মোবাইল ফোন (Mobile phone)

বিজ্ঞানের যে কটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। আজকের মানবসভ্যতাকে আরও আধুনিক ও আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে, মোবাইল ফোন সেগুলির অন্যতম। মোবাইল ফোন আধুনিক গতিশীল পৃথিবীর অপরিহার্য অঙ্গা, জীবনের দ্রুত চলমানতার সঙ্গে মানানসই এক অতি আবশ্যিক উপকরণ।প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে - আর তা তৈরি করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার। তাকেই বলা হয় মোবাইল ফোনের জনক
মোবাইল ফোন এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে বেতার তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। “মোবাইল ফোন” শব্দদ্বয় দ্বারা একই সঙ্গে মোবাইল ফোন বা সেলুলার ফোন ব্যবস্থা এবং গ্রাহকের ব্যবহার্য হ্যাণ্ডসেট বোঝানো হয়ে থাকে। এই হ্যাণ্ডসেটকে মোবাইল ফোন ছাড়াও সেলফোন, হ্যান্ড ফোন এবং মুঠোফোন হিসাবে অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা
মোবাইল ফোন-এ কথা বলার জন্য বেতার তরঙ্গের সঙ্গে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফলে কথা বলার অতিরিক্ত অন্যান্য সেবা প্রবর্তন করা সম্ভব হয়েছে, যেমন: খুদে বার্তা -এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সেবা, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সেবা, ই-মেইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা, অবলোহিত আলো বা ইনফ্রা-রেড, ব্লু টুথ সেবা, ক্যামেরা, গেমিং, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। যেসব মোবাইল ফোন এইসব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্টফোন নামে ডাকা হয়।
মোবাইল এর বাংলা নাম কি?
এই হ্যাণ্ডসেটকে মোবাইল ফোন ছাড়াও সেলফোন, হ্যান্ড ফোন এবং মুঠোফোন হিসাবে অভিহিত করা হয়। এই ফোনসেট "স্থানান্তরযোগ্য" বা মোবাইল। এই ফোন সহজে যেকোনও স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় বলে “মোবাইল ফোন” নামকরণ করা হয়েছে
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে। সিটিসেল নিয়ে আসে প্রথম মোবাইল ফোন। এটা শুধু বাংলাদেশেই প্রথম ছিল না, উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ছিল। চড়া মূল্য এবং সীমিত নেটওয়ার্ক এর কারণে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অল্প কিছু মানুষ এই ফোন ব্যবহার করতেো। গ্রামীণফোন ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম চালু করে প্রি-পেইড প্যাকেজ যার নাম ছিল ‘ইজি’।
মোবাইল ফোনের বিবর্তন এর ইতিহাস
সেলুলার ফোন প্রারম্ভিকভাবে পূর্বসুরীরা জাহাজ এবং ট্রেন থেকে এনালগ রেডিও কমিউনিকেশনের সাহায্যে ব্যবহার করত। মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ডঃ মার্টিন কুপারএবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে। তাঁরা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ২ কেজি (৪.৪ পাউন্ড) ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন ডঃ মার্টিন কুপার।
মোবাইল ফোন ব্যবহার প্রসারণ
১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২.৪ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ বিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% মোবাইল ফোন যোগাযোগের আওতায় এসেছে।মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে, ফোনটির নাম ছিল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (DynaTAC 8000x)।
মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক
মোবাইল ফোন ব্যবস্থার অপারেটররা তাদের সেবা অঞ্চলকে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ ইত্যাদি আকারের অনেকগুলো ক্ষেত্র বা কোষে বিভক্ত করে। সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির কোষই বেশি দেখা যায়। এই প্রত্যেকটি অঞ্চলের মোবাইল সেবা সরবরাহ করা হয় কয়েকটি নেটওয়ার্ক স্টেশন (সচরাচর যেগুলোকে আমরা মোবাইল ফোন কোম্পানির এন্টেনা হিসেবে জানি) দিয়ে। নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলো আবার সাধারণত সেলগুলোর প্রতিটি কোণে অবস্থান করে। এভাবে অনেকগুলো সেলে বিভক্ত করে সেবা প্রদান করার কারণেই এটি "সেলফোন" নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে ।
মোবাইল ফোন এর বৈশিষ্ট্য
যদিও মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের ফোনকে বিশেষায়িত করার জন্য অনেক আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য যোগ করছে প্রতিনিয়ত, তবুও সকল মোবাইল ফোনেরই কয়েকটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এদের অপরিহার্য অঙ্গ। এগুলো হচ্ছে -
১.তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারী - ফোনের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।২. কোন ইনপুট পদ্ধতি যার সাহায্যে ফোন ব্যবহারকারীর সাথে ফোনের মিথস্ক্রিয়া বা দ্বি-পাক্ষিক যোগাযোগ সম্ভব হয়। সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ইনপুট পদ্ধতি হচ্ছে কী প্যাড তবে ইদানীং স্পর্শ কাতর পর্দা বা টাচ স্ক্রীন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।৩. সাধারণ মোবাইল ফোন সেবা যার দ্বারা ব্যবহারকারী কথা বলতে বা খুদে বার্তা পাঠাতে পারেন।৪. জিএসএম ফোনগুলোয় সিম কার্ড থাকে। কিছু কিছু সিডিএমএ ফোনে রিম কার্ড থাকে।৫. প্রতিটি স্বতন্ত্র ফোনের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র আইএমইআই (IMEI) নাম্বার যার সাহায্যে ওই ফোনটিকে সনাক্ত করা যায়।
নিম্নস্তরের মোবাইল ফোনকে প্রায়ই ফিচার ফোন বলে ডাকা হয় এবং এগুলো শুধুমাত্র প্রাথমিক টেলিফোন যোগাযোগ সুবিধা দেয়। আর কিছু মোবাইল ফোন আরও অগ্রসর সুবিধা এবং কম্পিউটারের মত সেবা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্ট ফোন বলে।বেশ অনেক মোবাইল ফোনের পরম্পরা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীকে উদ্দেশ্য করে তৈরী করা হয়েছে। যেমন বহুজাতিক বা কর্পোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষায়িত ই-মেইল সুবিধা নিয়ে এসেছিল ব্ল্যাকবেরি। সনি-এরিক্সনের গান শোনার বিশেষায়িত 'ওয়াকম্যান' সিরিজ বা 'সাইবারশট' ক্যামেরা ফোন, নকিয়ার এন সিরিজ মাল্টি মিডিয়া ফোন এবং আইফোন সিরিজ বা স্যামসাং এর গ্যালাক্সী এস সিরিজ।
মোবাইল ফোন এর ব্যবহার
অনেক মোবাইল ফোনই স্মার্ট ফোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কথা বলার পাশাপাশি এ ধরনের ফোনগুলো অন্যান্য বিষয়েও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
১. ই-মেইল, এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা, প্রেরণ ও গ্রহণ;।২. ক্যালকুলেটর, মুদ্রা, সঙ্কেত বিষয়ক কার্যাবলী।৩. ইন্টারনেট।৪. গেমস খেলা।৫. ছবি ও ভিডিও তোলা।৬. ঘড়ির সময় দেখা।৭. কথা রেকর্ড করা।৮. ট্রেনের টিকিট বুকিং করা।৯. বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল দেয়া ইত্যাদি।১০. টাকার আদানপ্রদান করা।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন এর বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৪টি মোবাইল ফোন কোম্পানী রয়েছে। এদের মধ্যে ৪টি জিএসএম তবে একটি সিডিএমএ প্রযুক্তির মোবাইল সেবা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সব জিএসএম মোবাইল কোম্পানি ২০১৩ সাল থেকে তৃতীয় প্রজন্মের ৩জি সেবা দেওয়া শুরু করেছে। মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে একমাত্র টেলিটক দেশিয় কোম্পানি। বর্তমানে রবি ও এয়ারটেল একীভূত হয়ে রবি হবার কাজ করছে। দেশে মোবাইল নম্বর গুলো ০১ দিয়ে শুরু। কান্ট্রি কোড সহ নম্বর হয় +৮৮০১********* । কান্ট্রি কোড ব্যতীত মোট ১১ ডিজিটের নম্বর ব্যবস্থা চালু এখন। মোবাইল কোম্পানীগুলো হল: ১. সিটিসেল কোড - ০১১(সিডিএমএ) [বর্তমানে বন্ধ] ২. রবি কোড -০১৮(পূর্ব নাম একটেল)। এয়ারটেল (বাংলাদেশ) কোড - ০১৬(ওয়ারিদকে কিনে নেয় )- বর্তমানে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পরিচালিত একটি স্বাধীন ব্যান্ড, যেটি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের লাইসেন্সের অধীনে পরিচালিত। ১. গ্রামীণফোন কোড -০১৭, ০১৩। ২. বাংলালিংক কোড -০১৯, ০১৪ (সেবাওয়ার্ল্ডকে কিনে নেয়)। ৩. টেলিটক কোড -০১৫
নেটওয়ার্ক তেমন একটা সম্প্রসারণ না হওয়া এবং কারিগরি কারণে সীমিত আকারে সংযোগ বিক্রি করতো। বলা চলে ২০০১ সালের জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের গতি কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সেই সময় থেকে আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আসছি। আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে এই প্রতিবেদনটা তৈরি করা হলো।
১। প্রি-পেইড প্যাকেজ কেনার ভীড়ঃ
গ্রামীণফোন তাদের প্রি-পেইড ‘ইজি’ প্যাকেজ বিক্রি করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দেয়া শুরু করে ২০০১ সালের জুলাই মাস থেকে। সেই সময় থেকে লম্বা লাইন ধরে প্যাকেজ কিনতে দেখেছি। আমি নিজেও ২ ঘণ্টা লাইনে থেকে প্যাকেজ কিনতে পারিনি। খুব সীমিত আকারে তখন সংযোগ বিক্রি করতো। ২/১ এক দিনের মধ্যেই সব স্টক শেষ হয়ে যেত। পরবর্তী প্যাকেজের জন্য এক/দুই মাস অপেক্ষা করতে হতো। বলা চলে এই অবস্থা ছিল ২০০২ সাল পর্যন্ত।
২। প্রতি মিনিট কল চার্জ ৬ টাকাঃ
প্রি-পেইড প্যাকেজগুলোতে শুরু থেকেই প্রতি মিনিট কল চার্জ ভ্যাটসহ ৬.৭৫ টাকা ছিল। বলা যায় দীর্ঘ সময় ধরেই এই কল চার্জ চালু ছিল। বাংলালিংক আসার পর ২০০৫ সাল থেকে ফোন কলের ট্যারিফ কিছুটা কমতে শুরু করে।
৩। এক মিনিট পালসঃ
বলা চলে দীর্ঘ সময় ধরেই ১ মিনিট পালস ব্যবস্থা চালু ছিল। বাংলালিংক আসার পর ২০০৫ সাল থেকে ৩০ সেকেন্ড পালস ব্যবস্থা চালু হয়। আর ১০ সেকেন্ড পালস চালু হয় ২০১২ সালের ১২ই সেপেম্বর থেকে।
৪। কার্ডের মেয়াদ ২১ দিনঃ
তিনশত টাকা মূল্যমানের কার্ডের মেয়াদ ছিল ২১ দিন আর ছয়শত টাকা মূল্যমানের কার্ডের মেয়াদ ছিল ৪৫ দিন। আবার বাজারে সব সময় কার্ড পাওয়া যেত না। এই অবস্থা ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত। তৎকালীন অপারেটর একটেল ই-ফিল সার্ভিস নিয়ে এলে ৬০০ টাকা রিচার্জ মেয়াদ ৬ মাস হয়। এর পর গ্রামীনফোনের ফ্লেক্সিলোড চালু হলে ৩০০ টাকার রিচার্জ মেয়াদ ১ বছর করা হয়।
৫। মিসড কল সংস্কৃতিঃ
কল চার্জ বেশি হওয়ার কারণে ২০০১ সাল থেকে মিসড কলের একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিলো। কেউ কেউ এটাকে সাঙ্কেতিকভাবে ব্যবহার করতো। যেমন – ১টা মিসড কল কি করতে হবে আবার পর পর ২টা মিসড কল হলে কি করতে হবে ইত্যাদি। এটা নেটওয়ার্ক এর প্রভাব ফেলতো। সেই সময় ‘মিসড কল’ ক্ষতিকর এটার ওপর বেশ কয়েকদিন সচতনামূলক ক্যাম্পেইনে নেমেছিল গ্রামীণফোন।
৬। সিম বিক্রির সংঘবদ্ধ বিজ্ঞাপণঃ
প্রথমদিকে শুধু একটা সিম ৫, ০০০ টাকা করে বিক্রি করার জন্য পত্রিকায় সংঘবদ্ধ বিজ্ঞাপণ দেয়া হত। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে এই রেট কমে আসে। বলা চলে বেশ কয়েক বছর ধরেই এই ব্যবসা চালু ছিল।
৭। নেটওয়ার্ক এর জন্য গাছে চড়াঃ
বলা যায় ২০০৩ সাল পর্যন্ত মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক তেমন একটা শক্তিশালী ছিল না। তাই যারা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেত সেই এলাকায় নেটওয়ার্ক না পেলে অনেক সময় গাছে চড়ে নেটওয়ার্ক খুঁজতো।
৮। এন্টেনার ব্যবহারঃ
নেটওয়ার্ক সম্প্রসরনের প্রথম দিকে যে সব এলাকায় দূর্বল নেটওয়ার্ক ছিল সেই সব এলাকার কিছু মানুষ এবং পল্লীফোনের অপারেটররা বিশেষ করে গ্রামের দুঃস্থ নারীরা এন্টেনা ব্যবহার করে পাবলিক কল অফিস (পিসিও) এর সেবা চালিয়ে গেছেন।
৯। মোবাইল টু মোবাইল সংযোগঃ
প্রি-পেইড প্যাকেজগুলোতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মোবাইল টু মোবাইল সংযোগ ছিল। মোবাইল ফোন থেকে ল্যান্ডফোন বা আইএসডি তে কল করার ব্যবস্থা ছিল না। প্রযুক্তিগত কারণে সেই সময় BTTB এর ল্যান্ডফোনের আন্তঃসংযোগ বাড়নো সম্ভব ছিল না।
১০। সিম রিপ্লেসেমেন্ট ফি ৫০০ টাকাঃ
সিম হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে প্রথম দিকে এটার রিপ্লেসেমেন্ট ফি রাখা হতো ভ্যাটসহ ৫৭৫ টাকা।
১১। লাইন রেন্ট ৫০০ টাকাঃ
শুরুর দিকে Post Paid সংযোগের লাইন রেন্ট ছিল ৫০০ টাকা। ভ্যাটসহ প্রদান করতে হতো ৫৭৫ টাকা। নির্দিষ্ট তারিখে বিল প্রদান না করলে আবার সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দিত।
১২। ভাব নিয়ে চলাফেরাঃ
প্রথমদিকে যারা মোবাইলের সংযোগ কিনেছিলেন তারা বেশিরভাগই হ্যান্ডসেট পকেটে রাখতেন না। হাতে করে নিয়ে চলাফেরা করতেন। লক্ষ্য করা গেছে চলাফেরার সময় তারা একটা ভাব নিয়ে চলতেন।
১৩। পল্লীফোনের জয়জয়কারঃ
গ্রামে-গঞ্জে পাবলিক কল অফিস বলতে এক সময় পল্লীফোনকেই বুঝাতো। এমনও দেখা গেছে প্রবাসীর কোন কল এলে তারা মাইক লাগিয়ে ডাক দিত, অমুকের ফোন এসেছে। এটার জন্য তারা একটা ইনকামিং ফি নিত। আবার গ্রামের মানুষজন প্রয়োজনবোধে পল্লীফোনের মাধ্যমেই প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো, তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের খোঁজ খবর রাখতো।
১৪। বড় সাইজের হ্যান্ডসেটঃ
প্রথমদিকে প্যাকেজের সঙ্গে যে হ্যান্ডসেট গুলো পাওয়া যেত সেইগুলো ছিল ভারী, লম্বা এবং মোটা। আবার কিছু কিছু সেটের এন্টেনা থাকত। ফিচারে থাকত কিছু গেমস। সেই সময়কার কিছু জনপ্রিয় হ্যান্ডসেট ছিল সিমেন্স সি-২০, নোকিয়া ৩৩১০ ইত্যাদি।
১৫। টেলিকম ব্যবসার উত্থানঃ
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে টেলিকম ব্যবসার উত্থান শুরু হয়ে যায় ২০০১ সাল থেকে। যত্রতত্র গড়ে উঠতে থাকে এই ব্যবসার দোকান।
১৬। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
গ্রামীণফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ২৬শে মার্চ থেকে। বলা যায় ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের প্রেস বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় দেখা যেত।
৭। কলড্রপঃ
গ্রাহকের তুলনায় বিটিএস ছিল স্বল্প, সেই গুলোর ধারণ ক্ষমতাও ছিল অনেক কম। যার ফলে অনেক সময় কল করেও সংযোগ পাওয়া যেত না। বার বার চেষ্টা করতে হতো। আবার সংযোগ পাওয়া গেলেও ঘন ঘন কলড্রপ হতো। মাঝে মাঝে কথা উঠানামা করত, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।
১৮। ইনকামিং ফিঃ
প্রথমদিকে শুধু Post Paid প্যাকেজগুলোতে BTTB এর ল্যান্ডফোনের ইনকামিং সংযোগ ছিল। তবে ল্যান্ডফোনের ইনকামিং কল ফ্রি ছিল না। প্রতি মিনিট ভ্যাটসহ ৩.৭৫ টাকা ফি ধরা হত।
বিবিএসের জরিপ দেশে এখন সাড়ে ৯ কোটি মানুষের মুঠোফোন আছে
মুঠোফোন ছাড়া এখন জীবন প্রায় অচল। আপনার হাতে যদি মুঠোফোন না থাকে তবে জীবনটা পানসে মনে হতে পারে। দেশে এখন কত মানুষের মুঠোফোন আছে, সেই প্রশ্নও জাগতে পারে অনেকের মনে। এর একটি উত্তর উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে। সেই জরিপ বলছে, বর্তমানে দেশে ৯ কোটি ৫০ লাখ ৫২ হাজার ৪২৮ জনের মুঠোফোন আছে। যাঁদের মুঠোফোন আছে, তাঁদের মধ্যে ৫ কোটি ৫১ লাখ পুরুষ ও ৩ কোটি ৯৯ লাখের বেশি নারী।
বিবিএস বলছে, বাংলাদেশে এখন অর্ধেকের বেশি পরিবারে অন্তত একটি করে স্মার্টফোন আছে। সে অনুযায়ী দেশের ২ কোটি ২০ লাখ ২ হাজার ৯৯২ বা ৫২ শতাংশ পরিবারে এখন স্মার্টফোন আছে। তবে স্মার্টফোনওয়ালা পরিবারের সংখ্যা শহরের চেয়ে গ্রামে দ্বিগুণ। শহরে যেখানে ৭৪ লাখ পরিবারে স্মার্টফোন আছে, সেখানে গ্রামে এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ১ কোটি ৪৬ লাখ।
বিবিএস ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সুবিধার ওপর এই জরিপ করে। গতকাল রোববার জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জরিপে মুঠোফোন ব্যবহারের হিসাবটি পাঁচ বছরের বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার ৮১৬টি পরিবারের কাছ থেকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ করে মুঠোফোন, রেডিও-টিভি, ট্যাব, ইন্টারনেটসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় জরিপে।
নিজের মুঠোফোন না থাকলেও অনেকে পরিবার-পরিজনের মুঠোফোনে কথা বলেন।যেমন মা-বাবার নিজের ফোন না থাকলেও সন্তান বা অন্যের ফোন ব্যবহার করেন। অন্যের ফোন ব্যবহারকারী এমন ব্যক্তির সংখ্যা আরও প্রায় সাড়ে চার কোটি। তাতে সব মিলিয়ে মুঠোফোন ব্যবহারকারী নারী-পুরুষের সংখ্যা ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপমতে, নিজের মুঠোফোন আছে, এমন মানুষের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি। এই বিভাগের প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে নিজের মুঠোফোন। আর সবচেয়ে কম মুঠোফোন রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। সেখানে সাড়ে ৫৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর নিজের ফোন আছে।
এবার নজর দেওয়া যাক স্মার্টফোনের দিকে। স্মার্টফোন সবকিছু বদলে দিচ্ছে। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, মেসেঞ্জারসহ নানা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা যায়। আবার সংবাদপত্র পড়াসহ বিভিন্ন তথ্য জানতেও স্মার্টফোন লাগে। এ জন্য দরকার হয় ইন্টারনেট। সেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, ৫ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৭ জন। পরিবার বিবেচনায় নিলে বলা যায়, ১ কোটি ৬০ লাখ পরিবারের ইন্টারনেট সংযোগ আছে। এই তথ্যও বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে।
স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। ফলে পুরো বিশ্বই যেন থাকে হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে দিনে অন্তত একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৬৮ শতাংশ। এই তালিকায় অবশ্য ময়মনসিংহ বিভাগের লোকজন সবচেয়ে এগিয়ে আছে। সেখানকার প্রায় ৭৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দিনে অন্তত একবার অনলাইনে ঢুঁ মারেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রংপুর বিভাগ। সেখানে এই হার সাড়ে ৬২ শতাংশের ওপরে।
ওয়াটারপ্রুফ ও ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স, এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কী
নতুন স্মার্টফোন কেনার পর সেটির ব্যবহার নির্দেশিকায় ‘ওয়াটারপ্রুফ’ বা ‘ওয়াটার রেজিস্ট্যান্স’ কথাটি লেখা থাকে। শব্দ দুটির মাধ্যমে পানিরোধী–সুবিধা বোঝানো হলেও মৌলিক কিছু
বৃষ্টির পানিতে ফোন ভিজে গেলে কী করবেন
পানিরোধী ব্যাগ ব্যবহার
ওয়াটারপ্রুফ পাউচ বা পানিরোধী ব্যাগ ব্যবহার করে বৃষ্টির পানি থেকে সহজেই ফোন নিরাপদে রাখা যায়। পানিরোধী এই ব্যাগের মধ্যে রেখে ফোনের স্পর্শনির্ভর পর্দাও ব্যবহার করা যায়। ফলে মুষলধারে বৃষ্টি হলেও সহজে ফোনে থাকা বিভিন্ন বার্তা বা তথ্য জানা যায়। প্রয়োজনে বার্তাও পাঠানো সম্ভব। আকারে ভিন্নতা থাকলেও বাজারে প্রচলিত প্রায় সব মডেলের ফোনই পানিরোধী ব্যাগগুলোর মধ্যে রেখে ব্যবহার করা যায়।
সিলিকা জেলসহ জিপলক পাউচ ব্যবহার
বৃষ্টির সময় ফোনকে সুরক্ষিত রাখতে জিপলক পাউচ ব্যবহার করা যেতে পারে। লক–সুবিধা থাকায় এ ধরনের ব্যাগে পানি প্রবেশ করতে পারে না। এ ছাড়া ব্যাগের ভেতরে সিলিকা জেল থাকায় সহজেই বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে। ফলে ফোনের লেন্স ভালো থাকে।
ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার
ওয়াটারপ্রুফ পাউচ বা জিপলক পাউচে ফোন রাখার সময় অবশ্যই ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে বৃষ্টির সময় ব্যাগ থেকে বের না করেই ফোনকল করা যাবে। ভালোমানের ব্লুটুথ হেডফোন পানিরোধী হয়ে থাকে। ফলে বৃষ্টির পানিতে হেডফোনের ক্ষতি হবে না।
ফোন পানিতে ভিজে গেলে যা মানতে হবে
সাবধানতা অবলম্বনের পরেও যদি দুর্ভাগ্যবশত ফোন পানিতে ভিজে যায়, তবে সুরক্ষার জন্য কিছু কাজ করা যেতে পারে। এ জন্য প্রথমেই ফোন দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ফোনে থাকা সুরক্ষা কেসের পাশাপাশি ব্যাটারি, সিম কার্ড, ব্যাটারি ও মাইক্রো-এসডি কার্ড খুলে ফেলতে হবে। ভেজা অবস্থায় ফোন কখনোই চার্জ করা যাবে না। এর ফলে ফোনের লজিক বোর্ডে শর্টসার্কিট হতে পারে এবং বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেও ফোন শুকানো যাবে না। প্রয়োজনে জিপলক ব্যাগে সিলিকা জেল রেখে ফোন শুকানো যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, পুরোপুরি না শুকিয়ে ফোন চালু বা চার্জ করা যাবে না।
মােবাইল ফোনের সুফল
মােবাইল ফোন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি লােক প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে নানা সুবিধা ভােগ করছে। জীবনে গতি আনতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মােবাইল ফোন। নিচে মােবাইল ফোনের নানা সুফল তুলে ধরা হলাে
(ক) যােগাযােগের মাধ্যম :
মােবাইল ফোন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে। মােবাইল ফোনের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্তের যেকোনাে ব্যক্তির সাথে সরাসরি যােগাযােগ করা যায়। পৃথিবীর সকল মানুষকে মােবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এনে বিশ্বগ্রাম (Global Village) গড়ে তােলার প্রক্রিয়া চলছে। পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে মােবাইল ফোন পরােক্ষভাবে ভ্রাতৃত্ববােধ সৃষ্টি করে চলেছে।
(খ) ইন্টারনেট সেবা :
যেকোনাে স্থান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা জানার জন্য মােবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। মােবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের যেকোনাে ঘটনা ও তথ্য প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও জানা সম্ভব। মােবাইলে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা থাকায় মানুষ গতিশীল ও আধুনিক হয়ে উঠেছে।
(গ) তথ্য আদান-প্রদান :
মােবাইলের মেসেজ অপশন থেকে সহজেই বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। এতে বিশেষ কিছু কথা মুখে না বলে মােবাইলের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করে অন্যকে জানানাে সম্ভব হয়।
(ঘ) ব্যাংকিং আদান-প্রদান :
আগে মানুষকে বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল দেওয়ার জন্য ব্যাংকে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতাে। এ সমস্যা সমাধানের সহজ পথ বের করে দিয়েছে মােবাইল ফোন। এখন দেশের যেকোনাে প্রান্ত থেকে মােবাইল ফোনের মাধ্যমে এসব বিল পরিশােধ করা সম্য হচ্ছে, যা মানুষের সময় ও অর্থকে সাশ্রয় করছে।
(ঙ) কর্মসংস্থান সৃষ্টি :
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মােবাইল ফোন কোম্পানিগুলােতে বহু লােকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। যেমন বাংলাদেশে ছয়টি মােবাইল ফোন কোম্পানিতে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাছাড়া আরও কয়েক লাখ লােক পরােক্ষভাবে ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।
(চ) হিসাব-নিকাশ :
মােবাইল ফোনে ক্যালকুলেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে যেকোনাে প্রয়ােজনীয় মুহূর্তে ছােটখাটো হিসাবনিকাশ মােবাইল ফোনের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে।
(ছ) ভিডিও ও ক্যামেরা :
মােবাইল ফোনের আধুনিক মডেলগুলােতে ভিডিও এবং ক্যামেরা আছে। ফলে দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে এখন আর আগের মতাে ক্যামেরা নিতে হয় না। ক্যামেরা থেকে শুরু করে ভিডিও রেকর্ডিং পর্যন্ত মােবাইল ফোনের মাধ্যমে করা যায়।
(জ) বিনােদন :
কর্মময় জীবনের একঘেয়েমি দূর করে অবসর বিনােদনের জন্য মােবাইল ফোনে বিশেষ ব্যবস্থা আছে। এখন মেমােরি কার্ডে অডিও ও ভিডিও গান সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ফলে অবসরে মনে আনন্দ দিতে মােবাইল ফোন বন্ধুর মতাে কাজ করে।
মােবাইল ফোনের কুফল
ভালাে-মন্দ নিয়েই পৃথিবীর সকল কিছুর সৃষ্টি। প্রতিটি যন্ত্রের মাঝে তার ভালাে দিক যেমন আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। মােবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির যেমন কিছু সুফল রয়েছে তেমনি নিম্নোক্ত কুফলও বহন করছে।
(ক) আর্থিক অপচয়
মােবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ যেমন সচ্ছল হচ্ছে, তেমনি কিছু মানুষ দারিদ্রের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। মানুষ ধার-দেনা করে মােবাইল ফোন কিনছে, আবার অনেকে বিশেষ করে যুবসমাজ অকারণে মােবাইলে টাকা অপচয় করছে।
(খ) অপরাধ বিস্তার :
মােবাইল ফোন এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে সামনে না এসেও সরাসরি কথা বলা যায়। ফলে সন্ত্রাসীরা সহজেই নিজেদের মধ্যে যােগাযােগ রক্ষা করতে পারে। তাছাড়া মােবাইল ফোনের সহায়তায় সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল প্রভৃতি অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
(গ) রােগব্যাধি বিস্তার :
প্রতিটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে কিছু রােগব্যাধির বিস্তার ঘটে। বুক পকেটে বা মাথার নিচে মােবাইল রাখলে এর ক্ষুদ্র তরঙ্গ মানুষের বুকে ও মস্তিষ্কে নানারকম রােগের জন্ম হয়। তা ছাড়া স্ক্রিনের আলাে চোখের ক্ষতি সাধন করে।
(ঘ) লেখাপড়ার ক্ষতি :
বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানি লাভবান হাওয়ার জন্য লোভনীয় অফার দিচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা এসব সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে বা রাত জেগে কথা বলে লেখাপড়ার ক্ষতি সাধন করছে।
(ঙ) যুবসমাজের অবক্ষয় :
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যুবশ্রেণী অশ্লীল ভিডিও দেখে তাদের মূল্যবোদের অবক্ষয় সাধন করছে। বর্তমানে যুবসমাজ মোবাইল ফোনের ভালোর দিকের চেয়ে খারাপ দিকই বেশি গ্রহণ করছে।
মোবাইল ফোনের উপযোগিতা:
বর্তমানে মোবাইল ফোন এমন একটি বৈদ্যুতিন উপকরণ যার উপযোগিতা আধুনিক জীবনে সর্বত্র। চিঠি লেখার ও পাওয়ার অপেক্ষা এবং অনিশ্চয়তাকে দূর করে মোবাইল দিয়ে এসেছে সা পরিসেবা সংযোগকে আরও প্রাণবন্ত করেছে । কম্পিউটারের দুনিয়াকেও অনেকটাই হাতের মুঠোয় নে দিয়েছে মোবাইল ফোন। ই-মেল, ইনটারনেট— এইসব পরিসেবাই এখন মোবাইল ফোনের কারণে সহজে উপলব্ধ। ব্লুটুথ বা ইনফ্রারেড প্রযুক্তি সংযোগব্যবস্থাকে এক নতুন যাত্রা দিয়েছে। স্থির এবং চলমান ফোটোগ্রাফি অনায়াসে সম্ভব এই মোবাইল ফোনের সাহায্যে।
মোবাইলে রয়েছে বিনোদনের অজস্র ব্যবস্থা। রেডিয়ো, এমপিথ্রি, গেমিং, এমনকি টিভির অনুষ্ঠানও মোবাইলের সাহায্যে উপভোগ করা সম্ভব। মোবাইলে প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশই উন্নত হচ্ছে। মোবাইল ব্যবস্থা এখন চতুর্থ প্রজন্মে প্রবেশ করেছে। মোবাইলের মাধ্যমে টাকাপয়সার লেনদেনের ক্ষেত্রে নেট ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে যেমন কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি আগামী দিনে এটি কেজি কার্ডের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত হতে চলেছে। এইভাবে মোবাইল ফোন যেন আলাদিনের মাজার প্রদীপের মতো জাদুকরি শক্তির অধিকারী।
মোবাইল ফোন আগমনের প্রথমদিকে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। কল চার্জ অনেক বেশি ছিল, পালস ছিল এক মিনিট, নেটওয়ার্ক ভাল ছিল না। তবুও আমরা সেই সময় এই প্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করেছিলাম। সময় এর প্রেক্ষাপটে সেটাই হয়ত ঠিক ছিল।মোবাইল ফোন সভ্যতার চেহারাকে পাল্টে দিয়েছে। মোবাইল ফোন মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। মোবাইল ফোন আধুনিক প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অবদান। বর্তমানে মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চিন্তা করতে পারি না। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকা উচিত। প্রযুক্তির অবদান মোবাইল ফোনকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।
মোটকথা, প্রযুক্তির যথাযত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের জীবন ও জগৎ আরও বেশি সহজ ও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।বিজ্ঞানের যে-কোনো যুগান্তকারী আবিষ্কারের মতোই মোবাইলের সার্থকতা নির্ভর করছে তার ব্যবহারের উপর। নাগরিক সচেতনতা এই আধুনিক উপকরণটির প্রয়োগকে তাই সার্থক করে তুলতে পারে। গতিশীল আধুনিক যুগের ট্রেডমার্ক মোবাইল ফোনকে বাদ দিয়ে একুশ শতককে ভাবা অসম্ভমোবাইল ব্যবহার মানুষের ভালোর জন্য, মানুষের উপকারের জন্য। কিন্তু বর্তমানে মোবাইলে অপসংস্কৃতির চর্চা বাড়ছে, অনৈতিক কাজকর্মের সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। তাই সুস্থ চিন্তা, সুস্থ চর্চা এবং মোবাইলের কল্যাণকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যসুত্র:
মুঠোফোন ব্যবহার, Prothom Alo.
নতুন স্মার্টফোন, Prothom Alo.
মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক, Wikipedia.
ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার, Prothom Alo.
মােবাইল ফোনের আদিকথা, Hazaaborolo.
মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক যাত্রা, Techtunes.
নাগরিক জীবনে মোবাইলের, Helpnbuexam.