সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার (Sufia Kamal National Public Library)

সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার (Sufia Kamal National Public Library)


ইংরেজি প্রতিশব্দ ’Library’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ’Liber’ থেকে। ‘Liber’ শব্দটি থেকে এসেছে যার অর্থ ‘বই রাখার স্থান’। গ্রন্থাগার বলতে এমন একটি স্থানকে বোঝায় যেখানে সকল ধরণের ব্যবহারকারীর জন্য গ্রন্থ বা জ্ঞান সমৃদ্ধ অন্যান্য সংগৃহিত সামগ্রী পদ্ধতিগতভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যে কেউ তা ব্যবহার করতে পারে। গ্রন্থাগারে মানুষের তথ্যসেবা ও জ্ঞানার্জনের জন্য জ্ঞানসমৃদ্ধ বই ও অন্যান্য সামগ্রী পরিকল্পিত ও সুষ্ঠভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হয়।এক কথায়, গ্রন্থাগার বলতে সাধারনত যেখানে তথ্য সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়, সংরক্ষণ করা হয় এবং চাহিদা
অনুযায়ী দ্রুত পাঠককে প্রদান করা হয় তাকেই বোঝায়।

ইউনেস্কো-এর সংজ্ঞানুসারে গ্রন্থাগার হলো-
“মুদ্রিত বই, সাময়িকী অথবা অন্য যে কোন চিত্রসমৃদ্ধ বা শ্রবণ-দর্শন সামগ্রীর একটি সংগঠিত সংগ্রহ হল গ্রন্থাগার। যেখানে পাঠকের তথ্য, গবেষণা, শিক্ষা অথবা বিনোদন চাহিদা মেটানোর কাজে সহায়তা করা হয়।”
C. C, Aguolu; I. E. Aguolu এর মতে- “গ্রন্থাগার হচ্ছে মানুষের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেরে নথিপত্রের সমষ্টি যেটি বিভিন্ন ফরমেটে ও ভাষায় সংগঠন ও ব্যাখ্যা করা হয়। গ্রন্থাগার মানুষের জ্ঞান, বিনোদন ও নান্দনিক উপভোগের নানা চাহিদা পূরণ করে।”


জাতীয় গ্রন্থাগার একটি দেশের সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিশেষ ধরনের গ্রন্থাগার যা সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ তথ্যাদি সংগ্রহের ক্ষেত্র হিসেবে সেবা প্রদান করে থাকে। গণগ্রন্থাগার থেকে পৃথক গ্রন্থাগার হিসেবে এগুলোয় খুব কমসংখ্যক নাগরিকদেরকেই গ্রন্থ ধার করার অনুমতি দেয়া হয়।গ্রিক শব্দ Libre থেকে Library’র উৎপত্তি, যার অর্থ ‘গ্রন্থাগার’। গ্রন্থাগার হচ্ছে বইপুস্তক, পত্রপত্রিকা-সাময়িকীসহ অডিওভিজুয়াল সাশ্রীর ভান্ডার, সংগ্রহশালা এবং সংরক্ষণাগার। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার বা কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পাঠাগার।

৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপিত হয়। ২২ মার্চ ১৯৫৮ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৭ সালে এটি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে স্থানান্তরিত হয় এবং ৬ জানুয়ারি ১৯৭৮ কার্যক্রম শুরু হয়।এরপর কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিসহ তৎকালীন বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার এবং জেলা পর্যায়ে বাংলাদেশ পরিষদকে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার নামকরণ করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীনে ১৯৮৩ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।

কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিটি পরবর্তীতে বরেণ্য কবি সুফিয়া কামালের নামানুসারে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার নামকণ করা হয়। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অধিদপ্তর, যার অধীনে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারসহ ৭১টি সরকারি গণগ্রন্থাগার পরিচালিত হচ্ছে।সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প’ এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্প চলাকালীন সময়ের জন্য অধিদপ্তরের অধীন সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম সাময়িকভাবে শাহবাগ থেকে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের অস্থায়ী ভবনের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এই পাঠকসেবা কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মাে. আবুল মনসুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাে. আবুবকর সিদ্দিক।শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত লাইব্রেরি সব পাঠকদের জন্য সরকার কর্তৃক আরােপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত থাকবে। তবে পবিত্র রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত লাইব্রেরি খােলা থাকবে।

সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও অধিদপ্তর উন্নীত করা হচ্ছে বিশ্বমানে

গণতান্ত্রিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ গণগ্রন্থাগার। সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ, অর্জিত শিক্ষার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, সশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক চেতনা, মূল্যবোধের বিকাশ এবং সর্বোপরি আর্থসামাজিক প্রয়োজনে তথ্য পরিবেশনসহ প্রভৃতি কাজে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। একটি জ্ঞানদ্দীপ্ত আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। গ্রন্থাগার আলোকিত মানুষ তৈরি করে।

আর সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তরুণ প্রজন্মসহ দেশের যেকোনো শ্রেণিপেশার মানুষকে গ্রন্থাগারমুখী করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। এরই মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রেই লেগেছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই সরকারি গণগ্রন্থাগারগুলোও। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারসহ দেশের গণগ্রন্থাগারগুলোকেও ডিজিটাল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও অধিদপ্তর ভবনটিও ভেঙে উন্নত বিশ্বের আদলে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত গণগ্রন্থাগারে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক। এ ছাড়া ১৮ হাজার পুস্তকের স্ক্যান করে ই-বুক তৈরির মধ্য দিয়ে ই-গ্রন্থাগার যুগেও প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

গণগ্রন্থার অধিদপ্তরের পরিচালক মোছা. মরিয়ম বেগম আমার সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ সারা দেশে ৭১টি সরকারি লাইব্রেরি রয়েছে। শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, সবাই যেনো লাইব্রেরিমুখী হয় সে জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ বা ইনোভেশন আইডিয়াও গ্রহণ করে থাকে অধিদপ্তর। এ বছরও নতুন কিছু চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি রংপুরের একজন সহকারী পরিচালক ‘লাল চায়ের আড্ডা’ নামে একটি ফ্লাটফর্ম তৈরি করেছেন, যেখানে বিভিন্ন বয়সি যে কেউই এসে বসতে পারেন, পড়তে পারেন। আরেকজন জানিয়েছেন বিব্লিউ থেরাপির কথা। যেমন— লাইব্রেরিতে এলে কোন বই পড়লে কি কাজে লাগে অর্থাৎ বই পড়ে মেডিকেল সম্পর্কেও জানা।’

ই-গ্রন্থাগার যুগে প্রবেশের বিষয়ে অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক হামিদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের একটা প্রকল্প ছিলো ‘অনলাইন লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে সুফিয়া কামাল গ্রন্থাগারে থাকা দুই লাখেরও বেশি বইয়ের ডাটাবেজ আমাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা আছে। বইয়ের সার্বিক তথ্যাদি অনলাইনে আপডেট করেছি। পাশাপাশি ১৮ হাজার পুস্তকের স্ক্যান করে ই-বুকেও রূপান্তর করেছি। যদিও এখনো তা দৃশ্যমান হয়নি কপিরাইট অ্যাক্টের কারণে। যে কারণে পাঠকের জন্য এখন পর্যন্ত উন্মুক্ত করা হয়নি। তবে কপিরাইট অ্যাক্টের ঝামেলা মিটে গেলেই এটি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে অধিদপ্তরের।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক পত্রিকা আছে, বই আছে। সবই আমরা স্ক্যান করে প্রক্রিয়াধীন রেখেছি। আর এসব উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়েই আমরা ই-গ্রন্থাগার যুগে প্রবেশ করবো। তবে এখন পর্যন্ত বইয়ের লেখক, প্রকাশকসহ বাহ্যিক সার্বিক তথ্যাদির ডিটেইলস তথ্য দেয়া থাকলেও পড়ার উপযোগী হয়নি এখনো। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ১৮ হাজার বই পড়ার উপযোগী করে আপলোড করতে না পারলেও অন্তত চার-পাঁচ হাজার বই উন্মুক্ত করা হবে এবং পাঠকরা এসব বই পড়তে পারবেন।ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির বিষয়ে জানতে  চাইলে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের মাধ্যমে অধ্যাপক আবদুল্লা আবু সায়ীদ দেশব্যাপী যে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনা করতেন সেটা এখন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীন পরিচালিত হচ্ছে। সারা দেশে ৭৬টি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে তথ্য দিচ্ছে। অবকাঠামোগত সবই আগের থাকলেও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পটিই এখন অধিদপ্তরাধীন। তাদের কাছ থেকে অধিদপ্তর সেবা ক্রয় করছে।’

এদিকে চট্টগ্রামেও প্রায় ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স  নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক মরিয়ম বেগম। যেখানে থাকবে ১৫তলা বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি, ১০ তলাবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম এবং শহীদ মিনারসহ উন্মুক্ত মঞ্চ, ফুড কোর্ট ও ক্যাফেটেরিয়া। এই কমপ্লেক্স নির্মাণের পর ছোট-বড় মিলিয়ে চারটি অডিটোরিয়াম ভাড়া নিয়ে যে কেউই সাংস্কৃতিক চর্চা, সাহিত্য চর্চা করতে পারবে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, ‘ঢাকা এবং চট্টগ্রামে একমাত্র দুই শিফটে লাইব্রেরি চলে। আর দেশের অন্যসব জায়গায় ৯টা-৫টা। আমরা আন্তরিকতার সাথে পাঠককে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া ১২ মাসে প্রায় ১৪-১৫টি অনুষ্ঠান করে থাকে অধিদপ্তর। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন-মৃত্যুবার্ষিকী, ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন, শেখ কামাল, শেখ জামালসহ শেখ রাসেল দিবস ছাড়াও দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিকদেরও জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে থাকে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর।

সহকারী পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, সারা দেশে অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭১টি সরকারি লাইব্রেরি রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি জেলা লাইব্রেরি, তিনটি উপজেলা লাইব্রেরি, চারটি শাখা লাইব্রেরি। এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের লাইব্রেরি থাকলেও একমাত্র সরকারি লাইব্রেরিই সবার জন্য উন্মুক্ত। দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা পর্যন্ত, সবার জন্য উন্মুক্ত। দেশের যেকোনো শ্রেণিপেশার যে কেউই এ লাইব্রেরিতে এসে বিনা পয়সায় জ্ঞানার্জন করতে পারে। তাদের জন্যই প্রতি বছর কেনা হয় নতুন নতুন বই। ডিজি মহোদয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সারা দেশে অধিদপ্তরের একটা টিম নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

যাতে দেশের মানুষকে সহজেই তথ্যসেবা দেয়া যায়। পাঠক যেনো লাইব্রেরিমুখী হয় সে জন্যও প্রতি বছর নানা ধরনের প্রোগ্রাম করে অধিদপ্তর। জাতীয় দিবসগুলো ছাড়াও মতবিনিময়, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের যারা কর্মকর্তা রয়েছেন তারাও বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মোটিভেট করছেন। হামিদুর রহমান বলছেন, আমাদের এখানে বেশির ভাগই তরুণ পাঠক, পাশাপাশি গবেষকরাও আসেন। মোটকথা, সব ধরনের পাঠকই আমাদের এখানে আসেন।

অধিদপ্তরের পরিচালক মরিয়ম বেগম জানিয়েছেন, বর্তমানে যে ভবনে রয়েছে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও অধিদপ্তর, সেটি ভেঙে অত্যাধুনিক ভবন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি আধুনিক বিশ্বমানের লাইব্রেরি হবে এটি। এখানে একটা ফ্লোর উন্মুক্ত থাকবে প্রতিবন্ধীদের জন্য, শিশুদের জন্য ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্যও। উন্নত বিশ্বের আদলে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সবই থাকবে নতুন ভবনে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণগ্রন্থাগারে পাঠকের জন্য অবারিত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেকোনো বয়সের পাঠক, যেকোনো পেশার পাঠক এখানে এসে পড়তে পারেন। পাশাপাশি এখান থেকে বই বাসায় নিয়েও পড়তে পারবেন, যদি মেম্বারশিপ থাকে।

অধিপ্তরের প্রকৌশলী মাকছুদুর রহমান আমার সংবাদকে বলছেন, পাঠকদের অনুপ্রাণিত করার জন্য অনলাইন লাইব্রেরি সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এটাকে নতুন ভবনে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন করে, সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করে শুধু দেশেই নয় বরং দেশের বাইরের পাঠকদেরও যেনো কানেক্ট করা যায় সে প্রয়াস চলছে। দেশ-বিদেশে; যে যেখানেই থাকুক সিনিয়র সিটিজেনরাসহ সব পাঠকই যেনো ঘরে বসেই আমাদের বই পড়তে পারেন।তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমরা নিউজিল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের বেশক’টি দেশে ঘুরেছি এবং দেখেছি সেখানকার লাইব্রেরিগুলো কীভাবে সার্ভিস দেয়। সে আদলেই সব ধরনের সুবিধা রেখেই আমরা নতুন ভবনটি নির্মাণ করতে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, উন্নত লাইব্রেরি হচ্ছে— ‘ইনশিয়াল স্টেজ অব লার্নিং’। উন্নত বিশ্বে লাইব্রেরির ডে-কেয়ার সেন্টারে বাচ্চাদের মা-বাবারা বাচ্চাদের রেখে কর্মস্থলে যান। লাইব্রেরির সেই ডে-কেয়ার সেন্টারে অক্ষর খেলে খেলেই বাচ্চারা অক্ষরজ্ঞান অর্জন করছে। প্রাথমিক শিক্ষার পুরোটাই লাইব্রেরি থেকে অর্জন করছে বাচ্চারা। আমরাও সেই আদলেই নতুন ভবনে ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা রেখেছি। যদিও আগে আমাদের দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার সেভাবে গড়ে ওঠেনি বলে এতদিনেও এ সার্ভিসটি আমরা দিতে পারিনি।

যেখানে উন্নত বিশ্বে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে, কমিউনিটিতে একটি করে লাইব্রেরি রয়েছে,  সেখানে আমাদের দেশে সে পরিবশে এখনো গড়ে ওঠেনি বলেই লাইব্রেরিগুলোও এখনো সে মানের সার্ভিস ওরিয়েন্টেড হয়ে গড়ে ওঠেনি। আমরা উন্নত বিশ্বের সেসব দেশ ঘুরে এসে এসব সার্ভিসগুলোই এখন অত্যাধুনিক নতুন ভবনে সংযুক্ত করার চেষ্টা করছি। যদিও আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করছি যাতে সাধারণ মানুষকে যেনো উন্নত বিশ্বের আদলে টোটাল সার্ভিস প্রোভাইড করতে পারি।তিনি আরও বলেন, সিনিয়র সিটেজেনদের জন্যও আমরা নতুন ভবনের একেবারে টপ ফ্লোরের ডিজাইন করেছি। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার এডুকেশনাল সিস্টেম, সার্ভিস সিস্টেমের সাথে মিল রেখেই আমাদের নতুন ভবনের ডিজাইন করা হয়েছে। অনেক কিছুতেই আধুনিক সুযোগ-সুবিধাকে সর্বোচ্চ প্রাদান্য দিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

লাইব্রেরির প্রকারভেদ

ঐতিহাসিক পরিক্রমায় সমাজে চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, ব্যবহারকারীর ধরণ এবং উপাদানের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে লাইব্রেরিকে সাধারণত ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-১. ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ২. গণ লাইব্রেরি ৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি ৪. বিশেষ লাইব্রেরি ৫. জাতীয় লাইব্রেরি।

শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে মানুষের সব জ্ঞান জমা হয়ে রয়েছে বইয়ের ভেতরে। অন্তহীন জ্ঞানের উৎস হলো বই, আর সেই বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগার বা গ্রন্থাগার। জাতীয় গ্রন্থাগার একটি দেশের সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিশেষ ধরনের গ্রন্থাগার যা সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ তথ্যাদি সংগ্রহের ক্ষেত্র হিসেবে সেবা প্রদান করে থাকে। গণগ্রন্থাগার থেকে পৃথক গ্রন্থাগার হিসেবে এগুলোয় খুব কমসংখ্যক নাগরিকদেরকেই গ্রন্থ ধার করার অনুমতি দেয়া হয়। প্রায়শঃই এখানে অগণিত দুষ্প্রাপ্য, মূল্যবান বা অতীব গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিকর্মগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। জাতীয় গ্রন্থাগার ঐ ধরনের গ্রন্থাগার যা দেশ ও দেশের বাইরের রক্ষিত দেশের সাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। এভাবেই সেসকল গ্রন্থাগারকেই জাতীয় গ্রন্থাগাররূপে আখ্যায়িত করা হয় যাতে ঐ জাতির সম্প্রদায়ের সদস্য ব্যাপকসংখ্যকভাবে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ব্রিটিশ লাইব্রেরি, প্যারিসের দ্য বিবলিওথিক ন্যাশিওনাল অন্যতম।

জাতীয় গ্রন্থাগারের ব্যাপক সংজ্ঞায় কম গুরুত্বপূর্ণ শব্দ থেকে শুরু করে শব্দ ভাণ্ডার থাকতে পারে।একই দেশে অবস্থিত অন্যান্য গ্রন্থাগারের তুলনায় সচরাচর জাতীয় গ্রন্থাগারগুলো তাদের বৃহত্তর আকারের জন্য উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকে। যে সকল রাজ্য স্বাধীন নয় কিন্তু তারা তাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি রক্ষা করতে ইচ্ছা পোষণ করে থাকে তারাও প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা বৈধ জমাদানের শর্তাবলী পালন করে জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।অনেক জাতীয় গ্রন্থাগার আন্তর্জাতিক গ্রন্থাগার সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ফেডারেশন (আইএফএলএ)-এর সদস্যভূক্ত জাতীয় গ্রন্থাগারের সাথে তাদের সাধারণ কার্যাবলী নিয়ে আলোচনাসহ সাধারণ মানদণ্ডের উন্নীতকরণ ও গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মতবিনিময়কল্পে পারস্পরিক সহযোগিতা করে থাকে। ইউরোপের জাতীয় গ্রন্থাগারগুলো ইউরোপীয় গ্রন্থাগারে অংশগ্রহণ করে। এটি ইউরোপীয় জাতীয় গ্রন্থাগারিক কনফারেন্সের (সিএফএনএল) সেবাবিশেষ।

ডিজিটাইজেশন (গ্রন্থাগার)

বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না এ কথা সত্য। তাই বলে কি কারো পক্ষে প্রয়োজনীয় সব বই কেনা সম্ভব? সংগ্রহ করাও কি সহজ? এ সমস্যার সমাধান করতে গড়ে উঠেছে লাইব্রেরি।গ্রন্থাগার হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার । জাতীয় গ্রন্থাগারের বই এবং অন্যান্য  জ্ঞানসামগ্রীগুলো  বাঁধাই আকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে জাতীয় গ্রন্থাগারে আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট সংযোগ  প্রবর্তন করা হয়েছে । আধুনিক প্রযুু্িক্তর , ইন্টারনেট সংযোগ এর মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন করাই হল ডিজিটাল লাইব্রেরীর কাজ ।

ডিটিজাল লাইব্রেরীতে তথ্য গুলো সংরক্ষণ করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে , ডিজিটাল গ্রন্থাগার  সময় এবং স্থানের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করবে। বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার মানচিত্র , সংবাদ পত্র, ম্যাগাজিন, দুর্লভ বই ইত্যাদি ডিজিটাইজ করণ চলছে।জাতীয় গ্রন্থাগার হার্ড কপি সংরক্ষন করে থাকে। কিন্তু এখন জাতীয় গ্রন্থাগার ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মাথ্যমে সরকারের ম্যনিফেষ্টো পুরুণের চেষ্টা কওে চলেছে। এই লক্ষে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রন্থাগার তার  ট্রডিশনাল গ্রন্থাগার পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল গ্রন্থাগারের পথে যাত্রা শুরু করেছে।

আরকাইভস গ্রন্থাগার অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত


১৮৯১ সনের ১১ মার্চ কোলকাতায় ইমপেরিয়াল রেকর্ড ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।  ১৯৪৭ সনে দেশ বিভাগের পর ইমপেরিয়াল রেকর্ড ডিপার্টমেন্টই ন্যাশনাল আরকাইভস অব ইন্ডিয়া নামে পরিচিতি পায়।  ১৯৫১ সনের নভেম্বরে করাচীতে ডাইরেক্টরেট অব আরকাইভস এন্ড লাইব্রেরিস এর অধীনে ন্যাশনাল আরকাইভস অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পূর্বকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে  উক্ত অফিসের শাখা অফিস হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের ভাড়া বাড়িতে ‘‘ডেলিভারী অব বুকস এন্ড নিউজ পেপার শাখা’’ নামে একটি অফিস চালু ছিল।  জাতীয় আরকাইভস এর কোন শাখা পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ সময়ে উক্ত অফিসের দায়িত্বে ছিলেন জনাব মোঃ আবুল হাশেম। যুদ্ধ চলাকালে সহকারী পরিচালক জনাব সাহাবুদ্দিন খান করাচী থেকে চলে এসে সেখানে যোগদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে তারা ১০৩ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ীর দোতলায় শাখাটি স্থানান্তর করেন।মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান দলিলসমূহসহ সরকারের স্থায়ী রেকর্ডস ও আরকাইভস সমূহ সংরক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭২ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্দেশনায় সদ্য স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগের অধীনে জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগার এর সমন্বয়ে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে।

৬ নভেম্বর ১৯৭২ তারিখে ড. খোন্দকার মাহবুবুল করিম, পরিচালক, পাকিস্তান ডাইরেক্টরেট অব আরকাইভস এণ্ড লাইব্রেরিস পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগদান করলে তাকে পরিচালক, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিদপ্তর হিসেবে এডহক দায়িত্ব প্রদান করা হয়।  ১৯৭৩ সনের মধ্যে পাকিস্তান থেকে অন্যান্য বাঙ্গালি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রিপ্যাট্রিয়েশনের মাধ্যমে দেশে ফেরৎ এসে ১০৩ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড এবং ৩৭২ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড অফিসে যোগদান করেন।  এরপরই প্রথম ৪৮টি পদ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী জনবল কাঠামো ও বাজেট অনুমোদিত হয়।

১৯৭৪ সনের ৩ জানুয়ারি সরকার  জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারের জন্য ৩২, বিচারপতি এস.এম মোর্শেদ সরণি, আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর এর বর্তমান জায়গায় ২ একর করে মোট ৪ একর জমি বরাদ্দ করে। প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা হয়। শেরেবাংলা নগরের অন্যান্য ভবনসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থপতি খন্দকার মাজহারুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ভবনটির স্থাপত্য নকশা তৈরি করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাব ও নকশা অনুমোদনের পর প্রথম পর্যায়ে জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর লক্ষ্যে ২১ জানুয়ারি ১৯৭৮ তারিখে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়।  ১৯৭৯ সনে ১০৩ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড থেকে জাতীয় গ্রন্থাগার ১০৬, সেন্ট্রাল রোডের ভাড়া বাড়ীতে স্থানান্তর করা হয়।

ভবন নির্মাণ শেষে ১৯৮৫ সনের ১ নভেম্বর জাতীয় গ্রন্থাগারের স্থায়ী ভবন আগারগাঁও এ স্থানান্তরিত হয়। কিছুদিন পর ৩৭২ এলিফ্যান্ট রোড থেকে জাতীয় আরকাইভসও জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনে স্থানান্তরিত হয়।

১৯৯৫ সনে  জাতীয় আরকাইভস ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) শুরু হলে ২০০১ সনের ১৪ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।  ২০০৬ সালে জাতীয় আরকাইভস তার নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করে।  সর্বশেষ ১৬ আগস্ট ২০১৬ তারিখে ৪১ টি নতুন পদ সৃষ্টির জিও জারির মাধ্যমে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করার আদেশ জারি হয়।  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখের ০৫.০০.০০০০.১৩২.১৯.০০১.১৭-১২৬ নম্বর আদেশের অনুবৃত্তিক্রমে ১২ মার্চ ২০১৮ তারিখে অতিরিক্ত সচিব জনাব দিলীপ কুমার সাহা এ অধিদপ্তরের প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।

ইতিহাস

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তান সরকার ১৯৬২ সালে করাচীতে পাকিস্তান জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকায় পাকিস্তান জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রাদেশিক শাখা প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, একটি নতুন জাতির জন্য একটি জাতীয় গ্রন্থাগার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার ঢাকায় জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালের ৩ জানুয়ারি সরকার জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারের জন্য শেরেবাংলা নগরে ২ একর করে মোট ৪ একর জমি বরাদ্দ করে।  প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনার আওতায় জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারের স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা হয়। গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে পূর্বের ঢাকার প্রাদেশিক শাখাটি থেকে বই, জনশক্তি, সম্পদ এবং উপকরণ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার আগারগাঁওতে নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করে।

জাতীয় আর্কাইভসহ জাতীয় গ্রন্থাগারকে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীনে দেয়া হয়। অধিদপ্তরটি পরিচালিত হয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে।সরকার পাঁচ বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭৮ সালে গ্রন্থাগারে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ লাগানো হয়। ২০০৮ সালে গ্রন্থাগারটি এক মাসের জন্য বিদ্যুৎ বিহীন ছিল কারণ ঢাকা ইলেকট্রিকাল সাপ্লাই কোম্পানি ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এটি ঠিক করতে অস্বীকার করেছিল। এছাড়া অনলাইন ক্যাটালগ না থাকার কারণে গ্রন্থাগারটি সমালোচিত হয়।বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগারের অধীনে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ৭০টি সরকারী গ্রন্থাগার রয়েছে।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কার্যাবলী

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে সৃজনশীল প্রকাশনাকে উৎসাহিতকরণ ও পাঠক সৃষ্টি করা। গ্রন্থন্নোয়নে পাঠ সামগ্রীর উপর গ্রন্থপঞ্জি প্রকাশ এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রকাশ করা। বই বা গ্রন্থ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা ও তৎসম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা । আন্তর্জাতিক/বিভাগীয়/জেলা/উপজেলা পর্যায়ে বইমেলার আয়োজন করা। গ্রন্থাগার সেবার মান উন্নয়ন ও জনসাধারণের মধ্যে পাঠ সচেতনতা সৃষ্টি করা। গ্রন্থ প্রকাশনাকে উৎসাহিত করার জন্য শ্রেষ্ঠ প্রকাশককে পুরস্কৃত করা। শিল্পসম্মত ও উন্নতমানের পুস্তক মুদ্রণকে উৎসাহিত করার লক্ষে শ্রেষ্ঠ মুদ্রাকরকে পুরস্কৃত করা। বেসরকারি গ্রন্থাগারসমূহের মধ্যে আর্থিক অনুদান ও বই প্রদান করা।  বেসরকারি গ্রন্থাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা/কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ে সরকারকে সহায়তা প্রদান করা। গ্রন্থবিষয়ক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেমিনার/মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা। মাসিক পত্রিকা ‘বই’ মূদ্রণ করা।জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষ দিবস উদযাপনের আয়োজন করা।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

১. জ্ঞান ও মননশীলতার উৎকর্ষ সাধনে গ্রন্থ ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডকে তরান্বিত করা ২. সাহিত্যমনস্ক ও জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি ও সমাজ গঠন করা ৩. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারীভাবে গ্রন্থাগার স্থাপনে জনসাধারনকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা ৪. বেসরকারী গ্রন্থাগারের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করা ৫. লেখক, কবি ও সাহিত্যিককে তার সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ও প্রসার ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করা ৬. পুস্তক বা গ্রন্থ প্রকাশনা শিল্পকে উৎসাহিত ও লাভজনক শিল্পে পরিণত করা ৭. পুস্তক বা গ্রন্থের প্রকাশ, প্রকাশনা বৃদ্ধি তরান্বিত করা ৮. বইমেলাকে দেশ ও দেশের বাইরে সর্বস্তরের জনসাধারনের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া ৯. সর্বসাধারনের মধ্যে লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও তাদের প্রকাশিত পুস্তক বা গ্রন্থের পরিচিতি বাড়ানো ১০. জনসাধারনকে গ্রন্থ পাঠে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা।

লক্ষ্য

প্রতি বছর দেশের ভেীগোলিক সীমানার মধ্যে প্রকাশিত মেীলিক সৃজনশীল প্রকাশনাসামগ্রি সংগ্রহ করা এবং জাতীয় সংগ্রহ সম্ভার বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সাধারণ  পাঠাক ও গবেশকদেরকে উন্নত তথ্যসেবা প্রদান। বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থপঞ্জি সংকলন, প্রকাশ ও বিতরণ এবং অনলাইন পাবলিক একসেস ক্যাটালগ(ঙচঅঈ)এর মাধ্যমে জাতীয় সংগ্রহ সম্ভার সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের অবহিতকরণ। প্রযুক্তি সহযোগে জাতীয় সংগ্রহ সম্ভার স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ। জাতীয় সংগ্রহের তথ্যাদি সহজলভ্যকরণ।

দূরদৃষ্টি

তথ্যসেবাদানের শীর্ষকেন্দ্র/উৎকর্ষকেন্দ্র হিসেবে তৈরির মাধ্যমে সমগ্রজাতির প্রতিযোগিতামূলক সামর্থ্য বৃদ্ধিপূর্বক দেশে সমতাভিত্তিক উদার ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এক জায়গায় (ওয়ানস্টপ) এক শিক্ষা, গবেষণা ও রেফারেন্স সেবা প্রদান করা।

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এর ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন করা হয়। আজ পালিত হচ্ছে ৫ম জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস।এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগে জাতীয় গ্রন্থাগার অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় সারাদেশে একযোগে শুরু হবে গ্রন্থাগার দিবস পালনের আয়োজন। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি।

কে এম খালিদ জানান, সারা দেশে ৭১টি গণগ্রন্থাগার আছে। সেগুলো ডিজিটালাইজেশনের কাজ চলছে। এর ফলে সকল লাইব্রেরির তথ্য একটি জায়গাতেই পাওয়া যাবে। ধীরে ধীরে দেশের বেসরকারি লাইব্রেরিগুলোকেও এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। বলা হয়, মানুষের বই পড়ার আগ্রহ থেকেই গ্রন্থাগারের উৎপত্তি।  গ্রন্থাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদণ্ড।

প্রমথ চৌধুরীর মতে, ‘লাইব্রেরি হচ্ছে এক ধরনের মনের হাসপাতাল।’পাঠাগার শুধু ভালো ছাত্রই নয়, ভালো মানুষও হতে শেখায়।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না।  আর তাই গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকাকে দৃঢ় করাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের লক্ষ্য।১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়।  ১৯৭৮ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।  ১৯৮৫ সালে ডাইরেক্টরেট অব আর্কাইভস অ্যান্ড লাইব্রেরিজ হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়।  বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। ১৯৯৬ সাল থেকে এ গ্রন্থাগার থেকে আইএসবিএন দেওয়া হচ্ছে।অন্যদিকে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সকলের জন্য উম্মুক্ত একটি গণগ্রন্থাগার (Public Library)।  ১৯৭৭-৭৮ সালে গ্রন্থাগারটি শাহবাগের নতুন ভবনে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়। এ গ্রন্থাগার দেশের সকল জেলা উপজেলায় একটি করে গ্রন্থাগার স্থাপন করেছে।

গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে নানান কর্মসূচি

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০২৩ পালন হবে রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি)। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহাবাগে জাদুঘরের সিনেপ্লেক্স কক্ষে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস- ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সব পর্যায়ে জনগণকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের’ তাৎপর্য সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহতি ও সচেতন করার লক্ষ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন গণগ্রন্থাগার অধিদফতর এবং এর আওতাধীন বিভাগীয়-জেলা-উপজেলা গণগ্রন্থাগার একযোগে এ দিবস উদযাপনের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।কে এম খালিদ বলেন, গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারগুলোতে রচনা, চিত্রাংকন ও বইপাঠ প্রতিযোগিতাসহ নানান কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং গ্রন্থাগার দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্বের ওপর বিশেষ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিনিম হোসেন রিমি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রানালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের তাৎপর্য ও আমাদের করণীয়

আজ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, গ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি, বেলিড-সহ বিভিন্ন গ্রন্থাগার সংস্থা, গ্রন্থাগার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালগুলোর গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিনটি পালন করছে। বিজ্ঞ বিশিষ্টজনরা দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে পত্রপত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন

দেশের সব স্তরের মানুষকে বিশেষ করে ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষকদেরকে অধিকতর গ্রন্থাগারমুখী করে তোলা, জাতিগঠনে গ্রন্থাগারের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা, দেশে বিদ্যমান গ্রন্থাগারগুলোতে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ওপর সর্বশেষ প্রকাশিত বই ও সাময়িকীর তথ্যাদি প্রদান, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির কলাকৌশল সম্পর্কে আলোচনা ও মতবিনিময়, মননশীল সমাজ গঠনে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা, পাঠসামগ্রী সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিতরণ ও পাঠক তৈরির মাধ্যমে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এবং গ্রন্থাগারকর্মী ও পেশাজীবী, লেখক, প্রকাশক, পাঠক বিশেষ করে বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির পালনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করে থাকে।

প্রতি বছর দিবসটির একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবারকার (২০২৩) প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার স্মার্ট বাংলাদেশ’। এই স্লোগানটি বিশ্বব্যাপী চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বাস্তবায়নের আলোকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।গত ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চারটি ভিত্তির কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলো- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি।

সরকার আগামীর বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যেখানে প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে। তার ভাষায়, স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থ হচ্ছে- দেশের প্রত্যেক নাগরিক প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি, যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সব কিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে।

ই-এডুকেশন, ই-হেলথসহ সব কিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করতে সক্ষম হবো এবং সেটি মাথায় রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।এখানে উল্লেখ্য, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রদত্ত শেখ হাসিনার শর্ত চতুষ্টয় বিশ্বখ্যাত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনকে সামনে রেখেই প্রণীত বলে প্রতীয়মান হয়। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত যে স্মার্ট এডুকেশন এবং স্মার্ট লাইব্রেরি সে কথা বলাই বাহুল্য।

সংশ্লিষ্ট সবাই বিশ্বাস করেন, এই দিবস পালনের মাধ্যমে সব স্তরের জনগণ, ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক সবাই বই পড়ার গুরুত্ব অনুধাবন এবং নিজেদের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে উন্নততর ফলাফল অর্জন করবেন এবং সার্বিকভাবে জীবনমানের উন্নতি ঘটাবেন। বলা দরকার, গ্রন্থাগার ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার এই কাজ আমরা যদি প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বাস্তবায়নের এজেন্ডা মাথায় রেখে অগ্রসর হই তাহলে স্মার্ট গ্রন্থাগার স্থাপনের আর কোনো বিকল্প নেই।

সরকারিভাবে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণার ফলে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগার শিক্ষা বিভাগ, বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত গ্রন্থাগারসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরূপ সমন্বয়ের ফলে দেশের গ্রন্থাগারগুলোর ব্যবহার, গ্রন্থাগার ও তথ্যসেবার মান এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।


দিবসটি ঘিরে সারা দেশের সব গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারবিষয়ক সংগঠন নানামুখী কর্মকাণ্ডে মুখর থাকে। তাতে সাধারণ মানুষ ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গ্রন্থাগার বিষয়ে আগ্রহ ও সচেতনটা সৃষ্টি হয়েছে এবং পাঠকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার প্রতিদিনকার নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় ‘লাইব্রেরি আওয়ার’ চালু করেছে। বিষয়ভিত্তিক ক্লাসের মতো প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীরা পালাক্রমে গ্রন্থাগারে গিয়ে কমপক্ষে এক ঘণ্টা পড়াশোনা করবে। ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণার ফলে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে গ্রন্থাগার সংক্রান্ত কার্যাদি অধিকতর বেগবান হচ্ছে বলে গবেষকরা মনে করেন।

একটি জাতির মেধা ও মনন, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ধারক ও লালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে জন্য বলা হয় গ্রন্থাগার হলো সমাজ উন্নয়নের বাহন। আমাদের দেশের সরকারপ্রধানরাও গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বিভিন্ন সময় গ্রন্থাগারমুখী ব্যাপক উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ঐতিহাসিকভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে উড্ডীন হওয়ার পর বিভিন্ন সরকার কর্তৃক দেশের গ্রন্থাগার উন্নয়নের লক্ষ্যে দৃশ্যমান একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণের উদাহরণ বিদ্যমান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অনেক সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেরেবাংলা নগরে ‘বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার’। ঢাকা শাহবাগ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠাও তারই পরিকল্পনার অংশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার স্থাপন ও গ্রন্থাগারে সহকারী গ্রন্থাগারিকের একটি করে পদ সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় গণগ্রন্থাগার রয়েছে এবং উপজেলায় গ্রন্থাগার স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদ গ্রন্থাগার পরিচালিত হচ্ছে।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ ষষ্ঠ জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেশের সব পর্যায়ের গ্রন্থাগার এবং শিক্ষার মান পর্যালোচনার সময় এসেছে। আমরা জানি, যে জাতির গ্রন্থাগার যত সম্মৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত। আমরা এও জানি, বর্তমান যুগে কোনো জাতির উন্নয়নের ব্যারোমিটার বা পরিমাপক যন্ত্র হচ্ছে গ্রন্থাগার ও তথ্য ব্যবহারের পরিমাণ অর্থাৎ যে জাতি যত বেশি পরিমাণে গ্রন্থাগার ও তথ্য ব্যবহার করে সে জাতি তত বেশি উন্নত। গ্রন্থাগার ও তথ্য ব্যবহারের বর্তমান মানদণ্ড হচ্ছে বৈশ্বিক জ্ঞানসূচক, বৈশ্বিক অর্থনীতিসূচক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক র‌্যাংকিং।

বিগত ১২-১৩ বছরে দারিদ্র্যদূরীকরণ, উৎপাদনশীলতা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক খাত, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে সমর্থ হয়েছে। ফলত ২০১৫ সালে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যায়, প্রয়োজনীয় সব চলকে [গ্রস ন্যাশনাল ইনডেক্স (জিএনআই), হিউম্যান অ্যাসেটস ইনডেক্স (এইচএআই) এবং ইকোনমিক ভালনারেবিলিটি ইন্ডেক্স (ইভিয়াই)] ঈপ্সিত ফলাফল অব্যাহত রাখতে পারলে ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে স্বীকৃত হবে। এটি বাংলাদেশীদের জন্য সত্যিকারের গর্বের বিষয় বটে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতেই নয়; বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে লক্ষ করা যায়, উল্লিখিত সময়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, মাদরাসা, কারিগরি এবং উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলদেশকে ঈপ্সিত স্থানে পৌঁছাতে গ্রন্থাগার ব্যবহার ও শিক্ষার মানের আরো উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

চলতি বছরের বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকের (গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্সের) তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম নলেজ ফাউন্ডেশন (এমবিআরএফ)। এ তালিকায় বিশ্বের ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম।প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে ও জ্ঞান অর্থনীতির সূচকে ভালো পারফরম্যান্স করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে ধারাবাহিকভাবে খারাপ করে চলেছে। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে বাংলাদেশ। আর টানা চতুর্থবারের মতো এই তালিকায় শীর্ষে আছে সুইজারল্যান্ড।

২০২১ সালের জ্ঞানসূচক তৈরিতে সাতটি বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশ। উচ্চশিক্ষায় প্রতি বছর বিভিন্ন সংস্থা যে বৈশ্বিক র‌্যাংকিং করে তাতে প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই।

এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা, গ্রন্থাগার ব্যবস্থা-এসব কিছুতেই সংস্কার আনা প্রয়োজন। অন্যসব আলোচনার আগে আজ জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে গ্রন্থাগার উন্নয়নের বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যেতে পারে। তার আগে আমাদের গ্রন্থাগারগুলোর বিদ্যমান চিত্র কিছুটা সামনে আনা যায়। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রন্থাগারের অবস্থা সবচেয়ে ভালো।

পাঠকদের উদ্দীপ্ত করতেই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস

৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর দেশব্যাপী দিবসটি ২০১৮ সাল থেকে পালন করে আসছে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতিবছর ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। দেশের জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টি এবং বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে, দেশব্যাপী এ দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া গ্রন্থাগার পেশাজীবী এবং সাধারণ পাঠকদের উদ্দীপ্ত করতে এ দিবসটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পড়ব বই, গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’

গ্রন্থাগার পেশাজীবী, প্রকাশক ও পাঠকদের দীর্ঘদিনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বর্তমান সরকার। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তাই এ দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস, হিসেবে ঘোষণা করা হয়।গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এখন মোট গণগ্রন্থাগারের সংখ্যা ৭১টি। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার। ৫৮ জেলায় মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ ৩৭ হাজার। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩৬০ জন পাঠক আসেন। অন্যদিকে জেলা পাঠাগারগুলো দৈনিক ব্যবহার করছেন প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার পাঠক।

দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান গ্রন্থাগার, এনজিও পরিচালিত গ্রন্থাগার ইত্যাদির মধ্যে একটি কার্যকর এবং ফলদায়ক সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এরূপ সমন্বয়ের ফলে বাংলাদেশের গ্রন্থাগার সেবার মান ও কার্যকারিতা দু-ই আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রন্থাগারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে। গ্রন্থাগার হচ্ছে সভ্যতার বাহন। দিবসটি ঘিরে সারা দেশের গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার অঙ্গনগুলো নানামুখী কর্মকাণ্ডে মুখর থাকে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলায় সকালে শোভাযাত্রা ও বিকেলে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, পাঠচক্র, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৯০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে বই পড়াচ্ছে। চার হাজার স্কুলে যেখানে কোনো লাইব্রেরি ছিল না, লাইব্রেরি করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এ ছাড়া আরও দুই হাজার বিদ্যালয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লাইব্রেরি স্থাপন করেছে। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি প্রায় তিন হাজার গণকেন্দ্র ও পাঁচ হাজার কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে লাইব্রেরি কার্যক্রম পরিচালনা করে, দেশব্যাপী প্রায় ১৪ লাখ পাঠক-পাঠিকা তৈরি করেছে। এসব কেন্দ্রে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। জ্ঞান ও তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করছে লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড’ কর্মসূচি। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণার মাধ্যমে সরকারি–বেসরকারি সব পর্যায়ের গ্রন্থাগার–সংক্রান্ত কার্যাবলি আরও বেগবান হচ্ছে।

গ্রন্থাগারগুলোতে পাঠকের বয়স অনুযায়ী বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, চিত্তবিনোদেনর ব্যবস্থা করা ও বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য পাঠক ফোরাম, বই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী দিনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় গণগ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ সমগ্র দেশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মতো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

যে পরিবারে গ্রন্থাগার আছে, তা ওই পরিবারে এক ধরনের আলাদা জ্যোতি ছড়ায়। ওই পরিবারে অসামাজিক ও জঙ্গিবাদী কাজ হতে পারে না। প্রতিটি সচেতন পরিবারেরই উচিত একটি পারিবারিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা। শিশুদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করা। ছোট হলেও প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার চালু করা উচিত। প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার আছে কি না, থাকলে চালু আছে কি না, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা তা পড়েন কি না ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।


দুঃখের বিষয়, অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক এবং অনেক অভিভাবক বলে থাকেন, বাইরের বই পড়ে সময় নষ্ট করার সময় নেই আমাদের শিক্ষার্থীদের। কলেজ পর্যায়েও বই পড়া, প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার স্থাপন ও সচল রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের যদি আমরা সঠিক জ্ঞানের রাজ্যে নিয়ে যেতে পারি, বই পড়ার মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারি, তাহলে তাদের আত্মা পরিশুদ্ধ হবে, তারা জঙ্গিবাদে জড়াবে না, ইভ টিজিং করবে না, মাদকাসক্ত হবে না, হাতে হকিস্টিক আর পিস্তল নিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়া করবে না। বই পড়লে তারা আলোয় উদ্ভাসিত হবে, অন্যায় করবে না। তাদের মনের দিগন্ত প্রসারিত হবে। তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে বিশিষ্ট লেখক ও মহামানবদের সঙ্গে। আর সেটি সম্ভব বই পড়ার মাধ্যমে। বই পড়েই তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারবে, দেশকে ভালোবাসতে শিখবে।

গ্রন্থাগারের উন্নয়নে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গণগগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের চারটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ এগুলোর কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের তিনটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গ্রন্থাগারবান্ধব সরকার দেশের জনগণকে আরও জ্ঞানমনস্ক করতে গ্রন্থাগারগুলোর সক্ষমতা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি করে চলেছেন। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছয় জেলায় লাইব্রেরি ভবন তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, অনলাইনে গণগ্রন্থাগারগুলোর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনা, ব্রিটিশ কাউন্সিলের লাইব্রেরিজ আনলিমিটেড শীর্ষক অনুমোদিত প্রকল্পের বাস্তবায়ন পুর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলেছে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে বলেছেন, ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িয়া আছে। বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।’
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই, বই এবং বই।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেন, একটি বই একশটি বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু, পুরো একটি লাইব্রেরির সমান। দেকার্তে বলেন, ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।
অস্কার ওয়াইলড বলেন, একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবেন, সেটি অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে, তা অনেকাংশেই বোঝা যায়।

মনীষীদের এই উক্তিগুলো থেকে খুব সহজেই বোঝা যায়, উন্নত জাতি গঠনে গ্রন্থ এবং গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম।

এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারঘোষিত মুজিব বর্ষে দিবসটির তাৎপর্য আরও বেড়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ, তাঁর দর্শন, চিন্তাচেতনা, উদ্যোগ—সবই লিপিবদ্ধ আছে বইয়ের পাতায়। সেখান থেকেই নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে সবকিছু। যে জাতি তার ইতিহাস জানে না, তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই সামনে এগোতে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, আর ইতিহাসের সেই গল্প লেখা আছে বইয়ে, আর সেই বই সংরক্ষিত আছে গ্রন্থাগারে। সুতরাং জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে গ্রন্থ, গ্রন্থাগার এবং গ্রন্থাগারিকতা শব্দগুলো একই সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে গুরুত্বের নিয়ে। আমরা জানি, যে জাতির গ্রন্থাগার যত সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত। তাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদ্‌যাপনের মাধ্যমে, আমরা সুন্দর আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারব—এই হোক আমাদের সবার প্রত্যাশা।

আলোকিত সমাজ গড়তে নিরলস কাজ করছে জাতীয় গ্রন্থাগার

আলোকিত সমাজ গড়তে গ্রন্থাগারের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। এই বিবেচনায় সকলকে গ্রন্থাগারমুখী করা, পাঠভ্যাস বৃদ্ধি, মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণগ্রন্থাগারের ভূমিকাকে দৃঢ় করার লক্ষ্যে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে চতুর্থ জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় সারাদেশে একযোগে শুরু হবে গ্রন্থাগার দিবস উদ্যাপনের আয়োজন। শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী আয়োজন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আবুবকর সিদ্দিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় গ্রন্থাগার। সমাজ থেকে নিরক্ষরতা ও চিন্তার পশ্চাৎপদতা দূরীকরণ, অর্জিত শিক্ষার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি, একটি সহনশীল, পরমতসহিষ্ণু সামাজিক ও গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের সৃষ্টি; সর্বোপরি জনসাধারণের মাঝে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ গ্রন্থাগারের মূল উদ্দেশ্য। প্রসঙ্গক্রমে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সোনার বাংলা গড়তে প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ। সেই ভূমিকাটি পালন করছে গ্রন্থাগারগুলো।

কে এম খালিদ বলেন, সারাদেশে ৭১টি পাবলিক লাইব্রেরি আছে। সেগুলো ডিজিটালাইজেসনের কাজ চলছে। এর ফলে সকল লাইব্রেরির তথ্য একটি জায়গাতেই পাওয়া যাবে। ধীরে ধীরে দেশের বেসরকারী লাইব্রেরিগুলোকেও এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। বিদেশী গণমাধ্যম আলজাজিরায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি একটি সাজানো নাটক। যখন পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হয়, তখনও তারা নানান অপপ্রচার চালিয়েছে। পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান হয়েছে, জনগণ দেখছে। মূলত এটি একটি সাজানো নাটক এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। করোনার ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক হলো আমি নিজে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাইনি এবং ভাল আছি। আশা করি সাধারণ মানুষ ও ক্রমান্বয়ে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত হবে। এদিকে জাতীয় পর্যায়ের বাইরে বেসরকারীভাবে গ্রন্থাগার দিবস উদ্্যাপনের উদ্যোগ নিয়েছে পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়ার ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত গ্রন্থাগার। এ উপলক্ষে গ্রন্থাগারটির সীমান্ত-সাহারা মঞ্চে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ‘গ্রন্থাগারের বই পড়ি, আলোকিত মানুষ গড়ি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সীমান্ত গ্রন্থাগারের সভাপতি মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী।

জাতীয় গ্রন্থাগারের সাধারণ তথ্য

আয়তন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, একটি নতুন জাতির জন্য একটি জাতীয় গ্রন্থাগার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার ঢাকায় জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালের ৩ জানুয়ারি সরকার জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগারের জন্য শেরেবাংলা নগরে ২ একর করে মোট ৪ একর জমি বরাদ্দ করে।

ভবন

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার ভবন নির্মান কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫ সালে তা শেষ হয়। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করে ।

কার্যক্রম

জাতীয় গ্রন্থাগারের যাবতীয় কারিগরি /পেশাগত কার্যক্রম উইং প্রধান হিসেবে চিফবিবলিওগ্রাফার উপপরিচালকের মাধ্যমে হয়ে থাকে

প্রক্রিয়াকরণ জনবল

বাংলাদেশ  জাতীয় গ্রন্থাগারের ০১ জন পরিচালক ,চীফ বিবলিওগ্রাফার /উপপরিচালক
০১ জন, প্রথম শ্রেনির কর্মকর্তা ০৬ জন এবং কর্মচারী ৫৫ জন সহ সর্বমোট কর্মকর্ত ও কর্মচারীর সংখ্যা ৬৩ জন।

বই কেনার বরাদ্দ

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সামগ্রী কেনার জন্য প্রতি অর্থবছরে ১০ লক্ষ টাকা সরকারি বাজেটের আওতায় থাকে।  

বিধি এবং আইন কানুন

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের বাধ্যতামূলক প্রকাশনা জমাদান বিধী অনুসরন করে। জাতীয় গ্রন্থাগারের পৃথক ও পুর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

সংগ্রহের ধরণ

বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যে কোন ভাষার বই, সাময়িকী ,সংবাদ পত্র, ম্যাগাজিন , মানচিত্র, সরকারি সংস্থার মৌলিক ও প্রথম প্রকাশনা, জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী ও সাহিত্য কর্ম, এশিয়া মহাদেশের জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উপর প্রতিনিধিত্বমূলক প্রকাশিত বই, বিদেশে প্রকাশিত যে কোন লেখক কর্তৃক বাংলাদেশে সম্পর্কিত ইংরেজি ভাষায় বই, নোবেল বিজয়ী লেখকদের এবং বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবনীসহ জাতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রাপ্ত বই।

সুবিধাভোগি

গবেষক ,পন্ডিত, লেখক,  প্রকাশক, সাহিত্যিক, ,শিক্ষার্থী , সাংস্কৃতিক সংঘঠন  কর্মী, প্রশাসক , নীতি নির্ধারক, বুদ্ধিজীবী ,এবং সাধারণ নাগরিক ও সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ এই প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগি ।

আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার IFLA, ISBN, CDNLAO, UNLNET, ACCU, LC এর সদস্য।
“জাতীয় গ্রন্থাগারের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ” এ্বং “বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারে আধুনিকীকরণ ” শীর্ষক  উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রতি বাস্তবায়িত হয়।বর্তমান জাতীয় গ্রন্থাগার আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্প দুটি চচঘই  চলকান আছে।
সদ্যসমাপ্ত মর্ডানইজেশন প্রকল্প, PPNB এবং চলমান PPNB: “জাতীয় গ্রন্থগারের কর্মীদের দক্ষতা উন্নায়নের জন্য প্রশিক্ষণ” এবং “বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার অধুনিকীকরণ” শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রতি বস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার মান উন্নয়ন শীর্ষক একটি চলমান চচঘই  রয়েছে।

রাজস্ব আয়

সদস্যপদ ফি, সদস্যপদ কার্ড নবায়ন, ফটোকপি সেবা এবং লাইব্রেরি মিলানায়তন ভাড়া ইত্যাদি বাবদ বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার হতে প্রতি বছর ০.৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হয়।
যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম:
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার প্রকল্পের মাধ্যমে ০৬টি স্ক্যানার , ০২টি সার্ভার , ০৩টি ফটোকপি মেশিন ,শ্রবণ ও দর্শন  ক্যামেরা , CCTV,  ইন্টারকম সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, সুরক্ষা সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

ওয়েবসাইট

অধিদপ্তরের জন্য একটি নির্ধারিত www.nanl.gov.bd  নামক কমন ওয়েব  সাইট চালু রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারের জন্য পৃথক ডায়নামিক ওয়েব সাইট www.nlb.gov.bd    নামে চালু হয়েছে।

সফ্টওয়্যার

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার আধুনিকায়নের জন্য ০২টি সফটওয়্যার চালু রয়েছে  Integrity Library System এর জন্য KOHA সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে OPAC চালু করা হয়েছে। এছাড়া GreenStone সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডিজিটাল গ্রন্থাগার চালু করা হয়েছে। য়ার মাধ্যমে পাঠক ও গ্রবেষকদের অনলাইন সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ

জাতীয় গ্রন্থাগারের সকল কর্মকর্তা ও ৩২ জন কর্মচারী  ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪  অর্থবছরে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পেশাদারী প্রশিক্ষণ প্রহণ করেছেন।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই আছে, পাঠক নেই

তিন বছর আগেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো খবরের কাগজ পড়ার জন্য। এখন খবরের কাগজ গড়ায় টেবিল-চেয়ারে, নেই শুধু পড়ার মানুষ।রাজধানীর গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের উল্টো দিকে থাকা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এ দুর্দশা বই পড়ার কক্ষেও। সেখানেও চেয়ার-টেবিল, বই সবই আছে, শুধু পাঠকরাই আসেন না।বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খবরের কাগজ পড়ার কক্ষে টেবিলে প্রথম সারির ১৫টি জাতীয় দৈনিকের পাতা পাখার বাতাসে উড়ছে। দু’জন সেসব দেখছেন আর এক যুবক টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছেন।গোল হয়ে খোশ গল্পে মেতে আছেন কেয়ারটেকাররাও।

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি গত ২০ বছর ধরে পড়তে আসি। ৩-৪ বছর আগেও অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসতেন। তখন অনেক জমজমাট ছিলো। এখন আর আসেন না তারা। বেশি আসেন মধ্যবয়স্করা, যাদের বেশিরভাগই অবসর সময় কাটান এখানে। আর কেউ কেউ আশেপাশে ঘুরতে এসে একটু বসে থেকে যান’।তিনি বলেন, ‘আগে অনেক সাংবাদিকও আসতেন। বিভিন্ন বই-পেপার পড়ে নোট নিতেন, অনেকে আসতেন গবেষণা করতে। এখন আর সেসব চোখে পড়ে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই এ গ্রন্থাগারে আসা-যাওয়া স্বপন কুমার বিশ্বাসের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে তো এখানে ভিড়ের কারণে পত্রিকা ধরতেই পারতাম না। এখন পড়ে থাকে, কেউ ধরতে চান না। দুইটার পর তো লোকই থাকেন না’।জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে পুরনো বইয়ের সংকট দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি মোঘল আমলের ইসলামের ইতিহাসের একটি বই খুঁজছিলাম, পাইনি’।ধীরে ধীরে পাঠক হারাচ্ছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গ্রন্থাগারটি। গত ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চার কর্মদিবসের নিবন্ধন খাতার হিসাব অনুসারে, ওই চারদিনে মাত্র ১০০ জন পাঠক এসেছেন। তাদের মধ্যে খবরের কাগজ পড়ার কথা লিখেছেন মাত্র ২২ জন বা ২২ শতাংশ।

বই পড়ার ক্ষেত্রে আরও করুণদশা। ২৪ এপ্রিল ৫ জন, ২৫ এপ্রিল ৬ জন ও ২৬ এপ্রিল ৯ জন বই পড়তে এসেছিলেন বলে নিবন্ধন খাতায় জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নিয়মিতই আসেন। অর্থাৎ বাড়ছে না নতুন পাঠকও।জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাঠক কমেছে বলে আমার মনে হয় না। তবে অবস্থানের কারণে আর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এজন্য হয়তো কিছুটা কম’।জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রে ১৮ হাজারের বেশি বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে বলে জানান সহকারী লাইব্রেরিয়ান জান্নাতুল ফেরদৌসী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে সায়েন্স ফিকশনের বইই রয়েছে হাজারের বেশি। রেফারেন্স সেকশনে অনেক পুরনো ইতিহাসের বই আছে’।

আমাদের এই গ্রন্থকেন্দ্রকে ডিজিটাল করা গেলে পাঠক বাড়বে। পুরো ভবনে ওয়াইফাই জোন করা যায়। এখানে কিছু কম্পিউটার ও সার্ভার প্যানেল এবং কোথায় কোন সেলফে কোন বই আছে- এসব তথ্য থাকলে পাঠকরা আসবেন বলে মনে করি’।জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে সারা দেশে ১ হাজার ৬৫টি বেসরকারি গ্রন্থ কেন্দ্র রয়েছে। গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের উল্টো পাশের জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ৫ম তলায় রয়েছে বই পড়া ও খবরের কাগজ পড়ার আলাদা কক্ষ। রয়েছে ৩টি বই কক্ষ ও একটি রেফারেন্স শাখাও।

বাংলাদেশে গ্রন্থাগার সংগঠনের ইতিহাস নেহায়েতই অকিঞ্চিৎকর নয়।  বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এদিক থেকে অনেক বেশি ঐতিহ্যের অধিকারী।  কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক ও জাতিগত বৈষম্যের  জাতাকলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বার বার হোঁচট খেয়েছে।  হিংস্র নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।  সহস্র বছর ধরে।  পাল, মোঘল, পর্তুগিজ, ফরাসি, ইংরেজ ও সবশেষে পাকিস্তানিদের নিষ্পেষণ ও  শোষণ থেকে বঙ্গবন্ধর সোনার বাংলা মুক্তির স্বাদ পায়।  বঙ্গবন্ধু জীবনের পাওয়া সময়টুকুর মধ্যে যে সময়টুকু জেগে থাকতেন তার পুরোটাই ছিল বাংলা, বাঙালী আর বই, বই, বই আর গ্রন্থাগার ভাবনার জন্য।  পরাধীন সময়ের একশ বছর পর যখন সময় পেলেন, ১৯৫৮ সালে গণগ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন; স্থাপন করলেন এক গৌরবময় ইতিহাস।  কোন বাঙালী ইতোপূর্বে গ্রন্থাগার উদ্বোধন করেন, নজীর নেই। তিনি বাংলার সেই অবিসংবাদিত নেতা শত শত বছর পর শীর্ণ বৃক্ষতলে একটি চারা রোপণ করেছিলেন এক অতৃপ্ত আত্মার আকুতিতে যা মহীরূহ হয়ে আমাদের হৃদয়ে দোল খাচ্ছে।  তিনি একজন বই, শুধু বই ও গ্রন্থাগার প্রেমী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি জীবনে এতো সময় ধরে বই পড়েছেন; নিজের পরিবারকেও এতো সময় দিতে পারেননি। তাঁর অভিষ্ট লক্ষ্য ছিলো একটি সোনার বাংলা গড়ার। একটি শিক্ষিত, মেধাবী, মননশীল, জ্ঞানী সৃষ্টিশীল এবং জ্ঞানদীপ্ত জাতি উপহার দেওয়া প্রত্যয়ী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এখানেই আমরা আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছিলাম বাঙালী জাতি হিসেবে। আমরা অভাগা জাতি ! অভিশপ্ত সময়ের একুশ বছর ধরে জাতির ভাগ্য বিরম্বিত হয় দুঃশাসনের অন্ধকারে।


তথ্যসুত্র

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের তাৎপর্য, Daily Naiya Diganta.

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০২৩, Somoy News.

জাতীয় গণগ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, Bcspreparation.

আলোকিত সমাজ গড়তে নিরলস কাজ করছে জাতীয় গ্রন্থাগার, Daily Naya Diganta.

জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও অধিদপ্তর উন্নীত করা হচ্ছে বিশ্বমানে, Amarsangbad.

জাতীয় গণগ্রন্থাগার আইইবি ভবনে উদ্বোধন, Jugantor.

বাংলাদেশের গ্রন্থাগার আন্দোলন, Livrarianvoice.

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই আছে, পাঠক নেই, Bangla News24.

গ্রন্থাগারের প্রকারভেদ, প্রয়োজনীয়তা, Innovative Education.

পাঠকদের উদ্দীপ্ত করতেই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস, Prothom Alo.

জাতীয় গ্রন্থাগারের সাধারণ তথ্য, Nanl.Gov.Bd.

ডিজিটাইজেশন (গ্রন্থাগার), Nanl.Gov.Bd.

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কার্যাবলী, Nbc.portal.Gov.Bd.

জাতীয় গ্রন্থাগারের লক্ষ্য, Nanl.Gov.Bd.

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্দেশ্য, Nvc.Org.Bd.

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার, Wikipedia.

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস আজ, Rising Bd.

আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত, Nanl.Gov.Bd.

Subscribe for Daily Newsletter