জীবন ও জীবিকা (Life and Livelihood)

জীবন ও জীবিকা কি?
একজন ব্যক্তির জীবিকা (লাইফ-লোড, "জীবনের উপায়" থেকে উদ্ভূত; cf. OG lib-leit) তাদের " জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা (খাদ্য, জল, বাসস্থান এবং পোশাক) সুরক্ষিত করার উপায় " বোঝায়। জীবিকাকে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকলাপের একটি সেট হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা একজনের জীবনকাল ধরে পরিচালিত হয়।
জীবন ও জীবিকার সমন্বয়
মানুষের জীবিকার জন্য কী কী প্রয়োজন? খাদ্য প্রথমেই আসবে। তারপর স্বাস্থ্য। বাসস্থানের বিষয়ও আসবে। তারপর অন্যান্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যক বিষয়। তার মানে মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে হলে মানুষের অর্থের প্রয়োজন, সম্পদের প্রয়োজন। এটা কে আহরণ করবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলে ব্যক্তি। আর রাষ্ট্র যদি এগুলোর সংস্থান দেয়, রাষ্ট্র যদি খাদ্য বা বাস্তুসংস্থানের ব্যবস্থা করে, তাহলে রাষ্ট্রেরও অর্থের প্রয়োজন। সে অর্থটা কোথা থেকে পাবে? সেটাও মানুষের কাছ থেকেই আসতে হবে। রাষ্ট্রের উৎসই তাই মানুষ। অতএব মানুষের আয়ের সংস্থান যদি বন্ধ হয়ে যাবে, তাহলে রাষ্ট্র অর্থ পাবে কিভাবে? আরেকটি জিনিস দেখতে হবে। সেটা মানুষের মানবিক দিক। মানুষের সুরক্ষা দরকার। তার যাতায়াতের ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হয়। মানুষ শুধু খাবারের জন্য বেঁচে থাকে না। মৌলিক চাহিদা ও মানবিক চাহিদা দুটিই তার প্রয়োজন। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো মানুষের মধ্যে মৌলিক চাাহিদা ছাড়াও অন্যান্য চাহিদা প্রকাশ পায়। এটাই হলো ভালোভাবে বেঁচে থাকা।
ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যই জীবন ও জীবিকর সমন্বয় জরুরি
এই ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যই জীবন ও জীবিকর সমন্বয় জরুরি। সমন্বয় সাধনটা কিভাবে করা যায়? প্রথমত, মানুষের জীবিকার উৎসগুলো অবারিত করা। সব রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জীবিকার পথ খোলা রাখা। এই দিকগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, অর্থনীতির চাকাও মন্থর হয়ে যায়। ফলে জীবন রক্ষা করার জন্য মানুষ বেশি দূর যেতে পারবে না। তাই জীবন ও জীবিকা সম্পর্কে দুটি জিনিস লক্ষ করতে হবে। একটা হলো পিপল সেন্ট্রিক বা মানুষকেন্দ্রিক উন্নয়ন। অর্থাৎ আমরা যেটা বলি মানুষের জন্য উন্নয়ন এবং মানুষ দ্বারা উন্নয়ন। পিপল সেন্ট্রিক ডেভেলপমেন্ট মানেই হলো মানুষের আয়ের সংস্থান করা, তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেসব উপকরণ রয়েছে বা পাওয়া যাবে, এমন সব কিছুর ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্নটি এ কারণেই আসে।
দ্বিতীয়ত, মানুষের ভবিষ্যৎ বলে একটা কথা আছে। তাকে শুধু বাঁচিয়ে রাখলেই হয় না, তাকে ভবিষ্যতের জন্যও প্রস্তুত করতে হয়। মহামারি থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে আপনি আটকে রাখতেই পারেন। কিন্তু এক পর্যায়ে আপনি যখন সব কিছু খুলে দেবেন, তখন জনশক্তি হিসেবে, চালিকাশক্তি হিসেবে জনগণ কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। এই মহামারির মধ্যেই অনেক তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। আবার অনেকে বেকার হয়ে পড়েছে। এখন তাদের কাজের মধ্যে না রাখলে, তাদের কাজ না দিলে অর্থনীতিকে তার পথে নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়বে।
জীবন মানে প্রাণের স্পন্দন জীবিকার পাদটীকা
জীবিকা মানে বাঁচার উচ্ছাস জীবনের জয়টীকা।
জীবনই যদি না বাঁচে বন্ধু জীবিকা হয় মূল্যহীন
জীবিকাই যদি না থাকল বন্ধু জীবন হল অর্থহীন।
জীবন না জীবিকা?
এখন জীবন না জীবিকা, কোনটা বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে? জীবন বাঁচানো এবং জীবিকা বাঁচানো– এ দুইয়ের মধ্যে সতর্ক ভারসাম্য রক্ষা করার বড় চ্যালেঞ্জ এখন আমাদের সামনে। গোটা পৃথিবী এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এক ধরনের দ্বিধা–দ্বন্দ্বে ভুগছে। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। কিন্তু কোনোটাই কার্যকর হচ্ছে না। জীবন–জীবিকার এ সংকটে ধনী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য যে মাত্রায় সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারছে, ততটা করার সুযোগ বাংলাদেশের নেই।
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে। নজিরবিহীন এ জনস্বাস্থ্য সংকটে এ দরিদ্র মানুষগুলোকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ মানুষগুলোর রুটি–রুজির ব্যবস্থা করার জন্য কোনওপরিকল্পিত উদ্যোগ নেই। দিনে এনে দিনে খাওয়া এসব মানুষদের তাই কোনো ধরনের বিধিনিষেধের মধ্যেও আনা যাচ্ছে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে খামখেয়ালিপনাও রয়েছে।
জীবন ও জীবিকার পার্থক্য
বর্তমানে যুক্তি দিয়ে জীবন চলে না, জীবন চলে জীবিকা দিয়ে
‘জীবন চলে জীবিকা দিয়ে’ – এটি অত্যন্ত স্থূল কথা। এই কথার মতো যে কেউ বলতে পারেন, ‘পেট ঠিক তো মাথা ঠিক’। আমরা সবাই একমত হবো যে, পেট খালি থাকলে মাথা কাজ করে না। কিন্তু এর মানে এই নয়, পেট এবং মাথা দুটো একই জিনিস বা সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অথবা আমরা এটাও মনে করব না যে, মাথার চেয়ে পেটের গুরুত্ব বেশি। অথবা আমরা এটাও মনে করব না, কারো উদর তার মস্তিষ্ককে পরিচালনা করে। যদিও সেটা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে প্রযোজ্য হতে পারে। অর্থাৎ যখন কারো প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকবে সেটা তার মন-মানসিকতাকে প্রভাবিত করে বা করতেই পারে।
কিন্তু এর থেকে যদি কেউ এই অনুমান করে যে, মানুষের জৈববৃত্তি তার বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিচালনা করে, তাহলে সে ভুল করবে। কেননা, আমরা জানি, মানুষের জৈববৃত্তি কখনো কখনো তার বুদ্ধিবৃত্তিকে প্রভাবিত করলেও মানুষ মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী। বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে সে জৈবিক এবং অপরাপর যে কোনো ফ্যাকাল্টিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।এভাবে আমরা জীবন ও জীবিকার ব্যাপারে বলতে পারি, জীবনের জন্য জীবিকা গুরুত্বপূর্ণ বটে, কিন্তু জীবন ও জীবিকা দুটি আলাদা জিনিস। they are necessarily connected, but not identical entities. জীবিকার জন্য জীবন নয়। বরং জীবনের জন্য জীবিকা। যদিও আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্যাপারটা চলছে উল্টো রকমে। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।
জীবন ও জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ হোক চিরতরে
গণতন্ত্রের থাকছে না কোনো সৌন্দর্য; পান করলে মরতে হবে, মাছ চাষ করলে সেগুলো বাঁচবে না এবং স্নান করলে গায়ে দুর্গন্ধ হবে। সেই ভয়ে সৎ মানুষগুলো দূরে থাকেন হুমকিতে পড়েছে জীবন ও জীবিকা সাধারণ মানুষের।নিরাপত্তা দেওয়া, জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা করবার মানসে যদি সকল রাজনৈতিক দল জনগণের সেবায় নিবেদিত হয়, তবেই আমরা কাক্সিক্ষত মুক্তি পেতে পারি। সংলাপ, সমঝোতা ও ক্ষমার পরিসীমা বাড়িয়ে এভাবে যদি সকল নৈরাজ্যকে আমরা বিদায় জানাতে পারি, তবে সোনার বাংলা কেবল স্বপ্ন হিসেবে অধরা থাকবে না, অর্জনযোগ্যও হবে।
শিক্ষা পণ্য নয়, জীবন ও জীবিকা অর্জনে দক্ষতা সৃষ্টির সোপান
শিক্ষার সঙ্গে জীবন-জীবিকার, দক্ষতা ও সুনাগরিকতা অর্জনের অবিচ্ছেদ্য, অপরিহার্য সম্পর্ক রয়েছে এবং আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটোই আছে। তবে অধুনা দেশে দেশে একটি প্রাসঙ্গিক, তবে ভিন্নধর্মী বিতর্কের অবতারণা হয়েছে। ‘দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন উচ্চশিক্ষার স্থান দখল করতে পারে না’—এ শিরোনামে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ-বিষয়ক প্রকাশিত লেখা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সৌদি লেখক, সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও উদ্যোগী ভাবনার অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ড. তাগরিদ আল-সিরাজ বলেন, উচ্চশিক্ষায় পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ বিধায় ও সময়ের চাহিদা মেটাতে না পারায় দক্ষতার প্রশিক্ষণ উচ্চশিক্ষাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
অ্যামাজন, গুগল ও আইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চশিক্ষায় উত্তীর্ণদের চেয়ে দক্ষ, প্রশিক্ষিতদের অধিক হারে নিয়োগদানের দিকে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অধ্যাপক ড. তাগরিদ উপরোক্ত ক্রমবর্ধমান ধারণা মূল্যায়নের ও বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনার ওপর জোর দিয়ে বলেন, শিল্প-বাণিজ্যের দ্রুত পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের অসংগতি আমাদের কাছে নতুন উপলব্ধি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে তার জন্য শিল্প বাণিজ্যের কর্ণধারদের দোষ দেয়া যায় না।
জীবন ও জীবিকা- চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন
জীবন ও জীবনকা (JoJ) কর্মসূচী সুস্পষ্টভাবে উচ্চ মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টি কমানোর জন্য নির্দেশিত এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের তিনটি জেলার ১৩টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রোগ্রামটি তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত কৌশলগত উদ্দেশ্য (SOs) অর্জনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে: SO1: পরিবারের পর্যায়ে খাদ্যের প্রাপ্যতা এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে; SO2: গর্ভবতী মহিলা এবং দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নতি হবে; এবং SO3: পরিবারগুলি তাদের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে এমন ধাক্কাগুলির প্রতি আরও স্থিতিস্থাপক হবে৷
চূড়ান্ত মূল্যায়নের লক্ষ্য হল: (i) সেভ দ্য চিলড্রেন এবং এর অংশীদাররা, সংশোধিত হিসাবে, পাঁচ বছরের কর্মসূচীর উল্লিখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি কতটা অর্জন করেছে তা মূল্যায়ন করা; (ii) প্রোগ্রামের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে প্রযুক্তিগত পদ্ধতির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করুন যেগুলি সফল হয়েছে এবং যেগুলি হয়নি, কারণগুলি সহ (যতটা সম্ভব); (iii) মূল প্রশ্নগুলির উত্তর পান যা শেখা পাঠ, সর্বোত্তম অনুশীলন, স্থায়িত্ব এবং ভবিষ্যতের প্রোগ্রামিংয়ের জন্য সুপারিশগুলিকে আরও ভালভাবে প্রয়োগ করতে অবদান রাখতে পারে; এবং (iv) SC, অংশীদার সংস্থা, দাতা, বাংলাদেশ সরকার (GoB) এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহ বৃহত্তর শ্রোতাদের কাছে প্রকল্প থেকে শেখা অত্যধিক পাঠের নথি/সারসংক্ষেপ।
এই চলতি বছরে বেকারত্বের হার বেড়েছে বহুগুণ। এই কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো খাবে কী? তাদের সংসারইবা চলবে কিভাবে? তাদের তো বসে বসে মরা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। জীবন আর জীবিকার মাঝখানে পড়ে হয়তো অনেকে দম বন্ধ হয়ে মারাও যাবে। তবু জীবিকার পিছু ছাড়বে না মানুষ। জীবন চলে জীবিকার হাত ধরে। আর মানুষের আবিষ্কৃত জীবিকাই তো দেশকে সমৃদ্ধ করে। এই বর্তমান পরিস্থিতি মানুষকে হাতে কলমে বুঝিয়ে দিয়েছে জীবনের মূল্য কতখানি। তাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবশ্যই থাকবে জীবন বনাম জীবিকা উভয়ই।
তথ্যসুত্র
জীবন চলে জীবিকা দিয়ে, Dorshan.
জীবন বনাম জীবিকা উভয়ই, Daily Naya Diganta.
The Jibon o Jibika (JoJ) Program , Global Waters.
জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা , Dhaka Times.
জীবন–জীবিকার এ সংকটে ধনী দেশগুলো, Bangla,BD News24.
জীবিকা মানে বাঁচার উচ্ছাস , Sonela Blog.
জীবন রক্ষা করতে গিয়ে জীবিকার ওপর আঘাত এসেছে, Kalerkantho.