জাতীয় স্মৃতিসৌধ (National Martyrs Memorial)

জাতীয় স্মৃতিসৌধ  (National Martyrs Memorial)
Taken from vromonguide.com

মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী অসংখ্য শহীদদের স্মরণে তৈরী বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্যের মধ্যে প্রধানতম সাভারের এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধ আপামর জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা।

স্মৃতিসৌধ এমনই একটি স্মৃতিস্তম্ভ যা কোনো যুদ্ধে জয়ের প্রতীক হিসেবে বা যুদ্ধে হতাহতদের স্মরণ করার জন্য নির্মিত হয়। যুক্তরাজ্যের ওয়ার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট মনে করে- ‘বাইবেলসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণে স্মৃতিস্তম্ভ বা এ ধরনের স্মারক নির্মাণের কথা উল্লেখ আছে। ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে ভবিষ্যতের মানুষদের জানানো এবং তাদের স্মরণ করার উপায় হিসেবেই স্মৃতিফলকের ধারণা এসেছে।’অন্যদিকে, ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, একেকটি স্মৃতিসৌধ ইতিহাসের দেয়ালের একেকটি ইট। এ ছাড়াও ঘটনা ঘটার স্থান চিহ্নিত করাও এর একটি উদ্দেশ্য।


বিজয় প্রকাশের উপযুক্ত প্রতীক

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একই সঙ্গে ত্যাগ এবং বিজয়ের সুতোয় গাঁথা তা কমবেশি সবারই জানা। বাঙালি জাতি সবসময়ই তাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরব প্রকাশে আগ্রহী। তাই বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম ও বিজয় প্রকাশের উপযুক্ত প্রতীক হিসেবে। কিন্তু সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে যেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকারের মন্ত্রী ও অন্য গণমান্য ব্যক্তিবর্গের পদধূলি পড়ে, সশস্ত্র বাহিনীগুলোর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতর্পণ করা হয় এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান কিংবা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এদেশে আসলে জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে যেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান, সফরের স্মৃতিস্বরূপ এ সময় তারা বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করেন যে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। সেই অপূর্ব স্থাপত্যকর্মটির শিল্পীকে এ দেশের কজন মানুষ চেনেন, কজন মানুষ জানেন সেই স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে সেটাও প্রশ্ন থেকে যায়।

একটি স্মারক স্থাপনা

জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি স্মারক স্থাপনা। জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপর নাম ‘সম্মিলিত প্রয়াস’। এটি ঢাকা থেকে ২৫ কিলােমিটার উত্তর-পশ্চিমে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারে অবস্থিত। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে এখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কেরা সরকারি সফরে বাংলাদেশে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা এখানে স্মারক হিসেবে বৃক্ষরােপণ করে থাকেন ।এই স্মৃতিসৌধ আপামর জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের শহিদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

স্মৃতিসৌধের স্থপতি

এর স্থপতি হলেন সৈয়দ মইনুল হােসেন।স্মৃতিসৌধটির পতাকাকে যথাযথ সম্মান দেখানাে ও এর মর্যাদা রক্ষা করা। উচ্চতা ১৫০ ফুট (৪৬.৫ মিটার)।সৌধটি সাতটি ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল নিয়ে গঠিত। এলাকাটির ক্ষেত্রফল ১০৮.৭ একর। ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতিসৌধটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মূল স্মৃতিসৌধের নির্মানকাজ ১৯৮২ সালের বিজয় দিবসের অল্প পূবে শেষ হয়। ১৯৮২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার প্রধান এর উদ্বোধন করেন। এই স্মৃতিসৌধ সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক এবং মুক্তিযােদ্ধাদের বিজয় ও সাফল্যের যুগলবন্দি রচনা করেছে।

এই স্তম্ভের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মােৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহিদদের দশটি গণসমাধি। সমগ্র জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত এই স্মারক স্থাপনা জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল।


মালদ্বীপে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকা স্থাপনমালদ্বীপে বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকা উদ্বোধনবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিহিসেবে সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি স্থাপিত হলো মালদ্বীপের আদ্দু সিটিতে।সার্ক সম্মেলনকে স্মরণীয় করে রাখতে আদ্দু সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ১০টি ভাস্কর্য তৈরির অংশ হিসেবে আদ্দুর হিথাদোতে বাংলাদেশের স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকাটি স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উন্মোচন করেন। ইস্পাতের তৈরি ১১৯ কেজি ওজনের রেপ্লিকাটি দৈর্ঘ্যে ৯ ফুট ও প্রস্থে ৪ ফুট।


স্থপতি সৈয়দ মনিরুল হোসেনের নকশায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে ইস্পাতের রেপ্লিকাটি তৈরি করেন ভাষ্কর হামিদুজ্জামান খান। তিনি নিজে এজন্য মালদ্বীপে গিয়েছিলেন। স্থপতি হামিদুজ্জামান খান তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে বলেন, ‘হিথাদোতে স্থাপিত রেপ্লিকার নিচে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতি হিসেবে সাভারে স্থাপিত মূল জাতীয় স্মৃতিসৌধের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা হয়েছে।’তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বিজয় দিবস উদযাপনকালে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাভারে স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এ কথাটিও লেখা রয়েছে।হামিদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘মূল স্মৃতিসৌধের ৭টি স্তরের বর্ননাও এতে লেখা রয়েছে।’ খুব অল্পসময়ের মধ্যেই এটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Taken From Channel24

বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকা থেকে ৩৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে সাভারে অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য ত্যাগ ও শৌর্যের স্মৃতি হিসেবে সৌধটি দাঁড়িয়ে আছে। থপতি মঈনুল হােসেন এর নকশা নির্মাণ করেন। অসমান উচ্চতা ও স্বতন্ত্র ভিত্তির ওপর সাতটি ত্রিভুজাকৃতির প্রাচীর নিয়ে মূল সৌধটি গঠিত। সর্বোচ্চ স্তম্ভটি সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের ভিত্তির ওপর, আর সর্বদীর্ঘ ভিত্তির ওপর স্থাপিত স্তম্ভটি সবচেয়ে কম উচ্চতার। প্রাচীরগুলাে মাঝখানে একটি ভাঁজ দ্বারা কোণাকৃতির এবং একটির পর একটি সারিবদ্ধভাবে বসানাে। কাঠামােটির সর্বোচ্চ বিন্দু বা শীর্ষ ১৫০ ফুট উঁচু। কাঠামােটি এমনভাবে বিন্যস্ত যে, ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে একে ভিন্ন ভিন্ন অবকাঠামােয় পরিদৃষ্ট হয়। সমগ্র কমপ্লেক্সটি ৩৪ হেক্টর (৮৪ একর) জমি জুড়ে বিস্তৃত। একে ঘিরে আছে আরও ১০ হেক্টর সবুজ ভূমি। ভটির সামনে বেশ কয়েকটি গণকবর ও একটি প্রতিফলন সৃষ্টিকারী জলাশয় নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের মহান শহীদদের স্মরণে আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেমন পুষ্পস্তবক অর্পণ করি, তেমনি এর পবিত্রতা রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব।

তিসৌধে প্রবেশের পর প্রথমেই চোখেপড়ে শ্বেতপাথরে উৎকীর্ণ একটি লেখা।

‘বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা,

এর যত মূল্য সে কি ধরার ধূলোয় হবে হারা’-

এর একটু সামনেই শ্বেতপাথরের ভিত্তিপ্রস্তর। এরপরেই ডানদিকে রয়েছে নজরকাড়া উন্মুক্ত মঞ্চ। সোজা হেঁটে গেলে মূল স্মৃতিসৌধ।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইতিহাস

১৯৭১ এর ডিসেম্বরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ,মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত বিজয়,তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগ স্মরণ করে স্মৃতি সৌধ সাভারে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ।১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এই স্মৃতি সৌধের শিলান্যাস করেন। স্থান নির্বাচন,রাস্তা নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়নের পর স্থাপত্যের নকশা নির্বাচনের জন্য দেশ জুড়ে শিল্পী,স্থপতি ও ভাস্করদের কাছ থেকে নকশা আহ্বান করা হয় ।১৯৭৮ সালের জুন মাসে নকশা জমা দেওয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ।৫৭টি সেরা নকশার মধ্য থেকে স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশাকে নির্বাচন করা হয়।১৯৮২ সালের কিছু পর স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো,কৃত্রিম লেক এবং উদ্যান তৈরির কাজ সমাপ্ত হয় ।২০০২ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত প্রকল্প অনুযায়ী এখানে একটি অগ্নিশিখা , ম্যুরাল এবং একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আছে।

জাতীয় স্মৃতি সৌধ নির্মাণের কাজ তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয় ।প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে।সে সময় ২৬ লাখ টাকা খরচ করে ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়ক নির্মাণের কাজ করা হয়।দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কাজ চলে।এ সময় ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা খরচ করে গণকবরের এলাকা,হেলিপ্যাড,গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান,চত্বর ইত্যাদি নির্মিত হয় ।১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে শুরু হয় মূল স্মৃতি সৌধ তৈরির কাজ ।৮৪৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় স্মৃতি সৌধ ।এর পর এখানে তৈরি হয় কৃত্রিম লেক,সবুজ বেষ্টনী,ক্যাফেটেরিয়া,রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আবাসিক এলাকা ইত্যাদি।

আমাদের সংগ্রাম ও বিজয়ের প্রতীক

লাল ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা চারদিক। মাঝখানে প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই সরাসরি চোখ চলে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের উঁচু মিনারের দিকে আর মনে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী অসংখ্য শহীদদের স্মরণে তৈরী বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্যের মধ্যে প্রধানতম সাভারের এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ।এই স্মৃতিসৌধ আপামর জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

জাতীয়তাবোধের প্রতীক

সাভারে নির্মিত এই সৌধ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধ আমাদের অস্তিত্ব আর জাতীয়তাবোধের প্রতীক। আমাদের ইতিহাসের স্মারক। প্রতিবছর স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসে জাতীয়ভাবে এ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ শুধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি স্মরণের জন্যই নয়, এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আমাদের আরও ইতিহাস। যে ইতিহাস, যে ঘটনা আমাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে দ্রুত গতিতে এবং স্বল্প সময়ে। আমরা হয়ে উঠেছি অপ্রতিরোধ্য। একটি স্বাধীন দেশের নেশায় বাংলার নারী-পুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধে, ছিনিয়ে এনেছে বিজয়।

Taken from Wikipedia

মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক দিয়ে কেউ যখন এ এলাকায় প্রবেশ করেন তখন তিনি প্রথমেই স্মৃতি সৌধটি চোখের সামনে দেখতে পান। যদিও সৌধ পর্যন্ত যেতে হলে তাকে অনেক দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়। এই পথের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো উঁচু নিচু চত্বর। এই চত্বরগুলো পার হতে হলে তাকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি দিয়ে বেশ কয়েক বার ওঠা নামা করতে হয় ।তারপর পার হতে হয় বড় একটি কৃত্রিম জলাশয়। জলাশয় পার হওয়ার জন্য রয়েছে সেতু ।এই পথের দু'পাশে রয়েছে গনকবর।এই প্রতিটি চত্বর ও সিঁড়ি লাল ইটের তৈরি ।স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য জাতিকে যে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে,চড়াই উতরাই পার হতে হয়েছে।তার প্রতীক এই দীর্ঘ হাঁটা পথ ।স্বাধীন স্বদেশ পাওয়ার জন্য যে রক্ত দিতে হয়েছে তার প্রতীক লাল ইট ।জলাশয় অশ্রুর প্রতীক। আর গণকবর স্মরণ করিয়ে দেয় শহীদদের আত্মদানের ইতিহাস।

সাতটি স্তম্ভ দিয়ে যা বোঝায়

যারা শুধু স্মৃতিসৌধের সামনের ছবি দেখেছেন, তারা কখনোই এর গঠন সম্পর্কে জানতে পারবেন না, বুঝতে পারবেন না এটা কীভাবে আর কী ইতিহাস মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। এটা বুঝতে হলে সৌধের খুব কাছে যেতে হবে, পাশ থেকে দেখতে হবে। ভালোভাবে দেখলেই বোঝা যাবে স্মৃতিসৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজ নিয়ে গঠিত।অনেক বয়স্ক মানুষও জানেন না, জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাত জোড়া দেয়াল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ভিন্ন পর্যায় নির্দেশ করে। পর্যায়গুলো হলো :
১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ২. ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন। ৩. ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন। ৪. ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন। ৫. ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন। ৬. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
ই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসেবে বিবেচনা করেই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে।

Taken from Newsg24

তবে মুক্তিযুদ্ধকে সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচনা করে রূপদান করা হয়েছে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সৌধটি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। স্থপতি মাইনুল হোসেন সৌধের মূল কাঠামোটি কংক্রিটের এবং কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্থাপনা লাল ইট দিয়ে তৈরি করেন। মূল সৌধের গাম্ভীর্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য এই পার্থক্য। এর দ্বারা রক্তের লাল জমিতে স্বাধীনতার স্বতন্ত্র উন্মেষ নির্দেশ করা হয়েছে। এছাড়া, আশপাশের অন্য সকল নির্মাণ কাজের স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর।

অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ৭ বীরশ্রেষ্ঠ ও বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকেও এর সাথে সম্পৃক্ত করে থাকেন অনেকে। বিষয়টি একটু অন্যভাবেও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এই সালটির দুটি অঙ্কের যোগফল ৫+২= ৭। আবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। সেখানেও ১+৬=৭।

এ ছাড়াও আমরা ছোটবেলায় পড়েছি সাতে সমুদ্র। সেদিক থেকে ৭ অঙ্কটি সামনে আসে। আবার সাত আসমানের কথাও আমরা বলতে পারি। রংধনুর ৭টি রং, সাতদিনে সপ্তাহ ইত্যাদি কারণেও ৭ অঙ্কটি বেশ আলোচিত।


চারদিকে ইটের দেয়ালে ঘেরা জাতীয় স্মৃতিসৌধটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী অসংখ্য শহিদদের স্মরণে নির্মিত বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্যের মধ্যে প্রধানতমও এটি। এক কথায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ আমাদের ইতিহাসের স্মারক। এর উঁচু মিনারটি নজরে পড়ে অনেক দূর থেকে। আর মনে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। এই স্মৃতিসৌধ আমাদের অস্তিত্ব আর জাতীয়তাবোধের প্রতীক হয়ে সগৌরবে কেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কেবলই মনে হতে থাকে সময় এসেছে তার কাছে আমাদের দীক্ষা নেবার।

প্রিয় স্মৃতিসৌধ, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো যুগ যুগ ধরে। আর সময়ে অসময়ে যেন আমরা ছুটে যাই তোমার কাছে ইতিহাসের দীক্ষা নিতে।


তথ্যসুত্র:


একটি স্মারক স্থাপনা, Curiosityn.

অসামান্য ত্যাগ ও শৌর্যের স্মৃতি, Bangla Notebook.

বীরত্ব ও আত্মত্যাগ স্মরণ করে স্মৃতিসৌধ, Blog.

যুদ্ধে জয়ের প্রতীক, NewsG 24.

Subscribe for Daily Newsletter