হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরবাংলাদেশের জাতীয় বিমান বন্দর (Hazrat Shahjalal International Airport)

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরবাংলাদেশের জাতীয় বিমান বন্দর (Hazrat Shahjalal International Airport)


হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভবনের এই নকশা করেছিলেন ফরাসি স্থপতি লারোস। এই ভবনের মূল নকশায় বড় কোনো পরিবর্তন আনা না হলেও বিমানবন্দরটিতে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। যুক্ত হচ্ছে একটি করে রানওয়ে ও টার্মিনাল। তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে আধুনিক বিমানবন্দরের নানা সুযোগ-সুবিধা।

সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী বলেন, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে বিমানবন্দর উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ চলছে। খিলক্ষেতে নিকুঞ্জের লা ম্যারিডিয়ান হোটেলের সামনের রাস্তা থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত ওভারব্রিজ করা হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড ও মেট্রো রেলের রাস্তা দিয়ে যাত্রী ও দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। থার্ড টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে থাকবে ১৫টি আগমনী বেল্ট।পর্যাপ্তসংখ্যক এসকেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট, রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবনসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং থাকবে। তিনতলা টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যে রাখা হবে নান্দনিকতার ছোঁয়া।

২০১৭ সালের ১১ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ প্রকল্পের জন্য জাপানের নিপ্পন কায়ো, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল, সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনসালট্যান্ট ও বাংলাদেশের ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেডকে যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তৃতীয় টার্মিনালের ডিজাইন রিভিউ, মূল নির্মাণকাজের দরপত্রের খসড়া এবং নির্মাণকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত তদারকিও করবে তারা। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মূল কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২২ সালে।

বাংলাদেশের জাতীয় বিমানবন্দর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান গন্তব্যসূচী


বিমান সংস্থা গন্তব্যস্থল


এয়ার আরাবিয়া শারজাহ
এয়ার এশিয়া কুয়ালালামপুর
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস কলকাতা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আবুধাবি, বাহরাইন, ব্যাংকক-সুবর্ণভূমি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, দাম্মাম, দোহা, দুবাই, হংকং, জেদ্দাহ, কাঠমান্ডু, কলকাতা, কুয়ালালামপুর, কুয়েত, লন্ডন-হিথ্রো বিমানবন্দর, মাস্কট, রিয়াদ, সিঙ্গাপুর, সিলেট
চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস বেইজিং, দুবাই, কুনমিং
চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্‌স গংঝাও
ড্র্যাগন এয়ার হংকং, কাঠমান্ডু
ড্রুক এয়ার ব্যাংকক-সূবর্ণভূমি, পারো
এমিরেট্স্ দুবাই
এত্তিহাদ এয়ারওয়েজ আবুধাবি
গাল্ফ এয়ার বাহরাইন
জেট্ এয়ারওয়েজ দিল্লি, কলকাতা
কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত
কিংফিশার এয়ারলাইন্‌স কলকাতা
মালেশিয়া এয়ারলাইন্‌স কুয়ালালামপুর
মালদিভিয়ান এয়ারওয়েজ মালে, চেন্নাই
কাতার এয়ারওয়েজ দোহা
রাখ এয়ারওয়েজ রাস আল খাইমাহ
সৌদি আরাবিয়ান এয়ারলাইন্‌স দাম্মাম, জেদ্দাহ, মদিনা, রিয়াদ
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্‌স সিঙ্গাপুর
থাই এয়ারওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকক-সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর
টার্কিশ এয়ারলাইন্‌স ইস্তাম্বুল
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, দুবাই, যশোর, কাঠমান্ডু, কলকাতা, কুয়ালালামপুর, লন্ডন-গেটউইক, সিলেট
ইয়েমেনিয়া সানা, দুবাই

পরিবহন ব্যবস্থা

যাত্রী পরিবহনের জন্য বিমানবন্দরের নিজস্ব সাটল বাস সার্ভিস আছে। পার্কিংয়ের জন্য সুপ্রস্ত পার্কিং লট আছে। বিমানবন্দরে খুব সহজেই রিকশা ও সিএনজি পাওয়া যায়। ঢাকায় উবার, পাঠাওয়ের মতো জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং সেবাও চালু আছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলো তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে যাত্রীদের আনা-নেওয়া করে থাকে।

রাত্রি যাপন

হোটেল সারিয়ানা ঢাকা: বিমানবন্দর থেকে দেড় মাইল দূরত্বে অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার: এটি বিদেশগামী ও প্রবাসফেরত বাংলাদেশি কর্মীদের সাময়িক আবাসন ব্যবস্থা। এটি বিমানবন্দরের কাছেই আছে অবস্থিত। এই সেন্টারে প্রবাসী কর্মীরা দিনে ২০০ টাকা ভাড়ায় বিদেশে যাওয়ার সময় অথবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময়ে সাময়িকভাবে অবস্থান করতে পারেন। সাশ্রয়ীমূল্যে খাবারের ব্যবস্থাও আছে। ৪০ জন পুরুষ ও ১০ জন নারীর থাকার ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। ১০০ টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে সরাসরি বা অনলাইনে বুক করার সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য ০১৩১০৩৫০৫৫৫, ০১৭৫৪৭১৫৭২০ নম্বরে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যায়।


শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বর্তমান কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, হ্যাঙ্গার, পদ্মা অয়েল ডিপো স্থানান্তর করতে হবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ মেয়াদে লিজ দেওয়া জায়গার ভবনগুলোও অপসারণ করতে হবে। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন হবে দুই লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার। আর নতুন কার্গো ভিলেজের আয়তন হবে ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার। ভিভিআইপি কমপ্লেক্স জায়গা নেবে পাঁচ হাজার ৯০০ বর্গমিটার। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে মূল এয়ারপোর্টের সংযোগ সড়ক তৈরি করা হবে।

Taken From Samakal

হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পুরানো নাম: জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) (আইএটিএ: DAC, আইসিএও: VGHS) রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান এবং সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি ১৯৮০ সালে এর কার্যক্রম শুরু করার পরে, পূর্বের বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে এর কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়। এটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যাস্ট্রা, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সহ বাংলাদেশের সকল এয়ার লাইন্সগুলোর হোম বেস।

১,৯৮১ একর এলাকা বিস্তৃত এই বিমানবন্দর দিয়ে দেশের প্রায় ৫২ শতাংশ আন্তর্জাতিক এবং আভ্যন্তরীন ফ্লাইট উঠা-নামা করে, যেখানে চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় ১৭ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করে। এ বিমানবন্দর দিয়ে বার্ষিক প্রায় ৪০ লক্ষ আন্তর্জাতিক ও ১০ লক্ষ অভ্যন্তরীন যাত্রী এবং ১৫০,০০০ টন ডাক ও মালামাল আসা-যাওয়া করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সাথে সংযুক্ত করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এই বিমানবন্দর থেকে ইউরোপ এবং এশিয়ার ১৮টি শহরে চলাচল করে।

যাত্রী পরিবহনের জন্য বিমানবন্দরের নিজস্ব সাটল বাস সার্ভিস আছে। পার্কিংয়ের জন্য সুপ্রস্ত পার্কিং লট আছে। বিমানবন্দরে খুব সহজেই রিকশা ও সিএনজি পাওয়া যায়। ঢাকায় উবার, পাঠাওয়ের মতো জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং সেবাও চালু আছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলো তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে যাত্রীদের আনা-নেওয়া করে থাকে।

Taken From Prothom Alo

আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী সেবা দিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করেছিল সরকার। ২০১৯ সালে শুরু হয়ে প্রকল্পের কাজ দুই তৃতীয়াংশ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে নির্মিতব্য তৃতীয় টার্মিনালের ৩টি ছবি প্রকাশ করেছে অন্যতম দাতা সংস্থা জাইকা। যাতে দেখা মিলেছে এর দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য।বুধবার সংস্থাটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত ছবিগুলোতে টার্মিনালের অভ্যন্তরীন দৃষ্টিনন্দন সিলিং ও পিলার দেখা যায়। অপরুপ সৌন্দর্য্যে সজ্জিত থার্ড টার্মিনাল দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এর প্রশংসায় মেতেছেন নাগরিকরা।

জানা গেছে, চলতি বছর অক্টোবরে থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে এই টার্মিনালের কাজ পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেছেন, দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবন এখন দৃশ্যমান। প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে।তিনি বলেন, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি ও নিরাপদ বিমান পরিচালনা নিশ্চিত করতে দেশের সব বিমানবন্দরে রানওয়ের শক্তি বৃদ্ধি, নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ অন্য উন্নয়নকাজ চলছে।

টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা উন্মোচনের মাধ্যমে নির্মাণে আধুনিকতা নিয়ে এসেছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন গ্রুপ।

এছাড়াও টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।

Taken From Prothom Alo

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। তবে এ টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হবে মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিং। দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার তেজগাঁও থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে কুর্মিটোলায় উড়োজাহাজ নামার জন্য একটি রানওয়ে তৈরি করে।১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠনের পর তেজগাঁও বিমানবন্দরটি পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বিমানবন্দর হয়ে ওঠে। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সরকার কুর্মিটোলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে  নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে এবং ফরাসি বিশেষজ্ঞদের মতে টার্মিনাল নির্মাণ এবং রানওয়ে নির্মাণের জন্য টেন্ডার চালু করা হয়। নির্মাণ সামগ্রী পরিবহন জন্য একটি রেল স্টেশন (বর্তমান এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশন) নির্মিত হয়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিমানবন্দরটি অর্ধেক সম্পন্ন অবস্থায় ছিল।কিন্তু যুদ্ধের সময় বিমানবন্দরে গুরুতর ক্ষতি সাধিত হয়।স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার পরিত্যক্ত কাজ পুনরায় চালু করে এবং এটিকে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূল রানওয়ে এবং কেন্দ্রীয় অংশটি খোলার মাধ্যমে ১৯৮০ সালে এয়ারপোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিমানবন্দরটির শুভ উদ্বোধন করেন। রাজনৈতিক কারণে আরও তিন বছর লাগে এটি সম্পন্ন হতে। অবশেষে ১৯৮৩ সালে  রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেন।২০১০ সালে ক্ষমতাসীন সরকার বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে, জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ হয়রত শাহজালালের নাম অনুসারে বিমানবন্দরের নাম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা হয়৷

Taken From Prothom Alo

উদ্বোধনের অপেক্ষায় তৃতীয় টার্মিনাল

কর্তৃপক্ষের দাবি, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৬০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবন। এখন অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী অক্টোবরে এই টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন হবে বলে জানা গেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী অক্টোবরে টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন হবে। পুরোপুরি চালু হবে আগামী বছর। এটি চালু হলে যাত্রীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে। উড়োজাহাজ চলাচল এবং যাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে।

বেবিচক সূত্র বলছে, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন প্রতিদিন ৩০টির বেশি বিমান সংস্থার ১২০-১৩০টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব বিমানের ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল (টার্মিনাল ১ ও ২) ব্যবহার করেন। বর্তমানে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে।

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ)। এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট। ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার স্থপতি রোহানি বাহারিন।

২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।


গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে পারে জাপান

এদিকে তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। বেবিচক সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) টার্মিনালটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে তা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, জাপান কীভাবে কাজটি করবে, আর্থিক-সংশ্লিষ্টতা কী হবে, সেবা কীভাবে দেওয়া হবে—এসব বিষয়ে তিনটি পৃথক সমীক্ষা হচ্ছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ, বেবিচক ও জাপান পৃথকভাবে সমীক্ষাগুলো করছে। এগুলো শেষ হতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে। তারপর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের একটি অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণের পর পথ দেখিয়ে পার্কিং বে–তে নেওয়া, দরজায় সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র ওঠানো-নামানো, উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা, চেকইন কাউন্টারে সেবার মতো কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।

দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস করছে। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বেশি দূর এগোয়নি।শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে। তবে যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে অনেক আগেই চালু করা যাবে এটি। বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল আছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হয়ে গেলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি।

নির্মাণযজ্ঞ শুরুর দেড় বছর পার হতে না-হতেই দৃশ্যমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। সরকার বলছে, করোনার মধ্যেও কাজ অব্যাহত থাকায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এগিয়ে রয়েছে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের এই অত্যাধুনিক টার্মিনালের নির্মাণকাজ।বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, সবকিছু এই গতিতে চললে নির্মাণকাজ শেষের লক্ষ্য ২০২৩-এর জুনের অনেক আগেই চালু করা যাবে তৃতীয় টার্মিনাল।

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরো ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণ শুরু হয়।প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়ের বেশির ভাগ আসছে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্পের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে জড়িত জাপানি এবং কোরিয়ান যে প্রকৌশলীরা ছিলেন, তারা কোভিড শুরুর পর নিজ দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাদের আশ্বস্ত করি, যত সহযোগিতা প্রয়োজন, তাদের তা দেয়া হবে- চিকিৎসা থেকে শুরু করে সবকিছুই। এ কারণে তারা আর ফিরে যাননি।

‘এই কাজটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এতে আমরা প্রত্যাশার চেয়েও অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। আমাদের মূল কাজের ১৯ ভাগেরও বেশি এরই মধ্যে শেষ। এ পর্যায়ে আমাদের ১৬ ভাগ হওয়ার কথা ছিল। আমরা মোটামুটি অগ্রসর এবং নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করি। কাজে অগ্রগতিও দৃশ্যমান।’প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টার্মিনালের ৩ হাজারে বেশি পিলার এরই মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আর এ কারণে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে মূল কাঠামো।

তৃতীয় টার্মিনালের নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। টার্মিনালের মূল ভবনের আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমুজি আর কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, শাহজালালে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হয়ে গেলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি।

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে এর অ্যাপ্রোন বা পার্কিং এলাকায় একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। ভেতরে যুক্ত হবে নতুন ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার আর ১৬টি লাগেজ বেল্ট। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা। এর পার্কিংয়ে একসঙ্গে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি।তৈরি করা হবে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এই টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে মেট্রোরেলও। আর বর্তমান দুই টার্মিনালের সঙ্গে সুড়ঙ্গপথে যুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।

শাহজালাল বিমানবন্দরে নতুন নির্বাহী পরিচালক

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে এ নিয়োগ দিয়ে তার চাকরি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অপরদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসানকে বিমানবাহিনীতে ফিরিয়ে নিতে তার চাকরি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধানের পদটি আগে ছিল পরিচালক পদমর্যাদার। পরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পরিচালক থেকে নির্বাহী পরিচালক পদে উন্নীত করে।২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক পদে নিয়োগ পান বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান।

শাহজালাল বিমানবন্দরের এভসেক পরিচালক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের (এভসেক) পরিচালক হয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা উইং কমান্ডার মোহাম্মদ মীরান।রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের (এভসেক) পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা উইং কমান্ডার মোহাম্মদ মীরান।এ নিয়োগের লক্ষ্যে তার চাকরি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। এদিকে একই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বর্তমান পরিচালক উইং কমান্ডার শাহেদ আহমেদ খানকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে তার চাকরি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে।

১৩০ ইমিগ্রেশন পুলিশ চায় শাহজালাল বিমানবন্দর

ইমিগ্রেশনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে আরও ১৩০ পুলিশ চেয়ে চিঠি দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।রোববার (৪ জুন) শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, বিমানবন্দরে প্রতিদিনই যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় যাত্রীসেবার মান বাড়াতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ চেয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ১৩০ জন যুক্ত হলে ইমিগ্রেশনের কাজও আরও দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।

বেবিচককে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইটের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন তিন শিফটে ১৬০টির বেশি ফ্লাইটে যাতায়াত করেন ৩০ হাজারের বেশি যাত্রী। তাদের চাপ সামাল দিতে ইমিগ্রেশন পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৩ শিফটে ৮ ঘণ্টা করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এই সংখ্যা বাড়ানো হলে যাত্রীদের আরও দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।


শাহজালালে ই-গেট চালু, ১৮ সেকেন্ডেই ইমিগ্রেশন

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হয়েছে ই-গেট (ইলেকট্রনিক গেট)। গতকাল মঙ্গলবার থেকে একজন যাত্রী মাত্র ১৮ সেকেন্ডে নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারছেন।হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, বিমানবন্দরের ডিপার্চার (বহির্গমন) এলাকায় মোট ১২টি এবং অ্যারাইভাল (আগমনী) এলাকায় ৩টি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। রোববার ও সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে এ গেট ব্যবহার করা হয়েছিল। এতে দেখা গেছে মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই একজন যাত্রী নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারছেন।

কামরুল ইসলাম বলেন, সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে কিছু যাত্রীকে ই-গেটের মাধ্যমে সফলভাবে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি ই-গেট চালু করা হয়েছে। ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী ভেরিফিকেশন শেষে ই-গেট অতিক্রম করতে পারবেন।গতকাল এ কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম এবং ই-পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাদাত হোসাইন। তাদের সামনে ই-গেটের মাধ্যমে কয়েকজন যাত্রীর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবন্দরে ই-গেট চালু করল।

এর আগে ২০১৯ সালেই শাহজালাল বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে তা চালু করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ কয়েকবার ই-গেট চালুর তাগিদ দিয়েছিলেন। এরপর এটি চালু করতে কাজ শুরু করে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর এবং ইমিগ্রেশন পুলিশ।যেভাবে কাজ করবে ই-গেট: বাংলাদেশ পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদফতর জানায়, ই-পাসপোর্ট নিয়ে যখন ই-পাসপোর্টধারী একজন ব্যক্তি ই-গেটের কাছে যাবেন, তখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে ই-পাসপোর্টটি রাখলে সঙ্গে সঙ্গে গেট খুলে যাবে। নির্দিষ্ট নিয়মে গেটের নিচে দাঁড়ানোর পর ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। এরপর সব ঠিকঠাক থাকলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যাত্রী ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। তবে কেউ যদি ভুল করেন তাহলে লাল বাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সঠিকভাবে ই-পাসপোর্ট ব্যবহারে সহযোগিতা করবেন।

Taken From Dhakina

তৃতীয় টার্মিনাল বদলে দেবে যাত্রীসেবা ও অভিজ্ঞতা

ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে কয়েকটি শিফটে ভাগ হয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ইয়ার্ডে কাজ করছেন দেশি- বিদেশি প্রকৌশলী আর শ্রমিকরা।

কল্পনার জগৎটাকে আপনি যদি এভাবে সাজান, রেলপথে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে এসে নামলেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। সেখান থেকে পাতালরেলে করে খিলক্ষেত হয়ে কাওলা। সেখানে নেমে সুড়ঙ্গপথে চলে যাবেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে। বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে উঠে গেলেন উড়োজাহাজে। এরপর নিজ গন্তব্যে। এ সময়ে পড়বেন না কোনো যানজটে। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দেখবেন না সূর্যের আলো। বিমানবন্দরে নেমেই হাতের নাগালে পাতাল রেল কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এক মুহূর্তেই পৌঁছে যাবেন শহরের আরেক প্রান্তে।

এটি স্বপ্ন নয়, রূপ পেতে যাচ্ছে বাস্তবে। সেই অপেক্ষা ফুরাচ্ছে এবার রাজধানীর কাওলা রেলস্টেশনকে তৈরি করা হচ্ছে শুধু হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যাওয়ার জন্য। দেশ থেকে যাঁরা বিদেশ যাবেন বা বিদেশ থেকে যাঁরা দেশে আসবেন, তাঁদের যাত্রা সহজ করতে বিমানবন্দরকে সাজানো হচ্ছে এভাবেই।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যেতে আপনি আরও একটি পথ ব্যবহার করতে পারবেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে আপনি সরাসরি চলে যেতে পারবেন নির্মিতব্য নতুন টার্মিনালে। বিমানবন্দর এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টার্মিনালে নামার জন্য রাখা হচ্ছে আলাদা ব্যবস্থা। ঠিক একই পথ ব্যবহার করে আপনি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যেতেও পারবেন। সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রোহানি বাহরিনের নকশায় এভাবেই তৈরি করা হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি।

রোহানি বাহরিন হলেন সিঙ্গাপুরের সিপিজি কনসালট্যান্ট লিমিটেডের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাও তৈরি করেছিলেন রোহানি বাহরিন। বলা হচ্ছে, অনেকটা চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলেই তৈরি হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। রোহানি বাহরিনের নকশা বাস্তবায়ন করছে জাপানি দুই কোম্পানি মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন।

দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এ দুটি টার্মিনাল ১ লাখ বর্গমিটার জায়গার ওপর। তৃতীয় যে টার্মিনালটি হচ্ছে, সেটি বর্তমান দুটি টার্মিনালের দ্বিগুণের বেশি। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকা। তৃতীয় টার্মিনালটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ২১ হাজার ৪০০ কোটি। টার্মিনালটি নির্মাণে ৫ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং নির্মাণ ব্যয়ের বাকি অংশ আসবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা’র (জাইকা) তহবিল থেকে। নতুন এই টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টার্মিনালটি নির্মাণে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশন ৫ হাজার কোটি টাকা (১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার) টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নতুন করে শুধু একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে, তা নয়। এর সঙ্গে সমান্তরালভাবে আরও চারটি কাজ হচ্ছে। টার্মিনালের পাশাপাশি দুটি হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এ দুটি ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণের কারণ, রানওয়েতে উড়োজাহাজ বেশি সময় থাকার কারণে ওপর থেকে আরেকটি উড়োজাহাজ নামতে পারে না। এ ছাড়া পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য দুটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আরও থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিন তলা ভবন। সব মিলিয়ে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে চলছে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। তৃতীয় টার্মিনাল  শুধু বিমান ওঠানামা আর ভবনের আধুনিকায়ন নয়, নতুন টার্মিনাল বদলে দেবে যাত্রীসেবার ধরনও।

বর্তমানে এ বিমানবন্দরে গাড়ি পার্কিং একটি বড় সমস্যা। নতুন টার্মিনালে থাকবে একসঙ্গে ১ হাজার ৩০০ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন বছরে সক্ষমতা আছে ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার। তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হলে সেটি উন্নীত হবে ২ কোটিতে। অর্থাৎ বাড়তি ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী নতুন করে সেবার আওতায় আসবেন।

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেল ১-এর পথ হচ্ছে কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে রাজারবাগ-মালিবাগ-রামপুরা, যমুনা ফিউচার পার্ক, খিলক্ষেত হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত। এটি পুরোটাই পাতালরেল। কাওলা স্টেশন থেকে ২০০ মিটারের একটি সুড়ঙ্গপথ তৈরির কাজ চলছে এখন। একই সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টার্মিনালে নামার জন্য সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজও চলছে। তবে নতুন টার্মিনালটি যদি পাতালরেলের আগে উদ্বোধন হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে যাত্রীরা সরাসরি টার্মিনালে চলে আসবেন।

টার্মিনালে ঢুকেই যাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে না হয়, সবচেয়ে কম সময়ে সেবা দিতে থাকছে ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার। চেক ইন পর্ব শেষ করা হলেই ইমিগ্রেশন। তৃতীয় টার্মিনালে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। যেটি সংযুক্ত থাকবে উড়োজাহাজের সঙ্গে। বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে ৬৪টি। একই সঙ্গে আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৪টি। আপনার লাগেজ বা ব্যাগ টানার জন্য নির্মাণ করা হবে ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তৃতীয় টার্মিনালে মোট ৩৭টি অ্যাপ্রোন পার্কিং থাকবে। অর্থাৎ এক সঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করতে পারবে। এখন ২৯টি অ্যাপ্রোন পার্কের সুবিধা আছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন চারটি ট্যাক্সিওয়ে আছে। নতুন করে আরও দুটি ট্যাক্সিওয়ে যোগ হচ্ছে। রানওয়েতে উড়োজাহাজকে যাতে বেশিক্ষণ থাকতে না হয়, সে জন্য নতুন দুটি ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হচ্ছে।দেশের প্রধান বিমানবন্দর ঘিরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। খন নির্মাণ করা হচ্ছে সীমানাদেয়াল, গার্ডরুম। সার্ভিস সড়ক নির্মাণের কাজও চলমান। নতুন টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক মাকসুদুল ইসলাম জানান, পুরো প্রকল্পে অন্তত ৫ হাজার মানুষ কাজ করছে।প্রকল্প পরিচালক মাকসুদুল ইসলাম জানালেন, বিদেশ থেকে একজন যাত্রী হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই যাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পান, তৃতীয় টার্মিনালটি সেভাবেই তৈরি করা হচ্ছে। সব ধরনের সুবিধা থাকবে এ টার্মিনালে।


তথ্যসুত্র

তৃতীয় টার্মিনাল বদলে দেবে যাত্রীসেবা, Dhakina.

হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, Wikiwand.

শাহজালালে ই-গেট চালু, ১৮ সেকেন্ডেই ইমিগ্রেশন, Daily Inqilab.

১৩০ পুলিশ চেয়ে চিঠি দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, Bhorer-dak.

শাহজালাল বিমানবন্দরের এভসেক পরিচালক, Bangla News24.

বিমানবন্দরে নতুন নির্বাহী পরিচালক, Bangla News24.

উদ্বোধনের অপেক্ষায় তৃতীয় টার্মিনাল, Prothom Alo.

বিমানবন্দরের দৃষ্টিনন্দন থার্ড টার্মিনাল, Dhaka Times.

যুক্ত হচ্ছে একটি করে রানওয়ে ও টার্মিনাল, Kalerkantho.

পুরানো নাম: জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, Wikivoyage.

Subscribe for Daily Newsletter