সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media)

সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media)

সোশ্যাল মিডিয়া কি বা কাকে বলে ?

সামাজিক মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া হল এক ধরণের কম্পিউটার-ভিত্তিক প্রযুক্তি। যে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ডিজিটালভাবে ধারণা, চিন্তাভাবনা ও তথ্য ভাগ করে নেওয়া যায়

যেহেতু, এই সামাজিক মাধ্যমগুলো হল ইন্টারনেট-ভিত্তিক; তাই এইগুলো ব্যবহারকারীদের তাদের ব্যক্তিগত নথি, তথ্য, ভিডিও ও ফটোর মতো সামগ্রীকে দ্রুত ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, ব্যবহারকারীরা কোনো কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের সাহায্যে ওয়েব-ভিত্তিক সফ্টওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে, নানান সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত হতে পারে।

বিশ্বের সবথেকে বেশি সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা আমেরিকা ও ইউরোপে থাকলেও, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া সর্বাপেক্ষা বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের তালিকায় শীর্ষে উপস্থিত রয়েছে ৷

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার:

এখনকার সময়ে, অনলাইন চ্যাট থেকে শুরু করে, যেকোনো ব্যবসার সাফল্যের গল্পের পিছনেই রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার এক বিশাল অবদান। অনলাইন ব্র্যান্ডিং হোক কিংবা সচেতনতা তৈরি করে অনলাইন ক্রেতা খোঁজা – যেকোনো কাজের সাথেই সামাজিক মিডিয়া গুলো আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা:

পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার কোন জুরি নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেকোনো বিজনেসকে খুব সহজেই প্রমোট করা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঘরে বসে অনলাইন ইনকাম করা যায়। গ্রুপ বানিয়ে একসাথে সবার সাথে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। দৃশ্যমান হওয়া । নিজেকে শিক্ষিত করে তোলা। যখন খুশি সংযুক্ত হওয়া সম্ভব ।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক:

সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিত্তিহীন-ভূয়া খবর তৈরি হয়।নিজের পরিচয় গোপন রেখে তথ্য আদান-প্রদান করা যায় বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতারণার স্বীকার হয়।প্রতিনিয়ত এটি ব্যবহারকারীদের মানসিক চাপ বাড়িয়ে চলেছে।যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন তাদের মেজাজ বেশি খিটখিটে হয় ।মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে।কর্মক্ষেত্রের জন্য সমস্যা তৈরি করে।সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে টিনেজারসরা অর্থাৎ যাদের বয়স ১৩-১৯ এর মধ্যে ৷পড়াশোণার প্রতি তীব্র অনীহা, মনঃসংযোগের ঘাটতি, সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামাজিক মেলামেশা এসব কিছুই ভীষণভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ৷সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে তরুণরা অলস হচ্ছে, কর্মক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।সর্বোপরি সময়ের অপচয় হচ্ছে।বাস্তবের সাথে ভার্টুয়াল জীবনের আকাশ-পাতাল ফারাক । হারিয়ে ফেলার ভয় (FOMO)। একাকিত্ব।  হতাশা ও উদ্বেগ।

সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ

সামাজিক মিডিয়া ইন্টারেক্টিভ ওয়েব 2.0 ইন্টারনেট ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন।ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট বা অ্যাপের পরিষেবা জন্য -নির্দিষ্ট প্রোফাইল তৈরি করেন যা সামাজিক মিডিয়া সংস্থা দ্বারা ডিজাইন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অন্য সামাজিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগুলির সাথে ব্যবহারকারীর প্রোফাইল সংযুক্ত করে। অনলাইন সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির বিকাশে সহায়তা করে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিহাস

আমরা সবাই জানি, বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো বেশ জনপ্রিয়।বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর একটা বিপ্লব চলছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোর যাত্রা অনেক আগে থেকে শুরু হলেও মূলত ২০১০ সালে পৃথিবীজুড়ে ভালোভাবে আত্মপ্রকাশ করে। যেকোন প্রযুক্তি রাতারাতি আবিষ্কৃত হয় নি। আসলে শত শত বছরের বিভিন্ন কনসেপ্ট থেকেই সেগুলো আবিষ্কার হয়েছে। তেমনি করে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোর আবিষ্কারের ক্ষেত্রে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর সোশ্যাল মিডিয়ার মুল ধারণা মানুষের মধ্যে আসে। প্রাচীনযুগে মানুষ চিঠিপত্র আদান প্রদানের মাধ্যমে ভাবের আদান-প্রদান করতো। তবে এক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদান করতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত। মূলত চিঠিপত্র আদান প্রদানের এই  ধ্যানধারণা থেকেই আজকের এই আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব।বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাবের শুরুটা হয়েছিল ই-মেইল আদান প্রদানের মাধ্যমে।

Ray Tomlinson নামের একজন অ্যামেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার ১৯৭১ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক ই-মেইল প্রেরন করেন। অনেকেই ধারণা করেন যে, প্রথম পরীক্ষামূলক ই-মেইল প্রেরনের মাধ্যমেই আজকের এই বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব হয়েছে। Ray Tomlinson এর পর Eric Thomas নামে আরেকজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ই-মেইল আদান-প্রদানের জন্য একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করেন। যার নাম দেন Listserv । এই সফটওয়্যারটির বিশেষত্ব ছিল এরকম যার মাধ্যমে একটি ই-মেইল পাঠালেই নির্দিষ্ট কিছু ব্যবহারকারীর কাছে অটোম্যাটিক ভাবে সেই ই-মেইল ম্যাসেজ চলে যেত।

ই-মেইল আদান-প্রদানের পর, চ্যাটিং আবির্ভাব!

ই-মেইল আবিষ্কারের পরেই মূলত চ্যাটিং এর উদ্ভাবন হয়। Jarkko Oikarinen নামের একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ১৯৮৮ সালে প্রথম  Internet Relay Chat নামে একটি চ্যাটিং সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেন। ইন্টারনেট রিলে চ্যাট সফটওয়্যারের  বিশেষত্ব হল যার মাধ্যমে এর ব্যবহারকারীরা একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রিয়েল টাইম মেসেজ করতে পারে। ইন্টারনেট রিলে চ্যাটের মাধ্যমেই মূলত আজকের এই আধুনিক  চ্যাটিং বৈশিষ্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের যাত্রা শুরু

১৯৮৮ সালের প্রায় ৭ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের নাম হচ্ছে Sixdegrees.com। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই মূলত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের যাত্রা শুরু হয়। Andrew Weinreich নামের একজন অ্যামেরিকান জনৈক ব্যক্তি এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছিলেন। Sixdegrees.com  ওয়েবসাইটটিতে ২টি বৈশিষ্ট্য ছিলঃ ১।  প্রোফাইল তৈরি  ২।  ফ্রেন্ড লিস্ট  ।  Sixdegrees  এর পর আসে Friendster নামের আর একটি সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ২০০২ সালে। এই ওয়েবসাইটটি ঐ সময়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। ব্যবহারকারীদের  কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তার হওয়ার কারনে গুগল Friendster কে ক্রয় করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা তখন গুগলের  ঐ প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি।  পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সাইটটিকে বিক্রি করে দেন যা এখন পুরোপুরি বন্ধ।

পেশাদার ব্যক্তিবর্গের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম

২০০৩ সালে লিংকডিন প্রতিষ্ঠিত হয়। পেশাদার ব্যক্তিবর্গের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায়  লিংকডিন প্রথম ভার্চুয়াল জগতে আসে। অনলাইন নির্ভর সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মকে পেশাদারি এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে রুপ দিতেই মূলত Linkdin এর যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বজুড়ে ২০০ টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলগুলিতে ৭৫৬ মিলিয়ন সদস্য বিশিষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম পেশাদার নেটওয়ার্ক এখন লিংকডিন।

সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে ফেসবুকের যাত্রা শুরুর গল্প

লিংকডিনের প্রায় এক বছর পর জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় Facebook ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম  হিসেবে ভার্চুয়াল জগতে আসে। ফেসবুক বর্তমানে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম। যদি ৮-১০ বছরের একটি বাচ্চাকেও জিজ্ঞেস করা হয় যে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা কে? এক কথায় উত্তর দিবে যে মার্ক জাকারবার্গ । কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ একাই ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা নয় বরং তিনি তার চার বন্ধু মিলে ফেসবুক বানিয়েছিলেন। ফেসবুকের ব্যবহার প্রথম শুরু হয়েছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে আশেপাশের বিভিন্ন কলেজ বা ইউনিভার্সিটিগুলোতে ফেসবুকের ব্যবহার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম  হিসেবে ফেসবুক চালু হলেও পৃথিবীব্যাপী ২০০৬ সালে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রায় ২.৮ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীদের সাথে, ফেসবুক বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্ক।

সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে ইউটিউবের আগমন

ইউটিউব হচ্ছে জনপ্রিয় একটি অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটে মানুষ তার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো বিষয়ের উপর ভিডিও দেখতে পারে এবং নিজে ভিডিও তৈরি করে তাতে আপলোড করতে পারে। বর্তমানে ইউটিউবের হেড অফিস আমেরিকার সান ব্রুনো, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত । চড হারলি, স্টিভ চেন, এবং জাওয়েদ করিম যৌথ ভাবে ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেন ২০০৫ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে। তারা ছিলেন মূলত পেপালের কর্মী। প্রায় ১ বছর পর যখন ইউটিউব খুব জনপ্রিয় হতে শুরু করে তখন গুগল এই ওয়েবসাইটটিকে কিনে নেয় ১.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।  ইউটিউব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মূলত যারা ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তাদের জন্য ইউটিউব পেমেন্ট সিস্টেম রেখেছে। তাদের কাজ মূলত যেকোনো টপিকের উপর ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করা।  ইউটিউব তাদের বিজ্ঞাপন রেভিনিউ থেকে ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের পেমেন্ট করে থাকে। ইউটিউব দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার এটি একটি অন্যতম কারন। ব্যবহারকারিদের দিক থেকেও জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে ইউটিউব অন্যতম।

সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে টুইটারের আগমন

টুইটার জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে একটি। টুইটারের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের মার্চ মাসের ২১ তারিখ। টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা Jack Dorsey, Evan Williams, Biz Stone, Noah Glass । টুইটারের হেড অফিস San Francisco, California, United States। টুইটারের মাসে বর্তমান সক্রিয় ব্যবহার কারীর সংখ্যা ৩৩০  মিলিয়ন। অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোর থেকে ভিন্নধর্মী ফিচার এনে নজরে আসে টুইটার। শুধু ১৪০ অক্ষরের মাঝে বার্তা পোস্ট করার ফিচারের জন্য জনপ্রিয়তা পায় এটি। সেলিব্রেটিদের মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হিসেবে টুইটারের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

জনপ্রিয় চ্যাটিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের আগমন

টুইটারের ২ বছর পরে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং করার জন্য জনপ্রিয় অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের আগমন হয় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৪ তারিখ। হোয়াটসঅ্যাপের সদরদপ্তর মাউন্টেইন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যান কউম।  Whatsapp জনপ্রিয় হওয়ার মুল কারন হল এটি ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং বিজ্ঞাপন মুক্ত। হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ বিলিয়নের প্রায়।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি ?

সোজা ভাবে বললে, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM) হলো এমন এক টেকনিক বা প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন আলাদা আলাদা Social Media Platform যেমন, Facebook, YouTube, Instagram, LinkedIn এবং আরো অন্যান্য প্লাটফর্ম গুলিতে সক্রিয় থাকা লোকেদের লক্ষ্য (target) করে, পণ্যের গুণমান সচেতনতা (product brand awareness) ছড়ানো হয় বা বিভিন্ন product, service এবং business এর প্রচার (marketing) করা হয়।

আপনি যদি একজন businessman, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের product বা service বা যেকোনো ব্যবসার প্রমোশন (promotion) অনেক সহজে ঘরে বসেই যেকোনো জায়গা, শহর, দেশ বা আপনার আসে পাশের জায়গাতে করতে পারবেন। সবটাই আপনার স্মার্টফোনের দাড়াই সম্ভব।

কিভাবে করব সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ?

Social media marketing এর নিয়ম বা প্রক্রিয়া অনেক সহজ। এখানে আপনার কেবল এমন কিছু platforms বেঁচে নিতে হবে,এখন,মার্কেটিং বা প্রচার করার আগেই, আপনার ব্র্যান্ড (brand) বা পণ্যের নামের একটি profile, পেজ (page), গ্রুপ (group) বা কমিউনিটি (community) তৈরি করতে হবে। আপনি সবটাই ফ্রীতেই করতে পারবেন।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ৫ টি লাভ ও সুবিধা

১. যেকোনো জিনিসের promotion সম্ভব

২. কম খরচে paid advertisement

৩. Targeted promotion বা marketing

৪. সহজেই ভোক্তা (consumer) বা ক্রেতা  (Buyer) পাবেন

৫. Growing brand awareness

কেন জরুরি social media marketing ?

আজ যেকোনো ব্যবসা বা পণ্যের অনেক প্রতিযোগিতা (competition) রয়েছে। মানে, আজ একটি ব্যবসা অসংখক লোকেরাই করছেন। এক্ষেত্রে, আপনি যদি নিজের ব্যবসা, ব্র্যান্ড বা পণ্যর জন্য অধিক customer বা consumer পেতে চান, তাহলে আপনার কিছু আলাদা করতে হবে।

এক্ষেত্রে, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং আপনার অনেক কাজে আসবে। আপনি এর দ্বারা অনেক সহজেই ইন্টারনেটে সক্রিয় থাকা লোকেদের কাছে নিজের ব্যবসার প্রমোশন করতে পারবেন। এবং, এই অনলাইন মার্কেটিং এর ফলে আপনার ব্র্যান্ড ও বিসনেস এর ব্যাপারে অনেকেই জেনেনিতে পারবেন।

সোশ্যাল মিডিয়া কী একাকীত্ব ও অহংবোধ বাড়িয়ে দিচ্ছে?

সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের মধ্যে একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি করছে যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিষন্নতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকে বাড়িয়ে তুলছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে অত্যাধিক সময় ব্যয় করার কারণে মানুষের মধ্যে দুঃখ, অসন্তোষ, হতাশা বা একাকীত্বের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে যা ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করছে।

গবেষকরা বলছেন, যেহেতু এটি একটি অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযুক্তি, তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি, ভালো বা খারাপ সম্পর্কিত গবেষণা খুব কমই হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে যেসব গবেষণা হয়েছে সেসবে উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারে ফলে ব্যক্তি জীবনে বিষন্নতা, উদ্বেগ, একাকীত্ব, আত্ম-ক্ষতি এবং এমনকি আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চিন্তা এমন কিছুর মধ্যে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

গবেষকরা আরো বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যক্তি বা দল তাদের জীবনের চলমান ঘটনা বিশেষ করে কোনো বিশেষ ইভেন্ট বা ঘটনা পোস্ট করেন- স্বাভাবিকভাবেই সে বা তারা সে সম্পর্কে তার বা তাদের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রয়া প্রত্যাশা করেন। এক্ষেত্রে যে সব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় তা ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নেতিবাচক বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্তির মধ্যে অসহায়ত্ববোধ বা অনিরাপদ বোধ তৈরি করতে পারে। একইভাবে, এটি অন্যদের মধ্যে হিংসা, ঈর্ষা এবং অসন্তুষ্টির অনুভূতিগুলিকে বাড়িয়ে দেয়।

সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়া ধনি-দরিদ্রের মধ্যে বিভক্তি বাড়িয়ে দিয়ে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে অহমিকাবোধ তৈরি হচ্ছে। আমিই সেরা, আমিই উত্তম এমন মনোভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন।

সমাজে যারা ধনবান সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের জীবনযাত্রার ধরন যেমন বিদেশ ভ্রমণ, ভালো খাবার, ভালো বাড়ী, দামী গাড়ি, সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়ালেখা, অবসর বা বিনোদন যাপনের আড়ম্বরপূর্ণতা, ইত্যাদির প্রদর্শনী সমাজে যারা পিছিয়ে রয়েছে তাদের মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের মধ্যে একধরনের হতাশাবোধ তৈরি করছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ধর্মের নির্দেশনা

মানুষের প্রত্যেক কথা ও কাজ আল্লাহর দরবারে হিসাব দিতে হবে। না জেনে অনুমাননির্ভর মন্তব্য করা জঘন্য পাপ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি হচ্ছে এই জঘন্য পাপ। কারণ কেউ কাউকে অপছন্দ করলে তার কমেন্ট ঘরে এসে অপবাদ ও ধারণাপ্রসূত মন্তব্য করাটাই যেন দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। মানুষ রুটিন করেই কমেন্ট করে যাচ্ছে অন্যের পোস্টে। তবে কমেন্টে লেখা শতকরা নব্বই ভাগই ধারণাপ্রসূত। অনেকেই আবার হাসির ছলেও মিথ্যা বানোয়াট কমেন্ট করে দেয় যা আরও মারাত্মক। কারণ হাসির ছলেও মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কবিরা গুনাহের শামিল।

যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় তাদের মারাত্মক রোগ হলো তারা কাউকে অপছন্দ করলে তার ভিডিও, অডিও ক্লিপ বা ছবি বিকৃতভাবে শেয়ার করেন যাচাই-বাছাই ছাড়াই। না জেনে না শুনে গুজব ছড়িয়ে দেন অনায়াসে। অথচ যে কোনো খবর যাচাই-বাছাই ছাড়া শেয়ার বা প্রচার করা অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ। কুরআনে এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা হুজুরাত : ০৬)। হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন, মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে (বিনা বিচারে) তা-ই বর্ণনা করে।


তথ্যসুত্র:

সোশ্যাল মিডিয়া কি ?

সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিহাস

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

সোশ্যাল মিডিয়া

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ধর্মের নির্দেশনা

Subscribe for Daily Newsletter