গ্রন্থাগার (Library)
গ্রন্থাগারের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Library’-এর উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ Liber থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক’। Liber শব্দটি এসেছে Libraium শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক রাখার স্থান’। এ্যাংলো-ফ্রেঞ্চ শব্দ Librarie অর্থ হলো পুস্তকের সংগ্রহ।
গ্রন্থাগার বা প্রকৃত অর্থে "পাঠাগার" হলো বই, পুস্তিকা ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রির একটি সংগ্রহশালা, যেখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক সেখানে পাঠ, গবেষণা কিংবা তথ্যানুসন্ধান করতে পারেন। বাংলা 'গ্রন্থাগার' শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে গ্রন্থ+আগার এবং 'পাঠাগার' শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে পাঠ+আগার পাওয়া যায়।
লাইব্রেরি বলতে আমরা সাধারণত বুঝি এমন একটি স্থান যেখানে মুদ্রিত বই, সাময়িকী, বিভিন্ন ধরনের শ্রবণ-দর্শন সামগ্রীকে নিময়তান্ত্রিক উপায়ে সংরক্ষণ করে পাঠকের ব্যবহার উপযোগী করে রাখা হয়। অপরদিকে ডিজিটাল লাইব্রেরি বলতে বোঝায় ইলেকট্রনিক মাধ্যমে একত্রে সংগঠিত ইন্টারনেট ও সিডি-রম ডিস্কের সহায়তায় সহজলভ্য উপকরণসমূহের সমষ্টি।
পাঠাগার কী
পাঠাগার বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমন একটি বাড়ি বা ঘর, যেখা বই সংগ্রহ ও সংরক্ষিত থাকে। পাঠাগারের শাব্দিক প্রতিশব্দ হচ্ছে পুস্তকাগার, গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি। শখের মধ্যে যেমন সমুদ্রের শব্দ শােনা যায়, পাঠাগারের মধ্যে তেমনি মানুষের হৃদয়ের উত্থান-পতনের ধ্বনি শােনা যায়। পাঠক এখানে স্পর্শ পায় সভ্যতার এক শাশ্বত ধারার, অনুভব করে মহাসমুদ্রের শত শত বছরের কল্লোল ধ্বনি, শুনতে পায় জগতের এক মহা ঐকতানের সুর। তাই পাঠাগার বা লাইব্রেরি হচ্ছে মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন।অক্সফোর্ড ডিক্সনারির মতে পাঠাগার হলো
'A building or room containing collections of books, periodicals, and sometimes films and recorded music for use or borrowing by the public or the members of an institution’
শঙ্খের মধ্য দিয়ে যেমন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়,পাঠাগারের মধ্য দিয়ে তেমনি হৃদয়ের উত্থান-পতনের শব্দ শোনা যায়।পাঠক এখানে স্পর্শ পায় সভ্যতার শ্বাশ্বত ধারার,অনুভব করে মহাসমুদ্রের শত বছরের মহাকল্লোল,শুনতে পায় জগতের এক মহা ঐকতানের সুর।গ্রন্থাগারকে তুলনা করা হয় শব্দহীন মহাসমুদ্রের সাথে।এটি অতীত,বর্তমান ও ভবিশ্যতের এক নীরব সাক্ষী।
পাঠাগারের ইতিহাস
পাঠাগারের ইতিহাস বেশ পুরনাে। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের অনেককাল আগে থেকেই পাঠাগারের প্রচলন ছিল। তখন মানুষ তার জ্ঞান সঞ্চিত করে রাখত পাথর, পােড়া মাটি, পাহাড়ের গা, প্যাপিরাস, ভূর্জপত্র বা চামড়ায়। আর এগুলাে সংরক্ষণ করা হতাে লেখকের নিজের বাড়িতে, মন্দিরউপাসনালয়ে এবং রাজকীয় ভবনে। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মিশরে পাঠাগারের অস্তিত্ব ছিল। প্রাচীন গ্রিসেও পাঠাগার ছিল বলে প্রমাণ রয়েছে। ভারতে প্রাচীনকালে পণ্ডিতদের ব্যক্তিগত পাঠাগার ছিল। পরবর্তীকালে বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিক্রমশীলায় সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে ওঠে। এছাড়া আসিরিয়া, আলেকজান্দ্রিয়া, বাগদাদ, দামেস্ক, চীন, তিব্বতসহ বহুস্থানে পৃথিবী-বিখ্যাত পাঠাগারের সন্ধান পাওয়া যায়।
সমদ্ধ পাঠাগার সব ধরনের পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করে; মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠনে অবদান রাখে। বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। তাই পাঠাগারের মাধ্যমেই একটি জাতি উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে। জাতীয় জীবনে তাই পাঠাগারের প্রয়ােজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়...
“এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলােক কালাে অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে।”
পাঠাগারের বিকাশ
সেই প্রাচীন লিপি পড়ার পাঠাগারের যুগ পরিবর্তিত হয়েছে।আজ পাঠাগার অনেক বেশি আধুনিক হয়েছে।আর,বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে তা পাঠাগারের আধুনিকায়নেও ভূমিকা রাখছে।আর,সমাজ সংস্কারক বা চিন্তাবিদরাও এটা বুঝেছেন যে পাঠাগারের আধুনিকায়ন ছাড়া সমাজের আধুনিকায়ন সম্ভব নয়।সেই সুবাদেই স্থানে স্থানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠছে অসংখ্য পাঠাগার।আমাদের দেশও তার সাথে তাল মিলিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহনের চেষ্টা চালাচ্ছে।আমাদের দেশে ঢাকায় ‘কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে।এই পাঠাগারের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শতাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এছাড়া,ঢাকায় বাংলা একাডেমী লাইব্রেরি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি,জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র,এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি,ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি,রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়াম,খুলনার উমেশচন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার,ঢাকার বেঙ্গল বুক সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।বর্তমানে সব স্থানে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার থেকে ভ্রাম্যমান পাঠাগার স্থাপন করাইয় বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।তাতে পাঠক তার বাসা থেকে বের হয়েই তার কাঙ্খিত বই পেয়ে যেতে পারে।বিভিন্ন দেশে বর্তমানে তাই এই ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জ্ঞান পিপাসা চরিতার্থ করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন চালু করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সেই প্রাচীন লিপি পড়ার পাঠাগারের যুগ পরিবর্তিত হয়েছে।আজ পাঠাগার অনেক বেশি আধুনিক হয়েছে।আর,বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে তা পাঠাগারের আধুনিকায়নেও ভূমিকা রাখছে।আর,সমাজ সংস্কারক বা চিন্তাবিদরাও এটা বুঝেছেন যে পাঠাগারের আধুনিকায়ন ছাড়া সমাজের আধুনিকায়ন সম্ভব নয়।সেই সুবাদেই স্থানে স্থানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠছে অসংখ্য পাঠাগার।আমাদের দেশও তার সাথে তাল মিলিয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহনের চেষ্টা চালাচ্ছে।আমাদের দেশে ঢাকায় ‘কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে।এই পাঠাগারের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শতাধিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এছাড়া,ঢাকায় বাংলা একাডেমী লাইব্রেরি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি,জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র,এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি,ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি,রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়াম,খুলনার উমেশচন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার,ঢাকার বেঙ্গল বুক সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।বর্তমানে সব স্থানে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার থেকে ভ্রাম্যমান পাঠাগার স্থাপন করাইয় বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।তাতে পাঠক তার বাসা থেকে বের হয়েই তার কাঙ্খিত বই পেয়ে যেতে পারে।বিভিন্ন দেশে বর্তমানে তাই এই ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জ্ঞান পিপাসা চরিতার্থ করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন চালু করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাঠাগারের শ্রেণিবিভাগ
বিশ্বে নানা রকম পাঠাগার রয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তিগত পাঠাগার, পারিবারিক পাঠাগার, সাধারণ পাঠাগার, জাতীয় পাঠাগার উল্লেখযােগ্য। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পাঠাগারের পরিসর সীমিত। সাধারণ পাঠাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, তাই এর পরিসর অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের প্রয়ােজনে যে পাঠাগার গড়ে ওঠে সেগুলাে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাগার। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবেও পাঠাগার স্থাপন করা হয়ে থাকে। এগুলােই জাতীয় পাঠাগার।
বিশ্ববিখ্যাত পাঠাগারের মধ্যে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, ফ্রান্সের বিবিওথিক নাসিওনাল লাইব্রেরি, ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উলেস্নখযোগ্য। আমাদের দেশে ঢাকায় 'কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি উলেস্নখযোগ্য। এ ছাড়া ঢাকায় বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, এশিয়াটিক সোসাইটি লাইব্রেরি, ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি, খুলনার উমেশচন্দ্র স্মৃতি গ্রন্থাগার সর্বশেষ উলেস্নখযোগ্য। ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন করে আলোকিত মানুষ গড়ার কাজে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে নানারকম পাঠাগার রয়েছে। তার মধ্যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সাধারণ ও জাতীয় পাঠাগার উলেস্নখযোগ্য। সাধারণ পাঠাগার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বলে এর পরিসর অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের প্রয়োজনে যে পাঠাগার গড়ে ওঠে, সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক পাঠাগার। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবেও পাঠাগার স্থাপন করা হয়ে থাকে। এগুলোই জাতীয় পাঠাগার।
প্রাচীন দশ ইসলামি পাঠাগার
বই সংগ্রহ ও জ্ঞানচর্চার জন্য যুগে যুগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসংখ্য পাঠাগার। পাঠাগার মুসলিম ঐতিহ্যের অংশ। কয়েক শতাব্দী আগে চালু হওয়া পাঠাগারগুলো ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়।নানা প্রান্তের নয়টি ইসলামি পাঠাগার নিয়ে লিখেছেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ। ১. হাউজ অব উইজডম। ২. বায়তুল হিকমা। ৩. মদিনা লাইব্রেরি(সৌদি আরব)। ৪. মাকতাবাতু কারাউইন(মরক্কো)। ৫. মক্কা লাইব্রেরি(সৌদি আরব)। ৬. তেহরান বুক গার্ডেন(ইরান)। ৭. মাকতাবাতু জামেয়া আজহার(মিসর)। ৮. মাকতাবা দারুল উলুম দেওবন্দ(ভারত)। ৯. রামপুর রাজা লাইব্রেরি। ১০. আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি (মিসর)।
পাঠাগার কেন প্রয়োজন?
পাঠাগারকে শিক্ষার বাতিঘর বলা হয়। পাঠাগার ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিককে পরিপূর্ণ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। অনেকেরই বই পড়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে বই কিনতে পারে না। পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা তাই প্রতিটি সমাজে অনিবার্য। পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছেন, 'পাঠাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি যা দেশ গড়া কিংবা রক্ষার কাজে অমূল্য অবদান।' 'বই পড়ার যে আনন্দ মানুষের মনে, তাকে জাগ্রত করে তুলতে আজ সব ধরনের পাঠাগারের ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন।' জীবনে পরিপূর্ণতার জন্য জ্ঞানের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করতে প্রয়োজন পাঠাগার। একটি সমাজের রূপরেখা বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। গবেষকরা মনে করেন, মনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পাঠাগারের অবদান অনস্বীকার্য। তাই শহরের পাশাপাশি প্রতিটি গ্রামে-মহলস্নায় পাঠাগার গড়ে তোলা প্রয়োজন।
পাঠাগারের সুবিধা
জ্ঞানের যেমন সীমা নেই,তেমনি পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তারও কোন সীমারেখা নেই। সমৃদ্ধ পাঠাগার যেন জ্ঞানের নীরব সমুদ্র। তৃষিত পাঠকের জ্ঞান তৃষ্ণা নিবারণ করাই পাঠাগারের উদ্দেশ্য। পাঠাগার হলো কালান্তরের সকল গ্রন্থের মহাসম্মেলন। যেখানে এক হয়ে গেছে অতীত,ভবিষ্যৎ আর বর্তমান। সন্ধানী হৃদয় পাঠাগারে অতীত-বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের সেতু রচনা করে। একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, একটি জাতির উন্নতির সোপান। পাঠাগার নারী, পুরুষ, বয়সের কোনো বাঁধা রাখেনি। যে কেউ চাইলে এখানে এসে জ্ঞানের অতল সমুদ্রে অবগাহন করতে পারে। পাঠাগারের সারি সারি তাকে জমে আছে সহস্রাব্দের কথামালা। পাঠাগারের শব্দহীন কারাগারে বন্দী প্রতিটি লেখাই সভ্যতার আলোকবর্তিকা বহন করে আসছে যুগ যুগ ধরে।ভালোর সুবিধা যেমন প্রায়ই মুষ্টিমেয় লোকেরা নেয়,কিন্তু পাঠাগারের সুবিধা দেশ-কালের সীমারেখা ত্যাগ করের বিশ্বের দিকে হাত বাড়িয়ে জ্ঞানের রাজ্যে হাতছানি দিয়ে ডাকে।সে যে কী মধুর তা শুধুই সেই প্রকৃত পাঠকেরাই বুঝে থাকেন।
জ্ঞানের ভাণ্ডার পাঠাগার
সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রন্থাগারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে। ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তাই এ দিনটিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে প্রথম ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালে।গ্রন্থাগার অতীত ও বর্তমান শিক্ষা-সংস্কৃতির সেতুবন্ধ। কারণ গ্রন্থাগার মানবজাতির শিক্ষা, রুচিবোধ ও সংস্কৃতির কালানুক্রমিক পরিবর্তনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। একটি জাতি এবং তার ভবিষ্যৎ বংশধররা গ্রন্থাগারের মাধ্যমে তার অতীত ইতিহাস জানতে পারে, উজ্জীবিত হতে পারে নতুন প্রত্যয়ে।
আমাদের হৃদয়কে প্রসারিত করার, স্বপ্নকে বিশাল করার নিমিত্তে আমাদের বই পড়তে হবে, পড়াতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। সামাজিক নানা অনাচার, উচ্চতর শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, বইয়ের পরিবর্তে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রাজনীতির নামে বর্বরতা, যা গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হতে পারে বই পড়া, বই পড়ানো, বইয়ের জগতে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে ডুবিয়ে রাখা। নেতৃত্বের বিকাশ শুধু কথা বলার দ্বারা হয় না, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জ্ঞানভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হয়মনের তৃপ্তি ও দীপ্তি গ্রন্থপাঠের মাধ্যমেই সম্ভব। গ্রন্থ মানুষকে দেয় জীবনীশক্তি, জ্ঞানকে নিজের মধ্যে বন্দি করে রাখার ক্ষমতা। তাই গ্রন্থ নির্বাচনে পাঠককে গ্রন্থাগারে যেতে হয়, যেতে হয় বইয়ের দোকানে। এই দিবস সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আলোর পথে ডেকে চলা নীরব পথপ্রদর্শক
অন্তহীন জ্ঞানের আঁধার হল বই, আর বইয়ের আবাসস্থল হোল গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি। মানুষের হাজার বছরের লিখিত-অলিখিত সব ইতিহাস ঘুমিয়ে আছে একেকটি গ্রন্থাগারের ছোট ছোট তাকে। গ্রন্থাগার হোল কালের খেয়াঘাট, যেখান থেকে মানুষ সময়ের পাতায় ভ্রমণ করে। প্রাচীন শিলালিপি থেকে আধুনিক লিপির গ্রন্থিক স্থান হল লাইব্রেরি। একটি গ্রন্থাগার মানব জীবনকে যেমন পাল্টে দেয় তেমনি আত্মার খোরাকও যোগায়। তাই গ্রন্থাগারকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ আত্মীয় যার সাথে সবসময় ভালো সম্পর্ক থাকে। আর জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনন্য।
আলোকিত মানুষ গড়তে চাই পাঠাগার
একজন আলোকিত মানুষের আত্মা হয় প্রসারিত, উন্মোচিত। তিনি বিশ্ব সম্পর্কে সচেতন, জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত তার আত্মা। রাষ্ট্র, সমাজ, গণতন্ত্র, ধর্ম, সংস্কৃতি, সভ্যতা সব চেতনায় সমৃদ্ধ তার হৃদয়। তিনি শাশ্বত আলার পথের যাত্রী। তার এই পথের দিক নির্দেশক পাঠাগার। পাঠাগার গড়ে তোলে আলোকিত মানুষ। গ্রন্থাগার হচ্ছে প-িতের পা-িত্য অর্জনের তীর্থস্থান, জ্ঞান সাধকদের গবেষণাগার, ধার্মিকদের ধার্মিকতার দূত, লেখক, কবি-সাহিত্যিকের জনক, সমাজের প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকবর্তিকা, অন্ধজনের চোখের আলো এবং নির্মল আত্মা নিয়ে স্রষ্টার কাছে যাওয়ার বাহন। একজন মানুষকে পূর্ণ করে তোলে পাঠাগার। আর আলোকিত মানুষেরা পূর্ণ করে তোলেন সমাজকে। তাই পাঠাগার ছাড়া আমাদের সমাজ অসম্পূূর্ণ। তাই বলা হয়, ‘একটি পাঠাগারবিহীন সমাজ, একটি আলোকবিহীন অন্ধকার বনের মতো’।
পাঠাগার আলোকিত করে তোলে মানুষকে। পাঠাগার মানুষকে তার আত্মিক অন্বেষনের পথ নির্দেশ করে যা ক্ষুধা-তৃষ্ণা; শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই একান্ত জরুরি। আমাদের সমাজকে শিক্ষিত করে তুলতে হলে, শিক্ষিত রাষ্ট্র পেতে হলে আমাদের চাই আলোকিত মানুষ। আর আলোকিত মানুষ পেতে চাই পাঠাগার। পাঠাগার মানুষের জ্ঞানের সব দুয়ার উন্মোচন করে মানবাত্মা করে তোলে প্রজ্জ্বলিত। পাঠাগার আমাদের চারপাশের রহস্যময় বিশ্বের দুয়ার খুলে দেয়। সমাজের মস্তিষ্ক ও জ্ঞানধার হলো পাঠাগার। তাই দীপ্ত, মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে সুশীল সমাজ পাবার লক্ষ্যে সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দিতে হবে এই শ্লোগান-
“আলোকিত মানুষ চাই
আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য পাঠাগার চাই”।
পাঠাগারে সুফল পাচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থী
জ্ঞান অর্জনের জন্য আমরা বই পড়ি। মনের খোরাক মেটানোর জন্য বই পড়ি। এর জন্য চাই হরেকরকম বইয়ের সমাহার। সেইসঙ্গে চাই নিরিবিলি পরিবেশ। এ কারণেই গড়ে ওঠে পাঠাগার। কিন্তু বাস্তবিকভাবে আমাদের দেশে এখনো সেভাবে পাঠাগার গড়ে ওঠেনি। প্রয়োজনের তুলনায় মানসম্মত পাঠাগারের সংখ্যা বাড়েনি। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পাঠাগার নেই বললেই চলে।প্রমথ চৌধুরীর মতে,
‘লাইব্রেরি হচ্ছে এক ধরনের মনের হাসপাতাল। ’
পুথিগত বিদ্যার ভারে জেরবার ছাত্রসমাজের মানসিক প্রশান্তির জন্য পাঠাগার অপরিহার্য। পাঠাগার শুধু ভালো ছাত্রই নয়, ভালো মানুষও হতে শেখায়। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না। আর তাই গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীর বহুদেশ পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য গড়ে তুলেছে অগণিত গ্রন্থাগার। শিক্ষার আলো বঞ্চিত কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষার বাতিঘর বলা হয় গ্রন্থাগারকে। গ্রন্থাগার ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিককে পরিপূর্ণ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা তাই প্রতিটি সমাজে অনিবার্য। বই পড়লে একজন শিক্ষার্থী হয়ে ওঠে আচরণে মার্জিত, চিন্তায় স্বতঃস্ফূর্ত ও কর্মে দৃপ্ত।
তথ্যসুত্র
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা, Bangla Notebook.
পাঠাগার কেন প্রয়োজন?, Jaijaidin.
জ্ঞানের ভাণ্ডার পাঠাগার, Kalerkantho.
গ্রন্থাগারের ইতিহাস, 10-minute School.
আলোকিত মানুষ গড়তে চাই পাঠাগার, Daily Inqilab.
পাঠাগার মুসলিম ঐতিহ্যের অংশ, Deshrupantor.
বিশ্বের নন্দিত ইসলামী পাঠাগার, Shomoyeralo.
পাঠাগারের গুরুত্ব, Kalerkantho.
পাঠাগারে সুফল পাচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থী, Jagonews24.
পাঠাগারের বিকাশ, Aloronbangla.