বর্ষা মৌসুমের সবজি (Monsoon Season Vegetables)

বর্ষা মৌসুমের সবজি (Monsoon Season Vegetables)
Photo by Nathan Dumlao / Unsplash

বর্ষা মৌসুম চলছে। এ সময় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়ে নানা রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে। শরীর কতটা সুস্থ থাকবে, তা এ সময় খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। তাই বর্ষা মৌসুমে বাজার থেকে সঠিক সবজি বাছাই করে কেনা জরুরি। এ সময় বাজারে বেশ কিছু নতুন সবজি পাওয়া যায়। সেখান থেকে উপযোগী সবজি বেছে নিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা পুষ্টিমান বিবেচনায় মৌসুমি সবজি খেতে পরামর্শ দেন।

তবে এ সময় সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজিতে বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে বলে তা না কেনাই ভালো। এতে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয়। এ সময় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব বেশি দিতে হয়। কারণ, যেকোনো সময় অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুষ্টিকর শাকসবজি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

বর্ষা মৌসুমে পুষ্টিকর সবজি

করলা

বৃষ্টি মৌসুমে পাওয়া তেঁতো করলা অন্ত্রের ভেতরে থাকা পরজীবী কৃমি ধ্বংসে অনেক কার্যকর। পাকস্থলি ও অন্ত্রের পরজীবীগুলোর সাধারণত এই বর্ষাকালেই বেশি উপক্রম হয়।তেঁতো করলা ফাইবার, ভিটামিন-সি, ফোলেট এবং ভিটামিন-এ জাতীয় পুষ্টির আঁধার। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় এই সবজির ক্যান্সার-বিরোধী বৈশিষ্ট্য ধরা পড়েছে।এছাড়া এটি পেট, কোলন, ফুসফুস, এবং স্তন ক্যান্সারের কোষের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে।তেঁতো করলা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। এতে ক্যালোরি কম তবে ফাইবার বেশি। মানব এবং প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি পেটের চর্বি এবং শরীরের ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।

Taken From M.Hoophaap.

চিচিঙ্গা

চিচিঙ্গা এমন ফাইবার সরবরাহ করে যা পেটে বেশিক্ষণ থেকে ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে দ্রুত গতিতে মেদ ঝরে পড়ে। এছাড়া ভারী খাবার গ্রহণের পরে কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব এবং পেট-ব্যথা প্রতিরোধেও বেশ কার্যকর এই ফাইবার।নগন্য পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকায় এই সবজি হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। সেই সাথে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি এবং কার্ডিয়াক পেশীগুলোর সর্বোত্তম কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। শরীরের বর্জ্য এবং কিডনিতে পাথর নির্মূলে সহায়তা করে।চিচিঙ্গা অতিরিক্ত শ্লেষ্মা নিঃসরণ সহজেই শ্বাসনালী থেকে সরাতে পারে। ফলে কোনো প্রকার শ্বাসকষ্ট হয়না। অতিরিক্ত অ্যাসিডকে উপশম করে গ্যাস্ট্রাইটিস, পেপটিক আলসার এবং জ্বলন থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই অব্যাহতি দেয়।

Taken From Seedsmate.

পটল

পটলে বিদ্যমান অ্যান্টিপাইরেটিক ক্রিয়াকলাপ জ্বর এবং সর্দি হ্রাস করতে সাহায্য করে যা বর্ষার সময় একটি সাধারণ রোগ।রক্তের শুদ্ধির জন্য পটল বেশ উপকারী। এটি রক্ত ও টিস্যু পরিষ্কার করে ত্বকের যত্ন নেয়।এই সবজিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সঠিক হজমে সহায়তা করে। পটলের বীচি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। তাই পটল খাওয়ার সময় এর বীচি ফেলে দেবেন না। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে, যার ফলস্বরূপ দেহের কোলেস্টেরল কমে যায়। এটি কম ক্যালোরি সম্পন্ন এবং দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা রাখবে। সুতরাং ওজন কমাতে আপনি নিঃসন্দেহে এর তরকারি খেতে পারেন।

Taken From Bengali.News18.

কাকরোল

তিক্ত স্বাদযুক্ত কাকরোল যকৃতের ক্ষতি, প্রদাহজনিত অসুস্থতা রোধ এবং জ্বর কমাতে সহায়তা করে।এর ফল নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায় মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বহাল রাখতে পারে।এর হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য অতিরিক্তভাবে ইনসুলিনের নিঃসরণ এবং সংবেদনশীলতা উভয় ক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকা রাখার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।কাকরোলের বীচিতে থাকা ফাইবার গ্যাস্ট্রিক আলসার, পাইলস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি প্রশমন করে।কম ক্যালোরির হওয়ায় আপনার অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে কাকরোল খেতে পারেন।কাকরোলের শাঁসে থাকে ভিটামিন বি-৯, যা কোষের বৃদ্ধি এবং প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয়। এভাবে এটি গর্ভাবস্থায় নিউরাল টিউব ত্রুটির সম্ভাবনা হ্রাস করে।

Taken From Shomoy News.TV.

ঢেঁড়শ

ঢেঁড়শ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে এবং প্রোটিনে ভরপুর। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো বিশেষত শক্তিশালী পলিফেনল প্রদাহ রোধ, হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।প্রাণী গবেষণা মতে, ঢেঁড়শ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এতে লেকটিন নামে একটি প্রোটিন রয়েছে, যার উপর ক্যান্সার প্রতিরোধী গবেষণা চলছে।ঢেঁড়শ খাওয়ার ফলে আপনার রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি ডায়াবেটিসের সাধারণ ক্রিয়াকলাপেও হস্তক্ষেপ করতে পারে।ঢেঁড়শ গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের ফোলেটের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

Taken From Babylonagrodairy.

লাউ

বর্ষার সময় সেরা ও স্বাস্থ্যকর সবজি বিবেচনা করা হয় লাউকে। এতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় রূপে প্রচুর ডায়েটারি আঁশ থাকে। ফলে পরিপাক নালি ভালো থাকে। এ ছাড়া এতে আয়রন, ভিটামিন বি, সি থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে কার্যকরে সাহায্য করে। এ ছাড়া কম ক্যালরির খাবার হিসেবে পেট হালকা রাখে লাউ। লাউয়ে প্রচুর পানি থাকায় দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে এবং ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে।

Taken From Anandabazar.

ওল

বর্ষায় বেড়ে উঠা হজমের সমস্যা দূর করে এই সবজি। এতে থাকা ফেনোলিক কম্পাউন্ড ও ফ্লেভনোয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তাই বর্ষা ও করোনার এই সময়ে সবজিটি বেশ উপকারি হতে পারে।

Taken From Jagonews24.

ঝিঙা

প্রাকৃতিক ডি টক্সিফায়ার ঝিঙা। এই সবজি রক্ত ও শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে ভূমিকা রাখে। এটি পাকস্থলী ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঝিঙাতে ক্যারোটিন, এমাইনো এসিড, প্রোটিন ও সিসটিন থাকে। এসব করণে সবজিটি হজম শক্তি বাড়ায় ও শরীর থেকে বর্জ্য সহজে বের হতে সহায়তা করে। তাই বর্ষার এই সমেয় ঝিঙা রাখুন আপনার খাদ্য তালিকায় ।

Taken From Facebook.

শসা

বর্ষাকালীন সবজি শসা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। পরিবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সালাদ হিসেবে শসার জুড়ি মেলা ভার। এটি বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়, যেমন ভাজা, সেদ্ধ বা সালাদ হিসেবে। শসা চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। শসা চাষের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে। শসা একটি পুষ্টিকর সবজি যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।শসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকারক অণু থেকে রক্ষা করে। শসা একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি যা সবার জন্য উপযুক্ত। শসা ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে ক্ষতিকারক অণু থেকে রক্ষা করে।

Taken From Facebook.

চালকুমড়া

চালকুমড়াও একটি বর্ষাকালীন সবজি। তাই এটি বর্ষাকালীন আবহাওয়ায় ভাল জন্মে। চালকুমড়া একটি পুষ্টিকর সবজি যা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়, যেমন ভাজা, সেদ্ধ, ভর্তা বা তরকারি হিসেবে। চালকুমড়ার রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ। চালকুমড়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চালকুমড়া আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে। চালকুমড়া আমাদের হজম স্বাস্থ্য ভাল রাখে। চালকুমড়া আমাদের হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করে। চালকুমড়া আমাদের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।

Taken From Babylonagrodairy.

ধুন্দুল

বর্ষাকালীন সবজি ধুন্দুল চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। তবে ধুন্দুল চাষের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে। এর মধ্যে থাকা লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক দুটি পুষ্টি উপাদান হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।ধুন্দুলের মধ্যে বিদ্যমান ভিটামিন-বি ২ ও জিঙ্ক মাথার চুলের বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং সেই সাথে চুলের গোড়া শক্ত করতে সহায়তা করে থাকে। ধুন্দুল একটি পুষ্টিকর সবজি যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ধুন্দুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। 

Taken From Bengali.News18.

বরবটি

বর্ষাকালীন সবজি বরবটি সাধারণত বর্ষার সময় অর্থাৎ মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা হয়। বরবটিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়, ফাইবার যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে , ভিটামিন এবং খনিজ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ক্যালোরি সমৃদ্ধ সবজি হওয়ার কারণে এটি আমাদের ওজন কমাতেও সহায়তা করে।

Taken From Haakshop.

মৌসুম বদলের কারণে বর্ষায় প্রায়ই অনেকে শরীর খারাপে ভোগেন। তার উপর পেট খারাপ হলে তো আর কথাই নেই। তাই চারটি সবজি এই মৌসুমে একেবারেই এড়িয়ে চলুন।বর্ষার মৌসুমে কী কী সবজি খেলেই আসতে পারে বিপদ।

পালং শাক

প্রচুর পরিমাণে আয়রনে ভরপুর পালং শাক। এই শাক শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে বর্ষাকালে এই শাক না খাওয়াই ভালো। তাতে পেটে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দুটি মাস এই শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ফুলকপি

ফুলকপির পদ মানেই বেশ মুখরোচক। তবে বর্ষাকালে এই পদই শরীর খারাপের কারণ হতে পারে। পেটের হাল খারাপ করে দিতে পারে ফুলকপি। আয়ুর্বেদ বলছে, বাত ও পিত্ত দশার জন্য দায়ী ফুলকপি। এই বর্ষাকালে সবজিটি এড়িয়ে চলুন।

বাঁধাকপি

ফুলকপির মতো বাঁধাকপিও নানারকম রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সেই বাঁধাকপিও কিন্তু বর্ষায় খাওয়া ভালো না। এতে পেট গরম হতে পারে। এমনকি গ্যাস হওয়ার আশঙ্কাও আছে। তাই এই দুই সমস্যা এড়াতে বর্ষায় এড়িয়ে চলুন বাঁধাকপি।

ক্যাপসিকাম

রান্নার স্বাদ বাড়াতে ক্যাপসিকামের জুড়ি মেলা ভার। এর স্বাদের সঙ্গে কি আর অন্য খাবারের তুলনা হয়! কিন্তু বর্ষায় সাবধান হোন এই সবজির থেকে। এতে বাত ও পিত্ত দশার বাড়বাড়ন্ত হয়। তাই বর্ষায় ক্যাপসিকাম না খাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

বর্ষার মৌসুমে এসব সবজি কেনার পর অবশ্যই দু-তিনবার ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করতে হবে। এতে জীবাণু বা কোনো রাসায়নিক থাকলে তা দূর হবে। মনে রাখতে হবে, এ সময় যা খাবেন তা যেন অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হয়। তা না হলে বিপদ। এ সময় বাইরের খাবার বিশেষ করে ফুটপাতের ভাজাপোড়া যতটা পারেন কম খাবেন। তা না হলে পেটের পীড়ায় ভুগতে হতে পারে।


তথ্যসুত্র

 বর্ষাকালীন সবজির নাম, Gyanbitan.

পর্যাপ্ত সবজি রাখতে হবে, Risingbd.

অনেকের প্রিয় সবজি,, BD.Journal.

ভিটামিন-এ জাতীয় পুষ্টির আঁধার, Unb.

 ভরপুর পালং শাক, Dhaka Times24.

Subscribe for Daily Newsletter