই। আশ্চর্য হলেও সত্য, বর্তমানে নামিদামি গাড়ি তৈরির কোম্পানিও পাট ব্যবহার করছে।

জার্মানির বিএমডব্লিউ কোম্পানির সর্বাধুনিক ইলেকট্রিক গাড়ির ভেতরে বক্স বডি ও এর উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পাট ব্যবহৃত হচ্ছে। জার্মানির ভক্সওয়াগন, জাপানের নিশান ও টয়োটা গাড়ির কাঁচামাল হিসেবেও বাংলাদেশের পাটের কদর রয়েছে।সব দিক বিবেচনায় পাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই দ্রুত বিভিন্ন যুগোপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ করতে হবে। সরকার দেশে ও বিদেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বিস্তৃত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।পট উৎপাদন থেকে শুরু করে পাট সংগ্রহ, সংরক্ষণ- সবকিছুতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।

তাই পাটের চাষ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাসহ কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করতে হবে। এর ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা বাড়বে। পরিণতিতে পাট চাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।এ পৃষ্ঠপোষকতার হাত পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারকেই বাড়াতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে দেশের সব ক্ষেত্রে পাট পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাটের ব্যাপক চাষাবাদ, বন্ধ পাটকলগুলো চালু করা, পাটের বহুমুখী ব্যবহার ইত্যাদির ফলে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্য হোক আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এ সবের মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে পাট আবার দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।

Taken From Jugantor.

পাট চাষোপযোগী মাটি

পাট একটি বর্ষাকালীন ফসল। বাংলাদেশে পাটকে সোনালী আঁঁশ বলা হয়। পাট আঁঁশ প্রধানত দুটি প্রজাতির—সাদাপাট ও তোষাপাট। আজ পাট চাষোপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—

ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা প্রভৃতি নদ-নদীর পলিবাহিত উর্বর সমতল ভূমিতে পাট ভালো জন্মে ,নদীবাহিত গভীর পলিমাটি পাট চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতেও পাট ভালো জন্মে। মার্চ, এপ্রিল ও মে পর্যন্ত প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২৫০ মিমি বৃষ্টিপাতসহ যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫০০ মিমি বা ততোধিক সেখানে পাট ভাল ফলন দেয়। সাদাপাট নিচুজমি, এমনকি জলাবদ্ধ জমিতেও চাষ করা যায় ,কিন্তু জলবদ্ধতা তোষাপাটের জন্য ক্ষতিকর।

পাট চাষে বিঘায় খরচ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার

উত্তরের জেলা নওগাঁয় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষীরা। পাট চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং পানি সংকটে জাগ দেওয়া সমস্যার কারণে বছর বছর কমছে পাটের আবাদ। বর্তমান হিসেবে জেলায় পাট চাষে বিঘায় খরচ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার। তবে কৃষি বিভাগ বলছে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে চাষীদের প্রনোদনাসহ সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে।কৃষি বিভাগের তথ্যমতে- চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জেলায় ৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে পাটের আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৭২৫ হেক্টর। ২০২০-২১ অর্থ বছরে পাটের আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৯৩৩ হেক্টর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে- ৬ হাজর ১৫০ হেক্টর এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর। গত ৫ বছরের ব্যবধানে পাটের আবাদ কমেছে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর।

জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করতে খরচ পড়ে ১০ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা। এরমধ্যে জমির আইল ঠিক করা ৪০০ টাকা, পানি সেচ ১ হাজার টাকা, হালচাষ তিন টা ১ হাজার টাকা, সার ১২০০ টাকা, বীজ দেড়কেজি ৪০০ টাকা, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ ৫০০ টাকা, পোকা দমনে কীটনাশক খরচ ৭০০ টাকা। ঘাস নিড়ানিতে ৫-৬ জন শ্রমিকের খরচ ১৫০০-১৮০০ টাকা। এরপর পাট কাটতে ৫-৬ জন শ্রমিকের খরচ হিসেবে ২৫০০-৩০০০ টাকা, পরিবহণ খরচ ১৫০০ টাকা এবং জাগ দেওয়া ১৫০০ টাকা। সবশেষে ৬-৭ জন শ্রমিকের পাট পরিস্কারে খরচ পড়ে ৩০০০-৩৫০০ টাকা।সরোজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে পানি সংকটের কারণে কৃষকরা পাট বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে, বাড়ির উঠোন, বিভিন্ন বাগানে গাছের সাথে ভীরা বেঁধে বেঁধে জমা রেখে দিয়েছে।

পাট বিক্রি করে লাভ নেই, খরচই উঠছে না

এবার জয়পুরহাট জেলায় ৩ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চলতি বছরের খরিপ-১ মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কম হয়েছে। গত মৌসুমে ৩ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এবার ৩৭৭ হেক্টর জমিতে এই ফসলের আবাদ কমেছে।গত মৌসুমে ৮ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে  ১ হাজার ২৬২ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন কম হয়েছে। এবার ৮ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এ বছর সদর উপজেলার ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ২৪৫ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৫০ হেক্টর ও আক্কেলপুর উপজেলায় ১৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে ৮ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন। এই মৌসুমে ৮ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ পাট কর্তন করা হয়েছে।

পাঁচবিবির ছোট মানিক এলাকার কৃষক রিপন হোসেন ৩৩ কাঠা অর্থাৎ ৫৫ শতক জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এই মৌসুমে পাট চাষে খরচ বেশি হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবার এক বিঘা জমিতে হাল-চাষ, শ্রমিকের মজুরি, সার-সেচসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটের ফলন কম হয়েছে। তাছাড়া পাটের যে বাজার দর যাচ্ছে তাতে দুই মণ পাট ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এই দরে বিক্রি করে পাট চাষ করা যাবে না। কেননা প্রতি বিঘায় এবার ৮ থেকে ৯ মণ পাট হবে। এর দাম আসবে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা। এতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। সেই হিসেবে পাট চাষ লোকসানের ফসল হয়ে যাবে।সব খরচ বাদে পাটে কিছুই থাকবে না। এর চেয়ে কচুর লতি চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষক আব্দুল আলিম। এক বিঘা জমিতে ৮৮ হাজার টাকায় কচুর লতি বিক্রি করেছেন তিনি। এজন্য পাট চাষ কমিয়ে দিতে চান এই কৃষক।

কমছে পাট রফতানি, লোকসানে চাষি

প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো বাংলাদেশে থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে দেশেও কমেছে পাটের ব্যবহার। এতে চাহিদার পাশাপাশি কমেছে দাম। ফলে প্রতি মণ পাট বিক্রিতে অন্তত ৫০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করছেন নাটোরের পাট চাষিরা২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় পাট রফতানি বন্ধ রয়েছে। এদিকে সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কে ভূমিকম্পের পর সেই দেশের ক্রেতারাও পণ্যটি কিনছেন না।এ বিষয়ে পাট ব্যবসায়ী রাসেল শেখ বলেন, ‘বাজার দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। সবশেষ তুরস্কে ভূমিকম্প হওয়ার পর পণ্যগুলো সেখানে যেতে পারছে না।’

পাট না কেনার বিষয়ে রফতানিকারক অজয় আগরওয়ালা বলেন, ‘যে পাট আছে সেগুলোই বিক্রি করতে পারছি না। ফলে আমাদের নতুন করে পাট কেনার সুযোগ হচ্ছে না। যদি বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয়াদেশ আসে, তাহলে আবার পাট বেচাকেনা শুরু হবে।’
পাটকল মালিকরা বলছেন, ভারতের অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে দেশটিতে উৎপাদিত পাটের সুতা ও বস্তার রফতানি কমে গেছে। এ ছাড়া দেশে ১৮টি পণ্য পাটের ব্যাগে বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিক্রি কমেছেএ বিষয়ে নাটোর জুট মিলের সিইও সহোন কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমরা সঠিকভাবে ভারতেও রফতানি করতে পারছি না, আবার দেশেও সঠিকভাবে বিক্রি করতে পারছি না। কাজেই মিল প্রতিষ্ঠান গড়ে আমরা এক মহাবিপদের মধ্যে রয়েছি।’

এদিকে দেশ ও বিদেশে চাহিদা কমায় নাটোরের হাটে গত ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে পাটের দাম পড়ে গেছে। কৃষকরা বলছেন, মণপ্রতি উৎপাদন খরচ ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। কাজেই তাদের দাবি, লাভ দূরে থাক, এতে মণপ্রতি লোকসান হচ্ছে ৫০০ টাকা।এক কৃষক বলেন, পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। গত বছর ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা ব্যাপক লোকসানে আছি।এ অবস্থায় পাটচাষিদের লাভবান করতে দেশে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি রফতানির নতুন গন্তব্য সৃষ্টির বিকল্প নেই বলে মনে করেন নাটোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ইয়াছিন আলী।

তিনি বলেন, ‘পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পাটের রফতানিও বাড়াতে হবে। এতে বাজারে পাটের দাম বাড়বে বলে আশা করছি।’কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলার সাড়ে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে ৮৯ হাজার ৫২৮  টন পাট উৎপাদিত হয়েছে।  

Taken From The Daily Star.

পাট চাষ বিষয়ে কৃষকের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল পাট, কেনাফের বীজ ও আঁশ উৎপাদন প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।শুক্রবার (০২ জুন) বিকেলে বিজেআরআই কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের আয়োজনে রামচন্দ্রকুড়া ও মন্ডলিয়াপাড়া ইউনিয়নের কালাকুমা গ্রামে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় কৃষিবিদ ড. আব্দুল আওয়াল বলেন, কৃষক ভাইয়েরা হলেন কৃষির প্রাণ, তারাই সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী। জমিতে ধানের পাশাপাশি পাট চাষ করতে পারলে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এবং মাটির স্বাস্থেরও উন্নতি হবে।

তিনি আরও বলেন, একসময় এ অঞ্চলে উন্নতমানের পাট উৎপাদন হতো। পাটের প্রতিশব্দ নলিতা বা নাইল্যা। নাইল্যা থেকেই এ উপজেলার নামকরণ হয়েছে নালিতাবাড়ী। তাই আপনাদের আবারও বেশি বেশি পাট চাষ করে এ অঞ্চলের পাটের সুনাম ফিরিয়ে আনতে হবে।এছাড়া পাটের গুরুত্ব, চাষাবাদের নিয়ম, রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন, পাট কর্তনের সময়, পাট আঁশ জাগ দেওয়া ও শুকানোর বিষয়েও বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ ড. আব্দুল আওয়াল।উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোকছেদুর রহমান লেবু বলেন, বিজেআরআই এর তত্ত্বাবধানে বর্তমানে পাট চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিজেআরআই এর পরামর্শ নিয়ে সঠিকভাবে পাট চাষ করলে প্রত্যেক কৃষক লাভবান হবে।

প্রশিক্ষণ শেষে উপস্থিত ৫০ জন কৃষকের মধ্যে দেশি, তোষা ও কেনাফ জাতের মোট ৭৫ কেজি বীজ বিতরণ করা হয়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেআরআই কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মওদুদ হোসেন, সরকারি নাজমুল স্মৃতি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মকিম উদ্দিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ রঞ্জন চন্দ্র দাস, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাজমুল আহসান, সরকারি নাজমুল স্মৃতি কলেজের সাবেক জিএস আসাদুজ্জামান সোহেল, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত জাহান নবাব প্রমুখ।

পাট বীজের চাহিদা ৬৪০০ টন, আমদানির অনুমতি ৫২০০ টন

কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে সম্প্রতি জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, মেস্তা ও কেনাফ ফসল চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চাষের জন্য মোট পাট বীজের চাহিদা প্রায় ৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন।এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ভারতীয় তোষা পাটের জাত জেআরও-৫২৪ এবং ৫৭৬ মেট্রিক টন মেস্তা বা কেনাফসহ মোট ৫ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন বীজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।২০২২-২৩ সালে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাট বীজের আমদানির অনুমতির বিপরীতে প্রকৃত আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ১৬৬ টন।জাতীয় বীজ বোর্ডের ওই সভায় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি তোষা পাট ও একটি কেনাফের জাত ছাড়করণের অনুমতি দেওয়া হয়।এছাড়া, ব্রি উদ্ভাবিত ০২ টি ধানের জাত ছাড়করণ করা হয়।

পাট শিল্পের সঙ্কট ও সম্ভাবনা

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব উপাদানকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়, তার মধ্যে পলিথিন অন্যতম। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পলিথিন চরম হুমকি ও বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ কারণে প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশ সরকার ১ জানুয়ারি ২০০২ ঢাকা শহরে এবং ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারা দেশে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তখন কিছুদিন পাটের (চটের) ও কাগজের ব্যাগের ব্যবহার সাময়িক সময়ের জন্য লক্ষ করা গেলেও প্রচার-প্রচারণা এবং মানুষের অসচেতনতার অভাবে আবার পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

পাট পরিবেশবান্ধব, বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য আঁশ।


পাট পরিবেশবান্ধব, বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য আঁশ। শিল্প বিপ্লবের সময় ফ্লাস্ক এবং হেম্পের স্থান দখল করে পাটের যাত্রা শুরু। বস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পাট এখনও গুরুত্বপূর্ণ। পাটের আঁশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য অনেক আঁশের সঙ্গে মিশ্রণ করে ব্যবহার করা যায়। প্রচলিত বয়ন শিল্পে পাটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে সুতা, পাকানো সুতা, বস্তা, চট, কার্পেট ব্যাকিং ইত্যাদি। পর্দার কাপড়, কুশন কভার, কার্পেট, ইত্যাদি পাট থেকে তৈরি হয়। গরম কাপড় তৈরির জন্য উলের সঙ্গে মিশ্রণ করা হয়।

কৃষিপণ্য এবং অন্যান্য দ্রব্য বস্তাবন্দি ও প্যাকিং করার জন্য ব্যাপকভাবে পাট ব্যবহার করা হয়। পাটখড়ি পাট চাষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। পাট আঁশের দ্বিগুণ পরিমাণ খড়ি উৎপাদিত হয়। ঘরের বেড়া, ছাউনি এবং জ্বালানি হিসেবে খড়ির ব্যবহার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে প্রসাধনী, ওষুধ, রঙ ইত্যাদি। বাঁশ এবং কাঠের বিকল্প হিসেবে পার্টিকেল বোর্ড, কাগজের মণ্ড ও কাগজ তৈরিতেও পাটখড়ি ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি পাট থেকে জুট পলিমার তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ড. মোবারক আহমেদ খান, যা ‘সোনালি ব্যাগ’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় পাটের কচি পাতাকে শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। চট্টগ্রামে অঞ্চলে এটি ‘নারিস শাক’ হিসেবে খুবই পরিচিত।

বাংলাদেশের ভূমি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

বাংলাদেশের ভূমি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ দেশের সব জেলাতেই কম-বেশি পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে ফরিদপুর, যশোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, জামালপুর এবং ঢাকা জেলায় অধিক পরিমাণে পাট উৎপাদিত হয়ে থাকে। ৯০-এর দশকে এ দেশে পাট উৎপাদন হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। ক্রমেই সেই পাটের জমির পরিমাণ কমতে কমতে ৩০-৪০ বছর ধরে ৪ বা সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পরিবেশ সচেতনতা, প্রাকৃতিক আঁশের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধির কারণে সেই জমির পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৭-৮ লাখে এসেছে। তবে অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তার উৎপাদন পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। যেখানে আগে ১২ লাখ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৬০-৬৫ লাখ বেল পাট পাওয়া যেত, সেখানে বর্তমানে মাত্র ৭-৮ লাখ হেক্টর জমিতেই প্রায় ৮৪ লাখ বেল পাট পাওয়া যাচ্ছে। একসময় এ দেশের কাঁচা পাট ছিল বিশে^র কাছে সর্বাধিক সমাদৃত। বাংলাদেশি কাঁচা পাট প্রধানত ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইউরোপ, আইভরিকোস্ট, থাইল্যান্ডে রফতানি করা হয়। তবে পাট অধিদফতরের তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে কাঁচা পাট নয়, বরং পাট খাত থেকে রফতানি আয়ের বেশির ভাগ আসে পাটজাত পণ্য থেকে, যা ইউরোপ, তুরস্ক, ইরান, আমেরিকা, সিরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, জাপান, সুদান, ঘানাসহ আরও কিছু দেশে রফতানি করা হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে ১৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার আয় করে বাংলাদেশ। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমত্রার চেয়ে প্রায় ১ শতাংশের মতো বেশি। গত অর্থবছরে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করে চামড়া খাতকে  পেছনে ফেলে তৈরি পোশাক শিল্পের পরের স্থান দখল করে নেয় পাট খাত।

এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ১৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার এসেছে পাট ও পাট পণ্য রফতানি থেকে। এই দুই মাসে পাটসুতা (জুট ইয়ার্ন) রফতানি হয়েছে ১৪ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৭ শতাংশ। কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার; আয় বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রফতানি হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। আয় বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। পাট ও পাট সুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রফতানি হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ মোট ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছিল। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছিল ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে পাটসুতা রফতানি থেকে ৫৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। অর্থাৎ মোট রফতানি ৬৪ শতাংশই এসেছিল পাটসুতা রফতানি থেকে। কাঁচা পাট রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ১৩ কোটি ডলার। পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রফতানি হয়েছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের। এ ছাড়া পাটের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়েছিল ১৯ কোটি ডলারের।

আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পাট শিল্পের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ।

আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পাট শিল্পের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। এই শিল্প আমাদের অর্থনীতির চাকার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এ দেশের লাখ লাখ কৃষকের অবলম্বন এই পাট। কর্মসংস্থান, অর্থ উপার্জন, দারিদ্র্য বিমোচন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বোপরি এই দেশের ঐতিহ্য ও নিজস্বতা রক্ষায় পাট শিল্পের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আধুনিকতার পদতলে নিষ্পেষিত যখন পুরো পৃথিবী, দূষণের ফলে বিশ্ব পরিবেশ যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তখন পাট শিল্পের যথাযথ ব্যবহার আমাদের বাঁচাতে পারে অদূর ভবিষ্যতের অনেক ভয়াবহতা থেকে। এ শিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের অহঙ্কার। এ শিল্প বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচায়ক। সরকারের সজাগ দৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে হবে আমাদের এই শিল্পকে এবং ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের গৌরবান্বিত ঐতিহ্য, নিজস্বতার ধারক এই পাট শিল্পকে।

পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতেও প্রথম স্থানে রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত পাট উৎপাদনে পৃথিবীতে প্রথম এবং পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতেও প্রথম স্থানে রয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পাট শিল্পের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। এই শিল্প আমাদের অর্থনীতির চাকার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। পাট খাতকে বাঁচাতে হলে, পাট শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। পাট উৎপাদন বাড়াতে হবে, কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা পাটের ন্যায্য দাম পায়। বৃহত্তম পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুটমিলস করপোরেশনকে (বিজেএমসি) কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সর্বোপরি পাটকলগুলোর মানোন্নয়নে সরকারকে মনোযাগী হতে হবে। তবেই পাটের অর্থনীতি তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। আধুনিকতার পদতলে নিষ্পেষিত যখন পুরো পৃথিবী, দূষণের ফলে বিশ্ব পরিবেশ যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তখন পাটের যথাযথ ব্যবহার আমাদের বাঁচাতে পারে অদূর ভবিষ্যতের অনেক ভয়াবহতা থেকে।

Taken From Curious24 World.

আধুনিক পদ্ধতিতে পাট চাষ অধিক ফলন ও উন্নত আঁশ

পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশে উৎপাদিত পাটের শতকরা ৭০ ভাগ দেশে ব্যবহার হয়, বাকি ৩০ ভাগ কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য হিসেবে রপ্তানি হয়। পাটের আঁশ থেকে পাটের সুতা, ব্যাগ, বস্তা, পর্দা, কার্পেট ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। পাটকাঠি থেকে পার্টিকেল বোর্ড, প্রিন্টারের কালি তৈরি হচ্ছে। সর্বশেষ পাট থেকে উৎপাদিত পলিথিনের বিকল্প পচনশীল ব্যাগ বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে সারা ফেলে দিয়েছে। এক হেক্টর বা সাড়ে সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করলে তা মোট তিন মাসের ১৫ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং ১১ টন অক্সিজেন প্রকৃতিকে দেয়। এ ছাড়া পাটের পাতা প্রতিনিয়ত জমিতে মিশে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে, মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখছে। বর্তমানে বিঘা প্রতি পাটের ফলন ও গুণগতমান কোনটাই আশানুরূপ নয়। তাই আধুনিক পাট চাষের বিভিন্ন দিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

বাজারজাতকরণের ওপর ভিত্তি করে পাটকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। পাট আঁশ বিক্রয়ের জন্য আঁশের মান উত্তম থেকে খারাপের ক্রমানুসারে এ-বটম, বি-বটম, সি-বটম, ক্রস বটম ও কাটিং শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।

পাটের উফশী জাত

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত সর্বশেষ দেশি জাতের মধ্যে বিজেআরআই দেশি পাট-৮ ও ৯ অন্যতম। এ জাত দুটোর গড় ফলন ১০ মণ, জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন এবং বপনের উপযুক্ত সময় চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। বিজেআরআই দেশি পাট-৯ জাতের আঁশ তুলনামূলক সাদা এবং কম কাটিংসযুক্ত। তোষা জাতের মধ্যে ফাল্গুনী, বিজেআরআই তোষা পাট-৫, ৬ ও ৭ ভালো। ফাল্গুনী তোষা আগাম বপন উপযোগী আর বিজেআরআই তোষা পাট-৫, ৬ ও ৭ জাতগুলো চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগানো যায়। গড় ফলন বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ এবং জীবনকাল ১২০ থেকে ১৫০ দিন। বিজেআরআই তোষা পাট-৬ জাতটির আঁশের মান ভালো এবং রঙ উজ্জ্বল সোনালি। পাট শাকের উপযোগী বিজেআরআই দেশি পাট শাক-১ ও বিনা পাট শাক-১ নামে দুটি জাত আছে। এ জাতগুলোতে বেশি শাক পাওয়া যায়, প্রচুর ভিটামিন এ সমৃদ্ধ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। বীজ বপনের মাত্র ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়।

জমি নির্বাচন ও তৈরি

যেসব জমি মৌসুমের প্রথমে বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় না এবং বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে এমন জমি নির্বাচন করতে হয়। পাটের জন্য একটু উঁচু বা মধ্যম উঁচু জমি নির্বাচন করা প্রয়োজন। পাটের বীজ খুব ছোট বলে পাট ফসলের জমি মিহি এবং গভীর করে চাষ দিতে হয়। পাট চাষের জন্য খরচ কমাতে হলে যেসব জমিতে আলু বা সবজি করা হয় সেসব জমিতে একবার চাষ করে মই দিয়ে পাট বীজ বপন করেও ভালো ফসল পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

সার ব্যবস্থাপনা

বীজ বপনের দিন প্রয়োজনীয় পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম এবং জিংক সালফেট সার জমিতে শেষ চাষে প্রয়োগ করে মই দিয়ে মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তি অর্থাৎ ৪৫ দিনে ইউরিয়া সার প্রয়োগের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ রস থাকে। দ্বিতীয় কিস্তি প্রয়োজনীয় পরিমাণের ইউরিয়া সার কিছু শুকনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করা ভালো। ইউরিয়া সার প্রয়োগের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রয়োগকৃত সার গাছের কচি পাতায় এবং ডগায় না লাগে। সার ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ করাটা বিজ্ঞানসম্মত হলে বেশি ভালো। আঁশ উৎপাদনের জন্য দেশি পাটের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ইউরিয়া ২২ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি, এমওপি ৪ কেজি, জিপসাম ৬ কেজি, দস্তা দেড় কেজি প্রয়োগ করা যেতে পারে। আর তোষা পাটের ক্ষেত্রে প্রতি বিঘায় ২০-২২ কেজি ইউরিয়া, ৩-৪ কেজি টিএসপি, ৪-৫ কেজি এওপি, ১২-১৩ কেজি জিপসাম ও দেড় কেজি দস্তা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, জৈব সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার কম লাগে।

বীজের পরিমাণ ও চারার ঘনত্ব- ভালো এবং অধিক ফসল পেতে হলে রোগমুক্ত, পরিষ্কার পরিপুষ্ট ও মানসম্মত বীজ ব্যবহার করতে হবে। প্রচলিত এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে ছিটিয়ে বপন করা। সারিতে বপন করা কষ্টসাধ্য ব্যয়বহুল মনে হলেও এর উপকারিতা বেশি। এতে জমির সর্বত্র গাছের বিস্তৃত সমভাবে থাকে, পরিচর্যার সুবিধা হয়। সারিতে বপন করা হলে বীজের পরিমাণ কম লাগে এবং গজায়ও ভালো। ১২ ইঞ্চি দূরে দূরে সারি করে বীজবপন করলে সবচেয়ে ভালো হয়। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব সব সময় ঠিক রাখা না গেলেও পরিমিত অবস্থায় ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি ধরা হয়। সারিতে বীজবপন করার জন্য বীজবপন যন্ত্র বা সিডার ব্যবহার লাভজনক। সারি বপন করলে বিঘা প্রতি দেশি পাটের ক্ষেত্রে এক কেজি এবং তোষা পাটের ক্ষেত্রে ৬শ থেকে ৭শ গ্রাম বীজ লাগে। অন্য দিকে ছিটিয়ে বপন করলে বিঘা প্রতি দেশি পাটের ক্ষেত্রে দেড় কেজি এবং তোষা পাটের ক্ষেত্রে ১২শ থেকে ১৩শ গ্রাম বীজ লাগে।

নিড়ানি ও পাতলাকরণ

চারা গজানোর ১৫-২০ দিনের মধ্যে চারা পাতলা করা প্রয়োজন। সারিতে বপন করা হলে হাত দিয়ে বা ছিটিয়ে বপন করা হয়ে থাকলে আঁচড়া দিয়ে প্রাথমিকভাবে চারা পাতলা করা যায়। পাট গাছের বয়সের ৪০-৫০ দিনের মধ্যে একবার নিড়ানি দেয়ার সময় কৃষক কোনো কোনো ক্ষেতে চারাও পাতলা করেন। তবে বয়স ৬০-৭০ দিনের মধ্যে যে চারা পাতলা করা হয় তা টানা বাছ নামে এবং বয়সের ৮৫-৯০ দিনের মধ্যে চারার গোড়া কেটে যে পাতলা করা হয় তা কাটা বাছ নামে পরিচিত। এ কচি গাছ না ফেলে পচিয়ে খুব উন্নতমানের পাট পাওয়া যায়, যা সুতা তৈরি করায় ব্যবহৃত হতে পারে।

পানি নিষ্কাশন

পাটের জমিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করা অত্যন্ত জরুরি। জমিতে পানি জমলে মাটির ভেতর বাতাস প্রবেশ করতে পারে না, ফলে গাছের শিকড়ের শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘ্নিত হয়, গাছ স্বাভাবিকভাবে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না, ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে না এবং শেষ পর্যন্ত গাছ মারা যায়। দেশি পাটের জাত চারা অবস্থায় পানি সহ্য ক্ষমতা থাকে না। তবে এ জাতের গাছের বয়স ও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। কিন্তু তোষা পাট চারা অবস্থায় পানি সহ্য করতে পারে না, এমনকি বড় হলেও দাঁড়ানো পানি বা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

বালাই ব্যবস্থাপনা

জমিতে প্রতি বছর উড়চুঙ্গার আক্রমণ হলে বীজের পরিমাণ বাড়িয়ে বপন করতে হবে। আগুন উড়চুঙ্গা পোকাকে আকর্ষণ করে, তাই সন্ধ্যার সময় মাঠে আগুন জ্বালিয়ে রাখলে এ পোকা মারা যায়। অন্যান্য ক্ষতিকর পোকার মধ্যে বিছা পোকা, কাটওয়ার্ম, মাকড়, চেলে পোকা অন্যতম। রোগের মধ্যে হলুদ মোজাইক ভাইরাস, অ্যানথ্রাকনোজ বা শুকনা ক্ষত, কালো পট্টি ইত্যাদি রোগের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার (আইপিএম) আলোকে রোগ-পোকা দমন ব্যবস্থাপনা নিতে হবে।

পাট কাটা ও বাছাইকরণ

আঁশের ফলন এবং মানের মধ্যে সমতা পেতে হলে ১শ থেকে ১শ ২০ দিনের মধ্যেই পাট কাটার প্রকৃত সময়। সাধারণত পাট গাছে যখন ফুল আসতে শুরু হয় তখন বা তার আগে প্রয়োজন মতো সুবিধাজনক সময় পাট কাটা হয়। কৃষক অনেক সময় ফলন বেশি পাওয়ার জন্য দেরিতে পাট কাটেন। পাট কাটার পর ছোট, বড়, মোটা ও চিকন গাছকে পৃথক করে আলাদা আলাদা আঁটি বাঁধতে হয়। একটি আটির ওজন ১০ কেজির হবে। ছোট ও চিকন এবং মোটা ও বড় পাটের গাছেরগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে জাক দিতে হবে। পাটের আঁটি কখনও খুব শক্ত করে বাঁধা যাবে না। এতে পাট পচতে বেশি সময় লাগে। কারণ শক্ত আঁটির মধ্যে পানি পচনকালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে না।

কম সময়ে ছাল পচানো

পচন সময় দুইভাবে কমানো যায়-১. প্রতি ১শ মণ কাঁচা ছালের জন্য আধা কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করুন। ২. অথবা একটা ছোট হাঁড়িতে দুই একটি পাট গাছ ছোট ছোট টুকরা করে পচিয়ে নিন এবং পরে ছাল পচাবার সময় ওই পানি ব্যবহার করুন। ছাল পচতে খুব কম সময় লাগে, কাজেই ছাল পানিতে ডুবানোর ৭-৮ দিন পর থেকে পরীক্ষা করতে হয়। দুএকটা ছাল পানি থেকে তুলে ভালো করে ধুয়ে দেখতে হবে যদি আঁশগুলোকে বেশ পৃথক পৃথক মনে হয় তখনই বুঝতে হবে পচন সময় শেষ হয়েছে। সাধারণত ছাল পচনে ১২-১৫ দিন সময় লাগে।

আঁশ ধোয়া ও শুকানো

আঁশ ছাড়ানোর পর আঁশগুলোকে পরিষ্কার পানিতে ধোয়া উচিত। ধোয়ার সময় আঁশের গোড়া সমান করে নিতে হবে। এমনভাবে আঁশ ধুতে হবে যেন কোনো রকম পচা ছাল, ভাঙা পাটখড়ি, অন্য কোনো ময়লা, কাদা আঁশের গায়ে লেগে না থাকে। কারণ এতে পাটের মান নষ্ট হয় এবং বাজারে এসব আঁশের চাহিদাও কমে যায়। আঁশ ধোয়ার পর খুব ভালো করে আঁশ শুকানো উচিত। আঁশ কখনও মাটির ওপর ছড়িয়ে শুকানো উচিত নয়, কারণ তাতে আঁশে ময়লা, ধুলোবালি লেগে যায়। বাঁশের আড়ায়, ঘরের চালে, ব্রিজের রেলিং বা অন্য কোনো উপায়ে ঝুঁলিয়ে ভালোভাবে আঁশ শুকাতে হবে। ভেজা অবস্থায় আঁশ কখনই গুদামজাত করা উচিত নয়। কারণ এতে আঁশের মান নষ্ট হয়ে যায়।

Chhanel24.

সরকারি নির্দেশেও নিশ্চিত হয়নি পাট মোড়কের ব্যবহার

সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন হারিয়েছে অনেক আগেই। এর পরও কয়েক বছরে পাটের আবাদ কিছুটা বেড়েছে উত্তারাঞ্চলে। তবে কৃষকের অভিযোগ পাটের কাঙ্খিত দাম মিলছে না কোনবারই। এদিকে পাটের সুদিন ফেরাতে মন্ত্রণালয়ের ১৯ নির্দেশনা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।নওগাঁর ঐহিত্যবাহী আহসানগঞ্জ পাটের হাট। এক সময়ের বিশাল এই হাটের আয়তন কমেছে অন্তত ৪ গুণ।নওগাঁ ছাড়াও আশপাশের নাটোর ও জয়পুরহাটের চাষিরা এই হাটে আসত পাট বিক্রি করতে। চাষিদের অভিযোগ, চড়া উৎপাদন খরচের বিপরীতে বাজারদর একেবারেই কম। জাত ও মান ভেদে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২২’শ টাকা পর্যন্ত। যেখানে হাল, সার, কিটনাশক সব মিলিয়ে একমণ পাট উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৯’শ টাকা। চাষিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কন্ঠেও লোকসানের সুর।

এদিকে, পাট আবাদের গতিবৃদ্ধি ও দূষণ রোধে পণ্যবিক্রিতে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। কিন্তু এখনও বৃহত্তর চালকল সেক্টরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকর হয়নি সেই নির্দেশনা। মিলগুলোতে হরহামেশা ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর প্লাষ্টিক ব্যাগ। ব্যবসায়ীদের দাবী, প্লাষ্টিক ব্যাগে খরচ কম। আবার পণ্যের মানও থাকে ভালো।পাট অধিদপ্তর কর্মকর্তারাও বলছেন, এখনও ঠিকঠাক নিশ্চিত করা যায়নি পাট মোড়কের ব্যবহার। আগামীতে জোরে সোরে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন এই কর্মকর্তা। পাটের সুদিন ফেরাতে পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর বিকল্প নেই; বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

Taken From Nagorik Barta.

পাটের দামে হতাশ চাষিরা

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে পাট চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। প্রখর রোদ, অনাবৃষ্টির কারণে এবার চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাষিদের পোহাতে হয়েছে চরম ভোগান্তি ও কষ্ট। যার কারণে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য নিয়ে হতাশায় ভুগছেন পাট তারা । এ বছর তেল, সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
উপজেলার কৃষকরা জানান, গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবার পাট চাষ বেশি হয়েছে। প্রতি বিঘায় পাট চাষে কমপক্ষে ৯-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন যদি ভালো হয় তাহলে প্রতি বিঘায় ৬-৭ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়। এত কিছুর পর যদি কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলে তাহলে মাথায় হাত। তবে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ঋণ নিয়ে চাষ করা পাট চাষিরা।

পাটচাষি পৌরশহরের ঘাটপাড়ার লিটন মণ্ডল (৪০) হতাশ ও নির্বাক। এবার তিনি ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। আশা করেছিলেন গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি দামে পাট বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু, বিধি বাম। শুরু দিকে দাম কিছুটা ভালো থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে। গত বছরের তুলনায় লিটন মণ্ডলকে কম দামে পাট বিক্রি করতে হয়েছে। গত বছর তিনি প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছিলেন ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা দরে। এ বছর পাট বিক্রি করতে হয়েছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। তার মতো অন্য পাটচাষিরাও হতাশ।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ঘোড়াঘাট উপজেলায় পাটের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩০ হেক্টর। তবে চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে। এসব জমি থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ১ হাজার ৪০ মণ।তবে উপজেলার বুলাকীপুর ও পালশা ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকায় পাটের চাষ বেশি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান জানান, সরকার পাট চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট অধিদপ্তর থেকে পাটচাষিদের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন। গত দুই বছর দাম ভালো হওয়ায় এবছর পাটচাষ বেশি হয়েছে। শুরু দিকে দাম ভালো হলেও বর্তমানে বাজারে পাটের দর কম। তবে পাটের দাম প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি হলে কৃষকরা পাটচাষে আরও আগ্রহী হবেন। পাট সংরক্ষণ করে রাখলে পাটের দাম কিছু দিনের মধ্যে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

পাট চাষে নতুন দুই উদ্ভাবন

কালো পাট হবে সাদা, চাষ হবে নিড়ানি ছাড়া

ট আর কালো থাকবে না, হয়ে যাবে ধবধবে সাদা। কালো পাট নিয়ে কৃষকের বিড়ম্বনা ঘোচাতে অবশেষে গবেষণায় মিলেছে সেই প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে কালো পাটকে স্বল্প খরচে সাদা করতে পারবেন কৃষক। আর পাটচাষিদের নিড়ানির পেছনে শ্রম ও অর্থ ব্যয় থেকে রেহাই দিতে উদ্ভাবিত হয়েছে পাট চাষের নতুন কৌশল।দুটি প্রযুক্তিরই উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কিশোরগঞ্জ কেন্দ্রে কর্মরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম। তিনি জানিয়েছেন, এতে পাট চাষে কৃষকের খরচ যেমন কমে যাবে, তেমনি পাট সাদা হওয়ার কারণে এর বাজারমূল্য অনেকাংশে বেড়ে যাবে।আর আগামী বছরই কৃষকের মাঠে এই প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক।

সাদা পাটে বাড়বে লাভ

কালো পাটকে সাদা করার উপায় নিয়ে তিন বছর ধরে গবেষণা করেন বিজ্ঞানী আশরাফুল আলম। তিনি জানান, ডোবা-নালার ময়লা পানিতে পাট ভেজানোর ফলে পাটের আঁশ কালচে রং ধারণ করে। পর্যাপ্ত খোলা পানির অভাবে কৃষকরা এ কাজ করতে বাধ্য হন। আর এ কারণে উপযুক্ত বাজারমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষকরা। এ বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়ে তোলে বলে জানান আশরাফুল।আশরাফুল জানিয়েছেন, দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে তিনি আবিষ্কার করেছেন ‘টিএসপি ট্রিটমেন্ট প্রযুক্তি।’ তিনি বলেন, ‘এ প্রযুক্তিতে প্রতি লিটারে ছয় গ্রাম পরিমাণে টিএসপি মিশ্রিত পানিতে কালচে পাটকে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলেই সাদা পাটে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে এক মণ পাটকে সোনালি আঁশে পরিণত করতে ২৪০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োজন, যার বাজার মূল্য পড়বে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাত টাকা। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে মাত্র চার মিনিট।’ তিনি আরো জানান, পাট সাদা হওয়ার কারণে এর বাজার মূল্য বাড়বে, লাভবান হবেন কৃষকরা।বিজ্ঞানী আশরাফুল আলম জানান, সহজসাধ্য এ প্রক্রিয়ায় পাটের গুণ ও মান অক্ষুণ্ণ থাকবে শতভাগ। এতে মাত্র কয়েক টাকা খরচে প্রতি মণ পাটের মূল্য আগের তুলনায় বাড়তে পারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বর্তমানে দাপ্তরিকভাবে এ আবিষ্কারের মেধাস্বত্বের আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

কমবে চাষের খরচ

কালো পাটকে সাদা করার গবেষণায় সফলতার পর বিজ্ঞানী আশরাফুল আলম পাট চাষে খরচ কমানোর উপায় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি লক্ষ করে দেখেন প্রতি একর জমিতে শুধু নিড়ানি বাবদ কৃষকের খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। তাঁর গবেষণালব্ধ পদ্ধতিতে পুরো টাকাই সাশ্রয় করা সম্ভব।আশরাফুল জানিয়েছেন, এ পদ্ধতিতে পাট চাষে সচরাচর যে পরিমাণ ইউরিয়া সার (৩০-৩৫ কেজি) ব্যবহৃত হয়, সেই ইউরিয়া সার টুকু পরিকল্পনা মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে ও  মাত্রায় প্রয়োগ করে জমির আগাছাকে দমন করে জৈব সারে পরিণত করে উর্বরতা শক্তি বাড়ানো সম্ভব। এতে নিড়ানি বাবদ শ্রম ও খরচ যেমন বেঁচে যাবে, তেমনি পাটের উৎপাদনও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া এ পদ্ধতিতে আগাছা দমনে কোনো বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না বলে তা পরিবেশবান্ধব এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল।

আশরাফুল আলম জানান, নিড়ানি ছাড়া পাট চাষ করতে হলে তিন ধাপে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ কেজি, ছয় থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে ১৬ কেজি এবং সর্বশেষ ধাপে ছয় থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে ১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রতি বিঘা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গত দুই মৌসুমে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়েছেন এবং চলতি মৌসুম শেষে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।আশরাফুল আলমের এই উদ্ভাবনে নিজ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সহকর্মীরাও খুশি। ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, ‘যদি পদ্ধতি দুটি মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে কৃষকরা পাট চাষ করে উপযুক্ত মূল্য পাবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।’

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের এ  উদ্ভাবনের কথা জেনেছেন পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরাও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আবিষ্কৃত দুটি প্রযুক্তি অতি দ্রুত সাধারণ কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই পাট গবেষণায় আরো অনেক অনেক যুগান্তকরী আবিষ্কার সম্ভব হবে।’


তথ্যসুত্র


পাট চাষে নতুন দুই উদ্ভাবন, Ntv Bd.

পাটের দামে হতাশ চাষিরা, Kalbela.

পাট শাকের উপকারিতা, Dhaka Mail.

পাট মোড়কের ব্যবহার, Satv.

পাট চাষ অধিক ফলন, Jai Jai Din Bd.

পাট শিল্পের সঙ্কট, Somoyer Alo.

পাট বীজের চাহিদা, The Daily Star.

পাট চাষ বিষয়ে কৃষকের প্রশিক্ষণ, Bangla News24.

পাট রফতানি, লোকসানে চাষি, Somoy News.

পাট বিক্রি করে লাভ নেই, Dhaka Post.


পাট চাষে বিঘায় খরচ দাঁড়িয়েছে, Agricare24.

পাট চাষোপযোগী মাটি, Kaler Kantho.

পাটকে সোনালী আঁঁশ বলা হয়, Ittefaq.

পাট ফিরে পাবে ঐতিহ্য, Jugantor.

পাট পাতার আছে নানা গুণ, News Bangla24.

আজ জাতীয় পাট দিবস, Prothom Alo.

জাতীয় পাট দিবস, Desh Rupantor.

পাটের বৈশিষ্ট্য ও গবেষণা, Jago News24.

Subscribe for Daily Newsletter