রাসেল ভাইপার (Russell Viper)

চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Daboia russelii) ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ এবং উপমহাদেশের প্রধান চারটি বিষধর সাপের একটি।চন্দ্রবোড়া ১৭৯৭ সালে জর্জ শ এবং ফ্রেডেরিক পলিডোর নোডার কর্তৃক বর্ণিত হয়। প্যাট্রিক রাসেল ১৭৯৬ সালে তার অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়ান সারপেন্টস, কালেক্টেড অন দা কোস্ট অফ করোমান্ডেল বইয়ে চন্দ্রবোড়া সম্পর্কে লিখেছিলেন ও তার নাম অনুসারে এটি রাসেল ভাইপার নামেও পরিচিত।
চন্দ্রবোড়ার দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট ও সরু। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত এক মিটার; দেহের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে।এর মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। থুতনি ভোঁতা, গোলাকার এবং উত্থিত। নাসারন্ধ্র বড়ো, যার প্রতিটি একটি বড়ো ও একক অনুনাসিক স্কেলের মাঝখানে অবস্থিত। অনুনাসিক স্কেলের নীচের প্রান্তটি নাসোরোস্ট্রাল স্কেলে স্পর্শ করে। সুপ্রানসাল স্কেল একটি শক্তিশালী অর্ধচন্দ্রাকার আকৃতি ধারণ করে এবং নাসালকে সামনের দিকে নাসোরোস্ট্রাল স্কেল থেকে আলাদা করে। রোস্ট্রাল স্কেল যেমন বিস্তৃত তেমনি এটি উচ্চ।
এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল
চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে দেখা যায়। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায়, বিশেষ করে নদীয়া, বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও বাঁকুড়া জেলার গ্রাম অঞ্চলে ভয়ের অন্যতম কারণ। আগে শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ দেখা যেত। যে কারণে এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল।বর্তমানে পদ্মা অববাহিকা ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার বিস্তৃত হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজশাহী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, হাতিয়া, ভোলাতে চন্দ্রবোড়ার উপস্থিতি পাওয়া দেখা গেছে।
"মানুষকে তেড়ে এসে কামড়ায়" এ কথা গুজব মাত্র
পৃথিবীতে প্রতিবছর যত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এই চন্দ্রবোড়ার বা ভাইপার সাপের কামড়ে মারা যায়। তবে "মানুষকে তেড়ে এসে কামড়ায়" এ কথা গুজব মাত্র।এরা মূলত ambush predator, তাই এক জায়গায় চুপ করে পড়ে থাকে। মানুষ বা বড় কোন প্রাণী সামনে এলে S আকৃতির কুণ্ডলী পাকিয়ে খুব জোরে জোরে হিস্ হিস্ শব্দ করে। তারপরও তাকে বিরক্ত করা হলে তবেই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছোবল মারতে পারে। ছোবল দেওয়ার সময় শরীরের সামনের দিকটা ছুঁড়ে দেয় বলে ঐ "তেড়ে এসে কামড়ায়।"
রাসেল ভাইপার সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়
সাপ সাধারণত ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তবে রাসেল ভাইপার সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। ফলে সাপের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। তবে মে থেকে পরের তিন মাস প্রজনন সবচেয়ে বেশি ঘটে। একটি স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো রাসেল ভাইপার সাপের ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ড আছে।
এই সাপ সাধারণত নীচুভূমির ঘাসবন, ঝোঁপজঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেল ভাইপার প্রজাতির সাপের উপদ্রব ও মানুষের উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।নির্দেশনায় বলা হয়েছে,রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের সঙ্গে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নীচুভূমির ঘাসবন, ঝোঁপজঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে।
সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে
সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সাথে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। রাসেল ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।সাপের কামড় এড়াতে করণীয় সম্পর্কে জানানো হয়েছে,যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে,সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা,লম্বা ঘাস,ঝোঁপঝাড়,কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে,গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকানো যাবে না।
সাপ দেখলে ৩৩৩ নম্বরে কল করে বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে জানাতে হবে
এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরতে হবে,রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে,বাড়ীর চারপাশ পরিস্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে, পতিত গাছ,জ্বালানী লাকড়ি,খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে,সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করা যাবে না এবং প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করে বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে জানাতে হবে।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে,দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশনে- বসে যেতে হবে,হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনে- হাত নড়াচাড়া করা যাবে না। হাত পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।
রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়
এতে আরো জানানো হয়, আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে,ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ,তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলতে হবে,দংশিত স্থানে কাঁটবেন না,সূই ফোটাবেন না, কিংবা কোন রকম প্রলেপ লাগাবেন না বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা যাবে না,সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না,যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে হবে,আতঙ্কিত হওয়া যাবে না,রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
রাসেল'স ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে
রাসেল'স ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে,বেজি,গুইসাপ,বাগডাশ, গন্ধগোকুল,বন বিড়াল,মেছো বিড়াল,তিলা নাগ ঈগল,সারস,মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ ‘রাসেল'স ভাইপার’ খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসকল বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে ‘রাসেল ভাইপার’ বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
রাসেল’স ভাইপার’ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী
এতে আরো জানানো হয়, ‘রাসেল’স ভাইপার’ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। ‘রাসেল’স ভাইপার’ ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ হতে অনেক জীবন রক্ষাকারী ঔষধ তৈরি হয়।সাপ মারা দ-নীয় অপরাধ,সাপ মারা হতে বিরত থাকুন।
বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়েছে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়েছে বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার। ধানক্ষেত থেকে শুরু করে বাড়ির আঙিনা যে কোনো জায়গায় মিলছে এ বিষধর সাপ। এতে করে একদিকে জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে কৃষকরা এই সাপের ভয়ে ফসলি জমিতে কাজ করতে ভয় পাচ্ছে।বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এক আতংকের নাম রাসেল ভাইপার। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই সাপ। বিশেষ করে পদ্মা-যমুনা নদী ও তার অববাহিকায় বেশি দেখা মিলছে এই বিষধর সাপের। এখন পর্যন্ত রাসেল ভাইপার যেসব জেলায় পাওয়া গেছে তা হলো-রাজবাড়ী, পাবনা,নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, চাঁদপুর,শরীয়তপুর, রাজশাহী, ভোলা,
কোন সাপ রাসেল ভাইপার, চিনবেন যেভাবে?
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, রাসেল ভাইপার (Russell's Viper) সাপটি ‘চন্দ্রবোড়া’নামেও পরিচিত।তিনি বলেন, ‘রাসেল ভাইপার দেখতে মোটাসোটা তবে লেজ সরু হয়ে থাকে। মাথা ত্রিভুজাকার এবং ‘V’ আকৃতির সাদা রেখা আছে। শরীরের পৃষ্ঠতল বাদামী এবং বৃত্তাকার বা ডিম্বাকৃতির গাঢ় চিহ্নের তিনটি লম্বা সারি রয়েছে। সাপটির গায়ে ছোপ-ছোপ গোলাকার কালো দাগ থাকে।’
রাসেল ভাইপার মোটেও দেশের সবচেয়ে বিষধর কিংবা প্রাণঘাতী সাপ নয়
সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রজাতির সাপ কামড়ালে তারও চিকিৎসা আছে এবং সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারলে মৃত্যু ঝুঁকি কমে আসে।বেসরকারি সংস্থা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন বলছে, রাসেল ভাইপার মোটেও দেশের সবচেয়ে বিষধর কিংবা প্রাণঘাতী সাপ নয়।বরং দেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে যত লোক মারা যায় তার অর্ধেকই মারা যায় পাতি কেউটে সাপের কামড়ে। তবে সময়মত চিকিৎসা না নিলে রাসেল ভাইপারের কামড়েও মৃত্যু হতে পারে।
বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো: আবু সাইদ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান সাপ বিষয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে সুপরিচিত
আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম (সাপ কামড়ালে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়) আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়।দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলো বিষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায় অশোকা ফেলো বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো: আবু সাইদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান সাপ বিষয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে সুপরিচিত। তারা দুজন বাংলাদেশের সাপ ও সর্প দংশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসা বইটির রচয়িতা।তারা উভয়ই অবশ্য বলেছেন যে রাসেল ভাইপার নিয়ে যেভাবে আতঙ্কের কথা বলা হচ্ছে সেটি নিতান্তই ভয় থেকে এবং এটি অতিরঞ্জিত।
রাসেল ভাইপার কামড় দিলেই রোগী মারা যায় এটিও সত্য নয়
‘অনেকে না জেনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সাপ দেখে সবাই ভয় পায় এবং এর কামড়ে মারা যায় এটাই মনে গেঁথে গেছে। চিকিৎসা নিলে যে ভালো হয় সেটা সবাই জানে না বলেই আতঙ্ক হয়। খুব দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেই সমাধান অনেকটা এগিয়ে নেয়া যায়,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন অধ্যাপক ফরিদ আহসান।রাসেল ভাইপারের দংশনে দ্রুত মৃত্যু হয়?গবেষক মো: আবু সাইদ বলেছেন, রাসেল ভাইপার কামড় দিলেই রোগী মারা যায় এটিও সত্য নয়, বরং রোগী সহজে মারা যায় না।‘ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টার আগে সহজে রোগী মারা যায় না। বাংলাদেশে এ সাপের কামড়ের পর ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলো এমন তথ্যও আছে।’
বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি ডা: মো: আবুল ফয়েজ সাপের দংশন ও এর চিকিৎসা নিয়ে বই লিখেছেন।সেখানে তিনিও উল্লেখ করেছেন, গোখরো সাপের দংশনের গড়ে ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড়ে ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনের গড়ে ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি।
সাপের কামড় এড়াতে করণীয়
যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না।সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন।রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করুন। বাড়ীর চারপাশ পরিস্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন। পতিত গাছ, জ্বালানী লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।
সাপের কামড় এড়াতে করণীয়
যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন। রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করুন। বাড়ীর চারপাশ পরিস্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন। পতিত গাছ, জ্বালানী লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয়
দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশনে- বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনে- হাত নড়াচাড়া করা যাবে না। হাত পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে। আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে। ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন। দংশিত স্থানে কাঁটবেন না, সূই ফোটাবেন না, কিংবা কোন রকম প্রলেপ লাগাবেন না। সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান। আতঙ্কিত হবেন না, রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
রাসেল ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়
বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ ‘রাসেল'স ভাইপার’ খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসকল বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে ‘রাসেল’স ভাইপার' বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, 'রাসেল'স ভাইপার' বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। 'রাসেল'স ভাইপার' ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ হতে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়।
তথ্যসুত্র
রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি, Ekattor.
রাসেল’স ভাইপার সাপ , Daily Naya Diganta.
রাসেল ভাইপার বিস্তৃত হচ্ছে, Jaijaidinbd.
বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার, Kalbela.
রাসেল ভাইপার প্রজাতির, Bssnews.