জাতীয় টিকা দিবসের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ (National Immunization Day)
টিকা দিবসে পাঁচ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে দুই ফোঁটা করে পোলিও টিকা খাওয়ানো হবে।একই সঙ্গে ৬ হতে ১১ মাস বয়সী সব শিশুকে ১টি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং ১ থেকে ৫ বছরের শিশুকে ১টি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।এ দিন সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব টিকাদান কেন্দ্র খোলা থাকবে। ভ্রমণরত শিশুদের জন্য রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ কিংবা ফেরিঘাট ও বিমান বন্দরেও টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।নবজাত ও অসুস্থ শিশুকেও এদিন পোলিও টিকা খাওয়ানো হবে।
জাতীয় টিকা দিবসের গুরুত্ব
জাতীয় টিকা দিবস (NID) টিকা প্রচার এবং টিকাদানের মূল্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি অপরিহার্য দিন। NID কেন গুরুত্বপূর্ণ তা জেনে নিন: মারণ রোগ নির্মূল । অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো । ভ্যাকসিন সচেতনতা প্রচার । স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা । জীবন বাঁচান ।
এ দিবসে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় দু’কোটি বিশ লাখ শিশুকে দু’ফোঁটা করে পোলিও টিকা খাওয়ানো হবে
বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত রাখতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় টিকা দিবসের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ। আমি জেনেছি, এ দিবসে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় দু’কোটি বিশ লাখ শিশুকে দু’ফোঁটা করে পোলিও টিকা খাওয়ানো হবে। দেশে পোলিও রোধে এ ধরনের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। আমি দিবসটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সকলের সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি। ’
গ্রামাঞ্চলে প্রতি ওয়ার্ডে চারটি টিকাদানকারী দল কাজ করবে
উভয় রাউন্ডে পাঁচ বছরের কম বয়সী কোনো শিশু পূর্বে জাতীয় টিকা দিবসে বা নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় বা অন্য কোনোভাবে পোলিও টিকা খেয়ে থাকলেও তাকে পোলিও টিকা খাওয়াতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, গ্রামাঞ্চলে প্রতি ওয়ার্ডে চারটি টিকাদানকারী দল কাজ করবে। প্রতিটি দলে কমপক্ষে ২ জন সদস্য থাকবেন। একজন পোলিও টিকা খাওয়াবেন এবং একজন টালি ফর্ম পূরণ করবেন। এভাবে চারদিনে সম্পূর্ণ ওয়ার্ডের কাজ সম্পন্ন হবে।
সাফল্য সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২ কোটি ৩০ লাখ শিশু টিকা থেকে বাদ পড়ে
সাফল্য সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২ কোটি ৩০ লাখ শিশু টিকা থেকে বাদ পড়ে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই সংখ্যা শুধু টিকাদান পরিষেবাগুলোর প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কমানো যেতে পারে। ইউনিসেফ ১০০টিরও বেশি দেশে শিশুদের জন্য বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টিকা সরবরাহকারী সংস্থা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ‘গাভি’ ও অংশীদারদের সঙ্গে মিলে পাঁচ বছরের কম বয়সী বিশ্বের ৪৫ শতাংশ শিশুর কাছে টিকা পৌঁছে দেয়। জাতীয় স্বাস্থ্য ও টিকাদান কর্মসূচিকে জোরদার করতে ইউনিসেফ ১৩০টিরও বেশি দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত পোলিওমুক্ত নয়
২০০৬ সালের ২২ নভেম্বরের পর বাংলাদেশে কোনো পোলিও রোগী পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত পোলিওমুক্ত নয়। এ কারণে বাংলাদেশে পোলিও রোগের পুনঃসংক্রমণ রোধে এ টিকা দিবস পালিত হতে যাচ্ছে।বর্তমান সরকার জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রায় ১১ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করেছে। শতভাগ শিশুকে টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে। শিশু মৃত্যুহার হ্রাসসহ স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ আমাদেরকে এমডিজি-৪ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের গুণগত মানোন্নয়নের জন্য আমরা সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড-২০১১ পেয়েছি।
প্রতিবছর পোলিও টিকা দিবস পালন বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছে সরকার
দেশকে পোলিওমুক্ত করার লক্ষ্য ‘অর্জিত হওয়ায়’ প্রতিবছর পোলিও টিকা দিবস পালন বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ইপিআই) তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০০৫ সাল ছাড়া প্রতি বছরই প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় টিকা দিবস (এনআইডি) পালিত হয়ে আসছে।নিয়মিত টিকা দেওয়ার পরও ২০০৬ সালে দুই হাজার শিশুর দেহে পোলিও সনাক্ত হওয়ায় এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেখানে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি আওতায় ৯৫ শতাংশ শিশু টিকা নিতে পারে, সেখানে আলাদাভাবে এই পোলিও টিকা খাওয়ানোর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া উচিৎ কি না তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
পোলিওমুক্ত’ সনদ দেয়ার কোনো ব্যবস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পোলিওমুক্তির সনদ পেতে হলে এ দিবস পালন অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিবেশী ভারত পোলিওমুক্ত হয়নি- এ বিষয়টিও যুক্তি হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল সে সময়।অবশ্য নির্দিষ্ট একটি দেশের ক্ষেত্রে ‘পোলিওমুক্ত’ সনদ দেয়ার কোনো ব্যবস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেই। পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পোলিওমুক্তির সনদ দেয় অঞ্চল ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট কোনো দেশকে নয়।এখন পর্যন্ত ছয়টি ডব্লিউএইচও অঞ্চলের মধ্যে তিনটি এই সনদ পেয়েছে। তিনবছর ধরে ৩৫টি সদস্য রাষ্ট্র পোলিওমুক্ত থাকার পর ১৯৯৪ সালে আমেরিকা অঞ্চল এই সনদ পায়, ২০০০ সালে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৭টি দেশের অঞ্চলটি সম্মিলিতভাবে সনদ পায় এবং ২০০২ সালে এই সনদ পায় ইউরোপের ৫২টি রাষ্ট্র।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ভুটান গত ২৬ বছর ধরে পোলিওমুক্ত থাকলেও অন্যান্য দেশ পোলিওমুক্ত না হওয়ায় সনদ পায়নি এ অঞ্চল।ডব্লিউএইচওর বৈশ্বিক সনদ মান অনুযায়ী, এ অঞ্চলের ১১টি দেশ বর্তমানে পোলিওমুক্ত। তবে এই অবস্থান ধারাবাহিকভাবে তিনবছর ধরে রাখতে পারলেই সনদ দেয়া হয়।জাতীয় টিকা দিবস পালনের কারিগরি কমিটির সদস্য জাতীয় অধ্যাপক এমআর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারত যেহেতু পোলিওমুক্ত হয়ে গেছে, সেহেতু আমাদের আর জাতীয় টিকা দিবস পালন করার দরকার নেই।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি বাংলাদেশ সরকারের সফল উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি বিশ্বের প্রতিটি শিশুর জন্য টিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইপিআইয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল এবং ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।পরে ১৯৮৫ সালে ইপিআই কার্যক্রম সারা দেশে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং জাতিসংঘের কাছে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। ঢাকা শহরে ইপিআই কার্যক্রম ১৯৮৯ সালে প্রাথমিকভাবে যাত্রা করে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বিস্তৃত কর হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ টিকাদান কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে এবং ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ (ভিপিডি) নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করতে সামর্থ্য হয়।
বাংলাদেশে ছয়টি প্রধান প্রাণঘাতী রোগে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ শিশু মারা যেত
ইপিআই কর্মসূচি প্রবর্তনের আগে বাংলাদেশে ছয়টি প্রধান প্রাণঘাতী রোগে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ শিশু মারা যেত; কিন্তু বর্তমানে সেই মৃত্যুহার কমেছে ৮১.৫ শতাংশ। ১৯৯০ সালে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ১৪৬ যা ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২৭ জন (ইউএন-আইজিএমই-চাইল্ড মরটালিটি রিপোর্ট-২০২৩)। টিকাদানের মাধ্যমে, বাংলাদেশ ১৯৮৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে আনুমানিক ২০ লাখ শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করেছে এবং আজও প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ করে চলেছে। টিকাদান এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাসের এই সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ ২০০৯ ও ২০১২ সালে গ্যাভির ‘বেস্ট পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করে। এ ছাড়া টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পদকেও ভূষিত করে।
বাংলাদেশে ইপিআইয়ের আওতায় ১০টি টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়, যেমন যক্ষ্মা (টিবি), ডিফথেরিয়া, হুপিংকাশি (পারটুসিস), ধনুষ্টংকার (টিটেনাস), হেপাটাইটিস বি, হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া, পোলিও, হাম ও রুবেলা। ইপিআইয়ের জন্মলগ্নে ৬টি টিকার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলে ও গত কয়েক বছরে ভ্যাকসিন শিডিউলে আরও বেশ কিছু নতুন টিকা যোগ করা হয়েছে, ২০০৩ সালে হেপাটাইটিস বি, ২০০৯ সালে এইচআইবি, ২০১২ সালে রুবেলা ২০১৫ সালে পিসিভি এবং আইপিভি, এমআর দ্বিতীয় ডোজ ২০১৫ সালে এবং ২০১৭ সালে এফআইপিভি উল্লেখযোগ্য।
তথ্যসুত্র
ইপিআই কার্যক্রম, Prothomalo.
টিকাদান কর্মসূচি, BD News24.
জাতীয় টিকা দিবস, Bangla News.
জাতীয় টিকা দিবস, Bangla News24.
পোলিওর ক্ষেত্রে সংক্রমণ , Medicoverhospitals.
শিশুদের টিকাদানে সহায়তা, UNICEF.