শিষ্টাচার (Manners)

শিষ্টাচার (Manners)

আদব শব্দটি আরবি  أدب শব্দ থেকে বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত শব্দ; যার অর্থ হলো: বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, কৃষ্টি, সুশিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিকতা, শোভনতা, শিষ্টাচার। আবার أدب শব্দের অর্থ: নিয়মনীতি, পদ্ধতি ইত্যাদি।  আর আদব/শিষ্টাচার মানে— ভদ্র সমাজের রীতি-পদ্ধতি; ভদ্র ব্যবহার। অন্যভাবে বলা যায়: আদব/শিষ্টাচার মানে কাঙ্খিত শিক্ষা, সভ্যতা ও মার্জিত সংস্কৃতির দ্বারা আত্মগঠনের অনুশীলন করা।শিষ্টাচার যাকে ইংরেজীতে বলে

Etiquette; Good manners; Formality.

মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য নিরূপন হয় তার আচার ব্যবহার আর আচরণের মধ্যেই মার্জিত ব্যবহার,শালীন কথাবার্তা, নীতিমালার মধ্য থেকে কাজকর্মে, চলনে-বলনে, আচার-আচরণে অপরের সাথে সম্পর্কের যে সন্তুষ্টির পরিচয় দিয়ে থাকে,তাই শিষ্টাচার বা আদব-কায়দা বা ভদ্রতা আর এমনই লোককে বলা হয় ভদ্রলোক। আর সেচ্ছাচারিতায় শিষ্টাচার খোঁজা বৃথা আস্ফালন।

💡
বৃক্ষ তোর নাম কি, ফলে পরিচয়- A tree is known by its fruit.

মানুষের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহারকে শিষ্টাচার বলে । চেনা অচেনা সকল শ্রেণির লোকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে মানুষের জনপ্রিয়তা বাড়ে। মিষ্টি কথা , বিনয়ী ব্যবহারে শত্রুও বশীভৃত হয় । বাল্যকাল থেকে শিষ্টাচার বা ভদ্র ব্যবহার অভ্যাস করতে হয় ৷ স্বার্থ পূরাণের জন্য শিষ্ট ব্যবহারকে নীচতা বলে । শুধু ঘরে নয়, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় সর্বত্র শিষ্টাচার পালন করা উচিত । খেলার মাঠেও শিষ্টাচার প্রদর্শন করা একান্ত কর্তব্য। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় মানুষের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলে সর্বত্র পরিবেশ শাস্তি পূর্ণ থাকে । বিয়ে বাড়ি , অনুষ্ঠান , মিটিং মিছিলেও ভদ্র কথাবার্তা ও ব্যবহার করা উচিত । শিষ্টাচারের মধ্য দিয়েই মানুষ অন্যের কাছে প্রিয় ও মহৎ হয়ে ওঠে।

আচার-আচরণ, আদব-কায়দা, ভদ্রতা, শিষ্টতা, বিনয় প্রভৃতির মাধ্যমে একজন মানুষের চরিত্র ফুটে উঠে। এসবের ভাল দিকগুলো সকলের কাছে প্রশংসনীয় হয় আর মন্দ দিকগুলো যার মধ্যে প্রতিফলিত হয় তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার একটি আপেক্ষিক বিষয়। কোনো মানুষের বংশধারা, আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান, ধর্মীয় ও পেশাগত অবস্থান ইত্যাদির কারণে এর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সকল পেশায় নিয়োজিত প্রতিটি মানুষেরই সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনই নৈতিকতা। মূল্যবোধ বিবেচনা করে যিনি কাজ করেন তিনিই নৈতিক দিক দিয়ে উন্নত।  উপযুক্ত পরিবেশ ও শিক্ষা এবং যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণই একজন ব্যক্তিকে এ সকল গুণাবলিতে সমৃদ্ধ করতে পারে।

আচার-আচরণের মাধ্যমেই ব্যক্তির নৈতিকতা প্রকাশ পায়। সততা, শিক্ষা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলাবোধ সম্মিলিতভাবে যে গুণটির জন্ম দেয় তা-ই নৈতিকতা। একজন স্কাউটার তার দাপ্তরিক কিংবা সমাজিক কার্যাদি সম্পাদনে ভাল-মন্দ যাচাই করে চলবেন এটা সবারই প্রত্যাশা। উন্নত ও কার্যকর প্রশাসনের জন্য নৈতিকতা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নীতি বহির্ভূত ব্যক্তি সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক। এতে দাপ্তরিক, রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবন বিষময় হয়ে উঠে।

সামাজিক শিষ্টাচারের শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক করার দাবি করছি। জাপানে প্রথম কয়েকটি বছর শিশুদের মানবিক ও সামাজিক আচরণের শিক্ষা দেয়া হয় বলে শুনেছি। আমাদের দেশে মানবিক শিক্ষা দেয়ার আলাদা কোনো সিলেবাস নেই। আর সামাজিক আচরণের শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাও আমাদের মাথায় আসে নি বলেই প্রতীয়মান হয়।

নারীকে সম্মান জানিয়ে বাসের সিটটি ছেড়ে দেয়া, বৃদ্ধদের হাত থেকে ভারী বোঝাটি নিয়ে তাকে এগিয়ে দেয়া, অন্ধকে রাস্তা পার হতে সহায়তা করা—এ ধরনের সামাজিক সভ্যতা আমরা কোনো বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করে কীভাবে বাচ্চাদের পড়াতে পারি তা ভেবে দেখতে হবে। না হলে আমরা সামাজিক জীবনে সেই অভদ্রতা করে যাব, যা এখন করে চলেছি। নারীদের দেখলে সিটি মারা, গর্ভবতী নারীকে ধাক্কা মেরে লাইন ভেঙে বাসে উঠে পড়া, বৃদ্ধদের অসম্মান করা, পুরুষ হয়ে নারীদের সিটে বসে যাওয়া আর কেউ কিছু বললে সম-অধিকার নিয়ে মুখ খিঁচড়ে যুক্তিহীন কুতর্ক করা— এসব সামাজিক শিষ্টাচারবিরোধী ব্যবহার আমাদের দেশে সাধারণ ঘটনা।

এমন নিম্নবর্গের অসামাজিক প্রাণী থেকে মানবিক বোধসম্পন্ন রুচিশীল মানুষ হিসেবে জাতিগতভাবে আমরা যদি উন্নত হতে চাই, তবে প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষার সিলেবাসে সুচিন্তিতভাবে এই বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। চলুন না, আমাদেরপরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের চেয়ে রুচিশীল মানবিক সভ্য মানুষ করে গড়ে তুলি। আচরণের সভ্যতা দেখলেই আমরা ধরে নিই তিনি ভালো পরিবার থেকে এসেছেন, ভালো শিক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু তা-ও যেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ। দুঃখ মনে নিয়েই স্মরণ করছি, আমার এক শিক্ষিকা ছিলেন যিনি ক্লাস নিতে নিতে অনবরত নাক খুঁটতেন। বিভীষিকার মতো এই স্মৃতি আমার মস্তিষ্কে রয়ে গেছে কারণ, আমি তার ঐ আচরণের জন্য ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতাম না। আমার খালি ভয় হতো, কখন তিনি আমার বেঞ্চের সামনে চলে আসবেন, আর আমার বেঞ্চটা ছুঁয়ে দেবেন ঐ হাত দিয়েই। ভাবতে আমার এখনো গা গুলিয়ে আসে।

ভাবুন তো, আপনার কোনো আচরণের জন্যে যদি আপনাকে এভাবে কেউ মনে রাখে! কী দুঃখজনক, তাই না? তেমনি, অনেক শিক্ষিত মানুষ, বড় বড় অফিসার আমি দেখেছি যারা মুখের ওপর কাশি দেন। করোনাভাইরাসের কারণে এই ব্যাপারটা খুব আলোচিত হচ্ছে। সরকারি ব্রিফিং-এ কাশির শিষ্টাচার বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। ‘কাশির শিষ্টাচার’ এই কথাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। আসলেই কাশির শিষ্টাচার আমাদের দেশে বিরাট বড় একটি সামাজিক প্রয়োজন।

শিষ্টাচার শিক্ষা

শিষ্টাচার শিক্ষার জন্য পরিবারই প্রথম এবং প্রধান শিক্ষালয়। পরিবারের বড়দের মধ্যে শিষ্টাচারের অভাব হলে নতুন শিশুর পক্ষে শিষ্টাচার শেখা সম্ভব নয়। শিশুর প্রথম পাঠশালা তার পরিবার। শিষ্টাচার অর্জনের পাঠটি পরিবার থেকেই নেওয়া। শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই অনুকরণপ্রিয়। তাই তাদের চোখের সামনে যত শিষ্ট আচরণ করা যায় ততই তাদের আচরণে শুদ্ধতা আসে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া হয়। গুরুজনের সাথে ছাত্রের আচার-ব্যবহার, সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির সাথে তার আদব-কায়দা কেমন হবে তা বিদ্যালয়েও শিক্ষা দেওয়া হয়। শিষ্টাচার শুধু শিক্ষা দেওয়ার বিষয় নয় একে নিজ গুণেও নিজের মধ্যে ধারণ করতে হয়, তবেই নন্দিত ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটে জীবনে।

শিশুর শিষ্টাচারিতা

বাবা,মা বা ঘরের কোন গুরুজন কোন কথা বললে মনোযোগ দিয়ে শোনা ও পালন করা। বড়রা কথা বললে মাঝখানে কথা না বলা। কথা বলতে চাইলে “আমি কিছু বলতে পারি”—বলে অনুমতী নিয়ে কথা বলা। ঘরে কাজের লোকের সাথে ভালো ব্যবহার (good etiquette) করা। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার না করা বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করা। অনুরুপ ভাবে গাড়ির ড্রাইভার, বাড়ির দারোয়ানের সাথে নম্র, ভদ্র ব্যবহার করা। হাঁচি,কাশি আসলে মুখে হাত দেয়া ও “আলহামদুলিল্লাহ” বলা। তাছাড়া সন্তানদের এটিও শেখান যে কারো সামনে কান বা নাকের ময়লা পরিষ্কার করা অশোভনীয়। ঘরে মেহমান আসলে (guest etiquette) তাদের সাথে হাসি মুখে কথা বলা ও আপ্যায়নে মা’কে সাহায্য করা। ফোন আসলে (answering phone calls etiquette) “আসসালামুআলাইকুম” বলা।ফোনের অপর পাশ থেকে অপর ব্যক্তি যখন কথা বলেন তখন তা চুপ করে শোনা ও বুঝে উত্তর দেয়া। ভুল নম্বরে ফোন গেলে বা ভুল নম্বর থেকে ফোন আসলে দুঃখিত বলে টেলিফোন রাখা ও কথার মাঝখানে কল কেটে না দেয়া। বাবা, মা বা ভাই বোনের যে কোন জিনিস জিজ্ঞেস করে দেখা বা হাত দেয়া। লুকিয়ে কোন কিছু না নেয়া বা ব্যবহার করা একদম উচিত নয়।আর ধার নেয়া জিনিস যথা স্থানে ঠিক সময়ে ফেরত দেওয়াটাও তার শেখা উচিত। কোন অবস্থাতেই বাবা, মা বা ঘরে অন্য কোন গুরুজনের সাথে তর্কাতর্কি বা বেয়াদবি না করা । কোন কিছু বললে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলা ও তাদের মানানোর চেষ্টা করা। আর বেয়াদবি করলে বা ভুল হলে অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া। প্রাথমিক শিষ্টাচারগুলির মধ্যে ‘দয়া করে‘ বা ‘প্লিজ‘ বলার গুরুত্ব অপরিসীম। কারো কাছে কিছু চাইতে বা বিভিন্ন সামাজিক স্থানে (social etiquette) সন্তান যেন “প্লিজ” ও “ধন্যবাদ” (কোনওকিছু প্রাপ্তির সময়) এই দুটি শব্দ ব্যবহার করে। কোথায় কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটি ও বুঝিয়ে দিন।

মানবজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব

মানবজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। শিষ্টাচার আছে এমন মানুষ সহজেই অন্যের মন জয় করতে পারে। ফলে সমাজে তার গ্রহণযােগ্যতা বৃদ্ধি পায়। শিষ্টাচারপ্রবণ মানুষ বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে সবার মাঝে, সবাই তাকে সমাজের নেতৃত্বে দেখতে চায়। ফলে ব্যক্তির পক্ষে মহৎ কাজ করাও সম্ভবপর হয়ে ওঠে। শিষ্টাচারী ব্যক্তি সাধারণ মানুষের জন্য মডেল বা অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। সমাজের মানুষ তাকে উঁচু অবস্থানে স্থান দেন।

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (স.) বিধর্মীদের মন জয় করেছিলেন শিষ্টাচার প্রদর্শনের মাধ্যমে। তাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়ে আসা ব্যক্তি তার শিষ্টাচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে— এখানেই শিষ্টাচারের একটি শক্তির পরিচয় মেলে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অন্যের কাছ থেকে সদাচরণ আশা করে, প্রকাশ না করলেও মনে মনে স্নিগ্ধ ব্যবহার ও সামান্য প্রশংসা প্রত্যাশা করে। তাই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির শিষ্টাচার সমাজে বয়ে আনে সাম্য ও শান্তি। তাই সামাজিক জীবনে শিষ্টাচারের প্রয়ােজনীয়তা ও গুরুত্ব অত্যধিক।

অফিসের  শিষ্টাচার।

অফিসের সব ধরনের শৃংখলা মানতে হবে। পোশাকের বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হলেও উত্তেজিত হওয়া যাবে না। সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। ফোন এলে কখনোই সবার ভেতরে চিৎকার করে কথা বলা যাবে না। টিস্যু ব্যবহার করে নির্দিষ্ট বিনে রাখুন। ডেস্কে খাবেন না, বিশেষ করে পোলাও বিরিয়ানির মতো খাবার যেগুলো বেশি ঘ্রাণ থাকে।

শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা

কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে মার্জিত রুচি ও সুন্দর মনের পরিচয় দিতে, পারিবারিক,সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সর্বাত্মক সুন্দর করে তুলার জন্যে। জাতিতে জাতিতে বিরোধ, দ্বন্দ্ব থেকে পরিত্রান পেতে। সমাজে ও রাষ্ট্রে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করার জন্যে। অপরের সুবিধা-অসুবিধা, মতামত ও অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে চলার জন্য। শোভন, সুন্দর ও প্রীতিময় আদব-কায়দার অনুশীলন করতে। ব্যাক্তি স্বাধীনতা বজায় রাখতে ও গনতান্ত্রিক পথ সুগম করে তোলার জন্যে। জাতিকে নতুন প্রাণ স্পন্দনে অনুপ্রাণিত করে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অনুশীলন। মানব জীবনের সার্বিক কল্যাণে শিষ্টাচারের স্থান অতি উচ্চে। শিষ্টতার মধ্য দিয়েই আমরা আদর্শ সমাজ গঠন করতে পারি।

ইসলামিক শিষ্টাচার

আমাদের পূর্বসূরীগণ দ্বীনের ইলম শেখার পূর্বে আখলাক শেখার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দিতেন। কারণ, নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হলো সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সকলের চাইতে সুন্দর।” [তিরমিযী (১১৬২)]  এ জন্য ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘দ্বীনের পুরোটাই চরিত্র। কাজেই তোমার চরিত্র যত উন্নত হবে, তোমার দ্বীনদারিও তত উন্নত হবে।” [মাদারিজুস সালিকীন (২/৩০৭)] .

মসজিদের শিষ্টাচার

অজু করে মসজিদে গমন। মসজিদ গমনের পথে দোয়া। মসজিদে যাওয়ার সময় ধীর-স্থিরভাবে চলা। দুর্গন্ধযুক্ত কিছু খেয়ে মসজিদে না যাওয়া। মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া। পোষাক ও সাজসজ্জা। মসজিদে যেয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া। আজানের পর মসজিদ থেকে বের না হওয়া। নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম না করা। মসজিদে শোরগোল না করা।

শিষ্টাচার না থাকার কুফল

শিষ্টাচারের মাধ্যমে মানবিক সওার বিকাম ঘটে বলে ঔদ্ধত্য আর উচ্ছৃঙ্খলতা এখানে পরাজিত হয় ।দূর হয় কদযতা ও অশ্লীলতা ।শিষ্টাচারের গুণেই ব্যক্তি মানুষ হয়ে ওঠে সহজ-সরল ,স্পষ্ট ,সৎ ও মার্জিত ।আজ সমাজের নানা ক্ষেত্রেই অশিষ্টচারের ও সৌজন্যহীনতার নিষ্ঠুর চিএ ।দিন দিন মানুষের উচ্ছঙ্খলতা বাড়ছে ।বাড়ছে তার সীমাহীন ঔদ্ধতা ।সমাজে সৌন্দয আর সুকুমার প্রবৃওিগুলোর দেখা মেলে না ।আজ বার্ধক্যকে সম্মান করি না ।শ্রদ্ধয়দর করি অবজ্ঞা ,পুরাতনের প্রতি অশ্রদ্ধা ।ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মানুষে মানুষে বিরোধ ।শিষ্টাচারের অভাবে সমাজ অন্তঃসারশূন্য ,বিবেকহীন হয়ে পড়েছে ।চারদিকে আজ বিওবানের নির্লজ্জ ঔদ্ধতা ,প্রবলের সীমাহীন অত্যাচার ।আজ শিষ্টাচার ও সৌজন্য দুর্বলের ভীরুতা্রেই অসহায় প্রকাশ যেন ।মানুষকে অপমান করতে পারলেই বুঝি তৃপ্তি ।দুর্ব্যবহার ও দুর্মুখতাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ।অবিনয় আজ আর তার লজ্জা নয় ।সমাজের সর্বক্ষেত্রে আলোপ-আলোচনায় অমার্জিত ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ।শিষ্টাচর ও সৌজন্যবোধের সৌন্দয হারিয়ে মানুষ আজ নিঃস্ব ,হৃদয়হী ন ।অন্তরের পুষ্পিত শতদল আজ ছিন্নভিন্ন ।বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে শিষ্টতার কোনো বিকল্প নেই ।প্রকৃতপ্রস্তাবে শিষ্টতার মধ্যে দিয়েই আমরা আদর্শ সমাজ গঠন করতে পারি ।হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

তোমরা আগে সুসভ্য হও, তারপর জ্ঞান অর্জন কর। -গিযাউল আলবাব ১/৪৫।

আল-কারাফী রহ. তাঁর ‘আল-ফারুক’ গ্রন্থে বলেন: আর জেনে রাখবে, অনেক বেশি কাজের চেয়ে অল্প আদব অনেক বেশি উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন: ব্যক্তি কোনো প্রকার জ্ঞান দ্বারা মহৎ হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার জ্ঞানকে আদব দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে। তিনি আরও বলেন: আমরা অনেক বেশি জ্ঞানের চেয়ে কম আদবকে অনেক বেশি জরুরি বা প্রয়োজন মনে করতাম।কোনো কোনো দার্শনিক বলেন:

আকল (বুদ্ধি) ছাড়া আদব হয় না; আবার আদব ছাড়া আকলও হয় না।

অর্থাৎ একটি আরেকটির পরিপূরক। আর জনৈক সৎব্যক্তি তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

তুমি তোমার আমলকে মনে করবে লবণ, আর তোমার আদবকে মনে করবে ময়দা।

অর্থাৎ তুমি আমলের চেয়ে আদবকে এত বেশি গুরুত্ব দিবে, লবণ ও ময়দার স্বাভাবিক মিশ্রণে উভয়ের অনুপাত যেভাবে কম বেশি হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কবুল করেন। যে মানুষ যত বেশী জ্ঞানী সে মানুষই তত ভদ্র ও বিনয়ী, যা কোন অর্থ বা ঐশ্বর্যের সাথে তুলনা করা যায় না।যদি সমাজের প্রতিটি শ্রেনী- পেশার মানুষ তার নিজ নিজ কর্মে শিষ্টতা বজায় রাখে তবেই আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুখ অর্জন করা সম্ভব।

তথ্যসুত্র

আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার, blog.

শিষ্টাচার অসংখ্য মানবিক গুণের সমষ্টি, Banglagoln.

শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা, blog.

ইসলামিক ম্যানারস.

বাংলায় আচরণ বা শিষ্টাচার।.

ভদ্র ব্যবহারকে শিষ্টাচার বলে, Bengali Essays.

শিশুর শিষ্টাচারিতা, Quora.

মসজিদের আদব, Barta24.

সামাজিক শিষ্টাচারের কথা, Ekushey TV.

মানব জীবনের আদব, Khulna Gazette.

শিষ্টাচার কাকে বলে, Snigdhasokal.

Subscribe for Daily Newsletter