আম বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ (Mango)

আম বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ (Mango)

আম গাছ (সাধারণভাবে আম নামে পরিচিত) হচ্ছে সুমাক এবং পয়জন ইভির অ্যানাকার্ডিয়াসিয়েই পরিবারের সপুষ্পক গাছের একটি প্রজাতি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় জাত এবং এর আদি উৎস এখানেই। বিশ্বের অন্যান্য উষ্ণ অঞ্চলে শত শত জাতের আম চাষ হয়।

আমের নামকরণের ইতিহাস

আম (Mango) গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে উৎপন্ন একটি ফল। Anacardiaceae গোত্রের Mangifera indica প্রজাতির এ ফল গাছের উৎপত্তির ইতিহাস সুপ্রাচীন। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, আম বাংলাদেশ, আসাম (ভারত) ও মায়ানমারসহ ভারত উপমহাদেশের পূর্বাঞলীয় অঞ্চলের স্থানীয় ফল। পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে।

ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় ও লোকজ অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য ফলাদির মধ্যে আমের ব্যবহার সর্বাধিক। এসব অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমের মতো অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক খুব কম ফলেরই রয়েছে। কথিত আছে, স্বয়ং গৌতম বুদ্ধকে একটি আম্রকানন উপহার দেওয়া হয়েছিল যেন তিনি তার ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারেন। প্রাচীনকালে আমের কদর আর গুরুত্ব বোঝাতে সংস্কৃতে এর নামকরণ করা হয় আম, যার অর্থ মজুদ খাদ্য বা রসদ। বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন-সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন। ধারণা করা হয় তিনিই আমকে সর্বপ্রথম বহির্বিশ্বে পরিচিত করান। মুগল সম্রাট আকবর তাঁর শাসনামলে (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) ভারতের লাখবাগের দারভাঙার সন্নিকটে প্রায় এক লক্ষ আম গাছ রোপন করেছিলেন। সেটিকে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সুসংগঠিত আমবাগান বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশে আম একটি জনপ্রিয় ফল। বহু বছর ধরে আভিজাত্য বহন করছে আমের এই অদ্ভুত নামগুলো। কিন্তু প্রত্যেকটি আমের নামকরণের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। আসুন জেনে নেই এমন নামের কারণ।

ফজলি আম:

জানা যায়, ১৮০০ সালে ফজলি বিবি নামে এক বৃদ্ধা বাস করতেন গৌড়ের এক প্রাচীন কুঠিতে। তার বাড়ির উঠানেই ছিল একটি আমগাছ। তিনি গাছটির খুব যত্ন নিতেন। ওই এলাকার কালেক্টর রাজভেনশ একবার বৃদ্ধার ঘরের কাছে শিবির স্থাপন করেন। তার আগমনের খবর পেয়ে বৃদ্ধা সেই আম নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন।রাজভেনশ সেই আম খেয়ে খুবই মজা পান। সেই আমের নাম জানতে চান। কিন্তু ইংরেজি না বুঝে শুধু ‘নেম’ শুনেই নিজের নাম বলে দেন ফজলি বিবি। সেই থেকেই এই আমের নাম ‘ফজলি’।

ফজলি বা ফকিরভোগ মৌশুমি ফল আমের একটি প্রকারভেদ। এই ফল দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও বিহারে পাওয়া যায়। আমের অন্যান্য প্রজাতির থেকে দেরিতে ফলে এই ফসল। সাধারণতঃ জ্যাম ও আচার তৈরিতে ব্যবহৃত ফজলি, আকারে বেশ বড় হয়; এক কিলোগ্রাম বা তারও বেশি ওজনের হতে পারে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা জেলা এবং বাংলাদেশের উত্তরদিকের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ফজলি চাষের জন্য বিখ্যাত।এপ্রিল, ২০০৮ থেকে মার্চ, ২০০৯ সময়ের মধ্যে ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় মালদা জেলার ফজলি আমের জন্য ভৌগলিক সূচক লাভ করেছে। বাংলাদেশও রাজশাহীর ফজলির জন্য ২০১৩ সালে ভৌগলিক সূচক পাবার ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে।

ল্যাংড়া আম:

মোঘল আমলে দ্বারভাঙায় এই আম চাষ শুরু হয়। কিন্তু তখন কেউ এর নাম নিয়ে মাথা ঘামাননি। পরে আঠারো শতকে এক ফকির খুব সুস্বাদু এই আমের চাষ করেন। সেই ফকিরের পায়ে একটু সমস্যা ছিল। সেই থেকেই নাকি ওই আমের নাম হয়ে যায় ‘ল্যাংড়া’।ল্যাংড়া আম বা বারানসী আম ভারতের অন্যতম একটি বিখ্যাত আম। এটি পশ্চিমবঙ্গ সহ সমগ্র উত্তর ভারতে চাষ করা হয়। এই আম পাকার পর খানিক হলদে রঙের হয়। জুলাই মাসের দিকে এই আম পাকতে শুরু করে এবং বাজারে পাওয়া যায়। এই আমকে ছোটো ছোটো টুকরো করার ক্ষেত্রে আদর্শ বলে মনে করা হয়। এছাড়া নানা আম থেকে তৈরী খাদ্যের ক্ষেত্রেও আদর্শ বলে মনে করা হয়।

লক্ষ্মণভোগ আম:

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ বাজারের চণ্ডীপুরের বাসিন্দা লক্ষ্মণ একটি আম গাছ রোপণ করেন। স্বাদে-গন্ধে সেই আম ছিল অতুলনীয়। লক্ষ্মণ চাষির নাম থেকেই লক্ষ্মণভোগ আমের উৎপত্তি।

গোপালভোগ আম:

ইংরেজ বাজারে নরহাট্টার গোপাল নামের এক ব্যক্তি চাষ করেন এ আম। সেই থেকে গোপাল চাষির নামে গোপালভোগের উৎপত্তি হয়।

গোলাপখাস আম:

গন্ধের জন্য বিখ্যাত এ আম। গোলাপ ফুলের মতো গন্ধ থাকায় এই আমকে গোপালখাস নামে ডাকা শুরু হয়। প্রাচীন বাংলার আমগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এর গায়ে গোলাপের রঙের লালচে আভা রয়েছে।

গুটি আম:

ছোট এক ধরনের আম খেয়ে সেই আঁটি নিজের বাগানে পুঁতেছিলেন মালদহের এক দরিদ্র কৃষক। সেই আঁটি থেকেই জন্ম নিয়েছিল একটি আম গাছ। কাঁচা অবস্থায় টক। কিন্তু পাকলে খুব মিষ্টি। আঁটি বা গুটি থেকে গাছটি জন্মায় বলে আমের নামও হয়ে যায় ‘গুটি’।

আশ্বিনা আম:

আশ্বিন মাসে পাকে যে আম তাকে ‘আশ্বিনা’ বলে। আশ্বিনা জাতের আম গাছে থাকে সাধারণত আগস্ট মাস পর্যন্ত। কিছু কিছু এলাকায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও এ আম পাওয়া যায়।

দশেরি আম:

উত্তর প্রদেশের আমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাদশাহি খানদানের ইতিহাস৷ যেমন আমের রাজা দশেরির কথাই ধরা যাক৷ উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষৌ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হলে পড়ে মালিহাবাদ নামে একটা জায়গা৷ উন্নত প্রজাতির আম দশেরির জন্য এই এলাকা চিহ্নিত৷ এখানে ৩৫ হাজার হেক্টর জমি জুড়ে আছে আমের বাগান৷ রাজ্যের মোট আমের ফলনের ১২.৫ শতাংশ আম এই মালিহাবাদেই হয়৷ তাই মালিহাবাদকে বলা হয় ‘‘আমের রাজধানী''৷

স্থানীয় লোকজনদের মতে অবশ্য মালিহাবাদ এবং দশেরি আম নিয়ে নানা গল্পকথা আছে৷ কেউ কেউ বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে ফকির মহম্মদ খান ওরফে গয়া মালিহাবাদির নেতৃত্বে একদল আফ্রিদি পাঠান ভাগ্যান্বেশনে আফগানিস্তানের সীমান্তে খাইবার গিরিপথের এক গ্রাম থেকে পেশাওয়ার হয়ে হিন্দুস্থানে আসে৷ প্রথমে তাঁরা আসে উত্তর প্রদেশের ফারুকাবাদে৷ সেখান থেকে অবধ-লক্ষৌ-এ৷ মহম্মদ খানের বীরত্ব এবং যুদ্ধ বিদ্যার নৈপূণ্য দেখে অবধের নবাব খুশি হন৷ বকশিস হিসেবে মহম্মদ খান ফলের বাগান করার অনুমতি প্রার্থনা করেন নবাব বাহাদুরের কাছে৷ সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর হয়৷ কথিত আছে, মহম্মদ খান প্রথম মালিহাবাদে আমের চারা রোপণ করেন৷তবে দশেরি আম বাগান সবই এককালে ছিল নবাবদের৷ পরে অন্যদের ইজারা দেয়া হয়৷ বাংলায় আমের খ্যাতি এককালে ছিল মুর্শিদাবাদের নবাব আমলে৷

আম্রপালি:

আম্রপালি আমকে অনেকেই আম রুপালি হিসেবে চিনে। আসলে এই আমটির আসল নাম আম্রপালি। ভারতের গবেষকরা পৃথিবীর বিস্ময়কর এক আম সৃষ্টি করেছেন। এই সেই আম্রপালি। ভারতের শ্রেষ্ঠ নর্তকীর নাম ছিল আম্রপালি।

১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা দশহোরি ও নিলাম-এই দুটি আমের মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে আম্রপালি আমের জাত উদ্ভাবন করেন। এই জাতের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথমত আমাদের দেশের আবহাওয়ার কারণে উন্নত জাতের আম এক গাছে এক বছর ফলে পরের বছর ফলে না। কিন্তু আম্রপালি প্রতিবছর ফলে। এর মিষ্টতার পরিমাণ ল্যাংড়া বা হিমসাগরের চেয়ে বেশি। গাছ বামন আকৃতির। ফলনও বেশি। পাঁচ হাত দূরত্বে এক হেক্টর জমিতে এক হাজার ৫০০ আম্রপালির চারা রোপণ করা যায়। আমের আকার লম্বাটে। আষাঢ় মাসে পাকে। গড় মিষ্টতার পরিমাণ ২৩ শতাংশের বেশি। আঁটি সরু। সুস্বাদু আঁশবিহীন। ১৯৯০ সালে প্রথম আমাদের দেশে আম্রপালির চারা আসে। বর্তমানে দেশে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় আম্রপালির চারা কিনতে পাওয়া যায়। যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা জেলায় আম্রপালির অনেক বড় বড় বাগান রয়েছে। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকায়ও এখন প্রচুর পরিমাণে আম্রপালি চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে ১৬ মেট্রিক টন আম্রপালি ফলে। আম্রপালি অনেকটা সবজির মতো। প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ সার দেওয়া প্রয়োজন। ১২-১৪ বছর বয়স হলে গাছ কেটে নতুন চারা লাগালে ভালো হয়। এর কারণ হচ্ছে, বয়সী আম্রপালি গাছের ফল ছোট হয় ও ফলন কমে যায়। আম্রপালি অতুলনীয় মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি আম । এর রং ও গন্ধ অসাধারন । এই আম সাইজে কিছুটা লম্বা ও ছোট । আম রুপালি ওজনে ৭৫ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে । কম আঁশ যুক্ত এই আমটির খোসা পাতলা এবং আঁটিও পাতলা । আম্রপালি সাধারনত ফজলি আমের পরে আসে।

হাড়িভাঙ্গা আম:

বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদার বাড়ীর বাগানে প্রজাবাৎসল, উদারমনা ও সৌখিন রাজা তাজ বাহাদুর শিং এর আমলে আমদানিকৃত ও রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল যা ১৯৮৮ সালের বন্যা ও ভাঙ্গনে যমুনেশ্বরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় । ১নং খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের মৃত নফল উদ্দিন পাইকার, পিতা মৃতঃ তমির উদ্দিন পাইকার আমের ব্যবসা করতেন । তিনি জমিদারের বাগানসহ অন্য আম চাষীদের আম পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন । জমিদার বাগানের আমদানীকৃত আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও দর্শনীয় হওয়ায় তিনি উহার একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ জমিতে রোপন করেন । বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি হওয়ায় শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার সুবিধার্থে একটি হাড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে কে বা কারা উক্ত হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলেন । কালের বিবর্তনে বৃক্ষটি ফলবান ‍বৃক্ষে পরিণত হয় । মৃত নফল উদ্দিনের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও ভোক্তাবৃন্দ উক্ত গাছের আম খাওয়ার পর এত সুস্বাদু আমের উৎস সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, কে বা কারা যে গাছটির হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিল এটি সেই গাছেরই আম । গাছকে সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নফল উদ্দিন কর্তৃক উচ্চারিত বা মুখ নিঃসৃত হাড়িভাঙ্গা কথার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে এটি “হাড়িভাঙ্গা” নামে পরিচিত লাভ করে।

হাড়িভাঙ্গা আম গাছের চেহারা লক্ষ্যণীয় ও আকর্ষণীয় । ডগা বা ছায়ন পূষ্ট ও বলিষ্ঠ । উহার ছায়ন দ্বারা গ্রাফটিং করলে বা ডালে জোড়কলম লাগালের গাছ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় । অল্প দিনের মধ্যে ডালপালা বিস্তৃত হয়ে গাছের পরিধি লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যায় । চারা রোপনের পরবর্তী বছরেই মুকুল আসে, তবে প্রথম বছরে মুকুল ভেঙ্গে দিলে গাছের ডগার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে । হাড়িভাঙ্গা আম গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গাছের ডালপালা উর্ধ্বমূখী বা আকাশচুম্বী হওয়ার চেয়ে পাশে বেশী বিস্তৃত হতে দেখা যায় । ফলে উচ্চতা কম হওয়ায় ঝড়-বাতাসে গাছ উপড়ে পড়েনা এবং আমও কম ঝড়ে পড়ে । আমটির উপরিভাগ বেশী মোটা ও চওড়া, নিচের অংশ অপেক্ষাকৃত চিকন । আমটি দেখতে সুঠাম ও মাংসালো, শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা । আমের তুলনায় শ্বাস অনেক ছোট, ভিতরে আঁশ নেই আকারের তুলনায় অন্য আমের চেয়ে ওজনে বেশী, গড়ে ৩টি আমে ১ কেজি হয় । কোন কোন ক্ষেত্রে একটি আম ৫০০/৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে । পুষ্ট আম বেশী দিন অটুট থাকে । চামড়া কুচকে যায় তবুও পঁচে না । ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায় । তবে আমটি খুব বেশী না পাকানোই ভাল।

এছাড়াও অনেক নামে আম আছে তাঁর নামকরণের সঠিক ইতিহাস আমাদের জানা নেই। তবে অনুসন্ধান চলছে এই সব আমের নামের সঠিক ইতহাস জানা থাকলে আমাদের জানাতে পারেন, আমরা তা তুলে ধরবো বিশ্ব দরবারে। যেমনঃ- খিরসা, অরুনা, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি।

২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের ফল আছে। তবে আমের মতো এত সুস্বাদু ফল আর নেই। আমের যেমন ঘ্রাণ, তেমনি মজাদারও বটে। তাই তো বলা হয়, ফলের রাজা আম। আম আঁটিযুক্ত ফল। আম দিয়ে বানানো হয় চাটনি, আচার, আমসত্ত্ব, জুস। গ্রীষ্মকালে আমের সঙ্গে দুধ-কাঁঠাল মিশিয়ে মজাদার খাবার তৈরি হয়। দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকার, হূৎপিণ্ডাকার, লম্বা বা সরু নানা আকৃতিতে হয়ে থাকে। আম খুব রসাল ফল। কাঁচা আমের রং সবুজ। পাকলে অনেকটা হলদেটে এবং কমলা মিশ্রিত লাল আভাযুক্ত। কোনো কোনো জাতের আম আছে, যা পাকলেও সবুজ দেখা যায়। আকারভেদে একেকটি আমের ওজন ৭৫০ গ্রাম থেকে প্রায় এক কেজি হয়ে থাকে। এসব আমের বিভিন্ন রকম নাম আছে। ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাত, কাঁচা মিষ্টি, হিমসাগর, আম্রপালি, খিরসাগর, ফজলি, কিষাণভোগ, মোহনভোগ, মিছরিভোগ, গুঁটি, লখনা, আশ্বিনাসহ আমাদের দেশে কয়েক শ প্রজাতির আম রয়েছে

Taken from Beshto

বাংলাদেশের যেদিকে তাকানো যায়, চোখে পড়ে আমগাছ। কি শহরে, কি গ্রামে! সহজলভ্য এই আমগাছ তাই জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কেন আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হলো এর কয়েকটি কারণও আছে।  আমগাছ দেশের সর্বত্রই সহজে জন্মায়।  আমাদের জাতীয় সংগীতে আমগাছের কথা আছে। ‘ও মা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে...’  মহান ভাষা আন্দোলনের সময় ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমাবেশ হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে। এটি মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত।  ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে ব্রিটিশদের হাতে পলাশীর আমবাগানে।  আমগাছের কাঠ দিয়ে আসবাব বানানো যায় ও জ্বালানি হিসেবেও কাজে লাগে। আম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ফল। খেতে সুস্বাদু। দেশের প্রায় সব এলাকায় আমগাছ দেখা যায়।

আমগাছ বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ। এ ঘোষণা দেয়া হয় ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর। আমগাছ সাধারণত ১১৫-১৩০ ফুট লম্বা এবং সর্বোচ্চ ৩৩ ফুট চওড়া হয়ে থাকে। আমগাছ বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এর প্রধান শিকড় মাটির নিচে প্রায় ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত যায়। আমগাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক; কচি পাতা দেখতে লালচে-গোলাপি রঙের হয়। আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে, মুকুল থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে।

ভারতীয় উপমহাদেশে আম কয়েক হাজার বছর ধরে চাষাবাদ চলছে।

বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব উষ্ণপ্রধান জলবায়ুর অঞ্চলগুলোতে আমের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি আম উৎপাদন হয় শুধু ভারতেই। এরপর অন্যান্য আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে রয়েছে- চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি। আম খুব উপকারী ফল।

কেন  আম বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ

হোক কাঁঠাল জাতীয় ফল, সাহিত্যে কাঁঠালের অবস্থান আম থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে। তুম ভি কাঁঠাল খায়া হাম ভি কাঁঠাল খায়া গল্পে কাঁঠাল ফলের স্বাদের প্রশংসার চেয়ে বেশি করা হয়েছে কাঁঠালের আঠার বিড়ম্বনার কাহিনি। পীরিতি কাঁঠালের আঠা, সে আঠা লাগলে পড়ে উঠে না বলে যত গানই গাওয়া হোক না কেন; পীরিতি যে ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ভঙ্গুর প্রেমের সম্পর্কের কথা এই গানে উঠে আসেনি।প্রাণহরা আম ভারত ও পাকিস্তানে জাতীয় ফলের মর্যাদা পেয়ে আসছে, কিছুটা হলে ফল রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশে আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দিয়েছে।
আমভক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে সোনার বাংলা গীত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হয়েছে, আমের মহিমা প্রচারিত সেই পানে, কাঁঠাল, কমলা, কলা, জাম এই গানে ঠাই পায়নি:

ওমা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে
ওমা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসিৃ

আমাদের হরফ জ্ঞান হবার আগেই কবি জসীমউদ্দীনের 'মামার বাড়ি' মুখস্থ হয়ে যায়। আম কুড়ানোর সুখটা আসলে কেমন বুঝতে পারলেও সাধারণ সুখের চেয়ে ভিন্ন এক সুখের সাথে পরিচিতি ঘটে:

আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।
ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ
পাকা আমের মধুর রসে
রঙিন করি মুখ।

ফজলি আম যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মোহিত করে রেখেছে, কাঁচা আমকেও তিনি ছাড় দেননি:

তিনটি কাঁচা আম পড়েছিল গাছতলায়
চৈত্রমাসের সকালে মৃদু রোদ্দুরে
যখন দেখলুম অস্থির ব্যগ্রতায়
হাত গেল না কুড়িয়ে নিতে।
তখন চা খেতে খেতে মনে ভাবলুম
বদল হয়েছে পালের হাওয়া
পুব দিকের খেয়ার ঘাট ঝাপসা হয়ে এলো।
Taken from Dhaka Post

কাজী নজরুল ইসলামের গানে ও কবিতা আমের মতো ফল বেশ জায়গা করে নিয়েছে:

বন্ধু আজও মনে যে পড়ে আম কুড়ানো খেলা
আম কুড়াইবার যাইতাম দুইজন নিশি ভোরের বেলা।
জোষ্ঠিমাসের গুমোট রে বন্ধু নামত নাকো নিদ,
রাত্রে আমও নাকো নিদ
আম-তলার এক চোর আইস্যা কাটত প্রাণের সিদ।

নজরুলের আরও একটি গান:

আমের মতো আমের ডালে বোল ধরেছে বউ
তুমিই শুধু বদলে গেছ আগের মানুষ নও
তেমনি আজো তোমার নামে উথলে মধু গোলাপ জামে
উঠল পুরে জামরুলে রস মহুল ফুলে মউ
তুমিই শুধু বদলে গেছ আগের মানুষ নও।

কুড়ি বছর পরে কবিতায় জীবনানন্দ আমকে ভোলেননি:

হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু-সরু কালো-কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার,
শিরীষের অথবা জামের,
ঝাউয়ের আমের
কুড়ি বছরের পরে তখন তোমারে পাই মনে
জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার।
Taken from Dhaka Post

৩০০ বছর বয়সী গাছেও আম ধরে

৫০০০ বছর আগেও ভারতবর্ষে আম ছিল, যৌক্তিকভাবে তা প্রমাণ করা সম্ভব। খ্রিষ্টজন্মের তিন থেকে চার শ বছরের মধ্যে বিভিন্ন দেশি পর্যটকদের মাধ্যমে আম মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছে এবং আমের বিচি রোপিত হয়। আমগাছ ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এর চওড়া ৩৫ ফুট ছাড়িয়ে থাকতে পারে। আমগাছ বেঁচে থাকলে ৩০০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাতে আম ধরার নজির রয়েছে।

আমের মুকুলে পরাগায়ন ঘটায় কীটপতঙ্গ। মুকুলের এক শতাংশেরও কম ফলে পরিণত হয়। ৪ থেকে ৬ বছরের মধ্যে আমগাছে ফল ধরে। আমের পরিপূর্ণ ফল হওয়া পর্যন্ত ৪ মাস সময় লাগে। আম পেকেছে কি না, রং দেখে বুঝতে চাইলে বিভ্রান্তির শিকার হতে হবে। মেক্সিকো, পেরু, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, গুয়েতেমালা ও হাইতি মূলত উত্তর আমেরিকায় আম রপ্তানি করে থাকে। উৎপাদনের পরিমাণ ও বৈচিত্র ভারতকে বিশ্বের আম্র-রাজধানী করে তুলেছে।

আমের পাতা ভেষজ ঔষধি গুণসম্পন্ন

আমের ফলের মতো, আম গাছের পাতাগুলি পুষ্টিকর এবং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। আয়ুর্বেদ এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা অনুসারে, আম গাছের পাতা হাজার হাজার বছর ধরে তাদের থেরাপিউটিক ক্ষমতার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই পাতার বেশ কিছু ব্যবহার ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ইস্টার্ন মেডিসিন আম গাছের পাতার অনেক সুবিধার উপরও অনেক বেশি জোর দেয়।

আম গাছের পাতা - চুলের সমস্যার জন্য একটি দুর্দান্ত সমাধান:

চুলের বৃদ্ধি বেঁধে রাখতে আম গাছের পাতা সবচেয়ে ভালো। এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি যা চুলকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতাও দেয়। পাতা ভিটামিন সি এবং এ পূর্ণ, যা কোলাজেন গঠন বাড়ায়, যা স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য অত্যাবশ্যক।আম গাছের পাতাও রাসায়নিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করতে সাহায্য করে। এগুলিতে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা প্রাকৃতিকভাবে চুলকে কালো করতে পারে। আপনি তাজা আমের পাতা নিয়ে সূক্ষ্ম পেস্ট তৈরি করতে পারেন। পেস্টটি চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অস্থিরতার বিরুদ্ধে লড়াই করে:

দুর্ভাগ্যবশত, উদ্বেগ সবচেয়ে ঘন ঘন তরুণদের প্রভাবিত করে এমন একটি অবস্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উদ্বেগ অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যারা এটি অনুভব করছে এবং তাদের আশেপাশের অন্যদের বিরক্ত করে। আম গাছের পাতা খাওয়া অস্থিরতার জন্য একটি কার্যকর প্রাকৃতিক চিকিৎসা। অস্থিরতা কমাতে গোসলের পানিতে ২-৩ কাপ আম পাতার চা দিতে পারেন।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে:

আম গাছের পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী। অ্যান্থোসায়ানিডিন নামে পরিচিত এই পাতায় পাওয়া ট্যানিন টাইপ 1 ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় সাহায্য করে। এটিতে ইথাইল অ্যাসিটেট এবং 3বিটা ট্যারাক্সেরলও রয়েছে, যা হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি) নিরাময়ে সহায়তা করে।

আমাশয় নিরাময় করে:

রক্তপাত আমাশয় এই পাতা দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে। আপনি ছায়ায় পাতা শুকিয়ে গুঁড়োতে রূপান্তর করতে পারেন। আমাশয় বন্ধ করতে, জলের সাথে একত্রিত করে মিশ্রণটি প্রতিদিন 2-3 বার খান।

পেটের আলসার এবং হেঁচকি নিরাময় করে:

প্রাচীনকাল থেকেই আম গাছের পাতা পেটের আলসার এবং হেঁচকি নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কখনও কখনও হেঁচকি অনমনীয় হয় এবং সেগুলি থামানো কঠিন। এই ধরনের ক্ষেত্রে, এই পাতাগুলি বিস্ময়কর কাজ করে।কিছু আমের পাতা পুড়িয়ে ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারেন। ধোঁয়া হেঁচকি কমাতে সাহায্য করবে। পাকস্থলীর আলসার নিরাময়ের জন্য পাতা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে সেই পানি নিয়মিত পান করুন।

কিডনি এবং পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসা করে:

আম পাতার গুঁড়া কিডনিতে পাথর এবং পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি পাথরকে বিচ্ছিন্ন করতে সাহায্য করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অপসারণ করতে সাহায্য করে। এগুলি শরীর থেকে টক্সিন বের করার জন্যও উপযুক্ত।কয়েকটি আমের পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন। আপনি পাউডারে জল যোগ করতে পারেন এবং সারারাত রাখার পরে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে জল পান করতে পারেন।

প্রদাহ বিরোধী গুণাবলী রয়েছে:

গবেষণা অনুসারে, আম পাতার প্রাণীদের উপর প্রদাহ বিরোধী প্রভাব রয়েছে। এর মানে হল তারা আপনার মস্তিষ্ককে আলঝাইমার এবং পারকিনসনের মতো অবস্থার বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সক্ষম হতে পারে। আম পাতার নির্যাস চা ব্যবহার করে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

আম গাছের পাতা - ওজন কমাতে সাহায্য করে:

গবেষণায় দেখা গেছে যে আম গাছের পাতা শরীরের চর্বি জমার মাত্রা কমিয়ে স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যার ফলে উচ্চ বিপাকীয় হার হতে পারে যা আপনাকে ওজন বাড়াতে বাধা দেয়।ওজন কমানোর জন্য এটিকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে, চা তৈরি করতে এক মুঠো আম পাতা দিয়ে 150 মিলি জল ফুটিয়ে নিন। প্রতিদিন এই চা পান করুন এবং ফলাফল নিজেই দেখুন। যদি তাজা পাতা আসা কঠিন হয়, আপনি বিকল্পভাবে আম পাতার গুঁড়া বা নির্যাস ব্যবহার করতে পারেন।

Taken from Jugantor

আমের আঁটি একটি ভোগ্যপণ্য, বর্জ্য নয়

১৫-২০ লাখ টন আম থেকে প্রায় তিন বা চার লাখ টন ভেতরে শাঁস পাওয়া যাবে। আঁটি বর্তমানে ৯৯ শতাংশ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয় এবং গ্রাম ও শহরের রাস্তার অলিগলিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এক শতাংশেরও কম নার্সারিতে চারা উৎপাদনে ব্যবহার হয়। ফলে ৯৯ শতাংশ বর্জ্য হিসেবে না ফেলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং একটি মূল্যবান সম্পদে পরিণত করার সুযোগ রয়েছে। এতকাল এটি উপেক্ষিত থাকলেও এখন সময় হয়েছে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের এবং সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা। গবেষণার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে এবং গবেষণার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হলোÑ ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, সাধারণ লোকজন সায়েন্স ল্যাবরেটরি নামে চেনে ও জানে। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের প্রচলিত ও অপ্রচলিত সামগ্রী গবেষণায় সফলতা রয়েছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিনামূল্যে উদ্যোক্তাদের হস্তান্তর করে থাকে। তবে প্রবন্ধকারের অবশ্য জানা নেই উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আমের আঁটির পুনর্ব্যবহার বিষয়ে কোনো গবেষণা করেছে কী না। যদি না হয়ে থাকে তাহলে চলতি বছর থেকেই প্রয়োজনীয় উপকরণ অর্থাৎ আঁটি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তবে বেসরকারি উদ্যোগেও গবেষণায় আশাপ্রদ ফল পাওয়া যেতে পারে।

অর্গানিক উপকরণ আমের আঁটি নানাভাবে আমাদের ফুড চেইনে ব্যবহার হতে পারে। আঁটির শক্ত আবরণের ভেতরের শাঁস নিষ্কাশণ করে যে পেস্ট পাওয়া যাবে তার পরিমাণ কম করে হলেও তিন-চার লাখ টন। সেটি অর্গানিক উপাদান আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটা প্রমাণিত যে বেকারিতে নি¤œমানের খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং বেকারির খাদ্যমান প্রশ্নবিদ্ধ। বিপুলসংখ্যক ভোক্তা জেনে বা না জেনে সেসব সামগ্রী খেয়ে চলেছে। বেকারিতে বিভিন্ন ধরনের বিস্কিট তৈরিতে এই পেস্ট ব্যবহার হতে পারে। চকলেটের প্রতি বাচ্চারা খুব আকৃষ্ট এবং প্রচুর পরিমাণে ভক্ষণ করে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে আমরা জানতে পারি চকলেট তৈরি করতে উচ্ছিষ্ট ও নিকৃষ্টমানের উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই অর্গানিক পেস্ট চকলেট তৈরিতে ব্যবহার হতে পারে। এছাড়া মিষ্টি তৈরিতে এই পেস্ট যথেষ্ট কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় এ পেস্ট ব্যবহার করে বিস্কিট, চকলেট, মিষ্টি তৈরি করতে অনায়াসে ব্যবহার করছে। শুনে আশ্চর্য লাগতে পারে, তারা বিদেশে এ পেস্ট রপ্তানি করছে এবং ভালো চাহিদা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমাদের দেশে আমের উৎপাদন অনেক বেশি। আমরাও রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি। আঁটি ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ, শুকনো আঁটি শীতল নামে পরিচিত কামড়ে খাওয়া যায়, মিষ্টি স্বাদের হলেও কসযুক্ত। শীতল চিবানোর পর পানির স্বাদ হবে সরবতের মতো, যা খাবার অরুচি ও বদহজম উপশম করে। এসব বিষয়ে বোধকরি দেশের খাদ্য পুষ্টি বিজ্ঞান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এমনকি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জানা নেই।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঢাকাস্থ পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটে কর্মরত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. আবু তালেব বিগত শতাব্দীর শেষে আঁটির শাঁস থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদন করতে সক্ষম হন। কিন্তু অকাল মৃত্যুর কারণে তার যুগান্তকারী আবিষ্কার হারিয়ে যায়। তারপর থেকে আর কোনো গবেষণার খবর আমার জানা নেই।পরিত্যক্ত বর্জ্য পশুর হাড় সংগ্রহ করে দেশে বড় আকারে গড়ে উঠেছে জীবনরক্ষাকারী ক্যাপসুলের খোলস তৈরির ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো সেই খোলস নিয়ে বিভিন্ন ক্যাপসুল তৈরি করছে, অর্গানিক সামগ্রী ব্যবহারের কারণে বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে এবং রপ্তানি হচ্ছে। আরো এক অপ্রচলিত কৃষিপণ্য চালের কুড়া দিয়ে ভোজ্য তেল উৎপাদন করা হচ্ছে এবং এটি বহুল প্রচলিত ভোগ্যপণ্য। এভাবে গার্মেন্টসের পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে দেশের অনেক স্থানে ছোট বড় কারখানা গড়ে উঠেছে যা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। দেশে বাজেটের আকার প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। বাজেট ঘাটতির মোকাবিলার জন্য অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে আমের আঁটি সম্ভাব্য মূল্যবান পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।

Taken from Gour Bangla

আম উৎপাদান বাংলাদেশ এগোচ্ছে

গত শতকে আম উৎপাদনকারীর শীর্ষে ২৫ তালিকার কাছেও বাংলাদেশ আসতে পারেনি। তবে গত দুই দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে; ২০২১ সালে প্রথম দশে চলে এসেছে, ওদিকে ভারত শীর্ষ স্থানে আছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই।

অবস্থান    দেশ    উৎপাদন (টন)
১. ভারত            ১৫,১৮৮,০০০
২. চীন              ৪,৩৫০,০০০
৩. থাইল্যান্ড      ২,৬০০,০০০
৪. ইন্দোনেশিয়া  ২,১৩১,১৩৯
৫. পাকিস্তান     ১,৮৮৮,৪৪৯
৬. মেক্সিকো     ১,৮২৭,৩১৪
৭. ব্রাজিল         ১,২৪৯,৫২
৮. বাংলাদেশ     ৮৮৯১৭৪
৯. নাইজেরিয়া  ৮৫০০০০
১০. ফিলিপাইন ৮০০,৫৫১

বাংলাদেশের আরও এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বড় সীমাবদ্ধতা জমির স্বল্পতা। অন্যদিকে ভারতে আম চাষের জন্য নির্ধারিত জমি ২৩ লক্ষ একরেরও বেশি। ভারতের আম উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করা রাজ্যগুলো হচ্ছে উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, বিহার, গুজরাট, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশা। শীর্ষ স্থানে অবস্থান করলেও আম প্রক্রিয়াকরণে অনেক এগিয়ে চীন এবং তৃতীয় স্থানে থাইল্যান্ড। পাকিস্তানও আমের অন্যতম রপ্তানিকারক, রপ্তানির ৬০ ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ। আমের বৈচিত্রের প্রশ্নে ভারতকে পরাস্ত করা দুরূহ ব্যাপার। ১৫০০ ধরনের আম রয়েছে, এর মধ্যে ১০০০ ভ্যারাইটিজ বাণিজ্যিকভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

ভারত পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি আম উৎপন্ন করে। আর উত্তর প্রদেশ রাজ্য একাই ভারতের ২৩ শতাংশ আম উৎপন্ন করে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের শেয়ার সাড়ে চার ভাগ। সব মিলিয়ে এশিয়ার দেশগুলোতে আমের লক্ষণীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, কালিফোর্নিয়া, হাওয়াই অঙ্গরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চল পুয়ের্টো রিকোতে আমের চাষ হয়ে থাকে। পুয়ের্টো রিকোর আম ইউরোপে রপ্তানি হয়। ব্রাজিলেরও।

২০২০ সালের হিসেবে ভারত, চীন, থাইল্যান্ডের পরের স্থানটি ছিল মেক্সিকোর, কিন্তু মেক্সিকো দুধাপ নেমে গেছে, উঠে এসেছে চতুর্থ স্থানে ইন্দোনেশিয়া, পঞ্চম স্থানে পাকিস্তান। এ বছর ১১তম থেকে ২৫তম স্থান অধিকারী দেশগুলো হচ্ছে ফিলিপাইন, সুদান, কেনিয়া, ভিয়েতনাম, হাইতি, তানজানিয়া, কিউবা, ইয়েমেন, পেরু, কলম্বিয়া, নেপাল, মাদাগাস্কার, কঙ্গো, নাইজার, গিনি।ক্রমেই বাংলাদেশ আম রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় লক্ষণীয় সাফল্যের আভাস দিচ্ছে। বেশ কবছর ধরেই বাংলাদেশের এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে

বাংলাদেশ আম গবেষণা কেন্দ্র


আম গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা কেন্দ্র। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আম সংশ্লিষ্ট সকল ধরণের গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্বদিকে নবাবগঞ্জ নামক স্থানে এর

আম গবেষণা কেন্দ্রের মোট জমির পরিমাণ ৩০.৬ একর বা ১২.৪০ হেক্টর। এই জমির উপর রয়েছে ফলের বাগান, অফিস, গবেষণাগার, আবাসিক ভবন এবং ৬৫ জাতের প্রায় ৩০০ আমগাছ। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে আম চাষের উপর ইস্তর গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে আমের জাতিগত উন্নয়ন এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেন্দ্রের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তার সহযোগী হিসেবে আরও ৪ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রয়েছেন। আম গবেষণা কেন্দ্রের সাথে অন্যান্য অনেক জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে।মধু মাসের মধু ফল হলো আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু। তবে আমের স্থান হচ্ছে সবার শীর্ষে অর্থাত্ আম সব ফলের সেরা। কবি আমীর খসরু চতুর্দশ শতাব্দীতে আমকে ‘হিন্দুস্থানের সেরা ফল’ রূপে উল্লেখ করেন। আধুনিককালে বিখ্যাত উদ্যানবিদ পোপেনো আমকে ‘প্রাচ্যের ফলের রাজা’ বলে সম্বোধন করেন।

আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০মি: (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০মি: (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। আম গাছ গুলো বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এর প্রধান শিকড় মাটির নিচে প্রায় ৬মি: (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যেয়ে থাকে। আম গাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক, ১৫-৩৫ সে:মি: লম্বা এবং ৬-১৬ সে:মি: চওড়া হয়ে থাকে; কচি পাতা দেখতে লালচে-গোলাপী রং এর হয়। আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে, ফুল থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে।

আমের ফুল ও ফল উৎপাদনের সমস্যা ও সমাধান

বর্তমানের জনপ্রিয় আম চাষ করে নিরাপদ লাভজনক পরিপুষ্ট আম উৎপাদনে সফলতা পেতে হলে কয়টি প্রযুক্তি সম্পাদন করতে হবে। যেমন: মাটি তৈরি ও চারারোপণ, ফুল উৎপাদন ও সংরক্ষণ, ফল সুরক্ষা, পুষ্টি সরবরাহ, বালাই দমন, পরিচর্যা ও সংগ্রহ।

মাটি তৈরি ও চারারোপণ:

উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে সেখানে গর্তে সার ও মাটি তৈরি করে চারা রোপণ করতে হবে। জৈবসার হিসাবে কম্পোস্ট বা ভার্মিকম্পোস্ট দিয়ে চারা রোপণ করতে হবে।

ফুল উৎপাদন:

জাতভেদে আমের ফুল উৎপাদন আগাম নাবী হয়ে থাকে। ফুল প্রধানত স্ত্রীলিঙ্গ তবে মঞ্জুরির গোড়ার দিকে কিছু সংখ্যক পুরুষ ফুল হয়ে থাকে যা পরাগায়নের পর স্বাভাবিকভাবে ঝরে যায়।

ফুল ও ফলের সংখ্যা:

একটি গাছে যে পরিমাণ ফুল আসে তার খুবই সামান্য সংখ্যক গুটি তৈরি করে এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। সুতরাং এ সময়ে ঝরে পড়া ফুলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ নাই। ফুল ফোটাকালীন রোগ দমনে ইন্ডোফিল (২ গ্রাম/লি. পানি) বা নাটিভো প্রয়োগ করতে হবে। কীটনাশক হিসাবে ইমিটাফ দিতে হবে। সপ্তাহান্তর ২বার স্প্রে দিতে হবে।

আমে সুষম সার প্রয়োগ:

বছরে ২-৩ কিস্তি বর্ষার আগে-পরে, অণুসার ও মিরাকুলান হরমোন প্রয়োজনে স্প্রে করতে হবে। গাছের বয়সের ভিত্তিতে সারের পরিমাণ সারণি দ্রষ্টব্য।

সারণি: গাছের বয়সের ভিত্তিতে সারের পরিমাণ

ম্যাগনেসিয়াম গাছের ক্লোরোফিলের মূল পরমাণু হিসেবে কাজ করে। ম্যাগনেসিয়াম সার গাছের পাতার আকার বাড়ায়। ফসলের মান বৃদ্ধি করে। ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম সার/ডলোচুন ব্যবহার করলে এর অভাব দূর হয়। বিঘাতে ৫০-৭০ কেজি ডলোচুন জমি তৈরির সময় দিতে হয়। ম্যাগনেসিয়াম সালফেট  স্প্রে করেও ম্যাগনেসিয়াম সমস্যা দূর করা যায়।গাছে ফুল ফোটার পর সলুবর বোরন ও লিবরেল জিংক স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে পূর্বের অনুরূপ ২য় দফা রোগনাশক ও কীটনাশক দিতে হবে। এ সময়ে মিরাকুলান জাতীয় হরমোনও (০.৫-১ মিলি/লি. পানি) প্রয়োগ করা যেতে পারে।

রোগের প্রতিকার:

আমের পাতার সুটি মোল্ড, ফুলের পাউডারি রোগ ও অ্যানথ্রাকনোজ দমনের জন্য কুমুলাস ও অটোস্টিন দিতে হবে (২ গ্রাম/লি. পানি)। আমের অ্যানথ্রাকনোজ গ্লোমেরেলা/কলেটোট্টিকাম, স্টিগমিনা সিংগুলেটা, ছত্রাকসমূহের কারণে হয়ে থাকে।

পোকা দমন

হপার শোষক আমের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রধানত ২টি প্রজাতির হপার এদেশে বেশি। যেমন-১. আমৃতটোডাস এটকিনসোনি ২. ইডিওস্কোপাস নিটিডুলাস। এদের সৃষ্ট মধুকণা থেকে সুটিমোল্ড গাছের পাতার ক্ষতি করে থাকে। এ সকল পোকা দমন করার জন্য যথাক্রমে এসাটাফ (৫ গ্রাম/লি. পানি) বা টাফগর (২ মিলি/লি. পানি)ও রেলোথ্রিন/রিভা (১ মিলি/লি. পানি) প্রয়োগ করতে হবে।আমের অন্যান্য পোকা হলো চেলে পোকা বা উইভিল ও ফল মাছি। উইভিল পোকা ও ফল মাছি (স্ত্রী ও পুরুষ) ব্যাক্ট্রোসেরা ডরসালিস অরিয়েন্টাল, দমনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ও ব্যাগিং পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।

পরিচর্যা:

পুষ্টি ঘাটতির লক্ষণ দেখে পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ফুল ফোটা সময়ে বা পরাগায়নে সময়ে বালাইনাশক দেওয়া যাবে না। ফুল ফোটার পর খরা হলে সেচ দিতে হবে। মুকুল হওয়ার আগে সেচ ক্ষতিকর এবং সেক্ষেত্রে মুকুল না হয়ে নতুন পাতা বের হতে পারে। আমের মুকুল এসে গেলে একবার ও আমের গুটি মটর দানার আকৃতি ধারণ করলে আরো  একবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ করতে হবে।হাইব্রিড কলম চারা গাছে রোপণের পর ৩-৬ মাসে মঞ্জুরি আসলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।বর্ণিত প্রযুক্তিসমূহ যথাযথভাবে আমের পরিচর্যা করলে অবশ্যই সফলতা আসবে

Taken from BSS News

আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় ও সার ব্যবস্থাপনা

আম হচ্ছে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। আমকে তাই ফলের রাজা বলা হয়। আমের মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঙ্খিত ফলন পেতে এ সময় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। কেননা সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমের উৎপাদন মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।আম গাছে সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ, পোকামাকড়, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা না করায় আমের ফুল ও ফল ঝরে যায় এবং সামগ্রিক ভাবে আমের উৎপাদন ব্যহত হয়। আম উৎপাদনকারী বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ২০টি উপজেলায় কৃষক পর্যায়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় নিম্নরূপ-

ক) ফসল সংগ্রহের পর আগষ্ট মাসে রোগক্রান্ত মরা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, শাখা প্রশাখা এবং পরগাছা ছেটে গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে ।

খ) সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে নিম্ন বর্ণিত উপায়ে সার প্রয়োগ করতে হবে।

গ) আমের মুকুল আসার ৭-১০ দিনের মধ্যে অথবা মুকুলের দৈর্ঘ্য ১ থেকে দেড় ইঞ্চি হলে (অবশ্যই ফুল ফুটে যাবার আগে) আমের হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (ইমিটাফ, টিডো, কনফিডর) ৭০ ডব্লিউ জি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে অথবা সাইপারমেথ্রিন (রেলোথ্রিন, কট, রিপকর্ড) ১০ ইসি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে বা অন্যান্য অনুমোদিত কীটনাশক এবং এথ্রাকনোজ রোগ দমনের জন্য ম্যানকোজেব (ইন্ডোফিল, ডাইথেন, কম্প্যানিয়ন ) এম-৪৫ নামক বা অন্যান্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একত্রে মিশিয়ে আম গাছের মুকুল, পাতা, শাখা প্রশাখা ও কান্ডে ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। এরপর ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে আম মটরদানা আকৃতির হলে একই ধরনের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক উল্লিখিত মাত্রায় একত্রে মিশিয়ে মুকুল পাতা ও কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা ভিজিয়ে আর একবার স্প্রে করতে হবে। আম গাছে হপার পোকা এবং এথ্রাকনোজ রোগের হাত থেকে মুকুল রক্ষা করার জন্য উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ২ (দুই) বার কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশকের একত্রে প্রয়োগ করাই যথেস্ট। তবে প্রয়োজনে দুই বা ততোধিক স্প্রে করা যেতে পারে।

এছাড়াও সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে আম গাছে মুকুল-ফুল-গুটি আসে। আমের এ অবস্থায় ছত্রাকজনিত রোগ পাউডারি মিলডিউ এর আক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো এক প্রকার জিনিস দেখা যায়। রোগের ব্যাপক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে মুকুল ঢেকে যায় এবং আমের গুটি ঝরে পড়ে। তাই পাওডারি মিলডিও রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস ডিএফ, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট দুই গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।

ঘ) মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চার পাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। অর্থাৎ আম গাছে ভরা মুকুলের সময় থেকে শুরু করে ১৫ দিন অন্তর  অন্তর আম গাছের গোড়ায় ৪ বার সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। যেমন, আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।

ঙ) আবার ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলেও আমের গুটি ঝরা কমে যায়। এছাড়াও প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ছয় গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড ¯স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

গাছে সার প্রয়োগঃ চারা রোপণের পর গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বয়স ভিত্তিতে গাছ প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হলো-

সারের নাম

গাছের বয়স ( বছর )

১-৪

৫-৭

৮-১০

১১-১৫

১৬-২০

২০ এর ঊর্দ্ধে

গোবর (কেজি)

২৬.২৫

৩৫

৪৩.৭৫

৫২.৫০

৭০

৮৫.৫০

ইউরিয়া (গ্রাম)

৪৩৭.৫০

৮৭৫

১৩১২.৫০

১৭৫০

২৬২৫

৩৫০০

টিএসপি (গ্রাম)

৪৩৭.৫০

৪৩৭.৫০

৮৭৫

৮৭৫

১২১২.৫০

১৭৫০

এমওপি(গ্রাম)

১৭৫

৩৫০

৪৩৭.৫০

৭০০

৮৭৫

১৪০০

জিপসাম(গ্রাম)

১৭৫

৩৫০

৪৩৭.৫০

৬১২.৫০

৭০০

৮৭৫

জিংক সালফেট(গ্রাম)

১৭.৫০

১৭.৫০

২৬.২৫

২৬.২৫

৩৫

৪৩.৭৫

বরিক এসিড(গ্রাম)

৩৫

৩৫

৫২.৫০

৫২.৫০

৭০

৮৭.৫০

উৎসঃ কৃষি প্রযুক্তি হাতবই-২০১৭

প্রয়োগ পদ্ধতি

বয়স ভেদে নির্ধারিত সম্পূর্ণ পরিমাণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বরিক এসিড এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি সার সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান দুই ভাগ করে এক ভাগ মার্চ মাসের মাঝামাঝী সময়ে যখন ফল মটর দানার মত হয় তখন এবং অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার মে মাসের মাঝামাঝী সময়ে প্রয়োগ করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, গাছের চারিদিকে গোড়া থেকে কমপক্ষে ১ থেকে ১.৫ মি. দূরে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বেশি হলে এই দূরত্ব বাড়তে পারে। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে।

আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম ফলে রূপ নেয়। প্রতিটি পর্যায়েই আমগাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দিতে হবে। তবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা, মকুল ঝরে পড়েই আমের উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়।গাছে মুকুল আসার আগে যেমন স্প্রে করার প্রয়োজন নেই তেমনি মকুল ফোটা অবস্থায় কোনোভাবেই স্প্রে করা ঠিক হবে না। কেননা এই সময় প্রচুর সংখ্যক উপকারী পোকা আম বাগানে আসে এবং পরাগায়ণে সহযোগিতা করে। মনে রাখতে হবে যে, গাছে মুকুল আসার পর সঠিকভাবে দুইবার স্প্রে করতে পারলেই গাছে প্রচুর আম থাকবে।

যে কারণে মধু মাস জ্যৈষ্ঠের মধুফল আম খাবেন

যদি প্রশ্ন করা হয়, বাঙালির ফলের মাস কোনটি? চোখ বুঁজে উত্তর দেওয়া যাবে যে রসের মাস, মধু মাস জ্যৈষ্ঠ মাস। বেশ গরম থাকায় এই সময়টাতে ঘরের বাইরে থাকা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এভাবেও বলা যায় যে, বাঙালির আনন্দ ফলে, গরমে নয়। তাই ফলের মাস জ্যৈষ্ঠ, রসের মাস জ্যৈষ্ঠ, মধু মাস জ্যৈষ্ঠ। আসুন জেনে নেওয়া যাক, আমের উপকারিতা, যে কারণে মধু মাস জ্যৈষ্ঠের মধুফল আম খাবেন।

মধু মাসে জামাই ষষ্ঠী বাংলার লোক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাঙালি সমাজে এ উৎসবটি আদিকাল থেকে ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বাঙালি রমণীরা, বিশেষ করে শাশুড়ি মায়েরা ষষ্ঠী ব্রত পালন করেন। এই ষষ্ঠী ব্রত উপলক্ষে শাশুড়ি কর্তৃক জামাইকে দেওয়া সংবর্ধনাই মূলত জামাই ষষ্ঠী। কালের বিবর্তনে জামাই ষষ্ঠী অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে। তবে জামাই ষষ্ঠীর রেওয়াজটা সমাজ থেকে একবারে উঠে যায়নি। যদিও এক সময় এ প্রথাটি এ দেশের গ্রামে-শহরে, ঘরে ঘরে খুব ঘটা করে পালন করা হতো।

বাংলাদেশ ঋতু-বৈচিত্র্যের দেশ । আবহমান কাল থেকে এদেশে ঋতু-বৈচিত্র্য বর্তমান ছিল, ছয়টি ঋতুর বৈশিষ্ট্য আলাদা আলাদাভাবে এই দেশে উপলব্ধ হয়; গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত-বসন্ত -এই ছয় ঋতুর কারণে দেশটিকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হয়। মধু মাস মানে জ্যৈষ্ঠ-যখন আমের আগমন ঘটে।আম এক প্রকারের সুস্বাদু ফল। কাঁচা অবস্থায় রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ রং হয়ে থাকে। বাংলাদেশ যে প্রজাতির আম চাষ হয় তার বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা। এটি এনাকারদিয়াসি পরিবারের সদস্য। তবে পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আমের বিভিন্ন জাত আছে যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, আম্রপালি ইত্যাদি।

আম গাছ এখন বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ যদিও আম জাতীয় ফল না। ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর আম গাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম চাষ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। তাই, আমকে বলা হয় ‘ফলের রাজা’। এছাড়া, স্বাদে-গন্ধে-রঙে-রসে আম অতুলনীয়।

আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০মিটার (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০মিটার (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। আম গাছ বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতি ৩০০ বছর বয়সেও ফল দেয়। এর প্রধান শিকড় মাটির নীচে প্রায় ৬মিটার (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যায়। আম গাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক, ১৫-৩৫ সে.মি. লম্বা এবং ৬-১৬ সে.মি. চওড়া হয়ে থাকে; কচি পাতা দেখতে লালচে-গোলাপি রং এর হয়। আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে, প্রজাতিভেদে মুকুল থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে।

আমে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ বা ক্যারোটিন, ভিটামিন ‘সি, খনিজ পদার্থ ও ক্যালোরি রয়েছে । ভিটামিন ‘এ’ এর দিক থেকে আমের স্থান পৃথিবীর প্রায় সব ফলেরই উপরে । USDA Nutrient Database অনুসারে প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) আমে ৬০ কিলোকালরি শক্তি পাওয়া যায়। শর্করা (১৫ গ্রাম), স্নেহ পদার্থ (০.৩৮ গ্রাম), প্রোটিন ০.৮২ গ্রাম) এবং  বিভিন্ন প্রকারের ভিটামিনের সাথে থাকে চিহ্ন ধাতু।

Taken from Dhaka Post

আমের উপকারিতা

এখন প্রশ্ন হল,আম কেন খাবেন? কারণ, এটি একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অস্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে কাজ করে, আমের উপকারিতা ব্যাপক ।  যেমন-

কর্মশক্তি বৃদ্ধি

আমে রয়েছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট, যা কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিমিত পরিমাণ আম শরীরে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি ৫-৬টি আম পাতা ধুয়ে একটি পাত্রে সেদ্ধ করে নিয়ে সারারাত রেখে সকালে এর ক্বাথ ছেকে নিয়ে পান করে করেন তাহলে এটা ইন্সুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেন। এছাড়া, এই ফলে রয়েছে উচ্চ মাত্রার গ্লুটামাইন এসিড নামক প্রোটিন যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মর্নিং সিকনেস দূরীকরণ

কাঁচা আম গর্ভাবস্থার উপসর্গের তীব্রতা কমাতে এবং ঘন ঘন মর্নিং সিকনেস হওয়ার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে । নিয়মিত কাঁচা আম খেলে মর্নিং সিকনেস পুরোপুরি দূর হয়।

স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে

আম থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে ভিটামিন ‘সি’। এছাড়া, আমে ভিটামিন ‘সি’ ‘এ’ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২৫টি ক্যারোটিনয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

চোখের যত্নে

আমে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন যা চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশিও দূর করে। শুধুমাত্র এক কাপ পাকা আম খেয়ে সারাদিনের ভিটামিন এর চাহিদার ২৫% পূরণ করা সম্ভব। এটা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে, চোখের শুষ্কতা ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।

হাড় গঠনে

আমে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় গঠনে সাহায্য করে। সুতরাং প্রতিটি মানুষের আম খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে হাড় ও দাঁত সুস্থ থাকবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ এবং হজমে সাহায্য করে

আম প্রচুর খাদ্য আঁশ, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর। আম উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ায় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটা হজমের জন্য ভালো এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। তাই যাদের হজমের সমস্যা আছে, তারা আম খেলে অনেক উপকার পাবেন।

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায়

আমে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘সি’, পেকটিন ও আঁশ কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আম পটাশিয়ামের খুব ভালো উৎস যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ঘামের কারণে শরীর থেকে সোডিয়াম বের হয়ে যায়। আর, কাঁচাআম শরীরের সেই সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। কাঁচাআমের পেকটিন গ্যাস্ট্রোইন টেস্টাইনাল রোগের চিকিৎসায়ও অত্যন্ত উপকারী। আমে উচ্চ আঁশ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা হৃদরোগের সম্ভাবনাকে কমায় এবং এর বিদ্যমান পটাশিয়াম রক্তস্বল্পতা দূর করে ও হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

আম ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালন করে। গবেষকরা বলেছেন যে, আমে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চ পরিমাণ খাদ্য আঁশ থাকার কারণে এটা কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা, লিউকেমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও ক্যারোটিন, আইসো-কেরোটিন, এস্ট্রাগ্যালিন, ফিসেটিন, গ্যালিক এসিড ইত্যাদি এনজাইম ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

তারুণ্য ধরে রাখতে

আমে থাকা ভিটামিন ‘সি’ কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে যার ফলে ত্বক সতেজ ও টানটান হয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’ যা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া, ভিটামিন ‘ই’ থাকাতে এটা সেক্স হরমোনকেও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

Taken from Dhaka Post

আমের অপকারিতা সমূহ

সবকিছুতে সাধারণত যেখানে উপকারিতা থাকে সেখানে কিছু হলেও অপকারিতা থাকে। ঠিক তেমনই আমেও কিছু অপকারিতা আছে। তবে আমার উপকারিতার উলনায় আমের অপকারিতা অতি নগণ্য।পুষ্টিকর ফলটি ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। অন্যান্য ফলের তুলনায়আমে উদ্ভিদ যৌগ এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। এই ফল সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপকে দূরে রাখে, কমায় কার্ডিয়াকের ঝুঁকি। কিন্তু এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নিয়ে আসে। জেনে নিন আমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-

অ্যালার্জি বাড়াতে পারে

আম খেলে বাড়তে পারে অ্যালার্জি। কারণ আম অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি কেউ সিন্থেটিক উপাদানের প্রতি সংবেদনশীল হয়। কারণ আমে প্রোটিন ল্যাটেক্সের মতো উপাদান রয়েছে যা অ্যালার্জি আছে এমন কারও জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

রক্তে শর্করার বৃদ্ধি

মিষ্টি এবং সুস্বাদু এই ফলে উচ্চ প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে এটি দ্রুত চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক চিনিও ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার ব্যাধির ক্ষেত্রে সাধারণ চিনির মতোই কাজ করতে পারে। সুতরাং, আম খাওয়ার সময় এর পরিমাণের দিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে।

লো-ফাইবার

বিভিন্ন জাতের আমে ফাইবার কম থাকে কারণ বীজ এবং খোসায় সর্বাধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যে কারণে আম হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য নাও করতে পারে। তাই হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করতে আমের সাথে ফাইবার সমৃদ্ধ উপাদান যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ওজন বৃদ্ধি

একসঙ্গে অনেকগুলো আম খেলে ওজন বাড়তে পারে। এর কারণ হলো অন্যান্য খাবারের তুলনায় আমে ফাইবার কম, প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশি এবং ক্যালোরি বেশি, যা ওজন বাড়াতে পারে। তাই আপনি যদি ওজন কমানোর প্রচেষ্টা করে থাকেন তবে আম খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হোন।

পেটের সমস্যা হতে পারে

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত আম খেলে তা পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ এতে গাঁজনযোগ্য কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) বাড়াতে পারে এবং পাচনতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করতে পারে।তবে এই সমস্যাগুলো সব ধরনের আম খেলে হয় না। আজকাল এত এত প্রজাতির আম পাওয়া যায় যার কোনটায় আঁশ থাকে না।আর এই আঁশবিহীন আমে এই সমস্যাগুলো তুলনামুলক বেশি হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে না খেলে কিছুই হয় না।

আমের যত বাহারি নাম!

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‌'এই পর্যন্ত বাংলাদেশে কত প্রজাতির আম রয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা বিভিন্ন আমবিষয়ক পুস্তক ও গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় এদেশে আমের প্রায় ৮শটি জার্মপ্লাজম রয়েছে। এসব আমের নামকরণও হয়েছে ভিন্নভাবে। বাগান মালিক নিজেই নিজ নামসহ স্ত্রী, পুত্র, কন্যার নামে আমের নামকরণ করেছেন। আমের নামকরণ সত্যেই বিচিত্র রকমের'।

তিনি আরও বলেন, দেশীয় আমের উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, গোপালভোগ, ফজলি, আশ্বিনা, বোম্বাই, অগ্নি, অমৃত ভোগ, আলফাজ বোম্বাই, আতাউল আতা, আরিয়াজল, আরাজনমা, আলম শাহী, গিলা, গোলাপবাস, আনারস, ইলশাপেটি, কলাচিনি, কাঁচামিঠা, কালিয়া, কৃষ্ণচূড়া, টিক্কাফারাশ, টিয়াকাঠি, কালাপাহাড়ী, কালিভোগ, কালুয়া, কাঞ্চন খোসাল, কাজলা সিন্দুরি, কিষাণ ভোগ, কোহিনুর, কোহিতুর, কুয়া পাহাড়ি, টোফা, কাজল ফজলি, কাইয়া ডিপি, কাটাসি, গোলাপ খাস, গোলাপ বাস, গোল্লা, গুল্লি, গৌরজিত, গুলগুল্লি, চেপি, চরবসা, চম্পা, চন্দন খোস, চিনি কালাম, চিনি বড়ই, চিনি পাতা, ছাবিয়া, ছানাজুর, ছফেদা, জালী বান্ধা, ভাঙা, জিলাপির ক্যাড়া, জোয়ালা, জিতুভোগ, গোবিন্দভোগ, জর্দা, জর্দালু, ত্রিফলা, বাওয়ানী, বাউনি লতা, তাল পানি, দার ভাঙা, দর্শন, দাদভোগ, দেউরি, দিলসাদ, দোফলা, দিল্লির লাডুয়া, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধসর, বড়বাবু, নারিকেলি, নারকেল পাথী, নয়ন ভোগ, প্রসাদ ভোগ, জিতুভোগ, সীতাভোগ, বোগলাগুটি, পাথুরিয়া, ফজলি কালান, ফনিয়া, বারমাসি, বোতল বেকি, বোতলা, বড়শাহী, বাতাসা, বাউই ঝুলি, বিড়া, বেগম পছন্দ, কমল পছন্দ, বেল খাস, বিমলা, বিশ্বনাথ, বোম্বাই কেতুল্লা, বদরুদ্দোজা, বোম্বাই গোপাল ভোগ, বোম্বাই খিরসা, বউ ভুলানী, বৃন্দাবনী, সাহা পছন্দ, বাদশা ভোগ, ভাদুরি, ভবানী, ভবানী চৌরাস, ভারতী, মাল ভোগ, মাংগুড়া পাকা, মিসরীদাগী, মিসরী ভোগ, মিসরী দানা, মিসরী কান্ত, ভূত বোম্বাই, মতিচুর, মোহন ভোগ, মোহন পছন্দ, রাজরানী, রাম প্রসাদ, রানি পছন্দ, কাজী পছন্দ, বিলুপছন্দ, রানি ভোগ, রাজ ভোগ, কালিভোগ, জিবাভোগ, লাক্ষৌ, লাদুয়া, লাডুয়া, লোরাল, লালমুন, লক্ষণ ভোগ, লতা খাট, লতা বোম্বাই, নাবী বোম্বাই, লোহাচুর, শ্যাম লতা, রসবতী, সাটিয়ার ক্যাড়া, সাদাপাড়া, সবজা, সুবা পছন্দ, শাহী পছন্দ, সরিখাস, শরিফ খাস, সিন্দুরি, সারাবাবু, শোভা পছন্দ, সুলতান পছন্দ, সফদরপছন্দ, সূর্যপুরী, সুরমাই ফজলি, হায়াতী, হিমসাগর, খুদি ক্ষিরসাপাত, ক্ষিরপুরি, ক্ষিরমন, ক্ষির টাটটি, ক্ষির বোম্বাই, বেলতা, হাড়িভাঙা, বৈশাখী, গৌড় মতি, হুক্কা, লাড়ুয়ালী, ডালভাঙা, মণ্ডা, মিছরী দমদম, নীলাম্বরী, খান বিলাস, বাতাসা, মনাহারা, পাথুরিয়া, তোহ্ফা, ফোনিয়া, মধুচুষকি, মধুমামি, নকলা, মোহিনিসিন্দুরী, ভুজাহাড়ি, সন্ধ্যাভারুতি, পদ্মমধু, অমৃতভোগ, লতারাজ, বৃন্দাবনি ইত্যাদি।

এছাড়াও দেশে স্বল্প পরিমাণে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদিত বিদেশি আমের উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো, আব্দুল আজিজ, আলফানসো, আলী চৌরস, আম্রপালী, আমবাজান, আমন দাশেহারী, মল্লিকা, চৌসা, তোতাপুরী, বোম্বাই গ্রিন, আনানাস খাশ, আনোয়ার রাতাউল, আনোয়ার আতাউল, আগমামাশু, আওবেক, ইরউইন, কেন্ট, কেনসিংটন, কেইট, কারাবাও, কাইটুক, পিকো, পকনা, পাহুতান, ছিদরালী, ছওসি, জাওনিয়া, ঝিল, ডক্টর পছন্দ, দিল রৌশন, দিল বাহার, দিল ওয়ালা, দালুয়া, চন্দ্রকরণ, কেরি, বোয়ার, ফ্লোরিগ্যান, জিলেট, ভাদুরী, দাসেহারি, ধুপা, নীল উদ্দিন, নোড়া, নাম-ডক-মাই, নওয়াব পছন্দ, নিলাম্বরী, পীরের ফলী, রওশান টাকী, পালমার, পাহুতান, বেগম ফুলি,  ভুলীয়া, মালদাহ, মালগোবা, মাদ্রাজী, মিঠুয়া পাটনা, রাগ, র‌্যাড, রুবি, রত্না, লাভ-ই-মশগুল, লিটল ফ্লাওয়ার, সবদেরাজ, সামার বেহেস্ত, সামার বেহেস্ত চৌসা, সাদওয়ালা, সুকুর খন্দ, সেভেন-ইন-ওয়ান, সুগার কিং, হিটলার পছন্দ, হেডেন, বানানা আম, টমি এটকিনস, জিনহুয়াং, জিনসুই, জিহুয়া, গুইরা, হং শিয়াং ইয়া, তাইনং নম্বর ১, চোকানান, ডট, ডানকুন, অ্যাডওয়ার্ড, সেনসেশন, এলডন, ফ্যাসেল, ফোর্ড, গোল্ড নাগেট, আইভোরি, জাকার্তা, পারভিন, অসটিন, সান-ই-খোদা, সানসেট, গেডং, গোলেক, মালগোয়া, মাসমুদা, প্রায়র, কেরালাডোয়ার্ফ, ওনো, জিল, নীলাম, টংডোম, দাশেহারী, হানিগোল্ড এবং আরুমানিস।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি শামিম খান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সময় বৃন্দাবনি, গোলাপবাস, দাদভোগ, গোড়ভোগ, ফুনিয়া, দিলশাদ, কাঞ্চন খোসাল, সিন্দুরি, খুদি ক্ষিরসাপাত, গোলাপ খাস, টিক্কাফারাশ, দুধিয়া, দেওভোগ, দুধস্বর, নারিকেলি, নয়ন ভোগ, নাগ ফজলি, বৈশাখী, বারমাসি, বোম্বাই, বৌ ভুলানি, বাদশাভোগ, মতিচুর, মোহনভোগসহ শত শত প্রজাতির আম পাওয়া যেতো। বর্তমানে সেগুলো তেমন একটা দেখা যায় না।


তথ্যসুত্র


আমের নামকরণের ইতিহাস.

আমের যত বাহারি নাম!, Bangla News24.

আমের আঁটি একটি ভোগ্যপণ্য, বর্জ্য নয়, Gour Bangla.

আম খাওয়ার অপকারিতা, Dhaka Post.

আমের উপকারিতা, Dainik Kantha.

যে কারণে মধু মাস জ্যৈষ্ঠের মধুফল আম খাবেন, Khaas Food.

আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায়, Krishi.gov.

আম গাছের পাতা: উপকারিতা, তাৎপর্য, Magic Brics.

আমের ফুল ও ফল উৎপাদন, Ais.gov.

আম কেমন করে ফলের রাজা?, Tbs News.

বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ, Jugantor.

আম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ফল।, Beshto.

Subscribe for Daily Newsletter