বিজয় দিবস (Victory Day)

১৬ই ডিসেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এই দিনটিতে দুটি দেশের বিজয় হয়। ভারতের সেনাবাহিনীর বিজয় হয় এবং বাংলাদেশের সাধারন মুক্তিকামী মানুষের বিজয় হয়। তাই বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই এই দিনটিতে বিজয় দিবস পালন করে।বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দুটি জাতীয় দিবস পালন করা হয়। এ দুটি দিবসের একটি হচ্ছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, অপরটি হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস।
১৯৭১ সালটি দেশের ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করার কারণ হল ভারতীয় সেনা পাকিস্তানকে দু'টি খণ্ডে ভাগ করে দিয়েছিল, যার একটি খণ্ড হল বাংলাদেশ। এই বছরের ১৬ ডিসেম্বর ভারত যুদ্ধে হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। এই কারণের জন্যই প্রত্যেক বছর এই দিনটি 'বিজয় দিবস' বা 'ভিকট্রি ডে' বলে পালন করা হয়। ওই বছর যুদ্ধের সূচনা করে পাকিস্তান।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের পাশে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িযে দেয়। ওই সময় পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দিয়ে সরাসরি পক্ষ্য নেয়।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীযৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস কিভাবে হলো
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর স্বাধীনতা যুদ্ধে সাধারণ জনতা, বাঙালী সামরিক বাহিনী, এবং সর্বস্তরের জনগণ পাকিস্তানী জান্তা দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পরে। ১১ টি সেক্টরে ভাগ হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মানুষ হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায় সারা দেশে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এক সময় ভারতীয় মিত্রবাহিনী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা দের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু প্রায় শেষ মুহুর্তে এসে অনেক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদারেরা। কিন্তু এক সময় এসে পাকিস্তানী বাহিনী হাড়ে হাড়ে টের পায় যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকানো কোনভাবেই সম্ভব নয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর, ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী বাহিনী মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানী বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী, ভারত এবং মুক্তিবাহিনী যৌথবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাগজিত সিং আরোরার কাছে লিখিত আত্মসমর্পণ করেন। এভাবেই বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধারা অন্তিম বিজয় পায় মুক্তিযুদ্ধে। আর এইজন্যই এই তারিখ কে বাংলাদেশের জাতীয় বিজয় দিবস বলা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিন আমরা উদযাপন করি আর বিজয়ের গৌরব থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনেও অনুপ্রাণিত হই।
বিজয় দিবসের ইতিহাস
বিজয় মহান, কিন্তু বিজয়ের জন্য সংগ্রাম মহত্তর। প্রতিটি বিজয়ের জন্য কঠোর সগ্রাম প্রয়ােজন। আমাদের বিজয় দিবসের মহান অর্জনের পেছনেও বীর বাঙালির সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মদানের ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির প্রায় প্রথম থেকেই বাঙালিদের মনে পশ্চিমা শশাষণ থেকে মুক্তিলাভের ইচ্ছার জাগরণ ঘটে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নানা আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রবল আকার ধারণ করতে থাকে। অবশেষে বাঙালির স্বাধিকার চেতনা ১৯৬৯ সালে গণ-অভুথানে রূপ নেয়। বাঙালির স্বাধিকারের ন্যায্য দাবিকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পশ্চিমা সামরিক জান্তাবাহিনী বাঙালি-নিধনের নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাঙালিরা রুখে দাঁড়ায়। গর্জে ওঠে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােলে। কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পী-সাহিত্যিক, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান— সবাইকে নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশমাতৃকার মুক্তি-সংগ্রামে। সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি সামরিক জল্লাদরা এ সময় গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে পাখির মতাে গুলি করে হত্যা করে নিরীহ জনসাধারণকে। ঘরবাড়ি, দোকান-পাট লুট করে জ্বালিয়ে দেয়। মা-বােনদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করে। প্রাণ বাঁচাতে সহায়সম্বলহীন এক কোটি মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। তবু বাঙালি দমে যায় নি। পৃথিবী অবাক তাকিয়ে দেখে :
সাবাস বাংলাদেশ! এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয় :
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নােয়াবার নয়।
অবশেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় স্বীকার করে নেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এদেশের মুক্তিসেনা ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। রক্তাক্ত সংগ্রামের অবসান ঘটে। বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। সূচিত হয় বাংলাদেশের মহান বিজয়।
বিজয় দিবসের উৎসব
১৬ই ডিসেম্বর ভােরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে দিবসটির শুভ সূচনা হয়। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মহাসমারােহে বিজয় দিবস পালন করে। ১৫ই ডিসেম্বর রাত থেকেই বিজয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি চলে। দেশের সমস্ত স্কুল-কলেজ, ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, রিক্সা-গাড়ি ইত্যাদিতে শােভা পায় লাল-সবুজ পতাকা। স্কুল-কলেজ কিংবা রাস্তায় রাস্তায় আয়ােজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। স্বাধীনতার আনন্দে সব শ্রেণির মানুষ যােগ দেয় এসব অনুষ্ঠানে। কোথাও কোথাও বসে বিজয় মেলা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এদিনটি বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করা হয়। ঢাকার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যগণ কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিরােধীদলীয় নেতা-নেত্রীগণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ এই কুচকাওয়াজ উপভােগ করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন কাঙালিভােজের আয়ােজন করে থাকে। অনেক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিজয় দিবস স্মরণে অনুষ্ঠান করে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বিশেষ ক্রোড়পত্র। বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার শান্তি ও দেশের কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা করা হয়। শহরে সন্ধ্যায় আয়ােজন করা হয় বিশেষ আলােকসজ্জার। সমগ্র দেশ জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস পালিত হয়।
বিজয় দিবসের গুরুত্ব
আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, এবং জাতীয় সর্বস্তরেই অনুপ্রেরণা যোগায়। বিজয় দিবসের ক্ষেত্রে আমরা প্রতি বছর মনে করি আমাদের বীর দের অপরিপূর্ণ ত্যাগ এর কথা। এর সাথে আমরা হাজার প্রতিকূলতা পার করে কিভাবে অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হয় তাও শেখায়। বাংলাদেশী হিসেবে আমরা যেখানেই থাকি আমরা চেষ্টা করবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিজেদের জীবনে জড়িয়ে রাখতে, যেখানেই থাকি যে অবস্থাতেই থাকি আমরা যাতে দেশের প্রয়োজনে যাতে এগিয়ে আসতে পারি, তার জন্য চেষ্টা করে যাবো।
বাঙালিদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এদেশের মানুষের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে দেয় পাক শাসকগােষ্ঠী। তারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে রীতিমতাে অবজ্ঞা – অবহেলা করতে থাকে এবং এদেশের জনগণকে শােষণের বস্তুতে পরিণত করে। তাদের ন্যায্য অধিকার না দিয়ে মৌলিক অধিকারগুলাে একে একে কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করে। তারা সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে বাঙালিকে অবমূল্যায়ন করতে থাকে।
তাই নয়, তারা বাঙালির মাতৃভাষাকে কেড়ে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চায়। এমনকি ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। এমন অবিচার ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে বাঙালি একটি নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে তাদের সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে।
বিজয় দিবস এবং আমাদের প্রত্যাশা
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ আমরা যেমন চেয়েছিলাম তেমনটা এখনাে পাইনি। স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মুক্তি পেলেও আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনাে আসেনি। জনজীবনে এখনাে আসেনি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান এখনাে অনিশ্চিত। বরং এর বিপরীতে দুর্নীতির ভয়াল রূপ দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে প্রয়ােজন অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং সম্পদের সুষম বণ্টন।
বিজয় দিবস এবং আমাদের প্রাপ্তি
অনেক না পাওয়ার মধ্যেও আমাদের প্রাপ্তি কম নয়। স্বাধীন বাংলাদেশ এখন শিক্ষায় যথেষ্ট এগিয়েছে। দেশের বাইরেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। যােগাযােগব্যবস্থা, পল্লি জনপদে বিদ্যুতায়ন, স্বাস্থ্যখাত ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযােগ্য উন্নতি ঘটেছে। ক্রীড়াক্ষেত্রেও সুখ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি দিন দিনই বাড়ছে। তৈরি পােশাক, চামড়া, হিমায়িত চিংড়ি ইত্যাদির পর এবার জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও বাংলাদেশ পরিচিতি পাচ্ছে।
স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের মাঝে পার্থক্য
বাংলাদেশে ২ টি জাতীয় দিবস পালন করা হয়।স্বাধীনতা দিবস (২৬ ই মার্চ)। এই দিনে বাংগালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যেহেতু জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি, তখন থেকে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশে দখলদার বাহিনী। বিজয়দিবস (১৬ই ডিসেম্বর)। যেহেতু এই দিনে এদেশের দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, আমরা যুদ্ধে জয় লাভ করি, তাই এটা বিজয় দিবস হিসেবে সমান গুরত্বের সাথে পালন করা হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিশেবে নিজেদের ঘোষনা করে, ২৬ শে মার্চ, ১৯৭১। এখন, স্বাধীন দেশ হিশেবে নিজেদের ঘোষনা করলেও এদেশের সার্বভৌমত্ব ছিলো না।সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা দাবির মৌলিক অনুষঙ্গ। বাংলাদেশ তখন পশ্চিম পাকিস্থানের কবলে। সেই বহিঃশত্রু মুক্ত করা সম্ভব না হলে তা কখনোই স্বাধীন দেশ হিশেবে ক্রিয়াশীল হতে পারে না৷ আর, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে এদেশ অর্জন করে সেই সার্বভৌমত্ব, পশ্চিম হানাদার বাহিনীর কবল থেকে উদ্ধার করে, স্বাধীনতা৷ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করাটা নিশ্চয়ই বিজয়। সেইজন্যেই, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বিজয় দিবস৷
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ও পরবর্তী বাস্তবতা
শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের স্বপ্ন সম্ভাবনা বাস্তবের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে ।১৯৭৫ – এ ঘাতকের বুলেটের আঘাতে সপরিবারে নিহত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে এ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট , সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয় পরিত্যক্ত। স্বাধীন দেশে গণতন্ত্র হয় নির্বাসিত।
প্রায় দেড় দশক ধরে নতুন করে সংগ্রাম করতে হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। আদর্শিকভাবে স্বাধীনতার মূল চেতনার অনেক কিছুই এখন অধরা। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকরণে এখনো পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এখনো স্বপ্নমাত্র। জাতীয় জীবনে ঐক্যের বদলে সংঘাত , স্বস্তির বদলে অস্থিরতা , শান্তির বদলে নৈরাজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
বিজয়ের এত বছর পর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবােধ রক্ষায় তৎপর হতে হবে। তবেই বিজয় হয়ে উঠবে অর্থবহ। যেকোনাে জাতির শক্তির প্রধান উৎস ঐক্য। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতির জন্য প্রয়ােজন এটি।
বিজয় দিবস বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের একটি দিন।
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে কাজ করেছিল মত, পথ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ। এ জন্যই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মাত্র নয় মাসে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্য ধরে রাখতে পারিনি। গুরুত্বহীন বিষয়েও রাজনৈতিক বিভক্তি দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করার পথে বড়াে অন্তরায় হয়ে উঠেছে।
এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের নেতৃত্বকে। সেই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলােয় অভিন্ন নীতি অনুসরণ অপরিহার্য। সর্বোপরি যে ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, সহিষ্ণু ও সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন শহিদরা দেখেছিলেন, সেই লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় নীতি পরিচালিত হবে, এটাই প্রত্যাশিত।
শ্রেয়বোধ ও শুভবুদ্ধিকে আশ্রয় করে আমরা প্রতিকূল ও . অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। প্রতিটি বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মশাল করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে হতাশা ঠেলে , প্রত্যয়ে ও সাহসে বুক বেঁধে। পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রগতি ও পরিবর্তনের ধারায় অগ্রসর হতে পারলে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা আমাদের জীবনে অর্থবহ হয়ে উঠবে।
বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবসসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি দিবস। তবে এ দিবসটি অন্যান্য দিবসের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব রাখে। কেননা, বিজয় দিবস আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন হলেও এর সাথে জড়িয়ে আছে '৭১-এর মহান শহিদদের স্মৃতি, স্বজন হারানোের আর্তনাদ আর যুদ্ধাহত ও ঘরহারা মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এ দিনটি শুধু আমাদের বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের চেতনার জাগরণের দিন। তাই এই দিনে প্রতিটি বাঙালি নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় দেশকে গড়তে- বিশ্বসভায় সামনের সারিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।
তথ্যসুত্র:
বিজয় দিবস বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের একটি দিন।, Bangla News 24.
বিজয় দিবসের গুরুত্ব, Blog.
স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের মাঝে পার্থক্য, Quora.
বিজয় দিবসের উৎসব, Bangla Notebook.
বিজয় দিবসের তাৎপর্য, Hazaborolo.
বিজয় দিবস এবং আমাদের প্রাপ্তি, Curiosityn.
বাঙালিদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, Itjano.