ডিম্বাশয়ের ক্যানসার (Ovarian Caner)।

নারীদের মধ্যে যেসব ক্যানসার বেশি দেখা দেয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো ওভারিয়ান ক্যানসার। একে সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়। ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এখন অস্বাভাবিক বা বিরল কোনো রোগ নয়। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হলে এই ক্যানসার দ্রুত প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মহিলাদের (Women Health) হওয়া একাধিক রোগের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বর এবং সবচেয়ে ক্ষতিকারক রোগ হল ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার অর্থাৎ ওভারিয়ান ক্যান্সার (Ovarian Caner)। মহিলাদের প্রজনন অঙ্গ ডিম্বাশয়ে এই ক্যান্সার হয়। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হল যখন ডিম্বাশয়ের অস্বাভাবিক কোষগুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন একটি টিউমার (Tumor) গঠিত হয়। যদি প্রথমেই এই টিউমারের চিকিৎসা না করা হয় তখনই ক্যান্সারের জন্ম হয়। যদিও ২০ শতাংশ মহিলার প্রথম স্টেজেই এই ক্যান্সার ধরা পড়ে যায়।

ওভারি বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় এর তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরীরে অনেকটা ছড়িয়ে যাওয়ার পর উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়।নারী প্রজননতন্ত্রের ক্যানসারগুলোর মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার সবচেয়ে মারাত্মক ও এর কোনো ক্যানসার-পূর্ব অবস্থা নেই; যাতে করে আগেভাগে বুঝে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

নারীরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে একটি হলো ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার ।তবে সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ নারীরা এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বাংলাদেশে ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এ নিয়ে তেমন কোন গবেষণা এখনো হয়নি।তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নারী জিনগত কারণে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। জিনগত কারণ ছাড়াও অন্য বিচ্ছিন্ন যে কোন কারণে ওভারিয়ান ক্যান্সারে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।

এই ক্যান্সার ডিম্বাশয়কে সংক্রমিত করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত পেলভিক জোনে (শ্রোণি এলাকা) এবং পেটে না ছড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বুঝা যায় না। চিকিৎসকদের মতে- এই ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ একেবারে নাই বললেই চলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা হয় না। তারপরও যে লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয় তার একটি হলো- ক্ষুধামন্দা।

ডিম্বাশয় কী

ওভারি বা ডিম্বাশয় সন্তানধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ডিম্ব তৈরি করে। পাশাপাশি শরীরের জন্য জরুরি ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। নারী শরীরে জরায়ু অর্থাৎ ইউটেরাসের দু’পাশে দু’টি ওভারি থাকে।ওভারির যে কোনো অসুস্থতায় আপনার জীবন ঝুঁকিতে পরতে পারে। বিশেষ করে ওভারিয়ান ক্যানসার মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। চার ধাপে ডিম্বাশয় ক্যানসার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।প্রথম ধাপে একটি বা উভয় ওভারিতে ক্যানসার ছড়ায়। দ্বিতীয় ধাপে ওভারি থেকে তলপেটের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে ক্যানসার। তৃতীয় ধাপে পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ ধাপে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের(Ovarian Cancer) প্রকারভেদ

ক্যান্সার শুরু হয় এমন কোষের ধরণটি আপনার ওভারিয়ান ক্যান্সারের প্রকার তা নির্ধারণ করে।

১.এপিথেলিয়াল টিউমার

যা ডিম্বাশয়ের বাইরের অংশটি আবরণ করে টিস্যুগুলির পাতলা  স্তর থেকে শুরু হয়। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের প্রায় 90 শতাংশ এপিথেলিয়াল টিউমার হয়।

২. স্ট্রোমাল টিউমার

যা ডিম্বাশয়ের টিস্যুতে শুরু হয় যার মধ্যে হরমোন উৎপাদনকারী কোষ রয়েছে। এই টিউমারগুলি সাধারণত অন্যান্য ডিম্বাশয়ের টিউমারগুলির তুলনায় প্রথম পর্যায়ে নির্ণয় করা হয়। ডিম্বাশয়ের টিউমারগুলির প্রায় 7 শতাংশ স্ট্রোমাল হয়।

৩. জার্মসেল টিউমার

যা ডিম উৎপাদনকারী কোষগুলিতে শুরু হয়। এই বিরল ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারগুলি অল্প বয়সী মহিলাদের মধ্যে দেখা দেয়।

ক্যান্সার কতদূর ছড়িয়েছে তার উপরে চিকিৎসা নির্ভর করে। ডাক্তারদের একটি দল আপনার অবস্থার উপর নির্ভর করে একটি চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে। এটি সম্ভবত নিম্নলিখিত ভাবে হয়ে থাকে:-

১. কেমোথেরাপি। ২. অস্ত্রোপচার ক্যান্সার স্টেজ এবং টিউমার অপসারণ । ৩. টার্গেটেড থেরাপি ।৪. হরমোন থেরাপি

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারণ জানা নেই। পরিবারের কারও এ ধরনের সমস্যা থাকলে এ রোগ হতে পারে। তুলনামূলক কম বয়সে যাদের মাসিক শুরু হয় এবং অধিক বয়সকাল পর্যন্ত চালু থাকে তাদের এ ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। যারা কমপক্ষে ৫ বছর জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়েছেন এবং বাচ্চাদের নিয়মমতো দুধ পান করিয়েছে তাদের এ রোগের ঝুঁকি কম।

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণগুলি হল

যদিও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের সঠিক কারণ জানা যায়নি, গবেষকরা বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণ সনাক্ত করেছেন যা এই ধরণের ক্যান্সার হওয়ার জন্য আপনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেগুলি অন্তর্ভুক্ত:-

জিনতত্ত্ব

আপনার যদি ডিম্বাশয়, স্তন, ফ্যালোপিয়ান নল বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকে তবে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

ব্যক্তিগত চিকিৎসার ইতিহাস

আপনার যদি স্তন ক্যান্সারের ব্যক্তিগত ইতিহাস থাকে তবে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। তেমনি, আপনি যদি প্রজনন সিস্টেমের কিছু শর্ত নির্ণয় করে থাকেন তবে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পক্ষে আপনার প্রতিক্রিয়া বেশি হয়। এই শর্তগুলির মধ্যে পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম এবং এন্ডোমেট্রিওসিস অন্যদের মধ্যে রয়েছে।

প্রজনন ইতিহাস

যেসব মহিলারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করেন তাদের ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে, তবে যারা উর্বরতার ওষুধ ব্যবহার করেন এমন মহিলারা বেশি ঝুঁকি নিয়ে থাকতে পারেন। তেমনি, যে মহিলারা গর্ভবতী হয়েছেন এবং তাদের শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ঝুঁকি কম হতে পারে, তবে যে মহিলারা কখনও গর্ভবতী হননি তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বয়স

বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়; 40 বছরের কম বয়সী মহিলাদের মধ্যে এটি খুব কমই ধরা পড়ে। বাস্তবে, মেনোপজের পরে আপনার ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

জাতিগততা

অ–হিস্পানিক সাদা মহিলাদেরও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। তাদের অনুসরণ করে হিস্পানিক মহিলা এবং কালো মহিলারা।

দেহের আকার:

৩০ বছরের বেশি বডি মাস ইনডেক্সযুক্ত মহিলাদের ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার নিম্নলিখিত মানদণ্ড অনুসারে হয়

স্টেজ 1: ক্যান্সার একটি বা উভয় ডিম্বাশয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্টেজ 2: ক্যান্সার শ্রোণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্টেজ 3: ক্যান্সার পেটে ছড়িয়ে পড়েছে। স্টেজ 4: ক্যান্সার পেটের বাইরে বা অন্য শক্ত অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের স্টেজ

স্টেজ ১: একটি বা উভয় ওভারিতে ক্যান্সার ছড়ানো।  স্টেজ ২: ওভারি থেকে তলপেটের আশেপাশে ছড়িয়ে পড়া । স্টেজ ৩: পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়া ।স্টেজ ৪: সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া সাধারণত ওভারিকে ঢেকে রাখা টিস্যুতে এই ক্যান্সার শুরু হয়। এ কারণে পেটের অন্যান্য অঙ্গ যেমন ব্লাডার, অ্যাবডোমিনাল লাইনিংয়ে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে দ্রুত। আর এরপর তা ছড়াতে পারে ফুসফুস এবং যকৃতেও।

বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যানসার দিবস

৮ ই মে! ‘World ovarian cancer day’! ‘Ovarian cancer’ এখন অস্বাভাবিক বা বিরল কোন রোগ নয়। আমরা প্রায়ই আমাদের আশেপাশে অনেক মহিলাকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখি বা শুনি। বিশ্বব্যাপী এই দিবস টি বেশ তাৎপর্যের সাথে পালন করা হয়! এই দিবস টিকে ঘিরে তাই সারাদিন ব্যাপী প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক ডিভিশন থেকে বেশ কিছু কর্মসূচী পালন করা হয়েছে!

World Ovarian Cancer Day’ নিয়ে সচেতনতামূলক পোস্টার তৈরী করা হয়। এই Ovarian cancer হওয়ার পেছনে কোন ফ্যাক্টরগুলো দায়ী বা প্রাথমিক লক্ষণ কী কী হতে পারে, এসব বিষয়ে আমরা কতটুকুই বা জানি! আবার ক্যান্সার নামটা শুনলেই জীবনে নেমে আসে চরম হতাশা। টার্মিনাল স্টেজ না হলেও মনের কোণে কোথাও যেন উঁকি দেয় মৃত্যু ভাবনা। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই রোগ সারা শরীরে জাল বিস্তার করে ফেলে।

যত দিন যাচ্ছে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ক্যান্সারের নানা প্রকার ভেদ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তা বেরিয়ে যায় হাতের নাগাল থেকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল আমাদের অজ্ঞানতা এবং নিজেদের শরীর সম্পর্কে অবহেলা। নিজের শরীরের প্রতি সামান্য সচেতনতা এবং আরও একটু ভালোবাসাই কিন্তু ওভারিয়ান ক্যান্সারের মতো মরণ রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। অন্তত সঠিক সময়ে চিকিত্‍‌সার সুযোগটুকু পাবেন। এই লক্ষ্যে Ovarian cancer এর পেছনে দায়ী ফ্যাক্টর, প্রাথমিক লক্ষণ এবং Cancer এর stage গুলো নিয়ে সচেতনতা মূলক পোস্টার প্রচার করা হয়।

এই দিবসটি নিয়ে স্যার-ম্যাম দের সচেতনতামূলক উক্তি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সারাদিন ব্যাপী সচেষ্ট থেকেছে প্ল্যাটফর্ম একাডেমিক ডিভিশন। কেননা রোগটি সম্পর্কে সচেতনতার অভাবেই মৃত্যুহার বেশি। পঞ্চাশোর্ধ নারীরাই এই রোগের কবলে পড়েন বেশি । এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে কাজ করে জীবন ধারণ পদ্ধতি এবং জিনঘটিত কারণ।

কোন বয়সে সচেতন হবেন

যেকোনো বয়সের নারীরাই এই ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। সাধারণত ২০ বছরের আগে জার্ম সেল ক্যানসার ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষত ৫৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সে এপিথেলিয়াল ওভারিয়ান ক্যানসারের প্রাধান্য দেখা যায়।

ওভারিয়ান ক্যান্সারের কারণ হতে পারে ট্যালকম পাউডার!

গরম আসছে। আর এ সময় গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই ব্যবহার করেন ট্যালকম পাউডার। কিন্তু প্রসাধনী সামগ্রীর এই জিনিসটি যে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক তা জানা নেই অনেকেরই। এই পাউডার থেকে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ওভারিয়ান ক্যান্সারের।কেন এবং কীভাবে ট্যালকম পাউডার থেকে একজন ব্যক্তি ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন তাই জানিয়েছেন ভারতের এএমআরআই(মুকুন্দপুর)-এর অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান ডা. শুভদীপ চক্রবর্তী।

ট্যালকম পাউডার থেকে কেন ক্যান্সার?

আরবি শব্দ 'ট্যাল্ক' থেকে এসেছে 'ট্যালকম' শব্দটি। ট্যাল্কের আর্দ্রতা শোষণ করার ক্ষমতা বেশি। আর তাই এটি অনেকেই ত্বকের জন্য ব্যবহার করেন। এই ট্যাল্কে ম্যাগনেশিয়াম, সিলিকন এবং কিছু পরিমাণে অ্যাসবেসটস পদার্থ থাকে৷ এই অ্যাসবেসটস থেকেই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।বেশিরভাগ নামি ব্র্যান্ডের পাউডারে প্রচুর মাত্রায় স্টার্চ থাকে। আর এই স্টার্চ শরীরে বিভিন্ন অংশ জমতে জমতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।যাদের ধারণা পাউডার ব্যবহারে সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়, তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পাউডারের সঙ্গে ওভারিয়ান ক্যান্সারের যোগসূত্র সরাসরি। দীর্ঘ দিন ধরে যদি কেউ শরীরের গোপন অংশে পাউডার লাগান, তাহলে একসময় গিয়ে ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়।

সাধারণ হলেও এই লক্ষণগুলিই ওভারিয়ান ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার একটি সমস্যা যা মহিলাদের জরায়ু এবং টিউব ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এতে মহিলার জরায়ুতে ছোট ছোট পিণ্ড (ওভারিয়ান সিস্ট) হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল এর লক্ষণগুলি এতটাই সাধারণ যে মহিলারা বুঝতে পারেন না যে, এটি ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এই কারণে, বেশিরভাগ মহিলারা এর লক্ষণগুলি উপেক্ষা করেন। ক্যান্সা‌র এমন একটি সমস্যা, যা সময় মতো ধরা না পড়লে তা মারাত্মক রূপ নেবে বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অবস্থা আরও মারাত্মক হতে পারে।

জরায়ু ক্যান্সারের সেই সাধারণ লক্ষণগুলি সম্পর্কে জেনে নিন।

অনিয়মিত ঋতুস্রাব

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা আজকাল সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। স্থূলতা, PCOD, থাইরয়েড ইত্যাদির মতো জীবনযাত্রার সমস্ত রোগের কারণে, মহিলাদের অল্প বয়সেই অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা শুরু হয়। তাই তাদের মনোযোগ সে দিকে যায় না যে এটা ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে। কিন্তু যদি আপনার দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা থাকে, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে কোমর ও শ্রোণীর অংশে ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে আপনার এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং পরীক্ষা করানো উচিত।

পেট ফুলে যাওয়া

কিছু মহিলার গ্যাসের সমস্যা থাকে, যার কারণে তাঁদের পেট প্রায়শই ফুলে যায়। মহিলারা প্রায়শই এটিকে স্বাভাবিক বলে এড়িয়ে যান, তবে এই সমস্যাটি যদি দীর্ঘকাল ধরে হয়ে থাকে তবে এটিকে স্বাভাবিক মনে করবেন না। আপনার সময় মতো একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদহজম, অ্যাসিডিটি এবং সহবাসের সময় ব্যথাও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

প্রস্রাবের সময় সমস্যা

প্রস্রাবে জ্বালাভাব, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের সময় মূত্রাশয়ে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যাও মহিলাদের মধ্যে খুব সাধারণ। তবে আপনি যদি প্রায়শই প্রস্রাবের সংক্রমণে ভোগেন তাহলে এটা উপেক্ষা করবেন। এর লক্ষণগুলিও এইগুলির মতো। কিন্তু এমন সমস্যা যদি বারবার হতে থাকে, তাহলে সেটাকে স্বাভাবিক মনে করবেন না। সময় মতো একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে জরায়ু ক্যান্সারের সমস্যা থাকলে তা সময়মতো বোঝা যায় এবং চিকিৎসা করা যায়।

খুব বেশি খেতে না পারা

যদি দেখেন অল্প খেলেই পেট ভরে যাচ্ছে বা বেশি খেতে পারছেন না, এবং এই অবস্থা যদি তিন-চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পেটের নানা সমস্যা কিংবা অবসাদের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। তবে ডিম্বাশয়ে ক্যানসারের ঝুঁকিও কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

শারীরিক দুর্বলতা

অল্প কাজ করেই হাঁপিয়ে যাওয়া, সারা ক্ষণ ক্লান্ত লাগা, মাথা ঘোরা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়েও দুর্বলতা কাটতে না চাওয়া— এগুলি কিন্তু ডিম্বাশয়ের ক‍্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। তাই এমন লক্ষণ দেখা দিলে তা এড়িয়ে না যাওয়াই ভাল।

কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়েরিয়া

এই দুই অসুখ দুই ধরনের হলেও ওভারিয়ান ক্যান্সারে একসাথে দেখা দিতে পারে। যদি এমনটি হয় অথবা এই দুইয়ের কোনো একটি অসুখে দীর্ঘদিন ভুগতে থাকেন তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গোপনাঙ্গে রক্তপাত

যদি মেনোপজের পর হঠাৎ করে রক্তপাত হয় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ এটি শুধু ওভারিয়ান ক্যান্সার নয়, যে কোনো ক্যান্সারের অন্যতম একটি লক্ষণ।

নারীর ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার বুঝবেন যেসব লক্ষণ

এই ক্যানসার প্রথম দিকে সনাক্ত করা যায় না। অধিকাংশ রোগীই টের পান না তিনি এই ক্যানসারে ভুগছেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত পেলভিক জোনে ও পেটে না ছড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বোঝা যায় না। ডিম্বাশয় ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ খুব সূক্ষ্ম হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায় ব্যথাহীন হয়। এ কারণে এই রোগ শনাক্তে দেরি হয়ে যায়।

জেনে নিন ওভারিয়ান ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো-

১. ডিম্বাশয়ে ক্যানসারে হলে খাদ্য হজম প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়।ফলে ক্ষুধামান্দ্য হয় ও পেট ভরা ভরা লাগে সবসময়। হঠাৎ করে ক্ষুধা কমে যাওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। ২. কোমরের নীচের দিকে দীর্ঘদিন ধরে চিনচিন করা ব্যথা হলে তা ডিম্বাশয় ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।৩. ওভারিয়ান ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ হল অনিয়মিত মাসিক। আবার যোনি পথে হঠাৎ রক্তপাত হওয়াও ভালো লক্ষণ নয়। তবে অনেক সময় ডিম্বাশয়ের সিস্টের জন্যও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।৪ কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয় এক্ষেত্রে। ডিম্বাশয়ের টিউমার ফুলে উঠে পেট, অন্ত্র, ব্ল্যাডার বা মূত্রথলিতে চাপ দিতে থাকলে এই সমস্যাগুলো হতে পারে। দীর্ঘদিন এমন সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৫. এছাড়াও হঠাৎ ওজন কমতে শুরু করা, ঘন ঘন প্রস্রাব, পেলভিস এরিয়ায় ঘন ঘন ব্যথা, যোনি পথের আশেপাশের চামড়ার রং পরিবর্তন বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।৬. ওভারিয়ান ক্যানসারের আরও কিছু লক্ষণ হলো- সাদা স্রাব নিঃসরণ, বেশি সময় ধরে তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদি।

ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে কেন?

অনিয়মিত মাসিক, গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন, একাধিক গর্ভধারণ ও অল্প বয়সে গর্ভাবস্থা হলে এ ক্যনসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আবার কিছু কিছু মেডিসিন ব্যবহারেও ডিম্বাণুতে টিউমার হতে পারে।যাদের প্রজনন অক্ষমতার জন্য হরমোনাল চিকিৎসা নিতে হয় তাদের ডিম্বাশয় ক্যানসারের জন্য ঝুঁকি থাকে। মেনপোজের আগে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।পরিবারের কারও যদি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ডিম্বাশয়ের ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো হচ্ছে-

১.অসচেতনতা, অশিক্ষা, অবৈজ্ঞানিক পন্থার ওপর নির্ভরশীলতা ইত্যাদির কারণে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব ঘটে। ২.গাইনি অনকোলাজিস্টের অপ্রতুলতা। ৩.ফ্রোজেন সেকশন বায়োপসি বা তাৎক্ষণিক বায়োপসি, এ রোগের অপারেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতালেই এর ব্যবস্থা নেই। ৪.কোমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি বা টার্গেটেড থেরাপির মূল্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাগালের বাইরে। ৫. জেনেটিক টেস্টিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জিন ল্যাব আমাদের দেশে নেই।

গ‍্যাসের সমস‍্যা ভেবে ডিম্বাশয়ের ক‍্যানসার এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো

মহিলাদের মধে ডিম্বাশয়ের ক‍্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে ক্রমশ। ডিম্বশয়ে ক্যানসার যতটা জটিল রোগ, ঠিক ততটাই ভয়াবহ এর চুপিসাড়ে ছড়িয়ে পড়া। অধিকাংশ মহিলাই যে লক্ষণগুলি সাধারণ পেটের সমস্যা বা হজমের গন্ডগোল ভেবে গুরুত্ব দিতে চান না, সে থেকেই হতে পারে বিপদ। ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। চিকিৎসকদের মতে, ঋতুবন্ধের পর ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি আরও বাড়ে। তাই সে ক্ষেত্রে আরও বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সতর্ক হন এর লক্ষণগুলি সম্পর্কে।কিছু খেলেই কি গ‍্যাস হয়ে যায়? তলপেটে ব‍্যথা, বমি বমি ভাব, পেটে অস্বস্তির মতো সমস‍্যা প্রায়ই হয় অনেকের। গ‍্যাসের সমস‍্যা ভেবে অনেকেই এই উপসর্গগুলি এড়িয়ে চলেন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এগুলি ডিম্বাশয়ের ক‍্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

যেসব পেশার সঙ্গে যুক্ত নারীদের হতে পারে ওভারিয়ান ক্যানসার

ওভারিয়ান ক্যানসার বা ডিম্বশয়ের ক্যানসার তেমন কোনও লক্ষণ ছাড়াই চুপিসারে ছড়িয়ে পড়ে দেহের অভ্যন্তরে। কারা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন আর কারা হবেন না- এ কথা চোখে দেখে বলা মুশকিল। তবে কিছু পেশা রয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত নারীদের এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।চিকিত্সকদের মতে, ঋতুবন্ধের পরে ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে।

তাই সে ক্ষেত্রে আরও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। তবে কারা, কখন ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা ছিল না কারও। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এমন কিছু পেশা রয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত নারীদের এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। ‘অকুপেশনাল এবং এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য।

সেখানে বলা হয়েছে, হিসাবরক্ষক এবং রূপচর্চার সঙ্গে যুক্ত নারীদের ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তবে যাঁরা দোকানে কাজ করেন, কাপড় নিয়ে কোনও ধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বা নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরও এই তালিকার বাইরে রাখা যায় না। গবেষণা বলছে, এ সব ক্ষেত্রে অ্যামোনিয়া, প্রপেলান্ট গ্যাস, পেট্রোল এবং ব্লিচের ব্যবহার বেশি। এ সব উপাদানই ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের মূলে।গবেষকরা বলছেন, ২০১০ থেকে ২০১৬ এই ছ’বছরে ১৮ থেকে ৭৯ বছর বয়সি নারীদের মধ্যে করা সমীক্ষা শেষে দেখা গেছে, প্রায় ৫০০ জন নারীর সঙ্গে গবেষকদের করা সমীক্ষার ফল মিলে যাচ্ছে।কেউ কেউ বলছেন, দশ বছর বা তার বেশি সময় ধরে রূপচর্চার সঙ্গে যুক্ত নারীদের এই ক্যানসারে আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি। পাশাপাশি, যাঁরা ওই একই সময়কাল ধরে হিসাবরক্ষকের কাজ করেছেন, তাঁদের এই আশঙ্কা দ্বিগুণ।

ডিম্বাশয়ের ক্যানসারকে (Ovarian Cancer) কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার জটিল। এটি খুঁজে পাওয়া শক্ত এবং মহিলা প্রজনন সিস্টেমে অন্য কোনও ক্যান্সারের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণগুলি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তাই এটি প্রতিরোধের উপায়গুলির দীর্ঘ তালিকা নেই।যদি আপনার পারিবারিক ইতিহাস কোনও উচ্চতর ঝুঁকির দিকে নির্দেশ করে তবে আপনার চিকিৎসা আপনার পরিস্থিতি পরিচালনা করার জন্য আপনাকে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে। বিকল্পগুলির মধ্যে জিনগত পরীক্ষা এবং পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদি আপনার ঝুঁকি বেশি থাকে তবে আপনি সাবধানতা হিসাবে আপনার ডিম্বাশয় অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই অস্ত্রোপচারটিকে প্রফিল্যাকটিক ওফোরেক্টোমি বলা হয়।

ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণে হবে ডিম্বাশয় ক্যান্সার  রোধ

ডিম্বাশয় ক্যান্সার শনাক্তে কার্যকর কোনো স্বাস্থ্যপরীক্ষা এখনও নেই। অনেকে জিনগত কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। যদি সন্তান ধারণের আর কোনো পরিকল্পনা না থাকে এবং বয়স চল্লিশের আশপাশে হয়, তাহলে ডিম্বাশয় ও ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।একটি শীর্ষ স্থানীয় গবেষণা সংস্থার বরাতে এ তথ্য জানাচ্ছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম্বাশয় নয়, ক্যান্সারের উৎস ফ্যালোপিয়ান টিউব। এমনকি যাদের জিনগত ঝুঁকি নেই, তাদেরও অস্ত্রোপচার করে ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেলে দিতে বলছে ওভারিয়ান ক্যান্সার রিসার্চ অ্যালায়েন্স।ফ্যালোপিয়ান টিউব ডিম্বাশয় থেকে জরায়ু পর্যন্ত দীর্ঘ একটি নালী। অপসারণ করা মানে, এই নালী কেটে ফেলে দেবেন চিকিৎসকরা; তবে ডিম্বাশয় ও জরায়ু অক্ষত থাকবে।ডিম্বাশয় বিশেষ ধরনের হরমোন ‍উৎপাদন করে যা নারীর পরবর্তী জীবনে হৃদরোগ, অস্টিওপোরোসিস এবং যৌন অনাগ্রহের ঝুঁকি কমাতে কাজে দেয়।

ওভারিয়ান ক্যান্সার রিসার্চ অ্যালায়েন্স সংস্থার সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী অড্রা মোরান বলেন, ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে কম হয়।”সাধারণত মানুষকে এ নিয়ে খুব একটা বলাও হয় না। এখন তাই আমরা চাই, সবাই এ ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে জানুক। একই সঙ্গে ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার হলে করণীয় নিয়েও জানা দরকার।”যদি শরীরে রূপান্তরিত জিন বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ থাকে, তবে ডিম্বাশয় এবং স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

তাই শরীরে বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ উপস্থিত কিনা জানতে এই গবেষক দল বিনামূল্যে পরীক্ষা করার যন্ত্র দিচ্ছে আগ্রহী নারীদের।“ক্যান্সারের বাহক জিন থেকে মুক্ত হতে চাইলে ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেলে দেওয়াই হবে প্রাথমিক করণীয়,” বললেন মোরান।যদিও ডিম্বাশয় ক্যান্সার রয়েছে এমন বহু নারীর শরীরে রূপান্তরিত জিন বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ পাওয়া যায়নি।ব্রিটেনে বহু উপাত্ত নিয়ে দেখা গেছে, স্ক্যান ও রক্ত পরীক্ষা করেও ডিম্বাশয় ক্যান্সার গোড়ার দিকে শনাক্ত করা যায় না। ফলে বহু জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় না।

তবে আগেভাগে শনাক্ত হলেই যে মৃত্যুঝুঁকি এড়ানো যাবে, এমন আশ্বাসও দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সারের চিকিৎসকদের সংস্থা দ্য সোসাইটি অফ গাইনোকোলজিক অনকোলজি এখন চাইছে, জিনগত পরীক্ষা আরও সহজলভ্য করা হোক।পাশাপাশি জিনগত ঝুঁকি নেই– এমন নারীর বেলাতেও প্রতিষেধক হিসেবে ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণ করতে জোর দিচ্ছেন এই চিকিৎসকরা।এতে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে। আবার মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রে জন্য ডিম্বাশয়ের সামান্য পরিমাণ হরমোন উৎপাদনেও বিঘ্ন হবে না।দ্য সোসাইটি অফ গাইনোকোলজিক অনকোলজি সংগঠনের সভাপতি স্টেফানি ব্ল্যাংক বলেন, ”বিষয়টি এখনও পরীক্ষাধীন হলেও এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে।

”শুধু টিউব অপসারণ যদিও একই সঙ্গে টিউব ও ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়ার মত কার্যকর নয়, তবে স্বাস্থ্যপরীক্ষার উপর ভরসা করার চেয়ে ভালো। কারণ পরীক্ষায় কিছু ধরা পড়ে না।”আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিল ডাহুট বলেন, ”বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিচ্ছেন, তার পেছনে অসংখ্য উপাত্ত রয়েছে। দেখা গেছে যারা অস্ত্রোপচার করে এই অপসারণে গেছেন, তাদের বেলায় ডিম্বাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কমে গেছে।”আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুসারে, নারীর ক্যান্সারে মৃত্যুঝুঁকির তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার। নারীর প্রজননতন্ত্রের যে কোনো ক্যান্সারের চেয়ে ডিম্বাশয় ক্যান্সারে আক্রান্তদের মৃত্যুহার বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১৯ হাজার ৭১০ জন নারীর ডিম্বাশয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর মধ্যে ১৩ হাজার নারীর পরিণতি হয় মৃত্যু। নীরব ঘাতক এই রোগ খুব কম ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে।স্তন ক্যান্সারের তুলনায় ডিম্বাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অবশ্য কম; তবে এই অসুখে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম।যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর দুই লাখ ৬৪ হাজার নারী এবং দুই হাজার চারশ পুরুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।ব্ল্যাংক বলেন, ”৩৫ থেকে ৪০ বছরে বয়সে রূপান্তরিত জিন বিআরসিএ১ থাকলে এবং ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সে রূপান্তরিত জিন বিআরসিএ২ থাকলে ফ্যালোপিয়ান টিউব ও ডিম্বাশয় দুটোই অপসারণ করা হয়।”

চিকিৎসকরা ধরে নেন, এই বয়সের মধ্যে ওই নারী তার পরিবারে কাঙ্খিত সন্তান জন্ম দিয়েছেন।মিনেসোটা রাজ্যের সেইন্ট পল শহরের মনিকা মনফ্রে স্ক্যানটেলবারির বয়স ৪৫ বছর। ২০১৭ সালে তার ২৭ বছর বয়সী বোনের চতুর্থ পর্যায়ের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ওই সময় মনিকা মনফ্রে জানতে পারেন তার শরীরে রয়েছে বিআরসিএ১ জিন।যদিও তাদের মায়ের এই জিন ছিল না। এর অর্থ প্রয়াত বাবার থেকে এই জিন এসেছে। মনিকা মনফ্রে স্ক্যানটেলবারির বাবার মা ৪০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সারে ভুগে।

এক সাক্ষাৎকারে স্ক্যানটেলবারি বলেন, পরিবারে হৃদরোগ নিয়ে কথাবার্তা হলেও নারীর ক্যান্সার নিয়ে ছিল শুধু কানাঘুষা।২০২০ সালে বোনকে হারান স্ক্যানটেলবারি। এরপর নিজের ফ্যালোপিয়ান টিউব ও একটি ডিম্বাশয় ফেলে দেন তিনি। সেসময় তার ডিম্বাশয় কিছুটা স্ফীত হয়ে উঠছিল।আমি তখন ৪০ ছুঁই ছুঁই। আমার স্তন ক্যান্সার হল কি না তা নিয়ে চিকিৎসক এতো চিন্তিত ছিলেন না। বরং তার ‍উদ্বেগ ছিল ডিম্বাশয় ক্যান্সার হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা নিয়ে।”কিছুদিনের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে স্ক্যানটেলবারি জানতে পারেন, অপসারণ করা তার দুটো টিউবের একটির কোষে ‍পরিণত পর্যায়ের ডিম্বাশয় ক্যান্সার মিলেছে।এরপর জরায়ু, জরায়ুমুখ এবং ডান ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অবশ্য সহজ ছিল না বলে জানান স্ক্যানটেলবারি। তিনি বলেন, “কোনো সন্তান জন্ম দেব না এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল আমাকে; যা ভীষণ কঠিন ছিল।“আমি এখনও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছি। দাদির পরই আমার নাম আসে। কিন্তু অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করার কারণে দাদির মত মৃত্যু দেখতে হয়নি আমাকে।”কোনো রোগীর পেলভিক অপারেশনের সময় ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেলে দেওয়া যেতে পারে; একে সালপিনগেক্টমি বলে।ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে রোগীর সেবায় সাধারণত এমন করা হয় বলে জানালেন স্ত্রীরোগ ক্যান্সার সেবার সাবেক প্রধান ডায়ান্নে মিলার।

তিনি বলেন, “১৫ বছর আগেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে ডিম্বাশয় নয়, চূড়ান্ত পর্যায়ের এই ঘাতক রোগটির সূতিকাগার হচ্ছে ফ্যালোপিয়ান টিউব। আর এখান থেকে তারা দ্রুত ছড়িয়ে যায় শরীরে।“নারীর তলপেটে ব্যথার মত উপসর্গ দেখা দেওয়া শুরু হলে বুঝতে হবে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে।”যেসব নারী ডিম্বাশয় ক্যান্সারের মাঝামাঝি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের উদ্দেশে মিলার বলেন, ”ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেলে দেওয়া হবে উভয় কূল রক্ষা করে জিতে যাওয়ার মত।”

লজ্জা যেন না হয় ক্ষতির কারণ

নিজেদের শরীর বিশেষ করে লজ্জাস্থানগুলোতে জমাট বাঁধা অযাচিত চাকা বা টিউমারগুলোর কথা তারা কারো সঙ্গে শেয়ার করেন না। এমনকি শেয়ার করেন না তার স্বামীর সঙ্গেও। প্রথম লজ্জা তারপর তা কেটে ফেলার ভয় কাজ করে প্রবলভাবে। এছাড়া চিকিৎসাব্যয়ের কথা তো আছেই। এমন নানাবিধ কারণে তারা শরীরে জিইয়ে রাখে টিউমার। আর সেই টিউমার একসময় লাজ-লজ্জার বালাই উতরে হয়ে ওঠে ক্যানসার।

ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন বলছে, বর্তমানে যেমন আছে, সেভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ শুধু ওভারিয়ান ক্যানসারেই প্রাণ হারাবে! কী ভয়ানক তথ্য! এরপরও কি আমাদের টনক নড়বে না?ক্যানসার আক্রান্তের পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে নিলে বোঝাই যায় কিভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্যানসারের প্রকোপ। নারী-পুরুষ সমানে সমান এই একটি জায়গায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীরা ভুগছে বেশি। মূলত, তারা ভোগে স্তন, জরায়ু ও ওভারির ক্যানসারে। যার কারণ অসচেতনতা-লজ্জা, ভয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

২০১০ সালে আমার জীবনেও ক্যানসার শব্দটি এসেছিল। মা আক্রান্ত হয়েছিলেন ওভারিয়ান ক্যানসারে। আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ওভারিয়ান ক্যানসার দিবস তাই লিখতে বসলাম কিছু অভিজ্ঞতার কথা।আমাদের মায়েদের শরীরের ব্যাপারে সামাজিকভাবেই অনেক লজ্জা কাজ করে, ভয় কাজ করে। মধ্যবিত্ত আর নিন্ম মধ্যবিত্তদের জন্য এই লজ্জার পারদটা একটু বেশিই। নিজেদের শরীর বিশেষ করে লজ্জাস্থানগুলোতে জমাট বাঁধা অযাচিত চাকা বা টিউমারগুলোর কথা তারা কারো সঙ্গে শেয়ার করেন না। এমনকি শেয়ার করেন না তার স্বামীর সঙ্গেও। প্রথম লজ্জা তারপর তা কেটে ফেলার ভয় কাজ করে প্রবলভাবে। এছাড়া চিকিৎসাব্যয়ের কথা তো আছেই। এমন নানাবিধ কারণে তারা শরীরে জিইয়ে রাখে টিউমার। আর সেই টিউমার একসময় লাজ-লজ্জার বালাই উতরে হয়ে ওঠে ক্যানসার।

আর সেকারণেই ক্যানসার অনেক পরিণত হয়ে ধরা পড়ে আমাদের মা-বোনদের শরীরে। তখন চিকিৎসাপদ্ধতি এবং ব্যয় উভয়ই চলে যায় নাগালের প্রায় বাইরে। কিন্তু যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরে ফেলা যেত তবে কিন্তু কোনো ভোগান্তিই পোহাতে হতো না। মাত্র ২০ টাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে হয় টিউমার টেস্ট। ঝুঁকিপূর্ণ টিউমার ফেলে দিতেও তেমন একটা খরচ হয় না। আর হলেও তা ক্যানসার চিকিৎসার চেয়ে অনেক সহজলভ্য। অনেকের তো শুধু মুখে খাওয়ার ওষুধেই সেরে যেতে পারে ক্যানসার।এখন তো প্রায় সব বিভাগীয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় আছে ক্যানসার ইউনিট। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যয়বহুল ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধগুলোও বিতরণ হচ্ছে প্রায় বিনামূল্যে। তাই ক্যানসারকে আর ভয় নয়।

একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন, আমাদের মতো দেশের মানুষের জন্য ক্যানসারের আর্লি ডিটেকশনের কিন্তু আসলে কোনোই বিকল্প নেই। এর জন্য চাই একটু সচেতনতা আর পাশের মানুষের সহযোগিতা। যেকোনা টিউমারকে অবহেলা করা উচিত নয়। জানানো উচিত কাছের মানুষকে, আর তারপর সময় নষ্ট না করেই নেয়া উচিত চিকিৎসা। এতে করে শুধু আপনিই বাঁচবেন না বেঁচে যাবে পুরো পরিবার। ক্যানসার চিকিৎসায় কত শত পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পরিবারের আপনজনের কথা ভেবে হলেও আসুন সচেতন হই।প্রতিটি পরিবারের নারীদের মন খুলে কথা বলার পরিবেশ তৈরি করি। তাদের চিকিৎসায় অধিক মনযোগী হই। ছোট্ট খানিকটা লজ্জা অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারলেই আমরা জয় করতে পারব ক্যানসারকে। আসুন আমরা ‘লজ্জা-শরমকে দূরে ঠেলি, ক্যানসারকে চিনে ফেলি- শুরুতেই’। পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলি সুন্দর একটা জীবন।

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার (Ovarian Cancer) নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত পরীক্ষা ও পদ্ধতি

শ্রোণী পরীক্ষা  (Pelvic examination):

শ্রোণী পরীক্ষার সময় আপনার ডাক্তার আপনার যোনিতে গ্লাভড আঙ্গুলগুলি সন্নিবেশ করেন এবং আপনার পেলভিক অঙ্গগুলি অনুভব করার জন্য তলপেটের সাথে সাথে আপনার পেটে অন্য একটি হাত চাপ দেয়। ডাক্তার আপনার বাহ্যিক যৌনাঙ্গে, যোনি এবং জরায়ুর দৃষ্টিও পরীক্ষা করে।

ইমেজিং পরীক্ষা  (Imaging test )

আপনার পেটের এবং শ্রোণীগুলির আল্ট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যানগুলির মতো টেস্টগুলির সাহায্যে আপনার ডিম্বাশয়ের আকার, আকার এবং গঠন নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে।

রক্ত  পরীক্ষা  (Blood Test)

রক্ত পরীক্ষায় অঙ্গের ফাংশন পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। আপনার ডাক্তার আপনার রক্তের টিউমার চিহ্নিতকারীগুলির জন্যও পরীক্ষা করতে পারেন যা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার নির্দেশ করে।

সার্জারি (Surgery):

ডিম্বাশয় অপসারণের জন্য সার্জারি এবং ক্যান্সারের লক্ষণগুলির জন্য পরীক্ষা না করা পর্যন্ত কখনও কখনও আপনার ডাক্তার আপনার নির্ণয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন না।

ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশনে প্রথম বাংলাদেশি পরিচালক আদেল

ক্যানসার সচেতনায় অনবদ্য অবদান রাখায় আদেলকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন পরিচালনা পর্ষদের প্রধান এলিজাবেথ বাঘ।উল্লেখ্য, রাফে সাদনান আদেল ২০১৪ সালে তার ক্যানসার আক্রান্ত মাকে হারান এবং একই বছর ক্যানসার বিষয়ক প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট ক্যানসারবিডি ডট নেট (www.cancerbd.net) প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রাথমিকভাবে ক্যানসারবিডি ডটকম নামে শুরু হয়েছিল। শুরু থেকেই এই সাইটটি বাংলা ভাষায় ক্যানসার সচেতনতা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে আসছে।

এই সাইটটিতে বাংলা ভাষায় ক্যানসার সংক্রান্ত বাংলাদেশে অপ্রতুল বিভিন্ন তথ্য যেমন ক্যানসারের প্রকার, লক্ষণ, ডায়াগনোসিস, চিকিৎসা কেন্দ্রের তথ্যসহ চিকিৎসকদের তালিকা ও ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের খবর সরবরাহ করছে। এছাড়াও ক্যানসারবিডি ডট নেটের উদ্যোগে ক্যানসার সচেতনতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়েবিনার, মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়ে থাকে। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় সংগঠনটির উদ্যোগে ক্যানসার আক্রান্তদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে কয়েক দফায়।

আদেলকে পরিচালক হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্লারা ম্যাকেই বলেন, ‘মা’কে ওভারিয়ান ক্যানসারে হারানোর কারণে এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আদেলের মধ্যে বিদ্যমান সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মনোভাব সত্যি অনন্য। সেই সঙ্গে তার দুর্দান্ত যোগাযোগ দক্ষতা ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশনকে আরো শক্তিশালী করবে বলে মনে করি। প্রতিটি নারীর জন্য ওভারিয়ান ক্যানসারের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনে আমরা আদেলের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’

ক্যানসারবিডি ডট নেটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন রাফে সাদনান আদেল বলেন, ‘ওভারিয়ান ক্যানসার আক্রান্ত মাকে বাঁচাতে পারিনি, আমার জীবনের সেরা এই ব্যর্থতার গ্লানিকে মুছে দেওয়ার দারুণ একটা সুযোগ দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েই আমি সারা বিশ্বের সব নারী বিশেষ করে এশিয়ার নারীদের ওভারিয়ান ক্যানসার সচেতন করে তোলার ব্রত নিয়ে কাজ করতে চাই।

ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

বর্তমানে বাংলাদেশে ওভারিয়ান ক্যান্সারের হার উদ্বেগজনক। নারীর প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সারসমূহের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের পরেই ওভারিয়ান ক্যান্সারের অবস্থান। এই ক্যান্সার ডিম্বাশয়কে সংক্রমিত করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত পেলভিক জোনে (শ্রোণি এলাকা) ও পেটে না ছড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝা যায় না। এই ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ একেবারে নাই বললেই চলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা হয় না। তারপরও যে লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয় তার একটি হলো- ক্ষুধামন্দা।

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের(Ovarian Cancer) বেঁচে থাকার হার

এপিথেলিয়াল ওভারিয়ান ক্যান্সার স্ত্রীরোগ ক্যান্সারের সবচেয়ে মারাত্মকতম ঘটনা। প্রায় 80% রোগী শেষ পর্যন্ত এই রোগে মারা যায়। আইপি কেমোথেরাপি যোগ করার সাথে সাথে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের বেঁচে থাকার বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত করা হয়েছে।সমীক্ষা অনুসারে,যদি কোনও রোগী আইপি কেমোথেরাপি অনুসরণ করে সর্বোত্তমভাবে আত্মপ্রকাশ করে, তবে তাদের ছয় বছর বেঁচে থাকার 50% এরও বেশি সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য উন্নত পর্যায়ের ক্যান্সারের তুলনায় এটি বেশ ভাল। এমনকি বারবার সংমিশ্রণে,এপিথিলিয়াল ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রায়শই কেমোথেরাপির প্রতি খুব সংবেদনশীল হয়। এই রোগটি প্রায়শই সম্পূর্ণ লাঘব হয়না কোনও সনাক্তকরণযোগ্য রোগ নয়)।

যাইহোক,একবার এটি পুনরুক্ত হয়,এটি নিরাময়যোগ্য নয় এবং ফিরে আসতে থাকবে, যদিও ওষুধগুলি বার বার ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে পারে এবং দীর্ঘায়ু বেঁচে থাকতে পারে। জার্ম সেল এবং স্ট্রোমাল টিউমারগুলির আরও অনেক ভাল প্রাক-রোগ নির্ধারণ হয়। এগুলি প্রায়শই নিরাময় হয় কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে তারা প্রায়শই সনাক্ত করা হয়।

ওভারিয়ান ক্যান্সার’ নিরাময়ে চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে

এদেশে এই রোগের ক্রমবর্ধমান বিস্তার মোকাবেলা করতে হলে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের নবীন-প্রবীণ চিকিৎসক, বিশেষ করে গাইনি চিকিৎসকদের আরও কার্যকর ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি চিকিৎসকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির যে কোন উদ্যোগে সহযোগিতা ও সব ধরণের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এগিয়ে দিতে হবে।

চিকিৎসা সম্ভাবনা

দেহের ক্যানসার প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার নিমিত্তে এবং ক্যানসার কোষের পুষ্টি সরবরাহ ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে কিছু এন্টিবডি ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী এক নতুন ধরনের ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, যা জিনগত ত্রুটিসম্পন্ন ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে কার্যকর। এগুলোকে বলা হয় টার্গেটেড থেরাপি। এটা ইমিউনো থেরাপি নামেও পরিচিতি। প্রায় দুই দশক আগে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে কিছু জিনগত ত্রুটির সম্পর্ক নির্ণয় হয়েছে।


তথ্যসুত্র

ওভারিয়ান ক্যান্সার’ নিরাময়ে চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে, Bangla News24.

নারীর ডিম্বাশয় ক্যানসার, Prothom Alo.

ফ্যালোপিয়ান টিউব অপসারণে হবে ক্যান্সার রোধ, BD News24.

ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, Bangla News24.

ওভারিয়ান ক্যান্সারের কারণ হতে পারে ট্যালকম পাউডার, Odhikar.

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ, News30days.

বিশ্বব্যাপী এই দিবস টি বেশ তাৎপর্যের সাথে পালন করা হয়, Platfrom.

ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার, Dhakapost.

নারীর ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার বুঝবেন যেসব লক্ষণ দেখে, Totka24xp.

বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যানসার দিবস, News Bangla24.

নারীদের হতে পারে ওভারিয়ান ক্যানসার, News24 Bd.

ডিম্বাশয়ের ক‍্যানসার, Ananda Bazar.

ডিম্বাশয়ের ক্যানসার : চিকিৎসাব্যবস্থা, Jugantor.

লক্ষণগুলিই ওভারিয়ান ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়, Tv9 Bangla.

নারীদের ওভারিয়ান ক্যানসার কেন হয়, Jago News24.

ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার সম্পর্কে যা জানা জরুরি, BBC.