লবণশিল্প আমাদের অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় খাত (Potential of Salt Industry in Bangladesh Economy)

লবণশিল্প আমাদের অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় খাত (Potential of Salt Industry in Bangladesh Economy)

 

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) ষাটের দশক থেকে লবণ উৎপাদনে চাষিদের সহায়তা দিয়ে আসছে। লবণচাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সরকারের সার্বিক সহায়তায় লবণ উৎপাদনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৪০ হাজার লবণচাষি ৬০ হাজার ৫৯৬ একর জমিতে লবণ উৎপাদন করেন।

দেশের লবণের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই

লবণ চাষের মৌসুমের ব্যাপ্তিকাল ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ছিল ১৬ দশমিক ৫৭ লাখ টন এবং লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৮ দশমিক ২৪ লাখ টন।এছাড়া গত বছরের উদ্বৃত্ত রয়েছে এক দশমিক ৬০ লাখ টন লবণ। মোট ১৯ দশমিক ২৪ লাখ টন লবণ বর্তমানে চাষি, লবণ মিল, পরিবহন চ্যানেল এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে রয়েছে। অর্থাৎ দেশের লবণের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই এবং ঈদুল আজহায় চামড়াশিল্পসহ সারা বছর লবণ ব্যবহারের পরও দেশে লবণ উদ্বৃত্ত থাকবে।

দেশে চাষি পর্যায়ে লবণের বিক্রয় মূল্য খুবই কম

দেশে চাষি পর্যায়ে লবণের বিক্রয় মূল্য খুবই কম। লবণচাষিদের রক্ষার্থে এই দাম বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য লবণ আমদানি না করে দেশীয় লবণ ব্যবহারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বড় বড় শিল্প-কারখানাগুলোকে দেশীয় লবণ ব্যবহারে এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। এতে দেশীয় লবণচাষিরা তথা দেশ লাভবান হবে এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।লবণের উৎপাদন বাড়াতে লবণচাষের আধুনিক প্রযুক্তি দেশের সব লবণচাষির কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাইলট আকারে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা গেছে, এতে লবণ উৎপাদনের পরিমাণ বর্তমানের দ্বিগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব।

Taken From News Bangla24

৬২ বছরের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল

গত ৬২ বছরের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। তবে চলতি লবণ মৌসুমের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে।চলতি লবণ মৌসুমে লবণ চাষ করা মোট জমির পরিমাণ ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর, গত বছর ছিল ৬৬ হাজার ৪২৪ একর। গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণ চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ৯৩৩ একর।চলতি লবণ মৌসুমে লবণ চাষির সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৯৫ জন, যা গত বছর ছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ২২৮ জন। বর্তমানে লবণ মাঠ পর্যায়ে মণপ্রতি ক্রুড লবণের গড় মূল্য ৩১২ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪২০ টাকা।

লবণ কৃষিপণ্য না শিল্পপণ্য তা নিয়ে বিতর্ক আছে

বদরখালী, চকরিয়া, কক্সবাজার: লবণ চাষের জন্য চড়া মূল্যে জমি বর্গা নিতে হয়। দিনের পর দিন পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমি তৈরি করতে হয়। তপ্ত রোদে পুড়ে মাঠের পরিচর্যা করতে হয়। চাষির শ্রমের পর অনুকূল পরিবেশ পেলে তবেই ভালো উৎপাদন। পণ্যটি উৎপাদিত হয় মাঠে, উৎপাদন করেন চাষি, প্রক্রিয়াটির নামও লবণ চাষ। তারপরও লবণ কৃষিপণ্য না শিল্পপণ্য তা নিয়ে বিতর্ক আছে।চাষিসহ লবণ চাষে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লবণ উৎপাদনের পর এটি শিল্প হিসাবে গণ্য হতে পারে। কিন্তু উৎপাদন পর্যায়ে এটি কৃষি। উৎপাদন পর্যায়ে লবণকে কৃষিপণ্য হিসাবে গণ্য না করায় হাজার হাজার চাষি সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ধারদেনা করে লবণ চাষ করলেও কৃষক হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছে না কোনো সুবিধা। তাদের কাছে বার বার এই প্রশ্নটিই ঘুরপাক খায়: লবণচাষ কৃষি নাকি শিল্প?  

Taken From Protidiner Bangladesh

একমাত্র দেশীয় পণ্য লবণ উৎপাদনে চাষিদের জন্য কোন সুবিধা নেই

এত ঝুঁকির পরও লবণকে কৃষিপণ্য হিসেবে বিবেচনা না করায় তারা কোন ধরনের সহায়তা পায় না। প্রান্তিক চাষিরা সরকারি-বেসরকারি সুবিধা পাওয়া তো দূরের কথা, লবণের ন্যায্যমূল্যটাই পায় না। চাষি হিসাবে তারা দাবিও তুলতে পারছেন না। কারণ সরকারের তালিকায় তো তাদের চাষি স্বীকৃতি নেই।চকরিয়া উপজেলার বেশকিছু এলাকায় পরিবেশ ও জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তামাক চাষের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চাষিদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে তামাক চাষ সম্প্রসারণ করছে। অথচ দেশের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম একমাত্র দেশীয় পণ্য লবণ উৎপাদনে চাষিদের জন্য কোন সুবিধা নেই।

নদীর লবণাক্ত পানি দিয়েই উৎপাদিত হচ্ছে লবণ

নদীর লবণাক্ত পানি দিয়েই উৎপাদিত হচ্ছে লবণ। সমতল ভূমিকে চারপাশে মাটির ছোট আইল (মাটি দিয়ে উঁচু করে বেড়ার মত) দিয়ে ছোট প্লট আকৃতির জায়গা বানানো হয়। এরপর ছোট প্লটগুলো রোদে ভালভাবে শুকিয়ে কালো পলিথিন বিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর নদী থেকে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে লোনা পানি এনে ছোট ছোট ওই প্লট ভর্তি করা হয়।এভাবে পানি সংগ্রহ করার পর ৪ থেকে ৫ দিন রোদে রাখা হয়। কড়া রোদে পানি বাষ্পীভূত হয়ে চলে যায় আর লবণ পড়ে থাকে পলিথিনের ওপর। লবণের সাদা দানা একটু ঝরঝরে হলেই রিফাইনারি মেশিনের মাধ্যমে লবণ রিফাইন করে বস্তাভর্তি করা হয়। প্রতি বস্তায় ৮০ কেজি করে লবণ থাকে। এ লবণ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। এখান থেকে বড় বড় নামি-দামি কোম্পানি যেমন এসিআই সুপারি সল্ট, কনফিডেন্সসহ অন্য সব কোম্পানি প্রাথমিকভাবে রিফাইন করা লবণ নিয়ে নিজেদের মেশিনে আরও ঝরঝরে করে। এরপর কোম্পানির মোড়কজাত করে বাজারে সরবরাহ চালায়।  

Taken From Desh TV

লবণ চাষ খুবই ঝঁকিপূর্ণ

 লবণ চাষের ভরা মৌসুম ফাল্গুন-চৈত্র মাস। বছরের ছয় মাস লবণ চাষ হয় ইসলামপুরে, বাকি ছয় মাস একই জায়গা চাষ হয় লোনা পানির চিংড়ি।লবণ চাষ সম্পর্কে স্থানীয় লবণ চাষি ও ‘হাজী রিফাইনারি’র মালিক জাবেদ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, ‘লবণ চাষ মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। শীতের কুয়াশাও লবণের জন্য ক্ষতিকর। তাই এ ব্যবসা খুবই ঝঁকিপূর্ণ’।

লবণ চাষ হচ্ছে জমি ও চাষি বাড়ছে

২০২৩ সালে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছিল। ২০২২ সালে যা ছিল ৬৩ হাজার ২৯১ একর। তবে ২০২৪ সালের কত একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে তার হিসাব শেষ হয়নি। সার্ভে চলছে। তবে বিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর এক হাজার একর জমি বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, লবণের দাম বেশি থাকলে জমি চাষ বেশি হয়।তাঁরা এমনও দেখেছেন, কক্সবাজারে যেসব জমিতে আগে ধান চাষ হতো, সেখানে এখন লবণ চাষ হচ্ছে। কারণ ধান চাষের চেয়ে লবণে লাভজনক। ২০২২ সালে চাষি ছিল প্রায় ৩৭ হাজার ২৩১ জন, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ৪৬৭ জনে। এবার যেহেতু জমি বেড়েছে, তাই চাষিও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে তা ৪০ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছাবে।

Taken From Daily Janakantha.

সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে দেশের লবণ খাত

বিসিকের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মোট ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ চাষ করেছেন মোট ৪০ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট লবণ উৎপাদন হয়েছে ২১ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৩ সালের একই দিন পর্যন্ত উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ।গত মৌসুমে ৬৬ হাজার ৪২০ একর জমিতে রেকর্ড ২২ লাখ ৩০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। শিল্প-সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, তীব্র দাবদাহের কারণে আবারও সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে দেশের লবণ খাত।

সাধারণত নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন ও আহরণ হয়ে থাকে।সাধারণত মাঠ থেকে লবণ আহরণের উপযোগী হতে ১৪ দিন সময় লাগে। তবে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রাভেদে মাত্র ৪ থেকে ৯ দিন পর্যন্ত লাগে।গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী তাপপ্রবাহ বইছে। চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় তুলনামূলক কম সময়ে লবণ আহরণের উপযোগী হয়ে উঠেছে। গত কদিন ধরে ২-৩ দিনেই লবণ তোলা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।গত কয়েক দশক ধরে দেশে লবণ চাষের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো। সিংহভাগ উৎপাদন হয় কক্সাবাজারে। চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৯ হাজার ৫০০ একরের বেশি জমিতে লবণ চাষ হয়েছে।


তথ্যসুত্র

সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন, Dainik Bangla.

লবণের রেকর্ড উৎপাদন, Kalerkantho.

 উৎপাদিত হচ্ছে লবণ, Bangla News24.

 লবণ কৃষিপণ্য না শিল্পপণ্য, Bangla News.

মৌসুমে লবণ চাষ, The Daily Star.

লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি, Amarsangbad.

Subscribe for Daily Newsletter