ভিটামিন ডি (Vitamin D)

ভিটামিন ডি কেন প্রয়োজন?
সুস্থ হাড়, দাঁত এবং পেশির জন্য ভিটামিন ডি-র প্রয়োজন সেকথা আমরা অনেকেই জানি। আমরা জানি ভিটামিন ডি-র অভাবে হাড় ঠিকমত গড়ে ওঠে না এবং শিশুরা রিকেট নামে রোগের শিকার হতে পারে এবং প্রাপ্তবয়স্করা অস্টিওম্যালাসিয়া নামে দুর্বল হাড়ের রোগে ভুগতে পারেন।
কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিটামিন ডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।কোন কোন গবেষণা বলছে শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রার ভিটামিন ডি থাকলে তা সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু-তেও সাহায্য করে। তবে তারা একথাও বলছেন এই গবেষণার তথ্যপ্রমাণ সবক্ষেত্রে একরকম নয়। কিছু রকমফেরও আছে।ব্রিটেনের পুষ্টি বিষয়ক বিজ্ঞান গবেষণা উপদেষ্টা কমিটি এখন একটি গবেষণা চালাচ্ছে - যাতে দেখা হচ্ছে সংক্রমণজনিত বক্ষব্যাধিতে ভিটামিন ডি ঠিক কীভাবে কাজ করে।
ভিটামিন ডির ঘাটতি বুঝবেন যেভাবে
হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা দিতে, পেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ডির আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, যার মধ্যে আছে ভিটামিন ডি১, ডি২ ও ডি৩। এটি হাড় ও দাঁতের বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতাও তৈরি করতে পারে।
সরাসরি সূর্যের আলোতে আমাদের শরীর প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি উৎপন্ন করে। তবে কিছু নির্দিষ্ট খাবার ও সাপ্লিমেন্ট থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।আমাদের শরীরে ভিটামিন ডির বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া ভিটামিন ডির আরও কিছু উপকারিতা আছে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
১. হঠাৎ করে চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে খেয়াল করতে হবে শরীরে ভিটামিন ডি কমে গিয়েছে কি না।
২. হাড়, পেশিতে দুর্বলতা এবং ব্যথা, অস্থিসন্ধিগুলির বিকৃতি এবং দীর্ঘস্থায়ী পিঠে ব্যথা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।
৩. শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যা ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, ভালোভাবে বিশ্রাম নিয়েও যদি আপনি অলস এবং ক্লান্তবোধ করেন তবে এটি ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণেই হতে পারে।
৪. স্থূলকায় ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ মেদবহুল কোষগুলো শরীরে ভিটামিন ডি নিঃসরণে বাধা দেয়। আবার হঠাৎ ওজন কমতে থাকা শরীরের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়ার পরও ওজন কমা ভিটামিন ডি-এর অভাব হতে পারে।
৫.শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে ভিটামিন ডি-এর অভাবে, ঘা শুকাতেও অনেকটাই সময় লেগে যায়।
৬. অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে বসে থাকার ইচ্ছে হতে পারে শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবে।
কার শরীরে কতটুকু ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন তা নির্ভর করে বয়স অনুযায়ী। পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি ও ১০০০ মাইক্রো গ্রাম ক্যালশিয়াম এর চাহিদা থাকে।অন্যদিকে ৭০ এর বেশি বয়স যাদের, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২০০ মাইক্রোগ্রাম। বয়স অনুপাতে ভিটামিন ডি-এর ডিমান্ড ২৫-১০০ মিলিগ্রাম।
ভিটামিন ডির উৎস
ভিটামিন ডির মূল প্রাকৃতিক উৎস হলো সূর্যের আলো। বিশেষ করে ইউভি-বি রশ্মি৷ যখন শরীরের ত্বক অনাবৃত থাকে তখন ত্বকের কোষ ফোটোলাইসিস প্রক্রিয়ায় সূর্যালোককে ভিটামিন ডি-৩ তে পরিবর্তিত করে।
ভিটামিন ডির অন্যান্য উৎসগুলো হলো -
১. ডিমের সাদা অংশ
২. চিজ
৩. গরু বা খাসির কলিজা
৪. কড লিভার অয়েল বা মাছের তেল
৫. দুধ, সয়ামিল্ক
৬. ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ও ট্যাবলেট
ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব কেন হয়?
ভিটামিন ‘ডি’ শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ডি অনেকের শরীরেই কম। এই ভিটামিন শরীরে থাকতেই হবে। এর অনেক কাজ রয়েছে। এই ভিটামিন ক্যালশিয়ামকে হাড়ে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া পেশির কাজেও ভীষণ প্রয়োজন।আমিষ খাবার কম খেলে এমনটা হতে পারে। এ ছাড়া কিছু জিনগত অসুখের কারণেও এই ভিটামিন শরীরে কাজ করতে পারে না। সূর্যের আলো শরীর না পেলেও ভিটামিন ডি-এর অভাব হতে পারে
ভিটামিন ‘ডি’ শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ডি অনেকের শরীরেই কম। কিন্তু অনেকেই জানেন না।এ প্রসঙ্গে কলকাতা শহরের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রুদ্রজিৎ পাল বলেছেন, ‘এই ভিটামিন শরীরে থাকতেই হবে। এর অনেক কাজ রয়েছে। এই ভিটামিন ক্যালশিয়ামকে হাড়ে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া পেশির কাজেও ভীষণ প্রয়োজন।
আবার দেখা গিয়েছে, জিন গঠনের নানা প্রক্রিয়ায় এর ব্যবহার রয়েছে।’ যেহেতু অনেকেই জানেন না শরীরে ভিটামিন ডি কমে গেছে, তাই সচেতন থাকতে হবে। উপসর্গ আগে থেকে জানা থাকলে ভালো।
ভিটামিন ‘ডি’ অভাবের লক্ষণ
ডা. রুদ্রজিৎ পাল জানালেন, ভিটামিন ডি কম থাকলে অনেক জটিলতা দেখা দেয় শরীরে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়-
১. গায়ে, হাত, পায়ে ব্যথা২. দুর্বলতা ৩. ছোটখাটো আঘাতেই ফ্র্যাকচার৪. হাড়ে কট কট শব্দ হওয়া৫. হাড়ের ক্ষয়৬. ছোটদের ক্ষেত্রে উচ্চতা না বাড়া ইত্যাদি। এ ধরনের লক্ষণ দেখতে পেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দ্রুত ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণে কোন খাবার খাবেন
১. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে প্রথমেই যে খাবারটির কথা বলা যায় সেটি হলো ডিম। এটি ভিটামিন ডি-র একটি উৎকৃষ্ট উৎস।
২. দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। খাবারের ছয়টি উপাদানের পাশাপাশি গরুর দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. সহজে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণে ডায়েটে রাখতে পারেন দইও। পেটের সুরক্ষায় আর গরম থেকে স্বস্তি পেতে নিয়মিত শিশুকে দই খাওয়ানো উচিত।
৪. ভিটামিন ডি-র জন্য প্রতিদিন একটি কমলাও খেতে পারেন। এতে একই সঙ্গে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
৫. অতি বেগুনি রশ্মিতে রাখলে মাশরুম ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি একমাত্র অপ্রাণিজ খাদ্য যেখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি মেলে।
৬. ফ্যাটি ফিশ যেমন: টুনা, ম্যাকরেল, স্যালমন সামুদ্রিক জাতীয় মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।
৭. কড লিভার অয়েল বা মাছের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, ওমেগা থ্রি এবং ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ করার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ রাখে আপনার হার্টকেও।
কীভাবে রোদ থেকে সর্বোচ্চ ভিটামিন ডি পাবেন
ঘরের ভেতরে বেশি সময় কাটানো, রোদে কম যাওয়া ও ভিটামিন ডি–সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া—এসবই ভিটামিন ডি ঘাটতির প্রধান কারণ। সূর্যের আলো অর্থাৎ রোদ ভিটামিন ডির অন্যতম প্রধান উৎস। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বি (ইউভি বি) থেকে শরীরের ত্বক ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ, গরু বা খাশির কলিজা, দুধ, দই, মাখন, বাদাম, কমলা ইত্যাদি খাবার থেকেও ভিটামিন ডি কিছু মাত্রায় পাওয়া যায়।
কারও রক্ত পরীক্ষায় প্রতি মিলিলিটার রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা ২০ ন্যানোগ্রামের কম পাওয়া গেলে শরীরে ভিটামিন ডির অভাব আছে বলে ধরা হয়। এমনটা হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ভিটামিন ডি ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে চিকিৎসা নিতে হবে।
বাংলাদেশে কেন বাড়ছে ভিটামিন-ডি ঘাটতি জনিত সমস্যা
বাংলাদেশে ঠিক কত মানুষ ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে ভুগছেন তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।ঢাকার মাতুয়াইল মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা: মাহমুদা হোসেন বলছেন, শহরে প্রায় সবার মধ্যেই ভিটামিন-ডি'র ঘাটতি জনিত সমস্যা আছে।তিনি বলেন, "এটি সত্যি তেমন কোনো গবেষণা আমরা পাইনি। কিন্তু করোনার সময়কাল বিবেচনা করলেও অনুধাবন করা যায় যে গ্রাম বা শহরে মাঠে-ঘাটে যারা কায়িক শ্রমের কাজ করে, তাদের মধ্যে এ সমস্যা কম। কারণ তারা সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকে"।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বের অন্তত একশ কোটি মানুষেরই ভিটামিন-ডির ঘাটতি আছে এবং তারা এ সমস্যাকে গ্লোবাল হেলথ প্রবলেম বলে আখ্যায়িত করেছে।আর এ সংকট মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় সঠিক নিয়ম ও সময় দিয়ে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকা।
রোদ পোহানোর সময় যা মনে রাখবেন
আজকাল অনেকেই ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য রোদ পোহাতে চান। কিন্তু জেনে নিতে হবে, কীভাবে রোদ পোহালে আপনি এর সর্বোচ্চ সুফল পেতে পারেন। রোদ পোহানোর ব্যাপারে সহজ করে ‘১০-১৫’ নিয়ম মনে রাখা যেতে পারে। সকাল ১০টা থেকে ১৫টা (অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা) পর্যন্ত সময়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় ধরে মাসে ১০ থেকে ১৫ দিন (অর্থাৎ এক দিন বা দুই দিন পরপর) রোদ লাগালে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি তৈরি হতে পারে। রোদে বেশি পরিমাণ ত্বক উন্মুক্ত রাখলে শরীরে বেশি ভিটামিন ডি তৈরি হবে। মুখমণ্ডল, হাত, বাহু ও হাঁটুর নিচের অংশ খোলা রেখে রোদ পোহালেই শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি তৈরি করে নিতে পারবে।
তবে গায়ের রং যাঁদের কিছুটা চাপা, তাঁদেরকে রোদ থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পেতে হলে ফরসা মানুষদের চেয়ে একটু বেশি সময় রোদ পোহাতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, বাড়িঘরের বা গাড়ির কাচের জানালা ও কাপড়ের ভেতর দিয়ে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বি প্রবেশ করতে পারে না। মেঘলা দিনের রোদেও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বি কম থাকে।
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি যেভাবে জীবন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত করছে
শরীরে ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবে বাংলাদেশের মানুষ প্রায়ই নানা অসুস্থতায় ভোগে। এই অসুস্থতার কারণও তারা জানে না। তারা যখন নানা উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়, তখন ডাক্তাররাও সরাসরি ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবের কারণে এই সমস্যাটি হচ্ছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হিমশিম খান এবং শেষ পর্যন্ত ভুল রোগ নির্ণয় করেন কিংবা ভুল ওষুধ দিয়ে থাকেন।
শরীরে ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবে বাংলাদেশের মানুষ প্রায়ই নানা অসুস্থতায় ভোগে। এই অসুস্থতার কারণও তারা জানে না। তারা যখন নানা উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়, তখন ডাক্তাররাও সরাসরি ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবের কারণে এই সমস্যাটি হচ্ছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হিমশিম খান এবং শেষ পর্যন্ত ভুল রোগ নির্ণয় করেন কিংবা ভুল ওষুধ দিয়ে থাকেন।
ভিটামিন 'ডি' আমাদের দেহকে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান। ভিটামিন 'ডি' আমাদের স্নায়ু, পেশী এবং ইমিউন সিস্টেমেও ভূমিকা রাখে। তিনটি উপায়ে আমরা ভিটামিন 'ডি' পেতে পারি: ত্বকের মাধ্যমে, খাদ্য থেকে এবং সাপ্লিমেন্ট থেকে। সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসার পরে আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন' ডি' তৈরি হয়।
'ভিটামিন 'ডি' ডেফিশিয়েন্সি' বা শরীরে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি বিশ্বজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা। ক্যালসিয়াম হোমিওস্টেসিস এবং বোন মিনারালাইজেশনের জন্য ভিটামিন 'ডি' প্রয়োজন। শরীরে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি থাকলে শিশুদের রিকেট রোগ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের 'অস্টেওম্যালেসিয়া' রোগ হয় বলে জানা গেছে গবেষণায়।
ডাক্তাররা বলেন, বাংলাদেশে ভিটামিন এ, বি ও সি নিয়ে সচেতনতা ছড়ানো হয়, ফলে লোকজন এসব ভিটামিন সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু ভিটামিন 'ডি' ডেফিশিয়েন্সি নামক এই 'নীরব ঘাতক'-এর সম্পর্কে সবাই সচেতন নয়। আবার ভিটামিন 'ডি' টেস্ট ব্যয়বহুল হওয়ায় ডাক্তাররা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে এটি লেখেন না। যেকোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এই টেস্ট করাতে গেলে ২,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা লেগে যায়।ভিটামিন 'ডি' টেস্টের রেজাল্ট এবং ডাক্তারদের কথা থেকেই প্রমাণিত যে বর্তমানে বাংলাদেশে বয়স্করা আগের চেয়ে বেশি ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। ফলে ধীরে ধীরে মানুষ এই ভিটামিন সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন।
ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি যেভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে
এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহজাবিন হক বলেন, ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতির সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগসূত্র রয়েছে। 'শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে, "হ্যাপি হরমোন'গুলোর একটি, যাকে সেরোটোনিন বলে, সেটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সেরেটোনিন আমাদের মনকে উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে,' বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সেরেটোনিন লেভেল এবং আবেগীয় আচরণের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। শরীরে যখন সেরেটোনিনের মাত্রা কম থাকে, তখন মানুষ আবেগপ্রবণ আচরণ করে।'মানুষ যখন হুট করেই আবেগপ্রবণ আচরণ করে, তখন কোনোকিছুর পরিণাম না ভেবেই কিছু একটা করে বসে। বেশিরভাগ সময়ই এরকম আবেগপ্রবণ আচরণের ফলাফল খারাপ হয়,' বলেন ডা. হক।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে, কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারেও অনেকের মধ্যেই আবেগপ্রবণ আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটি গুরুতর অপরাধে পর্যন্ত গড়াচ্ছে।'আমি মনে করি, এ ধরনের আচরণ করে যেসব ব্যক্তি, তাদের দেহে ভিটামিন "ডি" লেভেল এবং সেরেটোনিন লেভেলও পরীক্ষা করে দেখা উচিত,' বলেন ডা. হক।
তথ্যসুত্র
শরীরে ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবে, Tvs News.
শরীরের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি, Somoy News.
ভিটামিন-ডি ঘাটতিজনিত সমস্যা বেড়েই চলেছে, BBC.
রোগের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ডি, Prothomalo.
এই ভিটামিন শরীরে থাকতেই হবে, Kalerkantho.
ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ, Somoy News.
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, The Daily Star.