মাদকাসক্তির কুফল (The Evilness of Drug Addiction)

মানুষ যখন বিভিন্ন প্রতিকূলের কারণে নেশায় জয়িয়ে পয়ে। তখন কি সে চিন্তা করে এর শেষ পরিণাম কি? সামনে তার কত অশান্তি ভোগ করতে হবে। মাদকাসক্তি সামান্য তৃপ্তি আর শান্তি, কিন্তু এ শান্তি কি প্রকৃত শান্তি ? এ তৃপ্তি কি প্রকৃত তৃপ্তি? কখনও নয়। কিন্তু কেনো এ কৃত্রিম শান্তি আর তৃপ্তির পেছনে সবাই? আসুন দেখে নেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির কুফল।

ইসলামে মাদক সেবন নিষিদ্ধ। মাদকতার কারণে অনেক অপরাধ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার ভয়ঙ্করতম ব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্বে অগণিতমানুষের জীবন ও পরিবার ধ্বংস হয়েছে মাদকের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ মাদকের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন কঠিন রোগে ভুগছে। ওই সংস্থার তথ্যানুসারে, বিশ্বের সব রোগের প্রায় ৪ শতাংশ মদপানজনিত। এ কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর হাজার বিলিয়ন ডলার অপচয় হচ্ছে। ইসলাম আল্লাহর ভয়ের পাশাপাশি আইনের মাধ্যমে এই ভয়ঙ্কর ব্যাধি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে।

মাদক হলো নেশা উদ্রেগকারী এমন সব বস্তু যা মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দেয়। যার প্রভাবে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করে না। আর এই মাদকই হলো সব অপরাধের আকর। কুরআনে কারিমে বর্ণিতÑ ‘হারুত ও মারুত এ মাদকের নেশায় মাতাল হয়ে জহুরার ইশারায় হত্যা, ব্যভিচারসহ নানা অপরাধে লিপ্ত হয়েছে।’ (সূরা বাকারা-১০২, মারেফুল কুরআন)

সরকারি  সংস্থা  মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। ২০১৮ সালে সারা দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়। তখন সরকারিভাবে মাদকাসক্তের সংখ্যা বলা হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ লাখ।

বাংলাদেশে যে ধরনের মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার হয়ে থাকে

অপিয়ামের নির্যাস থেকে প্রস্তুত আফিম, হেরোইন, মরফিন, প্যাথেডিন, কোডিন ফসফেট, ফেনসাইক্লিডাইন, নিকোকোডেন।মারিজুয়ানা, গাঁজা, চরস। মেথামফেটামাইন , এ্যাম্ফেটামিন জাতিয় উদ্দীপক, ইয়াবা, হিপনোটিক ঔষধ। ঘুমের ঔষধ, টিডিজেসি ইনজেকশন ।এলকোহল (মদ, বিয়ার, স্পিরিট, এলকোহল জাতীয় তরল) ইত্যাদি ছাড়াও নানাবিধ নিষিদ্ধ ঘোষিত ঔষধ এবং উপাদানের অপব্যবহার মাদক দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম।

মাদক সেবনে রয়েছে আত্মিক, দৈহিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, জাতীয় ইত্যাদি ক্ষতি

আত্মিক ক্ষতি

মাদকের আত্মিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে- উত্তাপ সৃষ্টি : মাদক সেবন করার ফলে মানবাত্মায় উত্তাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে যায়, ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারে না। মাদক আত্মার ধ্বংস সাধন করে। আত্মায় গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে এবং এর বিষক্রিয়া ও অনিষ্টতা সর্বাঙ্গে ছড়িয়েপড়ে।

দৈহিক ক্ষতি

মাদক দৈহিকভাবে অনেক ক্ষতিসাধন করে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ ক্ষতিগুলো হলো- অসুস্থ করা : মাদক সেবন সুস্থ ব্যক্তিকে চরমভাবে অসুস্থ করে ফেলে, যুবককে বৃদ্ধ করে দেয়। ফলে অল্প বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। মস্তিষ্কের লাখ লাখ সেল ধ্বংস করে, লিভারে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়।

অর্থনৈতিক ক্ষতি

মাদক অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ক্ষতিসাধন করে।

সম্পদহীন করে

মাদক সেবনে ব্যক্তি অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। একসময় সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে পথে বসতে বাধ্য হয়। যে পরিবারে মদখোর থাকে সে পরিবার ধীরে ধীরে দরিদ্রতার দিকে ধাবিত হয়। একসময় পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যায়। মাদকসেবী মাদকদ্রব্য ক্রয়ের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণ করতে বাধ্য হয়। ঋণের বোঝা একসময় তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে।

ধর্মীয়ক্ষতি

মাদক সেবন ধর্মীয় ক্ষেত্রে বর্ণনাতীত ক্ষতিসাধন করে।

আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে

মাদকসেবী যখন মাদক সেবনে ব্যস্ত থাকে। তখন সে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল থাকে এবং তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। সে সর্বপ্রকার ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে যায়।

জাতীয় ক্ষতি

মাদক সেবন জাতীয় নানাবিধ ক্ষতিসাধন করে।

শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে

মাদক সেবন যে জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সে জাতির মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মাদক সেবন পারস্পরিক শত্রুতা ও ক্রোধের জন্ম দেয়। ফলে সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এবং পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ লেগে থাকে।

মাদকাসক্তি প্রতিকার

ইসলামের শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি তথা পবিত্র কুরআনে নির্দেশ মেনে চললে মাদকদ্রব্য বর্জন করা সহজ। মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও সিদ্ধান্তই তার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাদকের ক্ষেত্রেও কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত মাদক ও নেশা পরিহারের জন্য যথেষ্ট।মাদক থেকে জনগণকে নিবারণের জন্য সমাজ ও স্বাস্থ্যসচেতন লোকদের সমন্বয়ে সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। মসজিদের ইমামসহ সমাজের আলেমদের ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকের অপকারিতা সম্পর্কে জনগণকে অবহিতকরণের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য থেকে মানুষকে বিরত রাখতে পারেন।রাষ্ট্রীয় আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণকে মাদকতা থেকে রক্ষা করে যেতে পারে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক সেবনের ভয়াবহতা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মদপানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। সে তাওবা করলে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদপান করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না। যদি সে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদপানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। সে চতুর্থবার মদপানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ হতে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনু উমার), খাবাল নামক ঝরনাটি কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের পুঁজের ঝরনা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৬২)

মাদকের প্রতি ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ছে নতুন প্রজন্ম

নেশা বা মাদকাসক্তি নামক দীর্ঘস্থায়ী, যন্ত্রণাকর এই অধ্যায়টিকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে ঠিক কবে যে আমাদের গোটা জাতির মাঝে অঙ্কুরিত করা হয়েছে তা নিয়ে হয়ত কারো কোন মাথা ব্যথা নেই, তারপরেও মাদকদ্রব্যের নগ্নতা, ভয়াবহতার নীল দংশন আমাদের যুব সমাজকে মহামারীর মত গ্রাস করছে। মাদকের প্রতি ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ছে নতুন প্রজন্ম, ঠিক যেন একটি বিভীষিকা, জীবনকে পলে পলে দগ্ধ করার জীবনের সমস্ত চেতনাকে লুপ্ত করার, নাগরিক জীবনের সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষাকে আতুর ঘরে গলা টিপে মেরে ফেলবার অপপ্রয়াস!

মাদকের অপব্যবহার ও কুফল সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা

মাদকের অপব্যবহার ও কুফল সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা, উদাসীনতা, সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থতা কোন অংশে কম দায়ী নয়। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের ফলে সামাজিক ভাবে যেমন অস্থিরতা, অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ঠিক তেমনি মাদকাসক্তরা আমাদের এক নাম্বার জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমশ: ঘৃণায় রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মাদকাসক্তরা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অন্ধকার গলিতে। সামাজিক ভাবে সম্ভ্রম হারিয়ে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে আমাদের সমাজ থেকে। বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক সু-অধিকার থেকে অনেকের সুন্দর শিক্ষা জীবন ধ্বংস হচ্ছে। এর জন্য কি মাদকাসক্তরা-ই এককভাবে দায়ী?

মাদকাসক্তি থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে হবে

পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে যে, দিন দিন ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। আসক্ত তরুণ-তরুণীরা অধিকাংশ উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সর্বাপেক্ষা কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা, মাদক ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, বেকারদের কর্মসংস্থান ও স্কুল কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে  শিক্ষা প্রদান এবং মাদকাসক্তদের চিকিত্সার ব্যবস্থা করা।

মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সর্বাপেক্ষা কার্যকর উপায় হচ্ছে

মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা। মাদক ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বেকারদের কর্মসংস্থান করা। স্কুল-কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলা কার্যক্রকে বাধ্যতামূলক করা উচিত। মাদকাসক্তদের চিকিত্সা ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করাও আবশ্যক।

মাদকের ছোবল থেকে কে বাঁচাবে তরুণদের?

দেশে প্রায় ৭৫ লাখের বেশি মানুষ মাদকাসক্ত রয়েছে। মাদকাসক্তের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ তরুণ-কিশোর (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর)। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ ধূমপায়ী এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তারা প্রথমে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়, তারপর মাদকদ্রব্য সেবন শুরু করে থাকে। পরবর্তীকালে তারা গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, সিসা, হেরোইন, কোকেনসহ বিভিন্ন মরণনেশায় আসক্ত হয়।

মাদকের এই নেশার জালে একবার জড়িয়ে পড়লে কেউ আর সহজে এ জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে মাদকসেবীরা দিনে দিনে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে কিশোর সন্ত্রাসীর ক্রমবর্ধমান দাপটের যে তথ্য সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তার মূল কারণ সম্ভবত নিহিত রয়েছে এখানেই। দেশের সর্বত্র সন্ত্রাসী কার্যক্রম স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নানাভাবে উৎত্যক্ত করা, গুলি বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও মাদকাসক্তির ভূমিকা অন্যতম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, মাদক সেবনের হাতের আঙুলগুলো ঠোঁটের সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে হাতে লেগে থাকা ভাইরাস মুখে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আরেকটি দিক হলো, ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার। আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে জর্দা, গুল, সাদাপাতা, খইনি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। তামাক ব্যবহারে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যায় ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি—যা তাদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তামাকে শরীরের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পায় বিধায় সহজেই ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

মাদকাসক্তি: সামাজিক অবক্ষয় এবং আমাদের করণীয়

পৃথিবীতে কোন ধর্মই মাদক দ্রব্য ব্যবহার অনুমোদিত করে নাই আর ইসলামের দৃষ্টিতে সকল প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবহার একটি জঘন্য ধর্মীয় ও সামাজিক অপরাধ। গোটা বিশ্ব আজ মাদক বিরোধী আন্দোলনে সোচ্ছার। কত শ্লোগান, বক্তৃতা মিছিল, সভা, সেমিনার, কত আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা। নিজে মাদকাসক্ত হয়েও মাদক বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া ইদানিং ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে সংবিধানে মাদক দ্রব্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, অপরদিকে লাইসেন্স প্রধান করে আবগারী শুল্ক ধার্য্য করা; সংবিধানের সঙ্গে এ যেন এক উপহাস, ছেলে খেলা বৈকি? কথায় বলে চোরকে কয় চুরি কর, গৃহস্থকে কয় সজাগ থাক তাই এই ছেলে খেলা হতে বাঁচার জন্য্য ইসলাম আজ থেকে সাড়ে ১৪০০ বছর পূর্বেই পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিতে মাদক দ্রব্য গ্রহণ ,ব্যবহার ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ রূপে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেন মানুষ তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, বল দুটোই বড় পাপের কাজ এবং মানুষের জন্যে তাতে তুচ্ছ উপকার থাকলেও উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী।’ (সুরা বাকারা: ২৯৯) অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিলেন, ‘হে মোমিনগণ ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের নিকটবর্তি হয়ো না। যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা: ৪৩) এ ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘নেশা জাতীয় যে কোন দ্রব্য মদের অন্তর্ভুক্ত। আর যাবতীয় মদই হারাম।’ (বোখারি শরিফ) প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মদপান করে , যে মদপান করায়, মদের ক্রয় ও বিক্রয়ে, প্রস্তুতকারী, আর যে প্রস্তুত করায়, যে ব্যক্তি এক স্থান হতে অন্য স্থানে বহণ করে, যার জন্য বহন করা হয়, এবং যারা মদের লাভ্যাংশ ভোগ করে এদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ রয়েছে। (মুসলিম শরিফ)

মাদক নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন

তীয় সংলাপের মাধ্যমে সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজন কেবল একটি সিদ্ধান্তের। এজন্য জাতীয় সংসদে একমাস আলোচনা হদে পারে, সংসদের বাইরে সুশীলদের সঙ্গে আলোচনা হবে, কথা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। এভাবে তিনমাস আলোচনা করে জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি জেলা শহরের বড় কোনো ময়দানে জড়িতদের ‘শ্যূট অ্যাট সাইট’ করতে হবে।  

‘পৃথিবীর অনেক দেশেই এভাবে মাদক নির্মূল হয়েছে। আর না হলে লাখ লাখ লোকবল আর অস্ত্র দিয়ে এটা নির্মূল সম্ভব নয়। কারণ যারা নিয়ন্ত্রণ করবে তারাও এর সঙ্গে জড়িত। ’ আগে ফেনসিডিল ভয়ঙ্কর ছিল এখন ইয়াবা সর্বনাশা মাদকদ্রব্য। আইন সংশোধন করে ইয়াবা বহনকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আনা হচ্ছে। ’


তথ্যসুত্র

 মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, Banglanews24.

মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন, Dailyinqilab.

 মাদকাসক্তি একটি বড় সমস্যা, Ittefaq.

মাদকের ঝুঁকিতে আছে, Ittefaq.

সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি , Ittefaq.

মাদকাসক্তি বাংলাদেশে অন্যতম, Bangla.BD News24.

মদপানে লিপ্ত হয়, Kalerkantha.

 স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়, Dailynayadiganta.

জটিল রোগের সৃষ্টি , Dailynayadiganta.

Subscribe for Daily Newsletter