ঋতুরাজ বসন্তে বাংলার প্রকৃতি (Nature of Bengal in Rituraj Basant)

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এদেশে ঋতুর আবির্ভাব ঘটে এবং সেগুলো পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ঘুরে ফিরে আসে ঋতু বসন্তকাল। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস (ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত) নিয়ে বসন্তকাল। শীতের পর বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রাজকীয় শোভা বিস্তার করে আবির্ভূত হয় বসন্তকাল। এজন্য বসন্ত কালকে ঋতুরাজ বলা হয়।

বসন্ত শব্দটির অর্থ কী?

কোথাও তার কোনো উত্তর নেই। বসন্ত শব্দটি নিয়ে অনেক কেজি কাগজ ব্যয় করা হলেও তার অর্থ পাওয়া যায় না। প্রায় সবাই তার বৈশিষ্ট্যগত তথ্য দিয়ে গেছেন। এমনকি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বৈশিষ্ট্যগত তথ্য দিয়েছেন। তবে তিনি একটু এগিয়ে বলেছেন অন্যদের চেয়ে। ‘বঙ্গীয় শব্দকোষে’ বসন্তের অর্থ হিসেবে বলেছেন, ‘যাহাতে কামের বাস।’ আরও বলেছেন, এর অন্য অর্থ হচ্ছে ‘কামসখ’। ‘সুহৃদঃ পশ্য বসন্ত কিং স্থিতম্।’ এই সংস্কৃত বাক্যটি উল্লেখ করে হরিচরণ বোঝাতে চেয়েছেন, বসন্ত শব্দটির যোগাযোগ আছে হৃদয়ের সঙ্গে। তাই এটি ইন্দ্রিয়জাত বা ইন্দ্রিয়জ, কাম উদ্ভূত।

তাই বসন্তের একটি সমার্থক শব্দ কামদেব, যা এই উপমহাদেশে প্রেমের দেবতা। এই দেবতার কাজ মানুষসহ পৃথিবীর প্রাণিজগতে প্রমভাবের জন্ম দেওয়া। সম্মোহন, উন্মাদন, শোষণ, তাপন, স্তম্ভন—এই পাঁচটি শর দিয়ে শোভিত কামদেব। অরবিন্দ, অশোক, আম্র, নবমল্লিকা বা শিরীষ ও নীলোৎপল—এই পাঁচ ফুল পাঁচটি শরের প্রতীক। খেয়াল করলেই দেখবেন, এই ফুলগুলো সব বসন্তকালেই ফোটে।

এ সময়ের আবহাওয়া থাকে নাতিশীতোষ্ণ। এ সময়ে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ২২ ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকে মাত্র ৫০-৭০ ভাগ। এ সময়ে প্রভাতে ও সন্ধ্যায় ভ্রমণ স্বাস্থ্যকর।এই ঋতুতে বায়ু বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হয়। শীতের উত্তরে তথা উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহের পরিবর্তে গ্রীষ্মের দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করায় এ ক্রান্তিকালে বায়ু প্রবাহের দুরন্তপনা শুরু হয়।বসন্তের আবহাওয়া থাকে মনোরম, আকাশে কিছু কিছু মেঘ থাকলেও সার্বিক আবহাওয়া থাকে নির্মল ও কোমল।

ইতিহাস বলে, মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ সালে ১৪টি উত্সবের প্রবর্তন করেছিলেন। তন্মধ্যে বসন্ত উৎসব অন্যতম। এরপর থেকেই বাঙালি প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। বসন্তকে ঋতুরাজ বলার কারণ, বসন্ত প্রকৃতিকে এক নতুন সাজে সাজিয়ে তোলে। এমনকি সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে তার আপন মহিমায়। বিশ্বকবি রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বারবার দুলিয়েছে বসন্তের ছোঁয়ায়। বসন্ত অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায়।

ঋতুরাজ বসন্তের আগমন: ফুলের আভায় সেজেছে প্রকৃতি

ফুল ফুটবার পুলকিত এ দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে উঠবে চারদিক। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। হৃদয় হবে উচাটন। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাক। কবি মনে জেগে উঠবে নতুন নতুন সব পঙক্তি। বসন্ত বাতাস দোলা দিবে সবার মনে, সাজবে বাসন্তি সাজে। বসন্তরাণীর আগমনে মাতাল হবে সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ। এজন্যই কবি বলেছেন, এই ফাগুনে সাঝিয়েছি অঞ্জলি, আমার হৃদয়ের থালা ভরে। দেখা হোক, আদর হোক ভালোবাসায়। দু’টি হৃদয় একটি থালায়, শিমুল ও পলাশের ফুলে ফুলে।

এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে

আগুন রাঙা এ ফাগুনে প্রকৃতিতেই শুধু উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, রঙ ছড়ায় প্রতিটি তরুণ প্রাণে। প্রাণের টানে, আর প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মন হয়ে ওঠে উত্তাল, বাঁধনহারা। বসন্ত নিয়ে যেন তরুণদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন সবই এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। এমনও মধুর দিনে এমন শঙ্কাও কি জাগে না অধীর প্রতিক্ষায় থাকা কোন মনে- ‘সে কি আমায় নেবে চিনে/ এই নব ফাগুনের দিনে- জানিনে...?’।

জীবজগতে বসন্তকাল বৃহৎ বৃহৎ কল্পনা ও স্বপ্নের জন্ম দেয়। জীবনকে রঙিন ও মধুর করে ভাবতে শিখায়। এ মুহূর্তে মানব মনে জাগে কত কথা, কত গান— ‘আজি এ বসন্ত সমীরণে/কত কথা মোর মনে পড়ে।’ দখিনা বাতাসের মৃদুদোলা দেহ ও মনের ক্লান্তি জুড়ায়। বসন্তের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আমাদের প্রাণকে চঞ্চল করে তোলে। নবজাগরণের দোলা লেগে এ সময় বাংলার প্রকৃতি যেমন শিহরিত হয়; তেমনি অজানা এক সুরের প্রত্যাশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে বাঙালির হৃদয়। দখিনা হাওয়া পথিকের হৃদয়ে উদাসীনতার সুর তোলে। হৃদয় পাগল করা বাংলার এ রূপ শুধুই বাংলার।

বসন্ত এসেছে, প্রকৃতি খুলেছে দক্ষিণা দুয়ার

বাংলাদেশ বা বাঙালি সমাজে ঋতুরাজ বসন্ত আসে নানা রঙ ছড়িয়ে। প্রকৃতি খুলে দেয় তার দক্ষিণা দুয়ার। বসন্তের আগমনে কোকিল গান গায়। ভ্রমর খেলা করে। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। প্রকৃতির এই রূপে দেওয়ানা হয়ে কবিরা রচনা করেছেন অনেক চরণ। ‘‘আজি এ বসন্ত দিনে বাসন্তী রঙ ছুয়েছে মনে; মনে পরে তোমাকে ক্ষণে ক্ষণে চুপি চুপি নিঃশব্দে সঙ্গোপনে’’- এ রকম অনেক চরণ রচিত হয়েছে বসন্তকে নিয়ে।

নানা কারণে এখন পরিবর্তন এসেছে প্রকৃতিতে। কোনও ঋতুই এখন আর আগের মতো নিজ নিজ বৈশিষ্ট বহন করেন না। শীতকালে শীতের দেখা নেই। বর্ষায় বৃষ্টি মেলেনা। এসব দেখেই হয়তো কবি চরণ লিখেছে এভাবে ‘ফুল ফুটক আর না-ই ফুটক আজ বসন্ত’। অথবা কবিকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে বসন্তের আগমনের কথা ‘হে কবি নীবর কেন-ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?’

বসন্ত পত্রঝরা বৃক্ষে নবপল্লবের আশীর্বাদ বয়ে আনে

বসন্ত প্রকৃতিতে ফুল ফোটায়, পত্রঝরা বৃক্ষে নবপল্লবের আশীর্বাদ বয়ে আনে, শুষ্ক মৃত্তিকাতে জাগায় কচি কিশলয়। শীতের অসুস্থ প্রকৃতিকে সে দান করে সুস্থতা, তৃণপল্লবও পত্রপুঞ্জে সমৃদ্ধ করে প্রকৃতিকে। কিন্তু আমাদের জন্য বসন্ত কি দেবে? বসন্ত আমাদেরকে দেবে ব্যক্তিত্ব, সুস্থ করে তুলবে চিন্তার অসুস্থতা। অলসতা, অকর্মণ্যতা, নৈতিক অধঃপতন আমাদের চিন্তার অসুখ। এগুলোই আমাদের জীবনের জীর্ণতা, পঙ্গুতা ও আড়ষ্টতা। আমরা সেদিনের জন্যই অপেক্ষা করব, যেদিন প্রকৃতির বসন্তের সঙ্গে আমাদের জীবনেও বসন্তের আগমন ঘটবে। মিথ্যা, প্রবঞ্চনা ও অসততা হতে যেদিন আমরা মুক্ত হতে পারব; সেদিনই আমাদের জীবন ফুলের পাপড়ির মতো শোভা ও সৌন্দর্যে ভরে উঠবে। আর সেদিনই সূচিত হবে আমাদের জীবনের বসন্ত। প্রকৃতিতে নিরন্তর বসন্তের সুবাতাস প্রবাহিত হোক।

রঙিন প্রকৃতি মানুষের মস্তিষ্ককে সৃষ্টিশীল হতে প্রেরণা জোগায়

২০১২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বসন্তের সবুজ ও রঙিন প্রকৃতি মানুষের মস্তিষ্ককে সৃষ্টিশীল হতে প্রেরণা জোগায়। এরও আগে, ২০০৭ সালে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, বসন্তে যে হলুদ রঙের ফুলের প্রাচুর্য দেখা যায়, তা প্রাণকে তারুণ্য উপহার দেয়। কবিগুরু বসন্তকে যৌবনের ঋতু বলেছেন। বসন্ত ঋতুতে সবচেয়ে বেশি পাখির গান শোনা যায়। আর এই গানের দলের নেতৃত্ব দেয় সুরেলা কণ্ঠের কোকিল। উঁচু গাছের মগডালে বসে, নিজেকে আড়াল করে চারদিক কুহু কুহু ডাকে মুখরিত করে তোলে। কোকিলের গানে বিমোহিত হয় মানুষের মন, বিরহী মন মূহুর্তেই হয়ে ওঠে উতলা।

বসন্তে ফাল্গুনের হাওয়ার দোল লাগে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতে

বসন্তে ফাল্গুনের হাওয়ার দোল লাগে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতে। রাজার আগমনে চারদিকে যেমন সাজ সাজ রব শুরু হয়ে যায়, তেমনি বসন্তের আগমনে প্রকৃতিও নতুন সাজে সেজে ওঠে। প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয় প্রকৃতিতে। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে উঠে প্রকৃতির সবুজ অঙ্গন। মাঘের শেষ দিক থেকে গাছে গাছে চোখে পড়ে আমের মুকুল। খোলসে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া তখন সৌন্দর্যের সৌরভ ছড়াতে থাকে। ফুলের মনমাতানো রূপ, রস আর সৌন্দর্যে মাতাল হয়ে যায় মধুমক্ষী, পাখি আর পতঙ্গ।

মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে ফুল বাগান। ফুলে ফুলে বসে তারা মধু পান করে। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের সৌরভ বসন্তের আগমনের জানান দেয়। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতা জানান দেয় নতুন লগ্নের। ফাল্গুনের আগমনে পলাশ, শিমুল গাছে দেখা যায় আগুনের খেলা। গাছে গাছে শোনা যায় পাখির কিচির মিচির শব্দ। মাঠে-ঘাটে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায় ফড়িং আর রঙ্গিন প্রজাপ্রতি। বসন্তে সর্বত্রই চোখে পড়ে সাজ সাজ রব।

ফুলের ঋতু বসন্তকাল

আজকের বসন্ত আর কয়েক যুগ আগের বসন্তের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আগের বসন্ত আরো সুন্দর আরো প্রাণবন্ত ছিল। সবুজের আয়োজনে চারিদিক ছিল আরো সবুজ। ফুলের সুরভিতে পাখির কূজনে ভরপুর ছিল। মানুষের অনৈতিক চলনে অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। হারিয়ে যেতে বসেছে প্রিয় সবকিছু।বসন্ত ঋতু আল্লাহর এক মহান নিয়ামত এবং রহমতের বীজ বপনের ঋতু। এই সময় ফুল পাখি, কীটপতঙ্গ আরো নানা প্রাণী করুণাময়ের নির্দেশে এক মহান দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয়। মানুষের কল্যাণে সৃষ্টিকর্তার এক মহা উদ্দেশ্য রয়েছে এই দু’টি মাসে। গাছ ফুল পাখি আর কীটপতঙ্গ নিয়ে কিছু আলোচনা করা দরকার।

স্বপ্নীল সকাল আর লেবু ফুলের ঘ্রাণে স্মৃষ্টি হয় একটি নতুন পরিবেশ

গাছ অধিকাংশ পাখির বাসস্থান। গাছেই ফুল হয়। বৃক্ষের সবুজে পৃথিবী হয় সবুজ। গাছ থেকে পাই অক্সিজেন যা বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। গাছ তার শিকর দিয়ে আঁকড়ে রাখে মাটি। গাছের ফুল থেকে হয় ফল, শস্যদানা, মধু, আরো অনেক কিছু। গাছ থেকে এবং কোনো কোনো ফুল থেকেও ঔষধ তৈরি হয়। এসব জিনিস আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কতটা দরকার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই বসন্ত কালেই ফুলের সবচেয়ে বেশি সমাগম হয়।গ্রাম্য পরিবেশে না থাকলে যেন বসন্তের এই মনকাড়া সৌন্দর্য্য টা উপভোগ করা যায়না। স্বপ্নীল সকাল আর লেবু ফুলের ঘ্রাণে স্মৃষ্টি হয় একটি নতুন পরিবেশ। ফাল্গুন-চৈত্রের এই বিমোহিত রুপ সবই যেন বসন্তকে ঘিরে। আর তাই বসন্তকে বরণ করতে কবি লিখেছেন:-

  “হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
   বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
        কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
        “দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
 বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
 দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”


বসন্তে এই রোগবালাইগুলোর বিষয়ে সাবধান

এ সময়ের একেবারে সাধারণ এক সমস্যা হলো ভাইরাসজনিত জ্বর। নাক থেকে পানি পড়া, জ্বর—এসব উপসর্গ তো থাকেই। সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করে। গায়ে ব্যথা হয়। অনেক সময় বমি আর পাতলা পায়খানাও হয়। এর চিকিৎসা করা হয় মূলত উপসর্গ অনুযায়ী। ভাইরাসজনিত জ্বরে অবশ্যই প্রচুর তরল জিনিস পান করতে হবে। জ্বর বেশি হলে হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছিয়ে দিন। প্রয়োজনে জ্বরের ওষুধ দিন। শিশুদের প্যারাসিটামলও দিতে হয় ওজন অনুযায়ী। খেয়াল রাখতে হবে, প্রস্রাব ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। বমি হলে অল্প অল্প করে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। বেশি অসুস্থ হলে জ্বরের অন্য কারণও খুঁজতে হবে। ডেঙ্গুজ্বর বা করোনা সংক্রমণও দেখা দেয় কাছাকাছি ধরনের উপসর্গ নিয়ে। 

ঋতুরাজ বসন্ত যেন বাসন্তী সাজে

বছরঘুরে এসেছে বসন্ত। প্রকৃতিতে তাই লেগেছে রংয়ের ছোঁয়া। দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন।ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দানতোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দানআমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণতোমার অশোকে কিংশুকেঅলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে’…

ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা।শীতকালে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার নতুন পাতা গজায়। গাছগুলো সবুজ পাতায় ছেয়ে যায়, পাতার ফাঁকে বসে কু-হু-কু-হু গান ধরে কালো কোকিল। ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছগাছালি। মনের আনন্দে পাখিরা গান গাইতে শুরু করে। লাল ফুল, নীল ফুল, হলুদ ফুল, গোলাপি ফুল, বেগুনি ফুল, আকাশি ফুল, কমলা ফুল, ঘিয়ে ফুল, সাদা ফুল হাজার রঙের ফুল ফোটে বসন্তে !

নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেকেই লিখেছেন গান, কবিতা। সত্যি বলতে বসন্ত নিয়ে বর্তমান সময়ে খুব একটা রচিত হয়নি গান-কবিতার পঙ্ক্তিমালা। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত নিয়ে অনেক গান-কবিতা লিখেছেন। তার মায়ার খেলা গীতিনাট্যের ‘আহা আজি এই বসন্তে, এতো ফুল ফোঁটে, এতো বাঁশি বাজে এতো পাখি গায়।

উৎসব, দ্রোহ ও বিচ্ছেদের রঙ ছড়ানো বসন্ত

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। মাঘের শীতের তীব্রতায় যখন প্রকৃতিসহ মনুষ্যকুল ও জীবজগৎ কাবু, ঠিক তখনই আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। ফাগুনের হাওয়ায় উৎসবের রঙে মেতে উঠে প্রকৃতি। শীতে  বৃক্ষের পত্ররাজি ঝরে পড়ে, প্রকৃতিতে আসে স্তব্ধতা। বসন্তের আগমনে সেই আড়মোড়া ভেঙ্গে প্রকৃতি হয়ে উঠে সজীব। বসন্তের আগমনধ্বনি পাওয়া যায় গাছের নতুন কুঁড়িতে। এক অনিন্দ্য সজীবতা, উচ্ছ্বাস আর আনন্দের পূর্ণরূপ শোভিত হয় বসন্তে। ষড়ঋতুর বাংলায় বসন্ত বাংলা বছরের সর্বশেষ ঋতু হলেও বসন্তকে ঘিরেই যাবতীয় উচ্ছ্বাস বাঙালির।

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। মাঘের শীতের তীব্রতায় যখন প্রকৃতিসহ মনুষ্যকুল ও জীবজগৎ কাবু, ঠিক তখনই আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। ফাগুনের হাওয়ায় উৎসবের রঙে মেতে উঠে প্রকৃতি। শীতে  বৃক্ষের পত্ররাজি ঝরে পড়ে, প্রকৃতিতে আসে স্তব্ধতা। বসন্তের আগমনে সেই আড়মোড়া ভেঙ্গে প্রকৃতি হয়ে উঠে সজীব। বসন্তের আগমনধ্বনি পাওয়া যায় গাছের নতুন কুঁড়িতে। এক অনিন্দ্য সজীবতা, উচ্ছ্বাস আর আনন্দের পূর্ণরূপ শোভিত হয় বসন্তে। ষড়ঋতুর বাংলায় বসন্ত বাংলা বছরের সর্বশেষ ঋতু হলেও বসন্তকে ঘিরেই যাবতীয় উচ্ছ্বাস বাঙালির।

বসন্ত যেন বাঙালির মনের অনেকখানি জায়গা জুড়েই বিস্তৃত। শুকনো পাতায় ভর করে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। বৃক্ষরাজিতে সবুজ পাতা আর নানা রঙের ফুল। কৃষ্ণচূড়া এবং শিমুল বন সাজে সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রক্তিম রঙে। কোকিলের কুহু গানের সুরে ভ্রমরের নৃত্যের গুনগুনানিতে সতেজতার ষোলআনাই পূর্ণ হয় প্রকৃতিতে। চারদিকে ধ্বনিত হয় ঝরা পাতার নিক্কন শব্দে। বসন্ত যেন খুঁজে পায় নিজের নামের সার্থকতা। তাই তো কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।’ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাঙালি তার চিরায়িত ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নেবে বসন্তকে। নবীন থেকে প্রবীণ-সবাই যেন প্রকৃতির রঙের সঙ্গে নিজেদেরও রাঙিয়ে তোলে— সেই প্রত্যাশাই রইল


তথ্যসুত্র

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন, Bangla.The Daily Star.

প্রকৃতি খুলে দেয় তার দক্ষিণা দুয়ার, Bayanno.

বসন্তের সবুজ ও রঙিন প্রকৃতি, Rajdhanitimes24.

আজ পহেলা ফাগুন, Globaltvbd.

ঋতুরাজকে স্বাগত, Bbarta24.

মধুময় বসন্ত, ফুলেল বসন্ত, Ittefaq.

ঋতুর আবির্ভাব ঘটে, Kishorkanthabd.

 বসন্তের এই সৌন্দর্য টা, Amarsangbad.

বসন্তে বসন্ত, Prothomalo.

মানুষের মনে দোলা লাগে, Ajkerpatrika.

সবুজ কিশলয়ে ভরে ওঠে চারিদিক, Dailynayadiganta.

রং-বেরঙের ফুলে ফলে, Protidinersangbad.