অধ্যবসায় (Perseverance)

কেন পান্থ ক্ষান্ত হও, হেরি দীর্ঘ পথ
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ ?
শুধু অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে। জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে দূর করেছে আঁধার, বিমান আবিষ্কার করে জয় করেছে আকাশ, রকেটের সাহায্যে অর্জন করছে চন্দ্র বিজয়ের গৌরব। আর এসব সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে মানুষের যুগ যুগান্তরের সাধনা, তাঁর অবিরাম অধ্যবসায়।একদিনে সাফল্য আসে না। জীবনে ব্যর্থতা থাকবে। ব্যর্থতা না থাকলে সাফল্য লাভের তৃপ্তি নেই। বিশ্বখ্যাত লেখক ও মোটিভেটর ডেল কার্নেগী বলেছেন -
“ব্যর্থতার ছাই থেকে সাফল্যের প্রাসাদ গড়ো। হতাশা আর ব্যর্থতা হলো সাফল্যের প্রাসাদের দুই মূল ভিত্তি”
অধ্যবসায়’ শব্দের অর্থ অবিরাম সাধনা। কোনাে কাজে সফল হওয়ার জন্যে মানুষের ক্রমাগত যে চেষ্টা তার নামই অধ্যবসায়। মানব চরিত্রের যেসব গুন জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে অধ্যবসায় তার মধ্যে অন্যতম।এ অনন্য গুনের সাহায্যে অসাধ্য সাধন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায় হলাে এক ধরনের মানসিক বল। যার মানসিক বল যত বেশি, সে তত বেশি অধ্যবসায়ী। পরাজয় কখনও অধ্যবসায়ীর পথে বাধা হতে পারে না।
পারিব না এ কথাটি বলিও না আর,
পারো কি না পারো করো যতন আবার,
একবার না পারিলে দেখো শত বার।
জীবন সংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র হচ্ছে অধ্যবসায়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জীবন কর্মের মধ্য দিয়ে রেখে গেছেন অপুর্ব নিদর্শন । শুধু অধ্যবসায়ের গুনেই রবীন্দ্রনাথ , নজরুল , প্রমুখ মনীষীগন বিশ্বখ্যাত হয়ে আছেন। অধ্যবসায়ের আর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে • স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রস। এক মাকড়সার বার বার ব্যর্থ চেষ্টার পর তার সফলতা দেখে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের সাথে সপ্তমবারের যুদ্ধে জয়লাভ করেন।বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও সাফল্য লাভের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা চাই আর সেগুলো হলো উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা। এর সবকিছুর সমন্বয় হলো অধ্যবসায়।প্রতিটি সফল জীবন এক অর্থে অধ্যবসায়েরই চালচিত্র। তাই ছােটবেলা থেকে প্রত্যেকের উচিত এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া।ভারতীয় পন্ডিত, সাধক, ও লেখক স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন -
“একটি লক্ষ্য ঠিক করো। সেই লক্ষ্যকে নিজের জীবনের অংশ্ বানিয়ে ফেলো।
চিন্তা করো, স্বপ্ন দেখো। তোমার মস্তিষ্ক, পেশী, রক্তনালী – পুরো শরীরে সেই লক্ষ্যকে ছড়িয়ে দাও,
আর বাকি সবকিছু ভুলে যাও। এটাই সাফল্যের পথ।”
নেপােলিয়ন বােনাপার্ড তার কর্মকান্ডে অপুর্ব নিদর্শন রেখে গেছেন। তিনি বলেছেন,
Impossible is a word which is only found in the dictionary of a fool.
বর্তমান পৃথিবী আধুনিক সভ্যতার ধারক। পৃথিবীর মানুষ একদিনে এ অবস্থায় উপনীত হয়নি। গুহাবাসী মানবজাতি হাজার বছরের সাধনা দিয়ে সাজিয়েছে তার প্রিয় আবাস এ পৃথিবীকে । শত-সহস্র বিরুদ্ধ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষ আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে । নিরলস সাধনা আছে বলেই মানুষ ছুটে চলেছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। নাসা হাউজে বসে রিমােট কনট্রোলে মহাশূন্যে নভােযান পাঠাচ্ছে মানুষ। নভােযান কর্তৃক প্রেরিত নানা রকম ছবি কৌতুহল মেটাচ্ছে মানুষের । এ সব কিছুর পেছনে আছে বহু বছরের পরিশ্রম। কত কত নভােযান মহাশূন্যেই বিলীন হয়েছে । কত আকাশচারীই মহাশূন্যের সীমা খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। কিন্তু মানুষ পরাজয় মানতে রাজি নয় । মানুষ দূর চাদের ধুলােয় এঁকে দিয়েছে তার পদচিহ্ন। মঙ্গলের মাটি খুঁড়ে নভােযান ফিনিকু পৃথিবীবাসীর জন্যে বয়ে এনেছে নতুন বার্তা । নিয়ত বৈরী পরিবেশকে ডিঙিয়ে জয়ী হবার পুনঃপুন এ প্রচেষ্টাই অধ্যবসায়। পৃথিবী আজ এত সাজে সজ্জিত এ অধ্যবসায়েরই ফলে। আমাদের মধ্যে নেই কোনো প্রচেষ্টা, নেই পরিশ্রম করার প্রবনতা, নেই সাফল্য লাভের ইচ্ছা। বিশ্বখ্যাত লেখক ও মোটিভেটর ডেল কার্নেগী বলেছেন -
“যার মাঝে সীমাহীন উৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে,
তবে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি”
উন্নত বিশ্ব কর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর কর্মের সঙ্গে অধ্যবসায়ের রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্ক। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ আরো কয়েকটি দেশ সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেছে।জীবনে চলারপথ কুসুমাইস্তীর্ণ নয়। জীবনের পথপরিক্রমায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আর এই সমস্যা মােকাবিলার উপায় অধ্যবসায় অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। যে অধ্যবসায়ী নয়, তার দ্বারা কোনাে মহৎ কাজ সম্ভব নয়।
অনেকে প্রতিভার স্তুতি গাইতে গিয়ে প্রতিভাকে অধ্যবসায়ের ওপর স্থান দেন। বস্তুত সত্য হচ্ছে-প্রতিভা নয়, বরং অধ্যবসায়ই সাফল্যের চাবিকাঠি। যদি এমন কেউ থাকে যে কি না অধ্যবসায়হীন অথচ নিজকে প্রতিভাবান দাবি করে আলস্যে গৃহকোণে পড়ে থাকে তবে তাকে জ্ঞানী বলাই হবে অজ্ঞানীর কাজ। জগতের সকল কীর্তিমানই স্বীকার করেছেন তাদের কৃতকার্যের পেছনে কেবল প্রতিভা ছিল না, ছিল কঠোর অধ্যবসায়ও।আসলে যেকোনো কাজের জন্যে চাই নিরলস পরিশ্রম আর এর মাধ্যমেই বিকশিত হবে প্রতিভা।এ বিষয়ে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার এর উক্তিটি উল্লেখযোগ্য -
"প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও , তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।"
যেকোনাে কাজে সফলতা অর্জনের জন্য চাই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া কোনাে কাজে সফল হওয়া যায় না। ইতিহাসের পাতায় যারা আজও অমর হয়ে আছেন, তারা অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই সফল হতে পেরেছিলেন। তারা ব্যর্থতাকে জয় করে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়কেই জীবনের একমাত্র অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।পরিশ্রম ও অধ্যবসায় এক সূত্রে গাঁথা। অধ্যবসায়হীন মানুষ পঙ্গু। জীবনে সাফল্য নিজ হাতে ধরা দেয় না। বিশ্বখ্যাত আইরিশ কবি, লেখক ও নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন -
"সাফল্য একটি বিজ্ঞান। সঠিক উপাদান মেশালে তুমি সঠিক ফলাফল পাবে"
আর সঠিক উপাদানটি হলো অধ্যবসায়।
ছাত্রজীবনে যে অধ্যবসায়ের প্রয়ােজন রয়েছে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানেই সফলতা চাই, সেখানেই অধ্যবসায়কে খোঁজ করতে হবে। যে ছাত্র একবার পরীক্ষায় ফেল করে দ্বিতীয়বার আর ফেলের ভয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে না, অধ্যবসায়ী হওয়ার চেষ্টা করে না, সে জীবনে কখনাে সফলতা লাভ করতে পারে না। ছাত্রদের জানা উচিত ছাত্ৰনং অধ্যয়নং তপঃ। তাদের আরও জানা উচিত 'Diligence is the mother of good luck' (Franklin)। অনেকে মনে। করেন যারা জীবনে বড়াে হয়েছে তারা অত্যন্ত মেধাবী ও অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। প্রতিভা কারও একচেটিয়া অধিকার নয়। তা সকলেরই থাকে, তবে একে যথাযথ কাজে লাগাতে হয়। এ সম্পর্কে ডাল্টনের কথা স্মরণযােগ্য, ‘লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না। আবার ভলতেয়ার বলেছেন, প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।' জীবন যুদ্ধে সফলতার মূল চাবি যে অধ্যবসায় তা ইতিহাসের পাতা উলটালে সহজেই প্রতীয়মান হয়। বিজ্ঞানী নিউটন বলেন, 'আমি সারা জীবন শুধু সমুদ্র তীরের বালু নুড়ি নিয়েই খেলা করেছি, সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আর দেখা হয়নি।' উক্তিটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাঁর অধ্যবসায়ের দৌড় কতটুকু ছিল ।
আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় মানুষের যে অভাবনীয় অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ফ্র্যাঙ্ক লয়েড উক্তিটি উল্লেখ করা যায় -
“সাফল্যের জন্য ৩টি মূল্য দিতে হবে: ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম,
আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া।”
অধ্যবসায় না থাকলে কেবল মেধা কাজে লাগে না। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী যথেষ্ট প্রয়াসের অভাবে জীবনে সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় গুরুত্ব অনেক। অনেক সময় দেখা যায় অধ্যবসায় এর অভাবে কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর হাল ছেড়ে দেয়। বিশ্ব বিখ্যাত রক মিউজিশিয়ান বন জোভি বলেছেন -
“সাফল্য মানে ৯ বার পড়ে গিয়ে ১০ম বার উঠে দাঁড়ানো”
অধ্যবসায় এমন একটি গুন যা জন্মগতভাবে লাভ করা যায় না। একটা অর্জন করে নিতে হয়। তাহলেই আসবে সাফল্য। আমেরিকান সফল উদ্যোক্তা আর্নল্ড গ্লাসগো বলেছেন -
সাফল্যের আগুন একা একা জ্বলে না। এটা তোমাকে নিজ হাতে জ্বালাতে হবে”
মাতৃগর্ভ থেকে যে শিশু পৃথিবীতে আসে সে প্রথমে হাটতে পারে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে অল্প অল্প করে হাটতে শিখে। তাই আমাদের উচিত ছোট বেলা থেকেই অধ্যবসায়ের চর্চা করা।চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা মাও সে তুং বলেছেন -
“সন্তানের সাফল্য চাইলে তাকে মাছ খেতে দেয়ার বদলে মাছ ধরতে শেখাও”
শুরুর ভিত্তি যদি মজবুত হয় তাহলে সাফল্য নিকটে আসে। আমরা নিজ নিজ স্থান থেকে অধ্যবসায়ের চর্চা করতে পারি এটা হতে পারে একজন ছাত্র, একজন ব্যবসায়ী, হতে পারে শিক্ষক, কুলি দিন মজুর ইত্যাদি।আমেরিকান বিলিওনেয়ার ওয়ারেন বাফেট বলেছেন-
“ব্যবসার জগতে তারাই সবচেয়ে বেশি সফল, যারা তাদের সবচেয়ে ভালোলাগার কাজটি করছে”
পৃথিবীর কোনো বড় আবিষ্কার একবারে সফলতার মুখ দেখেনি। বারবার চেষ্টা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে হয়েছে। প্রাত্যহিক জীবনে তাই অধ্যাবসায় ব্যতীত প্রকৃত সাফল্য কোন মানুষই অর্জন করতে পারবে না। ব্যক্তি ,সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আজ অধ্যবসায়কেই সফলতার মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।বিনা পরিমশ্রমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার লালসা বুকে ধারণ করে অন্যায় ও অসাধু পথে অধ্যবসায়কে বেছে নেয়। রাতারাতি সাফল্য পাওয়ার আকাঙ্খা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই হয়। এ প্রসঙ্গে এ্যাপল কম্পিউটার্স এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস বলেছেন -
“রাতারাতি সাফল্য বলতে কিছু নেই। মনোযোগ দিলে দেখবে সব সাফল্যই অনেক সময় নিয়ে আসে”
অধ্যবসায়ের অপব্যবহার নিয়ে আমেরিকান লেখক ও কবি হারমান মেলভির উক্তিটি যথার্থ -
“অসত্যের পথে সফল হওয়ার চেয়ে, সত্যের পথে ব্যর্থ হওয়াও ভালো”
মরা যদি বিশ্বজুড়ে উন্নত দেশ এবং সফল ব্যক্তিদের লক্ষ্য করি তবে দেখবো ব্যক্তিদের মধ্যে একটি ধারাবাহিক প্রবণতা রয়েছে এবং সেই ধারাটি হল অধ্যবসায়ের ক্ষমতা। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন -
"The greatest glory in living lies not in never falling, but in rising every time you fall."
আর এটাই হলো অধ্যবসায়ের মূল শিক্ষা। জীবনে ব্যর্থতা যে থাকবে না এমন টা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ জীবন থেমে থাকে না। জীবন বহমান নদীর মতো। তাই জীবনে ব্যর্থতা দেখে পিছু পা হলে সাফল্য লাভ করা যাবে না। বিশ্বখ্যাত লেখক ও ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন বলেছেন -
“জীবনে সফল হতে চাইলে দু’টি জিনিস প্রয়োজন: জেদ আর আত্মবিশ্বাস”
সমাজে নিয়ম শৃঙ্খলা ভেঙে রাতারাতি বড় লোক হওয়ার অভিপ্রায় দেখা যায় অনেকের মধ্যে, যা মোটেও কাম্য নয়। জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে শিক্ষা, অধ্যবসায় ও সততার বিকল্প নেই। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ জীবনে মানুষ নিজের জীবনের সব প্রচেষ্টা কাজে লাগিয়ে অর্জন করে খ্যাতি, সুখ, স্বপ্ন। সবাই যে সফল হয়, তা কিন্তু নয়। সফলতা আসতে আসতে কেউ হোঁচট খায়, পিছলে পড়ে। অনেকটা শিশুবেলায় হাঁটতে শেখার মতো। হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যায়, ব্যথা পায়, আবার উঠে দাঁড়ায়, দৌড়াতে শিখে। পড়ে গেলেও উঠে দাঁড়িয়ে যেমন দৌড়াতে শিখে তেমনি কখনো সাফল্য না আসলেও ভেঙে পড়লে চলে না। সফল হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
যেকোনাে কাজে সফলতা অর্জনের জন্য চাই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া কোনাে কাজে সফল হওয়া যায় না। ইতিহাসের পাতায় যারা আজও অমর হয়ে আছেন, তারা অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই সফল হতে পেরেছিলেন। তারা ব্যর্থতাকে জয় করে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়কেই জীবনের একমাত্র অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে বিষন্ন মনে বন-জঙ্গলে ঘুরছিলেন। তখন একদিন এক গুহায় একটি মাকড়সাকে সাতবার চেষ্টা করে সুতা জড়াতে দেখে তিনি অদম্য উৎসাহ নিয়ে সপ্তমবারের মতাে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেন। আবার মহাকবি ফেরদৌসী দীর্ঘ তিরিশ বছর সাধনা করে রচনা করেন অমর মহাকাব্য ‘শাহানামা’ । তেমনি আমরা। দেখি মহানাব হজরত মুহম্মদ (সা.) ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে বহুবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এমনকি রক্তাক্ত পর্যন্ত হয়েছেন। তারপরও তিনি নতুন উদ্যমে ধর্মপ্রচার করে বিপথগামীদের ধর্মের পথে ফিরিয়ে এনেছেন। তাই বলা যায়, একমাত্র অধ্যবসায়ই মানবজীবনে সােনালি অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।
জীবনের প্রয়োজনে জীবনকে মানুষ সাজায়। গড়ে তোলার পর হঠাৎ ভেঙে গেলে কষ্ট হয়। জীবনের প্রয়োজনে আবার নতুন করে গড়তে হয়। তখন প্রয়োজন উদ্যম। প্রাণপণ শক্তি, সাহস আর মনোবল। আজকাল অনেকে অল্পেই ভেঙে পড়েন। মাদকের আশ্রয় নেন। আত্মহত্যা করেন।ইতিহাস থেকে জানা যায় পৃথিবীর অধিকাংশ জ্ঞানী-গুণী, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতরা ছিলেন চাষাভুষা, শ্রমিক, দর্জি, মুচি প্রমুখ গরিব লােকের সন্তান। তারা আজ এত বড়াে হয়েছেন, শুধু অধ্যবসায়ের।
আমার আজকের লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো, বিপদ বা বাধা কখনো বলে–কয়ে আসে না। আসলে ভেঙে না পড়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কাপুরুষের মতো নয়, সাহস ও শক্তি নিয়ে প্রতিহত করতে হবে।অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনে জয়ী হওয়া যায় । তাই সাফল্য নামক সােনার হরিণের জন্য আমাদের সকলকে অধ্যবসায়ী হতে হবে। জীবনে একবার সফলতা আসলে আর পিছ পা হতে হয় না। এ সম্পর্কে : Nicolas Chamfort -এর উক্তিটি স্মরণীয় '