কর্মমুখী শিক্ষার উপযোগিতা (Usefulness of action-oriented education)
বর্তমান বিশ্বে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি, কোনো বিষয় জানা এবং বোঝা। আসলে মানুষ জন্মের পর থেকেই চারপাশের পরিবেশ থেকে নানান কিছু শিখতে থাকে।। তবে যাই হোক না কেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই আমরা শিক্ষা হিসেবে বুঝি। শিক্ষাই মানুষকে তার মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্যে করে। তাই বলা হয় শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান দিয়ে সম্প্রীতি বাড়ায়, কুসংস্কার দূর করে সমাজকে আলোকিত করে। আধুনা শিক্ষাকে দুটো শ্রেণীতে ভাগ করা হচ্ছেÑ সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষা। বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষার অগ্রযাত্রার ফলেই পৃথিবী দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে। তাই কর্মমুখী শিক্ষা উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
এ জন্যই কবি বলেছেন, ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’।
আমাদের সন্তানদের জন্য কী ধরনের শিক্ষা দরকার?জীবন ও শিক্ষা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাই জীবনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম সে রকম শিক্ষা চাই। আইনস্টাইন খুব বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন, সত্যি কথা বলতে কী তিনি কত বড় বিজ্ঞানী সেটা বোঝার মতো বিজ্ঞানীও পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। সেই আইনস্টাইন জ্ঞান থেকেও কল্পনাশক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তার নিশ্চয়ই একটি কারণ আছে। কারণটি সহজ, জ্ঞান অর্জন করা যায় কিন্তু কল্পনাশক্তি অর্জন করা যায় না। মানুষ কল্পনাশক্তি নিয়ে জন্মায়, সেই অমূল্য শক্তিকে খুব যতœ করে লালন করতে হয়, তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। পৃথিবীতে সবচেয়ে মহান কাজগুলো হয়েছে এই কল্পনাশক্তির কল্যাণে। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে কল্পনাশক্তির দরকার, যাদের কল্পনাশক্তি নেই তাদের এই পৃথিবীকে দেওয়ার কিছুই নেই। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীলতাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়।
আলবার্ট আইনস্টাইন বলতেন, জ্ঞানের চেয়ে বড় হচ্ছে কল্পনাশক্তি
এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, জীবন যেমন হওয়া উচিত, শিক্ষাও তেমন হওয়া উচিত।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে শিক্ষা একটি। আর এই শিক্ষা মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা শিক্ষাই মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক উন্নতির ফলে কর্মসংস্থানের ধারণা দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন কাজের দ্বার উন্মোচন হচ্ছে। যার সঙ্গে বিশেষ শিক্ষা অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্বও বাড়ছে। কর্মমুখী শিক্ষার ধারণা মূলত পেশাগত কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শিক্ষা এক ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা, যা শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী করে তোলে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘কর্মশালার প্রবেশের দ্বার অতিক্ষুদ্র, রাজপ্রাসাদের সিংহদ্বারের ন্যায় ইহা অভ্রভেদী নহে; কিন্তু গৌরবের বিষয় এই যে, এখানে নিজের শক্তি সম্বল করিয়া প্রবেশ করিতে হয়, ভিক্ষাপাত্র লইয়া নহে।’
কর্মমুখী শিক্ষা কেন প্রয়োজন
শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সংকটগুলোকে একপাশে রেখে এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে সবার আগে খুঁজে দেখতে হবে কর্মমুখী শিক্ষা কী এবং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সেই সুযোগ কতটুকু রয়েছে? মূলত, যে শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষ কোনো একটি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করে এবং শিক্ষা শেষে জীবিকার্জনের যোগ্যতা অর্জন করে তাকেই কর্মমুখী শিক্ষা বলা যেতে পারে। তবে আমরা জানি যে, শিক্ষা মানুষের সুপ্ত সম্ভাবনার যেমন বিকাশ ঘটাতে পারে তেমনি জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে তাকে সামর্থ্য ও দক্ষতা অর্জনেও সাহায্য করে।আমাদের অজানা নয়, নানাবিধ নতুন আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞান আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে। এর মাধ্যমে নিত্যনতুন কর্মদিগন্তও খুলে গেছে। ফলে বংশ পরম্পরায় কোনো পেশা ধরে রেখে নিশ্চিত জীবনযাপনের সময়টা আর নেই। তাই চারপাশের নিত্যনতুন যে কর্মক্ষেত্র উন্মোচিত হচ্ছে তার সঙ্গে গুরুত্ব বাড়ছে বিভিন্ন বিশেষায়িত শিক্ষার। এজন্য বিশ্বেও উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও সাধারণ শিক্ষার তুলনায় কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে বহুগুণে।
পরিসংখ্যানগত দিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশে একের পর এক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ^বিদ্যালয় ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। কিন্ত অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন ও সমাজকর্মের মতো বিষয় খুলে রাখা হয়েছে। এই বিষয়গুলো তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ নানা কলেজ এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও পড়ানো হয়। আমি সন্দিহান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়গুলোর উপযোগিতা কতটুকু রয়েছে, তা নিয়ে অনেকে যখন সমালোচনা করেন এই বিষয়গুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মাধ্যমে একমাত্র শিক্ষিত বেকার তৈরি বাদে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। আমি তাদের কথার প্রতিবাদ করার মতো উপযুক্ত উত্তর খুঁজে পাইনি।
আমরা জানি, কম্পিউটার রিপিয়ারিং মেকানিক্স, মোটর মেকানিক কিংবা অটোমোবাইল সার্ভিসিংয়ের মতো পেশাগুলোতে প্রচুর মানুষ কাজ করছে। তবে তাঁদের কারও বিষয়ভিত্তিক কোনো ট্রেইনিং নেই। পাশাপাশি গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউট কিংবা ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটেও শিক্ষাদানের সুযোগ অনেক সীমিত। আমি মনে করি, এখানেও কর্মমুখী শিক্ষার দিকটি যথেষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে। তাই সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় আরো বেশি মানসম্পন্ন কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি। এছাড়া বস্ত্রশিল্প, সুঁচিকর্ম, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, চিনিকল ও পাটকল, ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি খাতে দক্ষ কারিগর সৃষ্টিতেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। তার জন্য অবশ্যই সহায়ক কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশব্যাপী কারিগরি শিক্ষার জন্য অনেক প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদির উপর স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন জেলা শহরে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কোথাও কোথাও এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকেও কারিগরি জ্ঞান আহরণের সুযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরিসরে এর উপযোগিতা নির্ধারণ কিভাবে হবে
কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত হলেও তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র কেমন হতে পারে? পাশাপাশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে এর উপযোগিতা নির্ধারণ কিভাবে হবে। এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ (জাশিপ)। কয়েকজন অধ্যাপক, গবেষক এবং শিক্ষাবিদকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন জাশিপ প্রতিষ্ঠা করি শুরুতে এই বিষয়গুলোকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলাম। আমরা বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে বারংবার একটা বিষয় উল্লেখ করেছি যে ‘কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র এখন প্রসারিত হওয়া জরুরি এজন্যই যে তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র অবারিত’।অনেক প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত ব্যক্তির অভাবে তাদের প্রয়োজনীয় প্রজেক্টগুলো চালানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশ যখন দক্ষ জনশক্তির খোঁজ করছে আমরা উপযুক্ত ব্যক্তি না থাকায় সেখানে সাড়া দিতে পারছি না। তাই কর্মমুখী শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে পারলে তাদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে আমাদের আপাতত চিন্তা না করলেও চলবে। তাই শুরু থেকেই শিক্ষাকে গণমুখী ও কর্মমুখী করে তোলার চেষ্টা নিতে হবে।
সনদনির্ভর শিক্ষার বদলে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব
বাংলাদেশের নানা অঞ্চলের মানুষকে সাধারণ সনদনির্ভর শিক্ষার বদলে কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করার বিকল্প নাই। তাদের এটুকু বোঝাতে হবে যে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষাজীবন শেষ করে একটা উপযুক্ত চাকরির অভাবে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়, তার বিপরীতে কর্মমুখী শিক্ষা ঠিক তাই যেখানে শিক্ষার্থী শিক্ষালাভের পূর্বেই তার কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে থাকে। তাই কাজ আছে দেখে সেই বিষয়েই আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। বিপরীতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সামনে রেখে খেয়ালখুশি শিক্ষা নিয়ে সাধারণ খেয়ে পরে বাঁচার জন্য একটা কাজ খুঁজতে হয়রান হওয়ার মতো বোকামির সুযোগ এখন সত্যিই সীমিত হয়ে গিয়েছে। অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আমাদের এমন বিষয়ে শিক্ষা নিতে হবে যা সনদধারী বেকার তৈরি না করে, বিভিন্ন সেক্টরের দক্ষ কর্মী গড়ে তোলে।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
অধুনা শিক্ষাকে দুটো পর্যায়ে ফেলা হয়েছে : সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা। বৃত্তি হলো জীবিকা, কর্ম বা পেশা। বৃত্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাই বৃত্তিমূলক শিক্ষা। যে শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তাকে বলা হয় বৃত্তিমূলক শিক্ষা। বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যক্তিকে কোনো না কোনো পেশার উপযোগী করে তোলে। সাধারণ পর্যায়ের বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলতে বোঝায় কোনো বিষয়ের স্বল্পমেয়াদি ব্যবহারিক শিক্ষা। যেমন : কৃষিকাজ, দর্জির কাজ, রাজমিস্ত্রির কাজ, কাঠমিস্ত্রির কাজ, রঙের কাজ, সাইকেল, রিকশা ইত্যাদি মেরামতের কাজ, রেডিও, টেলিভিশন, ফ্রিজ ইত্যাদি বৈদ্যুতিক গৃহসামগ্রী মেরামতের কাজ, হাউস ওয়ারিং, বাস-ট্রাক ইত্যাদির চালকের কাজ, সাধারণ বা প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ, কাপড় ইস্ত্রি, আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালন, গরু, ছাগল ও ভেড়ার খামার করা, মৎস্য চাষ, সেলুনের কাজ ইত্যাদি। এ ধরনের শিক্ষা অল্প সময়ে স্বল্প ব্যয়ে সহজেই গ্রহণ করা যায়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে মানুষ কৃষিতে, শিল্পে সর্বত্র বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। তাই এসব ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা অত্যাবশ্যক।
বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য দরকার বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত লাখ লাখ কর্মঠ, উদ্যোগী যুবক। কৃষিতে, কুটিরশিল্পে, বৃহৎশিল্পে সর্বত্র উৎপাদন ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য চাই বৃত্তিমূলক শিক্ষা। আজকের পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলো এবং এশিয়ার চীন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া উন্নতি লাভ করেছে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমেই। উন্নত বিশ্বের জনসাধারণের মধ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রচলন ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তারা সার্টিফিকেটে বিশ্বাসী নয়, কাজে বিশ্বাসী। তারা কোনো কাজকে খাটো করে দেখে না। তাই সেসব দেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
উন্নত দেশে শিক্ষা মানেই কাজ, চাকরি। তারা জীবন ও প্রয়োজন উপযোগী শিক্ষা লাভ করছে। তাদের পেশাভিত্তিক কারিগরি শিক্ষাই কাজের দিশা দেয়। প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা লাভের অভাবে আমাদের ছাত্ররা নিজের বা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। হাইটেক বা অতি উন্নত প্রযুক্তির যুগে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও জুতসই প্রযুক্তির শিক্ষা দিতে হবে। সিঙ্গাপুরের স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটারভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণ শিক্ষার দিন এখন শেষ হয়ে গেছে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব বাড়াতে হবে
কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বহুবিধ। এ শিক্ষা গ্রহণের পর একজন শিক্ষার্থীকে চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। বেকারত্ব যে কোনো দেশের জন্য অভিশাপ। কর্মমুখী শিক্ষা বেকারত্বের নিদারুণ অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এ শিক্ষা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।এখানে আছে মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক বৃত্তি নির্বাচনের স্বাধীনতা। আছে সুস্থ, সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের অঙ্গীকার। কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাই এ শিক্ষার আরও প্রসার প্রয়োজন।
এ শিক্ষার ওপর যত বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তত সুদৃঢ় হবে। তাই আমাদের উচিত এ শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো। বস্তুত এ শিক্ষার মধ্য দিয়েই দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মধ্য দিয়েই এ দেশ হতে পারে স্বনির্ভর।আমাদের দেশে বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রচলিত। এর সঙ্গে কারিগরি, প্রকৌশলী, চিকিৎসা, ভোকেশনাল ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে দেশে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেনি। ফলে প্রচলিত পন্থায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে লাখ লাখ যুবক বেকারত্বের গ্লানি বহন করছে।অথচ উন্নত দেশগুলোর শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এমনকি এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ইত্যাদি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশেও কর্মমুখী শিক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে।
সমস্যা সমাধানে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প্রয়োজন
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত, যেখানে বাংলাদেশে এর পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম। এর কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষা উপেক্ষিত। এমনকি সাম্প্রতিককালে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, অনেক কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের পরও কর্মমুখী শিক্ষার দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে।দেশে কর্মমুখী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষা, লোকবল, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, আর্থিক ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রকট সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প্রয়োজন।
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই কর্মমুখী শিক্ষার ওপর যত বেশি গুরুত্বারোপ করা হবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তত ত্বরান্বিত হবে। এ শিক্ষার মধ্য দিয়েই দেশের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব। বর্তমান বিশ্ব আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল আবিষ্কার করছে অথচ আমরা এর থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিকল্পিত ও কর্মমুখী। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার ফলে আজ আমেরিকা, জাপান, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ নিজেদের জীবনমানকে সুপ্রসন্ন করেছে। তারা আজ কর্মের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলে নিয়েছে। এই বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষা চালু করে তারা আজ উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছে। আমাদের দেশ অনেক দিক থেকেই পশ্চাদপদ ও অনগ্রসর। বিশেষত, শিক্ষা-দীক্ষা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দিক থেকে। তাই যথাযথ জ্ঞানের অভাবে দেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। এটি আমাদের উন্নতির অন্তরায়। দেশের শিক্ষিত, উচ্চবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণীরাও এ শিক্ষার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায় না। এ ধরনের মানসিকতা দূর করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষা যে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ ও উপকারী সেই সচেতনতা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। যা আমাদের ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে অগ্রগতি ও উন্নতির অন্যতম নিয়ামক। অবশ্য বর্তমানে দেশে কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারী-বেসরকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এছাড়াও পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল, গ্রাফিক্স আর্ট, লেদার ও টেক্সটাইল টেকনোলজি কলেজ, ভেটেরেনারি কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়াও হোটেল ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, উদ্যান পরিচর্যা, সূচীশিল্প, মুদ্রণ, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, কম্পিউটার চালনা, কুটির শিল্প প্রভৃতি ধীরে ধীরে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এতে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটছে। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যক্তিগত অথবা জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এর বাস্তবায়নের পেছনে কিছু সমস্যাও বিদ্যমান রয়েছে। যেমন- পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, লোকবল সংস্থান, শিক্ষার উপকরণ ও আর্থিক ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থার অভাব, গুণগত মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব, সরকারী পদক্ষেপের অভাব। এক্ষেত্রে কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ানো, এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে, শিক্ষার ব্যয় সংকুলানে অর্থ সংস্থানের পদক্ষেপ নিতে হবে।
সর্বোপরি সরকারী পদক্ষেপকে আরও জোরদার করতে হবে। বর্তমানের তরুণ সমাজকে এই গঠনমূলক ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি এবং তা বাস্তবায়নের জন্য দরকার উপযুক্ত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। দেশে কর্মমুখী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার এখনও ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষা, লোকবল, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, আর্থিক ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রকট সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প্রয়োজন
কর্মমুখী শিক্ষার আধুনিকায়ন জরুরি
শিল্পে পরিবর্তন ও কাজের জন্য দক্ষতার নিরিখে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি গুরুত্ব পাওয়া দরকার। জাপানে উচ্চতর বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নথিভুক্ত ছাত্র ২০ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ায় বৃত্তিমূলক বা প্রশিক্ষণ খাত এমনভাবে বিকশিত যেখানে টারশিয়ারি শিক্ষার ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী জুনিয়র বা পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হন। চীনে বিশ্বের বৃহত্তম বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষা রয়েছে। যেখানে প্রায় ১১ হাজার ৩০০টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিবছর সেখানে মোট ৩০.৮৮ মিলিয়ন শিক্ষার্থী ভর্তি হন এবং ১০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। চীনের উন্নয়নের পেছনে তাদের এই নীতি অনেক বেশি কার্যকর মনে হচ্ছে।সেখানে বাংলাদেশে এই হার অনেক কম। তাই আমাদের করণীয় হলো বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা নিশ্চিত ও দারিদ্র্য হ্রাস করা ইত্যাদি। এর মানে এই নয় যে কারিগরি শিক্ষার সংস্কার, মানে কারিগরি শিক্ষার আকার প্রসারিত করা। বরং প্রসারের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে। কর্মমুখী বা কারিগরি শিক্ষায় বেশি শিক্ষার্থী যাতে ভর্তি হন সে বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম প্রসারিত ও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উদ্যোগ গ্রহণ করলেই হবে না, তা যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। তাহলেই দেশের টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব।
এটা স্পষ্ট যে উন্নত দেশগুলোর কর্মমুখী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে। কিন্তু জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও অভূতপূর্ব বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার আবির্ভাবের ফলে প্রতিটি দেশ কিছুটা পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আনতে হবে, যা দেশের জিডিপি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। সচেতন ও শিক্ষিত অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের উচিত সন্তানকে সাধারণ বা গতানুগতিক কোনো বিষয়ে লেখাপড়া না করিয়ে কর্মমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা।
মানবসম্পদ উন্নয়নে কর্মমুখী শিক্ষা
মানব সন্তান সুনির্দিষ্ট কিছু সুপ্ত প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। মানবসম্পদ উন্নয়নের উদ্দেশ্য হলোÑ এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে সবাই তাদের যোগ্যতার প্রসার ঘটাতে পারে এবং বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য সুযোগের সম্প্রসারণ ঘটাতে পারে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্মগত অধিকার আছে। এই সুযোগ সুবিধা লাভের সার্বজনীন স্বীকৃতি হলো মানবসম্পদ উন্নয়নের মূলভিত্তি। মানবসম্পদ বলতে কী বোঝায়, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
আমাদের দেশে বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা প্রচলিত। তার সাথে কারিগরি, প্রকৌশলী, ডাক্তারি, ভোকেশনাল ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। তাবে আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেনি। ফলে প্রচলিত পন্থায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েও লাখ লাখ যুবক বেকারত্বের অভিশাপে দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত।
উন্নত দেশগুলোর শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এমনকি এশিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে কর্মমুখী শিক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পাঁচ শতাংশ কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত। যেখানে বাংলাদেশে তার পরিমাণ মাত্র এক শতাংশেরও কম। এর কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি অনভিপ্রেত উপেক্ষা। এমনকি সাম্প্রতিককালে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, অনেক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে উন্নীত করা হয়েছে, তার মধ্যে কর্মমুখী শিক্ষার দিকটি যথেষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মমুখী শিক্ষা সম্প্রসারণ
কম্পিউটার রিপিয়ারিং মেকানিক, মোটর মেকানিক কিংবা অটোমোবাইল সার্ভিসিংয়ের মতো পেশাগুলোতে প্রচুর মানুষ কাজ করছেন। তবে তাদের কারো বিষয়ভিত্তিক কোনো ট্রেনিং নেই। পাশাপাশি গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউট কিংবা ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটেও শিক্ষাদানের সুযোগ অনেক সীমিত। আমরা মনে করি, এখানেও কর্মমুখী শিক্ষার দিকটি যথেষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে। তাই সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় আরও বেশি মানসম্পন্ন কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি। এছাড়া বস্ত্রশিল্প, সূচিকর্ম, জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙার কাজ, চিনিকল ও পাটকল, ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি খাতে দক্ষ কারিগর সৃষ্টিতেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। আর তার জন্য অবশ্যই সহায়ক কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশব্যাপী কারিগরি শিক্ষার জন্য অনেক প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট ও ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদির ওপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন জেলা শহরে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কোথাও কোথাও এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকেও কারিগরি জ্ঞান আহরণের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সেবা পরিষদ (জাশিপ)-এর মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এই শিক্ষার টেকসই উন্নয়নে নানা কার্যকর ভূমিকা রাখছে।কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত হলেও তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র কেমন হতে পারে, পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এর উপযোগিতা নির্ধারণ কীভাবে হবে—এমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে জাশিপ। কয়েক জন অধ্যাপক, গবেষক এবং শিক্ষাবিদকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন জাশিপ প্রতিষ্ঠা করি, শুরুতে এই বিষয়গুলোকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলাম। আমরা বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে বারংবার একটা বিষয় উল্লেখ করেছি যে, ‘কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র এখন প্রসারিত হওয়া জরুরি এজন্যই যে, তাদের জন্য কর্মক্ষেত্র অবারিত।’
অনেক প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত ব্যক্তির অভাবে তাদের প্রয়োজনীয় প্রজেক্টগুলো চালানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশ যখন দক্ষ জনশক্তির খোঁজ করছে, আমরা উপযুক্ত ব্যক্তি না থাকায় সেখানে সাড়া দিতে পারছি না। তাই কর্মমুখী শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে পারলে তাদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে আমাদের আপাতত চিন্তা না করলেও চলবে। তাই শুরু থেকেই শিক্ষাকে গণমুখী ও কর্মমুখী করে তোলার চেষ্টা নিতে হবে। অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আমাদের এমন বিষয়ে শিক্ষা নিতে হবে, যা সনদধারী বেকার তৈরি না করে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলে।
দেশে প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে
কারিগরি শিক্ষাই এখন দেশকে দিতে পারে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর মূল মন্ত্র। আমাদের দেশে বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবই এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ড্যাফোডিল পরিবারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহকে ব্যতিক্রম না বললেই নয়। আর এই শিক্ষা পরিবারের মধ্যে ড্যাফোডিল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হচ্ছে অন্যতম একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ড্যাফোডিল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর রয়েছে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে নিজস্ব জায়গায় মনোরোম পরিবেশে শিক্ষা সহায়ক সকল প্রকারের সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল ক্যাম্পাস। দক্ষ ও কর্মমুখী শিক্ষার পাশাপাশি প্রতি শিক্ষার্থীকে সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়াই এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। আত্ম-কর্মসংস্থানের সহায়তা এবং দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সাধিত করার কারণে ডিটিআই আজ দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ডিটিআই পরিচালিত সকল ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলো সম্পূর্ণ গভীরভাবে তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের প্রশিক্ষণমূলক, যা উচ্চ শিক্ষিত ও বাস্তব জ্ঞানে গুণান্বিত শিক্ষকমণ্ডলী এবং সুদক্ষ ল্যাব প্রশিক্ষকগণ দ্বারা পরিচালিত। অত্র প্রতিষ্ঠানের কোর্সসমূহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল সুবিধাদিসহ ড্যাফোডিল পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল সুবিধা যুক্ত। ডিটিআই পরিচালিত কোর্সগুলোর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—কোর্সসমূহের মাঝে প্রতিমাসে বিষয়ভিত্তিক কার্যক্ষেত্র পরিদর্শন ও প্রতি সেমিস্টারে ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিক্ষা ভ্রমণের সুযোগ। শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রগুলোতে ইন্টার্নশিপের এর সুযোগ এবং কোর্স শেষে জব ফেয়ার এর মাধ্যমে চাকরিদাতা ও চাকরি আগ্রহীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির মাধ্যমে ছাত্র/ছাত্রীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
প্রাথমিক পর্যায়ে কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
জাতীয় অগ্রগতি, টেকসই উন্নয়ন এবং জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে বর্তমানে প্রচলিত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষার স্থলে আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় করার জন্য ন্যূনতম ৮ বছর মেয়াদি শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা অত্যাবশ্যক। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে ৮ হতে ১২ বছরের বাধ্যতামূলক শিক্ষার মেয়াদ চালু রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি শিক্ষা শেষে পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট (১৯৭৪) অনুসরণ করা যায়। মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জীবনধর্মী ও কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন এবং তাকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। এ বিশাল লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুঁথিগত মুখস্থবিদ্যার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে হাতে কলমে দক্ষতা অর্জনের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে। দেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে উন্নয়নের মূল গ্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে শিক্ষাই একমাত্র মাধ্যম। আমাদের ন্যায় দরিদ্র ও অনুন্নত দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি জীবনমুখী শিক্ষার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। যেহেতু আমাদের দেশ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছে সেহেতু আমাদের কে জীবনমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীর যেসব দেশ আজ উন্নতদেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে সেটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে তাদের জীবনমুখী শিক্ষাব্যবস্থার কারনে।তাই আমাদের কে এবং আমাদের দেশের সরকারপ্রধানকে জীবনমুখী শিক্ষাব্যবস্থার দিকে এগিয়ে আসা উচিত।
বেকারত্বের হাহাকার এবং কর্মমুখী শিক্ষা
একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই আমরা যে, কর্মুমুখী শিক্ষার গুরুত্ব আজ সর্বত্র স্বীকৃত। এর মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা পেশাগত কাজের যোগ্যতা অর্জন করে এবং দক্ষ কর্মী হিসাবে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ও উৎকর্ষ সাধনবিনা কোন জাতির কারিগরি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সম্ভব না।বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশে একের পর এক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল, পলিটেকনিক, গ্রাফিক্স ইত্যাদি। যা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। তাই আমাদের দেশের সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় আরো অনেক বেশি কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।
একটা কথা আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার দেশ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এ জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রুপান্তর করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে দক্ষ জনশক্তি দেশের সম্পদ, উন্নয়নের চাবিকাটি। আর তাই আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমেই দেশের বিপুল পরিমাণ বেকারত্বের মোচন ঘটনা সম্ভব এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম।
বেকারত্ব থেকে মুক্তি চাইলে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে
শিক্ষিত তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ যদি বেকার থাকে, তাহলে আমরা ওই শিক্ষাকে কীভাবে মানসম্মত বা যুগোপযোগী বলব? সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক চাকরিতে, ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। তাহলে এই বিপুলসংখ্যক বেকারত্ব সৃষ্টির মূল কারণ কী? কর্মসংস্থান সৃষ্টির অভাব নাকি দক্ষ জনশক্তি তৈরির অভাব! এই বেকারত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কারিগরি বা কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আমাদের গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তা না হলে আমাদের প্রচলিত যে শিক্ষাব্যবস্থা তা একসময় বেকার তৈরির কারখানা হয়ে দাঁড়াবে।
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানবসম্পদের উন্নয়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেবল কারিগরি শিক্ষার সাহায্যে স্বল্প সময়ে বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। নানা ধরনের সমীক্ষায় দেখা যায়, যে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার যত বেশি, সে দেশের মাথাপিছু আয় তত বেশি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম খাত বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স। বিদেশে কর্মরত দক্ষ জনশক্তির সিংহভাগই ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি প্রকৌশলী। এ দেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কর্মরত। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ দেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা চাকরি করে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছেন। বর্তমানে ৮০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিদেশে কর্মরত আছেন, যার বেশির ভাগই অদক্ষ। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে
বেকার সমস্যার সমাধানে কর্মমুখী শিক্ষা চাই
বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার ও সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অগ্রগতির ফলে মানব জীবনের নিত্যনতুন কর্মদিগন্ত খুলে গেছে। ফলে বংশানুক্রমিক পেশাগত বৃত্তি অবলম্বন করে নিশ্চিত জীবনযাপনের দিন ফুরিয়ে গেছে। বরং নিত্যনতুন যে কর্মদিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে তার সঙ্গে বিশেষায়িত শিক্ষার যোগ হয়ে পড়েছে অপরিহার্য। এই কারণে আধুনিক বিশ্বে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষা ক্রমের অধিকতর গুরুত্ব লাভ করছে।এক কালে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে বাস করে বাংলাদেশের মানুষ সুখে জীবন কাটিয়েছে। বৃত্তি বা পেশাগত শিক্ষা নিয়ে তাকে ভাবতে হয়নি। বংশানুক্রমিক পেশা অবলম্বন করেই জীবিকা নির্বাহ করেছে। কিন্তু এখন সে দিন আর নেই। জনসংখ্যা এখন বেড়েছে বিপুলভাবে। তার প্রচণ্ড চাপ পড়েছে সীমিত সম্পদের ওপর। ফলে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশে নব নব কর্মসংস্থান ও অগ্রগতির পথে অগ্রসর না হলে জাতীয় জীবনে নেমে আসবে অনিবার্য সঙ্কট।
মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই
ব্যানবেইসের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজার ৮৩৫টি। এরমধ্যে সরকারি ৮৬৬টি ও বেসরকারি ৫ হাজার ৯৯৯টি। শিক্ষার্থী ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৪ জন। এতে যুক্ত করা হয়েছে ৬ মাস মেয়াদি বিভিন্ন শর্ট কোর্স। এ কোর্সের আওতাধীন ২ হাজার ৬০০টি ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে।২০০৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রথম ও দ্বিতীয় পালায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে কিন্তু প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে শিক্ষক সংকট। তাহলে প্রশ্ন হলো আসন বৃদ্ধি করে আমরা কেমন শিক্ষা দিতে যাচ্ছি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উন্নত দেশগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। সেই তুলনায় বলা যায়, বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে বহু দিক থেকে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এবং মানসম্মত কারিগিরি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে একটি সঠিক নীতিমালা প্রয়োজন। যখন তখন এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নীতি পরিবর্তনের ফলে তৈরি হচ্ছে হ-য-ব-র-ল পদ্ধতি।
চলতি বছরে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা; যা বিগত বছরের তুলনায় ৮৮৪ কোটি টাকা বেশি। বিভিন্ন সময় সুশীল সমাজ এবং শিক্ষাবিদদের পক্ষ থেকে শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনও মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাকে একটি বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা হয়েছে; যার ফলে এ শিক্ষায় গুরুত্ব কম পাচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। আর বাজেটের যে অর্থ থাকে তার বেশির ভাগই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণে; যার ফলে শিক্ষার মান উন্নয়নে এত অল্প বাজেট কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।
কারিগরি শিক্ষা আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে সরকার
সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মবাজারের উপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষাকে সুলভ ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।তিনি বলেছেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। সাধারণ ধরার শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক দক্ষতা দেয়ার জন্য শিক্ষাক্রমে কারিগরি কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কার্যকর পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে, এ খাতে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।গতকাল বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের সাধারণ জনগণের কাছে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি এ শিক্ষা নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করা সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় বাড়াতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা ও ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা নীতি, কারিকুলাম প্রণয়ন ও জব ম্যাচিং করে কারিগরি শিক্ষাকে আরো কর্মমুখী করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তথ্যসুত্র
কারিগরি শিক্ষা আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে সরকার , Amader Barta .
মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই, Sangbad. Net.BD.
বেকার সমস্যার সমাধানে কর্মমুখী শিক্ষা চাই, Shomoyer Alo.
কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে, Nagorik.Prothom Alo.
কর্মমুখী শিক্ষা , Jago News24.
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।, Daily Bartoman.
কর্মমুখী শিক্ষা সম্প্রসারণ, Ittefaq.
মানবসম্পদ উন্নয়নে কর্মমুখী শিক্ষা, Daily Naya Diganta.
শিক্ষার আধুনিকায়ন জরুরি, Kaler Kantho.
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব, Daily Naya Diganta.
কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব , Jugantor.
কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, Protidiner Sangbad.