বিশ্ব ফুসফুস দিবস (ফুসফুস ক্যান্সার) (Lung Cancer)

ধরুন আপনি জগিংয়ে বের হলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আপনার দম শেষ হয়ে গেল এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল। পরিস্থিতি আরো ভয়ানকও হতে পারে। সামান্য শারীরিক তৎপরতাতেও যদি আপনার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফুসফুস আশানুরুপ স্বাস্থ্যবান নয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুসফুসের ক্যান্সারের সমস্ত লোকের মধ্যে ১৬.৮% রোগ নির্ণয়ের পর কমপক্ষে পাঁচ বছর বেঁচে থাকে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে, ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য পাঁচ বছর ধরে বেঁচে থাকার আনুমানিক পরিমাণ ৯.৫% । উন্নয়নশীল বিশ্বের বেঁচে থাকার হার সাধারণত খারাপ।

ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ তামাক গ্রহণ। প্রতিদিন যারা দুই থেকে তিন প্যাকেট সিগারেট সেবন করেন এবং ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে সেবন করেন, এদের মধ্যে ৯০ ভাগ লোকের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।ফুসফুস (Lungs) মানব দেহের শ্বাসযন্ত্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ, যা মানুষকে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে। এই শ্বাসযন্ত্রটির প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। এই গ্যাস আদান-প্রদান করা হয় বিশেষায়িত কোষ দ্বারা তৈরী, খুবই পাতলা দেয়াল বিশিষ্ট লক্ষাধিক বায়ু থলির দ্বারা যাকে অ্যালভিওলাই বলে।ফুসফুস হলো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রধান শ্বসন অঙ্গ, যা আমাদের নিশ্বাস ও প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।

বিশ্ব ফুসফুস দিবস

আজ ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফুসফুস দিবস। বিশ্বব্যাপী ফুসফুস-সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে ফোরাম অব ইন্টারন্যাশনাল রেসপিরেটরি সোসাইটি দিনটিকে ফুসফুস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য ফুসফুসের স্বাস্থ্য’। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে।

ফুসফুস মেরুদণ্ডী প্রাণীর একটি অঙ্গ যা শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান কাজ হচ্ছে বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেয়া এবং রক্তপ্রবাহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। এই গ্যাস আদান-প্রদান করা হয় বিশেষায়িত কোষ দ্বারা তৈরি, খুবই পাতলা দেয়ালবিশিষ্ট লক্ষাধিক বায়ু থলির দ্বারা যাকে অ্যালভিওলাই বলে। এর শ্বাসকার্য ছাড়া অন্য কাজও আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত। দেশের প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ অ্যাজমা রোগে ভুগছেন।বিশ্বের সর্বোচ্চ যক্ষ্মা আক্রান্ত ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২১ ভাগই সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে আক্রান্ত।ফুসফুস রোগের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বায়ু দূষণ, ধূমপান, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দারিদ্র্যতা, সামাজিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। বাংলাদেশের ফুসফুসের প্রধান রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে সিওপিডি, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, যক্ষ্মা, আইএলডি, ফুসফুস ক্যান্সার।

ফুসফুস একধরনের রক্তজালিকা বা রক্তঝিল্লী বিশিষ্ট অঙ্গ

যা রক্তে অক্সিজেনের প্রবেশ ঘটায় এবং রক্ত থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ঘটায় । যা নাসারন্ধ্র পথে দেহ হতে বাইরে বেরিয়ে যায়।একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যাক্তি যখন বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে তখন তিনি মিনিটে প্রায় ১২-২০ বার নিশ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন

ফুসফুস এর অবস্থান

মানব দেহে ফুসফুসটি মূলত হৃদপিন্ডের দুইপাশ ঘেঁষে বড় খাঁচার ন্যায় অস্থিসমূহ দ্বারা আবৃত বক্ষ গহ্বরে অবস্থান করে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যার ফুসফুসের ওজন প্রায় ১০০০ গ্রাম এবং আয়তন প্রায় ৬০০০মি.লি পর্যন্ত হয়ে থাকে৷

ফুসফুস এর গঠন

এটি স্পঞ্জের মতো নরম , তুলতুলে এবং হালকা লালচে খয়েরী রঙের হয়ে থাকে।ডান দিকের ফুসফুস তিনটি খণ্ডে এবং বাম ফুসফুসটি দুই খণ্ডে বিভক্ত।ফুসফুস দুই ভাঁজবিশিষ্ট একটি পর্দা দিয়ে আবৃত যেটি প্লুরা নামে পরিচিত।দুই ভাঁজের মধ্যে এক ধরনের রস নির্গত হয়। ফলে শ্বাসক্রিয়া চলার সময় ফুসফুসের সাথে বক্ষগাত্রের কোনো প্রকার ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় না।

ফুসফুস এর কাজ

মানব দেহে ফুসফুসের মাধ্যমে গ্যাসীয় বিনিময় সম্পন্ন হয়ে থাকে।গ্যাসীয় বিনিময়ে বলতে মূলত অক্সিজেন  ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর বিনিময়কেই বোঝায়।মানুষের ক্ষেত্রে এটি মূলত বায়ু ও ফুসফুসের রক্তনালির ভিতরে ঘটে এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।

গ্যাসীয় বিনিময় দুটি পর্যায়ে ঘটে। যথা-

১. অক্সিজেন শোষণ ২.  কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ

১। অক্সিজেন শোষণ:

ফুসফুসের অ্যালভিওলাস ও রক্তের চাপের পার্থক্যের কারণে অক্সিজেন  ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে।ফুসফুস থেকে ধমনির রক্তে অক্সিজেন  প্রবেশের পর রক্তে অক্সিজেন  দুইভাবে পরিবাহিত হয়ে থাকে।

১) সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন যুক্ত রক্ত রক্তরসে  দ্রবীভূত হয়ে তারপর পরিবাহিত হয়।২) বেশির ভাগ অক্সিজেন মূ্লত  হিমোগ্লোবিনের লৌহ নামক অংশের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন নামে একটি অস্থায়ী যৌগ গঠন করে থাকে। যা থেকে অক্সিজেন সহজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

হিমোগ্লোবিন+ অক্সিজেন ————> অক্সিহিমোগ্লোবিন(অস্থায়ী যৌগ)

অক্সিহিমোগ্লোবিন————>  মুক্ত অক্সিজেন+হিমোগ্লোবিন

এইভাবেই রক্ত কৈশিকনালিতে পৌঁছার পর অক্সিজেন  পৃথক হয়ে যায় এবং এটি প্রথমে লোহিত রক্তকণিকার আবরণ ও তারপরে কৌশিকনালীর প্রাচীর ভেদ করে লসিকার ভিতর প্রবেশ করে।অবশেষে অক্সিজেন   লসিকা থেকে কোষের আবরণ ভেদ করে কোষের ভিতর পৌঁছে।

২। কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগঃ

খাদ্য জারন বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোষে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রথমে কোষের আবরণ ভেদ করে লসিকাতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে কৈশিকনালীকার প্রাচীর ভেদ করে রক্তরসে প্রবেশ করে।কার্বন ডাই অক্সাইড  প্রধানত সোডিয়াম বাই কার্বনেট (NaHCO3) রূপে রক্তরসের মাধ্যমে এবং পটাশিয়াম বাই কার্বোনেট (KHCO3) রূপে লোহিত রক্তকণিকার মধ্য দিয়ে পরিবাহিত হয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এরপর কৈশিকনালি ও বায়ুথলি বা অ্যালভিওলাস ভেদ করে দেহের বাইরে বের হয়ে যায়।

ফুসফুসের সমস্যা

শ্বাসনালির প্রদাহ বা ব্রঙ্কাইটিস, কাশি, হুপিং কাশি, রক্তকাশি, স্বরভাঙা, হাঁপানি, ঘন ঘন নিশ্বাস নেওয়া, বুকে ব্যথা, পার্শ্ব ব্যথা ইত্যাদি সাধারণ সমস্যা ছাড়াও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

অ্যাজমা

হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যার মূল লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট ও শাঁ শাঁ শব্দ করে নিশ্বাস ত্যাগ করা । মূলত এটি একটি বংশগতীয় রোগ। অ্যালার্জি, তামাকের ধোঁয়া ও রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ হাঁপানির মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। অ্যাজমা বা হাঁপানি কারও একবার হলে পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না কিন্তু যথাযথ চিকিৎসা সহ নিয়ম মেনে চললে এবং ঔষধ গ্রহন করলে রোগটি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।

সিওপিডি

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি একধরনের ফুসফুসের রোগ, যা ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহের গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়, ফলে শ্বাস নেওয়ায় সমস্যা হয়। দেখা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ মানুষই মানসিক কষ্টে ভুগেন ও উদ্বেগ নিয়ে থাকেন।

ফুসফুসের জন্য উপকারী খাবার

কিছু খাবার রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফুসফুস সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

হলুদ

নিয়মিত হলুদ খাওয়া শ্বাসযন্ত্রে বাতাস চলাচল সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে। এতে আছে কারকিউমিন যা ফুসফুস প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হলুদ কাঁচা বা গুঁড়া করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে রোগ বালাই দূরে থাকে।

গ্রিন টি

শ্বাসযন্ত্র সুস্থ রাখতে গ্রিন টি বেশ কার্যকর। এটা উপকারী পলিফেনল্স সমৃদ্ধ। এছাড়াও এর প্রদাহনাশক উপাদান ফুসসসের প্রদাহ কমায়। শ্বাসযন্ত্রের নানান সমস্যার মধ্যে ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও এম্ফেসিমা অন্যতম। এম্ফেসিমার কারণে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা বা ‘শর্ট বেথ’ দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা যায়, দৈনিক দুই কাপ গ্রিন টি খাওয়া এই ধরনের সমস্যার ঝুঁকি কমায়।

পুদিনার চা

এর রয়েছে নানা ঔষুধি গুণ। গরম পুদিনার চা মিউকাস, প্রদাহ ও গলা ব্যথা দূর করে। পুদিনার চা ফুসফুসের সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়ার কারণে জমে থাকা শ্লেষ্মা, প্রদাহ ও গলা ব্যথা দূর করতে পারে।

আদা

ঠাণ্ডা ও কাশির ঘরোয়া সমাধান। এর প্রদাহরোধী উপাদান শ্বাসযন্ত্র থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করে। এতে রয়েছে ভিটামিন ও নানা রকম খনিজ- পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, বিটা-ক্যারটিন ও জিংক। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে আদা ফুসফুসের ক্যান্সারের কোষ দূর করতে সাহায্য করতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মৌসুমি ঠাণ্ডা ও সংক্রমণ দূর করতে আদার চা বিশেষ উপকারী।

রসুন

রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন, যা শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান সমৃদ্ধ। এটা শ্বাসপ্রশ্বাসের সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে এবং ফুসফুসের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করে। এছাড়াও এটা প্রদাহ কমায় এবং হাঁপানি ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

আপনার ফুসফুস সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখুন

বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস অপরিহার্য। আর সেজন্য চাই সুস্থ ফুসফুস। বলা যায়, মানব শরীর নিয়ন্ত্রণ করে ফুসফুস। যথাসময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে শ্বাসযন্ত্রের অধিকাংশ রোগই প্রতিরোধযোগ্য। আমরা প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক বাতাস থেকে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করি। এই বাতাসে ফুসফুসের রোগ সৃষ্টির জন্য অনেক উপাদান রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ঘটে চলা বায়ুদূষণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের ফুসফুসে বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটাচ্ছে।বায়ুদূষণের অনেক উৎস রয়েছে, যেমন-যানবাহন, কল-কারখানা, বসতবাড়ি ইত্যাদি। এসব থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকারক নির্গমনের (পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, কাঠ, জৈববস্তু) ফলে বায়ুদূষণ দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্নভাবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে।

সাম্প্রতিক করোনা মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী তীব্র বায়ুদূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দেখা দিচ্ছে ফুসফুসের ব্যাধিসহ বিভিন্ন জটিল রোগ। ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে একসময় ফুসফুস ফাইব্রোসিস আক্রমণের শিকার হয় এবং অকেজো হয়ে যায়। পরিবেশ দূষণের ফলে ইন্টারস্টিশিয়াল লাং ডিজিজ, সিওপিডি, এমনকি ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, যা নিউমোনিয়া সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে করণীয়

সুষম খাদ্য, ভিটামিন-সি, ডি, জিঙ্কযুক্ত খাবার এবং ফলমূল খেতে হবে। বিশেষ করে প্রতিদিন ফলমূল খেলে ফুসফুসের উপকার হয়। যেমন, একটি আপেল শুধু ফুসফুস নয়, যে কোনো রোগের বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। তবে এর ভিটামিন, খনিজ, ফ্ল্যাভানয়েডস ইত্যাদি উপাদান ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে বিশেষ সাহায্য করে। কলায় থাকা পটাশিয়াম ফুসফুসের নানা সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। আনারস বা আঙুরের রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ পদ্ধতি উন্নত করে। পেয়ারা ফুসফুসের জন্য ভীষণ উপকারী।

ধূমপান বর্জন করতে হবে। ধূমপানের ফলে শুধু ফুসফুস নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি হয়। তাই সার্বিক সুস্থতার জন্য এ ত্যাগ স্বীকার করার কোনো বিকল্প নেই।ফুসফুসের ব্যায়াম শরীরকে সতেজ-সবল রাখতে সাহায্য করে।ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়ামনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কার্যকর।

এমন কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন :

৪-৭-৮ রিলাক্সিং ব্রিদিং

পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার নিঃশব্দে মনে মনে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে ‘হুস’ আওয়াজ করে সম্পূর্ণ বাতাস বের করে দিন। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পরপর ৪-৫ বার এভাবে নিঃশ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দুবার করে করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে এবং ঘুম ভালো হয়।

শ্বাস গোনার ব্যায়াম

এ ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পরপর কয়েকবার গভীর নিশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে দিন। প্রথমে নিশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, এর পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত গুনুন। অতঃপর আবার প্রথম থেকে শুরু করুন। এ ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন, যা মস্তিষ্ককে চাঙ্গা করে, মনোসংযোগ বাড়ায় ও মানসিক চাপ কমায়।

বাষ্প থেরাপি

বাষ্প থেরাপি বা বাষ্প নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে সেটি ফুসফুসকে শ্লেষ্মা নিষ্কাশন করতে সাহায্য করে। অনেক সময় ফুসফুসের সমস্যার কারণে বা ঠাণ্ডা লাগলে অথবা শুষ্ক বাতাসে ফুসফুসের শ্লেষ্মা ঝিল্লি শুকিয়ে গিয়ে রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে। বাষ্প থেরাপির মাধ্যমে ফুসফুসে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা যোগ করলে নিশ্বাস প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং তাৎক্ষণিক স্বস্তি পাওয়া যায়।

ঐচ্ছিক কাশি

শুনতে একটু অবাক লাগলেও কাশি আপনার ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করতে পারে। শরীরের প্রাকৃতিকভাবে শ্লেষ্মা আটকে থাকা টক্সিনগুলোকে বের করে দেওয়ার উপায় হচ্ছে কাশি। আর নিয়ন্ত্রিত কাশি ফুসফুসে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা শ্বাসনালি দিয়ে বের করে দিতে সাহায্য করে।

শারীরিক ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। এটি স্ট্রোক, হৃদরোগ, স্থূলতাসহ বিভিন্ন শারীরিক অবস্থা ও ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়া, ব্যায়াম শরীরের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়িয়ে দিয়ে পেশিগুলোকে বাড়তি পরিশ্রম করতে সাহায্য করে। এতে করে পেশিগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহও বৃদ্ধি পায়।

ধীরে ধীরে ফুসফুস নষ্ট করে দেয় ৩ জিনিস

ফুসফুস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। কোনো কারণে ফুসফুস সঠিকভাবে না কাজ করলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। আর শ্বাস নিতে না পারলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমতে শুরু করে। এর থেকে অনেকেই মৃত্যুবরণও করতে পারেন।ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ার পেছনে একাধিক রোগ দায়ী। বিশ্বব্যাপী নারী-পুরুষ উভয়ের ক্যানসারের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো ফুসফুসের ক্যানসার।ফুসফুস ক্যানসার এমন একটি রোগ, যেখানে ফুসফুসের টিস্যুতে বিপজ্জনক কোষ তৈরি হয়। ছোট কোষের ফুসফুসের ক্যানসার ও নন-স্মল সেল ফুসফুসের ক্যানসার এই দুটি ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান প্রকার।

ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ কি?

ক্যানসার হওয়ার জন্য সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে আছে- তামাক, ধূমপান, বায়ুদূষণ, বিকিরণের সংস্পর্শ, কয়লা ও বেরিলিয়ামের মতো রাসায়নিকের সংস্পর্শ কিংবা ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস।ভারতের যশোদা হাসপাতাল ও হায়দরাবাদের কনসালট্যান্ট ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজিস্ট ডা. ভি প্রতিভা প্রসাদ জানিয়েছেন, কোন ৩ জিনি ধীরে ধীরে ফুসফুসকে নষ্ট করে দেয়

ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি প্রতিরোধে কী করণীয়-

তামাক ব্যবহার

তামাক ব্যবহার ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের ফুসফুসের ক্যানসার হয় তামাক ব্যবহারের কারণে। সিগারেট, সিগার, পাইপ, হুক্কা, ইলেকট্রনিক সিগারেট ও তামাক খাওয়া ফুসফুসের জন্য বিপজ্জনক।অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ২০ গুণ বেশি। তাই ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধ বা ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো অবিলম্বে ধূমপান বন্ধ করা।

পরোক্ষ ধূমপান

সেকেন্ডহ্যান্ড ধোঁয়াও ক্ষতিকারক। এতেও সিগারেটের মতো একই ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। যা ফুসফুসের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান বন্ধ করার মাধ্যমে আপনি ও আপনার পরিবার সবাই সুস্থ থাকবেন।

বিকিরণ ও রাসায়নিক

পরিবেশ দূষণের কারণে অনেকেই দৈনিক নানা ধরনের বিকিরণ ও রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসেন। বিশেষ করে রেডন ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এ ধরনের বিকিরণ এড়ানোর চেষ্টা করুন।এছাড়াওঅ্যাসবেস্টস, কয়লা, সিলিকা, বেরিলিয়াম, আর্সেনিক, নিকেল ইত্যাদির মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিকের দীর্ঘায়িত এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন।

ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় কী?

ফুসফুসের ক্যানসার স্ক্রিনিং

নিয়মিত ফুসফুসের চেকআপ করার মাধ্যমে আপনি প্রাথমিক অবস্থায়ই ক্যানসার শনাক্ত করতে পারবেন ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।আপনি যদি একজন ধূমপায়ী হন, আপনার বয়স ৫০-৮০ বছরের মধ্যে হয় ও বিগত ২০ বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে ১ প্যাকেট সিগারেট গ্রহণ করেন তাহলে নিয়মিত ফুসফুসের স্ক্রিনিং করা জরুরি বলে জানান ডা. প্রতিভা।এছাড়া আপনি যদি এখনো ধূমপান করেন কিংবা ১৫ বছর আগে ধূমপান ছেড়ে দিয়েও থাকেন তাহলেও ফুসফুসের পরীক্ষা করুন।

খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা

ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি ও গোটা শস্য অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলো ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।একই সঙ্গে প্রতিদিন ফুসফুসের ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করুন। তাহলে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমবে।

৫টি খাবার যা ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম

কমবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এমন অনেক মহিলা আছেন যাঁরা কখনও সিগারেট খাননি, অথচ ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে শুধুমাত্রই যে সিগারেট খেলেই ফুসফুস ক্যানসার হয় তা নয়, অতিরিক্ত মাত্রায় দূষণ বেড়ে যাওয়ার ফলেও ফুসফুসে ক্যানসার হতেই পারে। শুধুমাত্র ওষুধ খেয়ে এই মারণ রোগের প্রতিকার না করে প্রাকৃতিক উপায়ও এই মারণ রোগ রোধ করা সম্ভব।

কমবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এমন অনেক মহিলা আছেন যাঁরা কখনও সিগারেট খাননি, অথচ ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে শুধুমাত্রই যে সিগারেট খেলেই ফুসফুস ক্যানসার হয় তা নয়, অতিরিক্ত মাত্রায় দূষণ বেড়ে যাওয়ার ফলেও ফুসফুসে ক্যানসার হতেই পারে। শুধুমাত্র ওষুধ খেয়ে এই মারণ রোগের প্রতিকার না করে প্রাকৃতিক উপায়ও এই মারণ রোগ রোধ করা সম্ভব।

আপেল

ফলের মধ্যে আপেল ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস ক্যানসার হওয়ার হাত থেকে ফুসফুসকে বাঁচায়।

রসুন

রসুনে থাকা সালফাইড ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। রান্না না করে কাঁচা রসুন খেলে সব থেকে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

ব্রকোলি

সবুজ সব্জির মধ্যে সব থেকে ভালো হল ব্রকোলি। এতে সালফ্রোফেন থাকে। যা ফুসফুসকে মারণ রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এই সবুজ রঙা সবজির থেকে যে এনজাইম বের হয় তা ক্যানসার রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।

লাল বেলপেপার

লাল বেলপেপার এবং লাল লঙ্কাতে ফাইটোকেমিক্যাল থাকে, যা ফুসফুসকে মারণ রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।

পালং শাক

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট, ভিটামিন এবং লুটেইন থাকে। যা ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ফুসফুস ক্যান্সারের যে ৯টি প্রাথমিক লক্ষণেই সতর্ক হতে হবে

ফুসফুসের ক্যান্সার সবচেয়ে মারাত্মক ক্যান্সারগুলোর অন্যতম একটি। প্রাথমিক স্তরেই যদি এই ক্যান্সার সনাক্ত করা না যায় তাহলে কিন্তু মৃত্যু অবধারিত। সুতরাং আসুন জেনে নেওয়া ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক ৯টি লক্ষণে সম্পর্কে যেগুলো দেখা দেওয়া মাত্রই সতর্ক হতে হবে।

১. ক্রমাগত কাশি

এলার্জি, ঠাণ্ডা-সর্দি, ফ্লু-র মতো সাধারণ কিছু রোগের লক্ষণ হতে পারে কাশি। ফলে লোকে হয়তো কাশি হলে খুব একটা চিন্তিত নাও হতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি দুই মাসের বেশি কাশি হয় এবং ওষুধ খাওয়ার পরও তা ভালো না হয় তাহলে তা ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ।

২. মরিচা রঙের কফ

কফের রঙ যদি মরিচা বা লালাভ হয় তাহলে বুঝতে হবে কফের সঙ্গে রক্ত বের হচ্ছে।এটিও ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক একটি লক্ষণ।

৩. বুকে ব্যথা


গ্যাস্ট্রিসাইটিস, অবসাদ, রক্তশুন্যতা, স্ট্রেস সহ নানা কারণে বুকে ব্যথা করতে পারে। নিঃশ্বাস গ্রহণের সময় যদি তীব্র ব্যথা হয় অথবা হাসি বা কাশির দেওয়ার সময় বুকে ব্যথা হয় তাহলে তা হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক একটি লক্ষণ।

৪. অনবরত অবসাদ বা ক্লান্তি

ব্যস্ত জীবনের কারণে ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভূতি হতে পারে। এছাড়া পুষ্টির ঘাটতি, স্ট্রেস থেকেও অবসাদ দেখা দিতে পারে।কিন্তু ক্রমাগত অবসাদ, যা দীর্ঘমেয়াদি এবং প্রতিদিনের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায় তা হতে পারে ফুসফুস বা অন্য কোনো ক্যান্সারের লক্ষণ।

৫. গলার স্বরের পরিবর্তন


স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার সময়ও যদি গলার স্বর কর্কশ বা ফেঁসফেঁসে শোনায় তাহলে তা হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ। ফুসফুসে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার পর তা শ্বসন প্রক্রিয়ার অন্যান্য অংশ সহ ভোকাল কর্ড বা স্বরতন্ত্রীকে আক্রমণ করে। ফলে গলার স্বর বদলে যায়।

৬. দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ

আপনার যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কাশি, ঠাণ্ডা, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া হয় এবং ওষুধ খাওয়ার পরও ভালো না হয় তাহলে তা ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। ফুসফুস ক্যান্সার শ্বাস গ্রহণ প্রক্রিয়াক দুর্বল করে দেয় যার ফলে এই ধরনের সংক্রমণ হয়।

৭. স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা

মস্তিষ্কের কিছু অংশের সঙ্গে ফুসফুসের সংযোগ রয়েছে। মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরাগুলোর মাধ্যমে ও সংযোগ স্থাপিত হয়। ফলে ফুসফুস ক্যান্সার হলে মস্তিষ্কেও প্রভাব পড়ে। বসা থেকে উঠতে গিয়ে যদি সমস্যা হওয়া, কাঁধের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি ফুসফুস ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত।

৮. গাইনেকোমেস্টিয়া

পুরুষদের স্তনে অতিরিক্ত টিস্যু জন্মানো এবং প্রায় নারীদের মতো বড় স্তনের আকার ধারন করার নাম গাইনেকোমেস্টিয়া। হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা এবং বংশসূত্রেও এই সমস্যা হতে পারে। তথাপি এটি ফুসফুস ক্যান্সারের একপি প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে। ফুসফুস স্তনের টিস্যুগুলোর কাছাকাছি জায়গায় থাকার ফলে স্তনের টিস্যুগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আর পুরুষদের মধ্যে এই লক্ষণটি বেশি স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়।

৯. চোখের পাতার দুর্বলতা

ফুসফুসের একেবারে ওপরের অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে চোখের পাতা দুর্বল হয়ে আসে। কেননা ফুসফুসের ওই অংশের স্নায়ুগুলো চোখের পাতার স্নায়ুগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে চোখের পাতা দুর্বল হওয়াও ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাথমিক একটি লক্ষণ।

৮ লক্ষণে বুঝবেন ফুসফুসে ক্যান্সার

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ফুসফুসে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো না বুঝেই অবহেলা করেন। আবার ফুসফুসের ক্যান্সার উপসর্গ সবসময় প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা নাও দিতে পারে। কিন্তু ফুসফুসের ক্যান্সার যত তাড়াতাড়ি আপনি বুঝতে পারবেন, এটির চিকিৎসাও তত তাড়াতাড়ি করা সহজ হবে। তাই আজ জেনে নিন যে ৮ লক্ষণে বুঝবেন ফুসফুসে ক্যান্সার—

১. বেশিরভাগ সময় কাশি হওয়া

অনেকেই কাশির সমস্যাকে অবহেলা করে থাকেন। কিন্তু এটিও হতে পারে ফুসফুসে ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। আপনার যদি বেশিরভাগ সময়ে কাশি হয়ে থাকে তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

২. কাশির শব্দে পরিবর্তন বা কাশির সময় বুকে ব্যথা

অনেকদিন কাশি হওয়ার পরে কাশির শব্দে পরিবর্তন আসতে পারে এবং কাশির সময় বুকে ব্যথা হতে পারে। এমনটা হলে তা অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এটিও হতে পারে ফুসফুসে ক্যান্সারের একটি লক্ষণ।

৩. কোনো কাজ করতে গিয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া

আপনি আগে যেসব কাজগুলো কোনো সমস্যা ছাড়াই করতেন, সেগুলো করতে গিয়ে এমন মনে হতে পরে যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরকম সমস্যা দেখা দিলে তা হতে পারে ফুসফুসে ক্যান্সারের একটি লক্ষণ।

৪. কফে রক্ত আসা

অনেক সময় কাশির সঙ্গে কফ উঠে তাতে রক্ত আসতে দেখা দিতে পারে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে থাকলে।

৫. বুকে বা কাঁধে ব্যাথা

ফুসফুসে ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে বুকে বা কাঁধে ব্যাথা দেখা দেওয়া।

৬. বুকের সংক্রমণ

কিছুদিন পরপরেই বুকে সংক্রমণ দেখা দেওয়া বা একবার বুকের সংক্রমণ হলে তা অনেক দিনেও ভালো না হওয়া ফুসফুসে ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।

৭. ক্ষুধা কমে যাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া

ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণে ক্ষুধা অনেক কমে যেতে পারে এবং ওজন কমে যেতে পারে।

৮. ক্লান্তিবোধ

ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে থাকলে তার একটি লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে ক্লান্তিবোধ। এতে সবসময় আপনার ক্লান্তিবোধ দেখা দিতে পারে

ফুসফুসের ক্যান্সারের নির্ণয়

রক্ত পরীক্ষা। সিটি(CT) ।এমআরআই(MRI) ।বায়োপসি(Biopsy)- সন্দেহজনক অঞ্চল থেকে টিস্যুর নমুনা নেওয়া হয় এবং পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়। পিইটি সিটি স্ক্যান(PET CT scan)- ক্যান্সারের বিস্তার দেখার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়। স্পুটাম সাইটোলজি(Sputum cytology)- কাঁশির সময় উত্পাদিত কফ (শ্বাস নালীর শ্লেষ্মা ঝিল্লি দ্বারা লুকানো একটি ঘন সান্দ্র পদার্থ) পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়।

ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকারগুলি

দুটি ধরণের ফুসফুস ক্যান্সার রয়েছে, যা নিম্নলিখিত

ক্ষুদ্র কোষের ফুসফুসের ক্যান্সার (Small cell lung cancer) – ক্ষুদ্র কোষের ফুসফুসের ক্যান্সার (SCLC) বেশিরভাগ ভারী ধূমপায়ীদের মধ্যে দেখা যায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নন-স্মল সেল ফুসফুসের ক্যান্সার (Non-small cell lung cancer) – নন-স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সার (NSCLC) ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ ধরণ। এটি আরও 3 ধরণের শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে:

অ্যাডেনোকার্সিনোমাস (Adenocarcinomas)- এই ধরনের ক্যান্সার গ্রন্থি কোষে ঘটে যা শ্বাসনালীগুলির আস্তরণে উপস্থিত থাকে এবং শ্লেষ্মা সৃষ্টি করে। স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা (Squamous cell carcinoma)- স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা হ’ল কোষগুলির মধ্যে হওয়া কার্সিনোমা যা শ্বাসনালীগুলির পৃষ্ঠকে আচ্ছাদন করে। বৃহত কোষ কার্সিনোমা (Large cell carcinoma)- এই ক্যান্সার কোষগুলি মাইক্রোস্কোপের নীচে বৃহত্তর এবং বৃত্তাকার দেখা দেয়। অপ্রকাশিত অ-ক্ষুদ্র কোষের ফুসফুসের ক্যান্সার- এগুলি হ’ল অনুন্নত ক্যান্সার কোষ।

ফুসফুসের ক্যান্সারের পর্যায়গুলি

প্রথম পর্যায়: ক্যান্সার ফুসফুসে সীমাবদ্ধ। দ্বিতীয় পর্যায়: ক্যান্সার ফুসফুস এবং নিকটস্থ লিম্ফ নোডে উপস্থিত রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়: ক্যান্সার লিম্ফ নোডে উপস্থিত থাকে এবং বুকের একদিকে উপস্থিত হতে পারে যেখানে ক্যান্সার বাড়তে শুরু করেছে বা বুকের বিপরীতেও উপস্থিত হতে পারে। স্টেজ চতুর্থ: ক্যান্সার উভয় ফুসফুসে এবং ফুসফুসের আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিত্সা

সার্জারি

ফুসফুস ক্যান্সারে বিশেষত প্রাথমিক পর্যায়ে, যখন রোগ এখনও স্থানীয় থাকে তখন সার্জারি হস্তক্ষেপের পছন্দসই লাইন হিসাবে বিবেচিত হয়। সার্জারি নিম্নলিখিত হতে পারে-

বেদানাশক নিরীক্ষণ (Wedge Resection)- স্বাস্থ্যকর টিস্যুগুলির একটি সামান্য মার্জিনের সাথে ক্যান্সারযুক্ত টিস্যুগুলি সরানো হয়। বিভাগীয় নিরীক্ষণ (Segmental Resection) – লবের(lobe) একটি বড় অংশ সরানো হয়। লোবেক্টমি (Lobectomy) – ফুসফুসের একটি সম্পূর্ণ লব (lobe) সরিয়ে ফেলা হয়। নিউমোনেক্টমি (Pneumonectomy) – পুরো ফুসফুস সরানো হয়।ফুসফুস ছাড়াও ক্যান্সারের মেটাস্টেসিস (metastasis) পরীক্ষা করতে বুকের লিম্ফ নোডগুলিও সরানো যেতে পারে।যদি টিউমারটির আকার বড় হয়, তবে টিউমারটি কিছুটা সঙ্কুচিত করার জন্য টিউমার বিশেষজ্ঞরা চিকিত্সা করার আগে কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন ( Neo-adjuvant Therapy)। একইভাবে, রেসিডুয়াল ক্যান্সার কোষগুলি (residual cancer cells) মারার জন্য সার্জারির পরে কেমো এবং রেডিয়েশন থেরাপি করা যেতে পারে (Adjuvant Chemotherapy)।

কেমোথেরাপি

কেমোথেরাপি হ’ল ক্যান্সারবিরোধী ওষুধের ব্যবহার যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী দ্রুত বিভাজনকারী কোষগুলির বৃদ্ধি ধীরগতিতে বা বন্ধ করতে সহায়তা করে। এটি বিভাজনকোষকে হত্যা করে দ্রুত বিভাজনকারী কোষগুলির বৃদ্ধি রোধ করে।এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও, কেমো এখনও সর্বাধিক ব্যবহৃত ক্যান্সার চিকিত্সার বিকল্প। রেডিয়েশন এবং সার্জারি থেকে পৃথক যা নির্দিষ্ট স্থানে ক্যান্সার কোষগুলির সাথে আচরণ করে, কেমোথেরাপির ওষুধগুলি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলিতে মেটাস্টেট (ছড়িয়ে পড়ে) থাকা ক্যান্সার কোষকে হত্যা করতে পারে।

লক্ষ্যযুক্ত ড্রাগ থেরাপি

লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি এক ধরণের ক্যান্সারের চিকিত্সা যা ক্যান্সারের ড্রাগগুলি ব্যবহার করে। তবে এটি প্রচলিত কেমোথেরাপির থেকে পৃথক, যা ক্যান্সার কোষগুলি মারতে ওষুধও ব্যবহার করে। টার্গেটেড থেরাপিতে ক্যান্সারের নির্দিষ্ট জিন, প্রোটিন বা ক্যান্সারের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য অবদান রাখে এমন টিস্যু পরিবেশকে লক্ষ্য করা হয়। লক্ষ্যযুক্ত থেরাপিটি সাধারণত কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য হস্তক্ষেপের সাথে ব্যবহৃত হয়।

ইমিউনোথেরাপি

ইমিউনোথেরাপি (বায়োলজিক থেরাপি নামেও পরিচিত) একটি নতুন ধরণের ক্যান্সারের চিকিত্সা যেখানে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়িয়ে তোলা হয় শরীরকে নিজেই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করার জন্য। ইমিউনোথেরাপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নতি বা পুনরুদ্ধার করতে শরীর দ্বারা বা পরীক্ষাগারে তৈরি পদার্থ ব্যবহার করে।

বিকিরণ থেরাপি

রেডিয়েশন থেরাপি এক ধরণের ক্যান্সারের চিকিত্সা যা টিউমারগুলি সঙ্কুচিত করার জন্য ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন বীম ব্যবহার করে। রেডিয়েশন ডিএনএ(DNA) ধ্বংস করে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে। ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ(DNA) যুক্ত ক্যান্সার কোষগুলি সংখ্যাবৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয় এবং মারা যায়। তারপরে এগুলি শরীরের প্রক্রিয়া দ্বারা সরানো হয়।

স্টেরিওট্যাকটিক রেডিওসোজারি

স্টেরিট্যাকটিক রেডিওসোজারি (SRS) রেডিয়োসার্জারির একটি উন্নত রূপ যেখানে খুব উচ্চ মাত্রায় বিকিরণের ডোজগুলি মাল্টি ডাইমেনশনাল ইমেজিং ব্যবহার করে কোনও লক্ষ্য স্থানে বিকিরণ করা হয়। স্টিরিওট্যাকটিক রেডিওসার্জারি ক্যান্সার কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে সহায়তা করে যার সাথে আশপাশের স্বাস্থ্যকর টিস্যুগুলির সর্বনিম্ন বা কোনও ক্ষতি হয় না। সুপরিচিত এসআরএস বিকল্পগুলি হ’ল:

লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিনগুলি- সাইবার ছুরি(Cyber knife) বর্তমানে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় মেশিন এবং গামা ছুরি(Gamma Knife) আজকের সময়ে একটু কম সাধারণ। প্রোটন বিম থেরাপি- উন্নত হস্তক্ষেপ এবং বিশ্বব্যাপী নির্বাচিত হাসপাতালে উপলভ্য।স্টিরিওট্যাক্টিক রেডিওসার্জারি ছোট ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য বিবেচিত হতে পারে, বা যেখানে ক্যান্সার মস্তিষ্কের মতো অন্যান্য অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী

প্যালিয়েটিভ কেয়ার ক্যান্সারের মতো গুরুতর অসুস্থতার ব্যথা এবং অন্যান্য লক্ষণগুলি হ্রাস করার জন্য বিশেষ চিকিৎসা। কেমো, রেডিয়েশন ইত্যাদির মতো অন্যান্য আক্রমণাত্মক ব্যবস্থাগুলির পাশাপাশি উপশম যত্ন দেওয়া যেতে পারে। এটি ব্যথা হ্রাস করে এবং রোগীর জীবনমান উন্নত করে।

ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রকারভেদ

মাইক্রোস্কোপের নিচে ফুসফুসের ক্যান্সার কোষগুলি কীভাবে প্রদর্শিত হবে তার ভিত্তিতে ডাক্তাররা ফুসফুসের ক্যান্সারকে দুটি বিস্তৃত বিভাগে বিভক্ত করেছেন।  ফুসফুসের ক্যান্সারের ধরণ নির্ণয়ের পরে, ডাক্তার কীভাবে ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।ফুসফুস ক্যান্সারের দুটি ধরণের ,তা হল:

ক্ষুদ্র কোষের ফুসফুসের ক্যান্সার: ক্ষুদ্র কোষের ফুসফুসের ক্যান্সার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বেশি মাত্রার ধূমপায়ীদেরই সনাক্ত করা হয় এবং এই ধরণের ফুসফুসের ক্যান্সার ছোট কোষের ফুসফুস ক্যান্সারের চেয়ে কম সাধারণত।ক্ষুদ্র নয় এমন কোষের ফুসফুসের ক্যান্সার:  কিছু ধরণের ফুসফুস ক্যান্সার কিছুটা একই উপায়ে কাজ করে।  ছোট নয় এমন কোষের ফুসফুসের ক্যান্সারে স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, বৃহত সেল কার্সিনোমা এবং অ্যাডেনোকার্সিনোমা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয় করা

ডাক্তারের সাথে প্রাথমিক পরামর্শের পরে, ডাক্তার কিছু শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন এবং ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি সম্পাদন করতে পারেন।  এই পরীক্ষাগুলির যদি টিউমার কোষগুলি ক্যান্সার হয় তবে একটি বায়োপসি চালানো হয়।  এটা অন্তর্ভুক্ত:

ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসার বিকল্পগুলি

ফুসফুসের ক্যান্সার শল্য চিকিৎসা: ফুসফুসের ক্যান্সার শল্য চিকিৎসার মধ্যে, সার্জন ফুসফুসের ক্যান্সার এবং স্বাস্থ্যকর টিস্যুর একটি ছোট অংশ অপসারণ করতে বুকে চিরা তৈরি করে।  ফুসফুসের ক্যান্সার এর প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন পদ্ধতি হ'ল:

কেমোথেরাপি

কেমোথেরাপি হল ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসার আর একটি সাধারণ রূপ যা কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য বিভিন্ন ধরণের ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ পরিচালনার মাধ্যমে করা হয়: ড্রাগগুলি ইনট্রাভেনসেস (আইভি), ইনট্রা-আর্টেরিলি (আইএ), বা ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল (আইপি) মাধ্যমে  )

লক্ষ্যযুক্ত কেমোথেরাপি

চিরাচরিত কেমোথেরাপির বিপরীতে, এই ওষুধগুলি নির্বাচিতভাবে প্রভাবিত অঞ্চলে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়, যার ফলে সিস্টেমের অন্যান্য অংশগুলির কম ক্ষতি হয়।  উন্নত ওষুধগুলি এখন সরাসরি ক্যান্সারের কোষগুলিতে নির্দিষ্ট কার্যগুলিকে লক্ষ্য করতে পারে।


বিকিরণ থেরাপি

রেডিয়েশন থেরাপি একটি ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসা যা বহুলভাবে অক্ষম টিউমার কোষের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।  রেডিয়েশন থেরাপিতে এক্স-রে বা অতি শক্তিশালী তরঙ্গ আল্ট্রা-ভয়েলেট (ইউভি) রশ্মির মতো থাকে।  কিছু ক্ষেত্রে, আরও কার্যকর ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপির সাথে রেডিয়েশন থেরাপির সাথে মিলিত হয়।
উপশমকারীফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেবল ক্যান্সারের লক্ষণ ও লক্ষণই নয়, ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।  সহায়ক যত্ন, যাকে উপশম যত্নও বলা হয়, ওষুধের যে শাখায় ডাক্তার আপনার লক্ষণ ও লক্ষণগুলি হ্রাস করতে আপনার সাথে কাজ করে।

ফুসফুসের ক্যান্সার বেঁচে থাকার মাত্রা

ক্যান্সার যদি লিম্ফ নোড এবং রক্ত ​​প্রবাহে প্রবেশ করে থাকে তবে এটির শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  সুতরাং, ফুসফুসের বাইরে ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়ার আগে যদি এটি শুরু হয় তবে ভারতে ফুসফুসের ক্যান্সারের চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর।
অন্যান্য বিষয় যেমন বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য, চিকিৎসার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়াও বেঁচে থাকার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে বাঁচানো সম্ভব

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে ধরা পড়লে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে না। এখন অনেক নতুন কেমোথেরাপি, রিসিপটর বেইজ কেমোথেরাপি চলে এসেছে। সেগুলো দিয়ে হয়তো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেষ্টা করে রোগীকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার ওপর রোগীর সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করে। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরণঘাতক হিসেবে এইডসের পরই ক্যান্সারের অবস্থান।

ফুসফুসের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ ব্যাধি। প্রতিবছর বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ইদানীং মহিলাদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিলারাও অধিকসংখ্যক হারে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি অদ্যাবধি আবিষ্কৃৃত হয়নি। যদি একবারে প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি ধরা পড়ে তবে তা থেকে মোটামুটি আরোগ্য লাভ করা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরূপণ দুঃসাধ্যই বলা চলে। জীবাণুঘটিত রোগ না হওয়ায় এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যতটা সম্ভব প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় ও সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে মৃত্যুহার এবং এ রোগের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপন্নতা কমানোর চেষ্টা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। ধূমপায়ী ব্যক্তিই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি। তবে অধূমপায়ীদের যে এ রোগ হতে পারে না তা কিন্তু নয়।

নগরায়নের এ বিশ্বে শিল্পকারখানা ও গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, এ্যাসবেটপস ইত্যাদি এ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ যেমনÑ যক্ষ্মা নিউমোনিয়া ভাল হওয়ার পর ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের যে কোন স্থান ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। সাধারণভাবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি, কাশির সঙ্গে কফ বা রক্ত, শাসকষ্ট, বুকের ব্যথা হালকা, জ্বর, খাদ্যে অনীহা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে হাজির হতে পারে। অনেক সময় এ রোগ শরীরের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের ব্যাধির মধ্যে একটি জটিল ব্যাধি হচ্ছেÑ এমফাইসিমা। এমফাইসিমার ফলে ফুসফুসে মাত্রাতিরিক্ত বাতাস জমা হয়। এটি প্রধানত শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। কারণ যখন ফুসফুসের ভেতরের দিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতাস জমা হয় তখন রোগীর কফ, কাঁশির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট প্রকট আকার দেখা দেয়। এমফাইসিমা একটি কষ্টদায়ক ব্যাধি। এই রোগটি মানবদেহে একদিনে বাসা বাঁধে না। দীর্ঘসময় নিয়ে এটি সৃষ্টি হয়। বাড়তি বাতাস জমা হলে ফুসফুস খুব দ্রুত ফুলে ওঠে এবং এর অভ্যন্তরের অংশগুলো অকেজো হয়ে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষ্যণসমূহ ফুসফুসের মাধ্যমে যেহেতু পরিবেশের সব ভাল-মন্দ আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তাই এখানে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে সবচেয়ে বেশি। ফুসফুস ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের প্রথম থেকেই সচেতন থাকা জরুরী। গবেষকরা বলেছেন, সঠিক সময়ে রোগটি চিহ্নিত করা না গেলে শতকরা ১০০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হয়। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে একে নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব নয়। তারা বলেছেন, অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণগুলো বোঝা যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে পর্যায় ৩ এ চলে যাওয়ার পর ধরা পড়ে। তারপরও কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। অনেক সময় চাপা কাশি ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। আবার অন্য নানা কারণেও চাপা কাশি হতে পারে। তারপরও কফ দীর্ঘদিন থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে বাঁচতে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ধূমপায়ী হলে দীর্ঘস্থায়ী কফের সঙ্গে বেশি শ্লেষ্মা ও রক্ত গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নতুবা বিপদ থেকে রেহাই মিলবে না। শ্বাসকষ্ট বা দম কম পড়া ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের পথে ব্লক হলে, পথ সরু হয়ে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ হুইসেলের মতো শোনালেও সতর্ক হন। তবে শারীরিক আরও সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে। তারপরও আগাম সতর্কতায় শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনরকম অস্বস্তি হলেই চিকিৎসকের কাছে যান।

বেশ কিছুদিন ধরে মাথা ব্যথা, বুক ব্যথা কিংবা কাঁধে ব্যথা হলেও সাবধান হোন। কেননা এটিও ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। হঠাৎ করে অনেকটা ওজন কমে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হতে পারে। কণ্ঠস্বর কর্কশ বা ফেঁসফেঁসে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। এই লক্ষণ সাধারণত কাশি বা কফের সময় হয়। তবে এটা যদি দুই সপ্তাহের বেশি হয় তবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ফুসফুসের টিউমার কণ্ঠস্বরের স্নায়ুর ওপর প্রভাব ফেললে এই সমস্যা হয়। হঠাৎ করে খিদে কমে যাওয়া খুব একটা ভাল লক্ষণ নয়। এর জন্য শরীরের ক্যান্সার কোষগুলো দায়ী। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে এমন হতে পারে। অনেকেরই হাড় ও মাংসপেশিতে নানা সময়ে ব্যথা হয়। তবে তা সবসময় যে ক্লান্তি বা দুর্বলতার কারণে হয় তা নয়। ফুসফুসে ক্যান্সার হলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কাজেই ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে আগেই সচেতন হোন। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসার পর আবার কী সমস্যাটি ফিরে আসে?

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফুসফুসের ক্যান্সার যদি একেবারেই প্রাথমিক সময় ধরা না যায় তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে না। এখন অনেক নতুন কেমোথেরাপি, রিসিপটর বেইজ কেমোথেরাপি চলে এসেছে। সেগুলো দিয়ে আমরা হয়তো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেষ্টা করি এতে রোগীকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। আর প্রথম সময়ে যদি ধরা পড়ে তাহলে পাঁচ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা যায়। আসলে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার উপরে রোগীর সুস্থতা অনেকটা নির্ভর করে।


তথ্যসুত্র

ধীরে ধীরে ফুসফুস নষ্ট করে দেয় ৩ জিনিস, Jago News24.

আপনার ফুসফুস সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখুন, Jugantor.

বিশ্ব ফুসফুস দিবস, Protidiner Sangbad.

ফুসফুসের জন্য উপকারী খাবার,Bd News24.

ফুসফুস ক্যান্সারের উপসর্গ কী?, Ntvbd.

ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী, Daily Jana Kantha.

ক্যান্সার ফুসফুসে সীমাবদ্ধ।, Ghealth121.

ফুসফুস এর অবস্থান, Srfamulus.

৮ লক্ষণে বুঝবেন ফুসফুসে ক্যান্সার, Jugantor.

ফুসফুসের ক্যান্সার কী, Cureindia.

ফুসফুস ক্যান্সারের  ৯টি প্রাথমিক লক্ষণ, Kaler Kantha.