বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাফলা (Shapla Flower)

সাধারণত কোনো দেশের জাতীয় পশু, পাখি, ফল, ফুল ইত্যাদি নির্ধারণ করার আগে খুব ভালো করে দেখা হয় দুটি বিষয়। প্রথমত — যখন জাতীয়ভাবে কোনোকিছু নির্বাচিত হয়, সে দেশে জিনিসটি অনেক বেশি পরিমাণে আছে কি না। পরিমাণে বেশি থাকার অর্থ হলো জিনিসটির সঙ্গে সবাই পরিচিত। আর প্রচুর সংখ্যক থাকার কারণে তা দেশকেও সহজভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে।
এক্ষেত্রে বলা যায় শাপলা ফুলের কথা। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে খালে-বিলে ফুটে থাকে সাদা শাপলা। আর এই ফুলটিকে ছেলে-বুড়ো সবাই খুব ভালোভাবে চেনে ও জানে। আবার যদি বলা হয় ইলিশ মাছের কথা। তাহলেও ওই একই জিনিস... কেউ কোনও মাছের নাম না জানলেও ইলিশের নাম কিন্তু ঠিকই জানে এবং চিনে! মাছটির জনপ্রিয়তা এত ব্যাপক যে, সবাই এর নামের সাথে পরিচিত।
বাংলাদেশের একমাত্র মর্যাদা প্রাপ্ত জাতীয় ফুল হচ্ছে শাপলা ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaeaceae। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই বাংলাদেশের প্রায় সকল অঞ্চলে পাওয়া যায় বলে শাপলা ফুল জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ফুল জাতীয় মর্যাদা পেয়েছে যেমনঃ ভারতে পদ্ম ফুল, পাকিস্তানে জেসমিন ফুল, বেলারুশে ফ্ল্যাক্স ফুল এবং ইরানে গোলাপ ফুল জাতীয় ফুল বলে বিবেচিত হয়।
শাপলা ফুল জলে জন্মায় তাই শাপলা ফুলকে জলজ ফুল বলা হয়। সাধারণত শাপলা ফুল বাংলাদেশের পরিত্যক্ত হাওড়, পুকুর, বিলে ও জলাশয়ে কোন ধরনের পরিচর্যা ছাড়াই ফুটে থাকে।সাধারণত বাংলাদেশে কয়েকটি রংয়ের শাপলা ফুল ফুটতে দেখা যায় তার মধ্য অন্যতম সাদা, বেগুনী, লাল, নীল, এবং কালচে লাল ইত্যাদি। শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদার পাশাপাশি ডাক টিকেট ও মুদ্রায় ছাপচিত্রে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। অতীতে গ্রামবাংলার বিলে-ঝিলে ও ডোবা-নালায় শাপলা ফুলের সমারোহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে এমনিতেই জন্মাত প্রচুর শাপলা-শালুক ও ঢ্যাপ। শিশুরা তো বটেই সব বয়সের মানুষ রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রুপ দেখে মুগ্ধ হতেন। শাপলা ভরা বিলের মনমাতানো সৌন্দর্যে চোখের পলক ফেলা মুশকিল ছিল।
দ্বীপজেলা ভোলার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয় থেকে বিলুপ্ত প্রায় শাপলা ফুল। নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবার বেশি। বর্ষা মওসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটে। খাল- বিল-জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় শাপলা। আবহমান কাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে অন্তরভূক্ত ছিল। আর শিশুদের ছিল খেলার উপকরণ।
আজ জাতীয় ফুল শাপলা নিয়ে আলোচনা করব। এটা তোমরা সবাই জানো যে, সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। যার ইংরেজি নাম ‘ওয়াটার লিলি’। শাপলা এক ধরনের জলজ উদ্ভদি।
শাপলাকে কনে জাতীয় ফুল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তোমরা কি তা জান? সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক। এটা বিশ্বাস করা হয় যে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও রাজ্যের রয়েছে এক একটি জাতীয় ফুল। যা সেই সমস্ত দেশের জাতীয় প্রতীক হিসেবে স্থান পায়। শুধু ফুল নয় ফুলের পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় পশু, জাতীয় পাখি, ফল, নদ-নদী, উদ্ভিদ ইত্যাদি। ঠিক তেমনি যখন বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের কথা বলা হয় তখন যে নামটি উঠে আসে তা হল শাপলা ফুল। ভারতবর্ষের জাতীয় ফুল যেমন পদ্মফুল তেমনি বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা ফুল। এই দুই দেশের জাতীয় ফুলের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। দুটি ফুলই জলজ ফুল। অর্থাৎ পদ্ম ও শাপলা দুটি উদ্ভিদ জলজ উদ্ভিদ। আর এই ফুল দুটি দেখতেও অনেকটাই এক।
সারা বাংলাদেশ জুড়ে নানা রকমের উদ্ভিদ জন্মায়। সবুজে ভরা বাংলাদেশে কত রকমই না রংবেরঙের ফুল ফোটে। তবে তাদের মধ্যে জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করেছে শাপলা ফুল। কিন্তু শাপলা ফুলের মধ্যেও ভাগ রয়েছে। নানা রঙের শাপলা ফুল পাওয়া যায় বাংলাদেশে। কিন্তু তাদের মধ্যে শুধুমাত্র সাদা রঙের শাপলা ফুলকেই জাতীয় প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।শাপলার সাদা রং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আর পাপড়িগুলোর মতো দেশের মানুষকে একত্রিত করে।
সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক। এটা বিশ্বাস করা হয় যে শাপলার সাদা রং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আর পাপড়িগুলোর মতো দেশের মানুষকে একত্রিত করে। তাই শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে।বাংলাদেশের পয়সা, টাকা ও দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে।
আরেকটি কারণ হলো, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই সারা দেশে শাপলা পাওয়া যায়। দেশের আনাচে-কানাচে নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুর-ডোবা ছড়িয়ে আছে। আর এখানে সারা বছর প্রচুর শাপলা ফোটে।সারা বিশ্বে ৫০ প্রজাতরি শাপলা আছে, কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ২ প্রজাতির শাপলা জন্মে। সাদা ও লাল রঙের শাপলা। একটা রক্তকমল প্রজাতির আর অন্যটা হলো শালুক প্রজাতির। শাপলার শেকড় পানির নিচে থাকে আর ফুল ডাটা দিয়ে পানির উপর ফুটে থাকে।
ফুলগুলো প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন পানির উপর ভেসে থাকে। এর পাতাগুলো দেখতে গোলাকার ও সবুজ রঙের। সবুজ পাতায় সাদা লাল শাপলা দেখতে অর্পূব লাগে। বাংলাদেশে সারা বছর শাপলা কম বেশি সব জায়গায়ই হয়। তবে বেশি হয় র্বষা আর শরৎকালে।
শাপলা কেন জাতীয় ফুল?
পুকুরে-বিলে-ঝিলে সব জায়গায় দেখি শুধু শাপলা আর শাপলা, তাই মনে হয়। অন্য ফুল তো এত হতে দেখি না। এর জন্যই মনে হয় শাপলা জাতীয় ফুল।বাংলাদেশের সব জলাশয়ে শাপলা দেখা যায়, সে কারণে হতে পারে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে শাপলা ফুটে বলে নদীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে শাপলা জাতীয় ফুল। সবুজ পাতায় সাদা শাপলা দেখতে ভালো লাগে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই সারা দেশে শাপলা পাওয়া যায়।দেশের আনাচকানাচে নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও পুকুর-ডোবা ছড়িয়ে আছে। আর এখানে সারা বছর প্রচুর শাপলা ফোটে।
আমাদের জাতীয় ফুলটির রং সাদা। নীল শাপলাকে আমরা বলি শালুক আর লালটিকে বলি রক্তকমল। থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়াতেও শাপলা ফোটে। এটি কিন্তু শ্রীলঙ্কারও জাতীয় ফুল। আমাদের পয়সা, টাকা আর দলিলপত্রেও শাপলা দেখতে পাবে। শাপলা তো সবজি হিসেবে খাওয়াও হয়। শাপলা ফুলের গর্ভাশয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বীজ থাকে। এই বীজ ভেজে খই হয়। নাম ঢ্যাপের খই।
শাপলা ফুল শ্রীলঙ্কারও জাতীয় ফুল। তবে সাদা নয়, নীল শাপলা। শ্রীলঙ্কায় এই ফুল ‘নীল মাহানেল’ নামে পরিচিত। শ্রীলঙ্কার ভাষায় নীল থেকে এ ফুলকে ইংরেজিতে অনেক সময় ‘ব্লু লোটাস’ বলা হয়। দেশটির বিভিন্ন পুকুর ও প্রাকৃতিক হৃদে এ ফুল ফোটে। ওখানকার বৌদ্ধদের বিশ্বাস গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮টি শুভ চিহ্নের মাঝে একটি ছিল এই শাপলা ফুল।
সারা বিশ্বে ৫০ প্রজাতরি শাপলা আছে, কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ২ প্রজাতির শাপলা জন্মে। সাদা ও লাল রঙের শাপলা। একটা রক্তকমল প্রজাতির আর অন্যটা হলো শালুক প্রজাতির। শাপলার শেকড় পানির নিচে থাকে আর ফুল ডাটা দিয়ে পানির উপর ফুটে থাকে।
ফুলগুলো প্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন পানির উপর ভেসে থাকে। এর পাতাগুলো দেখতে গোলাকার ও সবুজ রঙের। সবুজ পাতায় সাদা লাল শাপলা দেখতে অর্পূব লাগে।বাংলাদেশে সারা বছর শাপলা কম বেশি সব জায়গায়ই হয়। তবে বেশি হয় র্বষা আর শরৎকালে। শাপলার ডাটা গ্রামের মানুষ সবজি হিসেবে খেতে খুব পছন্দ করে। আর এ ফুলের বীজ ও গুড়ো দিয়ে খই বানানো হয়।
এবারে আসা যাক দ্বিতীয় প্রসঙ্গে, নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাচাইকরণ। অর্থাৎ আশপাশের অন্য কোনও দেশ, আগে থেকেই একই জিনিসকে তাদের জাতীয় মর্যাদা দিয়ে ফেলেছে কি না! এই দুটো ব্যাপার মূলত কোনও কিছুকে জাতীয় হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রধান মানদণ্ড।
জানা গেছে, জাতীয় মর্যাদার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার টেবিলে ছিল শালিক, দোয়েল, বকসহ ৩/৪টি পাখি। অথচ তার মধ্যে দোয়েলকেই মনোনীত করা হয়েছে। কারণ পাখিটি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। শহর থেকে শুরু করে পাহাড়-বন কিংবা গ্রামের নির্জন পুকুরের পাড়েও তার দেখা মেলে। এদেশের খুব কম পাখির অবস্থানই রয়েছে এমন জায়গাতে। সাধারণত যে পাখি শহরে থাকে, সে আর বনে থাকতে পারে না- বাসস্থান, বিচরণভূমি ও আহারগত কারণে। তবে এক্ষেত্রে সর্বত্রই রয়েছে দোয়েল। এছাড়া দোয়েল কিন্তু অন্য কোনো দেশের জাতীয় পাখি নয়।
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, দেশের সর্বত্র কাকের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও, কাক কেন হলো না জাতীয় পাখি। মূলত স্বভাবগত কারনেই কাক কারো প্রিয় পাখিদের তালিকায় পড়ে না। এদিকে দোয়েল খুব নিরুপোদ্রপ একটা পাখি। কখনোই এরা মানুষের কোনও ক্ষতি করে না। তার চেয়েও বড় বিষয়, এই পাখির চমৎকার গানের গলা। ভোরবেলা তার মিষ্টি-মধুর কণ্ঠ প্রকৃতির চারপাশ মধুর করে তোলে। আর সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে গবেষকদল দোয়েলকে জাতীয় পাখির মর্যাদা দেয়।
এবার আসা যাক, জাতীয় ফল কাঁঠাল প্রসঙ্গে। এদেশে কাঁঠাল চেনে না এমন একজনও পাওয়া দুষ্কর। সব জায়গাতেই এ গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া কোনও দেশে একাধিক ফল থাকলেও, এমন একটি ফলকে জাতীয় ফল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়, যার সঙ্গে ওই দেশের সংস্কৃতির যোগ রয়েছে। একটি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে ফলের যোগসূত্র থাকলে ,তা ওই অঞ্চলে জাতীয় ফল নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হয়। আর এ বিষয়ে অনেকেরই মত, কাঁঠালের আদিনিবাস বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে।
এছাড়া জাতীয় ফলের মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিমানের কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। শুধু মানুষই নয়, গবাদিখাদ্য হিসেবেও কাঁঠাল এবং এই গাছের পাতার জুড়ি নেই। বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবেও এ ফল কাজ করে ব্যাপক। আর কাঁঠালগাছের কাঠও বেশ উন্নতমানের। মূলত এসব কারণে কাঁঠালের পরিচিতি শুরু থেকেই। তাই কাঁঠাল পায় জাতীয় ফলের মর্যাদা।এক্ষেত্রে আমের কথাও আসতে পারত। কিন্তু আগে থেকেই আম ভারতের জাতীয় ফল হিসেবে থাকার কারণে এই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে, আমগাছ এদেশের জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা ঠিকই পেয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার বিবরণ –
বাংলাদেশ খাল-বিল, নদ-নদী, ডোবা, পুকুর ইত্যাদির অভাব নেই। তাই বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের প্রায় সর্বত্রই শাপলা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। শাপলা জলজ উদ্ভিদ। শাপলার কান্ড বা ডাটি জলের মধ্যে থাকে এবং এর মূল জলের নিচে মাটিতে থাকে। শুধুমাত্র শাপলার পাতা এবং ফুল জলের উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। মূল থেকে একাধিক কান্ড বা ডগা বের হয়। এর পাতাগুলি গোলাকৃতির এবং সবুজ রঙের হয়। পাতাগুলি ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার বাইরের অংশগুলো ধারালো হয়ে থাকে। শাপলা ফুলে ১০ থেকে ১৫ টা পাপড়ি হয় ফুলগুলি দেখতে কিছুটা জলে ভাসমান তারার মত লাগে। ফুলগুলো প্রায় পাঁচ ছয় দিন জলের ওপর ভেসে থাকে।
শাপলা ফুলের অন্যান্য নাম ও প্রকারভেদ –
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল অর্থাৎ শাপলার ইংরেজি নাম (Water lily) ওয়াটার লিলি, অথবা (White water lily) হোয়াইট ওয়াটার লিলি। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার শাপলাকে (White lotus) হোয়াইট লোটাসও বলা হয়। বাংলাদেশের শাপলা ফুল কে শাপলার পাশাপাশি শালুকও বলা হয়। নানা রঙের শাপলা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। যার মধ্যে লাল রঙের শাপলাকে রক্ত কমল এবং নীল রঙের শাপলাকে নীলকমল বলা হয়। ভারতবর্ষে শাপলা ফুল কে জায়গা বিশেষে নানা নামে ডাকা হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গে- শাপলা, তামিলে- ভেলাম্বাল, আসামে- নাল ইত্যাদি। সংস্কৃত ভাষায় শাপলা ফুল কে কুমুদ বলা হয়। বিশ্বের নানা জায়গায় আরো অনেক প্রজাতির শাপলা পাওয়া যায়।
শাপলা ফুলের পুরাণের সাথে সম্পর্ক –
বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের সাথে কিছু পুরাণেরও যোগ রয়েছে। যেমন ভারতে হিন্দু দেবী মনসা পূজায় শাপলা ফুল লাগে। এই ফুল মনসা পূজায় ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয় শোনা যায় প্রাচীন গ্রিকদের জল দেবীকেও শাপলা ফুল দিয়ে উপাসনা করা হতো। নানা প্রাচীন ইতিহাস ও পুরানে শাপলার বর্ণনা পাওয়া যায়।
শাপলা ফুল কোন কোন দেশে পাওয়া যায় –
বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল শাপলা। তবে সাদা রঙের বদলে শ্রীলঙ্কায় নীল শাপলা কে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই নীল শাপলাকে বাংলায় নীলকমল এবং ইংরেজিতে ব্লু লোটাস বলা হয়। এই ফুল বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় সীমাবদ্ধ নয়, এর পাশাপাশি ভারতেও অনেক জায়গায় শাপলা চাষ হয়ে থাকে। শাপলা চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া তথা এশিয়ার অধিকাংশ স্থানেই দেখতে পাওয়া যায়।
শাপলা ফুল ফোটার সময়কাল –
এই জলজ উদ্ভিদ বাংলাদেশে সারাবছরই দেখা যায়। বছরের সব সময় চাষ করা গেলেও মূলত এটি বর্ষাকালের ফুল। বর্ষা এবং শরতকালে শাপলার প্রাচুর্য দেখা যায়। ভারত ও বাংলাদেশের নানা ডোবা ও পুকুরে সারা বছরই কমবেশি শাপলা গাছ দেখা গেলও বর্ষার সময় এর অধিকাংশ চাষ করা হয়।
শাপলা ফুলের ব্যবহার ও উপকারিতা –
ভারত-বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে এই শাপলার কান্ড বা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এর বিশেষ গুণ রয়েছে। কান্ড ছাড়াও এর যে মূল অর্থাৎ কন্দ সেটিকেও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। শাপলা ফুলের বীজ থেকে বাংলাদেশের কোথাও কোথাও একরকম খই ভাজা হয় এটিকে ‘ঢ্যাপের খই’ বলা হয়। শাপলা থেকে নানারকম ভেষজ ওষুধ তৈরি করা হয়। শাপলায় রয়েছে নানা খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন। এই উদ্ভিদ ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী সবজি। গ্রাম গঞ্জের মানুষের কাছে এটি একটি সুস্বাদু খাবার। ঔষধ এবং খাবার পাশাপাশি এই ফুল বাগান এবং পুকুর সাজাতেও কাজে লাগে। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় বাগান সাজাতে ছোট জলাশয় করে এই ফুল গাছ লাগানো হয়। জলে ভাসমান শাপলার পাতা এবং তারার মতো ফুল দেখতেও বেশ সুন্দর লাগে। বেশ সুন্দর দেখতে এই শাপলা ফুল।
জাতীয় ফুল শাপলা প্রায় বিলুপ্তির পথে
শাপলা আমাদের দেশের সবার প্রিয় জাতীয় ফুল। দেশের যেকোন ডোবা এবং নালায় শাপলা ফুল জন্ম নিয়ে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। কিন্তু আফসোসের বিষয় প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশের প্রভাবে এক সময়ের খাল বিল, হাওর, জলাশয় এবং ডোবায় ভর্তি বাতাসে হেলেদুলে শাপলা ফুলের সেই সমারোহ আর আগের মতো চোখে পড়ে না।
দিন যতই যাচ্ছে শাপলা ফুল যেন বিলুপ্তির পথে প্রায়। অথচ ১০-১৫ বছর আগেও হাওর, বড় বড় দিঘীতে এবং খাল বিলের বিশাল বুক জুড়ে শাপলা ফুলের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য এবং প্রকৃতি ছিল চোখে পড়ার মতো।শরৎকালে দিঘিতে ও বিলের বুক জুড়ে শাপলা ফুলের প্রকৃতির সৌন্দর্য অন্য রকম সাজে সেজে উঠতো। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যেত চারদিকে ফুটন্ত সাদা শাপলার সমারোহ। মনে হতো এ যেন শাপলা ফুলের আরেকটি জগৎ।
শাপলা সাধারণত দিঘী বা বিলে বেশি ফুটে থাকে। তখন গ্রামের কোমল মতি ছেলে-মেয়েরা সাঁতার কেটে এই ফুল তুলে আনত। শাপলার ডাঁটাকে দুভাবে কেটে এবং ফুলটিকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে মালার মতো করে একজন অপরজনকে গলায় পড়িয়ে দিত।আগাছা নিধনের বিষ প্রয়োগ, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন, সঠিক সময়ে বন্যা না হওয়া, আবাদি জমিতে অপরিমিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে অনেক শাপলা বীজ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে আর শাপলার গাছ জন্ম হচ্ছে না।
লালমোহনের ধলীগৌরনগরের তেগাছিয়ার বিল, করিমগঞ্জ সংলগ্ন বাউরিয়া বিল, রমাগঞ্জের সাতদরুন, লামছি, আন্দাখালী ও রায়চাঁদের দক্ষিণের বিলসহ বিভিন্ন বিলে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের ফলে শাপলা ফুল আজ বিলুপ্তির পথে। বিভিন্ন বিল ও জলাশয় গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে মাছ পাওয়া যেত সেগুলো এখন পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষের আওতায় নিয়ে আসার কারণে সেখানে আর শাপলা ফুল জন্মাতে পারে না। প্রাচীনকাল থেকেই শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ তৈরি হয়।
মাটির নিচের মূল অংশকে শালুক বলে। শাপলা আসলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া ফুল, কোনো রকম পরিচর্যা ছাড়াই বিলে ঝিলে জন্ম নেয় অপরুপ সৌন্দর্যময় এই শুভ্র ফুলটি। শাপলা আসলে কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে,যার মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলাটি অনেকেই সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে। জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে।
লাল শাপলার রাজ্যে বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা
বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলায় সাতলা বিল।ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবেই এই শাপলার অবারিত রঙ্গিন রুপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। লাল শাপলার রুপের প্রশংসা এখন গ্রাম ছাড়িয়ে দেশ-দেশান্তরে। লাল শাপলার এমন সৌন্দর্য দেখলে মনে হয় সবুজ বিছানার উপর লাল গালিচার পরশ।
সাধারণত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফুল ফোটে। আর ওই বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে জেলা ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। শিগগিরই এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা। বিলের চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলার এক মুখরিত “লাল স্বর্গ”। দূর থেকে সবুজের মধ্যে লাল রঙ দেখে দুরূহ হয়ে উঠার মতো অবস্থা। দূরত্ব কমার সাথে সাথে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফুলের অস্তিত্ব। আগাছা আর লতা পাতায় ভরা বিলে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা সত্যিই সৌন্দর্যের লীলাভূমি।বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।মনোমুগ্ধকর এ বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন পিপাসু প্রকৃতি প্রেমিরা। এ বিলের শাপলাকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপন চিত্র। ফলে দিন-দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে সাতলার ‘শাপলার বিল’।
ঠিক কত বছর ধরে বিলে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সঠিকভাবে সে তথ্য কেউ দিতে না পারলেও স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন এ বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙয়ের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলার আধিক্য বেশি। বিলের যতো ভেতরে যাবেন ততোই লালের আধিক্য। এক পর্যায়ে মনে হবে শাপলার রাজ্যে বন্দি হয়ে আছেন আপনি। তাছাড়া শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্য্য নয় বিল থেকে শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই এলাকার কয়েক শ’ পরিবার।
কী অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য! একপাশে বিলের স্নিগ্ধ রূপ, অন্যপাশে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে লাল শাপলা। দূর থেকেই মনে হচ্ছে, আমাদের অপেক্ষাতেই স্বচ্ছ পানির উপরে লাল শাপলা ফুলের বড় এক প্রাকৃতিক স্বর্গ সৃষ্টি করে দাঁড়িয়ে আছে! ফুটন্ত শাপলা ফুলের রাজ্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ভেসে বেড়াচ্ছেন নৌকায়। এপার থেকে ওপারে যাচ্ছেন, শাপলা তুলছেন তারা।
শাপলার এমন লাল দুনিয়ার দেখা মিলবে ঢাকার অদূরেই! নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজের পাশেই এই বিল। এটিকে সবাই ‘শাপলার বিল’ নামে চিনলেও এর মূল নাম শিমুলিয়া কুলাদি বিল। ফুল ফোটার পর থেকেই পাথরে বন্দি জীবন কাটানো মানুষরা প্রশান্তির আশায় ছুটে আসেন এ বিলে।
দূর থেকেই চোখে পড়বে লাল আর সবুজের মাখামাখি। কাছে গেলে স্পষ্ট হবে শাপলা ফুলের এক প্রাকৃতিক স্বর্গ। দেখেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। আগাছা আর লতাগুল্মে ভরা বিলের পানিতে ফুটে থাকা হাজার হাজার লাল শাপলা দেখতে কার না ভালো লাগে!সূর্যের সোনালি আভা শাপলাপাতার ফাঁকে ফাঁকে পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় এই বিলের সৌন্দর্য। নৌকা কিংবা হাঁটুপানি মাড়িয়ে বিলের ভেতর ঢুকলে মনে হবে বাতাসের তালে তালে এপাশ-ওপাশ দুলতে দুলতে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে শাপলারা। সে হাসিতে বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আনন্দধারা।
লাল, সাদা ও বেগুনি—তিন রঙের শাপলা জন্মে এ বিলে। তবে লাল শাপলাই বেশি। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিলে শাপলা থাকে। তবে জুলাই মাস শেষে যাওয়াই ভালো, কারণ এই সময়ে শাপলা মাত্র ফুটতে শুরু করে। সেখানে বেশ কয়েকটি ছোট নৌকা রয়েছে, চাইলে সেগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারেন ঘণ্টা চুক্তিতে।
শাপলার পুষ্টিগুণ
শাপলা বা শালুক ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। তবে, এটি শুধু ফুল হিসাবে সৌন্দর্যবর্ধকই নয়। এই শাপলার বেশ কিছু পুষ্টিগুণও রয়েছে। এছাড়াও আদিকাল থেকে বাঙালি বা এশিয়ানরা শাপলাকে বিভিন্ন মুখোরোচক খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করেছে। বর্ষার মৌসুমে শাপলা খুবই সহজলভ্য। এখন চলছে বর্ষার মৌসুম, চারদিকে অহরহ শাপলা। জাতীয় ফুল শাপলা শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। শাপলা ভাজি করে খেতে খুব মজা। এতে পুষ্টিগুণও আছে। জলজ সবুজ ডাটায় আছে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ।
এছাড়া এ ফুলের গাছ, শিকড় ও মাথা সবগুলোই দরকারী। শাপলার নরম ডাঁটা, মাথা ও গোড়ায় জন্ম নেয়া ড্যাপ এবং শালুক সবই মুখরোচক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। শাপলার গাছ বা ডাঁটা পানির গভীরতায় সাধারণত ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। তাছাড়াও শাপলার ডাঁটা তরকারি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
ইলিশ শাপলা:জাতীয় ফুল ও মাছের মিশ্রণ ঘটালে সেটি অতুলনীয় স্বাদের না হয়ে পারে না। বলছিলাম, ইলিশ শাপলার এক দুর্দান্ত রেসিপির কথা৷ চিংড়ি শাপলা: চিংড়ি দিয়ে যা-ই রান্না করা হয়, তার স্বাদই হয় অমৃত। সেখানে চিংড়ি আর শাপলার মিশ্রণ হলে তো কথাই নেই৷সর্ষে শাপলা:আমরা সর্ষে ইলিশ খেয়েছি, সর্ষে চিংড়ি, সর্ষে বিভিন্ন রেসিপি। কিন্তু, সর্ষে শাপলাও বেশ সুস্বাদু ও মজাদার একটা খাবার। মুখে লেগে থাকার মতন।শাপলা ফুলের বড়া:শাপলা ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। অনেকেই আমরা শাপলার ডাঁটা বিভিন্ন ভাবে খেলেও আদতে জানি না যে শাপলার ফুলটাও খেতে চমৎকার। এই ফুল দিয়ে হয় বেশ কিছু মজাদার রেসিপি। এখন আমরা জানব— কীভাবে শাপলা ফুলের বড়া বানানো যায়! শাপলা মসুর ডাল: মসুর ডাল দিয়ে পেঁপে, লাউ বিভিন্ন শাক যেমন খাওয়া যায়, তেমনি শাপলাও খাওয়া যায়। এই রেসিপি যেমন মজাদার হয়, তেমনি স্বাস্থ্যকর।
বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে বিলের পরিমাণ কমে গেছে। যার কারণে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে। বর্ষার শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বিক্রি করতো।
শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন বিলে অতিরিক্ত পুকুর খনন, কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মাণের ফলে, শাপলা আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহাসিক কাল থেকেই শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ তৈরি হয়। মাটির নিচের মূল অংশকে শালুক বলে।
জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে। অনেক স্থানে ফোঁটার কারণে চারিদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হতো। গ্রামবাংলার আনাচে কানাচে অহরহ দেখা যেত জলে ভাসা ফুলটি। তবে এখন অযত্ন আর অবহেলায় জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সকালে অথবা চাঁদনি রাতে বিল, ঝিল বা জলাশয়ে ফুলটি যখন অনেক ফুটে থাকে, তখন সেখানে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।
অনেকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল, জলাশয় ও নিচু জায়গায় পানি জমা থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। দিন দিন দেশের বিল-ঝিল-খাল-নদী দখল, ভরাট, জমিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শাপলাফুল।
তথ্যসুত্র:
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল, Anolipi.
লাল শাপলার রাজ্যে, Ajker Arthoniti.
অভ্যর্থনা জানাচ্ছে লাল শাপলা, Abnews24.
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য জাতীয় ফুল শাপলা, shatgambujbarta.
বিলুপ্তির পথে জাতীয় ফুল শাপলা, Daily Nayadiganta.
শাপলার গাছ জন্ম হচ্ছে না।, Manobkantha.
শাপলা ফুলের আকার কেমন?, Daily Model Test.
শাপলা ফুলের পুরাণের সাথে সম্পর্ক, Extra Gyaan.
সাদা শাপলা যে কারণে জাতীয় ফুল, BDnews24.
সারা দেশে শাপলা পাওয়া যায়।, News24bd.