রেডিও (Radio)

রেডিও কি?
রেডিও তরঙ্গ হল ৩ হার্টজ (Hz) এবং ৩০০ গিগাহার্টজ (GHz) কম্পাঙ্কের মধ্যকার তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ। এগুলি অ্যান্টেনার সাথে সংযুক্ত ট্রান্সমিটার নামক একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র দ্বারা উৎপন্ন হয় যা তরঙ্গ বিকিরণ করে এবং একটি রেডিও রিসিভারের সাথে সংযুক্ত অন্য একটি অ্যান্টেনা দ্বারা গৃহীত হয়।
বেতার হল তার ব্যতীত যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এতে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ বা গ্রহণ করা হয়। ১৮৯৬ সালে ইতালীয় প্রকৌশলী গুলিয়েলমো মার্কোনি বেতার যন্ত্রের সম্প্রচার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। রেডিও, রেডিও টেলিস্কোপ ইত্যাদি তারবিহীন যে কোনো যোগাযোগের মূলনীতিই হলো বেতার। মার্কোনির আগেই স্যার জগদীশচন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে বাঙালি মহলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে। মার্কোনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার সংকেত পাঠাতে সফল হয়েছিলেন যার ফলশ্রুতি হলো রেডিও। কিন্তু জগদীশচন্দ্র কাজ করেছিলেন অতি ক্ষুদ্র তথা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ নিয়ে যার প্রয়োগ ঘটে আধুনিক টেলিভিশন, রাডার এবং মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
আপনি নিশ্চয় মনে করেন যে “রেডিও” শুধুমাত্র একটি গ্যাজেট যা দ্বারা আপনি মিউজিক উপভোগ করেন, কিন্তু ব্যাস্তবে এটি আরো বেশি কিছু। রেডিও মানে হলো তরঙ্গের সাহায্যে এনার্জিকে পাঠিয়ে দেওয়া। এক কথায় বলতে, এটি এমন একটি পদ্ধতি যা ব্যবহার করে কোন প্রকার তার ছাড়ায় ইলেকট্রিকাল এনার্জিকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে প্রেরন করা হয়—আর এই জন্যই একে বলা হয়ে থাকে ওয়্যারলেস (তার বিহীন)। যে উপকরণ দ্বারা এই তরঙ্গ প্রেরন করা হয়ে থাকে তা ট্রান্সমিটার নামে পরিচিত। বেতার তরঙ্গ এই ট্রান্সমিটার দ্বারা বাতাসে প্রেরন করা হয়ে থাকে। আর এই তরঙ্গ ছড়িয়ে পরে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত—আর এই তরঙ্গের অভিযান তখন সমাপ্ত হয়ে থাকে যখন একটি ছোট্ট বাক্স এই তরঙ্গ গ্রহন করে—যা রিসিভার নামে পরিচিত।
যখন আপনি রিসিভারের অ্যান্টেনাকে টেনে লম্বা করে দেন তখন তা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জিকে টেনে গ্রহন করতে থাকে। আর যখন আপনি কোন চ্যানেল টিউন করেন তখন এর ভেতরে থাকা একটি ইলেক্ট্রনিক সার্কিট শুধু সেই প্রোগ্রামটি শোনাতে থাকে যা ঠিক আপনি শুনতে চান। কিন্তু এটি কীভাবে ঘটে থাকে? চলুন আরো গভীরে প্রবেশ করি।
রেডিও শব্দটি যেভাবে পেলাম
রেডিও শব্দটি এখন বেতারযন্ত্রের জন্যই বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ইংরেজি এই রেডিও শব্দের উত্পত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ রেডিয়াস (Radius) থেকে, যার মূল অর্থ চাকার স্পোক বা আলোর রশ্মি বিকিরণ রেখা। অর্থাৎ রশ্মির সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে এই শব্দ ব্যবহৃত হতো। আবার এই শব্দ থেকেই বৃত্তের রেডিয়াস বা ব্যাসার্ধ শব্দটির উত্পত্তি। যোগাযোগের ক্ষেত্রে ১৮৮১ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী আর্নেস্ট মারকাডিয়ারের পরামর্শে প্রথম রেডিওফোন শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল। ‘বিচ্ছুরিত শব্দ’ বোঝাতে রেডিওফোন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল সেবার।
১৮৬৫ সালে বিদ্যুৎচুম্বকবিষয়ক ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের বেগ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েলের এই ভবিষ্যদ্বাণী ১৮৭৯ সালে প্রমাণ করেছিলেন হেনরিক হার্জ। এরপর বিদ্যুৎচুম্বকীয় এই বিকিরণকে ডাকা হতে লাগল হার্জেয়ান তরঙ্গ। আর এই তরঙ্গ ব্যবহার করে যোগাযোগ করাকে বলা হতো ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি। এর এক দশক পর রেডিও শব্দটিকে সংযোজক অব্যয় হিসেবে প্রথম ব্যবহার করেন ফরাসি পদার্থবিদ এডুয়ার্ড ব্রানলি। রেডিও সংকেত শনাক্ত করতে একটি যন্ত্র বানিয়েছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন রেডিও-কন্ডাক্টর। এর পরপরই ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফ বা রেডিওটেলিগ্রাফ ও রেডিওটেলিগ্রাফি (রেডিয়েশনের মাধ্যমে টেলিগ্রাফি) শব্দগুলো ইউরোপে ব্যবহৃত হতে থাকে। পরে শব্দটিকে ছোট করে শুধু ওয়্যারলেস বা রেডিও নামে ডাকা হতে লাগল। তবে ইউরোপে রেডিওর পরিবর্তে ওয়্যারলেস শব্দটিই বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল। ইউরোপে ১৮৯০ দশকের মাঝামাঝি ব্যবহারযোগ্য রেডিও প্রেরক ও গ্রাহকযন্ত্র উদ্ভাবিত হয়। এতে হার্জেয়ান তরঙ্গ (আসলে রেডিও তরঙ্গ) ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই থেকে হার্জেয়ান তরঙ্গকে বলা হতে লাগল রেডিও ওয়েব বা রেডিও তরঙ্গ (বাংলায় বেতারতরঙ্গ)। বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বর্ণালিরেখায় সর্বোচ্চ ৩০০ গিগাহার্জ থেকে ৩০ হার্জ পর্যন্ত কম্পাঙ্কবিশিষ্ট তরঙ্গকে বলা হয় রেডিও তরঙ্গ। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কয়েক সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে কয়েক মিটার বা কয়েক কিলোমিটার লম্বা হতে পারে।
২০ শতকের একেবারের শুরুর দিকে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে কথা পাঠানো এবং তা গ্রহণের ক্ষেত্রে সামান্য সফলতা পাওয়া গিয়েছিল। তখনো একে ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি বা তারবিহীন দূরবার্তা নামেই ডাকা হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সীমিত পরিসরে সামরিক যোগাযোগে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা শুরু হয়। এ সময় গ্রাহকযন্ত্রের জন্য রেডিও রিসিভার শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই যুদ্ধের পরে বাণিজ্যিকভাবে রেডিও সম্প্রচার শুরু হয়। এ সময় অনেকেই রেডিও রিসিভারের নামের আজব এক যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হয়। তবে ১৯২১ সালের পত্রপত্রিকায়ও রেডিওকে ওয়্যারলেস টেলিফোনি নামে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই শব্দই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বেশ চালু ছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীতে রেডিও শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। সেই থেকেই পত্রপত্রিকা ও সাধারণ জনগণের মধ্যে রেডিও শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ক্রমেই রেডিও রিসিভার ছোট হয়ে যন্ত্রটির নাম রেডিও হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষায় রেডিও রিসিভার যন্ত্রটির জন্য বেতার শব্দটিই বেশি জনপ্রিয়। আর এ শব্দ ওয়্যারলেস টেলিফোনি থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
রেডিও কিভাবে কাজ করে
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি—ইলেক্ট্রিসিটি এবং ম্যাগ্নেটিজমে মিশ্রিত একটি এনার্জি যা আমাদের চারপাশে সমুদ্রের মতো বিরাজমান। আর একেই বলা হয়ে থাকে বেতার তরঙ্গ। সমুদ্রের ঢেউ এর মতোই বেতার তরঙ্গেরও রয়েছে একটি নির্দিষ্ট গতি, দৈর্ঘ্য, এবং ফ্রিকোয়েন্সি (কম্পাঙ্ক)। তরঙ্গ গতি নির্দেশ করে যে এটি একটি স্থান থেকে আরেকটি স্থানে কোন দ্রুত যেতে পারবে।
আর একটি তরঙ্গ শিখর থেকে আরেকটি তরঙ্গ শিখরের দূরত্ব নির্দেশ করে তরঙ্গদৈর্ঘ্য, যেখানে ফ্রিকোয়েন্সি মানে হলো প্রত্যেক সেকেন্ডে কতোগুলো তরঙ্গ পৌঁছাতে পারে তার নাম্বার। ফ্রিকোয়েন্সি পরিমাপ করার এককের নাম হলো হার্জ (hertz)। অর্থাৎ এক সেকেন্ডে যদি ৭টি তরঙ্গ এসে পৌঁছায় তবে আমরা একে বলবো ৭ হার্জ (7 Hz)। এবার আবার ভাবুন সমুদ্র ঢেউ এর কথা—সমুদ্র ঢেউ কয়েক সেকেন্ড পরপর সমুদ্র কিনারায় গিয়ে আছড়ে পড়ে। একই ঢেউ শুধু কিছু সময়ের ব্যাবধানে বারবার আসে। ঠিক একই ভাবে এখানে ফ্রিকোয়েন্সি মানে হলো একই তরঙ্গ প্রত্যেক সেকেন্ডে ফিরে আসা।
তো আপনার বেতার যন্ত্রটি যখন টেবিলের উপর রাখা থাকে তখন সেটি আপনার ঘরে আসা বেতার তরঙ্গকে ধরার চেষ্টা করে। বেতার তরঙ্গ সমুদ্র ঢেউ এর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগামী, প্রশস্ত, এবং বেশি ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ালা। যাই হোক, বেতার তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সাধারনত কয়েকশত মিটার হয়ে থাকে—সুতরাং এটিই হলো একটি তরঙ্গ শিখর থেকে আরেকটি তরঙ্গ শিখরের দূরত্ব। কিন্তু বেতার তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি কয়েক মিলিয়ন হার্জ হতে পারে—সুতরাং এক সেকেন্ডে বহুত মিলিয়ন রেডিও তরঙ্গ পৌঁছানো যেতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি বেতার তরঙ্গ মাত্র কয়েকশত মিটার লম্বা হতে পারে তবে এতো মিলিয়ন রেডিও তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে কীভাবে পৌঁছানো সম্ভব? উত্তরটা কিন্তু খুবই সহজ, কেনোনা বেতার তরঙ্গ অনেক দ্রুতগামী হয়ে থাকে। এর গতি প্রায় আলোর গতির সমান হয়ে থাকে (৩০০,০০০ কিলোমিটার বা ১৮৬,০০০ মাইল প্রতি সেকেন্ড)।
অ্যানালগ রেডিও
সমুদ্র তার ঢেউ গুলোকে উপর নিচ করিয়ে এনার্জি বহন করে এবং ঢেউকে অসম্ভব শক্তির সাথে তীরে আছড়ে ফেলে। আর অনেকটা একই উপায়ে বেতার তরঙ্গও ইলেক্ট্রিসিটি এবং ম্যাগ্নেটিজমের একটি অদৃশ্য উপর নিচ ঢেউ খেলিয়ে এনার্জি বহন করে। বেতার স্টেশনের সাথে সংযুক্ত থাকা একটি বিশাল আকারের অ্যান্টেনার সাহায্যে বেতার তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে কোন নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম সাথে নিয়ে। এবং আপনার বেতার যন্ত্রটিতে একই প্রকারের কিন্তু ছোট আকারের একটি অ্যান্টেনা লাগানো থাকে, যা এই তরঙ্গকে ধরে ফেলে।
বেতার তরঙ্গের সাথে একটি অনুষ্ঠানকে যুক্ত করার মাধ্যমে কোন অনুষ্ঠান প্রেরন করা হয়ে থাকে—একে কারিয়ার (carrier) বলা হয়ে থাকে। আর এই সম্পূর্ণ প্রসেসটিকে বলা হয় মডুলেশন (modulation)। মাঝেমাঝে একটি বেতার অনুষ্ঠানকে কারিয়ারের সাথে এমনভাবে যুক্ত করা হয়ে থাকে যাতে সেই অনুষ্ঠানটির সিগন্যাল কারিয়ার ফ্রিকোয়েন্সিতে তরঙ্গ উঠানামা করাতে পারে। আর এই পদ্ধতিকে বলা হয়ে থাকে ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন (এফএম) [frequency modulation (FM)]।
বেতার সিগন্যাল প্রেরন করার আরেকটি পদ্ধতি হলো কারিয়ার তরঙ্গ শিখরকে বৃহত্তর অথবা ক্ষুদ্রতর বানিয়ে। যেখানে এই তরঙ্গ সাইজকে বলা হয়ে থাকে ঐ তরঙ্গের প্রশস্ততা বা অ্যামপ্লিটিউড (amplitude)। আর এই উপায়ে কাজ করার প্রসেসটিকে বলা হয়ে থাকে অ্যামপ্লিটিউড মডুলেশন (এএম) [amplitude modulation (AM)]।
এএম (AM) এবং এফএম (FM) এর মধ্যে পার্থক্য
চলুন এই বিষয়টি কোন টেকনিক্যাল ভাবে না বুঝিয়ে সহজ করার জন্য একটি ব্যাস্তব জীবনের উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। মনে করুন আমি সমুদ্রের মধ্যে একটি বড় নৌকায় অবস্থান করছি এবং এখানে আমাকে একটি বেতার ট্রান্সমিটার হিসেবে ধরুন—এবং মনে করুন আপনি সমুদ্রের তীরে অবস্থান করছেন এবং আপনি একটি বেতার রিসিভার। এখন মনে করুন আমি আপনার কাছে বড় বড় ঢেউ পাঠাতে চাচ্ছি, তাহলে আমাকে আমার নৌকাটি যতোবেশি সম্ভব পানিতে দোলাতে হবে—যাতে বড় আকারের ঢেউ আপনার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি।
এখন যদি সমুদ্রে আগে থেকেই ঢেউ থাকে এবং সেগুলো যদি তীরে অর্থাৎ আপনার কাছে ধেয়ে যেতে থাকে তবে আমার নৌকা দুলিয়ে ঢেউ তৈরি করার মাধ্যমে সমুদ্রে আগে থেকেই থাকা ঢেউকে আরো বড় এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। এই অবস্থায়, আমি সিগন্যাল পাঠাতে তরঙ্গ বৃদ্ধি করে কারিয়ারের মতো কাজ করছি, কেনোনা আমি তরঙ্গের উচ্চতা পরিবর্তন করে দিচ্ছি। এবং এই অবস্থায় আমি আমার সিগন্যালকে প্রেরন করার জন্য তা প্রশস্ত করছি ফলে এই প্রক্রিয়াটি হবে অ্যামপ্লিটিউড মডুলেশন (এএম)।
অন্যদিকে, এবার ধরুন আমি আমার নৌকাকে উপর নিচে না দুলিয়ে আমি আমার হাত পানিতে দিলাম এবং খুব জোরে জোরে আগে পিছে নাড়াতে থাকলাম। এর ফলে আমি এখন ঢেউ এর ভ্রমন আরো বাড়িয়ে ফেলবো এবং একাধিক ঢেউ তৈরি করতে পারবো (কেনোনা হাত নাড়ানতে অনেক ঢেউ সৃষ্টি হবে)। এখানে আমি ঢেউ এর ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করছি। এবং এই ক্ষেত্রে আমার প্রেরন করা সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি মডুলেশন (এফএম) পদ্ধতিতে ভ্রমন করবে। কোন তরঙ্গের আকার পরিবর্তন করে তথ্য পাঠানো হলো অ্যানালগ প্রযুক্তির উদাহরণ। এর মানে হলো আপনি যে তথ্যটি পাঠাতে চাচ্ছেন তা রূপান্তরিত করার জন্য কোন কিছুর সরাসরি ফিজিক্যাল পরিবর্তন করছেন।
এএম এবং এফএম নিয়ে সবচাইতে বড় সমস্যা হলো প্রোগ্রাম সিগন্যালটি ঐ তরঙ্গের একটি অংশে পরিণত হয় যে তরঙ্গে সিগন্যালটি বহন হচ্ছে। সুতরাং, যদি ঐ তরঙ্গের প্রবাহে কিছু ঘটে তবে প্রোগ্রাম সিগন্যাল সহজেই হারিয়ে যেতে পারে। আর এই সিগন্যালকে ফেরত পাওয়ার আর কোন অপশন থাকে না। আচ্ছা চলুন, ব্যাপারটি আরেকটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করি।
মনে করুন আমি নৌকা থেকে তীরের দিকে ঢেউ তৈরি করে পাঠাচ্ছি—এই অবস্থায় আমার নৌকা এবং তীরের মধ্যে দিয়ে যদি কোন স্পীড বোট পার হয়ে যায় তবে আমার তৈরি করা ঢেউ স্পীড বোটের সাথে ধাক্কা লেগে বিলীন হয়ে যাবে। আর এই জন্যই কোন সিগন্যাল সমস্যা হলে অ্যানালগ রেডিও গুলোতে শব্দ আটকে আটকে যায় (বিশেষ করে গাড়ীতে বেতার সোনার সময়)। ডিজিটাল রেডিও এই সমস্যাকে সমাধান করার জন্য বেতার সম্প্রচারকে একটি কোডে পরিণত করে প্রেরন করে—আলাদা নাম্বারিক কোডে সিগন্যাল প্রেরন করার জন্য তা বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে হারিয়ে যায় না। চলুন এবার এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ডিজিটাল রেডিও
আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন আর বেতারে আপনার প্রিয় মিউজিক উপভোগ করছেন। গাড়ি চালাতে চালাতে একসময় ব্রীজের নিচের রাস্তায় প্রবেশ করলেন কিংবা কোন ট্যানেলে প্রবেশ করলেন—এবার দেখবেন আটকা আটকা শব্দ, সো সো পো পো শব্দ আপনার পছন্দের গানকে একদম জগাখিচুড়ী বানিয়ে ফেলেছে।মানুষ যখনই বর্তমান প্রযুক্তি নিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় ঠিক তখনই নতুন আর আগের থেকে উন্নত কোন প্রযুক্তির আবিষ্কার করে বসে। আর এভাবেই আবিষ্কৃত হয়েছিলো ডিজিটাল রেডিও। ডিজিটাল বেতার—শব্দ এবং গান গুলোকে নাম্বারে জড়িত করে বাতাসে প্রেরন করে।
তাই কোন যায় আসে না, আপনার বেতার রিসিভার আর ট্রান্সমিটারের মাঝখানে কি আসলো। আপনি সবসময় সম্পূর্ণ পরিষ্কার অডিও উপভোগ করতে পারবেন। আর ডিজিটাল প্রযুক্তির রয়েছে অনেক বেশি ফাইদা। তাই ডিজিটাল বেতারে থাকে স্ক্রীন আর সেখানে গানের গায়কের নাম, অনুষ্ঠানের নাম, পরবর্তী অনুষ্ঠানের নাম ইত্যাদি প্রদর্শিত করানো যায়।
কীভাবে ডিজিটাল রেডিও অ্যানালগ থেকে আলাদা?
চলুন আবার ফিরে যাওয়া যাক পূর্বের সেই নৌকা আর তীরের উদাহরণে—কীভাবে এবার একটু ডিজিটাল ভাবে উদাহরণ দেবো! মনে করুন আমি নৌকাতে শতাধিক প্ল্যাস্টিকের বোলত বহন করছি। এখন মনে করুন আমি কোন সমস্যায় পড়ে গেলাম, তাই তীরে থাকা আপনাকে কোন ম্যাসেজ পাঠাতে চাই। মনে করুন আমি আপনাকে “১২৩৪” এই ম্যাসেজটি পাঠাতে চাই।
তাহলে ৪টি বোতলের গায়ে যথাক্রমে “১২৩৪” লিখে সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে দিলেই আপনার কাছে চলে যাবে। এখন মনে করুন আমি ১০,২০টি বোতলে একই সংখ্যা গুলো বারবার লিখে পাঠালাম যাতে আপনার কাছে কোন হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছাড়ায় ম্যাসেজ পৌঁছাতে পারে। এখন যদি কোন স্পীড বোট আপনার আর আমার মাঝে চলেও আসে তবে হয়তো কিছু বোতল যেতে বাঁধা পাবে, কিন্তু যেহেতু আমি একই নাম্বার লিখে আরো অনেক বোতল ছেড়েছি তাই কোন না কোন একটি বোতল তো আপনার কাছে অবশ্যই পৌঁছাবে। এবং পরিশেষে আপনি আমার সম্পূর্ণ ম্যাসেজটি পেয়ে যাবেন।
আর এভাবেই ডিজিটাল রেডিও কাজ করে থাকে। ট্রান্সমিটার বেতার প্রোগ্রাম সিগন্যালকে ভেঙ্গে টুকরা করে প্রত্যেকটি টুকরা নাম্বারিক কোডে প্রেরন করে। ট্রান্সমিটার একেকটি টুকরাকে বহুবার প্রেরন করে—যাতে কোন টুকরা হারিয়ে গেলেও, আরেকটি এসে তা পূরণ করে দেয়।
সিগন্যাল বাঁধা পাওয়া ঠেকাতে ডিজিটাল বেতার সিগন্যাল, বেতার ফ্রিকোয়েন্সির অনেক বেশি ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করে—এবং এর ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালগ বেতারের তুলনায় প্রায় ১৫০০ গুন বেশি প্রশস্ত হয়ে থাকে। আবার নৌকার উদাহরণে ফিরে আসলাম—যদি সমুদ্রের ঢেউকে ১৫০০ গুন বেশি প্রশস্ত করা যায় তবে এমনিতেই যেকোনো স্পীড বোট কে এড়িয়ে কোন জিনিষ তীরে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এই চৌরা ফ্রিকোয়েন্সিতে একসাথে অনেক তথ্য পাঠানো যায়। আর সকল তথ্যকে একত্রিত করার পদ্ধতিকে মাল্টিপ্লেক্সিং বলা হয়ে থাকে। সিগন্যালের সাথে একত্রিত করে গান, গানের নাম, চ্যানেলের নাম, ডিজের নাম ইত্যাদি পাঠানো হয়।
কেন রেডিও তরঙ্গ গুলো সব একসাথে মিশ্রিত হয়ে যায় না?
টিভি থেকে শুরু করে জিপিএস স্যাটালাইট পর্যন্ত সবই প্রায় তাদের তথ্য বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে বাতাসে ছুড়ে মারে। তাই আপনার আশ্চর্য হওয়া একদমই স্বাভাবিক যে কেন এই আলাদা সিগন্যাল গুলো একসাথে মিশ্রিত হয়ে যায় না? বর্তমানে আমাদের কাছে রয়েছে ডিজিটাল সম্প্রচার করার সিস্টেম। আর এই পদ্ধতিতে কঠিন গাণিতিক কোড ব্যবহার করে একটি সিগন্যালকে আরেকটি সিগন্যাল থেকে খুব সহজেই আলাদা রাখা সম্ভব।
আর এই জন্যই একই শহরে এবং একই এলাকায় অবস্থিত হাজার হাজার সেলফোন থেকে একসাথে কথা বলা যায় এবং কেউ কারো কথা শুনতে পায় না। কিন্তু যদি ফিরে যাওয়া হয় আগের যুগে—যখন বেতার সম্প্রচার করা হতো অ্যানালগ পদ্ধতিতে, তখন কীভাবে সিগন্যাল আলাদা রাখা সম্ভব হতো? আসলে বিভিন্ন বেতার সিগন্যালের জন্য বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হতো।
রেডিও ওয়েভ কি?
রেডিও ওয়েভ হল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ যার ফ্রিকোয়েন্সি 3 KHz থেকে 300 GHz পর্যন্ত মুক্ত স্থানের সমস্ত দিকে প্রেরণ করা হয়। রেডিও ওয়েভগুলি সর্বমুখী, অর্থাৎ, সংকেতগুলি সমস্ত দিকে প্রচারিত হয়। রেডিও তরঙ্গের ক্ষেত্রে, প্রেরণ এবং গ্রহণকারী অ্যান্টেনা সারিবদ্ধ নয়, অর্থাত্, প্রেরণকারী অ্যান্টেনা দ্বারা প্রেরিত তরঙ্গ যে কোনও গ্রহণকারী অ্যান্টেনা দ্বারা গ্রহণ করা যেতে পারে৷ তরঙ্গের দৈর্ঘ্য 1 মি.মি. থেকে 100 কি.মি.। যোগাযোগে 10 KHz থেকে 1 GHz ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ব্যবহার করা হয়।
রেডিও ওয়েভ-এর প্রকারভেদ: রেডিও ওয়েভ ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা:
লো-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি:
শুধু একটি ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে যা ৭০ মিটার বা ২৩০ ফুটের মধ্যে ট্রান্সমিশন উপযোগী। ট্রান্সমিশন গতি ১ থেকে ১০ Mbps।
হাই-পাওয়ার সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি:
অনেক বেশি দূরত্বে সিগনাল পাঠানো যায়। চলার পথে কোনো বাধা থাকলে তা ভেদ করতে সক্ষম। ট্রান্সমিশন গতি ১ থেকে ১০ Mbps।
স্প্রেড স্পেকট্রাম:
সিঙ্গেল ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সমিশনে কেবল একটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়, আর স্প্রেড স্পেকট্রাম রেডিও ট্রান্সমিশনে একাধিক ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়।
রেডিও ওয়েভ-এর সুবিধা:
রেডিও ওয়েভ বিল্ডিং বা দেয়াল ভেদ করতে পারে। সুতরাং এটি ইনডোর এবং আউটডোর উভয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার একই সরল রেখায় থাকার প্রয়োজন নেই।রেডিও ওয়েভ বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয় না, ফলে বায়ুমণ্ডল দ্বারা সামান্যই প্রভাবিত হয়।
রেডিও ওয়েভ-এর অসুবিধা:
উপরের আলোচনা থেকে আমরা এই ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম যে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কোন ধরণের সমস্যা তৈরি করে না। এখন আসা যাক এটি কি ধরণের সমস্যা তৈরি করে এবং কি ধরণের সমস্যা তৈরি করে না। এটি কি ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে তার তালিকা তৈরি করা হলো : ঘুমের ব্যাঘাত, ইনসোমনিয়া ,মাথাব্যথা ,হতাশা ও অবসাদ ,মনোযোগ কমিয়ে দেওয়া ,স্মৃতিশক্তিতে ব্যাঘাত ,বিরক্তি ভাব, মাথা ঝিম ঝিম করা ,দুশ্চিন্তা ও বিশ্রামহীনতা ,বমি বমি ভাব ,দৃষ্টি ক্ষমতা হ্রাস করে,প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ,সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাতেও এটি বিরূপ প্রভাব ফেলে ।রেডিও ওয়েভ ট্রান্সমিশনে নিম্নসীমার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হয়, বিপুল পরিমাণ তথ্য একসাথে প্রেরণ করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশের উপর রেডিও ওয়েভের বিরূপ প্রভাব:
আমাদের পরিবেশের উপরে রেডিও ওয়েভের বেশ কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিচে এর কিছু দেওয়া হলো:
গ্লোবাল ওয়ার্মিং:
আমাদের বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তরঙ্গ বাধা পেয়ে ফেরত আসে। যা পরোক্ষভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য দায়ী
প্রাণিদের ক্ষতি:
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ছোট আকারের প্রাণিদের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিকর। এগুলো পাখিদের দিক নির্ণয়ের ক্ষমতাতে সমস্যা তৈরি করে। রেডিও ওয়েভ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
রেডিও ওয়েভ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার উপায়
রেডিও ওয়েভ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আমরা কিছু কাজ করতে পারি। নিচে তা দেওয়া হলো:
১. নানা রকমের হোম এপ্লায়েন্সে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়। এই সকল এপ্লায়েন্স এর খুব কাছাকাছি থাকা উচিৎ না।
২. অনেকে বালিশের নিচে বা পাশে মোবাইল নিয়ে ঘুমায় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো দূরে রাখা উচিৎ।।
৩. কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে দুরুত্ব বাড়ার সাথে সাথে এর প্রভাবও কমে আসে। সম্ভব হলে দুই একদিন নানা রকমের যন্ত্র থেকে দূরে থাকে।
৪. বাসা বাড়িতে রেডিও কিংবা মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে না দেওয়া।
সব শেষে আমরা উপরের আলোচনা থেকে এই ব্যাপারগুলো বুঝতে পারি, রেডিও ওয়েভ এবং নানা রকমের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট নানা রকমের উৎস থেকে নিঃসৃত হয়। যেখান থেকেই হোক না কেনো অতিরিক্ত পরিমাণে রেডিও ওয়েভ এক্সপোজার কখনোই আমাদের জন্য কোনো উপকার বয়ে আনতে পারে না। তাই আমাদের উচিৎ এই ব্যাপারগুলোতে সতর্ক হওয়া।
রেডিও ওয়েভ-এর ব্যবহার:
মোবাইল যোগাযোগের লিংক স্থাপনে। টেলিভিশন ব্রডকাস্টিং। ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য টাওয়ার টু টাওয়ার রেডিও লিংক ব্যবহার করা হয়। রেডিও বা বেতার যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়। যখন একজন প্রেরক এবং অনেকগুলো রিসিভার থাকে তখন মাল্টিকাস্টিংয়ের জন্য একটি রেডিও ওয়েভ দরকারি।
পৃথিবীর অনেকগুলো বিতর্কের অন্যতম একটি হচ্ছে “কে রেডিও (Radio system) বা তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার (wireless communication system) উদ্ভাবক” ? এটা এমনই এক বিতর্ক যে রেডিও বা তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা উদ্ভাবনের পেটেন্ট নিয়ে বিতর্কটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
“রেডিও বা তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্ভাবন” এই আলোচনায় বাংলাদেশে প্রধানত তিনজন বিজ্ঞানীর নাম বহুলভাবে উচ্চারিত হয় – “ইতালীর মার্কোনি , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেসলা এবং বাংলার জগদীশচন্দ্র বসু”। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি , বাংলাদেশের স্কুল পড়ুয়া ছাত্র থেকে তড়িৎ-কৌশলের অধ্যাপক , বাংলা অন্তর্জালের বিভিন্ন ব্লগ এবং রেডিও বিষয়ক আলোচনায়, রেডিও বা তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা উদ্ভাবনের বিতর্কটিকে শুধুমাত্র মার্কোনি, টেসলা এবং বাংলার জগদীশচন্দ্র বসুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন।
অথচ বাংলাদেশের অনেকেই হয়তো জানেন না বিশ্বের অন্যপ্রান্তে বিশেষ করে রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে প্রত্যেক বছর ৭ই মে উদযাপিত হয় “Radio Day” বা রেডিও উদ্ভাবনের দিন। কারন মার্কোনি , টেসলা এবং জগদীশচন্দ্র বসুর সমসাময়িক একজন রুশ তড়িৎ- প্রকৌশলী, রেডিওতরঙ্গ আদান-প্রদানের মাধ্যমে , বিশ্বে প্রথম তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর নাম “আলেক্সান্দার ইস্তেপানোবিচ পাপোভ”। শিক্ষাব্যবস্থায় ইঙ্গ- মার্কিন প্রভাব প্রবল হওয়ার কারনে বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাঠক এই ব্যপারটা জানেন না। আমার আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে রেডিও বা তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম উদ্ভাবক রুশ তড়িৎ- প্রকৌশলী “আলেক্সান্দার ইস্তেপানোবিচ পাপোভ” এবং তাঁর উদ্ভাবন সম্পর্কে ব্লগের পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
আমি গর্বের সাথে বলতে পারি “সামহোয়্যারইন...ব্লগ” বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর পাঠকের সর্ববৃহৎ প্লাটফরম। তাই সবার কথা মাথায় রেখে আমি লেখাটা প্রস্তুত করার সময় পদার্থ বিজ্ঞানের একদম প্রাথমিক স্তর (elementary stage) থেকে শুরু করেছি যাতে বুঝতে সুবিধা হয় এবং কোন ধরনের গাণিতিক সমীকরনের ব্যবহার করিনি।
রেডিও বা তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা হল “রেডিও তরঙ্গ (Radio Wave)” কে ব্যবহার করে , কোন প্রকার বৈদ্যুতিক তার ছাড়াই তথ্য আদান-প্রদান করা। আমাদের ঘরের টেবিলে থাকা রেডিওটি থেকে শুরু করে বর্তমানে মোবাইল ফোন সহ আধুনিক স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছুর মূলে রয়েছে এই রেডিও তরঙ্গ।রেডিও তরঙ্গ হচ্ছে এক ধরনের তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন (Electromagnetic Radiation)।
আমাদের বুঝতে হবে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরিন কি?
পদার্থ বিদ্যায় বিকিরন (Radiation) হল কোন উৎস (Point source) হতে শক্তির উৎপাদন (Emission of Energy) অথবা উৎপাদিত শক্তির স্থানান্তর বা নির্গমন (Transmission of Energy)। সহজ কথায় উৎস হতে উৎপাদিত শক্তি যখন তরঙ্গরূপে (Acting as a wave) বা কণা আকারে (Particle) সঞ্চারিত হয় তখন তাকে বলা হয় বিকিরন।
তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন প্রকৃতিতে বিরাজমান (Natural Phenomenon) শক্তি (Energy),যা শূন্যের মধ্য দিয়ে (Vacuum of space) কোন রকম মাধ্যম ছাড়া অথবা কোন মাধ্যম(Material Medium গ্যাস , তরল পদার্থ , কঠিন পদার্থ ইত্যাদি) এর মধ্য দিয়ে তরঙ্গরূপে (In the form of wave) সঞ্চারিত (Propagated) হয়।
উৎস হতে উৎপন্ন হওয়ার পরে,তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন উৎস স্থল থেকে তরঙ্গের মত করে ছড়িয়ে পরে। যেমনঃ সূর্য থেকে আসা আলো কিংবা টেবিল ল্যাম্প থেকে আসা আলো।সাধারনত গামা রশ্মি , এক্স রে, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি , দৃশ্যমান আলো , ইনফ্রারেড , মাইক্রোওয়েভ এবং আমাদের আলোচিত রেডিও তরঙ্গ সবগুলো তরঙ্গই তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন।
উৎস হতে সৃষ্টি হওয়ার পর এই তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন তরঙ্গের মত করে সঞ্চারিত হয় কিংবা তরঙ্গের মত করে আচরণ করে বিধায় , তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনকে, তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic wave) বলতে পারি। সুতরাং দৃশ্যমান আলো , আমাদের আলোচিত রেডিও তরঙ্গ এগুলো তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
কিভাবে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের সৃষ্টি হয় ?
সহজভাবে বলতে গেলে পদার্থ (Matter) এর ক্ষুদ্রতম কণা হল পরমাণু।(Atom)। পরমাণুর অভ্যন্তরে থাকা অতিপারমাণবিক কণাগুলোর মধ্যে ইলেকট্রন ঋণাত্মক তড়িৎ আধান (Negative charge) এবং প্রোটন ধনাত্মক আধান (Positive charge) বহন করে। তড়িৎ আধানযুক্ত এই অতিপারমাণবিক কণাগুলোকে একসাথে বলা হয় তড়িৎ আধানযুক্ত কণা (charged particle )।
যখন এই তড়িৎ আধানযুক্ত কণাগুলো স্থির থাকে তখন তারা তাদের চারপাশে স্থির তড়িৎ ক্ষেত্র (Constant Electric field) তৈরি করে। আবার যখন এই তড়িৎ আধানযুক্ত কণাগুলি চলাচল করা শুরু করে (Moving condition) , তখন তারা তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে যাকে আমার বলি ইলেকট্রিক কারেন্ট এবং ইলেকট্রিক কারেন্ট সৃষ্টি করে চুম্বক ক্ষেত্র (Magnetic field)। এগুলো প্রকৃতির নিয়ম (Properties of Nature)।
আবার যখন এই তড়িৎ আধানযুক্ত কণাগুলো পরিবর্তনশীল বেগে চলাচল করা শুরু করে (Moving with variable speed) বা ত্বরিত হয় (Accelerated) , তখন তারা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল তড়িৎ ক্ষেত্র (oscillating electric field) এবং সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্র (oscillating Magnetic field) তৈরি করে। পরিবর্তনশীল তড়িৎ ক্ষেত্র , পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি করে , আবার পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্র ,পরিবর্তনশীল তড়িৎ ক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারন সুসঙ্গত গতিতে (Simple Harmonic way ) চলতে থাকে।
যখন এই “সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল তড়িৎ ক্ষেত্র” এবং “সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্র” গুলো একইসাথে তরঙ্গের মত আচরণ করে , তরঙ্গের মত করে ছড়িয়ে পরে (Propagate as a wave) , তখনই এই জাতীয় তরঙ্গগুলোকে বলা হয় তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ।তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ প্রকৃতিতে বিদ্যমান। সুদূর মহাকাশে দৃশ্যমান অসংখ্য তারকারাজি থেকে প্রতিনিয়তই তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ আমাদের পৃথিবীতে এসে পৌঁছে।
তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ যখন তরঙ্গাকারে সঞ্চালিত হয় তখন “সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল তড়িৎ ক্ষেত্র” এবং “সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল চুম্বক ক্ষেত্র” গুলো পরস্পরের সাথে সমকোণে থাকে (perpendicular to each other) এবং তরঙ্গ অভিমুখের সাথেও সমকোণে অবস্থান করে (perpendicular to the direction of energy and wave propagation)।
তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গগুলোকে তাদের কম্পাঙ্ক (Frequency) , তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength) এবং তরঙ্গগুলো যে পরিমান শক্তি (Energy) বহন করে – এগুলোর উপর নির্ভর করে পরিমাপ (Measuring electromagnetic radiation) করা হয়। আজ পর্যন্ত যতগুলো তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ সনাক্ত করা গেছে , তাদের কম্পাঙ্ক (Frequency) এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মানের ক্রমানুসারে সাজানোকে বলা হয় তড়িৎ চৌম্বকীয় বর্ণালী (Electromagnetic spectrum)।তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength) হল পরস্পর দুটি তরঙ্গশীর্ষের মধ্যবর্তী দূরত্ব। তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে পরিমাপ করার জন্য একক হিসাবে মিটার meter (m) ব্যবহার করা হয়।
কম্পাঙ্ক (Frequency) হল একটি তরঙ্গ সৃষ্টিকারী কণা , এক সেকেন্ডে যতগুলো পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে সেই সংখ্যা। এদের একক হার্জ (Hz)। ১ হাজার হার্জ (Hz) এর সমান হচ্ছে ১ কিলোহার্জ (KHz), ১ মিলিয়ন হার্জ (Hz) এর সমান হচ্ছে ১ মেগাহার্জ (MHz) এবং ১ বিলিয়ন হার্জ (Hz) এর সমান হচ্ছে ১ গিগা হার্জ (GHz)।
ক্রমবর্ধমান কম্পাঙ্ক অনুসারে সবচেয়ে উচ্চ কম্পাঙ্কের অধিকারী হচ্ছে গামারশ্মি। এর কম্পাঙ্ক ১০১৯ হার্জ এর উপরে, এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০ নিকোমিটার এর চেয়ে ছোট।তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের যে অংশ মানুষের চোখ সনাক্ত করতে পারে তাকেই দৃশ্যমান আলো বলা হয়। সাধারনত মানুষের চোখ তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের ৩৯০-৭৫০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোসনাক্ত করতে পারে।
আর আমাদের আলোচিত রেডিও তরঙ্গ , তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের সবচেয়ে কম কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট তরঙ্গ। রেডিও তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ৩ কিলোহার্জ (KHz) থেকে ৩০০ গিগাহার্জ (GHz) এবং এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সীমা ১ মিলিমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
পৃথিবীতে প্রথম তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন এবং তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ সম্পর্কে ধারনা দেন স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল। ১৮৩১ সালে বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ বিষয়ে মৌলিক সূত্র আবিষ্কার করেন। মাইকেল ফ্যারাডের বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক বলরেখা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তড়িৎ বল আর চৌম্বকীয় বলকে একীভূত করেন ম্যাক্সওয়েল! তিনি তাঁর ৪টি গাণিতিক সমীকরনের (যা ম্যাক্সওয়েলের সমীকরন নামে পরিচিত) মাধ্যমে দেখান যে তড়িৎক্ষেত্র কিভাবে চৌম্বকক্ষেত্র কে প্রভাবিত করে। ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষনা প্রবন্ধে “A Dynamical theory of the Electromagnetic field” এ তিনি দেখান যে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন আলোর গতিতে সঞ্চারিত হয় (propagate at the speed of light) এবং আলো নিজে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। কিন্তু এগুলো সবই ছিল গাণিতিক প্রমাণ।
ম্যাক্সওয়েল তাঁর তড়িৎ চৌম্বকীয় তত্ত্বের প্রতিপাদনের পর তৎকালীন সময়ের অনেক বিজ্ঞানী চেষ্টা করছিলেন ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চৌম্বকীয় তত্ত্বের পরীক্ষামূলক প্রমান দেওয়ার।
১৮৭৩ সালে জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী Heinrich Hertz প্রথম তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের পরীক্ষামূলক প্রমান দেন। তিনি প্রথম পরীক্ষাগারে কৃত্রিম ভাবে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন উৎপাদন করেন। তাঁর তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন উৎপাদন করার যন্ত্রটিকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম Spark- Gap Transmitter। তড়িৎ ক্ষেত্র এবং চুম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে , তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন যে ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি করা সম্ভব হার্জ তা দেখালেন। তিনি Ruhmkorff Induction coil এর সাহায্যে উচ্চ Voltage ব্যবহার করে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ তৈরি করেন , যা তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন সৃষ্টি করে। উৎস হতে উৎপন্ন হওয়ার পরে , তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন উৎস স্থল থেকে তরঙ্গের মত করে ছড়িয়ে পরে এই ধারনাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সরল অর্ধ-তরঙ্গ ডায়াপোল এন্টেনাকে গ্রাহক যন্ত্র (Receiver) হিসাবে ব্যবহার করে রেডিও তরঙ্গ সৃষ্টি ও ধারণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।এই পরীক্ষণগুলো প্রমাণ করেছিল, তিনি যা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তা ছিল মূলত ম্যাক্সওয়েল এর পূর্ব অনুমিত তড়িতচৌম্বক তরঙ্গের ফলাফল। ১৮৮৭ সালের
নভেম্বরে তিনি তাঁর রিসার্চ পেপার "On Electro Magnetic Effect Produced by Electrical Disturbances in Insulators" প্রকাশ করেন। এই পেপারগুলো দেখিয়েছিল যে মুক্ত স্থানে অনুপ্রস্থ তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ একটি নিদিষ্ট দূরত্ব সসীম বেগে যায়। হার্জ যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ছিলেন সেখানে, তারগুলো থেকে তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্র তরঙ্গ আকারে বের হয়। তরঙ্গগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছিল ৪মিটার। তিনি ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গ পরিমাপ করেছিলেন এবং দেখালেন তরঙ্গগুলোর বেগ আলোর বেগের সমান। তিনি ঐ তরঙ্গগুলোর তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা,পোলারিটি এবং প্রতিফলন পরিমাপ করেছিলেন। এই পরীক্ষণগুলো এটি প্রতিষ্ঠিত করে ছিল, আলো এবং এই তরঙ্গগুলো ছিল তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ যা ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো মেনে চলে।
হার্জ যে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ উৎপাদন করেছিলেন তার কম্পাঙ্ক ছিল ৫০ MHz। বর্তমানে টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য যে রেডিও তরঙ্গগুলো ব্যবহৃত হয় তাদের কম্পাঙ্কগুলোও ৫০ MHz।থেকে শুরু হয়।
সমসাময়িক বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা হার্জ এর পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের নাম দেন “Hertzian wave”।শুধুমাত্র পর্যায়ক্রমে তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হিসাবে এই “Hertzian wave”এর ব্যবহার এর কারনে ১৯১২ সালে “Hertzian wave” এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “রেডিও তরঙ্গ বা (Radio Wave)” ।হার্জ এর অসামান্য অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৯৩০ সালে সকল তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গগুলোর কম্পাঙ্ককে (Frequency) পরিমাপ করার একককে হার্জ (Hz) নামে অভিহিত করা হয়।
রেডিও আবিষ্কারের ইতিহাস
এর যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর হার্জ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল , তাঁর আবিষ্কারের কি কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ করা সম্ভব?উত্তরে তিনি হেসে বলেছিলেনঃ "Nothing, I guess.""It's of no use whatsoever...... this is just an experiment that proves Maestro Maxwell was right—we just have these mysterious electromagnetic waves that we cannot see with the naked eye. But they are there."
এবার আমি আমার মূল আলোচনায় ফিরে আসব। পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ “Hertzian wave” আবিস্কার হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই এই তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদান প্রদানের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠেন বিজ্ঞানীরা।
১৮৯০ সালের দিকে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরে এক অখ্যাত তড়িৎ প্রকৌশলীর হাতে হার্জ এর গবেষণাপত্রটি আসে। ধর্মযাজক পরিবার থেকে উঠে আসা এই তরুণ তড়িৎ প্রকৌশলী বেশ কিছুদিন ধরে “Hertzian wave” বা “Radio Wave” এর উপরে গবেষণা করছিলেন। এই অখ্যাত তড়িৎ প্রকৌশলীর নাম “আলেক্সান্দার ইস্তেপানোবিচ পাপোভ”।
১৮৮৩ সালে পাপোভ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের অদূরে ”ক্রন্সতাদ” দ্বীপে রাশিয়ান নৌবাহিনীর টর্পেডো ডিজাইন কলেজে , তড়িৎ প্রকৌশলের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এই কলেজের অধ্যাপক থাকাকালীন সময়ে তিনি “Hertzian wave” এর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে আশাবাদী হন এবং চিন্তা করেন এই মুহূর্তে রাশিয়ান নৌবাহিনীর জন্য তারহীন যোগাযোগ (wireless communication system) ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। ১৮৯৪ সালের মে-জুন মাসে পাপোভ তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ সনাক্ত করার পরীক্ষাটি বেশ কয়েকবার সম্পন্ন করেন।
কিন্তু তিনি দেখলেন হার্জ এর উদ্ভাবিত যন্ত্রগুলির সাহায্যে শুধুমাত্র তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ উৎপাদন কিংবা সনাক্ত করা সম্ভব কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার প্রায়ই অসম্ভব।।ঠিক এই সময়ে বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী “Sir Oliver Joseph Lodge” এর একটি গবেষণাপত্রের মাধ্যমে তিনি “কোহেরার Coherer” নামক একটি নতুন ধরনের device এর ধারনা পান। তিনি সিধান্ত নেন এই “Coherer” কে ব্যবহার করে তিনি “Hertzian wave বা Radio wave” এর ব্যবহারিক প্রয়োগ করতে পারবেন।
কোহেরার (Coherer) কি?
কোহেরার হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ের রেডিও তরঙ্গ সনাক্তকরণ যন্ত্রের ভিত্তি (Radio wave detecting device)। ফরাসী পদার্থ বিজ্ঞানী “EDUARD BRANLY” প্রথম এই ধরনের ব্যবস্থার ধারনা দেন। যখন কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন কিংবা প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ , এন্টেনার মাধ্যমে গ্রহণ করে - কোহেরার এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয় , তখন এই যন্ত্রটির মধ্যে তড়িৎ পরিবাহী অবস্থার (Conducting state) সৃষ্টি হয়। যার ফলে কোহেরারের সাথে সংযুক্ত ব্যটারী থেকে একমুখী বিদ্যুৎ প্রবাহ (DC current), এর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে গ্রাহক যন্ত্রে সংযুক্ত ইলেকট্রিক বেল বা MORSE CODE RECORDER কে কার্যকরী করে তোলে। "The Work of Hertz and Some of his Successors" বইতে “Sir Oliver Joseph Lodge” এই যন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন যা পাপোভকে এই deviceটি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে।
পাপোভের এই পর্যায়ক্রমিক গবেষনার ফসল- ১৮৯৪ সালের শুরুতে তিনি তাঁর নৌবাহিনী কলেজের নিজের ল্যাবরেটরীতে রেডিও তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবন করেন পৃথিবীর প্রথম বজ্রপাত সনাক্ত করার যন্ত্র (Lighting Detector)।
এটি ছিল পৃথিবীতে রেডিও তরঙ্গের প্রথম ব্যবহারিক প্রয়োগ। তিনি এক্ষেত্রে হার্জ এর Spark- Gap Transmitter এর পরিবর্তে ব্যবহার করেন প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত রেডিও তরঙ্গ। বজ্রপাত এর ফলে সৃষ্ট তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরন বা তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গকে তিনি কাজে লাগান। তখন রুশ নৌবাহিনীতে ঝড়ের পূর্বাভাষ আগে থেকে জানার জন্য এই ধরনের বজ্রপাত সনাক্ত করার যন্ত্র খুবই প্রয়োজন ছিল। তাঁর এই ব্যবস্থায় (System) বজ্রপাত হওয়ার সাথে সাথেই ইলেকট্রিক বেল বেজে উঠত। এই যন্ত্রের কার্যপ্রণালী ছিল বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট রেডিও তরঙ্গকে, এন্টেনার মাধ্যমে গ্রহণ করা , তারপর কোহেরারের (Coherer) মাধ্যমে সেই তরঙ্গকে, তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে ইলেকট্রিক বেলটাকে কার্যকর করে তোলা।
এখানে উল্লেখ্য যে , তিনিই প্রথম প্রকৃতি থেকে পাওয়া রেডিও তরঙ্গকে সনাক্ত করার জন্য Antenna ব্যবহার করেন। তাঁর বজ্রপাত সনাক্ত করার যন্ত্রটি পৃথিবীর প্রথম “Antenna সহ Radio wave Detector” যা আমাদের টেবিলে থাকা রেডিওটির আদি রূপ।
১৮৯৫ সালের ৭ই মে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গের Russian society of Physics and Chemistry এর মিলনায়তনে (Auditorium) তাঁর আবিস্কারের কথা জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক দিন। Society এর জার্নালে তাঁর জনসম্মুখে দেওয়া বক্তব্যটি গবেষণাপত্র হিসাবে প্রকাশ পায় “ On the relation of metallic powder to electrical oscillation” ( ১৯২৫ সালের ৭ই মে সোভিয়েত সরকার “৭ই মে” কে “রেডিও আবিষ্কারের দিন” হিসাবে ঘোষণা দেয় যা এখনও পর্যন্ত পুরো রাশিয়ান ফেডারেসন , মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব ইউরপের প্রত্যেক দেশে উদযাপিত হয়)
পাপোভ তাঁর গবেষণা অব্যাহত রাখেন। ১৮৯৫ সালের ডিসেম্বরে তিনি তার বজ্রপাত সনাক্ত করার যন্ত্র (Lighting Detector) এর সাহায্যে সেইন্ট পিটার্সবার্গের Forest Academy এর এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিংএ জনসম্মুখে প্রায় ৩৫০ ফুট পর্যন্ত রেডিও তরঙ্গ প্রেরন করতে সক্ষম হন।
১৮৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি কৃত্রিমভাবে রেডিও তরঙ্গ উৎপাদন করার জন্য শক্তিশালী Transmitter তৈরির ঘোষণা দেন। ১৯৯৬ সালের ২৪ এ মার্চ পাপোভ “Saint Petersburg State University” তে “Russian society of Physics and Chemistry” এর আয়োজনে একটি উন্মুক্ত পাবলিক বক্তৃতায় তার নতুন উদ্ভাবনের কথা তুলে ধরেন। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম “Wireless transmission of Radio wave”।
তিনি উৎপাদক (Transmitter) যন্ত্র থেকে গ্রাহক যন্ত্রটিকে (Receiver) প্রায় ১০০০ ফুট দূরে স্থাপন করেন এবং ইলেকট্রিক বেল এর পরিবর্তে ব্যবহার করেন Pencil এবং MORSE code Recorder। তিনি জনসম্মুখে তাঁর উদ্ভাবিত Transmitter থেকে রেডিও সিগন্যাল পাঠানো শুরু করেন এবং অপর প্রান্তে Receiver এ MORSE code Telegraphy Technology ব্যবহার করে সিগন্যাল গ্রহন করছিলেন তাঁর সহকর্মী প্রফেসর “ পেত্রুবিচ”। তাঁর পাঠানো রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে সর্বপ্রথম “GENRIC GERTZ (রুশ ভাষায় Heinrich Hertz কে এভাবে লেখা হয়) শব্দটি MORCE code এ লেখা হয়। এটা ছিল পৃথিবীর প্রথম “ তারহীন টেলিগ্রাফ যন্ত্র , Wireless Telegraph”।
সেই বছরই “Russian society of Physics and Chemistry” এর জার্নালে তার উদ্ভাবন গবেষণাপত্র হিসাবে প্রকাশ পায় “The apparatus for detecting and recording Electrical Oscillator”।
১৮৯৭ সালের মার্চ মাসে তিনি তাঁর নৌবাহিনী কলেজে বিশ্বের প্রথম “Radio Transmission Station” স্থাপন করেন এবং সমুদ্র উপকূল থেকে সমুদ্রে অবস্থানরত নৌবাহিনীর জাহাজগুলোতে সর্বোচ্চ ৪৫ মাইল পর্যন্ত রেডিও তরঙ্গ আদান-প্রদানে সক্ষম হন।
১৮৯৬ সালের শুরুর দিকে তিনি তাঁর উদ্ভাবিত “wireless radio telegraphy” যন্ত্রটির আন্তর্জাতিকভাবে পেটেন্ট করার উদ্যোগ নেন। পাঠক, এখানেই কবি নীরব। রুশ নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ তাঁর এই উদ্ভাবনকে শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করার অনুমতি দেন এবং নির্দেশ জারি করে যাতে এই উদ্ভাবনের পেটেন্ট শুধুমাত্র রাশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
১৮৯৭ সালের জুন মাসে তিনি পত্রিকা মারফত জানতে পারেন ইতালির এক তরুন যুবক মার্কোনি তারহীন রেডিও গ্রেট ব্রিটেনে পেটেন্ট করেছেন।
১৯০০ সালে রাশিয়ার Hogland দ্বীপে, ফিনল্যান্ড উপসাগর এবং বাল্টিক সাগরের ১৮০ কিমি. পশ্চিমে পাপোভ আরেকটি রেডিও স্টেশন স্থাপন করেন। এই রেডিও স্টেশন এর মাধ্যমে , রুশ নৌবাহিনী তাদের নেভাল বেস থেকে, ফিনল্যান্ড (Gulf of Finland) উপসাগরে অবস্থানরত রণতরীগুলোর সাথে পাপোভের উদ্ভাবিত “wireless radio telegraphy” যন্ত্রটির সাহায্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। ঠিক এই সময়ে সমুদ্রে বিপদে পরা যুদ্ধজাহাজ Admiral Aproxin কে উদ্ধার করার জন্য পাপোভের তৈরি “wireless radio telegraphy” ব্যবহার করা হয়।
১৯০০ সালের দিকে রুশ নৌবাহিনী পাপোভের উদ্ভাবিত “wireless radio telegraphy” যন্ত্রটি বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়। তারা ফ্রান্স নৌবাহিনীর সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ১৯০০ সালের দিকে রুশ নৌবাহিনী পাপোভের যন্ত্রটি বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার উদ্যোগ নেয়। তারা ফ্রান্সের “Diucretet Firm” এর সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তারা ফ্রান্সে পাপোভের “wireless radio telegraphy পেটেন্ট (№296354) করে। এই বছরই “Diucretet Firm” – “Popov-Diucretet radio telegraphy” নামে পাপোভের “wireless radio telegraphy” যন্ত্রটির বানিজ্যিক উৎপাদন (industrial production) শুরু করে।
তাহলে পাঠক বিতর্কটা কোথায় ? ব্রিটেনসহ পৃথিবীর প্রায় সব পশ্চিমা বিশ্বের দাবী ছিল যেহেতু ১৯৯৭ সালে মার্কোনি প্রথম তাঁর উদ্ভাবনকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্রিটিশ পেটেন্ট অফিসে রেজিস্ট্রেসন করেছিলেন, এবং তিনি একে বাজারজাত করে জনপ্রিয় করেছিলেন, তাই তিনি একক কৃতিত্বের দাবীদার।
আবার অন্যদিকে রুশদের দাবী যেহেতু ১৮৯৫ সালে পাপোভ জনসম্মুখে তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথম রেডিও তরঙ্গ সনাক্ত (Detect) করে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ করেছিলেন , যা মার্কোনির ব্রিটিশ পেটেন্ট অফিসে রেজিস্ট্রেসনের বহু আগে।
অন্যদিকে ১৮৯৬-১৯০০ সালের মধ্যে মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী “Tesla টেসলা”, রেডিও তরঙ্গকে ব্যবহার করে বেশ কিছু উদ্ভাবন করেন। তাঁর এই উদ্ভাবনের উপর ভিত্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট ১৯৪৩ সালে , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্কোনির করা সমস্ত পেটেন্টকে বাতিল ঘোষণা করে।
বাংলার জগদীশচন্দ্র বসু ঠিক একই সময়ে কৃত্রিমভাবে রেডিও তরঙ্গ উৎপাদন এবং এর বাস্তবিক প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তিনি Sir Oliver Joseph Lodge এর “কোহেরার” কে আরও উন্নত করার চেষ্টায় ছিলেন। ১৮৯৯ সালে তিনি Royal Society এর Proceedings এ ব্যাপারে তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন “One a self recovering coherer and the study of the cohering action of different metals”। জগদীশচন্দ্র বসু গ্যালেনা ক্রিস্টাল (সালফারের একধরনের খনিজ) থেকে সলিড স্টেট ডায়োড ডিটেক্টার তৈরী করেন এবং ১৯০৪ সালে এটার উপর পেটেন্ট নেন। বলা যেতে পারে উনিই সেমিকন্ডাক্টার তৈরির প্রথম পথিকৃত।
১৯০৯ সালে মার্কোনিকে, কার্ল ফের্ডিনান্ড ব্রাউন এর সাথে যৌথভাবে পদার্থ বিদ্যায় “নোবেল পুরস্কার (নোবেল পুরস্কার - আমার জীবনে দেখা চরম ভণ্ডামি গুলোর অন্যতম)” দেয়া হয় যার অন্যতম কারন ছিল “Development of Radio telegraphy”.
অন্যদিকে আমার আলোচনার মূল ব্যক্তি “আলেক্সান্দার ইস্তেপানোবিচ পাপোভ” ১৯০১ সালে “Saint-Petersburg state Electro Technical university” (আমার বিশ্ববিদ্যালয় ) এ পদার্থ বিদ্যার সন্মানিত অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই তিনি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কিভাবে “Human Voice” কে আদান-প্রদান করা যায় এই বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখেন।১৯০৬ সালে ১৩ই জানুয়ারি মাত্র ৪৬ বছর বয়সে পাপোভ মারা যান।
শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, শিক্ষার মাধ্যমও বটে; আবার বেতার শুধু শিক্ষার মাধ্যম নয়, সচেতনতার ও উৎসাহের মাধ্যম। গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেডিওর প্রচলন অত্যন্ত বেশি। এ ছাড়া বেতারকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সরকার অনেকগুলো আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছে। বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় বেতারের গুরুত্ব অনেক বেশি।
তথ্যসুত্র
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কি, Well BD.
রেডিও তরঙ্গ, Some Where In Blog.
রেডিও শব্দের উত্পত্তি, Bigganchinta.
বেতার তরঙ্গ, wirebd.
রেডিও ওয়েভ, shiko.
মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ, Satt Academy.